বিশ্ব শান্তির স্বপ্ন এক ত্রুটিপূর্ণ প্রত্যাশা
বিশ্ব-শান্তির সম্ভাবনা সম্বন্ধে এক আশাবাদী মনোভাব দেখা যাচ্ছে। দ্যা টোরন্টো স্টার-এ লেখার সময় ক্যারোল গোর বলেন: “আফগানিস্তান থেকে অ্যাংগোলা পর্য্যন্ত শান্তি-চুক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে আঞ্চলিক বিবাদগুলি কয়েক মাস আগে নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল, আজ তা প্রশমিত হওয়ার চিহ্ন দেখাচ্ছে। আর রাষ্ট্রসংঘ এক উৎসাহজনক পুনর্জন্মের অভিজ্ঞতা লাভ করছে।” গোর বলেন, এর দ্বারা “সারা বিশ্বে ব্যাপক আকারে এক আশা”-র সূচনা হয়েছে। ইউ.এস.এ. টুডে-র এক সম্পাদকীয় প্রবন্ধ একইভাবে জানায়: “সারা বিশ্বে শান্তি ছড়িয়ে পড়ছে।”
সম্প্রতি যা বিশেষভাবে লক্ষণীয় তা হল ইউ.এন. ক্রনিকল যা এই ভাবে ব্যাখ্যা করে “সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অগ্রসর-রত নিকট-সম্পর্কস্থাপন।” সেনা প্রত্যাহারণ, পূর্ব ইউরোপে চাঞ্চল্যকর ঘটনাসকল, সেনাবাহিনী ও অস্ত্রশস্ত্র হ্রাস করার জন্য কথাবার্তা—এই ঘটনাগুলি আশা জাগিয়েছে যে অবশেষে হয়ত মহাশক্তিগুলি অস্ত্র-প্রতিযোগিতা বন্ধ করবে। যে জগতে সামরিক খরচ বছরে অর্থনীতির প্রায় ৮৫০০ কোটি ডলার গ্রাস করে, সেখানে এটি একটি আনন্দদায়ক প্রত্যাশা।
যাইহোক, মানুষ বিশ্ব শান্তির যে স্বপ্ন দেখে তাসত্যি হওয়ার সম্ভাবনা কতটা? এমনকি সবচেয়ে আশাবাদী পর্যবেক্ষকরাও স্বীকার করেন যে অস্ত্রহ্রাসকরণ থেকে অস্ত্রদূরীকরণ এক বিশাল পদক্ষেপ। আনবিক নিরস্ত্রীকরণের জন্য প্রয়োজন হবে অভূতপূর্ব ধরনের এক পারস্পরিক বিশ্বাস। দুঃখজনকভাবে, যদিও, মহাশক্তিগুলির সঙ্গে দীর্ঘদিনের এক পারস্পরিক অবিশ্বাসের ইতিহাস জড়িত আছে। বাইবেলের ভবিষ্যদ্বানী অনুযায়ী, এই কালের লোকেরা “চুক্তিতে আবদ্ধ হতে উন্মুক্ত নয় [“চুক্তিভঙ্গকারী,” কিং জেমস্ ভারসন]” প্রমাণীত হয়েছে।—২ তীমথিয় ৩:৩।
এছাড়াও, সকলে নিশ্চিত নন যে আণবিক অস্ত্রের দূরীকরণ শান্তি নিয়ে আসবে। যদিও জাতিগুলিকে তাদের সঞ্চিত আণবিক অস্ত্র পরিত্যাগ করতে সম্মত করানো যায়, তবুও সাধারণ অস্ত্র দিয়ে একইরকম সক্ষমতার সাথে প্রাণনাশ করা যাবে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তার ভয়াণক নিদর্শন। আরও, পুনর্বার আণবিক অস্ত্র তৈরীর জন্য প্রযুক্তিবিদ্যা তখনও থাকবে—রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রথম চিহ্নের জন্য তৈরী ও অপেক্ষারত। কিছু লোক, যেমন রাজনৈতিক বৈজ্ঞানিক রিচার্ড নেড লেবো, এমনকি এও বলেন: “হয়ত কিছু আণবিক অস্ত্র থাকলে লোকেরা সতর্ক থাকবে।”
কিন্তু যতক্ষণ আণবিক অস্ত্র অস্তিত্বে আছে, তার দ্বারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার আতঙ্ক যে কোন শান্তি আনয়নের দাবিকে হেয়জ্ঞান করবে; এবং যে সকল অসামরিক সমস্যা আছে যা লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রত্যহ জীবন থেকে শান্তি ছিনিয়ে নিয়েছে তা থেকেই যাবে। ইউ.এন. সেক্রেটারী জেনেরাল হাভিয়ের পেরেজ দে কোএয়ার বলেন “আমাদের লক্ষ লক্ষ সহনাগরিক যারা গৃহহীন অথবা অনুপযুক্ত গৃহে বাস করছেন তাদের খুবই দুর্দশাপূর্ণ অবস্থা। এই সমস্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।” ইউ.এন. ক্রনিকল আরও জানায় যে আর্থিক অনুন্নতি “মনুষ্যজাতির দুই’তৃতীয়াংশকে প্রভাবিত করে, কিছুক্ষেত্রে দারিদ্র্য ও নিঃস্বতার মাত্রা যুদ্ধঘটিত যন্ত্রণার থেকে কিছু কম নয়।” আর পৃথিবীর প্রায় ১২০ লক্ষ রেফিউজীদের অবস্থা সম্বন্ধে কি? অস্ত্রহ্রাসকরণ, এমনকি সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ কি তাদের জীবনে শান্তি নিয়ে আসতে পারবে?
স্পষ্টতঃ, মানুষের বিশ্ব শান্তির স্বপ্ন এক ত্রুটিপূর্ণ প্রত্যাশা—অদূরদর্শী, সংকীর্ণ, সীমাবদ্ধ। শান্তির অন্য, অপেক্ষাকৃত উত্তম সম্ভাবনা কি আছে? বাস্তবিকপক্ষে, আছে। এই পত্রিকার আগস্ট ১, ১৯৯১ সংখ্যায় আমরা দেখেছি যে বাইবেল নিশ্চিতরূপে এক শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতির প্রত্যাশা দেয়।a শীঘ্রই যীশু খ্রীষ্ট, ঈশ্বরের রাজ্যের রাজা, এমন শান্তি নিয়ে আসবেন যা সমস্ত মনুষ্যজাতির প্রত্যাশার অনেক ঊর্দ্ধে। কিন্তু মানবজাতির জন্য এই শান্তির প্রকৃত অর্থ কি হবে? পরের প্রবন্ধ এই বিষয়ে আলোচনা করবে। (W90 4/15)
[পাদটীকাগুলো]
a অগাস্ট ১, ১৯৯১ সংখ্যায় “কে মানুষকে শান্তির পথে পরিচালিত করবে?” দেখুন।