বিশ্ব শান্তি ইহার প্রকৃত অর্থ কি হবে?
যে বিশ্ব শান্তি ঈশ্বর নিয়ে আসবেন তাতে পৃথিবীব্যাপী যুদ্ধবিরতি অথবা আণবিক শক্তির দ্বারা সমতার চেয়ে অনেক বেশী কিছু জড়িত। বাইবেল যেভাবে “শান্তি” শব্দটি ব্যবহার করে তার থেকে এটি বোঝা যায়।
উদাহরণস্বরূপ, ইব্রীয় শাস্ত্রে (“পূরাতন নিয়ম”) শান্তির জন্য শা·লোম‘ কথাটি ব্যবহৃত হয়েছে। এই শব্দটির একটি রূপ আদিপুস্তক ৩৭:১৪ পদে ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে কূলপতি যাকোব তার পুত্র যোষেফকে বলেন: “তোমার ভ্রাতৃগণের কুশল ও পশুপালের কুশল জানিয়া আমাকে সংবাদ আনিয়া দাও।”a শা·লোম‘ আবার আদিপুস্তক ৪১:১৬ পদে ব্যবহৃত হয়েছে যেখানে তার অর্থ “মঙ্গল।”
বাইবেলের অর্থে, তাই, প্রকৃত শান্তি শুধুমাত্র যুদ্ধবিগ্রহের নিবৃত্তি নয়, কিন্তু স্বাস্থ্য, সুরক্ষা ও মঙ্গল। আমাদের আগস্ট ১, ১৯৯১ সংখ্যাটি দেখিয়েছে যে মানুষ শান্তি নিয়ে আসার ধাঁধার সমাধান করতে পারবে না। একমাত্র “শান্তিরাজ” যীশু খ্রীষ্ট টুকরোগুলি একত্র করে পৃথিবীতে প্রকৃত শান্তি নিয়ে আসবেন। (যিশাইয় ৯:৬, ৭) উদাহরণস্বরূপ, বিবেচনা করুন, বাইবেল গীতসংহিতা ৭২:৭, ৮ পদে তাঁর রাজত্ব সম্বন্ধে কোন ভবিষ্যদ্বানী করেছে: “তাঁহার সময় ধার্ম্মিক লোক প্রফুল্ল হইবে, চন্দ্রের স্থিতিকাল পর্য্যন্ত প্রচুর শান্তি হইবে। তিনি এক সমুদ্র অবধি অপর সমুদ্র পর্য্যন্ত, ঐ নদী অবধি পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত কর্ত্তৃত্ব করিবেন।” চিন্তা করুন—বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য, সুরক্ষা ও মঙ্গল! কোন রাজনৈতিক চুক্তি কখনই এইসব সম্পাদন করতে পারবে না। শুধুমাত্র ঈশ্বরের রাজ্য পারবে, এবং আরও অনেক কিছু সাধন করবে। বাইবেল এই ভবিষ্যৎ বিশ্ব শান্তি সম্বন্ধে অনেকগুলি রোমাঞ্চকর ভবিষ্যদ্বাণীমূলক আভাস দেয়। আসুন, তাদের মধ্যে কিছু আমরা বিবেচনা করি।
বিশ্বব্যাপী নিরস্ত্রীকরণ—ঈশ্বরের ব্যবস্থানুযায়ী!
গীতসংহিতা ৪৬:৮, ৯ বলে: “চল, যিহোবার কার্য্যকলাপ সন্দর্শন কর, যিনি পৃথিবীতে ধ্বংস সাধন করিলেন। তিনি পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত যুদ্ধ নিবৃত্ত করেন; তিনি ধনু ভগ্ন করেন, বড়শা খণ্ড খণ্ড করেন, তিনি রথ সকল আগুনে পোড়াইয়া দেন।” “ধনু,” “বড়শা,” ও “রথ,” শব্দগুলি যে কোন ধরনের যুদ্ধাস্ত্র অথবা সাঁজোয়া গাড়ির প্রতীকচিহ্ন। তাই, অস্ত্র সীমিতকরণ এমনকি সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ অপেক্ষাও যিহোবা অধিক সম্পন্ন করবেন। তিনি সম্পূর্ণরূপে আণবিক অস্ত্র, কামান, ট্যাঙ্ক, ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপক যন্ত্র, গ্রেনেড, প্লাস্টিক বিস্ফোরক, রাইফেল, হ্যাণ্ডগান—যা কিছু বিশ্ব শান্তির প্রতি ক্ষতিকারক তাই নিশ্চিহ্ন করবেন!
