ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w16 অক্টোবর পৃষ্ঠা ৩-৭
  • আমি উত্তম উদাহরণগুলো অনুকরণ করার প্রচেষ্টা করেছি

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • আমি উত্তম উদাহরণগুলো অনুকরণ করার প্রচেষ্টা করেছি
  • প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০১৬
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • উত্তম উদাহরণগুলো মনে রাখি
  • আবারও জায়গা পরিবর্তন করি
  • বিভিন্ন রোমাঞ্চকর আমন্ত্রণ লাভ করি
  • এক নতুন দায়িত্ব লাভ করি
  • আরও পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিই
  • আরও একটা রোমাঞ্চকর আমন্ত্রণ পাই
  • আমি যিহোবার দেখানো পথে চলি
    প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০২২
  • আমি জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে শিখতে থাকি
    প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০২৪
  • সত্তর বছর ধরে এক এক যিহুদির বস্ত্রের অঞ্চল ধরে থাকা
    ২০১২ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • ‘যাহা করিতে বাধ্য ছিলাম, তাহাই করিয়াছি’
    ১৯৯৮ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০১৬
w16 অক্টোবর পৃষ্ঠা ৩-৭

জীবনকাহিনি

আমি উত্তম উদাহরণগুলো অনুকরণ করার প্রচেষ্টা করেছি

বলেছেন টমাস ম্যাকলেন

“আমার বয়স কত আপনি জানেন?,” আমি জিজ্ঞেস করি। “আপনার বয়স কত তা আমি ভালোমতোই জানি,” ইসাক মারে উত্তর দিয়েছিলেন। তিনি নিউইর্য়কের প্যাটারসন থেকে কলোরাডোতে আমাকে ফোন করেছিলেন। কেন আমাদের মধ্যে এইরকম কথাবার্তা হয়েছিল? আমি এখন আপনাদের তা বলছি।

টমাস ও বেথেল ম্যাকলেন

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাসের উইচিটায় ১৯৩৬ সালের ১০ ডিসেম্বর আমার জন্ম হয়। পরিবারের চার সন্তানের মধ্যে আমি সবার বড়ো। আমার বাবার নাম উইলিয়াম ও মায়ের নাম জেন। তারা দু-জন যিহোবার অনুগত উপাসক ছিলেন। বাবা কোম্পানি দাস ছিলেন, যাকে এখন প্রাচীনগোষ্ঠীর কোঅর্ডিনেটর বলে অভিহিত করা হয়। আমার দিদিমা অ্যামা ওয়েগ্‌নারের কাছ থেকে আমার মা বাইবেলের সত্য শিখেছিলেন। দিদিমা অনেক ব্যক্তিকে সত্য শিখিয়েছিলেন, যাদের মধ্যে গারট্রুড স্টিলও ছিলেন। গারট্রুড অনেক বছর ধরে পোয়ের্টো রিকোতে একজন মিশনারি হিসেবে সেবা করেছিলেন।a তাই আমার সামনে অনুকরণ করার মতো অনেক উত্তম উদাহরণ ছিল।

উত্তম উদাহরণগুলো মনে রাখি

টমাস ম্যাকলেনের বাবা রাতার কোণে দাঁড়িয়ে পথচারীদের কাছ পত্রিকা অর্পণ করছন

আমার বাবা রাস্তার কোণে দাঁড়িয়ে পথচারীদের কাছে পত্রিকা অর্পণ করছেন

আমার বয়স যখন পাঁচ বছর, তখন কোনো এক শনিবার সন্ধ্যা বেলা আমি বাবার সঙ্গে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পথচারীদের কাছে ইংরেজি প্রহরীদুর্গ ও সান্ত্বনা (বর্তমানে সজাগ হোন!) পত্রিকা অর্পণ করছিলাম। সেই সময়ে আমাদের দেশ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রত ছিল। তখন একজন মাতাল ডাক্তার আমাদের দিকে এসে বাবাকে তার খ্রিস্টীয় নিরপেক্ষতার জন্য কাপুরুষ ও ফাঁকিবাজ বলে গালাগালি করতে শুরু করেন। সেই ডাক্তার তার মুখটা বাবার একেবারে সামনে এনে বলেন, “আমাকে মারো তো দেখি, কাপুরুষ কোথাকার!” আমি যদিও খুব ভয় পেয়ে যাই, কিন্তু বাবা যা করেছিলেন তা দেখে তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা বেড়ে যায়। বাবা কিছু না বলে শুধু জড়ো হওয়া লোকেদের কাছে পত্রিকা অর্পণ করছিলেন। সেই সময়ে, একজন সৈনিক সেখানে আসেন আর সেই ডাক্তার চিৎকার করে তাকে বলেন: “এই কাপুরুষটাকে কিছু করুন!” সৈনিক বুঝতে পেরেছিলেন লোকটা মাতাল, তাই তাকে বলেছিলেন, “যান, ঘরে গিয়ে নেশা কাটান!” এরপর তারা দু-জনেই চলে গিয়েছিলেন। যিহোবা যে বাবাকে সাহস প্রদান করেছিলেন, সেইজন্য আমি খুবই কৃতজ্ঞ। উইচিটায় বাবার দুটো সেলুন ছিল আর ওই ডাক্তার ছিলেন তার একজন খদ্দের!

১৯৪০-এর দশকে টমাস ম্যাকলেন ও তার বাবা-মা

১৯৪০-এর দশকে বাবা-মায়ের সঙ্গে একটা সম্মেলনে যাচ্ছি

আমার বয়স যখন আট বছর, তখন বাবা-মা তাদের বাড়ি ও দোকান বিক্রি করে দেন, একটা ছোটো ভ্রাম্যমাণ বাড়ি তৈরি করেন এবং কলোরাডোতে চলে যান, যেখানে প্রকাশকদের বেশি প্রয়োজন ছিল। আমরা গ্র্যান্ড জাংশনের কাছাকাছি থাকতে শুরু করি আর বাবা-মা সেখানে অগ্রগামী সেবা করতেন এবং খণ্ডকালীন কাজ হিসেবে চাষবাস ও খামারের কাজ করতেন। যিহোবার আশীর্বাদ ও তাদের উদ্যমী কাজের ফলে সেখানে একটা মণ্ডলী গড়ে উঠেছিল। সেখানেই ১৯৪৮ সালের ২০ জুন, একটা পাহাড়ি ঝর্ণার স্রোতে বাবা আমাকে ও সেইসঙ্গে সত্য গ্রহণ করেছে এমন আরও ব্যক্তিকে বাপ্তিস্ম দেন। সেই ব্যক্তিদের মধ্যে বিলি নিকোলাস ও তা স্ত্রীও ছিলেন। তারা পরে সীমার কাজ করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তাদের ছেলে ও ছেলের বউও একই কাজ করেছিলেন।

রাজ্যের কাজে পূর্ণসময় নিয়োজিত ছিলেন এমন অনেকের সঙ্গে আমরা ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করেছি ও গঠনমূলক আধ্যাত্মিক আলোচনা উপভোগ করেছি। তাদের মধ্যে স্টিল পরিবারের সদস্যদের—ডন ও আর্লিন, ডেব ও জুলিয়া এবং সাই ও মার্থার—উদাহরণ আমার জীবনের উপর অনেক প্রভাব ফেলেছে। তারা আমাকে দেখিয়েছেন, কীভাবে রাজ্যের বিষয়কে প্রথমে রাখার ফলে একজন ব্যক্তি জীবনের প্রকৃত অর্থ ও আনন্দ খুঁজে পান।

