এমন এক জীবন যার জন্য আমি কখনও অনুশোচনা করিনি
পল্ অবরিস্ট দ্বারা কথিত
১৯১২ সালে, আমার বয়স যখন ছয় বছর, মা তার পঞ্চম সন্তানকে জন্ম দেওয়ার সময় মারা যান। তার প্রায় দু’বছর পর, একজন যুবতী গৃহরক্ষিকা, বার্টা ভিবেল, আমাদের পরিবারের দেখাশুনা করতে শুরু করেন। তার পরের বছর বাবা যখন তাকে বিবাহ করেন, আমরা সন্তানেরা আবার একজন মাকে পেয়ে আনন্দিত হয়েছিলাম।
সুইজারল্যান্ডের জার্মান-ভাষী এলাকার একটি ছোট্ট শহর, ব্রাগে আমরা বাস করতাম। বার্টা সত্যই একজন খ্রীষ্টীয় মহিলা ছিলেন এবং আমি তাকে খুবই পছন্দ করতাম। তিনি ১৯০৮ সালে বাইবেল ছাত্রদের (যিহোবার সাক্ষীদের) প্রকাশনাগুলি অধ্যয়ন করতে শুরু করেছিলেন এবং তিনি যা শিখেছিলেন তা অন্যদের বলতেন।
১৯১৫ সালে, বার্টা এবং বাবা বিয়ে করার অল্পকাল পর, আমি তার সাথে “ফটো-ড্রামা অফ ক্রিয়েশন” প্রদর্শনীতে গিয়েছিলাম। আন্তরিক বাইবেল ছাত্রদের আন্তর্জাতিক সংঘের, এই স্লাইড এবং আলোকচিত্র উপস্থাপনা আমার মন এবং হৃদয়ের উপর এক গভীর প্রভাব ফেলেছিল। অন্যেরাও প্রভাবিত হয়েছিল। ব্রাগের হলটি এত পূর্ণ হয়েছিল যে পুলিশ দরজাগুলি বন্ধ করে দেয় এবং আরও যারা আসে তাদের ফিরিয়ে দেয়। তাই অনেকেই একটি মই দ্বারা খোলা জানালা দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করেছিল এবং অল্প কয়েকজন সমর্থও হয়েছিল।
মায়ের উত্তম উদাহরণ
তখন ইউরোপে ১ম বিশ্বযুদ্ধ উন্মত্ত রূপ নিয়েছিল এবং লোকেরা ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে ভীত ছিল। অতএব, ঈশ্বরের রাজ্যের সান্ত্বনাদায়ক বার্তা নিয়ে গৃহে গৃহে যাওয়া, যেমন মা করেছিলেন, একটি মহান কাজ ছিল। মাঝে মাঝে তিনি আমাকে তার সঙ্গে নিয়ে যেতেন, আর আমি তা খুবই উপভোগ করতাম। ১৯১৮ সালে, মা শেষ পর্যন্ত জলে বাপ্তিস্মের দ্বারা যিহোবা ঈশ্বরের কাছে তার উৎসর্গীকরণ চিহ্নিত করেন।
মায়ের বাপ্তিস্মের পূর্ব পর্যন্ত বাবা তার উপাসনায় কোন হস্তক্ষেপ করেননি কিন্তু তারপর তিনি তার বিরোধিতা করতে শুরু করেন। একদিন তিনি তার বাইবেল সাহিত্যাদি কেড়ে নেন এবং তা উনুনের মধ্যে নিক্ষেপ করেন। মা কেবলমাত্র তার বাইবেলটি আগুন থেকে তুলে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু পরে তিনি যা করেন তা ছিল অভিভূতকর। তিনি বাবার কাছে যান এবং তাকে জড়িয়ে ধরেন। তিনি তার প্রতি কোন ক্ষোভ পোষণ করেননি।
সম্পূর্ণভাবে আশ্চর্য হয়ে বাবা শান্ত হন। কিন্তু, মাঝে মাঝে তার বিরোধিতা জেগে উঠত এবং আমাদের তার এই প্রচণ্ডতাকে সহ্য করতে হত।
চাকুরি এবং আধ্যাত্মিক অগ্রগতি
১৯২৪ সালে, কেশবিন্যাসের কাজে তিন বছরের প্রশিক্ষণ শেষ করার পর, আমি বাড়ি ত্যাগ করি এবং সুইজারল্যান্ডের ফ্রেঞ্চ-ভাষী এলাকায় চাকুরি পাই। এটি আমার ফ্রেঞ্চ ভাষার জ্ঞান বৃদ্ধি করার একটি সুযোগ দিয়েছিল। যদিও এই স্থান পরিবর্তন আমার আধ্যাত্মিক অগ্রগতিকে কিছুটা ব্যাহত করেছিল কিন্তু আমি কখনও বাইবেলের সত্যের প্রতি আমার প্রেমকে হারাইনি। সুতরাং ছয় বছর পর যখন আমি বাড়ি ফিরে যাই, ব্রাগে আমি আবার খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর সভাগুলিতে যোগদান করতে শুরু করি।
এর অল্পদিন পরেই আমি প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে একটি ছোট্ট শহর, রীন্ফেল্ডেনে যাই। সেখানে আমি আমার দিদির চুলকাটার দোকানে কাজ করেছিলাম এবং বাইবেল ছাত্রদের একটি ছোট দলের সাথে মিলিত হওয়ার দ্বারা আমার আধ্যাত্মিক অগ্রগতিকে বজায় রেখেছিলাম। একদিন যখন আমাদের সপ্তাহের মাঝের বাইবেল অধ্যয়ন শেষ হয়, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রাচীন, ভাই যোদার, জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “রবিবার কে ক্ষেত্র পরিচর্যার কাজে অংশগ্রহণ করবে বলে পরিকল্পনা করেছেন?” আমি স্বেচ্ছায় এগিয়ে যাই, এই ভেবে যে আমি কোন একজনের সঙ্গ দেব এবং তিনি দেখাবেন কিভাবে কাজ করতে হয়।
যখন রবিবার আসে আর আমরা আমাদের এলাকায় পৌঁছাই, তখন ভাই যোদার বলেন, “মি. অবরিস্ট ওখানে কাজ করবে।” যদিও আমার হৃৎস্পন্দন দ্রুততর হচ্ছিল যা পূর্বে কখনও হয়নি, আমি বাড়ির ভিতরের লোকেদের সাথে সাক্ষাৎ করা শুরু করে দিই এবং তাদের সাথে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে কথা বলি। (প্রেরিত ২০:২০) সেই সময়ের পর থেকে, প্রচার কাজ চালিয়ে যেতে আমি কখনও সরে দাঁড়াইনি যা যীশু বলেছিলেন এই বিধিব্যবস্থার শেষ হয়ে আসার পূর্বে অবশ্যই সম্পাদিত হবে। (মথি ২৪:১৪) ১৯৩৪ সালে, ৪ঠা মার্চ, যখন আমার বয়স ছিল ২৮ বছর, তখন জলে বাপ্তিস্মের দ্বারা যিহোবা ঈশ্বরের কাছে আমি আমার উৎসর্গীকরণ চিহ্নিত করেছিলাম।
দুই বছর পর সুইজারল্যান্ডের ইতালী-ভাষী এলাকার একটি ছোট্ট শহর, লুগানোতে আমি ক্ষৌরকার হিসাবে একটি কাজ পাই। আমি তৎক্ষণাৎ সেখানে সুসমাচার প্রচার শুরু করে দিয়েছিলাম, যদিও আমি ইতালীয় ভাষা খুব অল্পই জানতাম। তবুও আমার প্রথম রবিবারে পরিচর্যায়, আমার সাথে আনা ২০টি পুস্তিকা আমি অর্পণ করেছিলাম। কালক্রমে, আমি কয়েকজন আগ্রহী ব্যক্তিদের প্রহরীদুর্গ অধ্যয়ন করতে একটি দলে একত্র করতে সমর্থ হয়েছিলাম। ফলস্বরূপ এর মধ্যে অনেকেই বাপ্তাইজিত হয়েছিল এবং ১৯৩৭ সালে ফ্রেব্রুয়ারি মাসে, আমরা লুগানোতে যিহোবার সাক্ষীদের একটি মণ্ডলী স্থাপন করেছিলাম।
দুই মাস পরে, ১৯৩৭ সালের এপ্রিল মাসে, আমি একটি চিঠি পাই যা আমার জীবনকে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন করেছিল। এটি বেথেলে যা একটি দেশের যিহোবার সাক্ষীদের শাখাকে বলা হয়, সেখানে সেবা করার একটি আমন্ত্রণ ছিল। আমি তৎক্ষাণাৎ আমন্ত্রণটি গ্রহণ করেছিলাম—এমন এক সিদ্ধান্ত যার জন্য আমি কখনও অনুশোচনা করিনি। এইভাবে আমি আমার ৬০ বছরের পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যা শুরু করেছিলাম।
কষ্টকর সময়ের মধ্যে বেথেল পরিচর্যা
সেই সময় সুইস বেথেল সুইজারল্যান্ডের রাজধানী, বার্ণ শহরে অবস্থিত ছিল। সেখানে আমরা ১৪টি ভাষায় বই, পুস্তিকা এবং পত্রিকা মুদ্রণ করতাম আর সেগুলি ইউরোপের সমস্ত অঞ্চলে জাহাজ যোগে পাঠান হত। একবার আমি ঠেলাগাড়ি করে কিছু মুদ্রিত সাহিত্যাদি ট্রেন স্টেশনে নিয়ে যাই, যেহেতু সেই দিনগুলিতে মালগাড়ি সব সময় আমাদের আয়ত্ত্বে থাকত না। বেথেলে আমার প্রথম দায়িত্ব ছিল কমপোজিশন বিভাগে, যেখানে সীসার মুদ্রাক্ষর একত্রিত করা হত আর যেগুলি থেকে ছাপানো হত। শীঘ্রই আমি বেথেলের অভ্যর্থনা ডেস্কে কাজ শুরু করে দিই আর অবশ্য, আমি বেথেল পরিবারে ক্ষৌরকার হিসাবেও সেবা করি।
১৯৩৯ সালে সেপ্টেম্বর মাসে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় এবং নাৎসী আক্রমণের আতঙ্ক ইউরোপের সমস্ত স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। যুদ্ধরত জাতিগুলির মধ্যে সুইজারল্যান্ড ছিল নিরপেক্ষ দেশ। প্রথমদিকে, আমরা আমাদের খ্রীষ্টীয় কার্যাবলী নির্বিঘ্নে চালিয়ে গিয়েছিলাম। তারপর ৫ই জুলাই ১৯৪০ সালে, বিকাল দুটোর সময় যখন আমি বৈঠকখানায় আমার ডেস্কে ছিলাম, উঁচু করা বেওনিট সহ একটি রাইফেল বহনকারী সৈন্যের সাথে একজন বেসামরিক ব্যক্তি উপস্থিত হয়।
“সুর্কার কোথায়?” বেসামরিক ব্যক্তিটি গর্জন করে ওঠে। ফ্রাঞ্জ সুর্কার সেই সময় সুইজারল্যান্ডে আমাদের প্রচার কাজের শাখা অধ্যক্ষ ছিলেন।
“কে ডেকেছেন আমি কি তাকে বলতে পারি?” আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তৎক্ষণাৎ তারা আমাকে জাপটে ধরে এবং তাদেরকে সুর্কারের অফিসে নিয়ে যাওয়ার দাবি করে আমাকে উপরের তলায় হেঁচড়ে নিয়ে যায়।
সমস্ত বেথেল পরিবারে—আমরা তখন প্রায় ৪০ জন ছিলাম—সকলকে খাবার কক্ষে একত্রিত হওয়ার জন্য বলা হয়। কোন ব্যক্তির পালানোর চেষ্টাকে ব্যর্থ করার জন্য চারটি মেশিন গান ভবনটির বাইরে স্থাপন করা হয়েছিল। ভবনের ভিতরে, প্রায় ৫০ জন সৈন্য তল্লাস করা শুরু করেছিল। প্রত্যাশার বিপরীতে, কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে যিহোবার সাক্ষীরা সেনাবাহিনীর কাজের বিরোধী কোন কিছুর সাথে জড়িত আছে। তবুও, বহু সংখ্যক সাহিত্যাদি বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং তা পাঁচটি সেনা ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয়।
যখন আমরা সরকারি আধিকারিক কর্তৃক প্রহরীদুর্গ এর উপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করতে বাধার সৃষ্টি করি, তখন সুইজারল্যান্ডে এটির প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এটির অর্থ হল যে বেথেলে কাজের জন্য অল্প কয়েকজন ব্যক্তির প্রয়োজন ছিল এবং পরিবারের যুবক সদস্যদের বেথেল ছেড়ে দিতে ও অগ্রগামী হতে উৎসাহিত করা হয়েছিল, যেমন যিহোবার সাক্ষী হিসাবে যারা পূর্ণ-সময়ের প্রচার কাজে জড়িত ছিল তাদের বলা হত।
যুদ্ধ চলার সময়ে অগ্রগামীর কাজ করা
১৯৪০ সালের জুলাই মাসে, বেথেলে আসার আগে আমি যেখানে থাকতাম, সেই লুগানোর কাছে সুইজারল্যান্ডের ইতালী-ভাষী এলাকায় ফিরে গিয়েছিলাম। এই গোঁড়া ক্যাথলিক এলাকা, যেটি সেইসময় ফ্যাসিবাদের প্রবল প্রভাবের অধীনে ছিল, তা আমার অগ্রগামীর কার্যভার হয়।
প্রায় প্রতিদিনই আমি পুলিশের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হই যারা বলত আমি যেন আমার প্রচার কাজ ছেড়ে দিই। একদিন আমি যখন একজন মহিলার সাথে বাগানের ফটকের কাছে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম, বেসরকারি পোশাকে একজন ব্যক্তি আমাকে পিছন থেকে আঁকড়ে ধরে একটি ধাবমান গাড়িতে উঠিয়ে লুগানোতে নিয়ে যায়। সেখানে সে আমাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। যখন আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল, আমি ব্যাখ্যা করেছিলাম যে যিহোবা ঈশ্বর আমাদের প্রচার করার জন্য আজ্ঞা দিয়েছেন।
“এই পৃথিবীতে, আমরাই একমাত্র আজ্ঞা দিচ্ছি,” কর্মকর্তাটি অহঙ্কারের সাথে উত্তর দেন। “ঈশ্বর হয়ত স্বর্গে আজ্ঞা দেন!”
যুদ্ধের সময়, এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে “সর্পের ন্যায় সতর্ক ও কপোতের ন্যায় অমায়িক” হতে আমরা যীশুর পরামর্শের প্রতি মনোযোগ দিই। (মথি ১০:১৬) তাই, আমি বেশির ভাগ সাহিত্য আমার ভিতরে শার্টের পকেটে লুকাই। আর আমি নিকার্ পরেছিলাম যা হাঁটুর তলায় আঁটসাট করে বাঁধা ছিল, এটি নিশ্চিত হয়ে যে আমি কিছুই হারাব না।
কিছুদিন পর, আমি ইনগাডীন উপত্যকায় যাওয়ার জন্য নির্দেশ পাই, যেখানে অনবরত পুলিশের সাথে আমার লুকোচুরি খেলা হত। এটি পূর্বাঞ্চলে সুইস আলপ্সের একটি সুন্দর উপত্যকা, যেটি শীতকালে ঘন বরফের তলায় চাপা পড়ে, সুতরাং এই এলাকায় সর্বত্র যাওয়ার জন্য সাহায্য করতে আমার কাছে একটি স্কীগুলি পাঠান হয়েছিল।
শীতকালে যখন স্কীগুলিতে করে ভ্রমণ করতে হয় তখন উষ্ণ গ্লাভ্সগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সবসময় ব্যবহারের কারণে, ঐগুলি শীঘ্রই ছিঁড়ে যাচ্ছিল। একদিন ডাকযোগে, হাতে বোনা গরম কাপড় এবং গ্লাভ্স ভর্তি একটি অপ্রত্যাশিত মোড়ক পেয়ে আমি কতই না কৃতজ্ঞ হয়েছিলাম! বার্ণে আমার প্রাক্তন মণ্ডলীর একজন খ্রীষ্টীয় বোন এগুলি আমার জন্য তৈরি করেছিল। এমনকি এখন পর্যন্ত এই সম্বন্ধে আমি যখন চিন্তা করি, আমি কৃতজ্ঞতায় অভিভূত হই।
বহু আনন্দদায়ক সুযোগ
১৯৪৩ সালে, সুইজারল্যান্ডে পরিস্থিতি সুস্থির হতে শুরু করে এবং আমাকে আবার বেথেলে সেবা করার জন্য ডাকা হয়। লসানিতে ফ্রেঞ্চ-ভাষী মণ্ডলীতে বিশেষ কিছু সমস্যার কারণে, প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে, ঈশ্বরের সংগঠন সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেতে প্রকাশকদের সাহায্য করার জন্য নিয়মিত সেই শহরে যাওয়ার জন্য আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
পরবর্তীকালে আমি কিছু সময়ের জন্য সুইজারল্যান্ডে সমস্ত ফরাসী মণ্ডলীগুলির সীমা অধ্যক্ষ হিসাবে কাজ করি। সপ্তাহের প্রথমে, আমি বেথেলে কাজ করি কিন্তু প্রত্যেক সপ্তাহে আধ্যাত্মিক সহযোগিতার এক প্রচেষ্টায় আমি শুক্রবার, শনিবার এবং রবিবার বিভিন্ন মণ্ডলীতে সাক্ষাৎ করি। উপরন্তু, ১৯৬০ সালে বার্ণে যখন ফরাসী-ভাষী মণ্ডলী স্থাপিত হয়, আমি এর পরিচালক অধ্যক্ষ হই। যখন বেথেল, বার্ণ থেকে এটির বর্তমান মনোরম স্থান তান শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়, আমি তখন এই পদমর্যাদায় ১৯৭০ সাল পর্যন্ত কাজ করি।
তানে ইতালী-ভাষী সাক্ষীদের একটি ছোট দল পেয়ে আমি আনন্দিত হয়েছিলাম এবং আমি তাদের সাথে কাজ শুরু করে দিয়েছিলাম। অল্পদিনের মধ্যে একটি মণ্ডলী স্থাপিত হয় এবং আমি এটির পরিচালক অধ্যক্ষ হিসাবে বহু বৎসর ধরে সেবা করি যতক্ষণ পর্যন্ত না ছোট ভাইয়েরা সেই দায়িত্ব গ্রহণ করতে যোগ্য হয়।
আমি যে বিশেষ আনন্দদায়ক সুযোগকে গুরুত্ব দিয়েছিলাম তা হল যিহোবার লোকেদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদান করা। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৫০ সালে নিউ ইয়র্ক, ইয়াংকি স্টেডিয়ামে স্মরণীয় ঈশতন্ত্রের বৃদ্ধি অধিবেশন হয়েছিল। নিউ ইয়র্ক, ব্রুকলিনে যিহোবার সাক্ষীদের বিশ্বপ্রধান কার্যালয় পরিদর্শন, আমার উপর একটি স্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল। তার পরের বছর ইংল্যান্ডের, লন্ডনে শুদ্ধ উপাসনা অধিবেশনে ভাই মিলটন জি. হেনশেলের বক্তৃতা আমি কখনও ভুলব না, যা যীশুর এই বাক্যগুলি তুলে ধরেছিল, “আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, ইহারা যদি চুপ করিয়া থাকে, প্রস্তর সকল চেঁচাইয়া উঠিবে।” (লূক ১৯:৪০) ভাই হেনশেল জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “আপনি কি মনে করেন যে পাথরগুলিকে চেঁচাতে হবে?” আমি এখনও আমার কানে সেই আর্ত চিৎকার শুনতে পাই, “না!” যা হাজার হাজার কণ্ঠ থেকে এসেছিল।
যখন আমি ১৯৩৭ সালে বেথেলে ফিরে যাই, আমার বাবা, যিনি জেনেছিলেন যে আমরা কেবলমাত্র ক্ষুদ্র ভাতা পাই, তাই উদ্বিগ্নভাবে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “বৎস, কিভাবে তুমি বৃদ্ধ বয়সে বাঁচবে?” আমি গীতরচক দায়ূদের বাক্য থেকে উদ্ধৃতি করে উত্তর দিয়েছিলাম: “আমি . . . ধার্ম্মিককে পরিত্যক্ত দেখি নাই, তাহার বংশকে খাদ্য ভিক্ষা করিতে দেখি নাই।” (গীতসংহিতা ৩৭:২৫) এই পদগুলি নিশ্চিতভাবে আমার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ হয়েছে।
আমি কতই না খুশি হয়েছিলাম যে ৮০ বছর পূর্বে, বার্টা ভিবেল বাবাকে বিবাহ করেছিল আর তাই তার উদাহরণ ও পরিচালনার মাধ্যমে আমি যিহোবা এবং তার গুণাবলি জানতে পেরেছিলাম! যদিও পরিবারের অন্যান্য সদস্যেরা তাকে উপহাস করত, তবুও তিনি ১৯৮৩ সালে তার মৃত্যু পর্যন্ত যিহোবাকে বিশ্বস্তভাবে সেবা করে গেছেন। তিনি তার ঈশ্বর, যিহোবাকে সেবা করায় কখনও অনুশোচনা প্রকাশ করেননি; আমিও কখনও একা থেকে কিংবা যিহোবার সেবায় আমার জীবনকে সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করে অনুশোচনা প্রকাশ করিনি।
[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
বেথেলে কার্যরত