যাইহোক, শুধুমাত্র অস্ত্র যুদ্ধের কারণ নয়। সাধারণতঃ, যুদ্ধের উৎপত্তি অসিদ্ধ মানুষের ঘৃণা, লোভ অথবা হিংস্র প্রকৃতির মধ্যে। (যাকোব ৪:১-৩ তুলনা করুন।) ঈশ্বরের রাজ্য তাই যুদ্ধের মূল কারণকে আঘাত করবে মানুষের চারিত্রিক দোষগুলিকে নিশ্চিহ্ন করার দ্বারা। কিভাবে? বিশ্বব্যাপী শিক্ষামূলক এক কার্যক্রমের দ্বারা। “সমুদ্র যেমন জলে আচ্ছন্ন, তেমনি পৃথিবী যিহোবা-বিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হইবে।”—যিশাইয় ১১:৯.
এইভাবে “যিহোবার কাছে শিক্ষা” পাওয়ার দ্বারা মানুষ জাতিগত পার্থক্যকে আর দ্বন্দ্ব, বিদ্বেষ বা ঘৃণার কারণ হিসাবে দেখবে না। (যোহন ৬:৪৫) “ঈশ্বর মুখাপেক্ষা করেন না,” এবং পৃথিবীবাসীরা তাঁর নিরপেক্ষতা প্রতিফলিত করবে। (প্রেরিত ১০:৩৪) এই রাজ্য জাতিগত দ্বন্দ্বের যে সম্ভাবনা থাকতে পারে তাও দূর করবে সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সীমানার অবসান ঘটিয়ে। ‘এক সমুদ্র অবধি অপর সমুদ্র পর্যন্ত্য, ও পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত,’ প্রত্যেকে খ্রীষ্টের রাজত্বের প্রতি স্বেচ্ছাকৃত ও কৃতজ্ঞতাপূর্ণ বশ্যতাস্বীকার করবে।—গীতসংহিতা ৭২:৮.
যাতে এই রকম শান্তি চিরস্থায়ী হয়, সেই রাজ্য মানুষের ইতিহাসে সর্বাধিক ভগ্নাত্মক শক্তিটিকেও নিশ্চিহ্ন করবে: মিথ্যা ধর্ম। (সফনিয় ২:১১) একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরের উপাসনায় মানবজাতি ঐক্যবদ্ধ থাকবে। (যিশাইয় ২:২, ৩) এক বিশ্বব্যাপী ভ্রাতৃত্ব স্থাপিত হবে!
গৃহজীবনে শান্তি
যাইহোক, বিশ্বশান্তির কি মূল্য থাকতে পারে, যদি ব্যক্তিগত গৃহ একটি যুদ্ধক্ষেত্রের মত হয় যেখানে ক্রমাগত অপমান, বেদনাদায়ক কথা ও হুমকি ব্যবহৃত হয়। আজ অনেক পরিবারের ক্ষেত্রেই একথা সত্য। অন্য অনেক পরিবার গভীর বিদ্বেষ ঢেকে রাখে ঔদাস্যপূর্ণ নীরবতার পিছনে।
প্রকৃত শান্তির জন্য তাই পারিবারিক শান্তিও প্রয়োজন। রাজ্যের শিক্ষামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে, স্বামী-স্ত্রীদের একে অপরের প্রতি ভালবাসা ও সম্মান প্রদর্শন করতে শেখানো হবে। (কলসীয় ৩:১৮, ১৯) ছেলেমেয়েদের শেখানো হবে ‘সর্ববিষয়ে পিতামাতার আজ্ঞাবহ’ হতে। (কলসীয় ৩:২০) কোন কিশোর-কিশোরী বিরোধীতা করে তাদের পিতামাতার মনে নৈরাশ্য বা দুঃশ্চিন্তা জাগাবে না। বাধ্যতা তখন আদর্শ হবে, সহযোগিতা আইন হবে। শিশুদের কাছে থাকা ও তাদের দেখা তখন এক আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা হবে।
আজ, আর্থিক চাপ প্রবলভাবে পারিবারিক উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে, হয়তো প্রায়ই পিতামাতা দুজনকেই জাগতিক কর্মক্ষেত্রে কাজ করার ভার বহন করতে হয়। কিন্তু খ্রীষ্টের রাজত্বের অধীনে সমস্ত পরিবারগুলি যে কোন রকম আর্থিক চাপ থেকে মুক্তি পাবে—বর্ধিত ভাড়া, বিশাল মর্টগেজ-জনিত ঋণ, ক্রমশ বৃদ্ধিরত কর, বেকারত্ব। আনন্দদায়ক, দক্ষতাপূর্ণ কাজ প্রচুর থাকবে। কেউই গৃহহীন হয়ে থাকবে না। দেখুন কিভাবে যিশাইয় ৬৫:২১-২৩ পদের ভবিষ্যদ্বাণী এই বিষয়গুলি তুলে ধরে: “আর লোকেরা গৃহ নির্ম্মাণ করিয়া তাহার মধ্যে বসতি করিবে, . . . তাহারা গৃহ নির্ম্মাণ করিলে অন্যে বাস করিবে না, তাহারা রোপণ করিলে অন্যে ভোগ করিবে না। . . . আমার মনোনীত লোকেরা দীর্ঘকাল আপন আপন হস্তের শ্রমফল ভোগ করিবে। তাহারা বৃথা পরিশ্রম করিবে না, বিহ্বলতার নিমিত্ত সন্তানের জন্ম দিবে না, কারণ তাহারা যিহোবার আশীর্বাদপ্রাপ্ত বংশ, ও তাহাদের সন্তানগণ তাহাদের সহবর্ত্তী হইবে।”
কল্পনা করুন এমন এক পরিবেশে বাস করার কথা যেখানে ক্ষয়প্রাপ্ত শহুরে সভ্যতার দৃশ্য, শব্দ বা গন্ধ নেই! কল্পনা করুন এক সবুজ ভূমিতে বাস করার কথা—আপনার জমি—যা নিখুঁতভাবে কর্ষিত, ভূদৃশ্যানুযায়ী রচিত ও প্রাকৃতিক উদ্যানে পরিণত। কল্পনা করুন, এমন বাতাস গ্রহণ করা যা বিশুদ্ধ ও তরতাজা; আধুনিক সভ্যতার কর্কষ আওয়াজ নয়, কিন্তু মনমাতানো প্রকৃতির সুর শোনা। সত্য, কিছু অনুকুল অবস্থায় বসবাসকারী ব্যক্তি অল্পমাত্রায় এখনই এইসব উপভোগ করেন। কিন্তু ঈশ্বরের রাজ্যে প্রত্যেকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে থাকবে। কেউ দরিদ্র, কেউ ক্ষুধার্ত, কেউ বঞ্চিত থাকবে না।—গীতসংহিতা ৭২:১৩, ১৪, ১৬।
