তাঁর বাক্যের মাধ্যমে যিহোবাকে জানুন
“আর ইহাই অনন্ত জীবন যে, তাহারা তোমাকে, একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে, এবং তুমি যাঁহাকে পাঠাইয়াছ, তাঁহাকে, যীশু খ্রীষ্টকে, জানিতে পায়।”—যোহন ১৭:৩.
১, ২. (ক) শাস্ত্রে যেভাবে “জানা” এবং “জ্ঞান” শব্দগুলি ব্যবহার করা হয়েছে তার অর্থ কি? (খ) কোন্ উদাহরণগুলি এই অর্থ সহজে বোঝায়?
কোন ব্যক্তির সাথে স্বল্প পরিচয় অথবা কোন বিষয়ে ভাসা-ভাসা জ্ঞানের অর্থ, শাস্ত্রে যে অর্থে “জানা” এবং “জ্ঞান” শব্দগুলি ব্যবহার করা হয়েছে, তা নয়। বাইবেলে এর সাথে জড়িত আছে “অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জানা,” একটি জ্ঞান যা “মানুষের মধ্যে এক বিশ্বাসের সম্পর্ককে” প্রকাশ করে। (দি নিউ ইন্টারন্যাশানাল ডিক্শনারি অফ্ নিউ টেস্টামেন্ট থিওলজি) এর অন্তর্ভূক্ত যিহোবাকে জানা তাঁর বিশেষ কোন কাজকে জানার মাধ্যমে, যেমন যিহিষ্কেল পুস্তকে বহু উদাহরণগুলি যেখানে ঈশ্বর অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে বিচার করেছিলেন, এই ঘোষণা করে: “তাহাতে তাহারা জানিবে যে, আমিই যিহোবা।”—যিহিষ্কেল ৩৮:২৩. NW.
২ “জানা” এবং “জ্ঞান” যে বিভিন্নভাবে ব্যবহার হতে পারে তা কয়েকটি উদাহরণের সাহায্যে সহজে বোঝা যায়। যারা তাঁর নামে পরাক্রম-কার্য করছে বলে দাবী করছিল, যীশু তাদের বলেছিলেন, “আমি কখনও তোমাদিগকে জানি নাই”; তিনি বুঝিয়েছিলেন তাদের সাথে কখনও তাঁর কোন সম্পর্ক ছিল না। (মথি ৭:২৩) দ্বিতীয় করিন্থীয় ৫:২১ বলে যে খ্রীষ্ট “পাপ জানেন নাই।” এর অর্থ এই নয় যে পাপ সম্বন্ধে তিনি অজ্ঞ ছিলেন, কিন্তু এই যে পাপের সাথে তাঁর কোন ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল না। একইভাবে, যখন যীশু বলেছিলেন: “আর ইহাই অনন্ত জীবন যে, তাহারা তোমাকে, একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে, এবং তুমি যাঁহাকে পাঠাইয়াছ, তাঁহাকে, যীশু খ্রীষ্টকে, জানিতে পায়,” ঈশ্বর এবং খ্রীষ্ট সম্বন্ধে শুধুমাত্র কিছু জানা ছাড়াও এর সাথে অধিক কিছু যুক্ত ছিল।—তুলনা করুন মথি ৭:২১.
৩. কি প্রমাণ করে যে সত্য ঈশ্বররূপে যিহোবা এক বৈশিষ্ট্যসূচক চিহ্ন প্রদর্শন করেন?
