শিক্ষা ৫
প্রাপ্তবয়স্কদের নির্দেশনা মূল্যবান
কারা সন্তানদের নির্দেশনা দেবে?
প্রাপ্তবয়স্কদের কাছ থেকে সন্তানদের নির্দেশনা এবং পরামর্শ গ্রহণ করার প্রয়োজন রয়েছে। এই ভূমিকা পালন করার ক্ষেত্রে বাবা-মা হিসেবে আপনারা সব থেকে ভালো অবস্থানে রয়েছেন, আর এটা আপনাদের দায়িত্ব। কিন্তু, অন্যান্য প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরাও আপনার সন্তানকে সাহায্য করতে এবং পরামর্শ দিতে পারেন।
প্রাপ্তবয়স্কদের নির্দেশনা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
অনেক জায়গায় অল্পবয়সিরা প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের সঙ্গে খুবই অল্প সময় কাটায়। এই বিষয়গুলো বিবেচনা করুন:
সন্তানরা দিনের বেশির ভাগ সময়টা তাদের স্কুলে তাদের সহপাঠীদের সঙ্গে কাটিয়ে থাকে, যেখানে শিক্ষক এবং অন্যান্য প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
কোনো কোনো সন্তান স্কুলের পর যখন বাড়ি ফিরে আসে, তখন তাকে একা থাকতে হয়, কারণ তার বাবা-মা উভয়কেই কাজে যেতে হয়।
একটা গবেষণা দেখায় যে, যুক্তরাষ্ট্রে আট থেকে বারো বছর বয়সি সন্তানরা প্রত্যেক দিন গড়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা বিনোদনের পিছনে ব্যয় করে থাকে।a
হোল্ড অন টু ইওর কিড্স বইটি বলে, “বর্তমানে অনেক কিশোর-কিশোরী তাদের বাবা-মা, শিক্ষক-শিক্ষিকা অথবা প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের কাছ থেকে নির্দেশনা ও পরামর্শ না নিয়ে বরং তাদের সমবয়সিদের কাছ থেকে নিয়ে থাকে আর তাদের দ্বারা নিজেদের প্রভাবিত হতে দেয়।”
যেভাবে নির্দেশনা প্রদান করা যায়
সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটান।
বাইবেলের নীতি: “বালককে তাহার গন্তব্য পথানুরূপ শিক্ষা দেও, সে প্রাচীন হইলেও তাহা ছাড়িবে না।”—হিতোপদেশ ২২:৬.
সন্তানরা সাধারণত তাদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে নির্দেশনা এবং সাহায্য পেতে চায়। সত্যি বলতে কী, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কিশোর বয়সি সন্তানরা তাদের বন্ধুদের কাছ থেকে নয় বরং বাবা-মায়ের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পছন্দ করে। আপনি ও আপনার কিশোরবয়সি সন্তান (ইংরেজি) বইয়ে, মনোবিজ্ঞানের একজন অধ্যাপক ড. লরেন্স স্টেইনবার্গ বলেন, “সন্তানরা কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পৌঁছানো পর্যন্ত, তাদের মনোভাব ও আচরণের উপর বাবা-মায়েরা জোরালো প্রভাব ফেলতে পারেন। তিনি আরও বলেন, বাবা-মায়েরা কীভাবে চিন্তা করেন, তা কিশোর বয়সি সন্তানরা জানতে চায়, সেইসঙ্গে বাবা-মায়েরা যখন তাদের কোনো পরামর্শ এবং নির্দেশনা দিয়ে থাকেন, তখন সবসময় তা মেনে না নিলেও, তারা তাদের কথা শুনতে পছন্দ করে।”
আপনার সন্তানদের নির্দেশনা চাওয়ার এই স্বাভাবিক প্রবণতাকে সঠিক উপায়ে কাজে লাগান। তাদের সঙ্গে সময় কাটান আর সেইসঙ্গে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ ও জীবনের অভিজ্ঞতাগুলো তাদের বলুন।
অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে সাহায্য করুন।
বাইবেলের নীতি: “জ্ঞানীদের সহচর হও, জ্ঞানী হইবে।”—হিতোপদেশ ১৩:২০.
আপনি কি কোনো অভিজ্ঞ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে জানেন, যিনি আপনার কিশোর বয়সি সন্তানকে সাহায্য ও পরামর্শ প্রদান করার সঙ্গে সঙ্গে আপনি যে-বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনিও তা করে? যদি তা-ই হয়, তা হলে আপনার সন্তানের সঙ্গে সেই ব্যক্তির সময় কাটানোর ব্যবস্থা করুন না কেন! তবে বাবা-মা হিসেবে আপনাদের দায়িত্ব, সেই ব্যক্তির উপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। আপনার শিক্ষা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একজন নির্ভরযোগ্য প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়া সাহায্য আপনার সন্তানের জন্য উপকারজনক হতে পারে। বাইবেলে তীমথিয় নামে একজন ব্যক্তি, যুবক হওয়া সত্ত্বেও প্রেরিত পৌলের সঙ্গে মেলামেশা করার ফলে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছিলেন এবং পৌলও তীমথিয়ের সঙ্গে মেলামেশা করার ফলে উপকার লাভ করেছিলেন।—ফিলিপীয় ২:২০, ২২.
বিগত বছরগুলোতে দেখা গিয়েছে যে, এমন অনেক পরিবার রয়েছে, যাদের সদস্যরা একই বাড়িতে বা এলাকাতে বসবাস করে না। আর এটাও লক্ষ করা গিয়েছে যে, দাদু-দিদিমা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা পৃথিবীর অন্য প্রান্তে বাস করেন। আপনার ক্ষেত্রেও যদি এমনটা হয়ে থাকে, তা হলে আপনার কিশোর বয়সি সন্তানকে এমন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের কাছ থেকে শেখার সুযোগ করে দিন, যাদের মধ্যে সেই গুণগুলো রয়েছে, যেগুলো আপনি আপনার সন্তানদের মধ্যে দেখতে চান।
a গবেষণা আরও জানায় যে, কিশোর বয়সি ছেলে-মেয়েরা প্রত্যেক দিন গড়ে প্রায় নয় ঘণ্টা বিনোদনের পিছনে ব্যয় করে থাকে। তবে তারা স্কুলে অথবা হোমওয়ার্ক করার জন্য অনলাইনে যে-সময়টা ব্যয় করে থাকে, তা এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত নয়।