বিশ্ব নিরীক্ষা
বাঁদরামি করা
কিছু ক্রমবিবর্তনবাদী ধারণা পোষণ করে যে, অগণিত বাঁদর অসংখ্য টাইপরাইটারে টাইপ করে শেকসপিয়ারের সম্পূর্ণ রচনাবলী লিখে শেষ করতে পারে। তাই, ইংল্যান্ডে প্লাইমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ছয়টা বাঁদরকে এক মাসের জন্য একটা কম্পিউটার দিয়েছিল। বাঁদরগুলো “টাইপ করে একটা শব্দও তৈরি করতে পারেনি,” দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমস রিপোর্ট করে। দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ডে পেনটন চিড়িয়াখানায় ছয়টা বাঁদর “মাত্র পাঁচ পৃষ্ঠা টাইপ করতে পেরেছিল,” যেগুলো মূলত কেবল একটা অক্ষর দ্বারা ভরা ছিল। এ ছাড়া, প্রায় শেষের দিকে বাঁদরগুলো মাত্র কয়েকটা অন্যান্য অক্ষর টাইপ করেছিল। এমনকি তারা তাদের কিবোর্ডগুলোকে শৌচাগার হিসেবে ব্যবহার করেছিল। (g০৪ ১/২২)
ডিম থেকে সাপের বিষক্রিয়া নাশক পদার্থ
“ভারতীয় বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছে যে, মুরগির ডিম সাপের কামড়ের চিকিৎসার এক উৎস হয়ে উঠতে পারে,” দ্যা টাইমস অফ ইন্ডিয়া বলে। প্রায় ১২ সপ্তাহ বয়সী মুরগির বাচ্চাগুলোর মাংসপেশীতে “মারাত্মক নয় এমন এক ডোজ সাপের বিষ” ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হয় এবং দুই থেকে তিন সপ্তাহ পরে পরবর্তী ডোজ দেওয়া হয়। ২১ সপ্তাহ পরে মুরগিগুলো ডিম পাড়তে শুরু করে, যেগুলোতে সাপের বিষক্রিয়া নাশক পদার্থ রয়েছে। গবেষকরা আশা করছে যে, সাপের বিষক্রিয়া নাশক পদার্থ এখন ডিম থেকেই পাওয়া যেতে পারে, যা কিনা এতদিন ঘোড়া থেকে পাওয়া যেত, “যার জন্য যেগুলোকে এক কষ্টকর পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় যখন সাপের বিষক্রিয়া প্রতিরোধী পদার্থ সংগ্রহ করা হয়,” দ্যা টাইমস বলে। অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা পশুদের ওপর করা পরীক্ষাগুলোতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইতিমধ্যেই সাফল্যের দাবি করেছে। যদি ডিম থেকে পাওয়া সাপের বিষক্রিয়া নাশক পদার্থ মানুষের দেহে কার্যকর প্রমাণিত হয়, তা হলে ভারতের জন্য তা বিরাট উপকারজনক হবে, যেখানে প্রতি বছর সাপের কামড়ের ৩,০০,০০০ ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হয়। এদের মধ্যে শতকরা ১০ জন মারা যায়। (g০৪ ১/৮)
বহু দূরের টেলিফোন কলগুলো
যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়া থেকে একজন মহিলা এক স্থানীয় গ্রাহক সেবার নম্বরে ফোন করেন। যে-যুবতী ফোনটা তোলে সে যদিও নিজেকে মিশেল বলে তার পরিচয় দেয়, আসলে তার নাম হল মেঘনা এবং সে কথা বলছে ভারত থেকে যেখানে তখন মধ্যরাত্রি। ভারতীয় কল সেন্টারগুলো আ্যমেরিকান এক্সপ্রেস, এটিআ্যন্ডটি, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, সিটিব্যাঙ্ক ও জেনারেল ইলেকট্রিক কোম্পানির মতো বিদেশি কোম্পানিগুলোর “অফিস” এর কাজ দেখাশোনা করতে ১,০০,০০০রও বেশি লোককে চাকরি দেয়। এই কাজ ভারতে স্থানান্তরিত করার পিছনে কারণটা হচ্ছে আন্তর্জাতিক টেলিফোন কলগুলো করার মূল্য সামর্থ্যের মধ্যে রয়েছে ও সেইসঙ্গে ভারতে শিক্ষিত, ইংরেজি ভাষী কর্মী প্রচুর রয়েছে, “যাদের বেতন পাশ্চাত্য দেশগুলোতে থাকা কর্মীদের বেতনের চেয়ে শতকরা ৮০ ভাগ কম,” ইন্ডিয়া টুডে পত্রিকা রিপোর্ট করে। যতটা সম্ভব আমেরিকার লোকেদের বাচনভঙ্গিতে কথা বলার জন্য মেঘনার মতো অপারেটরদের কয়েক মাস ধরে প্রশিক্ষণ নিতে হয়, যার মধ্যে “আমেরিকার লোকেদের বিভিন্ন বাচনভঙ্গি রপ্ত করার জন্য হলিউডের বিখ্যাত ছবিগুলো দেখাও” রয়েছে। মেঘনার কম্পিউটার তাকে এমনকি ফিলাডেলফিয়ার আবহাওয়া সম্বন্ধেও জানায়, যাতে সে সেই বিষয়ের ওপর মন্তব্য করতে পারে। আর সে এই বলে কথা শেষ করে: “আপনার দিন শুভ হোক।” (g০৩ ১২/২২)
সংগ্রামরত কৃষকরা
একটা রিপোর্ট অনুযায়ী, “সবুজ বিপ্লব যেটা পৃথিবীর অধিকাংশ জায়গায় কৃষি উৎপাদনকে বৃদ্ধি করেছিল, তার জন্য বিরাট মূল্য দিতে হয়েছিল: আফ্রিকায় পৃথিবীর সবচেয়ে গরিব কৃষকরা আরও গরিব হয়ে গিয়েছিল,” নিউ সায়েনটিস্ট পত্রিকা বলে। কীভাবে তা হয়েছিল? ১৯৫০ এর দশকের শেষের দিক থেকে, অধিক উৎপাদনশীল ধরনের গম ও ধান লাগানো শুরু হয়েছিল, যাতে বিশ্বের জনসংখ্যার বৃদ্ধির ফলে যে-দুর্ভিক্ষের অনুমান করা হচ্ছিল তা প্রতিরোধ করা যেতে পারে। তাই, এই অধিক উৎপাদনশীল ধরনের গম ও ধানের প্রচুর ফলন হয়েছিল, ফলে দাম কমে গিয়েছিল। “যে-কৃষকরা এই নতুন ধরনের গম ও ধান বপন করতে সামর্থ্য ছিল তারা কমদামে বিক্রির জন্য অধিক ফলনের দ্বারা ক্ষতিপূরণ দিতে পেরেছিল কিন্তু যাদের তা বপন করার সামর্থ্য ছিল না তাদের ক্ষতি হয়েছিল,” নিউ সায়েনটিস্ট বলে। এ ছাড়া, নতুন ধরনের শস্যগুলো আফ্রিকার আবহাওয়ার উপযোগী ছিল না কারণ এই শস্যগুলো এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকায় চাষ করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। (g০৪ ১/২২)
দ্রবীভূত হিমবাহ
মৌসুমি বর্ষা আসতে দেরি হওয়ায় ভারতে পাঞ্জাবের অন্যান্য জায়গায় যখন জলাশয়গুলোতে জলের পরিমাণ কমে গিয়েছিল, তখন শতদ্রু নদীর ওপর তৈরি ভাকরা বাঁধের জলের পরিমাণ গত বছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল। কেন? শতদ্রু নদীর প্রধান শাখানদী এমন এক অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যায় যেখানে ৮৯টা হিমবাহ রয়েছে, ডাওন টু আর্থ পত্রিকা বলে। “মৌসুমি বর্ষা না হওয়ার ফলে হিমবাহের গলে পড়া বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেহেতু আকাশে কোনো মেঘ নেই, তাই সূর্যের তাপ হিমবাহগুলোর ওপর খুব তীব্রভাবে পড়ে। এই কারণে ও সেইসঙ্গে অত্যধিক উচ্চ তাপমাত্রার ফলে দ্রুতগতিতে দ্রবীভবন হচ্ছে,” জহওরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের হিমবাহ বিশেষজ্ঞ সৈয়দ ইকবাল হাসনান ব্যাখ্যা করেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করে যে, দ্রবীভবনের ফলে হয়তো হিমবাহের হ্রদগুলো উপচে পড়তে পারে। এ ছাড়া, অপেক্ষাকৃত ছোট হিমবাহগুলোর অর্থ হবে যে, ভবিষ্যতে জলের সরবরাহ কমে যাবে যা ইন্ধন উৎপাদন ও কৃষির ওপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলবে। (g০৪ ১/২২)
সাবান জীবন বাঁচায়
লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন আ্যন্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন এর একজন লেকচারার ভ্যাল কার্টিসের কথা অনুযায়ী, সাধারণভাবে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া প্রতি বছর দশ লক্ষ লোকের জীবন বাঁচাতে পারে কারণ এটা ডায়রিয়াজনিত বিভিন্ন অসুখ এড়াতে লোকেদের সাহায্য করে। জাপানের কিওটোতে অনুষ্ঠিত তৃতীয় বিশ্বের জল ফোরাম-এ কার্টিস মানুষের মলে রোগবাহিত জীবাণুগুলোকে “জনসাধারণের প্রধান শত্রু” হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন, দ্যা ডেইলি ইয়োমিউরি রিপোর্ট করে। এই খবরের কাগজটি বলে ‘কিছু সমাজে এটা খুবই সাধারণ যে, শিশুরা পায়খানা করার পর মায়েরা তাদের ধুয়ে দিয়ে নিজেদের হাত না ধুয়েই খাবার তৈরি করতে শুরু করে দেয়।’ সাবান ও জল দিয়ে হাত ধোয়া মারাত্মক ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ছড়ানো রোধ করতে পারে। আর কার্টিসের কথা মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পেটের বিভিন্ন অসুখ কমানোর জন্য জলের গুণগত মানকে উন্নত করার চেয়ে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া তিনগুণ খরচ কমাবে। (g০৪ ২/২২)
ল্যাটিন ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখা
যদিও অনেকে ল্যাটিন ভাষাকে সেকেলে বলে বিবেচনা করে থাকে কিন্তু ভ্যাটিকান এটাকে বাঁচিয়ে এবং আধুনিক রাখার প্রচেষ্টা করছে। কেন? কারণ ভ্যাটিকানে যদিও ইতালীয় ভাষায় কথা বলা হয় কিন্তু ল্যাটিন হল এর সরকারি ভাষা এবং বিশপদের উদ্দেশে লেখা পোপের পত্র ও অন্যান্য দলিলগুলোতে এখনও ল্যাটিন ভাষা ব্যবহার করা হয়। ১৯৭০ এর দশকে ল্যাটিনের ব্যবহার প্রচণ্ডভাবে কমে গিয়েছিল যখন আইন করা হয়েছিল যে, স্থানীয় ভাষাগুলোতে মাস উদ্যাপন করা যেতে পারে। সেই সময়ই পোপ ষষ্ঠ পল ল্যাটিন ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ল্যাটিন ফাউন্ডেশন স্থাপন করেন। যে-পদক্ষেপটা নেওয়া হয়েছিল, তা হল দুটো আলাদা খণ্ডে ল্যাটিন-ইতালীয় ভাষায় একটা অভিধান ছাপানো, যে-খণ্ডগুলোর সমস্তই বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। এখন ১১৫ মার্কিন ডলারে বিক্রির জন্য এক নতুন সংযুক্ত সংস্করণ ছাপানো হয়েছে। এটাতে প্রায় ১৫,০০০টি আধুনিক ল্যাটিন শব্দ রয়েছে যেমন “ইস্কারয়োরুম লাভাতোর” (থালাবাসন ধোয়ার মেশিন)। “দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে” একটি নতুন খণ্ড “বের হবে বলে আশা করা হচ্ছে,” দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমস বলে। বেশিরভাগ, “কম্পিউটার ও তথ্য জগতে ব্যবহৃত শব্দগুলো থেকে” অধিকাংশ শব্দ যোগ করা হবে। (g০৪ ২/২২)