ধর্ষণ কিরূপে প্রতিরোধ করা যেতে পারে?
এরিক্ সম্ভ্রান্ত পরিবারের এবং দেখতে ছিল সুদর্শন ও লম্বা। লরি ১৯ বছরের ছিল এবং এরিক্ ও তার রুমমেটের সাথে একাকী যুগল মেলামেশায় তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। লরি, এরিকের বাড়ীতে পার্টিতে আসে কিন্ত সে জানত না যে অপর যুগলটি আসবে না বলে মনস্থ করেছে। শীঘ্রই অন্যান্য আমন্ত্রিতরা পার্টি থেকে চলে যেতে আরম্ভ করে।
“আমার মনে হতে লাগল, ‘কোথাও কিছু ভুল আছে, কোন কিছু একটা হচ্ছে,’
কিন্তু আমি অতটা গুরুত্ব দিইনি,” সে বলে।
যে মূহুর্তে লরি একা হয়, এরিক্ তাকে ধর্ষণ করে। লরি এই সম্পর্কে পুলিশে রিপোর্ট করেনি, এবং এরিকের সাক্ষাৎ যাতে এড়িয়ে চলতে পারে তাই পরে সে ২৪০ কিলোমিটার দূরে চলে যায়। ডেট্ করার জন্য এক বছর পরেও সে ভয় পেত।
ধ র্ষণ হল এক ক্রমবর্দ্ধমান আতঙ্ক, ও নারীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সুরক্ষা হল এ সম্বন্ধে সজাগ ও প্রস্তুত থাকা। ধর্ষণের প্রতিটি পরিস্থিতি সম্পর্কে পূর্বপ্রত্যাশা করা যায় না, কিন্তু আক্রমণ করতে ধর্ষক কিরূপে চিন্তা ও পরিকল্পনা করে, তা জানা থাকলে আপনি সজাগ হওয়ার ইঙ্গিতগুলি বুঝতে পারবেন।a এক প্রাচীন উপদেশ বলে: “সতর্ক লোক বিপদ দেখিয়া তা এড়াইয়া চলে, কিন্তু অবোধেরা অগ্রে যায় ও পরে অনুশোচনা করে।”—হিতোপদেশ ২৭:১২, টুডেজ্ ইংলিশ ভারশন।
a দুটি পরিস্থিতি কখনই এক নয় এবং প্রতিরক্ষার কোন পরামর্শই অব্যর্থ নয়। আক্রমণের সময় আক্রান্ত ব্যক্তি কতটা ও কী প্রকৃতির প্রতিরোধ করবে সেই সম্পর্কে এমনকি বিশেষজ্ঞদেরও দ্বিমত আছে।
ধর্ষণের পরিস্থিতি এড়াবার শ্রেষ্ঠ উপায় হল ধর্ষককে এড়িয়ে চলা। পুরুষের বিশেষ ব্যবহার সম্পর্কে আপনার সজাগ থাকা দরকার—এমনকি আপনি যাকে ভাল করে জানেনও—যে ব্যবহারই আপনাকে সম্ভাব্য ধর্ষককে চিনে নিতে সাহায্য করবে। (পৃষ্ঠা ৭-এর বাক্স দেখুন।) কিছু পুরুষেরা হয়ত কোন স্ত্রীলোকদের জামাকাপড় পরার রীতি বা তার সাথে একা থাকার ইচ্ছাকে, কারণ হিসাবে ব্যবহার করতে পারে সেই নারীকে ধর্ষণ করার জন্য। কোন পুরুষ যদি সেই প্রকৃতির বিকৃত মনোভাব রাখে তার জন্য নারী দায়ী না হলেও, তার সেই প্রকৃতির মনোভাব বুঝতে পারা হবে বিজ্ঞতার পরিচয়।
যাকে আপনি ভাল করে জানেন না তার সাথে একাকী থাকার চেষ্টা করবেন না। (এমনকি যার সাথে আপনার ভাল পরিচয় আছে, সেখানেও বিচক্ষণ হন।) অপরিচিত ধর্ষক হয়ত আপনার বাড়ীতে এক মেরামতকারী হিসাবে আসতে পারে। তার পরিচয়পত্র দেখে নিন। পরিচিত ধর্ষক সাধারণত তার শিকারকে একাকী করে এমন কিছু হেতু তৈরি করে যার জন্য সেই নারীকে তার বাড়ীতে আসতে হয় বা যেখানে সে তার সাথে দেখা করবে বলেছে সেখানে অনেক লোক আছে বলে মিথ্যা কথা বলে। প্রতারিত হবেন না।
একাকী মেলামেশার সময় সমস্যা এড়ানোর জন্য, অনেকে একসঙ্গে বা বয়স্কা সহচরীকে সাথে রেখে মেলামেশা করুন। আপনার সঙ্গীকে ভাল করে জেনে নিন, দৈহিক অন্তরঙ্গতার বিষয়ে এক দৃঢ় সীমা রাখুন, যদি আপনি সেই সম্পর্কে অনুমতি দেন। মদ্য জাতীয় কোন কিছু পান করার ক্ষেত্রে সাবধান থাকুন! আপনার চিন্তাশক্তি যদি শিথিল হয় তাহলে আপনি বিপদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পারবেন না। (তুলনা করুন হিতোপদেশ ২৩:২৯-৩৫.) নিজের সহজাত প্রবৃত্তিকে বিশ্বাস করুন। যদি আপনি কারুর উপস্থিতিতে অস্বস্তি বোধ করেন তাহলে, ধরে নেবেন না সে সন্দেহের অতীত। সেখান থেকে সরে যান।
বিশেষকরে কিশোর-কিশোরীর পিতামাতাদের ধর্ষণ সম্বন্ধে তাদের ছেলেমেয়েদের সাথে আলোচনা করা দরকার, বিপদের পরিস্থিতিগুলি সম্পর্কে স্পষ্ট করে বলে, কারণ বেশীরভাগ ধর্ষক ও ধর্ষণের শিকার হল কমবয়সীরা।
শীঘ্র প্রতিক্রিয়া করুন
প্রত্যেক ধর্ষণের পরিস্থিতি সম্বন্ধে পূর্বপ্রত্যাশা করা যায় না। আপনার অজান্তেই দেখবেন যে আপনি একা, ও এমন এক পুরুষ আপনার সামনে যে আপনার থেকে শক্তিশালী ও যৌনসংসর্গের জন্য আপনাকে জোর করতে চাইছে। তখন কি করবেন?
শীঘ্র প্রতিক্রিয়া করুন, আপনার উদ্দেব্যটি মনে রাখুন: পালিয়ে যাওয়া। সাধারণত ধর্ষক আক্রমণ করার আগে তার শিকারকে পরীক্ষা করে নেয়, তাই কোন কিছু করার জন্য যথেষ্ট দৃঢ় নিশ্চয়তা সে পাওয়ার আগেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার পরিকল্পনাকে ব্যর্থ করে দেওয়া আবব্যক। ধর্ষক বিশেষজ্ঞরা প্রতিক্রিয়ার দুই প্রকৃতির পরামর্শ দিয়ে থাকেন: নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ অথবা সক্রিয় প্রতিরোধ। আপনি প্রথমে নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধের চেষ্টা করতে পারেন, যদি তা ব্যর্থ হয় তাহলে সক্রিয় প্রতিরোধের চেষ্টা করুন।
নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধের মধ্যে পড়ে যে কোন বিষয়, যেমন ধর্ষকের সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করা বা আপনার যৌন রোগ আছে বলে ভান করা অথবা আক্রান্তকারীর উপর বমি করে ফেলা। (তুলনা করুন ১ শমূয়েল ২১:১২, ১৩.) “কল্পনা করার শক্তি না থাকলে কৌশল উদ্ভাবন করা যায় না,” জেরার্ড হুইটমোর, তার বই স্ট্রীট্ উইস্ডম্ ফর উইমেন্: আ হ্যান্ড বুক ফর আরবান্ সারভাইভল্-এ লেখেন।
নিষ্ক্রিয় কৌশল—ধষর্কের সাথে ধস্তাধস্তি করা ছাড়া সব কিছুই অন্তর্ভুক্ত আছে—প্রয়োজন ঠান্ডা মস্তিষ্কে চিন্তা করার এবং আক্রমণকারীকে অন্যমনা করে দিতে বা শান্ত করে দিতে পরিকল্পনার প্রয়োজন। যদি আপনার প্রতিরোধ আক্রমণকারীকে আরও বেশী ক্রুদ্ধ এবং হিংস্র করে তোলে, তাহলে অন্য কিছুর চেষ্টা করুন। কিন্তু চিন্তা করতে করতে নিজেকে আরও বেশী নির্জন এলাকায় নিয়ে যাবেন না। আর স্মরণে রাখবেন যে নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধের একটি সবচেয়ে কার্যকারী উপায়—চিৎকার করা।—তুলনা করুন দ্বিতীয় বিবরণ ২২:২৩-২৭.
আর একটি বিকল্প হল নেতিবাচকরূপে ও জোরের সাথে প্রতিক্রিয়া করা। আক্রমণকারীকে বলুন যে কোনরূপেই আপনি তার ইচ্ছানুযায়ী কাজ করবেন না। একাকী মেলামেশার সময় ধর্ষণের পরিস্থিতিতে, আপনি হয়ত স্তম্ভিত করার কৌশলটি ব্যবহার করতে পারেন, আক্রমণটি প্রকৃতপক্ষে কী তা বলে। এই চিৎকার করে, “আমাকে ধর্ষণ করছে! পুলিশকে ডাকছি!” আপনার সম্ভাব্য ধর্ষণকারীকে আরও এগিয়ে না আসতে সাবধান করে দেবে।
সক্রিয় প্রতিরোধ করুন
যদি কথা বলে কোন কাজ না হয়, তাহলে সক্রিয় প্রতিরোধ করতে ভীত হবেন না। এর অর্থ এই নয় যে আপনার ক্ষতি বা খুন হওয়ার সম্ভাবনা বেশী আছে আবার যদি আপনি বব্যতাও স্বীকার করেন তাহলেও আপনার সুরক্ষার নিশ্চয়তা নেই। তাই বেশীরভাগ ধর্ষণ বিশেষজ্ঞরা ধস্তাধস্তি করতে পরামর্শ দেন।
সক্রিয় প্রতিরোধ করা নারীদের পক্ষে খুবই কষ্টকর কারণ তারা জন্ম থেকেই মার্জিত, অপ্রতিরোধী, এবং এমনকি দৈহিক শক্তি প্রয়োগ করার সময়ও তারা বব্যতা স্বীকারকারী। তাই প্রতিরোধ করতে হবে বলে আগে থেকেই আপনাকে বিবেচনা করে নিতে হবে যাতে আক্রমণের সময় ইতস্ততঃ করার জন্য মূল্যবান সময় আপনি নষ্ট না করেন।
আপনাকে কেউ ভয় দেখাবে বা চাপ দেবে ভেবে আপনার প্রচন্ড ক্রুদ্ধ হওয়া দরকার। আপনার উপলব্ধি করা প্রয়োজন যে এই আক্রমণটি পূর্বপরিকল্পিত এবং ধর্ষক আপনার বব্যতা স্বীকারের অপেক্ষায় আছে। ক্রুদ্ধ হবেন কিন্তু ভয় পাবেন না। “আপনার ভয় আক্রমণকারীর এক শক্তিশালী অস্ত্র,” বলেন গবেষিকা লিন্ডা লিডরে। আপনি যে অত্যধিক প্রতিক্রিয়া করছেন বা আপনি মূর্খ প্রতিপন্ন হচ্ছেন বলে চিন্তা করবেন না। “ধর্ষিতা হওয়ার চাইতে দুর্বিনীত হওয়া ভাল,” যেমন এক বিশেষজ্ঞা বলেন। যে সব নারীরা ধর্ষকের প্রতিরোধ করতে সফল হয়েছেন তারা সাধারণত সক্রিয় প্রতিরোধ করেছেন ও একের বেশী কৌশল ব্যবহার করেছেন, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে কামড়ে দেওয়া, লাথি মারা এবং চিৎকার করা।
আপনি যদি প্রতিরোধ করতে না পারেন, তাহলে আক্রমণকারীকে পরে যাতে শনাক্ত করতে পারেন সেই বিষয় জোর দিন। সম্ভব হলে তাকে আঁচড় কেটে বা তার পোশাকআশাক ছিঁড়লে, আপনার কাছে রক্ত বা কাপড়ের চিহ্ন থেকে যাবে তাকে শনাক্ত করার জন্য। কিন্তু এই ক্ষণে তাকে সক্রিয় প্রতিরোধ করতে আপনার পক্ষে আর সম্ভব হয়ে ওঠে না। সেই ক্ষেত্রে, “নিজেকে নিজেই ভর্ৎসনা করবেন না যে আপনি তাকে ধর্ষণ ‘করতে দিলেন,’ ” বলেন রবিন ওয়ারশ আই নেভার কলড্ ইট রেপ্ বইতে। “নিজেকে আহত করার বা প্রাণ নিতে দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই এই ‘প্রমাণ’ করতে যে আপনাকে ধর্ষণ করা হয়েছে।” (g93 3/8)
যে সব নারীরা ধর্ষকের প্রতিরোধ করতে সফল হয়েছেন তারা সাধারণত সক্রিয়ভাবে প্রতিরোধ করেছেন ও একের বেশী কৌশল ব্যবহার করেছেন
সম্ভাব্য ধর্ষণকারীর বর্ণনা
▫ আপনাকে অপমানিত করে, আপনার দৃষ্টিকোণকে উপেক্ষা করে মানসিকরূপে আপনাকে কষ্ট দেয়, অথবা আপনি প্রস্তাব দিলে বিরক্ত হয় ও রেগে যায়।
▫ আপনার জীবনের প্রতিটি বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করে, যেমন আপনি কি রকম পোশাকআশাক পরবেন ও আপনার কি ধরনের বন্ধুবান্ধব থাকা দরকার। একাকী মেলামেশার সময় সমস্ত কিছু সিদ্ধান্ত নিজেই করবে যেমন কোথায় খেতে হবে বা কি সিনেমা দেখতে হবে।
▫ অকারণে ঈর্ষা বোধ করে।
▫ মেয়েদের সম্বন্ধে সাধারণত অসম্মানজনক কথাবার্তা বলে।
▫ মাতাল হয়ে যায় বা “উত্তেজিত হয়” ও আপনাকেও তাই করতে চেষ্টা করে।
▫ তার সাথে একা থাকতে বা যৌন সংসর্গের জন্য জোর করে।
▫ একাকী মেলামেশার সময় আপনাকে কোন খরচা করতে দেয় না এবং আপনি খরচা করতে চাইলে রেগে যায়।
▫ এমনকি ছোটখাট ব্যবহারেও দৈহিকভাবে হিংস্র হয়, যেমন ধরা বা ঠেলা দেওয়ায়।
▫ খুব কাছাকাছি বসে, পথ রোধ করে, স্পর্শ না করতে বললেও স্পর্শ করে আপনাকে বিরক্ত করে বা আপনাকে ভালভাবে না জানলেও আপনাকে ভালভাবে জানে এমন প্রদর্শন করে।
▫ ক্রুদ্ধ না হয়ে নৈরাব্যবোধকে সামলাতে পারে না।
▫ তার সমতুল্যরূপে আপনাকে দেখে না।
▫ অস্ত্রশস্ত্র রাখতে ভালবাসে এবং জন্তুজানোয়ার, বাচ্চাদের প্রতি অথবা যাদের সে উৎপীড়ন করতে পারে তাদের প্রতি নিষ্ঠুর হতে ভালবাসে।