আবারও জায়গা পরিবর্তন করি

আমার বয়স যখন ১৯ বছর, তখন আমাদের এক পারিবারিক বন্ধু বাড হেসটি, আমাকে তার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে অগ্রগামী সেবায় যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানান। সীমা অধ্যক্ষ আমাদেরকে লুইজিয়ানার রাস্টনে যেতে বলেছিলেন, যেখানে বেশ কিছু সাক্ষি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল। আমাদের বলা হয়েছিল, উপস্থিতি যা-ই হোক না কেন, আমরা যেন প্রতি সপ্তাহে প্রতিটা সভা করি। আমরা একটা উপযুক্ত সভাস্থল খুঁজে পাই ও সেটা মেরামত করি। আমরা প্রতিটা সভা করতাম, তবে বেশ কিছু দিন ধরে সেখানে শুধু আমরা দু-জনই উপস্থিতি ছিলাম। আমরা পালা করে একজন সভার বিষয়বস্তু উপস্থাপন করতাম আর অন্য জন সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতাম। যখন কোনো বক্তৃতায় নমুনা দেখাতে বলা হতো, তখন আমরা দু-জনেই প্ল্যাটফর্মে উঠে যেতাম আর শ্রোতাদের সারি তখন একেবারে ফাঁকা থাকত! অবশেষে, একজন বয়স্ক বোন সভাতে যোগ দিতে শুরু করেছিলেন। একটা সময়ে, কয়েক জন বাইবেল ছাত্র ও নিষ্ক্রিয় ব্যক্তি সভাতে আসতে শুরু করেছিলেন। ফলে অল্পসময়ের মধ্যেই একটা উন্নতিশীল মণ্ডলী গড়ে উঠেছিল।

একদিন, চার্চ অভ্‌ ক্রাইস্ট-এর একজন যাজকের সঙ্গে বাড ও আমার দেখা হয়েছিল। তিনি এমন কিছু শাস্ত্রপদ নিয়ে কথা বলেছিলেন, যেগুলোর বিষয়ে আমি ভালোমতো জানতাম না। এই ঘটনায় আমার একটু খারাপ লেগেছিল এবং আমি নিজের বিশ্বাস সম্বন্ধে আরও গভীরভাবে চিন্তা করতে শুরু করেছিলাম। এক সপ্তাহ ধরে, রাত জেগে আমি তার বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করেছিলাম। এটা যিহোবার সঙ্গে আমার সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করতে সত্যিই সাহায্য করেছিল আর আমি অপেক্ষা করছিলাম, কখন আরেকজন যাজকের সঙ্গে আমার দেখা হবে।

এর অল্পসময় পর, সীমা অধ্যক্ষ আমাকে আরকানসাসের এল ডোরাডোর মণ্ডলীতে সাহায্য করার জন্য সেখানে চলে যেতে বলেছিলেন। সেখানে থাকার সময়, প্রায়ই আমাকে কলোরাডোতে গিয়ে একটা কমিটির সামনে হাজিরা দিতে হতো। সামরিক বাহিনীতে কাদের যোগ দিতে হবে, তা এই কমিটি নিধার্রণ করত। একবার, আমি ও কয়েক জন অগ্রগামী আমার গাড়িতে করে সেখানে যাওয়ার সময়, টেক্সাসে একটা সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে আর এর ফলে আমার গাড়ি অকেজো হয়ে যায়। আমরা তখন একজন ভাইকে ফোন করি। তিনি এসে আমাদের তার ঘরে নিয়ে যান আর এরপর আমরা সেখানকার মণ্ডলীর সভাতে যাই। সেখানে তারা আমাদের দুর্ঘটনার বিষয়ে ভাই-বোনদের জানায় আর ভাই-বোনেরা দয়া দেখিয়ে আমাদের আর্থিক সাহায্য করে। এ ছাড়া, সেই ভাই আমার গাড়িটাও ২৫ ডলারে বিক্রি করে দেন।

