বিবেক—একটি বোঝা অথবা এক সম্পদ?
‘আমার বিবেক আমাকে দংশন করছে!’ সময়ে সময়ে আমরা প্রায় সকলেই বিবেকের যন্ত্রণা ভোগ করি। এইধরনের অনুভূতির পরিধি হয়ত সাধারণ অস্বস্তি থেকে আরম্ভ করে নিদারুণ যন্ত্রণায় প্রসারিত হতে পারে। এক অশান্ত বিবেক এমনকি হতাশার অথবা ব্যর্থতার এক চরম অনুভূতির সূত্রপাত করতে পারে।
অতএব, এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে, বিবেক কি একটি বোঝাস্বরূপ নয়? কেউ কেউ হয়ত মনে করতে পারে যে এটি তাই। চিন্তাবিদ্দের বিগত বংশগুলি প্রায়ই বিবেককে এক সহজাত, জন্মগত ক্ষমতা হিসাবে গণ্য করতেন। অনেকে মনে করতেন যে এটি ছিল একটি নৈতিক নির্দেশ যা সরাসরি স্বয়ং ঈশ্বরের দ্বারা প্রদত্ত। তাই বিবেককে বলা হয়েছে “মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের উপস্থিতি,” “আমাদের প্রকৃত স্বভাব” এবং এমনকি “ঈশ্বরের রব।”
যাইহোক, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এটি প্রমাণ করা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে বিবেক হল এক অর্জিত ক্ষমতা—পিতামাতা এবং সামাজিক প্রভাবের একটি ফল। উদাহরণস্বরূপ, এটি বিশ্বাস করে যে আমরা যেটিকে বিবেক বলি তা সাধারণত আমাদের পিতামাতার ব্যক্তিগত মূল্যবোধ এবং বিশ্বাসের আত্মভূতকরণ, কিছু মনস্তত্ত্ববিদ যুক্তি দেখান, একটি শিশু অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে শেখে প্রধানত শাস্তির ভয়ে। অন্যান্যেরা, মূল্যবোধ এবং মানদণ্ডগুলি প্রেরণের ক্ষেত্রে সাধারণভাবে সমাজ যে ভূমিকা পালন করে তা নির্দেশ করে। কেউ কেউ বিবেকের যন্ত্রণাকে, আমরা যা করতে পছন্দ করি এবং একটি পীড়নকর সমাজ আমাদের যা করাতে দাবি করে তার মধ্যে কেবলমাত্র এক নিছক সংঘর্ষ ছাড়া আর কিছুই নয় বলে মনে করে থাকে!
তত্ত্ব অতিক্রম করে, লোকেরা বারংবার পিতামাতা, পরিবার এবং সম্পূর্ণ সমাজের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে কারণ তাদের বিবেক তাদেরকে তা করতে বলেছিল! অনেকে বিবেকের কারণে এমনকি তাদের জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করতে ইচ্ছুক থেকেছে! আর জগতের সংস্কৃতির মধ্যে গভীর পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও, এইধরনের কার্যকলাপ যেমন হত্যা, চৌর্যবৃত্তি, পারদারিকতা, মিথ্যা বলা এবং অজাচারকে প্রায়ই সর্বজনীনভাবে অন্যায় হিসাবে গণ্য করা হয়। এটি কি এই যুক্তি দেখায় না যে বিবেক হল সহজাত, জন্মগত?
বিবেক—বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি
এই বিষয়ের প্রকৃত কর্তৃপক্ষ হলেন যিহোবা ঈশ্বর। কারণ, “তিনিই [ঈশ্বর] আমাদিগকে নির্ম্মাণ করিয়াছেন, আমরা তাঁহারই।” (গীতসংহিতা ১০০:৩) তিনি আমাদের গঠন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানেন। ঈশ্বরের বাক্য, বাইবেল ব্যাখ্যা করে যে মানুষ ঈশ্বরের “প্রতিমূর্ত্তিতে” নির্মিত হয়েছিল। (আদিপুস্তক ১:২৬) কোন্টি সঠিক এবং কোন্টি ভুল সেই অনুভূতি নিয়ে মানুষ সৃষ্ট হয়েছিল; শুরু থেকেই, বিবেক মানুষের প্রকৃতির এক সহজাত অংশ ছিল।—আদিপুস্তক ২:১৬, ১৭ পদের সাথে তুলনা করুন।
প্রেরিত পৌল রোমীয়দের প্রতি তার পত্রে এই বিষয়টি নিশ্চিত করে লিখেছিলেন: “যে পরজাতিরা কোন ব্যবস্থা পায় নাই, তাহারা যখন স্বভাবতঃ ব্যবস্থানুযায়ী আচরণ করে, তখন কোন ব্যবস্থা না পাইলেও আপনাদের ব্যবস্থা আপনারাই হয়; যেহেতুক তাহারা ব্যবস্থার কার্য্য আপন আপন হৃদয়ে লিখিত বলিয়া দেখায়, তাহাদের সংবেদও [“বিবেক,” NW] সঙ্গে সঙ্গে সাক্ষ্য দেয়, এবং তাহাদের নানা বিতর্ক পরস্পর হয় তাহাদিগকে দোষী করে।” (রোমীয় ২:১৪, ১৫) লক্ষ্য করুন যে অনেকে যারা যিহূদীদের কাছে প্রদত্ত ঐশিক ব্যবস্থার অধীনে প্রতিপালিত হয়নি, তবুও তারা ঈশ্বরের ব্যবস্থার কিছু নীতি মেনে চলত, সামাজিক চাপের কারণে নয় বরঞ্চ “স্বভাবতঃ . . . আচরণ” অনুসারে!
সুতরাং, একটি বোঝা হওয়ার চেয়ে বরঞ্চ বিবেক হল একটি ঐশিক দান, এক সম্পদ। এটি সত্য যে, তা আমাদের ব্যথিত করতে পারে। কিন্তু যখন যথার্থভাবে মনোযোগ দেওয়া হয়, এটি গভীর পরিতৃপ্তি এবং অন্তঃস্থ শান্তির অনুভূতি দ্বারা আমাদের পুরস্কৃতও করতে পারে। এটি আমাদের পরিচালিত, সুরক্ষা এবং প্রণোদিত করতে পারে। দি ইন্টারপ্রিটারস্ বাইবেল মন্তব্য করে: “মানসিক এবং আবেগগত স্বাস্থ্য কেবলমাত্র তখনই সংরক্ষণ করা যেতে পারে যখন এক ব্যক্তি, সে কী করে এবং সে যা মনে করে যে তার করা উচিত এর মধ্যে দুরতিক্রম্য ব্যবধানকে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করে।” কিভাবে একজন সেই ব্যবধানকে সরাতে পারে? আমাদের বিবেককে গঠন এবং প্রশিক্ষিত করা কি সম্ভব? পরবর্তী প্রবন্ধে এই প্রশ্নগুলি বিবেচনা করা হবে।