ঈশ্বরের মন্দিরে “তোমার চিত্ত নিবেশ কর”!
“হে মনুষ্য-সন্তান, আমি তোমাকে যাহা যাহা দেখাইব, . . . তাহাতে তোমার চিত্ত নিবেশ কর . . . তুমি যাহা যাহা দেখিবে, তাহা সকলই ইস্রায়েল-কুলকে জ্ঞাত করিও।”—যিহিষ্কেল ৪০:৪.
১. সাধারণ কাল পূর্ব ৫৯৩ সালে ঈশ্বরের মনোনীত লোকেরা কোন্ পরিস্থিতিতে ছিল?
সময়টা ছিল সা.কা.পূ. ৫৯৩ সাল, ইস্রায়েলের নির্বাসনের চতুর্দশ বছর। এতে কোন সন্দেহ নেই যে বাবিলে বসবাসরত যিহূদীদের কাছে তাদের প্রিয় বাসভূমিকে অনেক দূরে বলে মনে হয়েছিল। তাদের বেশিরভাগই যখন শেষবারের মতো যিরূশালেমকে দেখেছিল, তখন তা জ্বলছিল, এর বিশাল প্রাচীর চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছিল আর এর সুউচ্চ অট্টালিকাগুলো ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। যিহোবার মন্দির—একসময় যেটা নগরের গৌরবময় কীর্তি এবং সারা পৃথিবীর মধ্যে বিশুদ্ধ উপাসনার কেন্দ্র ছিল—এখন ধুলোয় মিশে গেছে। ইস্রায়েলের নির্বাসনের এখনও আরও অনেক সময় বাকি আছে। প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী তাদের মুক্তি পেতে আরও ৫৬ বছর বাকি ছিল।—যিরমিয় ২৯:১০.
২. যিরূশালেমে ঈশ্বরের মন্দির সম্বন্ধে ভেবে কেন যিহিষ্কেল দুঃখিত হয়েছিলেন?
২ বিশ্বস্ত ভাববাদী যিহিষ্কেল নিশ্চয়ই এই ভেবে দুঃখিত হয়েছিলেন যে শত শত মাইল দূরে ঈশ্বরের মন্দির ধ্বংসাবস্থায় পড়ে আছে আর তা হিংস্র জন্তুতে ভর্তি এক নির্জন স্থান হয়ে গেছে। (যিরমিয় ৯:১১) তার পিতা, বুষি ঈশ্বরের মন্দিরে একজন যাজক হিসাবে সেবা করেছিলেন। (যিহিষ্কেল ১:৩) যিহিষ্কেলও হয়তো এই একই কাজ করার সম্মান পেতেন কিন্তু তাকে সা.কা.পূ. ৬১৭ সালে, যখন তিনি একজন যুবক ছিলেন, যিরূশালেমের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে বাবিলনে নির্বাসনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এখন প্রায় ৫০ বছর বয়স্ক যিহিষ্কেল সম্ভবত জানতেন যে তিনি আর কখনও যিরূশালেমকে দেখতে পাবেন না কিংবা এর মন্দির পুনর্নির্মাণের কাজে অংশ নিতে পারবেন না। তাই কল্পনা করুন যে এই অবস্থায় যিহিষ্কেল যখন এক গৌরবময় মন্দিরের দর্শন পান তখন তা তার কাছে কতই না অর্থ রেখেছিল!
৩. (ক) যিহিষ্কেলের মন্দির সম্বন্ধীয় দর্শনের উদ্দেশ্য কী ছিল? (খ) দর্শনের চারটে প্রধান উপাদান কী কী?
৩ এই দর্শন, যিহিষ্কেলের বইয়ের নটা অধ্যায়ে লেখা হয়েছে। এতে নির্বাসিত যিহূদীদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার জন্য প্রতিজ্ঞা ছিল। শুদ্ধ উপাসনা পুনর্স্থাপিত হবেই! তখন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত, এই দর্শন যিহোবাকে যারা ভালবাসেন তাদেরকে উৎসাহ যুগিয়ে এসেছে। কিভাবে? আসুন আমরা পরীক্ষা করি যে নির্বাসিত যিহূদীদের কাছে এই দর্শন কী অর্থ রেখেছিল যেখানে ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে বলা হয়েছিল। এই দর্শনের চারটে প্রধান অংশ রয়েছে: মন্দির, যাজকবর্গ, অধ্যক্ষ এবং দেশ।
মন্দির পুনর্স্থাপিত হয়েছিল
৪. দর্শনের শুরুতে যিহিষ্কেলকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়, তিনি সেখানে কী দেখেন এবং কে তাকে মন্দির ঘুরে দেখাতে নিয়ে যান?
৪ প্রথমে যিহিষ্কেলকে “অতিশয় উচ্চ কোন এক পর্ব্বতে” নিয়ে যাওয়া হয়। পর্বতের ওপরে দক্ষিণ দিকে প্রাচীর ঘেরা এক নগরের মতো একটা প্রকাণ্ড মন্দির রয়েছে। একজন স্বর্গদূত যার “আভা পিত্তলের আভার ন্যায়,” তিনি ভাববাদীকে মন্দিরের বিভিন্ন অংশ ভালভাবে ঘুরে দেখানোর জন্য নিয়ে যান। (যিহিষ্কেল ৪০:২, ৩) দর্শনে যিহিষ্কেল আরও দেখেন যে সেই স্বর্গদূত নিখুঁতভাবে মন্দিরের একইরকম তিনজোড়া দরজা ও সেগুলোর প্রহরী কক্ষ, বহিঃপ্রাঙ্গণ ও অন্তঃপ্রাঙ্গণ, ভোজনশালা, বেদি এবং পবিত্র মন্দির ও এর পবিত্র ও অতি পবিত্র স্থানগুলোকে মাপছেন।
৫. (ক) যিহোবা যিহিষ্কেলকে কোন্ আশ্বাস দেন? (খ) “আপনাদের রাজাদের শব” কী যেগুলো অবশ্যই মন্দির থেকে সরিয়ে ফেলার প্রয়োজন ছিল এবং এটা কেন জরুরি ছিল?
৫ এরপর, যিহোবা স্বয়ং এই দর্শনে উপস্থিত হন। তিনি মন্দিরে প্রবেশ করেন ও যিহিষ্কেলকে আশ্বস্ত করেন যে তিনি নিজে সেখানে বাস করবেন। কিন্তু তিনি চান যে তাঁর গৃহ পরিষ্কার করা হোক আর তাই তিনি বলেছিলেন: “এখন তাহারা আপনাদের ব্যভিচার ও আপনাদের রাজাদের শব আমা হইতে দূর করুক, তাহাতে আমি চিরকাল তাহাদের মধ্যে বাস করিব।” (যিহিষ্কেল ৪৩:২-৪, ৭, ৯) এই “আপনাদের রাজাদের শব” স্পষ্টতই প্রতিমাগুলোকে বুঝিয়েছিল। যিরূশালেমের কিছু বিদ্রোহী রাজা এবং লোকেরা প্রতিমা দিয়ে ঈশ্বরের মন্দির অপবিত্র করেছিল আর এভাবেই সেগুলোকে তাদের রাজা বানিয়েছিল। (আমোষ ৫:২৬ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।) এই মূর্তিগুলো কোন মতেই জীবন্ত দেবতা কিংবা রাজা ছিল না বরং যিহোবার চোখে প্রাণহীন এবং ঘৃণিত বস্তু ছিল। তাই সেগুলোকে অবশ্যই সরিয়ে ফেলার প্রয়োজন ছিল।—লেবীয় পুস্তক ২৬:৩০; যিরমিয় ১৬:১৮.
৬. মন্দির মাপা কী নির্দেশ করে?
৬ দর্শনের এই অংশের অর্থ কী ছিল? এটা নির্বাসিতদের এই বিষয়ে নিশ্চয়তা দিয়েছিল যে ঈশ্বরের মন্দিরে বিশুদ্ধ উপাসনা আবার সম্পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে। এছাড়াও, মন্দিরকে মাপা ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া এই নিশ্চয়তা ছিল যে এই দর্শন অবশ্যই পূর্ণ হবে। (যিরমিয় ৩১:৩৯, ৪০ এবং সখরিয় ২:২-৮ পদগুলোর সঙ্গে তুলনা করুন।) যিহোবার মন্দিরে প্রতিমাপূজার কোন চিহ্নই থাকবে না। আর যিহোবা আবারও তাঁর গৃহকে আশীর্বাদ করবেন।
যাজকবর্গ এবং অধ্যক্ষ
৭. লেবীয় ও যাজকদের সম্বন্ধে কোন্ তথ্য দেওয়া হয়?
৭ যাজকবর্গকেও শুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন করার প্রয়োজন ছিল। লেবীয়রা প্রতিমাপূজায় লিপ্ত হয়েছিল বলে তাদেরকে তীব্রভাবে তিরস্কার করা হয়েছিল, অন্যদিকে সাদোকের যাজক সন্তানেরা পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখায় তাদের প্রশংসা ও পুরস্কৃত করা হয়েছিল।a এই যাজকদের সঙ্গে লেবীয়রাও ঈশ্বরের পুনর্স্থাপিত মন্দিরে পরিচর্যা করার সুযোগ পেয়েছিল—আর নিঃসন্দেহে এই সুযোগ শুধু তারাই পেয়েছিল যারা ব্যক্তিগতভাবে যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিল। এছাড়াও যিহোবা ঘোষণা করেছিলেন: “তাহারা আমার প্রজাগণকে পবিত্র ও সামান্য বস্তুর প্রভেদ শিক্ষা দিবে, এবং শুচি ও অশুচির প্রভেদ জানাইবে।” (যিহিষ্কেল ৪৪:১০-১৬, ২৩) সুতরাং, যাজকবর্গের ঈশ্বরের মন্দিরে তাদের কাজ আবার শুরু করার ছিল এবং যে যাজক বিশ্বস্তভাবে যিহোবার কাজে লেগে থাকতেন তিনি পুরস্কৃত হতেন।
৮. (ক) প্রাচীন ইস্রায়েলের অধ্যক্ষ কারা ছিলেন? (খ) যিহিষ্কেলের দর্শনের অধ্যক্ষ কিভাবে বিশুদ্ধ উপাসনায় সক্রিয় ছিলেন?
৮ এছাড়াও, দর্শন একজন “অধ্যক্ষ” সম্বন্ধে বলে। মোশির দিন থেকে শুরু করে সবসময়ই জাতিগুলোর মধ্যে অধ্যক্ষ ছিল। “অধ্যক্ষ” এর জন্য ব্যবহৃত ইব্রীয় শব্দ নাসি এক পিতৃতান্ত্রিক পরিবার, বংশ, এমনকি একটা জাতির প্রধানকে বোঝাতে পারে। যিহিষ্কেলের দর্শনে, ইস্রায়েলের শাসকদের তিরস্কার করা হয়েছিল কারণ তারা লোকেদের ওপর অত্যাচার করত। তাদেরকে নিরপেক্ষ ও ন্যায়পরায়ণ হতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। যদিও অধ্যক্ষ যাজক শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না, তবুও তিনি উদ্যোগের সঙ্গে বিশুদ্ধ উপাসনার জন্য কাজ করছিলেন। তিনি অযাজকীয় বংশগুলোর সঙ্গে মন্দিরের বহিঃপ্রাঙ্গণে ঢোকেন ও বের হন, পূর্ব দ্বারের বারান্দায় বসেন আর উৎসর্গ করার জন্য লোকেদেরকে কিছু বলিদানের বস্তু দেন। (যিহিষ্কেল ৪৪:২, ৩; ৪৫:৮-১২, ১৭) অতএব দর্শন যিহিষ্কেলের সময়ের লোকেদের নিশ্চিত করেছিল যে পুনর্স্থাপিত জাতি উদাহরণযোগ্য নেতাদের পাবে, এমন ব্যক্তিদের যারা ঈশ্বরের লোকেদের সংগঠিত করার কাজে যাজকবর্গকে সমর্থন করবেন এবং আধ্যাত্মিক বিষয়ে উত্তম উদাহরণ স্থাপন করবেন।
দেশ
৯. (ক) ভূমি কিভাবে ভাগ করা হয়েছিল কিন্তু কারা এর ভাগ পাননি? (খ) পবিত্র দান কী ছিল এবং এর মধ্যে কী কী ছিল?
৯ যিহিষ্কেলের দর্শনের শেষে ইস্রায়েল দেশের বর্ণনা ছিল। এটাকে প্রত্যেক গোষ্ঠীর মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। অধ্যক্ষও এতে এক ভাগ পাবেন। কিন্তু যাজকেরা পাবেন না, কারণ যিহোবা বলেন, “আমিই তাহাদের অধিকার” (যিহিষ্কেল ৪৪:১০, ২৮; গণনাপুস্তক ১৮:২০) দর্শন দেখিয়েছিল যে অধ্যক্ষের ভাগে যে ভূমি ছিল তা এক বিশেষ এলাকার দুই পাশ জুড়ে ছিল যাকে পবিত্র দান বলা হয়েছে। এই ভূমির টুকরো চতুর্ভুজাকৃতির ছিল যেটাকে তিন ভাগে ভাগে করা হয়েছিল—অনুতপ্ত লেবীয়দের জন্য ওপরের অংশ যাজকদের জন্য মাঝের অংশ আর নগর ও এর আশেপাশে চারণভূমি ও উৎপাদনশীল ভূমির জন্য ছিল নিচের অংশ। যিহোবার মন্দির যাজকদের অংশ অর্থাৎ চতুর্ভুজাকৃতি ভূমির ঠিক মাঝখানে ছিল।—যিহিষ্কেল ৪৫:১-৭.
১০. ভূমির ভাগাভাগি সম্বন্ধীয় ভবিষ্যদ্বাণী বিশ্বস্ত বন্দি যিহূদীদের জন্য কী বুঝিয়েছিল?
১০ দর্শনের এই সমস্ত কিছু নির্বাসিতদের হৃদয়কে কতই না উৎসাহিত করেছিল! তাদের বলা হয়েছিল যে প্রত্যেক পরিবার সেখানে তাদের নিজস্ব ভূমি পাবে। (মীখা ৪:৪ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।) সেখানে বিশুদ্ধ উপাসনা এক উচ্চ এবং মুখ্য স্থান পাবে। আর লক্ষ্য করুন যে যিহিষ্কেলের দর্শনে অধ্যক্ষ, যাজকবর্গের মতোই লোকেদের দান করা ভূমিতে বাস করবেন। (যিহিষ্কেল ৪৫:১৬) সুতরাং, এর অর্থ ছিল পুনর্স্থাপিত দেশে লোকেদের, নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যিহোবা যাদের নিযুক্ত করেছেন তাদের কাজে সহযোগিতা করতে ও তাদের বশীভূত হয়ে তাদের সমর্থন করতে হয়েছিল। তাই সবদিক থেকেই এই ভূমি সংগঠন, সহযোগিতা ও নিরাপত্তার এক প্রতীক ছিল।
১১, ১২. (ক) কিভাবে যিহোবা ভবিষ্যদ্বাণীর মাধ্যমে তাঁর লোকেদের আশ্বস্ত করেছিলেন যে তিনি তাদের পুনর্স্থাপিত মাতৃভূমিকে আশীর্বাদ করবেন? (খ) নদীর তীরের গাছগুলো কী চিত্রিত করেছিল?
১১ যিহোবা কি তাদের ভূমি আশীর্বাদ করবেন? ভবিষ্যদ্বাণী এক হৃদয়গ্রাহী ছবির সাহায্যে এই প্রশ্নের উত্তর দেয়। মন্দির থেকে এক জলধারা বয়ে আসে যেটা বয়ে চলতে চলতে চওড়া হয় আর মৃত সমুদ্র পর্যন্ত যেতে যেতে প্রবল বেগে বইতে থাকা এক নদীতে পরিণত হয়। এর ফলে মৃত সমুদ্র পুনর্জীবিত হয়ে ওঠে আর এর তীরে এক বিশাল এলাকা জুড়ে মৎস্য শিল্প গড়ে ওঠে। নদীর তীরগুলোতে অনেক গাছ রয়েছে যেগুলো সারা বছর ধরে ফল উৎপাদন করে আর পুষ্টি ও আরোগ্য দান করে।—যিহিষ্কেল ৪৭:১-১২.
১২ নির্বাসিতদের কাছে পুনর্স্থাপন সম্বন্ধে করা অন্যান্য ভবিষ্যদ্বাণীগুলো খুবই প্রিয় ছিল আর এই দর্শনে সেই প্রতিজ্ঞাগুলোকেই আবার বলা হয়েছিল এবং এগুলোর পূর্ণতা সম্বন্ধে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল। যিহোবার অনুপ্রাণিত ভাববাদীরা বারবার পরমদেশতুল্য পরিস্থিতিতে এক পুনর্স্থাপিত বসতিপূর্ণ ইস্রায়েলের বর্ণনা দিয়েছিলেন। ভবিষ্যদ্বাণীগুলোতে বার বার বলা হয়েছিল যে বসতিহীন এলাকাগুলো আবার জনমুখর হয়ে উঠবে। (যিশাইয় ৩৫:১, ৬, ৭; ৫১:৩; যিহিষ্কেল ৩৬:৩৫; ৩৭:১-১৪) তাই লোকেরা আশা করতে পারত যে যেমন পুনর্স্থাপিত মন্দির থেকে নদী বয়ে আসছে সেইরকম যিহোবার কাছ থেকে তারা জীবনদায়ক আশীর্বাদগুলো পাবে। ফলে ঈশ্বরের চোখে মৃত জাতি আবার জীবিত হয়ে উঠবে। যিহোবা পুনর্স্থাপিত লোকেদের আশীর্বাদ করবেন ও তত্ত্বাবধানের জন্য যোগ্য আধ্যাত্মিক পুরুষদের দেবেন। এই পুরুষেরা ধার্মিক হবেন, দর্শনে দেখা নদীর তীরের গাছগুলোর মতো দৃঢ় হবেন আর ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশকে আবার গড়ে তোলার জন্য নেতৃত্ব দেবেন। এছাড়া, যিশাইয় ভাববাদীও ‘ধার্ম্মিকতা-বৃক্ষদের’ সম্বন্ধে লিখেছিলেন যারা ‘পুরাকালের ধ্বংসিত স্থান সকল নির্ম্মাণ করিবেন।’—যিশাইয় ৬১:৩, ৪.
কখন এই দর্শন পরিপূর্ণ হয়েছে?
১৩. (ক) কোন্ অর্থে যিহোবা তাঁর পুনর্স্থাপিত লোকেদের ‘ধার্ম্মিকতা-বৃক্ষদের’ দিয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন? (খ) মৃত সমুদ্র সম্বন্ধীয় ভবিষ্যদ্বাণী কিভাবে পরিপূর্ণ হয়েছিল?
১৩ ফিরে আসা নির্বাসিত লোকেদের আশা কি পূর্ণ হয়েছিল? হয়েছিল! সা.কা.পূ. ৫৩৭ সালে কিছু নির্বাসিতরা তাদের প্রিয় বাসভূমিতে ফিরে এসেছিল। সময় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, অধ্যাপক ইষ্রা, ভাববাদী হগয় ও সখরিয় এবং মহাযাজক যিহোশূয়ের মতো ‘ধার্ম্মিকতা-বৃক্ষদের’ নেতৃত্বে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা ধ্বংসস্থানগুলোকে আবার গড়ে তোলা হয়েছিল। অধ্যক্ষগণ, যেমন নহিমিয় ও সরুব্বাবিল নিরপেক্ষ ও ন্যায্যভাবে দেশকে শাসন করেছিলেন। যিহোবার মন্দির পুনর্স্থাপিত হয়েছিল এবং জীবনের জন্য তাঁর ব্যবস্থা অর্থাৎ তাঁর নিয়মচুক্তি অনুসারে জীবনযাপন করার আশীর্বাদগুলো আবার পাওয়া গিয়েছিল। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১৯; যিশাইয় ৪৮:১৭-২০) আশীর্বাদগুলোর মধ্যে একটা ছিল জ্ঞান। যাজকেরা আবার তাদের কাজ শুরু করেন ও লোকেদের ব্যবস্থা থেকে শিক্ষা দিতে শুরু করেন। (মালাখি ২:৭) ফলে, লোকেরা আধ্যাত্মিকভাবে জীবিত হয় এবং আবার যিহোবার কার্যকরী দাস হয়ে ওঠে আর এই বিষয়টাকে মৃত সমুদ্রের জীবন্ত হয়ে ওঠা ও বড় মৎসশিল্প গড়ে ওঠার ভবিষ্যদ্বাণী দিয়ে দেখানো হয়েছিল।
১৪. বাবিলের বন্দীত্ব থেকে যিহূদীদের ফিরে আসার পর যা ঘটেছিল সেটা ছাড়াও কেন যিহিষ্কেলের ভবিষ্যদ্বাণীর আরও পরিপূর্ণতা বাকি ছিল?
১৪ এই ঘটনাগুলোই কি যিহিষ্কেলের দর্শনের একমাত্র পূর্ণতা ছিল? না; এই দর্শনে দেওয়া ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতা আরও বড় আকারে হওয়ার ছিল। গভীরভাবে চিন্তা করুন: যিহিষ্কেল যে মন্দিরটা দেখেছিলেন সেটাকে যেভাবে বলা হয়েছিল বাস্তবে সেভাবে নির্মাণ করা যেত না। তবে এটা সত্যি যে, যিহূদীরা সেই দর্শনকে বাস্তব বিষয় বলে ধরে নিয়েছিল আর মন্দিরকে কিছুটা সেইরকম করে তৈরিও করেছিল।b কিন্তু, দর্শনে দেখানো মন্দির এত বিশাল ছিল যে এমনকি মোরিয়া পর্বত অর্থাৎ আগে যেখানে মন্দির ছিল সেখানেও এটা তৈরি করা যেত না। এছাড়াও, যিহিষ্কেলের মন্দির নগরে ছিল না বরং নগর থেকে কিছুটা দূরে ভূমির এক পৃথক অংশে ছিল কিন্তু দ্বিতীয় মন্দিরটা সেখানেই নির্মাণ করা হয়েছিল যেখানে প্রথম মন্দিরটা ছিল অর্থাৎ যিরূশালেম নগরে। (ইষ্রা ১:১, ২) এছাড়াও, যিরূশামের মন্দির থেকে কোন আক্ষরিক নদী কখনও বয়ে আসেনি। এইজন্য প্রাচীন ইস্রায়েল জাতি যিহিষ্কেলের ভবিষ্যদ্বাণীর কেবল এক আংশিক পরিপূর্ণতা দেখেছিল। এটা ইঙ্গিত দেয় যে এই দর্শনের অবশ্যই এক বৃহৎ আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতা রয়েছে।
১৫. (ক) কখন যিহোবার আধ্যাত্মিক মন্দির শুরু হয়? (খ) কী দেখায় যে যিহিষ্কেলের দর্শন খ্রীষ্ট পৃথিবীতে থাকাকালীন পরিপূর্ণ হয়নি?
১৫ সুতরাং এর থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে যিহিষ্কেলের দর্শন যিহোবার মহান আধ্যাত্মিক মন্দিরের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে পরিপূর্ণ হবে। এই বিষয়ে প্রেরিত পৌল ইব্রীয় পুস্তকে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছিলেন। যখন সা.কা. ২৯ সালে যীশু খ্রীষ্টকে এর মহাযাজক হিসাবে অভিষিক্ত করা হয় সেই সময় মন্দিরের শুরু হয়। কিন্তু যীশুর দিনে কি যিহিষ্কেলের দর্শন পরিপূর্ণ হয়েছিল? স্পষ্টতই না। মহাযাজক হিসাবে যীশু, তাঁর বাপ্তিস্ম, বলিদানমূলক মৃত্যু ও মহাপবিত্র স্থান অর্থাৎ স্বর্গে প্রবেশ করে প্রায়শ্চিত্ত দিনের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক অর্থ পূর্ণ করেছিলেন। (ইব্রীয় ৯:২৪) কিন্তু, আগ্রহের বিষয় হল যে যিহিষ্কেলের দর্শনে একবারও মহাযাজক কিংবা প্রায়শ্চিত্ত দিনের কথা উল্লেখ করা হয়নি। তাই মনে হয় না যে এই দর্শন সা.কা. প্রথম শতাব্দীতে পূর্ণ হয়েছিল। তাহলে, এটা কোন্ সময়ে পূর্ণ হয়েছিল?
১৬. যিহিষ্কেলের দর্শনের পটভূমি আমাদের কোন্ ভবিষ্যদ্বাণীর কথা মনে করিয়ে দেয় এবং কিভাবে এটা যিহিষ্কেলের দর্শনের মুখ্য পূর্ণতার সময় সম্বন্ধে বুঝতে আমাদের সাহায্য করে?
১৬ উত্তর পাওয়ার জন্য, আসুন আমরা দর্শনে ফিরে যাই। যিহিষ্কেল লিখেছিলেন: “তিনি ঈশ্বরীয় দর্শনযোগে আমাকে ইস্রায়েল-দেশে উপস্থিত করিলেন, ও অতিশয় উচ্চ কোন এক পর্ব্বতে বসাইলেন; তাহার উপরে দক্ষিণদিকে যেন এক নগরের গাঁথনি ছিল।” (যিহিষ্কেল ৪০:২) দর্শনের সেই স্থান ‘অতিশয় উচ্চ কোন এক পর্ব্বত’ আমাদের মীখা ৪:১ পদের কথা মনে করিয়ে দেয় যেখানে বলা হয়েছে: “শেষকালে এইরূপ ঘটিবে; সদাপ্রভুর গৃহের পর্ব্বত পর্ব্বতগণের মস্তকরূপে স্থাপিত হইবে, উপপর্ব্বতগণ হইতে উচ্চীকৃত হইবে; তাহাতে জাতিগণ তাহার দিকে স্রোতের ন্যায় প্রবাহিত হইবে।” এই ভবিষ্যদ্বাণী কখন পূর্ণ হয়? মীখা ৪:৫ পদ দেখায় যে জাতিগণ মিথ্যা দেবতাদের উপাসনায় রত থাকা অবস্থাতেই এর পরিপূর্ণতা শুরু হয়। বস্তুতপক্ষে, আমাদের সময়ে অর্থাৎ “শেষকালে” বিশুদ্ধ উপাসনাকে উচ্চীকৃত করা হয়েছে এবং ঈশ্বরের দাসেদের জীবনে এটাকে এর যথাস্থানে পুনর্স্থাপিত করা হয়েছে।
১৭. মালাখি ৩:১-৫ পদের ভবিষ্যদ্বাণী কিভাবে আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে কখন যিহিষ্কেলের দর্শনের মন্দির পরিষ্কৃত হয়েছিল?
১৭ কোন্ বিষয়টা এই পুনর্স্থাপনকে সম্ভবপর করেছে? যিহিষ্কেলের দর্শনের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার কথা স্মরণ করুন যখন যিহোবা মন্দিরে ঢোকেন এবং দৃঢ়ভাবে বলেন যে তাঁর গৃহ প্রতিমা থেকে শুচি থাকবে। ঈশ্বরের আধ্যাত্মিক মন্দির কখন পরিষ্কৃত হয়েছিল? মালাখি ৩:১-৫ পদে লেখা বাক্যগুলোতে যিহোবা সেই সময় সম্বন্ধে ভাববাণী করেছিলেন, যখন তিনি তাঁর “নিয়মের সেই দূত,” যীশু খ্রীষ্টকে সঙ্গে করে “আপন মন্দিরে আসিবেন।” কোন্ উদ্দেশে? “তিনি রৌপ্য পরিষ্কারকের অগ্নিতুল্য ও রজকের ক্ষারতুল্য” হবেন। এই পরিষ্করণের কাজ প্রথম বিশ্বযুদ্বের সময় থেকে শুরু হয়েছে। ফল কী হয়েছে? যিহোবা তাঁর গৃহে বাস করেছেন এবং ১৯১৯ সাল থেকে তাঁর লোকেদের আধ্যাত্মিক ‘দেশকে’ আশীর্বাদ করেছেন। (যিশাইয় ৬৬:৮) তাই, আমরা এই উপসংহারে আসতে পারি যে যিহিষ্কেলের মন্দির সম্বন্ধীয় ভবিষ্যদ্বাণীর এক গুরুত্বপূর্ণ পরিপূর্ণতা শেষকালে হয়।
১৮. মন্দির সম্বন্ধীয় দর্শনের চূড়ান্ত পূর্ণতা কখন হবে?
১৮ পুনর্স্থাপনের অন্যান্য ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর মতো, যিহিষ্কেলের দর্শনের আরও একটা পূর্ণতা অর্থাৎ চূড়ান্ত পূর্ণতা রয়েছে, যা পরমদেশে হবে। কেবল সেই সময়েই সৎহৃদয়বান ব্যক্তিরা ঈশ্বরের মন্দির ব্যবস্থার সম্পূর্ণ উপকারগুলো লাভ করবেন। খ্রীষ্ট তখন তাঁর ১,৪৪০০০ জন স্বর্গীয় যাজকদের নিয়ে তাঁর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের মূল্য ব্যবহার করবেন। খ্রীষ্টের শাসনের বশীভূত সমস্ত বাধ্য মনুষ্য প্রজাদের সিদ্ধতায় নিয়ে আসা হবে। (প্রকাশিত বাক্য ২০:৫, ৬) কিন্তু, পরমদেশ যিহিষ্কেলের দর্শনের পরিপূর্ণতার মুখ্য সময় হতে পারে না। কেন?
দর্শন বিশেষ করে আমাদের দিনের জন্য
১৯, ২০. কেন দর্শনের মুখ্য পরিপূর্ণতা আজকে হচ্ছে কিন্তু কেন পরমদেশে নয়?
১৯ যিহিষ্কেল যে মন্দিরটা দেখেছিলেন সেটার প্রতিমাপূজা এবং আধ্যাত্মিক ব্যভিচার থেকে পরিষ্কৃত হওয়ার প্রয়োজন ছিল। (যিহিষ্কেল ৪৩:৭-৯) এটা অবশ্যই পরমদেশে যিহোবার উপাসনা সম্বন্ধে বলা যেতে পারে না। এছাড়াও, দর্শনে যে যাজকবর্গের কথা বলা হয়েছে তা অভিষিক্ত যাজকীয় শ্রেণীকে বোঝায় যখন তারা পৃথিবীতে আছেন কিন্তু তাদের স্বর্গে পুনরুত্থানের পর বা হাজার বছরের রাজত্বের সময়কে বোঝায় না। কেন? লক্ষ্য করুন, যে দর্শনে যাজকেরা অন্তঃপ্রাঙ্গণে পরিচর্যা করছেন বলে দেখানো হয়েছে। প্রহরীদুর্গ এর আগের সংখ্যার প্রবন্ধগুলো দেখিয়েছে যে এই প্রাঙ্গণ খ্রীষ্টের অধীনস্থ যাজকদের বিশেষ আধ্যাত্মিক অবস্থাকে চিত্রিত করে যখন তারা পৃথিবীতে রয়েছেন।c আরও লক্ষ্য করুন, সেই দর্শন যাজকদের অসিদ্ধতার ওপর জোর দেয়। তাদেরকে বলা হয়েছে যে তারা যেন তাদের ব্যক্তিগত পাপের জন্য বলি উৎসর্গ করেন। তাদেরকে আধ্যাত্মিক ও নৈতিকভাবে অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়ার বিপদ সম্বন্ধে সতর্ক করা হয়েছিল। সুতরাং তারা পুনরুত্থিত অভিষিক্ত ব্যক্তিদের চিত্রিত করে না, যাদের সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “তূরী বাজিবে, তাহাতে মৃতেরা অক্ষয় হইয়া উত্থাপিত হইবে।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (১ করিন্থীয় ১৫:৫২; যিহিষ্কেল ৪৪:২১, ২২, ২৫, ২৭) যিহিষ্কেলের দর্শনের যাজকেরা সরাসরি লোকেদের সঙ্গে থেকে তাদের সেবা করেন। পরমদেশে এটা হবে না কারণ যাজকীয় শ্রেণী তখন স্বর্গে থাকবেন। অতএব, দর্শন নিখুঁতভাবে দেখায় যে আজকে পৃথিবীতে “বিস্তর লোক”-দের সঙ্গে অভিষিক্ত ব্যক্তিরা কিভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসঙ্গে কাজ করছেন।—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯; যিহিষ্কেল ৪২:১৪.
২০ সুতরাং, মন্দির সম্বন্ধে যিহিষ্কেলের দর্শন যেখানে আধ্যাত্মিক পরিষ্করণের উপকারজনক ফলাফল সম্বন্ধে দেখানো হয়েছে তা আজকে পরিপূর্ণ হচ্ছে। কিন্তু আপনার জন্য এটা কী অর্থ রাখে? এটা কেবল ঈশ্বর সম্বন্ধে দুর্বোধ্য কোন ধাঁধাঁ নয়। একমাত্র সত্য ঈশ্বর, যিহোবার প্রতি আপনার প্রতিদিনের উপাসনার সঙ্গে এই দর্শনের একটা বড় সম্পর্ক রয়েছে। কিভাবে, আমাদের পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা তা দেখব।
[পাদটীকাগুলো]
a এটা হয়তো যিহিষ্কেলকে ব্যক্তিগতভাবে স্পর্শ করেছিল, কারণ কথিত আছে যে তিনি নিজে সাদোকের যাজকীয় পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
b উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, প্রাচীন মিশ্না উল্লেখ করে যে পুনর্স্থাপিত মন্দিরে বেদি, দুই কবাটবিশিষ্ট দ্বার এবং রন্ধনশালা যিহিষ্কেলের দর্শন অনুযায়ী নির্মাণ করা হয়েছিল।
c ১৯৯৬ সালের ১লা জুলাই প্রহরীদুর্গ এর ১৬ পৃষ্ঠা এবং ১৯৭২ সালের ১লা ডিসেম্বর প্রহরীদুর্গ (ইংরাজি) এর ৭১৮ পৃষ্ঠা দেখুন।
আপনার কি মনে আছে?
◻ যিহিষ্কেলের মন্দির সম্বন্ধীয় দর্শন এবং এর যাজকবর্গের প্রাথমিক পূর্ণতা কী ছিল?
◻ যিহিষ্কেলের ভূমি ভাগ সম্বন্ধীয় দর্শন কিভাবে প্রাথমিকভাবে পূর্ণ হয়েছিল?
◻ প্রাচীন ইস্রায়েলের পুনর্স্থাপনে কারা বিশ্বস্ত অধ্যক্ষ হিসাবে এবং কারা ‘ধার্ম্মিকতার-বৃক্ষ’ হিসাবে কাজ করেছিলেন?
◻ কেন যিহিষ্কেলের মন্দির সম্বন্ধীয় দর্শন অবশ্যই শেষ কালে পূর্ণ হবে?