প্রাচীনরা আপনারা কি “ক্লান্ত প্রাণকে” সতেজ করবেন?
আঞ্জেলাa নামে ত্রিশ-এর কোঠার বয়সি একজন অবিবাহিত বোন কিছুটা নার্ভাস হয়ে আছেন। তিনি প্রাচীনদের জন্য অপেক্ষা করছেন। তারা তাকে কী বলবে? এটা ঠিক, তিনি কয়েকটা সভায় যেতে পারেননি, কিন্তু সারাদিন বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য কাজ করতে করতে তিনি অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। রোজকার বিভিন্ন চিন্তা ছাড়াও, তিনি তার মায়ের স্বাস্থ্য নিয়ে অনেক উদ্বিগ্ন।
আপনাকে যদি আঞ্জেলার সঙ্গে পালকীয় সাক্ষাৎ করতে হতো, তাহলে কীভাবে আপনি এই “ক্লান্ত প্রাণকে” উৎসাহিত করতেন? (যির. ৩১:২৫) তবে প্রথমে চিন্তা করুন, সতেজতাদায়ক এক পালকীয় সাক্ষাৎ করার জন্য আপনি কীভাবে প্রস্তুত হবেন?
আপনার ভাইবোনদের পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তা করুন
মাঝে মাঝে, আমরা সকলেই জাগতিক কাজ অথবা ঈশতান্ত্রিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। উদাহরণস্বরূপ, ভাববাদী দানিয়েল যখন এমন একটা দর্শন পেয়েছিলেন যেটা তিনি বুঝতে পারেননি, তখন তিনি “ক্লান্ত” হয়ে পড়েছিলেন। (দানি. ৮:২৭) তিনি সাহায্য লাভ করেছিলেন, যখন স্বর্গদূত গাব্রিয়েল তার কাছে এসেছিলেন। ঈশ্বরের সেই বার্তাবাহক দানিয়েলকে বোঝার ক্ষমতা দিয়েছিলেন, যিহোবা তার প্রার্থনা শুনেছেন বলে তাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন এবং তিনি যে “অতিশয় প্রীতি-পাত্র,” তা বলেছিলেন। (দানি. ৯:২১-২৩) পরে আরেকটা ঘটনায়, আরেকজন স্বর্গদূতের ভেবেচিন্তে বাছাই করা কথা এই উদ্বিগ্ন ভাববাদীকে সবল করেছিল।—দানি. ১০:১৯.
একইভাবে, ক্লান্ত বা নিরুৎসাহিত কোনো সহবিশ্বাসীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার আগে সময় নিয়ে তার পরিস্থিতি চিন্তা করুন। তিনি কোন কোন সমস্যার মুখোমুখি হন? কীভাবে এই সমস্যাগুলো তার কর্মশক্তিকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে? তার কোন কোন চমৎকার গুণ রয়েছে? রিচার্ড, যিনি কুড়ি বছর ধরে একজন প্রাচীন হিসেবে সেবা করছেন, তিনি বলেন, “আমি আমার ভাইবোনদের গুণাবলির ওপর মনোযোগ দিই।” তিনি আরও বলেন, “সাক্ষাতের আগে তাদের পরিস্থিতি নিয়ে মনোযোগের সঙ্গে চিন্তা করলে তাদের সুনির্দিষ্ট প্রয়োজন অনুসারে উৎসাহ প্রদান করার বিভিন্ন উপায় খুঁজে বের করা সহজ হয়ে যায়।” যদি আরেকজন প্রাচীন আপনার সঙ্গে যোগ দেন, তাহলে একসঙ্গে আপনার ভাই অথবা বোনের পরিস্থিতি নিয়ে বিবেচনা করুন না কেন?
আপনার ভাইবোনদের স্বচ্ছন্দ বোধ করতে সাহায্য করুন
আপনি সম্ভবত একমত হবেন যে, ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশ করা বিব্রতকর হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়: আপনার ভাই অথবা বোনের পক্ষে হয়তো সাক্ষাৎ করতে আসা প্রাচীনদের কাছে সবকিছু খুলে বলা সহজ না-ও হতে পারে। তাহলে, কীভাবে আপনি তার প্রাথমিক দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে ওঠার জন্য সাহায্য করতে পারেন? আপনার আন্তরিক হাসি এবং আশ্বাসদায়ক দুটো কথা অনেক ভালো প্রভাব ফেলতে পারে। মাইকেল, যিনি চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে একজন প্রাচীন, তিনি সাক্ষাৎ করার আগে প্রায়ই এই কথাগুলো বলেন, “জানেন, একজন প্রাচীনের অন্যতম বিশেষ সুযোগগুলোর মধ্যে একটা হল, ভাইবোনদের ঘরে গিয়ে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা এবং তাদেরকে আরও ভালোভাবে জানা। তাই, আমি আজকের এই সাক্ষাতের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছিলাম।”
সাক্ষাতের আগে আপনি হয়তো আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করতে পারেন। প্রেরিত পিতর উপযুক্তভাবেই প্রার্থনার মধ্যে তার ভাইবোনদের বিশ্বাস, প্রেম ও ধৈর্য সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন। (১ থিষল. ১:২, ৩) আপনি আপনার ভাই অথবা বোনের উত্তম গুণাবলি সম্বন্ধে কেমন বোধ করেন, সেই বিষয়ে আপনার অনুভূতি প্রকাশ করার মাধ্যমে আপনি আসলে আপনার ও সেইসঙ্গে আপনার ভাই অথবা বোনের হৃদয়কে গঠনমূলক কথাবার্তা বলার জন্য প্রস্তুত করছেন। আপনার বলা এ-রকম কিছু কথা মনে শান্তি এনে দিতে পারে। “কখনো কখনো আমরা যে-ভালো বিষয়গুলো করে থাকি, সেগুলো ভুলে যাই,” রে নামের একজন অভিজ্ঞ প্রাচীন ভাই লক্ষ করেছেন। “তাই কেউ যখন আমাদেরকে সেই বিষয়ে মনে করিয়ে দেয়, তা আমাদের প্রাণকে সতেজ করে।”
কোনো আত্মিক বর দিন
কোনো শাস্ত্রীয় দৃষ্টিভঙ্গি আলোচনা করার মাধ্যমে, এমনকী শুধুমাত্র একটা পদ থেকেও, আপনি পৌলের মতো কোন “আত্মিক বর” দিতে পারেন। (রোমীয় ১:১১) উদাহরণস্বরূপ, একজন বিষণ্ণ ভাই হয়তো নিজেকে সেই গীতরচকের মতো অযোগ্য বলে মনে করতে পারেন, যে-গীতরচক নিজেকে একটা কুঁচকে যাওয়া “ধূমস্থ কুপার” সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। (গীত. ১১৯:৮৩, ১৭৬) সেই অভিব্যক্তি সম্বন্ধে কিছুটা ব্যাখ্যা করার পর, আপনি আস্থা প্রকাশ করে বলতে পারেন যে, আপনার ভাই অথবা বোন ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলো ‘ভুলিয়া যান নাই।’
একইভাবে, হারানো সিকির দৃষ্টান্ত কি এমন একজন বোনের হৃদয়কে স্পর্শ করতে পারে, যিনি মণ্ডলীতে থেকে কিছুটা দূরে সরে গিয়েছেন অথবা ধীর হয়ে পড়েছেন? (লূক ১৫:৮-১০) সেই হারানো সিকিটা হয়তো অনেকগুলো রুপোর সিকি দিয়ে তৈরি কোনো মূল্যবান নেকলেসের এক অংশ ছিল। সেই দৃষ্টান্ত আলোচনা করার মাধ্যমে আপনি হয়তো তাকে এই বিষয়টা উপলব্ধি করতে সাহায্য করতে পারবেন যে, তিনিও খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর এক মূল্যবান অংশ। সেই বিষয়টা আলোচনা করার পর, আপনি হয়তো জোর দিতে পারেন যে, যিহোবা তাঁর এক ছোট্ট মেষ হিসেবে তার জন্য কতখানি চিন্তা করেন।
আমাদের সহবিশ্বাসীরা সাধারণত বাইবেলের ওপর তাদের চিন্তাভাবনা প্রকাশ করতে পেরে আনন্দিত হয়। তাই পুরোটা সময় কেবল নিজেই কথা বলবেন না! তাদের পরিস্থিতিতে প্রযোজ্য এমন কোনো একটা শাস্ত্রপদ পড়ার পর, আপনি হয়তো মূল শব্দ বা বাক্যাংশকে আলাদা করে সেটার ওপর তাদের মন্তব্য করার জন্য বলতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২ করিন্থীয় ৪:১৬ পদ পড়ার পর একজন প্রাচীন হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারেন, “আপনি কি এমন কোনো উপায় সম্বন্ধে বলতে পারেন, যেটার মাধ্যমে যিহোবা আপনাকে নূতনীকৃত করেছেন?” এমন ভাবে কথাবার্তা বলা হলে ‘উভয় পক্ষ আশ্বাস’ বা উৎসাহ লাভ করবে।—রোমীয় ১:১২.
আপনি হয়তো কোনো সহবিশ্বাসীর সঙ্গে তার মতো একই পরিস্থিতিতে ছিল এমন কোনো বাইবেল চরিত্র সম্বন্ধে আলোচনা করেও তাকে সতেজ করতে পারেন। হতাশা বোধ করেন এমন কারো পরিস্থিতি হয়তো হান্না অথবা ইপাফ্রদীত চরিত্রের পরিস্থিতির মতো, যারা মাঝে মাঝে বিষণ্ণ হয়ে পড়েছিল, কিন্তু ঈশ্বরের দৃষ্টিতে মূল্যবান ছিল। (১ শমূ. ১:৯-১১, ২০; ফিলি. ২:২৫-৩০) যখন সুযোগ থাকে, তখন বাইবেলের কিছু চমৎকার উদাহরণ নিয়ে আলোচনা করুন না কেন?
আগ্রহ দেখিয়ে চলুন
সাক্ষাতের পরও, আপনি আপনার ভাই অথবা বোনের প্রতি আগ্রহ দেখিয়ে চলার মাধ্যমে সত্যিকারের চিন্তা প্রকাশ করতে পারেন। (প্রেরিত ১৫:৩৬) সাক্ষাতের শেষে, একসঙ্গে পরিচর্যায় কাজ করার জন্য কোনো সময় নির্ধারণ করা ব্যবহারিক হতে পারে। একজন অভিজ্ঞ প্রাচীন বার্নার্ড যখন এমন কোনো ভাই অথবা বোনের সঙ্গে পুনরায় দেখা করেন, যার সঙ্গে সম্প্রতি পালকীয় সাক্ষাৎ করেছেন, তখন তিনি যে-পরামর্শ দিয়েছিলেন, সেই বিষয়ে কৌশলে জিজ্ঞেস করেন, “বলুন তো, কোনো কাজ হয়েছে কি না?” এই ধরনের ব্যক্তিগত আগ্রহ দেখালে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন যে, পরবর্তীতে আরও কোনো সাহায্য প্রয়োজন রয়েছে কি না।
অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন আমাদের ভাই ও বোনদের এইরকম বোধ করা আরও বেশি প্রয়োজন যে, আপনি তাদের যত্ন নিচ্ছেন, তাদের পরিস্থিতি বুঝতে পারছেন এবং তাদের ভালোবাসেন। (১ থিষল. ৫:১১) তাই, কোনো পালকীয় সাক্ষাতের আগে আপনার ভাই অথবা বোনের পরিস্থিতি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন। আপনার প্রার্থনায় সেই বিষয় অন্তর্ভুক্ত করুন। উপযুক্ত শাস্ত্রপদ বাছাই করুন। তাহলে আপনি “ক্লান্ত প্রাণকে” সতেজ করার মতো উপযুক্ত বাক্য খুঁজে পাবেন!
a নামগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে।