উপহাসকারীদের থেকে সাবধান!
আজকে ভাববাণী উপচে পড়ছে আর ভবিষ্যৎ কথন ব্যবসা সমৃদ্ধশালী হচ্ছে। “২০০০ সাল যতই সমীপবর্তী হচ্ছে,” লন্ডনের দ্যা ডেইলি টেলিগ্রাফ মন্তব্য করে, “অসাধারণ তথাপি সম্পূর্ণরূপে অপ্রত্যাশিত নয় এমন কিছু ঘটনা ঘটে চলেছে। বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার ব্যক্তি অদ্ভুত ও প্রায়ই ভয়ঙ্কর কাল্পনিক দর্শনগুলি অভিজ্ঞতা করছেন।” অনেক পর্যবেক্ষকের কাছে ভবিষ্যতের প্রতি এই তীব্র কৌতূহল, কেবল পূর্বের আকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনগুলির পুনরাবৃত্তি, যেগুলি বাস্তবায়িত হয়নি।
উনবিংশ শতাব্দীতে ঘোড়া চালিত যানবাহন যখন বৃদ্ধি পেয়েছিল, একজন ব্যক্তি ভাববাণী করেছিলেন যে ফলস্বরূপ ইউরোপীয় শহরগুলি ঘোড়ার সারে ডুবে যাবে। অবশ্যই তার ভাববাণী মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছিল। ভাববাণীগুলি যেভাবে বারবার নিষ্ফল হয় তার প্রতি জোর দিয়ে লন্ডনের দ্যা টাইমস উল্লেখ করেছিল: “ভবিষ্যৎ কেবল একবোঝা ঘোড়ার সার ছাড়া আর কিছুই নয়।”
অন্যান্যেরা তাদের উপহাস করেন, যারা সম্মুখে বিপদ দেখতে পান। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিষয়ক অধ্যাপক, পরিবেশসংক্রান্ত অবনতি সম্বন্ধে যারা সতর্ক করেন তাদের এই বলে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আহ্বান করেন যে পরিবেশ অধিকতর মন্দ হবে কি না, সেই বিষয়ে তারা বাজি ধরুক। নিউ সায়েনটিস্ট পত্রিকায় যেমন বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল, তিনি দাবি করেন যে “আমাদের জীবনের গুণগত মানের উন্নতি হচ্ছে আর প্রতিনিয়ত এমনভাবেই চলতে থাকবে।”
বিভিন্ন দাবি ও পালটা দাবির বিভ্রান্তির মধ্যে দিয়ে অনেকে মনে করেন যে সবকিছুই মূলত অপরিবর্তনীয় থাকবে। মানুষের বিষয়গুলিতে ঐশিক হস্তক্ষেপের যে কোন চিন্তাধারাকে উপহাস করার দ্বারা তারা সা.কা. প্রথম শতাব্দীর উপহাসকারীদের মত মনোভাব দেখান।
সমস্ত কিছু কি এখনও একইরকম আছে?
সাধারণ কালের ৬৪ সালে লিখিত, খ্রীষ্টান প্রেরিত পিতরের দ্বিতীয় অনুপ্রাণিত পত্র সতর্ক করেছিল: “শেষকালে উপহাসের সহিত উপহাসকেরা উপস্থিত হইবে; তাহারা আপন আপন অভিলাষ অনুসারে চলিবে।”—২ পিতর ৩:৩.
উপহাসকারীরা তাদের উপহাসের লক্ষ্যবস্তুকে হাস্যস্পদ করে তুলতে চেষ্টা করেন। যে ব্যক্তি উপহাসের শিকার হন তিনি হয়ত একটি স্বার্থপর ফাঁদে পড়ে যাচ্ছেন কারণ উপহাসকারী প্রায়ই চান যে যারা তার কথা শুনছেন তারা যেন তার দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেন। সম্ভবত পিতর যে উপহাসকারীদের সম্বন্ধে সতর্ক করেছিলেন তারা এইরকমই ছিলেন অর্থাৎ, “আপন আপন অভিলাষ অনুসারে” চলেছিলেন। তার পাঠকদের সতর্ক করতে প্রেরিত এক জোরালো প্রকৃতির অভিব্যক্তি ব্যবহার করেছিলেন। তিনি ‘উপহাসের সহিত উপহাসকদের’ আগমন সম্বন্ধে সতর্ক করেছিলেন। (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।)
প্রথম শতাব্দীর উপহাসকেরা খ্রীষ্টের “আগমনের [“উপস্থিতির,” “NW”] প্রতিজ্ঞা”-র বাস্তবতার প্রতি এই বলে সন্দেহ পোষণ করেছিলেন: “তাঁহার উপস্থিতির প্রতিজ্ঞা কোথায়? কেননা যে অবধি পিতৃলোকেরা নিদ্রাগত হইয়াছেন, সেই অবধি সমস্তই সৃষ্টির আরম্ভ অবধি যেমন, তেমনই রহিয়াছে।” (২ পিতর ৩:৪) তাদের কাছে বিষয়টি এইরকমই মনে হয়েছিল। কিন্তু, সা.কা. ৩৩ সালে যীশু যিরূশালেম নগরের বিপর্যয়ের বিষয়ে ভাববাণী করেছিলেন। “তোমার উপরে এমন সময় উপস্থিত হইবে,” তিনি ঘোষণা করেছিলেন, “যে সময়ে তোমার শত্রুগণ তোমার চারিদিকে জাঙ্গাল বাঁধিবে, তোমাকে বেষ্টন করিবে, তোমাকে সর্ব্বদিকে অবরোধ করিবে, এবং তোমাকে ও তোমার মধ্যবর্ত্তী তোমার বৎসগণকে ভূমিসাৎ করিবে, তোমার মধ্যে প্রস্তরের উপরে প্রস্তর থাকিতে দিবে না।” যারা সেই সতর্কবাণীর প্রতি উপহাস করেন, তারা কতই না ভুল করেছিলেন! সা.কা. ৭০ সালে রোমীয় সৈন্যরা যিরূশালেমকে অবরোধ করেছিল এবং নগরটিকে ধ্বংস করেছিল, ফলে প্রচুর সংখ্যক অধিবাসীকে জীবন হারাতে হয়েছিল। ওই শহরের অধিকাংশ অধিবাসী এই বিপর্যয়ের জন্য কেন প্রস্তুত ছিলেন না? কারণ তারা উপলব্ধি করতে পারেননি যে ঈশ্বর, তাঁর পুত্র যীশুর মাধ্যমে তাদের তত্ত্বাবধান করেছিলেন।—লূক ১৯:৪৩, ৪৪.
প্রেরিত পিতর সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ভবিষ্যৎ হস্তক্ষেপের বিষয়টি উল্লেখ করেন। “প্রভুর [“যিহোবার,” “NW”] দিন চোরের ন্যায় আসিবে,” পিতর সতর্ক করেন। (২ পিতর ৩:১০) তখন ঈশ্বর সমগ্র পৃথিবী থেকে ভক্তিহীনদের দূর করবেন এবং যারা ধার্মিক হিসাবে গণ্য হবেন তাদের রক্ষা করবেন। এই পত্রিকা যেমন বারংবার ব্যাখ্যা করেছে, খ্রীষ্ট যীশুর “উপস্থিতি” ১৯১৪ সালে শুরু হয়েছিল। কিন্তু, দুষ্টতা দূর করার জন্য ঈশ্বরের নিযুক্ত ঘাতক হিসাবে তাঁর পদক্ষেপ গ্রহণ এখনও ভবিষ্যতের বিষয়। ফলে, উপহাসকারীদের থেকে সাবধান হওয়ার বিষয়ে প্রেরিতের সতর্কবাণীটি এখন আরও অধিক তৎপরতার সঙ্গে প্রযোজ্য।
মানুষের বিষয়গুলিতে ঐশিক হস্তক্ষেপের জন্য আপনি হয়ত ইতিমধ্যেই দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করে আছেন। উপহাসকারীদের শিকার না হয়ে ক্রমাগত ধৈর্যপূর্বক অপেক্ষা করতে কী আপনাকে সাহায্য করবে? দয়া করে পড়ুন।
[৪ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
“তোমার উপরে এমন সময় উপস্থিত হইবে, যে সময়ে তোমার শত্রুগণ . . . তোমাকে বেষ্টন করিবে, তোমাকে সর্ব্বদিকে অবরোধ করিবে, . . . তোমার মধ্যে প্রস্তরের উপরে প্রস্তর থাকিতে দিবে না।” সেটি উপহাস করার মত কোন সতর্কবাণী ছিল না। রোমীয় সৈন্যরা প্রচুর সংখ্যক জীবন হত্যা করে যিরূশালেমকে ধ্বংস করেছিল।