৩ যিহোবার বহু গুণাবলী তাঁর বাক্য, বাইবেল থেকে জানা যেতে পারে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে তাঁর নির্ভুলভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা। এটি সত্য ঈশ্বরের একটি চিহ্ন: “যাহা যাহা ঘটিবে, আমাদিগকে জ্ঞাত করুক; পূর্ব্বকার বিষয়—কি কি—তাহা বল; তাহা হইলে আমরা বিবেচনা করিয়া তাহার শেষ ফল জানিতে পারিব; কিম্বা উহারা আগামী ঘটনা সকল আমাদের কর্ণগোচর করুক। উত্তরকালে কি কি ঘটিবে, তোমরা তাহা জ্ঞাত কর; তাহা করিলে তোমরা যে দেবতা, তাহা বুঝিতে পারিব।” (যিশাইয় ৪১:২২, ২৩) তাঁর বাক্যে, যিহোবা পৃথিবীর সৃষ্টির প্রথম বিষয় ও তার উপরে জীবন সম্বন্ধে বলেছেন। বহু পূর্বেই তিনি বলেছিলেন ভবিষ্যতে কি কি বিষয় ঘটবে এবং সে সমস্তই ঘটেছিল। আর এমনকি এখনও তিনি “উত্তরকালে কি কি ঘটিবে তাহা জ্ঞাত করান,” বিশেষত সেই বিষয়গুলি যা ঘটবে এই “শেষ কালে।”—২ তীমথিয় ৩:১-৫, ১৩; আদিপুস্তক ১:১-৩০; যিশাইয় ৫৩:১-১২; দানিয়েল ৮:৩-১২, ২০-২৫; মথি ২৪:৩-২১; প্রকাশিত বাক্য ৬:১-৮; ১১:১৮.
৪. যিহোবা কিভাবে তাঁর শক্তি বৈশিষ্ট্যকে ব্যবহার করেছেন এবং পরে আবার কিভাবে ব্যবহার করবেন?
৪ যিহোবার আর একটি গুণ শক্তি। যা স্পষ্ট বোঝা যায় আকাশমণ্ডলে যেখানে তারাগুলি প্রচণ্ড মিশ্রন-অগ্নিকুণ্ড রূপে কাজ করে আলো ও তাপ বিকিরণ করছে। যখন বিদ্রোহী মানুষ অথবা স্বর্গদূতেরা যিহোবার সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করে, তিনি তাঁর শক্তি ব্যবহার করেন এক “যুদ্ধবীর” রূপে, তাঁর মহান নাম ও ধার্মিক মানগুলি রক্ষা করতে। এই সকল ক্ষেত্রে ধ্বংসাত্মক রূপে শক্তি ব্যবহার করতে তিনি ইতস্তত করেন না, যেমন নোহের দিনের জলপ্লাবনে, সদোম ও ঘমোরা নগরের বিনাশে এবং লোহিত সাগরের মধ্যে দিয়ে ইস্রায়েল জাতির উদ্ধারে। (যাত্রাপুস্তক ১৫:৩-৭; আদিপুস্তক ৭:১১, ১২, ২৪; ১৯:২৪, ২৫) শীঘ্রই, ঈশ্বর তাঁর এই শক্তি ব্যবহার করবেন “শয়তানকে তোমাদের পদতলে দলিত করতে।”—রোমীয় ১৬:২০.
৫. তাঁর শক্তির সাথে, আরও একটি কোন্ গুণ যিহোবা রাখেন?
৫ তবুও, এত অসীম শক্তি থাকা সত্ত্বেও, সেখানে কোমলতা রয়েছে। গীতসংহিতা ১৮:৩৫, ৩৬ পদ বলে: “তোমার কোমলতা আমাকে মহান্ করিয়াছে। তুমি আমার নীচে পাদসঞ্চারের স্থান প্রশস্ত করিয়াছ।” ঈশ্বরের এই কোমলতার জন্যই “তিনি অবনত হইয়া দৃষ্টিপাত করেন আকাশে ও পৃথিবীতে। তিনি ধূলি হইতে দীনহীনকে তুলেন, সারের ঢিবী হইতে দরিদ্রকে উঠান।”—গীতসংহিতা ১১৩:৬, ৭.
৬. যিহোবার কোন্ গুণটি জীবন রক্ষাকারী?
৬ মানুষের সাথে আচরণে যিহোবার করুণা জীবন রক্ষাকারী। কি করুণাই না মনঃশির প্রতি দেখান হয়েছিল যখন তাকে ক্ষমা করা হয়, যদিও সে ঘৃণিত দুষ্কার্য করেছিল! যিহোবা বলেন: “যখন আমি দুষ্টকে বলি, তুমি মরিবেই মরিবে, তখন যদি সে আপন পাপ হইতে ফিরিয়া ন্যায় ও ধর্ম্মাচরণ করে—তাহার কৃত সমস্ত পাপ আর তাহার বলিয়া স্মরণ হইবে না; সে ন্যায় ও ধর্ম্মাচরণ করিয়াছে, অবশ্য বাঁচিবে।” (যিহিষ্কেল ৩৩:১৪, ১৬; ২ বংশাবলি ৩৩:১-৬, ১০-১৩) যীশু যিহোবাকে চিত্রিত করছিলেন যখন তিনি ৭৭ বার ক্ষমা করতে উপদেশ দেন, এমনকি ৭ বার এক দিনে!—গীতসংহিতা ১০৩:৮-১৪; মথি ১৮:২১, ২২; লূক ১৭:৪.
একজন ঈশ্বর যিনি অনুভব করেন
৭. গ্রীক দেবতাদের থেকে যিহোবা কিভাবে পৃথক, এবং কোন্ মূল্যবান সুযোগ আমাদের সামনে খোলা রয়েছে?
৭ গ্রীক দার্শনিকেরা, যেমন ইপিকুরীয়রা, দেবতায় বিশ্বাস করতেন কিন্তু মানুষের প্রতি কোন আগ্রহে অথবা মানুষের অনুভূতি দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার পক্ষে পৃথিবী থেকে তারা বহুদূরে রয়েছেন বলে মনে করতেন। যিহোবা ও তাঁর বিশ্বস্ত সাক্ষীদের মধ্যে সম্পর্ক কত পৃথক! “সদাপ্রভু আপন প্রজাদিগেতে প্রীত।” (গীতসংহিতা ১৪৯:৪) জলপ্লাবনের পূর্বে দুষ্ট লোকেদের জন্য তাঁর অনুশোচনা হয় ও “মনঃপীড়া” পান। ইস্রায়েল জাতি তার অবিশ্বস্ততার কারণে যিহোবার দুঃখ ও অসন্তোষ এনেছিল। খ্রীষ্টানেরা তাদের অবাধ্যতা দ্বারা যিহোবার আত্মাকে দুঃখ দিতে পারে; তাদের বিশ্বস্ততা দ্বারা, কিন্তু, তারা তাঁর চিত্তকে আনন্দিত করতে পারে। ভাবতে কি আশ্চর্য লাগে যে পৃথিবীর ক্ষুদ্র মানুষ মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তাকে দুঃখ অথবা আনন্দ দিতে পারে! আমাদের জন্য তিনি যা কিছু করেন সেই কারণে, কি অপূর্ব যে তাঁকে আনন্দ দেওয়ার মূল্যবান সুযোগ আমাদের রয়েছে!—আদিপুস্তক ৬:৬; গীতসংহিতা ৭৮:৪০, ৪১; হিতোপদেশ ২৭:১১; যিশাইয় ৬৩:১০; ইফিষীয় ৪:৩০.
৮. অব্রাহাম কিভাবে যিহোবার সাথে তার কথা বলার সাহসকে ব্যবহার করেছিলেন?
৮ ঈশ্বরের বাক্য দেখায় যে যিহোবার প্রেম আমাদের “কথা বলায় সাহস” অনুমোদন করে। (১ যোহন ৪:১৭, NW.) অব্রাহামের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করুন যখন যিহোবা সদোম ধ্বংস করতে এসেছিলেন। অব্রাহাম যিহোবাকে বলেন: “আপনি কি দুষ্টের সহিত ধার্ম্মিককেও সংহার করিবেন? সেই নগরের মধ্যে যদি পঞ্চাশ জন ধার্ম্মিক পাওয়া যায়, তবে আপনি কি তথাকার পঞ্চাশ জন ধার্ম্মিকের অনুরোধে সেই স্থানের প্রতি দয়া না করিয়া তাহা বিনষ্ট করিবেন? . . . এই প্রকার কর্ম্ম আপনা হইতে দূরে থাকুক। সমস্ত পৃথিবীর বিচারকর্ত্তা কি ন্যায়বিচার করিবেন না?” ঈশ্বরের প্রতি কি ধরনের বাক্য! তবুও যিহোবা সদোমকে রক্ষা করতে সম্মত হয়েছিলেন যদি সেখানে ৫০ জন ধার্ম্মিক লোক থাকে। অব্রাহাম আরও বলে সেই সংখ্যাকে ৫০ থেকে ২০তে নামিয়ে আনেন। তিনি মনে করেছিলেন যে খুব বেশী চাপ দেওয়া হয়ে যাচ্ছে। তাই বলেছিলেন: “প্রভু ক্রুদ্ধ হইবেন না, আমি কেবল আর এই এক বার বলি; যদি সেখানে দশ জন পাওয়া যায়?” আবার যিহোবা মেনে নেন: “সেই দশ জনের অনুরোধে তাহা বিনষ্ট করিব না।”—আদিপুস্তক ১৮:২৩-৩৩.
৯. যিহোবা কেন অব্রাহাম যেভাবে বলেছিল সেইভাবে কথা বলার অনুমতি তাকে দিয়েছিলেন এবং সেখান থেকে আমরা কি শিখতে পারি?
৯ যিহোবা কেন অব্রাহামকে এইভাবে সাহসের সাথে কথা বলার অনুমতি দিয়েছিলেন? একটি কারণ, যিহোবা অব্রাহামের বেদনার অনুভূতি সম্বন্ধে জানতেন। তিনি জানতেন যে অব্রাহামের ভাগিনেয় লোট সদোমে বাস করে, এবং অব্রাহাম তার রক্ষা সম্বন্ধে চিন্তিত ছিল। আরও, অব্রাহাম ঈশ্বরের বন্ধু ছিলেন। (যাকোব ২:২৩) যখন কেউ আমাদের সাথে রুক্ষভাবে কথা বলে, বিশেষত সে যদি একজন বন্ধু হয় যে কোন প্রকার মানসিক চাপের মধ্যে আছে, আমরা কি তার কথাগুলির পিছনে যে অনুভূতি রয়েছে তা বোঝবার চেষ্টা করি ও কিছু মনে না করি? এটি জানা কি সান্ত্বনাদায়ক নয় যে আমাদের কথা বলায় সাহসের ব্যবহার সম্পর্কে যিহোবা সহানুভূতিসম্পন্ন হবেন, যেমন তিনি হয়েছিলেন অব্রাহামের ক্ষেত্রে?
১০. প্রার্থনায় কিভাবে কথা বলায় সাহস আমাদের সাহায্য করে?
১০ বিশেষত যখন আমরা মানসিকভাবে ভগ্ন ও চূর্ণ অন্তঃকরণ হই, ও “প্রার্থনা-শ্রবণকারী” রূপে তাঁর অন্বেষণ করি, তখন কি আমরা এই বলার সাহসের জন্য আকুল মিনতি করি না যাতে তাঁর কাছে আমাদের হৃদয় ঢেলে দিতে পারি। (গীতসংহিতা ৫১:১৭; ৬৫:২, ৩) এমনকি সেই সময়ে যখন আমরা বাক্যে দুর্বল হই, “আত্মা আপনি অবক্তব্য আর্ত্তস্বর দ্বারা আমাদের পক্ষে অনুরোধ করে,” এবং যিহোবা শোনেন। তিনি আমাদের চিন্তা জানতে পারেন: “তুমি দূর হইতে আমার সঙ্কল্প বুঝিতেছ। যখন আমার জিহ্বাতে একটি কথাও নাই, দেখ, সদাপ্রভু, তুমি উহা সমস্তই জানিতেছ।” তবুও, আমাদের উচিৎ যাচ্ঞা করা, অন্বেষণ করা এবং দ্বারে আঘাত করা।—রোমীয় ৮:২৬; গীতসংহিতা ১৩৯:২, ৪; মথি ৭:৭, ৮.
১১. কি দেখায় যে যিহোবা প্রকৃতই আমাদের যত্ন নেন?
১১ যিহোবা যত্ন নেন। তাঁর সৃষ্ট জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় বস্তুর ব্যবস্থা করেন। “সকলের চক্ষু তোমার অপেক্ষা করে, তুমিই যথাসময়ে তাহাদের ভক্ষ্য দিতেছ। তুমিই আপন হস্ত মুক্ত করিয়া থাক, সমুদয় প্রাণীর বাঞ্ছা পূর্ণ করিয়া থাক।” (গীতসংহিতা ১৪৫:১৫, ১৬) বনের পাখিদের তিনি কিভাবে আহার দিয়ে থাকেন তা দেখতে আমাদের আহ্বান করা হচ্ছে। ক্ষেত্রের কানুড় পুষ্প দেখুন, কেমন সুন্দরভাবে তিনি তাদের সুসজ্জিত করেন। যীশু যোগ করেছিলেন যে ঈশ্বর তাদের জন্য যা করেন তার চেয়ে আরও অনেক অধিক নিশ্চয় আমাদের জন্য করবেন। সুতরাং কেন আমরা চিন্তিত হব? (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:১০; মথি ৬:২৬-৩২; ১০:২৯-৩১) প্রথম পিতর ৫:৭ আপনাদের আহ্বান জানায় “তোমাদের সমস্ত ভাবনার ভার তাঁহার উপরে ফেলিয়া দেও; কেননা তিনি তোমাদের জন্য চিন্তা করেন।”
“তাঁর তত্ত্বের পূর্ণ মুদ্রাঙ্ক”
১২, ১৩. তাঁর সৃষ্টি এবং বাইবেলে লিখিত তাঁর কার্যাবলীর মাধ্যমে যিহোবাকে দেখা ছাড়াও, আরও কিভাবে আমরা তাঁকে জানতে ও শুনতে পারি?
১২ তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে আমরা যিহোবা ঈশ্বরকে দেখতে পারি; বাইবেলে তাঁর কার্যসকল পড়ে আমরা তাঁকে জানতে পারি; আমরা আরও তাঁকে বুঝতে পারি যীশু খ্রীষ্ট সম্বন্ধে যে সমস্ত বাক্য ও কার্য লিপিবদ্ধ আছে তা থেকে। যীশু নিজেও তাই বলেছেন, যোহন ১২:৪৫ পদে: “যে আমাকে দর্শন করে, সে তাঁহাকেই দর্শন করে, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন।” আবার, যোহন ১৪:৯ পদে: “যে আমাকে দেখিয়াছে সে পিতাকে দেখিয়াছে।” কলসীয় ১:১৫ পদ বলে: “[যীশু] অদৃশ্য ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তি।” ইব্রীয় ১:৩ পদ প্রকাশ করে: “[যীশু] তাঁহার [ঈশ্বরের] প্রতাপের প্রভা ও তত্ত্বের মুদ্রাঙ্ক।”
১৩ যিহোবা তাঁর পুত্রকে পাঠিয়েছিলেন শুধুমাত্র মুক্তির মূল্য দিতে নয় কিন্তু অনুকরণ করার জন্য এক উদাহরণ স্থাপন করতেও, কথায় ও কাজে উভয়েই। যীশু ঈশ্বরের বাক্য বলতেন। যোহন ১২:৫০ পদে তিনি বলেছিলেন: “অতএব আমি যাহা যাহা বলি, তাহা পিতা আমাকে যেমন কহিয়াছেন, তেমনি বলি।” তিনি তাঁর নিজের কাজ করেন নি, কিন্তু ঈশ্বর যা তাঁকে করতে বলেছিলেন তিনি তাই করেছিলেন। যোহন ৫:৩০ পদে তিনি বলেছিলেন: “আমি আপনা হইতে কিছুই করিতে পারি না।”—যোহন ৬:৩৮.
১৪. (ক) কি দৃশ্য যীশুকে করুণাবিষ্ট করেছিল? (খ) যীশুর কথা বলার ধরন কেন লোকেদের তাঁর কাছে জড় হয়ে তাঁর কথা শুনতে প্রেরণা দিত?
১৪ যীশু দেখেছিলেন সেইসব লোকেদের যারা কুষ্ঠী, অক্ষম, বোবা, অন্ধ, ভূতগ্রস্ত এবং যারা তাদের মৃত প্রিয়জনের জন্য শোকার্ত। করুণাবিষ্ট হয়ে, তিনি অসুস্থদের সুস্থ ও মৃতদের পুনরুত্থিত করেছিলেন। তিনি দেখেছিলেন জনতা আত্মিকভাবে রুগ্ন ও ছিন্নভিন্ন, তাই তাদের অনেক বিষয়ে শিক্ষা দিতে আরম্ভ করেছিলেন। তিনি তাদের শুধু সঠিক বাক্য দ্বারা নয় কিন্তু তাঁর হৃদয় থেকে আকর্ষণীয় কথা দ্বারাও শিক্ষা দিয়েছিলেন যা সরাসরি অপরের হৃদয়ে গিয়ে পৌঁছেছিল, যা তাদের তাঁর কাছে আকর্ষণ করেছিল, যা তাদের প্রত্যুষেই তাঁর কথা শুনতে মন্দিরে আসতে, তাঁর নিকটে থাকতে, আনন্দের সাথে তাঁর বাক্য শ্রবণ করতে প্রেরণা দিয়েছিল। তারা তাঁর কাছে জড় হয়ে শুনত, এই বলে যে “কোন মানুষে কখনও এরূপ কথা কহে নাই।” তারা তাঁর শিক্ষাপদ্ধতিতে চমৎকৃত হয়েছিল। (যোহন ৭:৪৬; মথি ৭:২৮, ২৯; মার্ক ১১:১৮; ১২:৩৭; লূক ৪:২২; ১৯:৪৮; ২১:৩৮) এবং যখন তাঁর শত্রুরা প্রশ্ন দ্বারা তাঁকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করত, তিনি পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ঘুরিয়ে দিতেন, তাদের চুপ করিয়ে দিতেন।—মথি ২২:৪১-৪৬; মার্ক ১২:৩৪; লূক ২০:৪০.
১৫. যীশুর প্রচারের মুখ্য বিষয় কি ছিল এবং তা বিস্তারের জন্য অন্যদের কতটা ব্যাপকভাবে তিনি জড়িত করেছিলেন?
১৫ তিনি “স্বর্গ-রাজ্য সন্নিকট হইল” ঘোষণা করেছিলেন ও “প্রথমে রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা” করতে শ্রোতাদের উপদেশ দিয়েছিলেন। তিনি অন্যদের পাঠিয়েছিলেন “স্বর্গ-রাজ্য সন্নিকট হইল” প্রচার করতে, “সমুদয় জাতিকে শিষ্য” করতে, “পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত” খ্রীষ্টের সাক্ষী হতে। আজ প্রায় ৪৫ লক্ষ যিহোবার সাক্ষীরা ওই কাজগুলি করে তাঁর পথ অনুসরণ করে চলেছে।—মথি ৪:১৭; ৬:৩৩; ১০:৭; ২৮:১৯; প্রেরিত ১:৮.
১৬. যিহোবার বৈশিষ্ট্য প্রেমকে কিভাবে এক কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হয়েছিল, কিন্তু মানবজাতির জন্য তা কি সাধন করেছিল?
১৬ “ঈশ্বর প্রেম,” আমাদের বলা হয়েছে ১ যোহন ৪:৮ পদে। তাঁর এই অনন্যসাধারণ বৈশিষ্ট্যকে কি সর্বাধিক যন্ত্রণাদায়ক পরীক্ষায় পড়তে হয়েছিল তা কল্পনা করা যায় যখন তিনি তাঁর এক-জাত পুত্রকে পৃথিবীতে মৃত্যু বরণ করতে পাঠিয়েছিলেন। যে নিদারুণ যন্ত্রণা এই প্রিয় পুত্র ভোগ করেছিলেন ও যে আকুল মিনতি তিনি তাঁর স্বর্গীয় পিতার কাছে করেছিলেন তা নিশ্চয়ই যিহোবাকে মর্মান্তিক দুঃখ ও বেদনা দিয়েছিল, যদিও যীশু মিথ্যা প্রমাণিত করেছিলেন শয়তানের সেই চ্যালেঞ্জকে যে পৃথিবীতে যিহোবার এমন কোন ব্যক্তিরা থাকতে পারে না যারা কঠিন পরীক্ষায় পড়লেও তাঁর প্রতি তাদের বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে পারবে। যীশুর বলিদানের গুরুত্বও আমাদের উপলব্ধি করা উচিৎ, কারণ ঈশ্বর তাঁকে এখানে পাঠিয়েছিলেন আমাদের জন্য মৃত্যু বরণ করতে। (যোহন ৩:১৬) এটি কোন সহজ, শীঘ্র মৃত্যু ছিল না। ঈশ্বর ও যীশু উভয়কেই কি মূল্য দিতে হয়েছিল তা বুঝতে এবং এইভাবে আমাদের জন্য তাঁদের ত্যাগস্বীকারের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে, আসুন আমরা বাইবেলে লিপিবদ্ধ সেই ঘটনার বিবরণ পরীক্ষা করি।
১৭-১৯. যীশু কিভাবে তাঁর সামনের কঠোর পরীক্ষাকে বর্ণনা করেছিলেন?
১৭ চারবার যীশু তাঁর প্রেরিতদের কাছে বর্ণনা করেন যে কি ঘটতে চলেছে। এটি ঘটবার মাত্র কয়েকদিন পূর্বে, তিনি বলেছিলেন: “দেখ, আমরা যিরূশালেমে যাইতেছি, আর মনুষ্যপুত্র প্রধান যাজক ও অধ্যাপকগণের হস্তে সমর্পিত হইবেন; এবং তাহারা তাঁহার প্রাণদণ্ড বিধান করিবে, এবং পরজাতীয়দের হস্তে তাঁহাকে সমর্পণ করিবে। আর তাহারা তাঁহাকে বিদ্রূপ করিবে, তাঁহার মুখে থুথু দিবে, তাঁহাকে কোড়া মারিবে ও বধ করিবে।”—মার্ক ১০:৩৩, ৩৪.
১৮ রোমীয় চাবুক মারার ভয়াবহতা উপলব্ধি করে, সামনেই কি প্রচণ্ড চাপ আসছে যীশু তা অনুভব করেছিলেন। চাবুক মারার জন্য যে কোড়া ব্যবহার করা হত তার আগায় চামড়ার ফিতের মধ্যে ধাতুর টুকরো ও ভেড়ার হাড় বেঁধান থাকত; তাই চাবুক চলাকালীন, পিঠ ও পাগুলি রক্তাক্ত মাংসের ফিতের মত হয়ে উঠত। কয়েকমাস পূর্বে, তাঁর জন্য সামনে যে কঠোর পরীক্ষা আসছে সেই প্রচণ্ড মানসিক চাপের ইঙ্গিত দিয়ে যীশু বলেছিলেন, যেমন আমরা লূক ১২:৫০ পদে পড়ি: “কিন্তু আমাকে এক বাপ্তিস্মে বাপ্তাইজিত হইতে হইবে, আর তাহা যাবৎ সিদ্ধ না হয়, তাবৎ আমি কত না সঙ্কুচিত হইতেছি!”
১৯ সময় এগিয়ে আসার সাথে সাথে চাপও বেড়েছিল। এ সম্বন্ধে তিনি তাঁর স্বর্গীয় পিতাকে বলেছিলেন: “এখন আমার প্রাণ উদ্বিগ্ন হইয়াছে; ইহাতে কি বলিব? পিতঃ, এইসময় হইতে আমাকে রক্ষা কর? কিন্তু ইহারই নিমিত্ত আমি এই সময় পর্য্যন্ত আসিয়াছি।” (যোহন ১২:২৭) তাঁর এক-জাত পুত্রের কাছ থেকে এরূপ আকুল মিনতিতে যিহোবা কতই না ব্যাকুল হয়েছিলেন! গেৎশিমানীতে, তাঁর মৃত্যুর মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে, যীশু মর্ম্মান্তিক দুঃখে পিতর, যাকোব ও যোহনকে বলেছিলেন: “আমার প্রাণ মরণ পর্য্যন্ত দুঃখার্ত্ত হইয়াছে।” তার কয়েক মিনিট পর তিনি এ সম্বন্ধে যিহোবার কাছে তাঁর শেষ প্রার্থনা জানিয়েছিলেন: “‘পিতঃ, যদি তোমার অভিমত হয়, আমা হইতে এই পানপাত্র দূর কর; তথাপি আমার ইচ্ছা নয়, তোমারই ইচ্ছা সিদ্ধ হউক।’ পরে তিনি মর্ম্মভেদী দুঃখে মগ্ন হইয়া আরও একাগ্র ভাবে প্রার্থনা করিলেন; আর তাঁহার ঘর্ম্ম যেন রক্তের ঘনীভূত বড় বড় ফোঁটা হইয়া ভূমিতে পড়িতে লাগিল।” (মথি ২৬:৩৮; লূক ২২:৪২, ৪৪) এটি হয়ত চিকিৎসা-শাস্ত্রে যাকে হিমেটেড্রোসেস্ বলা হয় তা হতে পারে। বিরল হলেও প্রচণ্ড মানসিক পরিস্থিতিতে এরকম ঘটতে পারে।
২০. তাঁর কঠোর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে কি যীশুকে সাহায্য করেছিল?
২০ গেৎশিমানীতে এই সময় সম্বন্ধেই, ইব্রীয় ৫:৭ পদ বলে: “ইনি মাংসে প্রবাসকালে প্রবল আর্ত্তনাদ ও অশ্রুপাত সহকারে তাঁহারই নিকটে প্রার্থনা ও বিনতি উৎসর্গ করিয়াছিলেন, যিনি মৃত্যু হইতে তাঁহাকে রক্ষা করিতে সমর্থ, এবং আপন ভক্তি প্রযুক্ত উত্তর পাইলেন।” যেহেতু তিনি মৃত্যু থেকে রক্ষা পাননি তাঁর দ্বারা “যিনি মৃত্যু হইতে তাঁহাকে রক্ষা করিতে সমর্থ,” কি অর্থে তাঁর প্রার্থনার উত্তর পেয়েছিলেন? লূক ২২:৪৩ পদ উত্তর দেয়: “তখন স্বর্গ হইতে এক দূত দেখা দিয়া তাঁহাকে সবল করিলেন।” প্রার্থনার উত্তর পেয়েছিলেন এইভাবে ঈশ্বর যে দূতকে পাঠিয়েছিলেন তিনি যীশুকে কঠোর পরীক্ষা সহ্য করতে সবল করেন।
২১. (ক) কি দেখায় যে যীশু সেই কঠিন পরীক্ষায় বিজয়ী হয়েছিলেন? (খ) যখন আমাদের পরীক্ষার তীব্রতা বাড়ে, তখনও আমরা কিভাবে বলতে চাইব?
২১ ফল থেকে তা স্পষ্ট হয়েছিল। যখন তাঁর অন্তরের দ্বন্দ্ব কেটে গিয়েছিল, যীশু ওঠেন, পিতর, যাকোব ও যোহনের কাছে ফিরে যান এবং বলেছিলেন: “উঠ, আমরা যাই।” (মার্ক ১৪:৪২) অর্থাৎ তিনি বলছিলেন, ‘আমাকে যেতে দাও এক চুম্বন দ্বারা ধরিয়ে দেওয়ার জন্য, উচ্ছৃঙ্খল জনতা দ্বারা বন্দী হওয়ার জন্য, বেআইনীভাবে বিচারের জন্য, অন্যায়ভাবে অপরাধী সাব্যস্ত হওয়ার জন্য। বিদ্রূপের পাত্র হতে, দেহে থুথু নিতে, কোড়াপ্রহার খেতে, ও এক যাতনা দণ্ডে পেরেকবিদ্ধ হতে আমাকে যেতে দাও।’ ছয় ঘন্টার জন্য তিনি সেখানে ঝুলেছিলেন, অতীব যন্ত্রণার সাথে, শেষ পর্যন্ত সহ্য করেছিলেন। মারা যাওয়ার সময়, তিনি বিজয়োল্লাসে চীৎকার করে বলেছিলেন: “সমাপ্ত হইল!” (যোহন ১৯:৩০) তিনি অবিচলিত ছিলেন এবং যিহোবার সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করতে তাঁর বিশ্বস্ততা প্রমাণ করেছিলেন। যা কিছু করার জন্য যিহোবা তাঁকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন তিনি সমস্তই সম্পন্ন করেছিলেন। যখন আমরা মারা যাব অথবা যখন হর্মাগিদোন শুরু হবে, যিহোবার থেকে প্রাপ্ত আমাদের কর্মভার সম্পর্কে কি আমরা বলতে পারব: “সমাপ্ত হইল”?
২২. কি যিহোবা-বিষয়ক জ্ঞানের বিস্তারের ব্যাপকতাকে প্রদর্শন করে?
২২ যাইহোক, আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে যিহোবার দ্রুত-আসন্ন নির্দিষ্ট সময়ে, “সমুদ্র যেমন জলে আচ্ছন্ন, তেমনি সমস্ত পৃথিবী যিহোবা-বিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হইবে।”—যিশাইয় ১১:৯. NW. (w93 6/15)
আপনার কি মনে আছে?
▫ জানা এবং জ্ঞান থাকার অর্থ কি?
▫ যিহোবার করুণা এবং ক্ষমা তাঁর বাক্যে কিভাবে আমাদের দেখান হয়েছে?
▫ অব্রাহাম কিভাবে যিহোবার সাথে কথা বলার সাহসকে ব্যবহার করেছিলেন?
▫ আমরা কেন যীশুর প্রতি দেখতে পারি ও তাঁর মধ্যে যিহোবার গুণাবলী লক্ষ্য করি?