বাইবেল আরও আশ্বাস দেয় “দুষ্টগণ দেশ হইতে উচ্ছিন্ন হইবে।” (হিতোপদেশ ২:২২) তার অর্থ অপরাধের শেষ। যদি আপনার সবচেয়ে ছোট শিশু বাইরে খেলতে যায়, তাহলে আপনাকে লুকিয়ে থাকা শিশুধর্ষণকারী বা ছেলেধরা, বেসামাল গাড়ির মাতাল চালকদের, অথবা নেশাগ্রস্ত যুবকদের দলকে ভয় পেতে হবে না। আপনার সন্তানগণ পূর্ণ সুরক্ষা ও নিরাপত্তার সাথে খেলা করতে পারবে।
শান্তি ও আপনার ব্যক্তিগত সুরক্ষা
অবশেষে, আপনার ব্যক্তিগত সুরক্ষার বিষয়টিও রয়েছে। এমনকি পরমদেশের মত পরিবেশও ক্যান্সারের যন্ত্রণা অথবা আর্থারাইটিসের ব্যাথার উপশম করতে পারবে না। তাই প্রকৃত শান্তির অন্তর্গত থাকবে রোগ, ব্যাধি ও মৃত্যুর দূরীকরণ। তা কি সম্ভব? পৃথিবীতে থাকাকালীন যীশু খ্রীষ্ট বারবার মানুষের রোগব্যাধির ওপর, তাঁর কর্ত্তৃত্ব প্রদর্শন করেছেন। (মথি ৮:১৪-১৭) স্বর্গে, তাঁর সুবিধাজনক অবস্থান থেকে, যীশু খ্রীষ্ট পৃথিবীব্যাপী অলৌকিক কার্য্যসাধণ করতে সক্ষম হবেন! “তৎকালে,” বাইবেল আশ্বাস দেয়, “অন্ধদের চক্ষু খোলা যাইবে, আর বধিরদের কর্ণ মুক্ত হইবে। তৎকালে খঞ্জ হরিণের ন্যায় লম্ফ দিবে, ও গোঙ্গাদের জিহ্বা আনন্দগান করিবে।”—যিশাইয় ৩৩:২৪; ৩৫:৫, ৬।
যাইহোক, মনুষ্য দুর্দশার বিরুদ্ধে খ্রীষ্টের অভিযানের এখানেই শেষ নয়। খ্রীষ্টের রাজত্ব সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল ব্যাখ্যা করেন: “যাবৎ ঈশ্বর সমস্ত শত্রুকে তাঁহার পদতলে না রাখিবেন, তাঁহাকে রাজত্ব করিতে হইবে। শেষ শত্রু মৃত্যু, সেও বিলুপ্ত হইবে।” (১ করিন্থীয় ১৫:২৫, ২৬) এই কথার অর্থ প্রথম থেকে মৃত্যু মানবজাতির প্রতি যে ক্ষতিসাধণ করেছে তা পুরণ করা। যীশু খ্রীষ্ট নিজেই বর্ণনা করেছেন: “এমন সময় আসিতেছে, যখন কবরস্থ সকলে [খ্রীষ্টের] রব শুনিবে, ও বাহির হইয়া আসিবে।” (যোহন ৫:২৮, ২৯) অসংখ্য মানুষ যারা দুর্দশাগ্রস্ত জীবনযাপণ করেছে ও মারা গেছে, আগত বিশ্ব শান্তি উপভোগ করার সুযোগ আবার পাবে।
আপনি কি সেই জগতের অংশ হবেন? এই সম্বন্ধে বাইবেল কি শিক্ষা দেয় তা জানবার জন্য যিহোবার সাক্ষীরা আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।b বিশ্ব শান্তির প্রত্যাশা এত উৎসাহজনক, এত বাস্তব যে অগ্রাহ্য করা যায় না। নিশ্চিন্ত থাকুন যদি আপনি ঈশ্বরের বাক্য জানতে ও মেনে চলতে প্রচেষ্টা করেন তাহলে “শান্তির ঈশ্বর আপনাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকিবেন”—অনন্তকালযাবৎ!—ফিলিপীয় ৪:৯. (w90 4/15)
[পাদটীকাগুলো]
a বাস্তবিকপক্ষে, “তোমার ভ্রাতৃগণের শান্তি ও পশুপালের শান্তি দেখিয়া আইস।”
b এই পত্রিকার প্রকাশকদের লিখলে বিনামূল্যে আপনার গৃহে বাইবেল অধ্যয়নের আয়োজন করা হবে।
[Pictures on page 5]
যিহোবা “পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত” যুদ্ধ নিবৃত্ত করবেন
[সজন্যে]
USAF Official Photo
[Pictures on page 6]
স্বামী-স্ত্রীদের একে অপরের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ব্যবহার করতে শেখানো হবে