জীবন ও পরিচর্যা সভার জন্য অধ্যয়ন পুস্তিকা-র রেফারেন্স
সেপ্টেম্বর ৩-৯
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | যোহন ১-২
“যিশু তাঁর প্রথম অলৌকিক কাজ করেন”
খ্রিস্ট—ঈশ্বরেরই পরাক্রম স্বরূপ
৩ যিশু কান্না নগরের একটা বিয়েবাড়িতে তাঁর প্রথম অলৌকিক কাজ করেছিলেন। সেখানে উপস্থিত সকল অতিথির জন্য যথেষ্ট দ্রাক্ষারস ছিল না। যদিও আমরা এর কারণ জানি না, তবে এই কারণে নবদম্পতি নিশ্চয়ই অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যেতে পারতেন। কারণ সঠিকভাবে আতিথেয়তা দেখানোর দায়িত্ব তাদেরই ছিল। সেখানে উপস্থিত অতিথিদের মধ্যে একজন ছিলেন যিশুর মা মরিয়ম। মরিয়ম সেই পরিস্থিতিতে যিশুকে সাহায্য করতে বলেছিলেন। মরিয়ম নিশ্চয়ই তাঁর পুত্রের বিষয়ে সমস্ত ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে ধ্যান করেছিলেন আর তিনি জানতেন, তাঁকে “পরাৎপরের পুত্র” বলা হবে। (লূক ১:৩০-৩২; ২:৫২) যিশুর অলৌকিক কাজ করার ক্ষমতা রয়েছে, তা বিশ্বাস করতেন বলেই কি মরিয়ম যিশুকে সাহায্য করতে বলেছিলেন? আসলে, এই ঘটনা থেকে যে-বিষয়টা স্পষ্ট তা হল, মরিয়ম ও যিশু দু-জনেই সেই দম্পতিকে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। তাই যিশু অলৌকিকভাবে প্রায় ৩৮০ লিটার (১০০ গ্যালন) জলকে ‘উত্তম দ্রাক্ষারসে’ পরিণত করেছিলেন। (পড়ুন, যোহন ২:৩, ৬-১১.) যিশু কি এই অলৌকিক কাজ করতে বাধ্য ছিলেন? না। তা সত্ত্বেও, তিনি এই কাজ করেছিলেন কারণ তিনি লোকেদের জন্য চিন্তা করতেন আর এর মাধ্যমে তিনি তাঁর পিতাকে অনুকরণ করেছিলেন, যিনি একজন উদার ব্যক্তি।
যিশুই পথ, সত্য ও জীবন ৪১ অনু. ৬, ইংরেজি
তাঁর প্রথম অলৌকিক কাজ
এটা হল যিশুর প্রথম অলৌকিক কাজ। তাঁর নতুন শিষ্যরা যখন এই অলৌকিক কাজ দেখেছিল, তখন তাদের বিশ্বাস শক্তিশালী হয়েছিল। এরপর যিশু, তাঁর মা ও তাঁর সৎভাইয়েরা গালীল সমুদ্রের উত্তর-পশ্চিম উপকূলে কফরনাহূম নগরে যাত্রা করেন।
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
nwtsty স্টাডি নোট—যোহন ১:১
বাক্য: বা “লোগোস।” গ্রিক, হো লোগোস। এখানে উপাধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এ ছাড়া, যোহন ১:১৪ ও প্রকা ১৯:১৩ পদেও ব্যবহার করা হয়েছে। এই উপাধি যাঁর, সেই ব্যক্তিকে—অর্থাৎ যিশুকে—যোহন শনাক্ত করতে পেরেছিলেন। এই উপাধি, একজন আত্মিক প্রাণী হিসেবে যিশুর মনুষ্যপূর্ব অস্তিত্বের সময়, একজন সিদ্ধ মানুষ হিসেবে তাঁর পরিচর্যার সময় এবং তাঁর স্বর্গারোহণের পর, যিশুর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়েছিল। যিশু ছিলেন ঈশ্বরের ভাববিনিময়কারী বাক্য বা ঈশ্বরের মুখপাত্র কারণ সৃষ্টিকর্তার অন্যান্য আত্মিক পুত্র ও মানুষদের কাছে তিনি তথ্য ও নির্দেশনা প্রদান করতেন। তাই এটা চিন্তা করা যুক্তিসংগত যে, যিশু পৃথিবীতে আসার আগে যিহোবা মানবজাতির সঙ্গে বাক্য অর্থাৎ তাঁর স্বর্গদূত প্রতিনিধির মাধ্যমে ভাববিনিময় করেছিলেন।—আদি ১৬:৭-১১; ২২:১১; ৩১:১১; যাত্রা ৩:২-৫; বিচার ২:১-৪; ৬:১১, ১২; ১৩:৩.
