যে-ভবিষ্যদ্বাণীগুলো পরিপূর্ণ হয়েছে
প্রথম প্রবন্ধে আমরা ক্রিসাসের কাহিনি সম্বন্ধে উল্লেখ করেছি। তিনি ডেলফির দৈববাণীর দ্বারা ভ্রান্ত হন আর ফল স্বরূপ পারস্যরাজের কাছে পরাজিত হন। অন্যদিকে, বাইবেলে পারস্যরাজের বিষয়ে একটা উল্লেখযোগ্য ভবিষ্যদ্বাণী লিপিবদ্ধ রয়েছে, যেটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিপূর্ণ হয়েছে।
প্রায় ২০০ বছর পূর্বে—রাজা জন্মগ্রহণ করার অনেক আগে—ইব্রীয় ভাববাদী যিশাইয় কোরসের নাম উল্লেখ করেন আর তিনি কীভাবে পরক্রমী বাবিল নগর জয় করবেন, সেই বিষয়ে বর্ণনা করেন।
যিশাইয় ৪৪:২৪, ২৭, ২৮: “সদাপ্রভু এই কথা কহেন, . . . ‘তিনি অগাধ জলকে বলেন, শুষ্ক হও, আমি তোমার নদনদী শুকাইয়া ফেলিব। তিনি কোরসের উদ্দেশে কহেন, আমার পালরক্ষক, সে আমার সমস্ত মনোরথ সিদ্ধ করিবে। তিনি যিরূশালেমের বিষয়ে বলেন, সে পুনর্নির্ম্মিত হইবে, এবং মন্দিরকে বলেন, তোমার ভিত্তিমূল স্থাপিত হইবে।’”
গ্রিক ইতিহাসবেত্তা হেরোডোটাস জানান, কোরসের সৈন্যবাহিনী বাবিল নগরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ইউফ্রেটিস নদীর জলকে ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দেয়। কোরসের এই পরিকল্পনা সফল হয় এবং সৈন্যবাহিনী নদী পার হয়ে নগরের মধ্যে প্রবেশ করে। সেই নগর জয় করার পর, কোরস বাবিলের বন্দিত্ব থেকে যিহুদিদের মুক্ত করেন এবং তাদের যিরূশালেমে ফিরে যেতে ও সেই নগরকে পুনর্নির্মাণ করতে অনুমতি দেন। যিরূশালেম নগর ৭০ বছর আগে ধ্বংস হয়েছিল।
যিশাইয় ৪৫:১: “সদাপ্রভু আপন অভিষিক্ত ব্যক্তি, কোরসের, বিষয়ে এই কথা কহেন, আমি তাহার দক্ষিণ হস্ত ধরিয়াছি, আমি তাহার সম্মুখে নানা জাতিকে পরাভব করিব, আর রাজগণের কটিবন্ধ খুলিয়া ফেলিব; আমি তাহার অগ্রে কবাট সকল মুক্ত করিব, আর পুরদ্বার সকল বদ্ধ থাকিবে না।”
পারসিকরা দুই কবাটবিশিষ্ট বিশাল দরজা দিয়ে সেই নগরের মধ্যে প্রবেশ করে, যেটা অসতর্কভাবে খোলা ছিল। বাবিলীয়রা যদি কোরসের পরিকল্পনা সম্বন্ধে আগে থেকে জানত, তা হলে তারা হয়তো নদীর দিকের সমস্ত দরজা বন্ধ করে রাখত। কিন্তু ঘটনা দেখায়, সেই দিন দরজাগুলো খোলাই ছিল।
এই উল্লেখযোগ্য ভবিষ্যদ্বাণী সেই বহু ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর মধ্যে একটা, যেটা নির্ভুলভাবে পরিপূর্ণ হয়েছিল।a মানুষ যে-ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করত, সেগুলো তারা তাদের মিথ্যা দেবতাদের কাছ থেকে পেয়েছে বলে দাবি করত। কিন্তু এর বিপরীতে, যিনি বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করেছেন, তিনি ঘোষণা করেন: “আমি শেষের বিষয় আদি অবধি জ্ঞাত করি, যাহা সাধিত হয় নাই, তাহা পূর্ব্বে জানাই।”—যিশাইয় ৪৬:১০.
একমাত্র সত্যময় ঈশ্বর, যাঁর নাম যিহোবা, তিনিই এই ধরনের দাবি করতে পারেন। তাঁর নামের অর্থ হল, “তিনি অস্তিত্বে আনেন।” এটা ইঙ্গিত দেয়, যিহোবা ভবিষ্যতের বিভিন্ন ঘটনা সম্বন্ধে জানতে পারেন এবং তাঁর ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে, সেগুলো ঘটাতেও পারেন। এটা আমাদের আশ্বাস দেয়, তিনি যা-কিছু প্রতিজ্ঞা করেছেন, সেগুলো অবশ্যই পরিপূর্ণ করবেন।
যে-ভবিষ্যদ্বাণীগুলো বর্তমানে পরিপূর্ণ হচ্ছে
আপনি কি জানতে চান, আমাদের দিন সম্বন্ধে বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো কী জানায়? প্রায় ২,০০০ বছর আগে বাইবেল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল, “শেষ কালে” এক “বিষম সময়” আসবে। কীসের শেষকাল? পৃথিবী কিংবা মানবজাতির নয় কিন্তু শত্রুতা, অত্যাচার ও দুঃখকষ্টের, যেগুলো হাজার হাজার বছর ধরে মানুষের জন্য দুর্দশা নিয়ে এসেছে। আসুন আমরা কয়েকটা ভবিষ্যদ্বাণী পরীক্ষা করে দেখি, যেগুলো ‘শেষ কালকে’ শনাক্ত করে।
২ তীমথিয় ৩:১-৫: “শেষ কালে . . . মনুষ্যেরা আত্মপ্রিয়, অর্থপ্রিয়, আত্মশ্লাঘী, অভিমানী, ধর্ম্মনিন্দক, পিতামাতার অবাধ্য, অকৃতজ্ঞ, অসাধু, স্নেহরহিত, ক্ষমাহীন, অপবাদক, অজিতেন্দ্রিয়, প্রচণ্ড, সদ্বিদ্বেষী, বিশ্বাসঘাতক, দুঃসাহসী, গর্ব্বান্ধ, ঈশ্বরপ্রিয় নয়, বরং বিলাসপ্রিয় হইবে; লোকে ভক্তির অবয়বধারী, কিন্তু তাহার শক্তি অস্বীকারকারী হইবে।”
আপনি কি একমত হবেন না, বর্তমানে লোকেদের মধ্যে এই ধরনের মনোভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে? আপনি কি উপলব্ধি করতে পারছেন, আমাদের চারপাশের লোকেরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত, শুধু টাকাপয়সাকে ভালোবাসে আর গর্বিত? আপনি কি লক্ষ করছেন না, লোকেরা অন্যদের সঙ্গে একমত হওয়ার পরিবর্তে আরও বেশি দাবি করছে? আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ করছেন, বেশিরভাগ সন্তান বাবা-মায়ের অবাধ্য এবং লোকেরা ঈশ্বরকে নয় বরং বিলাসিতাকে ভালোবাসে। আর এই বিষয়গুলো দিন দিন আরও বেড়ে চলেছে।
মথি ২৪:৬, ৭: “আর তোমরা যুদ্ধের কথা ও যুদ্ধের জনরব শুনিবে; . . . জাতির বিপক্ষে জাতি ও রাজ্যের বিপক্ষে রাজ্য উঠিবে।”
কিছু পরিসংখ্যান দেখায়, ১৯১৪ সাল থেকে যুদ্ধ ও সশস্ত্র হামলার ফলে ১০ কোটির চেয়েও বেশি লোক প্রাণ হারিয়েছে। এই সংখ্যা অনেক দেশের মোট জনসংখ্যাকে ছাড়িয়ে যায়। এই বিশাল সংখ্যক মৃত্যুর জন্য কত লোকের চোখের জল পড়েছে, কত জনকে দুর্দশা ও যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে, তা একটু কল্পনা করুন। এই ভুল থেকে জাতিগুলো কি কিছু শিক্ষা লাভ করেছে এবং যুদ্ধ করা বন্ধ করেছে?
মথি ২৪:৭: ‘দুর্ভিক্ষ হইবে।’
ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম জানায়: “এই পৃথিবীতে যেখানে প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য উৎপন্ন হয়, সেখানে ৮১ কোটি ৫ লক্ষ লোক অর্থাৎ প্রতি নয় জনের মধ্যে এক জন, প্রত্যেক দিন খালি পেটে ঘুমাতে যায়।” এ ছাড়া, তিন জনের মধ্যে এক জন কোনো-না-কোনো ধরনের অপুষ্টিতে ভোগে। পরিসংখ্যান দেখায়, প্রত্যেক বছর তিরিশ লক্ষ শিশু না খেতে পেয়ে মারা যায়।
লূক ২১:১১: ‘মহৎ মহৎ ভূমিকম্প হইবে।’
প্রতি বছর প্রায় ৫০,০০০ এমন ভূমিকম্প হয়, যেগুলো মানুষ অনুভব করতে পারে আর প্রায় ১০০টা ভূমিকম্প ঘরবাড়ির প্রচুর ক্ষতি করে। প্রতি বছর অন্ততপক্ষে একটা ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৭৫ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে ভূমিকম্প ৪,৭১,০০০ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।
মথি ২৪:১৪: “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে; আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।”
আশি লক্ষেরও বেশি যিহোবার সাক্ষি পৃথিবীব্যাপী দেশ ও দ্বীপ মিলিয়ে প্রায় ২৪০টা জায়গায় প্রচার করছে এবং ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছে। তারা শহর, গ্রামাঞ্চলে, জঙ্গলে ও পাহাড়পর্বতে সুসমাচার ঘোষণা করছে। ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, যখন এই কাজ ঈশ্বরের সন্তুষ্টি অনুযায়ী সম্পূর্ণ হবে, তখন “শেষ উপস্থিত হইবে।” এর অর্থ কী? এর অর্থ হল, মানবশাসনের শেষ ও ঈশ্বরের রাজ্যশাসনের শুরু। যখন ঈশ্বরের রাজ্যে আসবে, তখন কোন প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ হবে? তা জানার জন্য পরবর্তী প্রবন্ধগুলো পড়ুন।
a “সঠিক ভবিষ্যদ্বাণীর এক নীরব সাক্ষি” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।