“সেই সত্য তোমাদিগকে স্বাধীন করিবে”
“তোমরা সেই সত্য জানিবে, এবং সেই সত্য তোমাদিগকে স্বাধীন করিবে।” এই কথাটি যিরূশালেম মন্দিরে সমবেত বিশাল জনতাকে শিক্ষা দেওয়ার সময় যীশু ঘোষণা করেছিলেন। (যোহন ৮:৩২) যীশুর প্রেরিতেরা নির্দ্বিধায় যীশুর শিক্ষাকে সত্য হিসাবে চিনতে পেরেছিলেন। তাদের গুরু যে ঐশিক উৎস থেকে ছিলেন, তার প্রচুর প্রমাণ তারা দেখেছিলেন।
কিন্তু আজকে কেউ কেউ, যীশু যে সত্য সম্বন্ধে বলেছিলেন সেটিকে চেনা কঠিন বলে মনে করতে পারেন। ভাববাদী যিশাইয়ের দিনের মত আজকেও এমন ব্যক্তিরা আছেন “যাহারা মন্দকে ভাল, আর ভালকে মন্দ বলে, আলোকে আঁধার, ও আঁধারকে আলো বলিয়া ধরে, মিষ্টকে তিক্ত, আর তিক্তকে মিষ্ট মনে করে।” (যিশাইয় ৫:২০) আজকের দিনে অসংখ্য মতামত, দর্শনবিদ্যা এবং জীবনযাত্রা প্রণালীর উদ্ভব হওয়ায় অনেকে মনে করেন যে সমস্তকিছুই আপেক্ষিক এবং সত্য বলে কোন কিছুই নেই।
যীশু যখন তাঁর শ্রোতাদের উদ্দেশে বলেছিলেন যে সেই সত্য তাদের স্বাধীন করবে, তখন তারা এই কথা বলে সাড়া দিয়েছিলেন: “আমরা অব্রাহামের বংশ, কখনও কাহারও দাস হই নাই; আপনি কেমন করিয়া বলিতেছেন যে, তোমাদিগকে স্বাধীন করা যাইবে?” (যোহন ৮:৩৩) স্বাধীন করার জন্য যে তাদের কারও সাহায্য অথবা কোন কিছুর প্রয়োজন ছিল সেই বিষয়টি তারা অনুভব করেননি। কিন্তু তারপর যীশু ব্যাখ্যা করেছিলেন: “সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যে কেহ পাপাচরণ করে, সে পাপের দাস।” (যোহন ৮:৩৪) যীশু যে সত্যের কথা বলছিলেন তা পাপ থেকে স্বাধীন হওয়ার পথ খুলে দিতে পারে। যীশু বলেছিলেন: “পুত্ত্র যদি তোমাদিগকে স্বাধীন করেন, তবে তোমরা প্রকৃতরূপে স্বাধীন হইবে।” (যোহন ৮:৩৬) সুতরাং যে সত্য লোকেদের স্বাধীন করে তা হল ঈশ্বরের পুত্র, যীশু খ্রীষ্ট বিষয়ক সত্য। একমাত্র যীশুর সিদ্ধ মানব জীবনের বলিদানে বিশ্বাস করার মাধ্যমেই একজন পাপ ও মৃত্যু থেকে মুক্ত হতে পারেন।
আরেকবার যীশু বলেছিলেন: “তাহাদিগকে সত্যে পবিত্র কর; তোমার বাক্যই সত্যস্বরূপ।” (যোহন ১৭:১৭) বাইবেলে বর্ণিত ঈশ্বরের বাক্য হল সেই সত্য যা কুসংস্কার এবং মিথ্যা উপাসনা থেকে স্বাধীন করতে পারে। বাইবেলে যীশু খ্রীষ্ট বিষয়ক সত্য রয়েছে, যা লোকেদের তাঁর উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে সাহায্য করে এবং ভবিষ্যতে উজ্জ্বল আশার পথকে খুলে দেয়। ঈশ্বরের বাক্যের সত্য জানাতে পারা সত্যিই এক চমৎকার বিষয়!
সত্য জানা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? আজকে অনেক ধর্ম বাইবেলকে অনুসরণ করে বলে দাবি করলেও, ব্যাপকভাবে মানব দর্শন এবং পরম্পরাগত প্রথার দ্বারা জর্জরিত। প্রায়ই, ধর্মীয় নেতারা তাদের বার্তার যথার্থতা সম্বন্ধে ততটা উদ্বিগ্ন হন না, যতটা তারা লোকেদের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার বিষয়ে হয়ে থাকেন। কিছু ব্যক্তি মনে করেন যে ঈশ্বর যে কোন ধরনের উপাসনাতেই সন্তুষ্ট যতক্ষণ পর্যন্ত তা আন্তরিকতার সঙ্গে করা হয়। কিন্তু যীশু খ্রীষ্ট ব্যাখ্যা করেছিলেন: “এমন সময় আসিতেছে, বরং এখনই উপস্থিত, যখন প্রকৃত ভজনাকারীরা আত্মায় ও সত্যে পিতার ভজনা করিবে; কারণ বাস্তবিক পিতা এইরূপ ভজনাকারীদেরই অন্বেষণ করেন।”—যোহন ৪:২৩.
আমরা যদি গ্রহণযোগ্য উপায়ে ঈশ্বরের উপাসনা করতে চাই, তাহলে আমাদের সেই সত্যটি জানতে হবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের অনন্ত সুখ এটির উপরই নির্ভর করে। তাই প্রত্যেকের নিজেকে জিজ্ঞাসা করা উচিত: ‘আমার উপাসনার পদ্ধতিটি কি ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য? ঈশ্বরের বাক্যের সত্য শিখতে আমি কি প্রকৃতই আগ্রহী? অথবা নিখুঁত পরীক্ষা যা প্রকাশ করতে পারে সেই সম্বন্ধে আমি কি ভীত?’