সঙ্গে: আক্ষ. “কাছে।” এই প্রসঙ্গে, গ্রিক অব্যয় পদ প্রস ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য ও সাহচর্য বোঝায়। এ ছাড়া, এটা পৃথক ব্যক্তিদের অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে বাক্য ও একমাত্র সত্য ঈশ্বরকে ইঙ্গিত করে।
বাক্য একজন ঈশ্বর ছিলেন: বা “সেই বাক্য ঐশ্বরিক [বা “একজন ঈশ্বরের মতো”] ছিলেন।” যোহনের এই উক্তি ‘বাক্যের’ (গ্রিক, হো লোগোস; এই পদের বাক্য শব্দের স্টাডি নোট দেখুন) অর্থাৎ যিশু খ্রিস্টের একটা গুণ বা বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে বর্ণনা করে। ঈশ্বরের প্রথমজাত পুত্র—যাঁর মাধ্যমে ঈশ্বর অন্য সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছিলেন সেই ব্যক্তি—হিসেবে বাক্যের সর্বোৎকৃষ্ট পদমর্যাদা, তাঁকে “একজন ঈশ্বর; একজন ঈশ্বরের মতো; ঐশ্বরিক; একজন ঐশ্বরিক সত্তা” হিসেবে বর্ণনা করার এক ভিত্তি প্রদান করে। অনেক অনুবাদক, “বাক্য ঈশ্বর ছিলেন” এই অভিব্যক্তিটা অনুবাদ করতে পছন্দ করেন আর এভাবে তাঁকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সমান করে তোলেন। কিন্তু যোহন যে এটা বোঝাননি, “বাক্য” সর্বশক্তিমান ঈশ্বর ছিলেন, তা বলার পিছনে কিছু উত্তম কারণ রয়েছে। প্রথমত, এর আগের ও পরের বাক্যাংশে “বাক্য” সম্বন্ধে স্পষ্টভাবে বলা আছে, এই বাক্য “ঈশ্বরের কাছে” ছিলেন। এ ছাড়া, ১ ও ২ পদে গ্রিক শব্দ থিওস তিন বার এসেছে। প্রথম ও তৃতীয়টার ক্ষেত্রে থিওস শব্দের আগে গ্রিক ভাষায় নির্দিষ্ট কিছু বোঝানোর জন্য শব্দ (ডেফিনিট আর্টিক্ল) রয়েছে; কিন্তু দ্বিতীয়টার আগে এইরকম কোনো শব্দ নেই। অনেক পণ্ডিত ব্যক্তি এই বিষয়ে একমত যে, দ্বিতীয় থিওস শব্দের আগে এইরকম কোনো শব্দ না থাকা অর্থপূর্ণ। এই প্রসঙ্গে, থিওস শব্দের আগে যখন নির্দিষ্টভাবে বোঝানোর জন্য শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, তখন তা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে বোঝায়। অন্যদিকে, এই বাক্যের ব্যাকরণগত গঠনে সেই শব্দ না থাকায়, থিওস-এর অর্থ গুণবাচক হয়ে গিয়েছে ও তা ‘বাক্যের’ একটা বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে। তাই ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ ও জার্মান ভাষার অনেক বাইবেলে এই বাক্যাংশকে নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরেজি) বাইবেলের মতো অনুবাদ করা হয়েছে, যেখানে এই ধারণা প্রকাশ করা হয়েছে, “বাক্য” ছিলেন “একজন ঈশ্বর; ঐশ্বরিক; ঐশ্বরিক ব্যক্তি; ঐশ্বরিক ধরনের; ঈশ্বরের মতো।” কপটিক ভাষার অন্তর্গত সাহিডিক ও বোহাইরিক আঞ্চলিক ভাষায় যোহনের সুসমাচারের প্রাচীন অনুবাদগুলো, এই দৃষ্টিভঙ্গি সমর্থন করেছিল এবং যোহন ১:১ পদের প্রথম থিওস শব্দটাকে দ্বিতীয় শব্দের চেয়ে আলাদাভাবে তুলে ধরেছিল। এই অনুবাদগুলো সম্ভবত তৃতীয় ও চতুর্থ শতাব্দীতে প্রস্তুত করা হয়েছিল। এইসমস্ত অনুবাদ ‘বাক্যের’ একটা গুণ সম্বন্ধে জোর দেয় অর্থাৎ তাঁর সহজাত বৈশিষ্ট্য ঈশ্বরের মতো ছিল, কিন্তু এই অনুবাদগুলো তাঁকে তাঁর পিতা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সমান করে না। এই পদের সঙ্গে মিল রেখে কল ২:৯ পদ খ্রিস্টকে এমন ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করে, যাঁর “ঐশ্বরিক গুণাবলির সমস্ত পূর্ণতা” রয়েছে। আর ২পিতর ১:৪ পদ অনুসারে, খ্রিস্টের সহদায়াদরা “ঐশ্বরিক সহজাত বৈশিষ্ট্যের সহভাগী” হবেন। এ ছাড়া, সেপ্টুয়াজিন্ট অনুবাদে গ্রিক শব্দ থিওস হল ইব্রীয় ভাষায় “ঈশ্বর” হিসেবে অনুবাদিত এল ও এলোহিম শব্দগুলোর সমার্থ, যেগুলো “শক্তিমান; বলবান” এই সাধারণ অর্থ প্রকাশ করে বলে মনে করা হয়। এই ইব্রীয় শব্দগুলো সর্বশক্তিমান, অন্যান্য দেব-দেবী ও মানুষের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। (যোহন ১০:৩৪ পদের স্টাডি নোট দেখুন।) বাক্যকে “একজন ঈশ্বর” অথবা “একজন শক্তিমান ঈশ্বর” হিসেবে সম্বোধন করা যিশা ৯:৬ পদের ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ, যেখানে বলা হয়েছিল, মশীহকে বিক্রমশালী বা “শক্তিমান ঈশ্বর” সম্বোধন করা হবে এবং তিনি সেই সমস্ত ব্যক্তির সনাতন বা “অনন্তকালীন পিতা” হবেন, যারা তাঁর প্রজা হিসেবে বাস করার বিশেষ সুযোগ পাবে। তাঁর পিতা অর্থাৎ ‘বাহিনীগণের যিহোবার’ উদ্যোগ তা সম্পন্ন করবে।—যিশা ৯:৭.
nwtsty স্টাডি নোট—যোহন ১:২৯
ঈশ্বরের মেষশাবক: যিশু বাপ্তিস্ম নেওয়ার ও দিয়াবলের দ্বারা পরীক্ষিত হওয়ার পর যখন ফিরে এসেছিলেন, তখন যোহন বাপ্তাইজক যিশুকে “ঈশ্বরের মেষশাবক” হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। এই অভিব্যক্তি শুধুমাত্র এখানে ও যোহন ১:৩৬ পদে পাওয়া যায়। (পরিশিষ্ট এ৭ দেখুন।) যিশুকে একটা মেষশাবকের সঙ্গে তুলনা করা উপযুক্ত। পাপ স্বীকার করার ও ঈশ্বরের সামনে উপস্থিত হওয়ার জন্য মেষ উৎসর্গ করার বিষয়টা বাইবেলের বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে। এটা যিশুর সেই বলিদানের পূর্বাভাস ছিল, যখন তিনি মানবজাতির জন্য তাঁর সিদ্ধ মানবদেহ দান করবেন। “ঈশ্বরের মেষশাবক” অভিব্যক্তিটা অনুপ্রাণিত শাস্ত্রের বেশ কিছু বাক্যাংশের ধারণাকে প্রতিফলিত করতে পারে। ইব্রীয় শাস্ত্র সম্বন্ধে যোহন বাপ্তাইজকের যে ভালো ধারণা ছিল সেটার পরিপ্রেক্ষিতে, তার এই অভিব্যক্তি পরোক্ষভাবে এক বা একাধিক বিষয়কে বোঝাতে পারে: অব্রাহাম তার ছেলে ইস্হাকের পরিবর্তে যে-পুংমেষ উৎসর্গ করেছিলেন (আদি ২২:১৩), মিশরে দাসত্বে থাকা ইস্রায়েলীয়রা উদ্ধার লাভ করার জন্য যে-নিস্তারপর্বের মেষ বলি দিয়েছিল (যাত্রা ১২:১-১৩) কিংবা যিরূশালেমে প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় ঈশ্বরের বেদির উপর যে-পুংমেষ উৎসর্গ করা হতো (যাত্রা ২৯:৩৮-৪২)। এ ছাড়া, যোহনের মনে হয়তো যিশাইয়ের সেই ভবিষ্যদ্বাণীও ছিল, যেখানে যিহোবা যে-ব্যক্তিকে “আমার দাস” বলে উল্লেখ করেন তাঁর সম্বন্ধে এভাবে বলা হয়েছে, “যেমন একটা মেষশাবককে হত্যা করার জন্য নেওয়া হয়।” (যিশা ৫২:১৩; ৫৩:৫, ৭, ১১) প্রেরিত পৌল যখন করিন্থীয়দের উদ্দেশে তার প্রথম চিঠি লিখেছিলেন, তখন তিনি যিশুকে “আমাদের নিস্তারপর্বের মেষশাবক” বলে উল্লেখ করেছিলেন। (১করি ৫:৭) প্রেরিত পিতর “নিখুঁত ও নিষ্কলঙ্ক মেষশাবক স্বরূপ” খ্রিস্টের “বহুমূল্য রক্ত” সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন। (১পিতর ১:১৯) আর বাইবেলের প্রকাশিত বাক্য বইয়ে ২৫ বারের চেয়েও বেশি বার গৌরবান্বিত যিশুকে রূপকভাবে “মেষশাবক” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।—কয়েকটা উদাহরণ হল: প্রকা ৫:৮; ৬:১; ৭:৯; ১২:১১; ১৩:৮; ১৪:১; ১৫:৩; ১৭:১৪; ১৯:৭; ২১:৯; ২২:১.
সেপ্টেম্বর ১০-১৬
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | যোহন ৩-৪
“যিশু একজন শমরীয় মহিলার কাছে সাক্ষ্য দেন”
nwtsty স্টাডি নোট—যোহন ৪:৬
তিনি ক্লান্ত হওয়ায়: শাস্ত্রে শুধু এই জায়গাতেই যিশুর ‘ক্লান্ত হওয়ার’ বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। তখন সময় ছিল দুপুর প্রায় ১২:০০টা আর সেই দিন সকালে যিশু সম্ভবত যিহূদিয়ার যর্দন উপত্যকা থেকে শমরিয়ার শুখর নগর পর্যন্ত ৯০০ মিটার (৩,০০০ ফুট) কিংবা তার চেয়েও বেশি খাড়া পথ ভ্রমণ করেছিলেন।—যোহন ৪:৩-৫; পরিশিষ্ট এ৭ দেখুন।
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
nwtsty স্টাডি নোট—যোহন ৩:২৯
বরের বন্ধু: বাইবেলের সময়ে, বরের খুব ঘনিষ্ঠ কোনো ব্যক্তি বরের বৈধ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন এবং বিয়ের বিভিন্ন বিষয় আয়োজন করায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন। তাকে এমন ব্যক্তি হিসেবে দেখা হতো, যিনি বর ও কনেকে একত্রিত করেছেন। বিয়ের দিন, বিয়ের শোভাযাত্রা বর অথবা বরের বাবার বাড়িতে এসে পৌঁছাত আর সেখানে বিবাহভোজ অনুষ্ঠিত হতো। ভোজের সময় বর যখন তার কনের সঙ্গে কথা বলতেন, তখন বরের বন্ধু বরের কণ্ঠস্বর শুনে আনন্দিত হতেন, কারণ সেই বন্ধু তার দায়িত্ব সফলভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছেন বলে মনে করতেন। যোহন বাপ্তাইজক নিজেকে ‘বরের বন্ধুর’ সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। এই ক্ষেত্রে, যিশু বর ছিলেন এবং তাঁর শিষ্যরা একটা শ্রেণি হিসেবে তাঁর রূপক কনে হয়েছিলেন। মশীহের জন্য পথ প্রস্তুত করার সময় যোহন বাপ্তাইজক “কনে” শ্রেণির প্রথম সদস্যদের যিশু খ্রিস্টের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। (যোহন ১:২৯, ৩৫; ২করি ১১:২; ইফি ৫:২২-২৭; প্রকা ২১:২, ৯) সফলভাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে “বরের বন্ধু” তার উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করতেন; এরপর তার আর মুখ্য ভূমিকা থাকত না। একইভাবে, যিশুর সঙ্গে তুলনা করে যোহন নিজের বিষয়ে এই কথা বলেছিলেন: “তাঁকে বৃদ্ধি পেতে হবে, কিন্তু আমাকে হ্রাস পেতে হবে।”—যোহন ৩:৩০.
nwtsty স্টাডি নোট—যোহন ৪:১০
জীবন্ত জল: এই গ্রিক অভিব্যক্তিটা আক্ষরিক অর্থে প্রবাহিত জল, ঝরনার জল অথবা বিভিন্ন ঝরনা থেকে একটা গর্তে সঞ্চিত হওয়া মিঠাজল বোঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। এটা একটা কুয়োর মধ্যে থাকা স্থির জল থেকে আলাদা। লেবীয় ১৪:৫ পদে “স্রোতোজল” হিসেবে অনুবাদিত ইব্রীয় অভিব্যক্তির আক্ষরিক অর্থ “জীবন্ত জল।” যির ২:১৩ ও ১৭:১৩ পদে যিহোবাকে “জীবন্ত জলের” জীবনদায়ক রূপক জলের “উৎস [বা ঝরনা]” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। শমরীয় মহিলার সঙ্গে কথা বলার সময় যিশু “জীবন্ত জল” শব্দটা রূপকভাবে ব্যবহার করেছিলেন, কিন্তু মনে হয় সেই মহিলা যিশুর কথাটা প্রথমে আক্ষরিক অর্থেই বুঝেছিলেন।—যোহন ৪:১১; যোহন ৪:১৪ পদের স্টাডি নোট দেখুন।
সেপ্টেম্বর ১৭-২৩
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | যোহন ৫-৬
“সঠিক উদ্দেশ্য নিয়ে যিশুকে অনুসরণ করুন”
nwtsty স্টাডি নোট—যোহন ৬:১০
পুরুষেরা সেখানে বসে গেল, তাদের সংখ্যা প্রায় ৫,০০০: এই অলৌকিক কাজের বিবরণ তুলে ধরার সময়, শুধুমাত্র মথির বিবরণেই, “সেইসঙ্গে মহিলা ও অল্পবয়সি ছেলে-মেয়েও ছিল” এই কথাগুলো যুক্ত রয়েছে। (মথি ১৪:২১) তাই, যাদের অলৌকিকভাবে খাওয়ানো হয়েছিল, তাদের সংখ্যা সম্ভবত ১৫,০০০-রেরও বেশি ছিল।
nwtsty স্টাডি নোট—যোহন ৬:১৪
ভাববাদী: প্রথম শতাব্দীতে অনেক যিহুদি আশা করেছিল, দ্বিতীয় ১৮:১৫, ১৮ পদে উল্লেখিত মোশির মতো একজন ভাববাদী মশীহ হবেন। এই প্রসঙ্গে জগতে আসার অভিব্যক্তিটা মশীহের প্রত্যাশিত উপস্থিতিকে বোঝাতে পারে বলে মনে হয়। শুধু যোহনই এই পদে উল্লেখিত ঘটনা সম্বন্ধে লিখেছেন।
nwtsty স্টাডি নোট—যোহন ৬:২৭, ৫৪
যে-খাবার নষ্ট হয়ে যায় . . . যে-খাবার অনন্তজীবন পর্যন্ত থাকে: যিশু এটা বুঝতে পেরেছিলেন, কিছু লোক শুধু বস্তুগত সুবিধা লাভ করার জন্য তাঁর ও তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে মেলামেশা করত। যেখানে আক্ষরিক খাবার লোকেদের এক-একটা দিন বাঁচিয়ে রাখে, সেখানে ঈশ্বরের বাক্য থেকে পাওয়া “খাবার” দ্বারা মানুষের পক্ষে চিরকাল বেঁচে থাকা সম্ভব হবে। যিশু “যে-খাবার অনন্তজীবন পর্যন্ত থাকে,” সেই খাবারের জন্য লোকেদের পরিশ্রম করতে অর্থাৎ তাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা মেটানোর জন্য প্রচেষ্টা করতে ও তারা যা শেখে তাতে বিশ্বাস করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন।—মথি ৪:৪; ৫:৩; যোহন ৬:২৮-৩৯.
আমার মাংস খায় ও আমার রক্ত পান করে: প্রসঙ্গ ইঙ্গিত দেয় যে, যারা খায় ও পান করে, তারা যিশু খ্রিস্টকে বিশ্বাস করার মাধ্যমে রূপক অর্থে তা করে। (যোহন ৬:৩৫, ৪০) যিশু যেহেতু ৩২ খ্রিস্টাব্দে এই কথা বলেছিলেন, তাই তিনি প্রভুর সান্ধ্যভোজ নিয়ে আলোচনা করছিলেন না, যা তিনি এক বছর পর প্রবর্তন করবেন। তিনি ‘নিস্তারপর্ব অর্থাৎ যিহুদিদের পর্বের’ আগে এই কথা বলেছিলেন (যোহন ৬:৪), তাই এটা হয়তো তাঁর শ্রোতাদের আসন্ন পর্বের বিষয়ে এবং ইস্রায়েলীয়রা যে-রাতে মিশর ত্যাগ করেছিল, সেই রাতে জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে মেষশাবকের রক্তের তাৎপর্যের বিষয়ে মনে করিয়ে দিয়েছিল। (যাত্রা ১২:২৪-২৭) যিশু এই বিষয়ের উপর জোর দিচ্ছিলেন যে, একইভাবে তাঁর রক্ত তাঁর শিষ্যদের অনন্তজীবন লাভ করার ক্ষেত্রে এক অপরিহার্য ভূমিকা পালন করবে।
প্রহরীদুর্গ ০৫ ৯/১ ২১ অনু. ১৩-১৪
আমরা আমাদের ঈশ্বর যিহোবার নামে চলব
১৩ তা সত্ত্বেও, জনতা যিশুকে অনুসরণ করেই চলেছিল এবং যোহন যেমনটা বলেন, তাঁকে “সমুদ্রের পারে” খুঁজে পেয়েছিল। তাঁকে রাজা করার বিষয়ে তাদের প্রচেষ্টাকে তিনি পরিহার করার পরও কেন তারা তাঁকে অনুসরণ করেছিল? অনেকে এক মাংসিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছিল, মোশির দিনে প্রান্তরে যিহোবা যে-বস্তুগত বিষয়গুলো জুগিয়েছিলেন, সেগুলোর বিষয়ে তারা জোর দিয়ে বলেছিল। তারা পরোক্ষভাবে বলতে চেয়েছিল যে, যিশুর উচিত ক্রমাগত তাদের জন্য বস্তুগত বিষয়গুলো জোগানো। যিশু তাদের ভুল উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে তাদেরকে আধ্যাত্মিক সত্যগুলো শেখাতে শুরু করেছিলেন, যেগুলো তাদের চিন্তাভাবনাকে সমন্বয় করার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে। (যোহন ৬:১৭, ২৪, ২৫, ৩০, ৩১, ৩৫-৪০) উত্তরে, কেউ কেউ তাঁর বিরুদ্ধে বচসা করেছিল, বিশেষভাবে যখন তিনি সেই দৃষ্টান্তটা দিয়েছিলেন: “সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমরা যদি মনুষ্যপুত্ত্রের মাংস ভোজন ও তাঁহার রক্ত পান না কর, তোমাদিগেতে জীবন নাই। যে আমার মাংস ভোজন ও আমার রক্ত পান করে, সে অনন্ত জীবন পাইয়াছে, এবং আমি তাহাকে শেষ দিনে উঠাইব।”—যোহন ৬:৫৩, ৫৪.
১৪ যিশুর দৃষ্টান্তগুলো প্রায়ই লোকেদের এটা দেখাতে প্রেরণা দিয়েছিল যে, তারা সত্যিই ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করতে চায় কি না। এই দৃষ্টান্তটা এর ব্যতিক্রম ছিল না। এটা জোরালো প্রতিক্রিয়ার উদ্রেক করেছিল। আমরা পড়ি: “তাঁহার শিষ্যদের মধ্যে অনেকে এ কথা শুনিয়া বলিল, এ কঠিন কথা, কে ইহা শুনিতে পারে?” যিশু ব্যাখ্যা করে চলেছিলেন যে, তাদের তাঁর কথাগুলোর আধ্যাত্মিক অর্থ খোঁজা উচিত। তিনি বলেছিলেন: “আত্মাই জীবনদায়ক, মাংস কিছু উপকারী নয়; আমি তোমাদিগকে যে সকল কথা বলিয়াছি, তাহা আত্মা ও জীবন।” তা সত্ত্বেও, অনেক লোক শোনেনি আর সেই বিবরণ বর্ণনা করে: “ইহাতে তাঁহার অনেক শিষ্য পিছাইয়া পড়িল, তাঁহার সঙ্গে আর যাতায়াত করিল না।”—যোহন ৬:৬০, ৬৩, ৬৬.
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
nwtsty স্টাডি নোট—যোহন ৬:৪৪
তিনি টেনে . . . আনলে: যদিও “টেনে আনা” শব্দের জন্য ব্যবহৃত গ্রিক ক্রিয়া পদটা মাছে ভরা একটা জাল টেনে তোলার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে (যোহন ২১:৬, ১১), কিন্তু এটা এমন ইঙ্গিত দেয় না যে, লোকেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ঈশ্বর তাদের টেনে আনেন। এ ছাড়া, এই ক্রিয়া পদের অর্থ হতে পারে “আকর্ষণ করা” এবং যিশুর এই উক্তি হয়তো পরোক্ষভাবে যির ৩১:৩ পদকে বোঝাতে পারে, যেখানে যিহোবা তাঁর প্রাচীন কালের লোকেদের বলেছিলেন: “আমি অটল ভালোবাসা দিয়ে তোমাদের কাছে টেনে এনেছি।” (সেপ্টুয়াজিন্ট-এ এখানে একই গ্রিক ক্রিয়া পদ ব্যবহার করা হয়েছে।) যোহন ১২:৩২ পদ প্রকাশ করে, একইভাবে যিশু সমস্ত ধরনের ব্যক্তিকে তাঁর কাছে টেনে আনেন। শাস্ত্র প্রকাশ করে, যিহোবা মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছা দিয়েছেন। যখন তাঁকে সেবা করার বিষয়টা আসে, তখন প্রত্যেকের একটা বাছাই থাকে। (দ্বিতীয় ৩০:১৯, ২০) যে-ব্যক্তিদের সঠিক প্রবণতাসম্পন্ন হৃদয় রয়েছে, তাদের ঈশ্বর কোমলভাবে টেনে আনেন। (গীত ১১:৫; হিতো ২১:২; প্রেরিত ১৩:৪৮) বাইবেলের বার্তা ও তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে যিহোবা তা করেন। যিশা ৫৪:১৩ পদের ভবিষ্যদ্বাণী, যা যোহন ৬:৪৫ পদে উদ্ধৃত করা হয়েছে, সেটা সেই ব্যক্তিদের প্রতি প্রযোজ্য, যাদের যিহোবা কাছে টেনে আনেন।—তুলনা করুন, যোহন ৬:৬৫.
nwtsty স্টাডি নোট—যোহন ৬:৬৪
যিশু . . . জানতেন, . . . কে তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে: যিশু ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদার বিষয়ে বলছিলেন। যিশু ১২ জন প্রেরিতকে বাছাই করার আগে পুরো রাত ধরে তাঁর পিতার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। (লূক ৬:১২-১৬) তাই, প্রথমে যিহূদা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন। কিন্তু, ইব্রীয় শাস্ত্র-এর বিভিন্ন ভবিষ্যদ্বাণী থেকে যিশু এটা জানতেন, তাঁর একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে। (গীত ৪১:৯; ১০৯:৮; যোহন ১৩:১৮, ১৯) যিহূদা যখন মন্দ হতে শুরু করেছিলেন, তখন যিশু—যিনি হৃদয় ও চিন্তাভাবনা বুঝতে পারেন—সেই পরিবর্তন শনাক্ত করতে পেরেছিলেন। (মথি ৯:৪) ঈশ্বর, তাঁর আগে থেকে জানার ক্ষমতা ব্যবহার করে এটা জানতে পেরেছিলেন, যিশুর একজন নির্ভরযোগ্য সহযোগী বিশ্বাসঘাতকে পরিণত হবে। তবে, এমনটা চিন্তা করা ঈশ্বরের গুণাবলি ও অতীতের আচরণের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় যে, যিহূদাই সেই ব্যক্তি, যিনি ব্যর্থ হবেন এবং তার সেই ব্যর্থতা পূর্বনির্ধারিত।
শুরু থেকেই: এই অভিব্যক্তি যিহূদার জন্মের সময়কে কিংবা যিশু পুরো রাত ধরে প্রার্থনা করার পর তাকে একজন প্রেরিত হিসেবে বাছাই করার সময়কে নির্দেশ করে না। (লূক ৬:১২-১৬) বরং এটা যিহূদা প্রতারণাপূর্ণ আচরণ করতে শুরু করার সময়কে নির্দেশ করে, যা যিশু সঙ্গেসঙ্গে শনাক্ত করেছিলেন। (যোহন ২:২৪, ২৫; প্রকাশিত বাক্য ১:১; ২:২৩; দেখুন, যোহন ৬:৭০; ১৩:১১ পদের স্টাডি নোট।) এ ছাড়া, এটা প্রকাশ করে, যিহূদা হৃদয়ের হঠাৎ পরিবর্তনের কারণে নয় বরং আগে থেকে চিন্তা করে ও পরিকল্পিতভাবে এই কাজগুলো করেছিলেন। খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এ প্রসঙ্গ অনুযায়ী “শুরু” (গ্রিক আরখে) শব্দের বিভিন্ন অর্থ রয়েছে। যেমন, ২পিতর ৩:৪ পদে “শুরু” বা আরম্ভ শব্দটা সৃষ্টির শুরুকে নির্দেশ করে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই শব্দ আরও নির্দিষ্ট অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, পিতর বলেছিলেন, পরজাতীয়দের উপর পবিত্র আত্মা বর্ষিত হয়েছিল, “ঠিক যেমন শুরুতে আমাদের উপরে হয়েছিল।” (প্রেরিত ১১:১৫) পিতর এখানে তার জন্মের সময়কে কিংবা যখন থেকে তাকে একজন প্রেরিত বলা হয়, সেই সময়কে নির্দেশ করছিলেন না। বরং তিনি ৩৩ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিনকে অর্থাৎ একটা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে পবিত্র আত্মা বর্ষণের “শুরুকে” নির্দেশ করছিলেন। (প্রেরিত ২:১-৪) প্রসঙ্গের কারণে “শুরু” শব্দটার অর্থ যেভাবে বিভিন্নরকম হতে পারে সেটার অন্যান্য উদাহরণ লূক ১:২; যোহন ১৫:২৭; ১ যোহন ২:৭ পদে পাওয়া যেতে পারে।
সেপ্টেম্বর ২৪-৩০
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | যোহন ৭-৮
“যিশু তাঁর পিতাকে গৌরবান্বিত করেছিলেন”
“আমার পশ্চাদ্গামী হও” ১০০-১০১ অনু. ৫-৬, ইংরেজি
“লেখা আছে”
৫ যিশু চেয়েছিলেন যেন লোকেরা জানতে পারে, তাঁর বার্তা কোথা থেকে এসেছে। তিনি বলেছিলেন: “আমার উপদেশ আমার নহে, কিন্তু যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহার।” (যোহন ৭:১৬) আরেক বার তিনি বলেছিলেন: “আমি আপনা হইতে কিছুই করি না, কিন্তু পিতা আমাকে যেমন শিক্ষা দিয়াছেন, তদনুসারে এই সকল কথা কহি।” (যোহন ৮:২৮) এ ছাড়া, তিনি এটাও বলেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে যে সকল কথা বলি, তাহা আপনা হইতে বলি না; কিন্তু পিতা আমাতে থাকিয়া আপনার কার্য্য সকল সাধন করেন।” (যোহন ১৪:১০) একটা যে-উপায়ে যিশু এই ধরনের মন্তব্যের সত্যতা প্রমাণ করেছিলেন তা হল, ঈশ্বরের লিখিত বাক্য থেকে বার বার উদ্ধৃতি করার মাধ্যমে।
৬ যিশুর বলা কথাগুলো ভালোভাবে অধ্যয়ন করলে বোঝা যায় যে, তিনি ইব্রীয় শাস্ত্র-এর প্রামাণিক অংশের অর্ধেকেরও বেশি বই থেকে সরাসরি অথবা পরোক্ষভাবে উদ্ধৃতি করেছিলেন। প্রথমে, এই বিষয়টা তেমন উল্লেখযোগ্য বলে মনে না-ও হতে পারে। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, তিনি তো সাড়ে তিন বছর ধরে জনসাধারণ্যে শিক্ষা দেওয়ার ও প্রচার করার সময় প্রাপ্তিসাধ্য সমস্ত অনুপ্রাণিত বই থেকে উদ্ধৃতি করেননি। তবে সত্য বিষয়টা হল, তিনি হয়তো তা করেছেন। মনে রাখুন, যিশুর কথা ও কাজের কেবল ক্ষুদ্র অংশের বিবরণ লিপিবদ্ধ রয়েছে। (যোহন ২১:২৫) আসলে, আপনি যদি বাইবেলে যিশুর বলা সমস্ত কথা পড়তে চান, তা হলে আপনি হয়তো মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা পড়ে ফেলতে পারবেন। এখন একটু কল্পনা করে দেখুন তো, আপনাকে যদি ঈশ্বর ও তাঁর রাজ্য সম্বন্ধে মাত্র কয়েক ঘণ্টা কথা বলতে দেওয়া হয় আর সেই সময়ের মধ্যে ইব্রীয় শাস্ত্র-এর অর্ধেকেরও বেশি বই থেকে তুলে ধরতে বলা হয়, তা হলে আপনি সেটা পারবেন কি না! এ ছাড়া, অধিকাংশ ক্ষেত্রে যিশু লিখিত গুটানো পুস্তক হাতে নিয়ে কথা বলেননি। তিনি যখন তাঁর বিখ্যাত পর্বতেদত্ত উপদেশ তুলে ধরেছিলেন, তখন তিনি ইব্রীয় শাস্ত্র থেকে অনেক সরাসরি ও পরোক্ষ উক্তি অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন—সবই তাঁর স্মরণশক্তি থেকে!
প্রহরীদুর্গ ১১ ৩/১৫ ১১ অনু. ১৯
জগতের নয় বরং ঈশ্বরের আত্মা লাভ করুন
১৯ যিহোবার প্রতি সম্পূর্ণ বাধ্যতা দেখান। যিশু সবসময় এমন বিষয়গুলো করতেন, যেগুলো তাঁর পিতাকে খুশি করে। তবে অন্ততপক্ষে এক বার, একটা পরিস্থিতির সঙ্গে যেভাবে মোকাবিলা করা যায় সেই বিষয়ে যিশুর চিন্তাভাবনা, তাঁর পিতা যেভাবে চেয়েছিলেন, সেটার চেয়ে ভিন্ন ছিল। তা সত্ত্বেও, তিনি আস্থা সহকারে তাঁর পিতাকে বলেছিলেন: “আমার ইচ্ছা নয়, তোমারই ইচ্ছা সিদ্ধ হউক।” (লূক ২২:৪২) নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘আমি কি সেই সময়েও ঈশ্বরের বাধ্য থাকি, এমনকী যখন তা থাকা সহজ নয়?’ ঈশ্বরের প্রতি বাধ্যতা জীবনের জন্য অপরিহার্য। আমাদের নির্মাতা অর্থাৎ জীবনের উৎস ও রক্ষাকর্তা হিসেবে তাঁর প্রতি আমাদের অবশ্যই সম্পূর্ণ বাধ্যতা দেখাতে হবে। (গীত. ৯৫:৬, ৭) বাধ্যতার কোনো বিকল্প নেই। বাধ্যতা ছাড়া আমরা যিহোবার অনুগ্রহ লাভ করতে পারি না।
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
কেন সত্যবাদী হবেন?
এই ক্ষেত্রে যিশু খ্রিস্ট কোন উদাহরণ স্থাপন করেছেন? একবার যিশু কিছু অবিশ্বাসী ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলছিলেন, যারা তাঁর ভ্রমণ পরিকল্পনা সম্বন্ধে আগ্রহ দেখিয়েছিল। “এখান হইতে প্রস্থান কর, যিহূদিয়াতে চলিয়া যাও,” তারা তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিল। যিশু কী উত্তর দিয়েছিলেন? “তোমরাই পর্ব্বে [যিরূশালেমে] যাও; আমি এখনও এই পর্ব্বে যাইতেছি না, কেননা আমার সময় এখনও সম্পূর্ণ হয় নাই।” এর কিছু পরে, যিশু পর্বের জন্য যিরূশালেমে গিয়েছিলেন। কেন তিনি এইরকম উত্তর দিয়েছিলেন? কারণ, তিনি কখন কোথায় থাকবেন, সেই সম্বন্ধে যথাযথ বিশদ বিবরণ জানার কোনো অধিকার তাদের ছিল না। তাই যদিও যিশু কোনো অসত্য বলেননি কিন্তু তাদেরকে এক অসম্পূর্ণ উত্তর দিয়েছিলেন, যাতে তিনি তাঁর অথবা তাঁর অনুসারীদের প্রতি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাকে কমাতে পারেন। এটা কোনো মিথ্যা ছিল না কারণ প্রেরিত পিতর খ্রিস্টের সম্বন্ধে লিখেছিলেন: “তিনি পাপ করেন নাই, তাঁহার মুখে কোন ছলও পাওয়া যায় নাই।”—যোহন ৭:১-১৩; ১ পিতর ২:২২.
nwtsty স্টাডি নোট—যোহন ৮:৫৮
আমি আছি: বিরোধী যিহুদিরা যিশুকে পাথর মারতে চেয়েছিল কারণ তিনি দাবি করছেন, তিনি ‘অব্রাহামকে দেখেছেন,’ যদিও তাদের কথা অনুযায়ী যিশুর বয়স “এখনও পঞ্চাশ বছর হয়নি।” (যোহন ৮:৫৭) যিশু আসলে তাঁর উত্তরের মাধ্যমে তাদের এটা বলতে চেয়েছিলেন, অব্রাহামের জন্মের আগে একজন শক্তিমান আত্মিক প্রাণী হিসেবে স্বর্গে তাঁর মনুষ্যপূর্ব অস্তিত্ব ছিল। কেউ কেউ দাবি করে, এই পদ যিশুকে ঈশ্বর হিসেবে তুলে ধরে। তারা যুক্তি করে, এখানে যে-গ্রিক অভিব্যক্তি এগোইমি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা সেপ্টুয়াজিন্ট অনুবাদের যাত্রা ৩:১৪ পদের পরোক্ষ উক্তি, যেখানে ঈশ্বর নিজের পরিচয় দেন। তারা বলে, দুটো পদই একইভাবে অর্থাৎ বর্তমান কাল ব্যবহার করে অনুবাদ করা উচিত। (যোহন ৪:২৬ পদের স্টাডি নোট দেখুন।) কিন্তু এই প্রসঙ্গে, গ্রিক ক্রিয়া পদ ইমি দ্বারা যে-কাজ সম্বন্ধে বলা হয়েছে, তা “অব্রাহামের জন্মের আগে থেকে” শুরু হয়েছিল ও তখনও চলছিল। বেশ কিছু প্রাচীন ও আধুনিক অনুবাদে এই পদ বর্তমান কাল ব্যবহার না করে এভাবেই অনুবাদ করা হয়েছে। আসলে, যোহন ১৪:৯ পদে যিশুর কথা অনুবাদ করার জন্য গ্রিক ক্রিয়া পদ ইমি-র একই রূপ ব্যবহার করা হয়েছে: “ফিলিপ, আমি এতদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি, তারপরও কি তোমরা আমাকে জানতে পারনি?” অধিকাংশ অনুবাদে এমন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয়, সেই কাজ (শিষ্যদের সঙ্গে যিশুর থাকা) অতীতে শুরু হয়েছিল ও তখনও চলছিল। (গ্রিক ক্রিয়া পদের বর্তমান কাল, যা ইঙ্গিত দেয় কোনো কাজ অতীতে শুরু হয়েছে ও এখনও চলছে, সেই সম্বন্ধে অন্যান্য উদাহরণ লূক ২:৪৮; ১৩:৭; ১৫:২৯; যোহন ১:৯; ৫:৬; ১৫:২৭; প্রেরিত ১৫:২১; ২করি ১২:১৯; ১যোহন ৩:৮ পদে পাওয়া যায়।) এ ছাড়া, যোহন ৮:৫৪, ৫৫ পদে লিপিবদ্ধ যিশুর যুক্তি এটা প্রকাশ করে, তিনি নিজেকে ও তাঁর পিতাকে একই ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেননি।