ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w০১ ১/১ পৃষ্ঠা ২৩-২৭
  • শত পরীক্ষার মধ্যেও মনপ্রাণ দিয়ে সেবা করা

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • শত পরীক্ষার মধ্যেও মনপ্রাণ দিয়ে সেবা করা
  • ২০০১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • বাইবেলের সত্য জানা
  • বিশ্বস্ততার পরীক্ষা
  • কাজ বেড়ে যায়
  • মেক্সিকোতে কাজ করা
  • মিশনারি জীবনসাথির সঙ্গে সেবা করা
  • এই কাজে যিহোবা আশীর্বাদ করেছেন
  • এক বড় বাধা
  • আপনি কি যেখানে রাজ্য প্রকাশকদের বেশি প্রয়োজন সেখানে সেবা করতে পারেন?
    ২০০৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • মেক্সিকোতে কি ধর্মীয় বিশ্বাস ও বিবেক অনুযায়ী কাজ করার জন্য আরও স্বাধীনতা দেওয়া হবে?
    ২০০০ সচেতন থাক!
  • তারা এক আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্রিস্টীয় ভ্রাতৃসমাজের সেবা করে
    ২০০৩ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • ঈশ্বর যে বৃদ্ধি দান করেন তাতে আনন্দ করা
    ১৯৯৬ আমাদের রাজ্যের পরিচর্যা
২০০১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w০১ ১/১ পৃষ্ঠা ২৩-২৭

জীবন কাহিনী

শত পরীক্ষার মধ্যেও মনপ্রাণ দিয়ে সেবা করা

বলেছেন রোডোল্ফো লোজানো

মেক্সিকোর ডুরেঙ্গো রাজ্যের গোমেজ প্যালাসিও শহরে, ১৯১৭ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর আমার জন্ম। মেক্সিকোতে তখন তুমুল বিপ্লব চলছিল। ১৯২০ সালে বিপ্লব শেষ হয়ে গেলেও বেশ কয়েক বছর ধরে সেখানে বিক্ষোভ, অশান্তি লেগেই ছিল আর তাই সেখানে থাকা বেশ কষ্টকর ছিল।

বিদ্রোহী দল ও সেনাবাহিনীর মধ্যে শীঘ্রিই এক সংঘর্ষ হতে চলেছে খবরটা যখন মার কানে যায়, সে আমাকে ও আমার তিন দাদা, এক দিদি ও বোনকে কয়েকদিন ঘরে আটকে রেখেছিল, কোথাও যেতে দেয়নি। সেই সময় আমাদের ঘরে খুব সামান্য খাবার ছিল আর আমার এখনও মনে আছে, আমি ও আমার বোন খাটের নিচে লুকিয়ে ছিলাম। মা আমাদেরকে নিয়ে আমেরিকায় চলে যাবে বলে ঠিক করে। পরে বাবারও আমাদের কাছে চলে আসার কথা ছিল।

আমরা ১৯২৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়াতে আসার অল্প কিছুদিন পরেই আমেরিকাতে চরম অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়। তাই আমরা যেখানে কাজ পেতাম সেখানেই থাকতাম। এর মধ্যে ছিল সান জোয়াকিন, স্যানটা ক্লারা, স্যালিনাস ও কিং সিটি। আমরা কৃষিকাজ এবং সব ধরনের ফল ও শাকসবজি চাষ করতে শিখেছিলাম। যদিও ছেলেবেলায় আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে কিন্তু তারপরও ওই সময়টাই ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের সময়।

বাইবেলের সত্য জানা

১৯২৮ সালের মার্চ মাসে একজন বাইবেল ছাত্র আমাদের বাড়িতে আসেন। যিহোবার সাক্ষিদের তখন বাইবেল ছাত্র বলা হতো। তিনি ছিলেন একজন বয়স্ক স্প্যানিশ ভদ্রলোক আর তার নাম ছিল ইসতেবান রিভেরা। তিনি আমাদেরকে যে পুস্তিকাটা দিয়ে গিয়েছিলেন, সেটার নাম ছিল “মৃতেরা কোথায়?” (ইংরেজি) আর এর শিরোনাম ও বিষয়বস্তু দুটোই আমার খুবই ভাল লেগেছিল। ছোট হলেও, বাইবেল ছাত্রদের সঙ্গে আমি বাইবেল অধ্যয়ন করি এবং তাদের সঙ্গে মেলামেশা করতে শুরু করি। এর মধ্যে আমার মা ও ছোট বোন আরোরা জোরকদমে যিহোবার কথা প্রচার করতে শুরু করে দেয়।

১৯৩০ সালের মাঝামাঝি সময়ে সান জোসেতে ইংরেজি মণ্ডলীর জন্য একটা কিংডম হল নির্মাণ করা হয়। সেখানকার খামারগুলোতে স্প্যানিস ভাষায় কথা বলে এমন অনেকে কাজ করত, তাই আমরা তাদের কাছে প্রচার করি ও প্রহরীদুর্গ অধ্যয়নও শুরু করি। সান জোসে থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে সান ফ্রান্সিসকোর স্প্যানিস ভাষী ভাইবোনদের সাহায্যেই আমরা তাদের কাছে প্রচার করতে পেরেছিলাম। কিছুদিনের মধ্যে সান জোসের কিংডম হলে স্প্যানিশ ভাষার সভাগুলোতে প্রায় ৬০ জন উপস্থিত হতো।

শেষে ১৯৪০ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি যিহোবার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করার চিহ্ন হিসেবে আমি সান জোসেতে এক অধিবেশনে জলে বাপ্তিস্ম নিই। পরের বছর আমি একজন অগ্রগামী অর্থাৎ যিহোবার সাক্ষিদের একজন পূর্ণ-সময়ের প্রচারক হই। তারপর, ১৯৪৩ সালের এপ্রিল মাসে আমাকে সান জোসে থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে স্টকটনে স্প্যানিশ মণ্ডলী গড়ে তোলার জন্য ডাকা হয়। সেই সময় আমি সান জোসের ইংরেজি মণ্ডলীর পরিচালক অধ্যক্ষ ছিলাম ও সেইসঙ্গে স্প্যানিশ ভাষী সাক্ষিদেরও দেখাশোনা করতাম। এই কাজগুলো অন্যদের ওপর দিয়ে আমি পরে স্টকটনে চলে যাই।

বিশ্বস্ততার পরীক্ষা

১৯৪০ সালের প্রথম দিকে বাধ্যতামূলক সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য আমাকে বেশ কয়েকবার ড্রাফট্‌ বোর্ডে হাজির হতে হয় কিন্তু ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে, ১৯৪১ সালের ডিসেম্বর মাসে আমেরিকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার পর পরই ড্রাফট্‌ বোর্ড থেকে চাপ বাড়তে থাকে। ১৯৪৪ সালে আমাকে জেলে ভরা হয়। শাস্তির জন্য অপেক্ষা করার সময় আমাকে অপরাধীদের সঙ্গে মাটির নিচে একটা জেলে রাখা হয়। আমি একজন যিহোবার সাক্ষি জেনে তাদের মধ্যে অনেকে আমাকে জিজ্ঞেস করে যে, তাদের অপরাধের জন্য ঈশ্বরের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের কতটা ক্ষতি হবে।

সান জোসের সাক্ষিরা আমাকে জামিনে মুক্ত করেন, যাতে করে বিচার চলাকালে আমি বাইরে থাকি। লস এঞ্জেলসের একজন উকিল, যিনি নাগরিকদের অধিকার আদায়ের পক্ষে কাজ করতেন তিনি আমার মামলাটা বিনা পয়সায় করে দিতে রাজি হন। বিচারক আমাকে এই শর্তে মুক্তি দিতে রাজি হন যে আমাকে অগ্রগামীর কাজ ছেড়ে দিতে হবে, বাইরে চাকরি করতে হবে এবং প্রতি মাসে একবার করে ফেডারেল কর্তৃপক্ষের কাছে হাজিরা দিতে হবে। আমি ওই রায় মেনে নিইনি, তাই আমার দুবছরের জেল হয় আর আমাকে ওয়াশিংটনের ম্যাকনিল আইল্যান্ড জেলে রাখা হয়। জেলের ওই সময়টুকু আমি খুব মন দিয়ে বাইবেল অধ্যয়ন করি। এছাড়াও, কীভাবে টাইপ করতে হয় তা-ও আমি শিখে ফেলি। আমার ভাল ব্যবহারের জন্য আমাকে দুবছরের আগেই ছেড়ে দেওয়া হয়। জেল থেকে ছাড়া পেয়েই আমি আবার অগ্রগামীর কাজে নাম লেখাই।

কাজ বেড়ে যায়

১৯৪৭ সালের শীতকালে আমাকে টেক্সাসের কলোরাডোতে স্প্যানিশ ভাষী লোকেদের কাছে প্রচার করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেখানে আমার সঙ্গে আরেকজন অগ্রগামী ভাইও কাজ করেন। কিন্তু, ওই শহরে তখন এত ঠাণ্ডা ছিল যে আমরা সান আ্যনটোনিওতে গিয়েছিলাম কারণ ওখানে তখন কিছুটা গরম ছিল। তবে সান আ্যনটোনিওতে আবার এত বৃষ্টি ছিল যে, আমরা প্রচারে বের হতে পারতাম না। আমাদের টাকাপয়সা শীঘ্রিই ফুরিয়ে যায়। কয়েক সপ্তা ধরে আমরা শুধু কাঁচা বাঁধাকপির স্যান্ডউইচ ও আল্‌ফাল্‌ফা চা খেয়েই থাকি। আমার সঙ্গী অগ্রগামী ভাই তার বাড়ি ফিরে যায় কিন্তু আমি সেখানেই থাকি। ইংরেজি মণ্ডলীর ভাইবোনেরা যখন আমার অভাবের কথা শোনেন তখন তারা আমাকে সাহায্য করেন।

বসন্তের সময় আমি আবার আমার আগের জায়গায় কলোরাডোতে ফিরে আসি আর পরে সেখানে একটা ছোট স্প্যানিশ মণ্ডলী গড়ে ওঠে। তারপর, আমি টেক্সাসের সুইটওয়াটারে চলে যাই এবং সেখানে আরেকটা স্প্যানিশ মণ্ডলী গড়ে তুলতে সাহায্য করি। সুইটওয়াটারে কাজ করার সময় মিশনারিদের প্রশিক্ষণের জন্য ওয়াচটাওয়ার বাইবেল স্কুল অফ গিলিয়েডের ১৫তম ক্লাসে যোগ দেওয়ার জন্য আমাকে ডাকা হয়। ১৯৫০ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি ওই ক্লাস শুরু হয়েছিল। ওই বছর গরমের সময় নিউ ইয়র্কের ইয়াংকি স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গ্র্যাজুয়েশনের পর, আরও তিন মাস আমি ব্রুকলিনে যিহোবার সাক্ষিদের প্রধান কার্যালয়ে থাকি। সেখান থেকে আমাকে মেক্সিকো শাখা অফিসে কাজ করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় আর আমাকে ওই কাজের জন্য প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়।

মেক্সিকোতে কাজ করা

১৯৫০ সালের ২০শে অক্টোবর আমি মেক্সিকোতে গিয়ে পৌঁছি। প্রায় দুসপ্তা পর আমাকে শাখা অধ্যক্ষ করা হয় আর প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে আমি ওই কাজ করি। জেলে, গিলিয়েড স্কুলে, ব্রুকলিন বেথেলে এবং অগ্রগামীর কাজ করে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা অনেক কাজে আসে। মেক্সিকোতে এসেই আমি লক্ষ্য করি যে, মেক্সিকোর ভাইবোনদের আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে গেঁথে তোলা দরকার। ঈশ্বরের বাক্যের উচ্চ নৈতিক মানগুলো মেনে চলার জন্য সেখানকার ভাইবোনদের বিশেষ সাহায্যের দরকার ছিল।

মেক্সিকো ও ল্যাটিন-আমেরিকার দেশগুলোতে আইনত বিয়ে না করেই ছেলে মেয়েরা স্বামী-স্ত্রীর মতো থাকত। খ্রীষ্টীয়জগতের ধর্মগুলো বিশেষ করে রোমান ক্যাথলিক গির্জা এই অশাস্ত্রীয় রীতিকে মেনে নিয়েছিল। (ইব্রীয় ১৩:৪) এইরকম কিছু দম্পতি আইনত বিয়ে না করেই যিহোবার সাক্ষিদের মণ্ডলীর সদস্য হয়েছিলেন। তারা যাতে আইনত বিয়ে করতে পারেন তার জন্য তাদেরকে ছয় মাস সময় দেওয়া হয়েছিল। তা না হলে তারা আর যিহোবার সাক্ষি থাকতে পারবেন না।