ভাই-বোনদের সাহায্যের কারণে আমরা উইচিটায় পৌঁছাতে পারি। সেখানে আমাদের পরিবারের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ই. এফ. ম্যাকার্টনি অগ্রগামী সেবা করছিলেন। তাকে আমরা ডক বলে ডাকতাম। তার যমজ ছেলে ফ্র্যাঙ্ক ও ফ্রান্সিস, এখনও আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাদের একটা পুরোনো গাড়ি ছিল আর তারা সেটা ২৫ ডলারে আমার কাছে বিক্রি করেছিল। আমার ভাঙা গাড়িটার জন্য ঠিক এই পরিমাণ অর্থই আমি পেয়েছিলাম। তখন প্রথম আমি স্পষ্টভাবে দেখতে পেয়েছিলাম, রাজ্যকে প্রথমে রেখেছি বলে যিহোবা কীভাবে আমার প্রয়োজনীয় বিষয় জুগিয়ে দিয়েছেন। সেই বার, ম্যাকার্টনি পরিবার আমাকে একজন সুন্দরী, আধ্যাত্মিকমনা বোনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। তার নাম বেথেল ক্রেন। তার মা রুথ, ক্যানসাসের ওয়েলিংটনের একজন উদ্যোগী সাক্ষি ছিলেন। এমনকী তার বয়স যখন নব্বইয়ের কোঠায় ছিল, তখনও তিনি অগ্রগামী সেবা চালিয়ে গিয়েছিলেন। পরিচয় হওয়ার এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে, ১৯৫৮ সালে আমি ও বেথেল বিয়ে করি আর আমরা একসঙ্গে এল ডোরাডোতে অগ্রগামী সেবা শুরু করি।

বিভিন্ন রোমাঞ্চকর আমন্ত্রণ লাভ করি

বড়ো হওয়ার সময় আমাদের সামনে যারা উত্তম উদাহরণ দেখিয়েছিল, তাদের অনুকরণ করে আমরাও যিহোবার সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া যেকোনো আমন্ত্রণ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমাদের আরকানসাসের ওয়ালনাট রিজে বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। এরপর ১৯৬২ সালে আমরা গিলিয়েড স্কুলের ৩৭তম ক্লাসে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পাই। আমরা তখন কতই-না রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম! আরও আনন্দের বিষয় হল, ডন স্টিলও একই ক্লাসে যোগ দিয়েছিলেন। গ্র্যাজুয়েশনের পর বেথেল ও আমাকে কেনিয়ার নাইরোবিতে কার্যভার দেওয়া হয়। নিউ ইয়র্ক ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় আমরা অনেক দুঃখিত ছিলাম, কিন্তু নাইরোবির বিমানবন্দরে আমাদের ভাইদের দেখে আমাদের সেই দুঃখ আনন্দে পরিণত হয়েছিল!

কেনিয়ার নাইরোবিতে মেরি ও ক্রিস কানাইয়ার সগ টমাস ও বেথেল ম্যাকলেন

নাইরোবিতে মেরি ও ক্রিস কানাইয়ার সঙ্গে প্রচার করার সময়

শীঘ্রই আমরা সেই দেশ ও সেখানকার লোকেদের ভালোবাসতে শুরু করি আর সেখানে আমাদের প্রচার কাজ উপভোগ করি। আমাদের বাইবেল ছাত্রদের মধ্যে প্রথমে ক্রিস ও মেরি কানাইয়া সত্যকে গ্রহণ করে নিয়েছিলেন। তারা এখনও কেনিয়ায় বিশ্বস্তভাবে পূর্ণসময়ের সেবায় রত আছেন। পরের বছর, আমাদের উগান্ডার কাম্পালায় যেতে বলা হয়েছিল। সেখানে আমরাই ছিলাম প্রথম মিশনারি। সেখানে আমরা অনেক রোমাঞ্চকর সময় কাটিয়েছি কারণ অনেক লোকের মধ্যে বাইবেলের সত্য জানার তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিল আর তারা আমাদের সহবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু, আফ্রিকায় সাড়ে তিন বছর সেবা করার পর পরিবার গঠন করার জন্য সেখান থেকে আমাদের চলে আসতে হয়েছিল। আমরা যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে এসেছিলাম। নিউ ইয়র্ক ছেড়ে আফ্রিকায় আসার সময় আমরা যতটা দুঃখিত ছিলাম, আফ্রিকা ছেড়ে চলে যাওয়ার দুঃখ তার চেয়ে অনেক বেশি ছিল। আমরা আফ্রিকার লোকেদের ভালোবেসে ফেলেছিলাম এবং আবার কোনো একদিন এখানে ফিরে আসব, সেই আশায় ছিলাম।

এক নতুন দায়িত্ব লাভ করি

আমরা কলোরাডোর পশ্চিমাঞ্চলে আমাদের বাবা-মা যেখানে থাকতেন, সেখানে স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করি। অল্পসময় পর, আমাদের বড়ো মেয়ে কিম্বার্লির জন্ম হয়। ওর জন্মের ১৭ মাস পর স্টেফানির জন্ম হয়। বাবা-মা হিসেবে আমাদের নতুন দায়িত্বকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিলাম আর আমাদের সুন্দরী মেয়েদের মনে সত্য গেঁথে দিতে শুরু করেছিলাম। আমাদের সামনে যারা উত্তম উদাহরণ রেখেছিল, আমরা তাদের অনুকরণ করতে চেয়েছিলাম। আমরা গুরুত্বের সঙ্গে এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করেছিলাম, এক উত্তম উদাহরণস্থাপন করা যদিও সন্তানদের গঠন করার উপর জোরালো প্রভাব ফেলতে পারে, কিন্তু এইরকম কোনো নিশ্চয়তা নেই, তারা বড়ো হয়েও যিহোবার সেবা করবে। আমার ছোটো এক ভাই ও বোন সত্য ছেড়ে চলে গিয়েছিল। আমি আশা করি, তারা আবারও সেই উত্তম উদাহরণগুলো অনুকরণ করার চেষ্টা করবে, যা তাদের সামনে অন্যেরা দেখিয়েছিল।

আমাদের মেয়েদের বড়ো করে তোলার সময়টা আমরা সত্যিই উপভোগ করেছি আর আমরা সবসময় পরিবারগতভাবে বিভিন্ন বিষয় করার চেষ্টা করেছি। আমরা যেহেতু কলোরাডোর এস্প্যানে থাকতাম, তাই আমরা স্কি করা শিখেছিলাম, যাতে মাঝে মাঝে সবাই একসঙ্গে স্কি করতে পারি। বিনোদনের এই সময়টা আমাদের মেয়েদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার সুযোগ করে দিত। কারণ আমরা যখন স্কি করার জন্য রোপওয়েতে করে পাহাড়ে উঠতাম, তখন অনেকটা সময় পেতাম। এ ছাড়া, আমরা তাদের সঙ্গে ক্যাম্পিংয়ে যেতাম আর সেখানে আগুন জ্বালিয়ে তার চারপাশে বসে কথা বলতে আমাদের খুব ভালো লাগত। যদিও মেয়েরা ছোটো ছিল, কিন্তু তারা এইরকম বিষয় নিয়ে কথা বলত যেমন, বড়ো হয়ে তারা কী করবে আর তারা কেমন ছেলেকে বিয়ে করতে চায়। আমরা মেয়েদের মনে ও হৃদয়ে যিহোবার মানদণ্ডের প্রতি ভালোবাসা গেঁথে দেওয়ার প্রচেষ্টা করেছিলাম। আমরা তাদের পূর্ণসময়ের পরিচর্যার লক্ষ্যস্থাপন করার জন্য এবং একই লক্ষ্য রয়েছে এমন কাউকে বিয়ে করার জন্য উৎসাহিত করেছিলাম। আমরা তাদের বুঝতে সাহায্য করেছিলাম, অনেক অল্পবয়সে বিয়ে না করা ভালো। আমরা একটা ছড়া বানিয়েছিলাম: “থাকো স্বাধীন, বয়স না হয় ২৩ যতদিন।”

আমাদের বাবা-মায়ের মতো, আমরাও সভাতে যোগ দেওয়ার জন্য এবং পরিবারগতভাবে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতাম। আমরা মাঝে মাঝে ব্যবস্থা করতাম যেন পূর্ণসময়ের সেবা করে এমন ব্যক্তিরা আমাদের ঘরে থাকতে পারে। এ ছাড়া, আমরা নিজেরা মিশনারি সেবা কতটা উপভোগ করেছি, সেই বিষয়েও প্রায়ই তাদের বলতাম। আমরা আশা প্রকাশ করতাম, আবার হয়তো কোনো একদিন আমরা চার জন একসঙ্গে আফ্রিকা যেতে পারব। আমাদের মেয়েরাও ঠিক তা-ই চেয়েছিল।

আমরা নিয়মিতভাবে পারিবারিক অধ্যয়ন করতাম। অধ্যয়নের সময় আমরা এমন পরিস্থিতির অভিনয় করতাম, যে-পরিস্থিতি মেয়েদের স্কুলে দেখা দিতে পারে। আমরা মেয়েদেরকে একজন সাক্ষির ভূমিকায় অভিনয় করে প্রশ্নের উত্তর দিতে বলতাম। এভাবে শিখতে পেরে তারা মজা পেত আর তাদের আস্থা বৃদ্ধি পেত। তবে আরও বড়ো হওয়ার পর, তারা কখনো কখনো কেন পারিবারিক অধ্যয়ন করতে হবে, সেই বিষয়ে অভিযোগ করত। একবার, হতাশ হয়ে আমি তাদের রুমে চলে যেতে বলেছিলাম আর এটাও বলেছিলাম, আমরা অধ্যয়ন করব না। এতে তারা হতভম্ব হয়ে কাঁদতে শুরু করেছিল এবং বলেছিল, তারা অধ্যয়ন করতে চায়। তখন আমরা বুঝতে শুরু করেছিলাম, আমরা সত্যিই তাদের তরুণ হৃদয়ে আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর জন্য উপলব্ধিবোধ গেঁথে দিতে পারছি। ধীরে ধীরে অধ্যয়নের প্রতি তাদের ভালোবাসা বৃদ্ধি পেয়েছিল আর আমরা তাদেরকে স্বচ্ছন্দে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করার সুযোগ দিয়েছিলাম। তবে কখনো কখনো তারা বলত, বাইবেলের কোনো কোনো শিক্ষার সঙ্গে তারা একমত নয়। তা শুনে আমরা কষ্ট পেতাম। কিন্তু তাদের হৃদয়ে আসলে কী আছে, সেটা তখন আমরা বুঝতে পারতাম। তাদের সঙ্গে সেই বিষয়গুলো নিয়ে যুক্তি করার পর, তারা যিহোবার চিন্তাভাবনার সঙ্গে একমত পোষণ করত।

আরও পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিই

মেয়েদের বড়ো করে তোলার প্রকল্প, আমরা যতটা মনে করেছিলাম, তার চেয়েও দ্রুত শেষ হয়েছিল। ঈশ্বরের সংগঠনের সাহায্য ও নির্দেশনায় আমরা তাদের মধ্যে যিহোবার প্রতি ভালোবাসা গড়ে তোলার যথাসম্ভব চেষ্টা করেছিলাম। মেয়েরা কলেজের পড়াশোনা শেষ করে অগ্রগামী সেবা শুরু করেছিল এবং নিজেদের ভরণ-পোষণ নিজেরাই চালানোর জন্য কিছু কাজ শিখেছিল। এটা দেখে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলাম। তারা অন্য দু-জন বোনের সঙ্গে যেখানে বেশি প্রয়োজন সেখানে সেবা করার উদ্দেশ্যে টেনেসির ক্লিভল্যান্ডে চলে গিয়েছিল। আমরা যদিও তাদের খুব মিস্‌ করতাম, কিন্তু তারা তাদের জীবন পূর্ণসময়ের সেবায় বিলিয়ে দিচ্ছে বলে আমরা অনেক আনন্দিত ছিলাম। এরপর আমি ও বেথেল আবার অগ্রগামী সেবা করতে শুরু করেছিলাম, যার ফলে আমাদের সামনে আনন্দদায়ক বিভিন্ন সুযোগের দ্বার খুলে গিয়েছিল। আমাকে বিকল্প সীমা অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল এবং সম্মেলন আয়োজনের কাজ করতে বলা হয়েছিল।

টেনিসিতে চলে যাওয়ার আগে, মেয়েরা ইংল্যান্ডের লন্ডনে বেড়াতে গিয়েছিল এবং সেখানকার শাখা অফিস দেখতে গিয়েছিল। সেখানে স্টেফানির সঙ্গে পল নর্টন নামে এক যুবক বেথেলাইটের পরিচয় হয়। স্টেফানির বয়স তখন ১৯ বছর। পরে আরেক বার সেখানে ভ্রমণ করতে গিয়ে পল নর্টনের সহকর্মী ব্রায়েন লেওয়েলিনের সঙ্গে কিম্বার্লির পরিচয় হয়। পল ও স্টেফানি বিয়ে করে—তবে স্টেফানির বয়স ২৩ বছর হওয়ার পর। তাদের বিয়ের পরের বছর ব্রায়েন ও কিম্বার্লি বিয়ে করে। কিম্বার্লির বয়স তখন ২৫ বছর। তাই, তারা ২৩ বছর না হওয়া পর্যন্ত স্বাধীনই থেকেছিল। তারা দু-জনেই উত্তম বিবাহসাথি বাছাই করেছিল আর তাই আমরা অনেক আনন্দিত হয়েছিলাম।

টমাস ও বেথেল ম্যাকলেন তাদের দুই মেয়ে ও মেয়ে-জামাইয়ের সগ

২০০২ সালে মালাউইর শাখা অফিসে পল, স্টেফানি, কিম্বার্লি ও ব্রায়েনের সঙ্গে

মেয়েরা আমাদের বলেছিল, আমাদের ও তাদের দাদু-দিদাদের উদাহরণ, তাদেরকে এমনকী চরম আর্থিক সংকটের সময়েও ‘প্রথমে রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা’ করা সম্বন্ধে যিশুর আজ্ঞা মেনে চলতে সাহায্য করেছে। (মথি ৬:৩৩) ১৯৯৮ সালের এপ্রিল মাসে, পল ও স্টেফানিকে গিলিয়েড স্কুলের ১০৫তম ক্লাসে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল আর এরপর আফ্রিকার মালাউইতে সেবা করার কার্যভার দেওয়া হয়েছিল। একইসময়ে, ব্রায়েন ও কিম্বার্লিকে লন্ডন বেথেলে সেবা করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবং পরে তাদের মালাউইর বেথেলে পাঠানো হয়েছিল। আমরা তখন অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলাম কারণ যুবক-যুবতীদের জন্য এটাই হচ্ছে জীবনের সর্বোত্তম পথ।

আরও একটা রোমাঞ্চকর আমন্ত্রণ পাই

২০০১ সালের জানুয়ারি মাসে, আমার কাছে একটা ফোন কল আসে, যে-বিষয়ে আমি শুরুতে উল্লেখ করেছি। ট্রান্সলেশন সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্টের অধ্যক্ষ ভাই মারে ব্যাখ্যা করেছিলেন, সারা বিশ্বের অনুবাদকদের ইংরেজি বোঝার দক্ষতা বৃদ্ধি করার জন্য ভাইয়েরা একটা কোর্সের ব্যবস্থা করছেন আর তারা আমাকে একজন নির্দেশক হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা চিন্তা করছেন। আমার বয়স তখন ৬৪ বছর। বেথেল ও আমি বিষয়টা নিয়ে প্রার্থনা করেছিলাম এবং তার ও আমার বৃদ্ধ মায়ের পরামর্শ নেওয়ার জন্য তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম। তারা দু-জনেই চেয়েছিলেন যেন আমরা সেখানে যাই, যদিও এর অর্থ ছিল, আমরা তাদেরকে আর সাহায্য করতে পারব না। আমি তখন প্যাটারসনে ফোন করে বলেছিলাম, এই চমৎকার সুযোগটা গ্রহণ করতে পেরে আমরা অনেক আনন্দিত হব।

এরপর, আমার মায়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে। আমি তখন তাকে বলি, আমরা এখানেই থাকব এবং তার যত্ন নেওয়ার জন্য লিন্ডাকে সাহায্য করব। লিন্ডা হল আমার ছোটো বোন। মা উত্তর দিয়েছিলেন, “তোমরা এইরকম কোনো কিছুই করবে না। তোমরা যদি না যাও, তা হলে আমার আরও বেশি খারাপ লাগবে।” লিন্ডাও মায়ের সঙ্গে একমত ছিল। তারা যে-আত্মত্যাগমূলক মনোভাব দেখিয়েছিল ও সেইসঙ্গে স্থানীয় বন্ধুবান্ধবরা যেভাবে আমাদের সাহায্য করেছিল, সেটার জন্য আমরা খুবই কৃতজ্ঞ! আমরা প্যাটারসনে ওয়াচটাওয়ার এডুকেশনাল সেন্টার-এ পৌঁছানোর একদিন পর লিন্ডা ফোন করে জানিয়েছিল, মা মারা গেছেন। মায়ের উৎসাহের কথা মনে রেখে, আমরা আমাদের নতুন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম।

আনন্দের বিষয় হল, আমাদের প্রথম কার্যভার ছিল মালাউইর শাখা অফিসে, যেখানে আমাদের মেয়েরা ও মেয়ে-জামাইরা সেবা করছিল। কী এক দারুণ পুনর্মিলন! এরপর, আমরা জিম্বাবোয়েতে ও তার পর জাম্বিয়াতে অনুবাদকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলাম। সাড়ে তিন বছর ধরে অনুবাদকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর, আমাদের মালাউইতে ফিরে যেতে বলা হয়েছিল। সেখানে আমাদের কাজ ছিল সেই সাক্ষিদের অভিজ্ঞতা লিখে রাখা, যারা তাদের খ্রিস্টীয় নিরপেক্ষতা বজায় রাখার কারণে তাড়নার শিকার হয়েছিল।b

টমাস ও বেথেল ম্যাকলেন তাদের নাতনিদের সগ পচার করছন

আমাদের নাতনিদের সঙ্গে প্রচার করছি

২০০৫ সালে, আবারও দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমরা কলোরাডোর বেসল্টে ফিরে আসি। এখানে এসে বেথেল ও আমি অগ্রগামী সেবা চালিয়ে যাই। ২০০৬ সালে, ব্রায়েন ও কিম্বার্লি তাদের দুই মেয়ে ম্যাকেঞ্জি ও এলিজাবেথকে বড়ো করে তোলার জন্য আমাদের পাশের বাড়িতে চলে আসে। পল ও স্টেফানি এখনও মালাউইতে আছে আর পল সেখানে শাখা কমিটিতে সেবা করছে। এখন আমার বয়স প্রায় আশি বছর। একসময় আমি মণ্ডলীতে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছি। যে-কমবয়সি ভাইদের সঙ্গে আমি কাজ করেছি, তারা এখন সেই দায়িত্বগুলো পালন করছে। তা দেখে আমি খুবই আনন্দিত হই। আমরা এখন যে-আনন্দ পাচ্ছি, সেটার পিছনে একটা বড়ো কারণ হল, যে-ব্যক্তিরা আমাদের সামনে উত্তম উদাহরণ রেখেছিলেন, আমাদের মেয়েদের ও নাতনিদের সামনে আমরাও সেই উদাহরণগুলো অনুকরণ করার প্রচেষ্টা করেছি।

a স্টিল পরিবারের সদস্যদের মিশনারি সেবা সম্বন্ধে আরও জানার জন্য প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ১৯৫৬ সালের ১ মে সংখ্যার ২৬৯-২৭২ পৃষ্ঠা এবং ১৯৭১ সালের ১৫ মার্চ সংখ্যার ১৮৬-১৯০ পৃষ্ঠা দেখুন।

b উদাহরণ স্বরূপ, ২০১৫ সালের ১৫ এপ্রিল প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১৪-১৮ পৃষ্ঠায় ট্রফিম এনসম্বার জীবনকাহিনি দেখুন।

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার