পাঠকদের থেকে প্রশ্নসকল
বাইবেলে উল্লেখিত পলেষ্টীয়েরা কারা ছিল?
বাইবেলে প্রায়ই এক ধরনের লোকেদের উল্লেখ পাওয়া যায় যারা পলেষ্টীয় নামে পরিচিত, যাদের বসতি ছিল কনান দেশে, যেসময়ে ঈশ্বরের লোকেরা প্রতিজ্ঞাত দেশের অধিকারী ছিল। দীর্ঘকাল ধরে, এই পলেষ্টীয়েরা ঈশ্বরের লোকেদের বিরোধিতা করে এসেছিল, যা লক্ষ্যণীয়ভাবে পলেষ্টীয় বীর গলিয়াৎ এবং দায়ূদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিবরণ থেকে বোঝা যায়।—১ শমূয়েল ১৭:১-৩, ২৩-৫৩.
বাইবেল ইঙ্গিত দেয় যে প্রাচীন পলেষ্টীয়রা কপ্তোর থেকে স্থানান্তরিত হয়ে কনানের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে যায়। (যিরমিয় ৪৭:৪) এখন এই কপ্তোরের অবস্থান কোথায় ছিল? আন্তর্জাতিক প্রামাণ্য বাইবেল বিশ্বকোষ (১৯৭৯) জানায়: “যদিও এবিষয়ে কোন সঠিক উত্তর পাওয়া যায় না, আধুনিক কালের পণ্ডিতেরা কীর দ্বীপকে (অথবা হয়ত এজিয়ান দ্বীপপুঞ্জ সহ কীর দ্বীপ, যেটি সাংস্কৃতিগতভাবে এক) অবশ্যই সেই সম্ভাব্য স্থান বলে মনে করে থাকেন।”—১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬১০.
এর সঙ্গে সমতা রেখে নিউ ওয়ার্ল্ড ট্রান্সলেশন অফ দ্যা হোলী স্ক্রিপচার্স এর আমোষ ৯:৭ পদে পড়ি: “যিহোবা বলেন, হে ইস্রায়েল-সন্তানগণ, তোমরা কি আমার কাছে কূশীয়দের সন্তানগণের তুল্য নও? আমি কি মিসর দেশ থেকে ইস্রায়েলকে, কপ্তোর থেকে পলেষ্টীয়দের এবং কীর থেকে অরামীয়দের আনিনি?”
এটা জানা যায় না যে প্রাচীন উপকূলবাসীরা কখন কীর থেকে স্থানান্তরিত হয়ে কনানের সেই অঞ্চলে এসেছিল, যা পরে পলেষ্টীয় নামে পরিচিত হয়েছিল, যার অবস্থান হল জোফা এবং গাজার মধ্যবর্তী দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলবর্তী অঞ্চল। অব্রাহাম ও ইস্হাকের দিনে সম্ভবত তারা এই উপকূলবর্তী নিম্ন সমভূমিতেই বাস করত।—আদিপুস্তক ২০:১, ২; ২১:৩২-৩৪; ২৬:১-১৮.
ইস্রায়েলীয়রা ঈশ্বরের দ্বারা প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করার দীর্ঘ দিন পরেও পলেষ্টীয়রা এই অঞ্চলে অনেক দিন ধরে প্রভাব বিস্তার করে রেখেছিল। (যাত্রাপুস্তক ১৩:১৭; যিহোশূয় ১৩:২; বিচারকর্ত্তৃগণ ১:১৮, ১৯; ৩:৩, ৪; ১৫:৯, ১০; ১ শমূয়েল ৪:১-১১; ৭:৭-১৪; ১৩:১৯-২৩; ১ রাজাবলি ১৬:১৫) যতদিন পর্যন্ত যিহূদার রাজা উষিয় ছিলেন, ততোদিন পর্যন্ত পলেষ্টীয়রা তাদের শহরগুলিতে, যেমন গাত, যব্নি ও অস্দোদে ছিল। (২ বংশাবলি ২৬:৬) বাইবেলের বিবরণে তাদের অন্যান্য যে সব প্রসিদ্ধ শহরের তথ্য পাওয়া যায়, সেগুলি হল ইক্রোণ, অস্কিলন এবং ঘসা (গাজা)।
মহান রাজা আলেকজাণ্ডার পলেষ্টীয় শহর ঘসা জয় করেছিলেন, কিন্তু কালক্রমে এই পলেষ্টীয়রা আপাতরূপে আর এক স্বতন্ত্র গোষ্ঠী হিসাবে পরিচিত ছিল না। অধ্যাপক লরেন্স. ই. স্টাগ বিবলিক্যাল আরকিওলজি রিভিউ (মে/জুন ১৯৯১)-তে লিখেছিলেন: “এই পলেষ্টীয়দেরও বাবিলনে বন্দী করা হয়েছিল। . . . কিন্তু, কোন তথ্য জানা যায় না যে এই নির্বাসিত পলেষ্টীয়দের কী পরিণতি হয়েছিল। নবূখদ্নিৎসরের বিজয়ের পরে যারা অস্কিলোনে ছিল, তারা আপাতদৃষ্টিতে তাদের নৈতিক সততা ও স্বতন্ত্রতা হারিয়ে ফেলেছিল। সাধারণ ভাষায়, ইতিহাস থেকে তাদের নাম মুছে গিয়েছিল।”
আধুনিক যে নাম প্যালেষ্টাইন, তা গ্রীক ও ল্যাটিন শব্দ থেকে নেওয়া হয়েছে, যেটা আমাদের আরও পিছনে ইব্রীয় শব্দ “ফিলিষ্টিয়া”-র প্রতি দৃষ্টি আরোপ করে। কিছু কিছু বাইবেল অনুবাদ আরবিক ভাষায় “ফিলিষ্টাইন” এর জন্য একটি শব্দ ব্যবহার করে, যেটা আধুনিক পলেষ্টীয়দের যে শব্দ, তার সঙ্গে সহজে গুলিয়ে যায়। যাইহোক, টুডেস অ্যারাবিক ভারসান একটি ভিন্ন আরবীয় ভাষা ব্যবহার করে, যার দ্বারা প্রাচীন পলেষ্টীয় এবং আধুনিক আরবের যে পলেষ্টীয়, তাদের পার্থক্য দেখিয়ে দেয়।
[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]
অস্কিলোনের কিছু ধ্বংসাবশেষ
[সজন্যে]
Pictorial Archive (Near Eastern History) Est.