বেশির ভাগ লোকেদের জন্য সমস্যাটা খুবই সাধারণ ছিল। তাদের সম্পর্ককে শুধু বিয়ে করে বৈধ করার দরকার ছিল। কিন্তু, অন্যদের সমস্যা খুবই জটিল ছিল। যেমন, কেউ কেউ বৈধভাবে বিবাহবিচ্ছেদ না করেই দুই বা তিনটে বিয়ে করেছিলেন। যিহোবার লোকেরা যখন ঈশ্বরের বাক্য বাইবেলের শিক্ষার সঙ্গে মিল রেখে বিয়ে সংক্রান্ত ঝামেলাগুলো মিটিয়ে ফেলেছিল তখন মণ্ডলীগুলোতে অনেক আশীর্বাদ এসেছিল।—১ করিন্থীয় ৬:৯-১১.

ওই সময়ে মেক্সিকোতে শিক্ষার হার খুবই কম ছিল। আমি ১৯৫০ সালে সেখানে পৌঁছানোর আগেই শাখা অফিস, মণ্ডলীগুলোতে লেখাপড়া শেখানোর ক্লাস চালু করেছিল। এই ক্লাসগুলোকে আবারও চালু করা হয় এবং সরকারিভাবে রেজিস্ট্রি করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ১৯৪৬ সাল থেকে ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যার হিসেব রাখা শুরু হয়েছে আর তখন থেকে মেক্সিকোতে প্রায় ১,৪৩,০০০ জন লোক সাক্ষিদের কাছ থেকে পড়ালেখা শিখেছে!

ধর্মের ব্যাপারে মেক্সিকোর আইন খুবই কড়াকড়ি ছিল। কয়েক বছর আগে এই আইনেও বড় পরিবর্তন হয়েছে। ১৯৯২ সালে ধর্মের ওপর এক নতুন আইন পাস হয়েছে, ফলে ১৯৯৩ সালে মেক্সিকোর যিহোবার সাক্ষিদেরকে এক ধর্মীয় সংগঠন হিসেবে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে।

এটা আমার জন্য খুবই আনন্দের খবর কারণ প্রথম দিকে আমি ভেবেছিলাম যে, তা কখনোই সম্ভব নয়। বছরের পর বছর ধরে আমি বার বার সরকারি অফিসে গিয়েছি এবং প্রতিবারই হতাশ হয়ে ফিরে এসেছি। আমাদের শাখা অফিসের আইন সংক্রান্ত বিভাগ যেভাবে এই বিষয়গুলো সামলেছে, তা দেখে আমার খুবই ভাল লাগে কারণ এর ফলে প্রচার করতে গিয়ে আমাদের এখন আর তেমন ঝামেলায় পড়তে হয় না।

মিশনারি জীবনসাথির সঙ্গে সেবা করা

আমি যখন মেক্সিকোতে এসেছিলাম তখন সেখানে প্রথমদিকের গিলিয়েড ক্লাসের অনেক গ্র্যাজুয়েট মিশনারিরা ছিলেন। তাদের মধ্যে একজন ছিল, এস্টার ভারটেনিয়ান। সে আমেরিকা থেকে এসেছিল এবং ১৯৪২ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যালেজোতে অগ্রগামীর কাজ শুরু করেছিল। ১৯৫৫ সালের ৩০শে জুলাই আমরা বিয়ে করি এবং তারপর মেক্সিকোতে আমাদের কাজ চালিয়ে যাই। এস্টার, মেক্সিকো সিটিতে মিশনারি কাজ চালিয়ে যায়। আমরা তখন এখানকার শাখা অফিসে থাকতাম কারণ আমি তখনও শাখা অফিসেই কাজ করতাম।

মিশনারি হওয়ার পর, এস্টার প্রথমে ১৯৪৭ সালে মেক্সিকোর নুয়েভো লেওনের মনটেরিতে কাজ করতে শুরু করে। মনটেরিতে তখন মাত্র ৪০ জন সাক্ষি ও একটা মণ্ডলী ছিল কিন্তু ১৯৫০ সালে সে যখন মেক্সিকো সিটিতে আসে, তার মধ্যে সেখানে চারটে মণ্ডলী হয়ে যায়। মেক্সিকো সিটির কাছে আমাদের শাখা অফিসে এখন দুজন যুবক কাজ করে। এস্টার যখন মনটেরিতে মিশনারি হিসেবে কাজ করেছিল, তখন ওদের পরিবারের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করত।

১৯৫০ সালে মেক্সিকো সিটির মিশনারিদের প্রচারের এলাকা পুরো শহর জুড়েই ছিল। তারা হেঁটে হেঁটে অথবা লোক বোঝাই পুরনো বাসে চড়ে তাদের কাজ করতেন। ১৯৫০ সালের শেষ দিকে আমি যখন এখানে আসি তখন সেখানে সাতটা মণ্ডলী ছিল। এখন সেখানে প্রায় ১,৬০০টা মণ্ডলী ও ৯০,০০০ জনের বেশি প্রকাশক আছে এবং গত বছর মেক্সিকো সিটিতে খ্রীষ্টের মৃত্যুর স্মরণার্থক সভায় ২,৫০,০০০ জনেরও বেশি উপস্থিত ছিলেন! এখানকার অনেক মণ্ডলীতে আমার ও এস্টারের কাজ করার সুযোগ হয়েছে।

আমি ও এস্টার যখন কোন বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করি তখন সবসময় ওই পরিবারের কর্তাকে আলোচনায় জড়াতে চেষ্টা করি, যাতে পুরো পরিবারই অধ্যয়ন করতে পারে। ফলে আমরা দেখেছি যে, অনেক বড় বড় পরিবার যিহোবাকে সেবা করতে শুরু করেছে। আমি মনে করি যে, মেক্সিকোতে এত তাড়াতাড়ি সত্য উপাসনা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ার একটা কারণ হল, এখানে প্রায়ই পুরো পরিবার একসঙ্গে সত্যে আসে।

এই কাজে যিহোবা আশীর্বাদ করেছেন

১৯৫০ সাল থেকে মেক্সিকোতে প্রকাশক ও মণ্ডলীর সংখ্যা ও সাংগঠনিক কাজেও লক্ষণীয় উন্নতি হয়ে চলেছে। এই বৃদ্ধিতে সামান্য অবদান রাখতে পেরে ও সেইসঙ্গে মেক্সিকোর হাসিখুশি ও অতিথিসেবক ভাইবোনদের সঙ্গে কাজ করে আমরা খুবই খুশি।

যিহোবার সাক্ষিদের পরিচালক গোষ্ঠীর একজন সদস্য কার্ল ক্লাইন ও তার স্ত্রী মার্গারেট কয়েক বছর আগে ছুটি কাটানোর সময় আমাদের এখানে আসেন। মেক্সিকোতে কেমন কাজ চলছে, তা ভাই ক্লাইন জানতে চেয়েছিলেন আর সেইজন্য তিনি ও বোন মার্গারেট মেক্সিকো সিটির কাছে সান জুয়ান টেজোন্টলা মণ্ডলীতে আসেন। আমরাও সেদিন ওই মণ্ডলীতে গিয়েছিলাম। ওখানকার কিংডম হল খুব ছোট ছিল, মাত্র ৫.৫ মিটার লম্বা ও ৪.৫ মিটার চওড়া। আমরা যখন সেখানে গিয়ে পৌঁছি তখন ৭০ জন লোক চলে এসেছিল, তাই সেখানে দাঁড়াবারও জায়গা ছিল না। বয়স্ক ভাইবোনেরা চেয়ারে বসেছিলেন, যুবক-যুবতীরা বেঞ্চে এবং ছোটরা ইট পেতে বা মেঝেতে বসেছিল।

ছোট বাচ্চাদের সবার হাতে বাইবেল ছিল আর তারা বক্তার সঙ্গে সঙ্গে বাইবেলের পদ খুলে দেখছিল দেখে ভাই ক্লাইন খুবই খুশি হয়েছিলেন। জনসাধারণের উদ্দেশে বক্তৃতা দেওয়ার পর ভাই ক্লাইন বলেন যে, মথি ১৩:১৯-২৩ পদে যীশু যে ‘উত্তম ভূমির’ কথা বলেছিলেন, তার বেশির ভাগই মেক্সিকোতে আছে। ওই দিন যারা সেখানে ছিল তাদের মধ্যে সাতজন ছেলেমেয়ে এখন মেক্সিকো সিটির কাছে শাখা অফিস বাড়ানোর কাজে সাহায্য করছে। আরেকজন ভাই বেথেলে কাজ করছে আর অনেক বোনেরা অগ্রগামীর কাজ করছে!

আমি যখন মেক্সিকো সিটিতে আসি তখন আমাদের শাখায় মাত্র ১১ জন ভাইবোন ছিলেন। এখন ১,৩৫০ জন কাজ করছে আর এদের মধ্যে ২৫০ জন শাখা অফিসের নতুন বিল্ডিং বানানোর কাজ করছে। খুব সম্ভবত ২০০২ সালে এই কাজ শেষ হবে আর তখন আমরা এখানে আরও ১৩০০ জন নতুন ভাইবোনদের জায়গা দিতে পারব। একটু ভেবে দেখুন, ১৯৫০ সালে সারা দেশে মাত্র ৭,০০০ জনেরও কম প্রকাশক ছিল কিন্তু এখন সেখানে ৫,০০,০০০ জনেরও বেশি প্রকাশক আছে! মেক্সিকোতে আমাদের নম্র ভাইবোনেরা যিহোবার প্রশংসা করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেন আর তাদের এই চেষ্টাকে যিহোবা আশীর্বাদ করেছেন দেখে আমার মন খুশিতে ভরে যায়।

এক বড় বাধা

অন্যান্য কঠিন বাধাগুলোর সঙ্গে সবচেয়ে বড় যে বাধা আমার এসেছে, তা হল অসুস্থতা। আমার স্বাস্থ্য মোটামুটি ভাল। কিন্তু, ১৯৮৮ সালের নভেম্বরে আমি স্ট্রোক করি আর এতে আমার শরীরের বড় ক্ষতি হয়। যিহোবার সাহায্যে, ব্যায়াম করে এবং অন্যান্য থেরাপির মাধ্যমে আমি কিছুটা সুস্থ হয়েছি কিন্তু আমার শরীরের কিছু কিছু অঙ্গ এখনও পুরোপুরি কাজ করে না। প্রচণ্ড মাথাব্যথা ও অন্যান্য সমস্যাগুলোর জন্য আমার এখনও চিকিৎসা চলছে এবং ওষুধ খাচ্ছি।

যদিও আমি এখন যতখানি কাজ করতে চাই, ততটা করতে পারি না কিন্তু তারপরেও অন্তত এটুকু ভেবে আমি মনে শান্তি পাই যে, আমি অনেককে যিহোবার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে জানাতে পেরেছি ও তাদেরকে ঈশ্বরের উৎসর্গীকৃত দাস হয়ে উঠতে সাহায্য করেছি। এছাড়াও, আমাদের শাখা অফিসে যে ভাইবোনেরা আসেন তাদের যত জনের সঙ্গে সম্ভব আমি কথা বলতে পছন্দ করি; আমি মনে করি যে, এতে আমি এবং যার সঙ্গে আমি কথা বলি আমরা দুজনেই উৎসাহ পাই।

যিহোবা আমাদের পরিচর্যাকে উপলব্ধি করেন এবং আমরা তাঁর জন্য যা করেছি, তা নিষ্ফল নয় জেনে আমি অনেক শক্তি পাই। (১ করিন্থীয় ১৫:৫৮) অসুখের জন্য আমি এখন চাইলেও অনেক কাজ করতে পারি না কিন্তু তারপরও আমি কলসীয় ৩:২৩, ২৪ পদের কথাগুলো মনপ্রাণ দিয়ে বিশ্বাস করি: “যাহা কিছু কর, প্রাণের সহিত কার্য্য কর, মনুষ্যের কর্ম্ম নয়, কিন্তু প্রভুরই কর্ম্ম বলিয়া কর; কেননা তোমরা জান, প্রভু হইতে তোমরা দায়াধিকাররূপ প্রতিদান পাইবে।” এই কথা মনে রেখে শত পরীক্ষার মধ্যেও আমি মনপ্রাণ দিয়ে যিহোবাকে সেবা করতে শিখেছি।

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯৪২ সালে আমি যখন অগ্রগামী ছিলাম

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমার স্ত্রী ১৯৪৭ সালে মেক্সিকোতে মিশনারি হিসেবে কাজ শুরু করেন

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

আজকে এস্টারের সঙ্গে

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

ওপরে বাঁ দিকে: ১৯৫২ সালে মেক্সিকো বেথেল পরিবার, সামনে আমি

ওপরে: ১৯৯৯ সালে মেক্সিকো সিটি স্টেডিয়ামে জেলা সম্মেলনে ১,০৯,০০০ জনেরও বেশি উপস্থিত ছিলেন

নিচে বাঁ দিকে: আমাদের নতুন শাখা অফিসের বিল্ডিংগুলোর কাজ প্রায় শেষের দিকে

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার