ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w18 জুন পৃষ্ঠা ২৬-২৯
  • আমি আমার সমস্ত উদ্‌বিগ্নতার মধ্যে সান্ত্বনা খুঁজে পেয়েছি

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • আমি আমার সমস্ত উদ্‌বিগ্নতার মধ্যে সান্ত্বনা খুঁজে পেয়েছি
  • প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০১৮
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • আমি আবারও যিহোবার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলি
  • আনন্দপূর্ণ অগ্রগামী সেবা
  • একটা সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পর আবার আনন্দ খুঁজে পাই
  • এক মর্মান্তিক ঘটনার মুখোমুখি হই
  • আমি অন্যদের সাহায্য করে আনন্দ খুঁজে পাচ্ছি
  • সত্তর বছর ধরে এক এক যিহুদির বস্ত্রের অঞ্চল ধরে থাকা
    ২০১২ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • যা সঠিক তা জানা এবং পালন করা
    ২০০৬ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • বিধবা হয়েও আমি প্রকৃত সান্ত্বনা পেয়েছি
    ১৯৯১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • “আমরা এই পরিচর্য্যা-পদ প্রাপ্ত হওয়ায় . . . নিরুৎসাহিত হই না”
    ১৯৯৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০১৮
w18 জুন পৃষ্ঠা ২৬-২৯
এডওয়ার্ড ও লিনে বেজলি

জীবনকাহিনি

আমি আমার সমস্ত উদ্‌বিগ্নতার মধ্যে সান্ত্বনা খুঁজে পেয়েছি

বলেছেন এডওয়ার্ড বেজলি

সিন্ধু নদীর পশ্চিম কূলে যে-এলাকাটা এখন পাকিস্তান নামে পরিচিত, সেখানে সাক্‌খার নামে একটা প্রাচীন শহর রয়েছে। এই শহরেই ১৯২৯ সালের ৯ নভেম্বর আমার জন্ম হয়। প্রায় সেই সময়েই, আমার বাবা-মা একজন ইংরেজ মিশনারির কাছ থেকে কয়েকটা রং-বেরঙের বইয়ের একটা সংকলন নেন। আমি বড়ো হয়ে ওঠার সময়ে, সেই বাইবেলভিত্তিক বইগুলো আমাকে সত্য শিখতে সাহায্য করে।

সেই বইগুলোকে রংধনু সংকলন বলা হতো আর সেগুলোকে পরীক্ষা করে দেখার সময়ে আমি এমন অনেক সুন্দর ছবি খুঁজে পাই, যেগুলো আমাকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কল্পনা করতে অনুপ্রাণিত করে। এর ফলে, ছোটো থেকেই আমি বাইবেলের জ্ঞান অর্জন করার আকাঙ্ক্ষা গড়ে তুলি, যেমনটা সেই চমৎকার বইগুলোতে তুলে ধরা হয়েছিল।

একদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যখন সমগ্র ভারতকে হুমকির মুখে ফেলছিল, তখন অন্যদিকে আমার জীবন যেন তছনছ হয়ে যাচ্ছিল। আমার বাবা-মা প্রথমে আলাদা হয়ে যান এবং পরে বিবাহবিচ্ছেদ করেন। আমার জীবনের সবচেয়ে কাছের দু-জন ব্যক্তি যে একে অন্যকে ছেড়ে চলে যাবে, এটা আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারিনি। আমি আবেগগতভাবে অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ি আর নিজেকে একা বলে মনে করতে থাকি। আমার কোনো ভাই-বোন ছিল না আর আমি যে-সান্ত্বনা ও সাহায্য পেতে চেয়েছিলাম, সেটা কোনো দিক থেকেই খুঁজে পাইনি।

সেই সময়, আমার মা ও আমি করাচি নামে এক প্রাদেশিক রাজধানীতে থাকতাম। একদিন, ফ্রেড হার্দেকার নামে একজন বয়স্ক যিহোবার সাক্ষি আমাদের দরজায় কড়া নাড়েন। তিনি একজন ডাক্তারও ছিলেন। তিনি সেই মিশনারির মতো একই ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন, যিনি আমাদের পরিবারকে সেই বইগুলো দিয়েছিলেন। তিনি আমার মাকে বাইবেল অধ্যয়নের প্রস্তাব দেন। মা এতে রাজি হন না, তবে বলেন যে, আমি এই বিষয়ে আগ্রহী হতে পারি। আমি পরের সপ্তাহ থেকেই ভাই হার্দেকারের সঙ্গে অধ্যয়ন করতে শুরু করি।

কয়েক সপ্তাহ পর, আমি খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দিতে শুরু করি, যেগুলো ভাই হার্দেকারের ডাক্তারখানায় অনুষ্ঠিত হতো। প্রায় ১২ জন বয়স্ক সাক্ষি সেখানে উপাসনার জন্য মিলিত হতেন। তারা আমাকে সান্ত্বনা দিতেন এবং তাদের ছেলের মতো করেই আমার যত্ন নিতেন। আমার এখনও মনে আছে, তারা আমার সঙ্গে বসতেন এবং নীচু হয়ে প্রকৃত বন্ধুর মতোই আমার সঙ্গে কথা বলতেন। সেই সময়, আমার এই বিষয়গুলোরই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল।

অল্পসময় পরই, ভাই হার্দেকার আমাকে তার সঙ্গে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান। তিনি আমাকে একটা বহনযোগ্য ফোনোগ্রাফ চালাতে শেখান, যাতে আমরা বাইবেলের সংক্ষিপ্ত বক্তৃতার রেকর্ডগুলো চালাতে পারি। কয়েকটা বক্তৃতা কিছু গৃহকর্তাকে অসন্তুষ্ট করেছিল কারণ তারা সেই বার্তা পছন্দ করেনি। কিন্তু, অন্যদের কাছে প্রচার করতে আমার দারুণ লাগত। বাইবেলের সত্যের বিষয়ে আমি খুবই উদ্যোগী ছিলাম আর সেই সত্যগুলো অন্যদের জানাতে আমার খুব ভালো লাগত।

জাপানি সেনাবাহিনী যখন ভারতকে আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ যিহোবার সাক্ষিদের উপর আরও বেশি করে চাপ দিয়েছিল। পরিশেষে ১৯৪৩ সালের জুলাই মাসে, আমার উপর সেই চাপ আসে। আমার স্কুলের প্রধান শিক্ষক একজন আ্যংলিকান পাদরি ছিলেন আর তিনি আমাকে স্কুল থেকে বের করে দেন। তিনি মাকে বলেন যে, আমি যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে মেলামেশা করি বলে অন্যান্য ছাত্রদের সামনে এক খারাপ উদাহরণ স্থাপন করছি। এটা শুনে মা প্রচণ্ড রেগে যান আর তিনি আমাকে সাক্ষিদের সঙ্গে কোনোরকম যোগাযোগ রাখতে বারণ করে দেন। পরে, তিনি আমাকে বাবার কাছে পাঠিয়ে দেন, যিনি প্রায় ১,৩৭০ কিলোমিটার (৮৫০ মাইল) উত্তরে পেশোয়ার নামে এক শহরে থাকতেন। যেহেতু আমি আধ্যাত্মিক খাদ্য ও মেলামেশা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়ি, তাই যিহোবার সঙ্গে আমার সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়ে।

আমি আবারও যিহোবার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলি

১৯৪৭ সালে আমি চাকরির খোঁজে করাচিতে ফিরে আসি। সেখানে আমি ডা. হার্দেকারের সঙ্গে দেখা করার জন্য তার ডাক্তারখানায় যাই। তিনি খুবই আনন্দের সঙ্গে আমাকে স্বাগত জানান।

তিনি ভেবেছিলেন, আমি তার কাছে কোনো চিকিৎসাগত পরামর্শ চাইতে এসেছি আর তাই, তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন: “বলো, তোমার কী হয়েছে?”

আমি তাকে বলি, ‘ডাক্তারবাবু, আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ নই। আমি আধ্যাত্মিকভাবে অসুস্থ। আমি বাইবেল অধ্যয়ন করতে চাই।’

তিনি জিজ্ঞেস করেন, “কখন শুরু করতে চাও?”

আমি বলি, “সম্ভব হলে এক্ষুনি!”

আমরা সারা সন্ধ্যা বাইবেল অধ্যয়ন করে এক চমৎকার সময় কাটাই। যিহোবার লোকেদের মাঝে ফিরে আসতে পারায় আমি প্রচুর স্বস্তি লাভ করি। সাক্ষিদের সঙ্গে আমার মেলামেশা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য আমার মা অনেক চেষ্টা করেন কিন্তু এই বার, আমি সত্যকে নিজের করে নেওয়ার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলাম। ১৯৪৭ সালের ৩১ আগস্ট আমি যিহোবার কাছে আমার উৎসর্গীকরণের প্রতীক হিসেবে জলে বাপ্তিস্ম নিই। শীঘ্রই, ১৭ বছর বয়সে আমি নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতে শুরু করি।

আনন্দপূর্ণ অগ্রগামী সেবা

অগ্রগামী হিসেবে আমার প্রথম কার্যভার ছিল কোয়েটা নামে এক এলাকায়, যেটা ছিল একটা প্রাক্তন ব্রিটিশ সামরিক আবাসন। ১৯৪৭ সালে, দেশ ভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুই দেশে পরিণত হয়।a এই ঘটনার কারণে সারা দেশে ধর্মের নামে দৌরাত্ম্যের আগুন ছড়িয়ে যায় আর এর ফলে, প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ শরণার্থীকে নিজেদের এলাকা ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যেতে হয়। এটা ছিল মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বিরল ঘটনাগুলোর মধ্যে একটা। ভারতের মুসলমানদের পাকিস্তানে যেতে হয় আর পাকিস্তানের হিন্দু ও শিখদের ভারতে যেতে হয়। এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে আমি করাচি থেকে কোয়েটা যাওয়ার জন্য একটা ট্রেন ধরি, যেটা লোকে ঠাসা ছিল। বেশিরভাগ পথটাই আমি অত্যন্ত বিপদজনকভাবে ট্রেনের গায়ে লাগানো একটা হাতল ধরে ঝুলে ছিলাম।

১৯৪৮ সালে ভারতে একটা সীমা সমলনে এডওয়ার্ড বেজলি ও অন্যেরা

১৯৪৮ সালে আমি ভারতে একটা সীমা সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলাম

কোয়েটায় আমার জর্জ সিং নামে একজন বিশেষ অগ্রগামীর সঙ্গে দেখা হয়, যার বয়স সেইসময় ২০-র কোঠার মাঝের দিকে ছিল। জর্জ আমাকে একটা পুরোনো সাইকেল দেন, যেটা আমি সেই পাহাড়ি অঞ্চলে চালাতে (কিংবা হাঁটিয়ে নিয়ে যেতে) পারতাম। বেশিরভাগ সময়, আমি একাই প্রচার করতাম। ছয় মাসের মধ্যেই আমি ১৭টা বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করি এবং ছাত্রদের মধ্যে কেউ কেউ এমনকী সত্য গ্রহণ করে। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন সাদিক্‌ মাসিহ্‌ নামে একজন আর্মি অফিসার। তিনি আমাকে ও জর্জকে কয়েকটা বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনা পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা উর্দুতে অনুবাদ করতে সাহায্য করেন। একসময়, সাদিক্‌ সুসমাচারের একজন উদ্যোগী প্রকাশক হয়ে ওঠেন।

এডওয়ার্ড বেজলি ও অন্যেরা কুইন এলিজাবেথ জাহাজে চড়ে গিলিয়েড স্কুল-এ যাচ্ছন

কুইন এলিজাবেথ জাহাজে চড়ে গিলিয়েড স্কুল-এ যাওয়ার সময়ে

পরে, আমি করাচিতে ফিরে যাই এবং হেনরি ফিঞ্চ ও হ্যারি ফরেস্ট নামে দু-জন মিশনারির সঙ্গে সেবা করি, যারা সবেমাত্র গিলিয়েড স্কুল-এ যোগ দিয়ে এসেছিলেন। তারা আমাকে ঈশ্বরের সেবায় কতই-না মূল্যবান প্রশিক্ষণ দেন! একবার, আমি ভাই ফিঞ্চের সঙ্গে পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে প্রচারের এক অভিযানে যাই। সেখানে উঁচু উঁচু পর্বতমালার নীচের এলাকায় আমরা এমন অনেক নম্রমনা উর্দুভাষী লোকেদের খুঁজে পাই, যারা বাইবেলের সত্যের জন্য পিপাসিত ছিল। দু-বছর পর, আমিও গিলিয়েড স্কুল-এ যোগ দেওয়ার সুযোগ পাই আর তারপর, আমি পাকিস্তানেই ফিরে আসি আর কখনো কখনো সেখানে একজন সীমা অধ্যক্ষ হিসেবে সেবা করি। আমি তিন জন মিশনারি ভাইয়ের সঙ্গে লাহোরে একটা মিশনারি হোমে থাকতাম।

একটা সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পর আবার আনন্দ খুঁজে পাই

দুঃখের বিষয় হল, ১৯৫৪ সালে লাহোরে সেবারত মিশনারিদের মধ্যে সমস্যা দেখা দেয় কারণ তারা একে অন্যের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না আর এই কারণে শাখা অফিসকে তাদের কার্যভার পরিবর্তন করতে হয়। যেহেতু আমি মূর্খের মতো সেই বিতর্কে একটা পক্ষ নিয়েছিলাম, তাই আমাকে দৃঢ়ভাবে সংশোধন করা হয়। আমি এতে একেবারে ভেঙে পড়ি আর ভাবি যে, একজন ঈশ্বরভয়শীল ব্যক্তি হিসেবে চলার ক্ষেত্রে আমি ব্যর্থ হয়েছি। আমি প্রথমে করাচিতে ফিরে যাই আর তারপর এই ভেবে ইংল্যান্ডের লন্ডনে চলে যাই যে, আমি ভিন্ন এক জায়গায় নতুন করে যিহোবার সেবা শুরু করব।

লন্ডনে আমি যে-মণ্ডলীর সঙ্গে যোগ দিতাম, সেটাতে লন্ডন বেথেল পরিবারের অনেক সদস্য ছিল। প্রাইস হিউজ নামে একজন সদয় ভাই প্রেমের সঙ্গে আমাকে প্রশিক্ষণ জোগান। একদিন, তিনি আমাকে তার জীবনের একটা ঘটনা সম্বন্ধে বলেন, যখন তিনি ভাই জোসেফ এফ. রাদারফোর্ডের কাছ থেকে দৃঢ় সংশোধন লাভ করেছিলেন, যিনি সেইসময় বিশ্বব্যাপী প্রচার কাজের দেখাশোনা করছিলেন। ভাই হিউজ যখন নিজেকে সঠিক বলে প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন, তখন ভাই রাদারফোর্ড কঠোরভাবে তাকে ধমক দিয়েছিলেন। আমি এটা দেখে অবাক হয়ে যাই যে, ভাই হিউজ যখন সেই ঘটনার কথা চিন্তা করছিলেন, তখন তার মুখে হাসি ফুটে উঠেছিল। তিনি আমাকে বলেন যে, সেই ঘটনার কারণে প্রথমে তিনি খুবই বিরক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু পরে তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, তার সেই দৃঢ় সংশোধনের সত্যিই প্রয়োজন ছিল আর সেটা আসলে প্রভু যিহোবার প্রেমের এক প্রকাশ ছিল। (ইব্রীয় ১২:৬) তার এই কথাগুলো আমার হৃদয় স্পর্শ করে আর আমাকে আবারও আনন্দের সঙ্গে সেবা করতে সাহায্য করে।

প্রায় সেই সময়েই, আমার মা লন্ডনে থাকার জন্য চলে আসেন আর তিনি ভাই জন ই. বারের কাছ থেকে বাইবেল অধ্যয়নের প্রস্তাব গ্রহণ করেন, যিনি পরবর্তী সময়ে পরিচালকগোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে সেবা করেছিলেন। মা উন্নতি করে চলেন আর ১৯৫৭ সালে বাপ্তিস্ম নেন। পরে আমি জানতে পারি যে, বাবা মারা যাওয়ার আগে তিনিও যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে অধ্যয়ন করেছিলেন।

১৯৫৮ সালে আমি লিনে নামে একজন ড্যানিশ বোনকে বিয়ে করি, যিনি লন্ডনে থাকার জন্য চলে এসেছিলেন। পরের বছর, আমাদের মেয়ে জেনের জন্ম হয়। সে হল আমাদের পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো। এ ছাড়া, আমি ফুলাম মণ্ডলীতে সেবার বিভিন্ন বিশেষ সুযোগ লাভ করি। কিন্তু একসময়, লিনের স্বাস্থ্য খারাপ হওয়ার কারণে আমাদের কোনো উষ্ণ আবহাওয়ার এলাকায় চলে যাওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়। তাই, ১৯৬৭ সালে আমরা অস্ট্রেলিয়ার আ্যডিলেডে থাকার জন্য চলে যাই।

এক মর্মান্তিক ঘটনার মুখোমুখি হই

আ্যডিলেডে আমাদের মণ্ডলীতে ১২ জন বয়স্ক অভিষিক্ত খ্রিস্টান ছিলেন। তারা উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার কাজে নেতৃত্ব নিতেন। শীঘ্রই আমরা যিহোবার সেবায় একটা উত্তম তালিকা গড়ে তুলি।

১৯৭৯ সালে, আমাদের পঞ্চম সন্তান ড্যানিয়েলের জন্ম হয়। সে গুরুতরভাবে ডাউন সিনড্রোমেb আক্রান্ত হয় আর আমাদের বলা হয় যে, সে বেশি দিন বাঁচবে না। আমরা যে-নিদারুণ যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে গিয়েছিলাম, সেই বিষয়ে বর্ণনা করতে গিয়ে আজও আমার চোখে জল চলে আসে। আমরা তার যত্ন নেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করি আর একইসময় খেয়াল রাখি যেন আমাদের বাকি সন্তানরা অবহেলিত না হয়। ড্যানিয়েলের হৃৎপিণ্ডে দুটো ফুটো ছিল বলে মাঝে মাঝে অক্সিজেনের অভাবের কারণে তার শরীর নীলচে হয়ে যেত আর আমাদের সঙ্গেসঙ্গে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হতো। কিন্তু, অসুস্থতা সত্ত্বেও ড্যানিয়েল খুবই বুদ্ধিমান ও সেইসঙ্গে প্রেমময় স্বভাবের ছিল। এ ছাড়া, সে যিহোবাকে খুব ভালোবাসত। খাবার খাওয়ার আগে আমরা যখন পরিবারগতভাবে প্রার্থনা করতাম, তখন সে তার ছোট্টো ছোট্টো হাত দুটো জড়ো করে তার মাথা নেড়ে উৎসাহের সঙ্গে “আমেন!” বলত। একমাত্র এটার পরই সে খেতে শুরু করত।

চার বছর বয়সে ড্যানিয়েলের গুরুতর লিউকিমিয়া ধরা পড়ে। লিনে ও আমি শারীরিক ও আবেগগতভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিল যেন আমি আর পারব না। তারপরও, একদিন আমরা যখন প্রচণ্ড হতাশা অনুভব করছিলাম, তখন আমাদের সীমা অধ্যক্ষ ভাই নেভিল ব্রামিচ আমাদের বাড়িতে আসেন। সেই রাতে তিনি আমাদের জড়িয়ে ধরেন আর আমরা সবাই কাঁদি। তার প্রেমময় ও সমবেদনাময় কথাগুলো আমাদের এত সান্ত্বনা প্রদান করেছিল যে, আমরা তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। তিনি সেই রাতে ১টার সময়ে বাড়ি ফিরে যান। এর অল্পসময় পরই আমরা ড্যানিয়েলকে মৃত্যুতে হারাই। তাকে হারানো আমাদের জীবনের সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা ছিল। তা সত্ত্বেও আমরা এই বিষয়ে আস্থা রেখে আমাদের শোকের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পেরেছিলাম যে, কোনো কিছুই—এমনকী মৃত্যুও—ড্যানিয়েলকে যিহোবার প্রেম থেকে পৃথক করতে পারবে না। (রোমীয় ৮:৩৮, ৩৯) তাকে যখন ঈশ্বরের নতুন জগতে পুনরুত্থিত করা হবে, তখন তার সঙ্গে আবার মিলিত হওয়ার জন্য আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি!—যোহন ৫:২৮, ২৯.

আমি অন্যদের সাহায্য করে আনন্দ খুঁজে পাচ্ছি

দু-বার গুরুতর স্ট্রোক হওয়ার পরও বর্তমানে, আমি মণ্ডলীতে একজন প্রাচীন হিসেবে সেবা করছি। আমার জীবনের অভিজ্ঞতাগুলোর কারণে আমার মধ্যে অন্যদের প্রতি সহমর্মিতা ও সমবেদনার অনুভূতি বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষভাবে সেই ব্যক্তিদের প্রতি, যারা সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছে। আমি তাদের বিচার করার পরিবর্তে নিজেকে জিজ্ঞেস করি: ‘কীভাবে তাদের পটভূমি তাদের আবেগঅনুভূতি ও চিন্তাভাবনাকে প্রভাবিত করেছে? কীভাবে আমি তাদের দেখাতে পারি যে, আমি তাদের জন্য চিন্তা করি? কীভাবে আমি তাদের যিহোবার পথ অনুসরণ করার জন্য উৎসাহিত করতে পারি?’ মণ্ডলীতে একজন পালক হিসেবে কাজ করতে আমার খুবই ভালো লাগে! সত্যি বলতে কী, আমি যখন অন্যদের আধ্যাত্মিকভাবে সান্ত্বনা ও সতেজতা প্রদান করি, তখন আমি অনুভব করি যে, আমি নিজেও সান্ত্বনা ও সতেজতা লাভ করছি।

এডওয়ার্ড বেজলি ও অন্য একজন ভাই একটা পরিবারের সগ পালকীয় সাক্ষাৎ করছন

আমি এখনও পালকীয় সাক্ষাৎ করে প্রচুর পরিতৃপ্তি লাভ করি

আমি সেই গীতরচকের মতো অনুভব করি, যিনি ঘোষণা করেছিলেন: “আমার আন্তরিক ভাবনার” বা উদ্‌বিগ্নতার “বৃদ্ধিকালে [ঈশ্বরের] দত্ত সান্ত্বনা আমার প্রাণকে আহ্লাদিত করে।” (গীত. ৯৪:১৯) তিনি আমাকে পারিবারিক সমস্যা, ধর্মীয় বিরোধিতা, ব্যক্তিগত হতাশা ও বিষণ্ণতার মধ্যে ধরে রেখেছেন। সত্যিই, যিহোবা একজন প্রকৃত পিতার মতো আমার যত্ন নিয়ে এসেছেন!

a শুরুতে, পাকিস্তানের দুটো অংশ ছিল: পশ্চিম পাকিস্তান (বর্তমানে পাকিস্তান) ও পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ)।

b ২০১০ সালের ১৫ এপ্রিল প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১৬ পৃষ্ঠায় দেওয়া “পরীক্ষাগুলো সহ্য করা যিহোবার ওপর আমাদের নির্ভরতাকে শক্তিশালী করেছে” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার