ধর্ষণের আতঙ্ককে কিভাবে কাটিয়ে ওঠা যায়
তেত্রিশ বছর আগে মেরীকে ছুরি দেখিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছিল। সেই ঘটনাটি বর্ণনা করতে গেলে আজও মেরীর বুক ধক্ধক্ করে ও হাত ঘামে। প্রায় চোখের জল ফেলেই সে বলে কোন “নারীর পক্ষে এটি সবচেয়ে অসম্মানজনক অভিজ্ঞতা, এক বিভীষিকাময়, জঘন্য বিষয়।”
এক ব্যক্তির জীবনে ধর্ষণ মানসিকরূপে সবচেয়ে বিধ্বস্তকারী ঘটনাগুলির একটি হতে পারে, এবং এর প্রভাব সারা জীবন থাকতে পারে। এক সমীক্ষায়, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এরূপ ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকারে প্রায় এক তৃতীয়াংশ আত্মহত্যা করতে বিবেচনা করেছিলেন, এবং বেশীরভাগ বলেন যে এই অভিজ্ঞতাটি তাদের জীবনে চিরকালের জন্য পরিবর্তন আনে।
আক্রমণকারী যদি সেই নারীর পরিচিত হয় তাহলে তার প্রভাব বিশেষকরে মর্মান্তিক হয়। পরিচিত ব্যক্তির দ্বারা ধর্ষণের শিকার হলে সে অন্যদের কাছে খুব কমই সাহায্য পেয়ে থাকে কারণ সে হয়ত ঘটনাটি সম্বন্ধে কাউকে বলে না বা সে বললেও সেটি ধর্ষণ বলে কেউ বিশ্বাস করে না। যেহেতু যাকে সে বিশ্বাস করত তার দ্বারা আঘাত পাওয়াতে, সে হয়ত নিজেকেই দোষী সাব্যস্ত করে এবং অন্যদের তার চেনার ক্ষমতা সম্পর্কেও সন্দেহ জাগে।
সাহায্য গ্রহণ করুন
ধর্ষণের যারা শিকার হয়েছেন তাদের অনেকেই প্রথমতঃ মানসিক আঘাত পায় ও বিষয়টি অস্বীকার করে। কলেজের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার ঠিক কিছু আগেই এক নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। সে পরীক্ষা না দেওয়া পর্যন্ত সেই ঘটনাটি মন থেকে সরিয়ে রাখে। আর একটি ধর্ষণের শিকার বলে: “আমি সেই ঘটনার বিন্দুমাত্রও মনে করতে চাই না কারণ বিশ্বাসযোগ্য পরিচিত ব্যক্তিই আমার চোখের সামনে আক্রমণকারীতে পরিণত হয়েছিল। আমি জানতামই না যে পরিচিত ব্যক্তির দ্বারা কেউ কখন ধর্ষিত হতে পারে। শুনলে খুব অদ্ভুত লাগে, কিন্তু এই বিষয়টিই আমাকে আশাহীন করে দিয়েছে। আমি নিজেকে একাকী মনে করি।”
ঘটনাটি সম্পর্কে কাউকে কিছু না বলে, কিছু মহিলা বিষয়টি ক্রমাগত অস্বীকার করে যায়। তারা সেই ঘটনাটি মনের মধ্যে বছরের পর বছর চেপে রাখে, যার জন্য আতঙ্ককে কাটিয়ে উঠতে সময় লাগে এবং অন্যান্য মানসিক সমস্যা দেখা দেয় যা হয়ত অভিজ্ঞতাকারীরা বুঝতেই পারে না যে তা ধর্ষণের জন্যই হয়েছে।
অন্যান্যদের কাছে এই সম্পর্কে কথা না বললে সাধারণত আতঙ্ক কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। বিশ্বাসযোগ্য বন্ধু আপনাকে দেখতে সাহায্য করতে পারে যে আপনার প্রতি যা ঘটেছে তা প্রকৃতই ধর্ষণ এবং এতে আপনার কোন দোষ নেই। এক প্রাচীন উপদেশ বলে: “বন্ধু সর্ব্বসময়ে প্রেম করে, ভ্রাতা দুর্দশার জন্য জন্মে।” (হিতোপদেশ ১৭:১৭) তাছাড়া আত্মিক মেষপালকেরা “বাত্যা হইতে আচ্ছাদন, ও ঝটিকা হইতে অন্তরাল” হতে পারেন। (যিশাইয় ৩২:২; ১ থিষলনীকীয় ৫:১৪) ধর্ষণের শিকার যারা হয়েছেন তাদের কিছু জনের ক্ষেত্রে ধর্ষণ-সমস্যা সংস্থার সাথে যোগাযোগ করা বা বৃত্তিধারী পরামর্শদাতার প্রয়োজন হয় তাদের অনুভূতি কাটিয়ে ওঠার জন্য।
ধর্ষণের যারা বলি হয়েছেন তারা সাধারণত ধর্ষণ সম্বন্ধে কাউকে বলতে ভয় পান কারণ তারা নিজেকে দোষী মনে করেন বিশেষকরে যদি তারা আক্রমণের সময় যৌনরূপে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তারা নিজেদের নোংরা ও অযোগ্য মনে করেন এবং ধর্ষণের জন্য নিজেদের দোষী মনে করেন—যদিও বা ধর্ষক ছাড়া কেউই এর জন্য দোষী নয়।
“ব্যক্ত করতে যদি ভাল বন্ধু পাওয়া যায়, সেই ক্ষেত্রে বিষয়টি আলাদা হয়,” মেরী বলেন, যিনি এক সহ খ্রীষ্টানকে সমস্ত কিছু প্রকাশ করেছিলেন। “আমি তার সাথে কথা বলতে পেরেছিলাম এবং ধর্ষিতা হয়েও আমি নিজেকে নোংরা ও কলঙ্কিত মনে করিনি।”
তাকে সাহায্য করুন
অপরপক্ষে, ধর্ষিতার প্রতি সন্দেহ করা বা সে “প্রকৃতই ধর্ষিত হয়েছিল” কি না তা নিজেরা বিচার করা, তার বন্ধুদের পক্ষে অনুপযুক্ত ও প্রেমহীন কাজ হবে। কখনও বলবেন না যে সেটি সে উপভোগ করেছিল বা তা এক অনৈতিক কাজ হয়েছিল। সাহায্য চাইলে এক বন্ধু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কাজ করতে পারে, তা হল তাকে বিশ্বাস করা। তাকে আশ্বাস দিন। যখন সে বলছে তখন তা শুনুন কিন্তু বিশদ বিবরণের জন্য তাকে জোর করা উচিৎ নয়।
যদি সাম্প্রতিককালে ধর্ষণ হয়ে থাকে তাহলে বন্ধুরা সেই ধর্ষণের শিকারকে চিকিৎসা করাতে সাহায্য করতে পারে এবং সুরক্ষিত জায়গায় থাকার জন্য জায়গা দিতে পারে। ধর্ষণ সম্পর্কে রিপোর্ট করতে তাকে উৎসাহ দিন, কিন্তু তাকেই সিদ্ধান্ত নিতে দিন। সে সবেমাত্র এমন এক অভিজ্ঞতা লাভ করেছে যেখানে সে সব নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিল। তাই সেই নিয়ন্ত্রণ আবার কিছুটা ফিরে পেতে, এর পরে তাকে কি করতে হবে তা বিবেচনা করতে তাকেই সুযোগ দিন।
ধর্ষিতার পরিবারবর্গকে, ঘটনাটির প্রতি আবেগপ্রবণ হয়ে প্রতিক্রিয়া করার প্রবণতাকে প্রতিরোধ করতে হবে। তারা হয়ত ধর্ষণের জন্য কাউকে দোষ দিতে বা ধর্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে চাইবে কিন্তু এই দুটির একটিও ধর্ষণের বলি যে হয়েছে তাকে সাহায্য করবে না। (রোমীয় ১২:১৯) এর জন্য ধর্ষক ছাড়া অন্য কাউকে দোষ দেওয়া বৃথা, এবং প্রতিশোধ নেওয়াও বিপজ্জনক। এটি অভিজ্ঞতাপ্রাপ্তার আতঙ্ক কেটে ওঠার বদলে তাকে তার প্রিয়জনের সুরক্ষার প্রতি চিন্তিত করে তুলবে।
পরিবারবর্গের জানা উচিৎ যে ধর্ষণের শিকার যারা তাদের অনেকেই ধর্ষণের পর যৌন সংসর্গকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণে দেখে। তাদের মনে যৌন সংসর্গ হয়ে যায় এক অস্ত্রের মত, যার জন্য তারা হয়ত কিছু সময়ের জন্য যৌন সংসর্গকে কঠিন মনে করে, এমনকি তার প্রিয় ও যাকে সে বিশ্বাস করে তার সাথেও। সেইক্ষেত্রে, যতক্ষণ না স্ত্রী সহবাসের জন্য প্রস্তুত না হয় স্বামীদের সেই সম্পর্কে জোর না করাই উচিৎ। (১ পিতর ৩:৭) পরিবারের কোন যুবতীর আত্ম-সম্মান বাড়িয়ে তুলতে পরিবারবর্গ সাহায্য করতে পারেন এবং তারা দেখাতে পারেন যে সেই অভিজ্ঞতা হওয়ার পরেও সে তাদের কাছে এখনও প্রিয় ও সম্মানীয়। অভিজ্ঞতাপ্রাপ্তাদের মানসিকরূপে আরোগ্য লাভ করতে অনেকসময় দীর্ঘ সময় লাগলে তাকে ক্রমাগত সাহায্য করার প্রয়োজন হয়।
ভীতি ও নৈরাব্যবোধকে কাটিয়ে ওঠা
যে সব নারীরা ধর্ষিতা হন তারা বলেন যে তাদের সবচেয়ে বেশী প্রতিক্রিয়া হল ভীতি। ধর্ষণের শিকারদের মধ্যে বেশীরভাগ সেই আক্রমণ থেকে যে রক্ষা পাবেন তা আশা করেননি। পরে তারা হয়ত ভয় পেতে পারে যে, তাদের আবার ধর্ষণ করা হবে বা এমনকি তারা হঠাৎ আবার ধর্ষককে দেখে ফেলবেন বলেও ভয় করতে পারেন।
ধর্ষণের সময় যে ভয়ের সঞ্চার হয়েছিল তা আবার জেগে উঠতে পারে একই ধরনের শব্দ, গন্ধ বা জায়গার জন্য। যদি এক নারীকে কোন গলিতে ধর্ষণ করা হয় তাহলে সে কোন গলিতেই যেতে ভয় পাবে। যদি তাকে ঘরেতে ধর্ষণ করা হয়ে থাকে তাহলে সে আর কখনই সেই ঘরেতে থাকতে নিরাপদ বোধ করবে না এবং ঘর ছাড়তে বাধ্য হবে। এমনকি ধর্ষক যে সেণ্ট্ লাগিয়েছিল সেই প্রকৃতির সুগন্ধ পেলেও সেই অপ্রীতিকর ঘটনাটি, তা তাকে মনে করিয়ে দিতে পারে।
ধর্ষণের ফলে খুব কমই গর্ভসঞ্চার হলেও, বহু ধর্ষিতারা এর সম্ভাব্যতার বিষয় চিন্তা করে আতঙ্কিত হয়। অনেকে আবার যৌনরোগ সংক্রমণ করেছে কি না বলে যথার্থরূপেই চিন্তিত হয়। প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ বিষণ্ণতা, হতাশা ও ব্যর্থতা বোধ করে, যা কিছু সপ্তাহ থেকে কিছু মাস পর্যন্ত থাকতে পারে। উদ্বেগ, আতঙ্ক ও আকস্মিক ভীতির সাথে তাদের হয়ত মোকাবিলাও করতে হয়।
ধর্ষণ নিবারণ না করতে পারলেও নারীরা তাদের চিন্তাধারা, অনুভূতি এবং আক্রমণের প্রতিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। নিজেদের সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব দিয়ে নেতিবাচক মনোভাবকে বদলাতে শিখতে পারে।
“নিজেকে কত দুর্বল, অযোগ্য বা অসহায় না ভেবে, নিজেকে বলতে শিখুন যে কত সফলতার সাথে কাজ করছি এবং সেই আক্রমণের আতঙ্ককর সময়ের পর কতদিনই না কেটে গেছে,” বলেন লিন্ডা লিডরে রিকাভারিং ফ্রম্ রেপ্ বইতে। “তীব্র নেতিবাচক চিন্তাধারা ও অনুভূতি দিনের পর দিন কাটিয়ে ওঠার সাথে, আপনি নিজেকে বলুন, ‘আমি নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাচ্ছি।’ ”
ভয়কেও সামলান যায় যদি তার প্রকৃত কারণটি জানা যায়। যদি আতঙ্কিত ব্যক্তি বুঝতে পারে যে কী কারণে সে ভীত হচ্ছে, তাহলে সে নিজেকে জিজ্ঞাসা করতে পারে, সেই ভয় কতটা বাস্তব? উদাহরণস্বরূপ, সে যদি ধর্ষকের মতই দেখতে কাউকে দেখে, তাহলে তার ভাবা উচিৎ, সে সেই ধর্ষক নয় ও তার ক্ষতি করবে না।
ভীতি কাটানোর আর একটি উপায় প্রস্তাব করা হয় তা হল নিয়মানুসারে অনুভূতি দূরীকরণ। এতে স্ত্রীলোকটি যে কাজ বা পরিস্থিতিগুলিতে সে ভয় পায় তার একটি তালিকা তৈরি করে, সবচেয়ে কম থেকে সবচেয়ে আতঙ্কের পরিস্থিতিকে পরপর সাজিয়ে। তারপর সে নিজেকে সবচেয়ে কম চাপের পরিস্থিতিতে আছে বলে ধারণা করে যতক্ষণ না সে সেই ভয়টি কাটিয়ে ওঠে। এইভাবে সে তালিকার প্রতিটি পরিস্থিতি বিবেচনা করে যতক্ষণ না সে প্রতিটি পরিস্থিতি সম্বন্ধে চিন্তা করে স্বস্তি বোধ করে।
কোন বন্ধুর সাহায্যের মাধ্যমে তারপর সে বাস্তব জীবনের প্রতিটি কার্য নির্বাহ করতে সমর্থ হতে পারে, যেমন রাত্রিবেলা ঘরের বাইরে যাওয়া বা একা থাকা। অবশেষে সে তার ভয়কে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে ফলে সেটি তার জীবনের দৈনন্দিন কাজকে আর প্রভাবিত করতে পারবে না। কিন্তু, কিছু কাজ করতে ভয় পাওয়া—যেমন রাত্রিবেলা অন্ধকারে গলি দিয়ে যাওয়া—স্বাভাবিক, ও সেই সব পরিস্থিতিতে অস্বস্তিবোধ অতিক্রম করার চেষ্টা উদ্দেব্যহীন।
ক্রোধকে অন্যত্র পরিচালিত করা
ধর্ষণ অভিজ্ঞতাকারীরা ক্রুদ্ধও হন, প্রথমে যা তারা প্রত্যেক পুরুষের প্রতি প্রদর্শন করেন কিন্তু সময় অতিবাহিত হলে, তা সাধারণত ধর্ষকের উপরই কেন্দ্রীভূত হয়। রাগান্বিত ব্যক্তিরা সাধারণত যার তার উপর রেগে যান। আবার অন্যেরা তাদের অনুভূতিকে দমিয়ে রেখে প্রতিক্রিয়া দেখান। যাইহোক, ক্রুদ্ধভাবকে গঠনমূলকরূপে পরিচালনা করা যেতে পারে এবং একজন তার ক্রোধের সাথে যেভাবে মোকাবিলা করে থাকে তার উপর নির্ভর করে তার মানসিকভাবে আরোগ্য লাভ। শাস্ত্র বলে: “ক্রুদ্ধ [রাগ] হইলে পাপ করিও না।”—ইফিষীয় ৪:২৬.
প্রথম, অভিজ্ঞতাপ্রাপ্তাদের ক্রোধ প্রকাশ করতে ভীত হওয়ার প্রয়োজন নেই। তারা অপরকে এই সম্বন্ধে বলতে পারে। আইনের সাথে জড়িত হওয়া বা বিবরণ রাখাও ক্রোধের এক প্রকাশ। তাদের রাগ তারা শারীরিক কার্যাবলির মাধ্যমেও প্রতিরোধ করতে পারে যেমন টেনিস্, র্যাকেটবল, হ্যান্ডবল খেলে, হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো বা সাঁতার কাটার দ্বারা, এবং যা করলে আর একটি অধিক উপকার আসে, বিষণ্ণতাকে মোকাবিলা করতে সাহায্য করে।
আপনার জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করতে আবার আপনি সক্ষম হবেন।
কি ধর্ষণ করা বন্ধ করবে?
ধর্ষণ বন্ধ করা, নারীর ধর্ষকের কাছ থেকে লুকিয়ে থাকা বা তার সাথে ধস্তাধস্তি করার চাইতেও আরও অধিক কিছু বিষয়। “পুরুষেরাই ধর্ষণ করে এবং পুরুষদেরই একত্রে শক্তি আছে ধর্ষণকে শেষ করার,” বলেন লেখক টিমথি বেনেকি, তার মেন্ অন্ রেপ্ বইতে।
যতক্ষণ না পুরুষেরা নারীদের কামনা মিটাবার বস্তুরূপে দেখা বন্ধ করবে এবং হিংস্ররূপে অধিকার চালালে সাফল্যকর সম্বন্ধ স্থাপন করা যায় না তা শিখবে, ততক্ষণ ধর্ষণ শেষ হবে না। ব্যক্তিগতরূপে, পরিপক্ক ব্যক্তিরা এ সম্বন্ধে কথা বলতে পারে ও অপর পুরুষদেরও প্রভাবিত করতে পারেন। পুরুষ ও স্ত্রী উভয়েই যৌন সংক্রান্ত হাসিঠাট্টা থেকে বিরত থাকতে পারেন, যে সিনেমাতে যৌন হিংস্রতা দেখানো হয় তা না দেখতে পারেন অথবা যে সব বিজ্ঞাপকেরা তাদের উৎপাদন বিক্রয় করার জন্য যৌন আবেদনের সাহায্য নেয় তাদের সাহায্য না করতে পারেন। বাইবেল পরামর্শ দেয়: “বেব্যাগমনের ও সর্ব্বপ্রকার অশুদ্ধতার বা লোভের নামও যেন তোমাদের মধ্যে না হয়, যেমন পবিত্রগণের উপযুক্ত। আর কুৎসিত ব্যবহার এবং প্রলাপ কিম্বা শ্লেষোক্তি, এই সকল অনুচিত ব্যবহার যেন না হয়, বরং যেন ধন্যবাদ দেওয়া হয়।”—ইফিষীয় ৫:৩, ৪.
উদাহরণের মাধ্যমে পিতামাতারা নারীদের প্রতি সম্মান করতে শিখাতে পারে। যিহোবা ঈশ্বর যেমন নারীদের দেখেন সেইরূপে দেখতে তাদের ছেলেদের শিক্ষা দিতে পারেন। ঈশ্বর পক্ষপাত করেন না। (প্রেরিত ১০:৩৪) পিতামাতারা তাদের ছেলেদের, মেয়েদের সাথে বন্ধুভাবাপন্ন হতে ও তাদের উপস্থিতিতে স্বস্তি বোধ করতে শিক্ষা দিতে পারেন, যেমন যীশু করতেন। তারা তাদের ছেলেদের শিখাতে পারে যে সহবাস হল মধুর প্রেমের এক অভিব্যক্তি, যা শুধুমাত্র বিবাহসঙ্গীদের মধ্যেই সীমিত। পিতামাতারা স্পষ্টরূপে প্রকাশ করতে পারেন যে হিংস্রতা সহ্য করা হবে না, আবার অপরের প্রতি অধিকার প্রদর্শন করলেও তার মূল্য দেওয়া হবে না। (গীতসংহিতা ১১:৫) তারা ছেলেমেয়েদের তাদের সাথে খোলাখুলিভাবে যৌন সংক্রান্ত বিষয় আলোচনা করতে এবং যৌন সম্পর্কীয় কোন চাপ এলে তা প্রতিরোধ করতে উৎসাহ দিতে পারেন।
এই সমস্যা শীঘ্রই শেষ হবে
যাইহোক, জগত সমাজে বৈপ্লবিক পরিবর্তন না এলে ধর্ষণ কখনই শেষ হবে না। “ধর্ষণ শুধুমাত্র এক ব্যক্তিগত সমস্যা নয় [কিন্তু] তা হল এক পারিবারিক সমস্যা, এক সামাজিক সমস্যা ও এক জাতীয় সমস্যাও,” বলেন গবেষিকা লিন্ডা লিডরে।
পৃথিবীব্যাপী এক সমাজ সম্পর্কে বাইবেল প্রতিজ্ঞা করে যা হবে হিংস্রতা মুক্ত, যেখানে মানুষ আর কখনই ‘অন্যের উপরে তাহার অমঙ্গলার্থে কর্ত্তৃত্ব করবে’ না। (উপদেশক ৮:৯; যিশাইয় ৬০:১৮) এমন সময় শীঘ্রই আসছে যখন যিহোবা ঈশ্বর শক্তির অপব্যহারকে আর সহ্য করবেন না, যার অন্তর্ভুক্ত ধর্ষণও।—গীতসংহিতা ৩৭:৯, ২০.
সেই নতুন জগৎ সমাজে, সকলে শান্তিপূর্ণ থাকতে শিক্ষিত হবে এবং লিঙ্গ, জাতি বা বর্ণ নির্বিশেষে একে অপরের প্রতি প্রেম প্রদর্শন করবে। (যিশাইয় ৫৪:১৩) সেই সময় নম্র লোকেরা বন্ধু বা অপরিচিতদের ভয় পাবে না এবং “শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে।”—গীতসংহিতা ৩৭:১১. (g93 3/8)
আপনাকে যদি ধর্ষণ করা হয়
▫ চিকিৎসা সাহায্য নিন।
▫ যদি আপনি চান, ও একজন ধর্ষণ-অভিজ্ঞতাপ্রাপ্তাদের পরামর্শদাতাকে পাওয়া যায়, তাহলে তাকে চিকিৎসার সময় ও আইন প্রণালী অনুসরণ করার সময় সঙ্গে রাখুন।
▫ যত শীঘ্র সম্ভব পুলিশকে ডাকুন। পরামর্শদাতারা আপনার সুরক্ষা ও অন্যান্য নারীর সুরক্ষার জন্য পুলিশে রিপোর্ট করাতে বলে। রিপোর্ট করা আদালতে অভিযুক্ত করা নয়, কিন্তু পরে যদি আপনি আদালতে অভিযুক্ত করতে চান, তাহলে দেরী করে রিপোর্ট করার জন্য আপনার কেস্ কম জোর হয়ে পড়বে।
▫ প্রমাণগুলি সংরক্ষণ করুন। ধর্ষণের পরেই স্নান করবেন না, পোশাকআশাক পরিবর্তন করবেন না, চুল আঁচড়াবেন বা ধোবেন না বা হাতের বা পায়ের ছাপ নষ্ট করে দেবেন না।
▫ চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রমাণগুলি সংগ্রহ করবেন এবং যৌন সংক্রান্ত রোগ ও গর্ভসঞ্চার সম্পর্কে পরীক্ষা করবেন। যদি তারা গর্ভাবস্থা প্রতিরোধক ঔষধ দেয়, যা পরদিন-সকালের বড়িরূপে পরিচিত, খ্রীষ্টানদের এই বিষয় সচেতন হওয়া উচিৎ যে সেই প্রকৃতির ঔষধ দেহকে গর্ভবতী ডিম্বকোষকে গর্ভপাত করাতে পরিচালিত করে।
▫ সুরক্ষিত বোধ করতে যা কিছু সম্ভব করুন—তালা বদলে নিন, বন্ধুদের সাথে থাকুন, দরজায় কোন প্রতিবন্ধক রাখুন—এতে আপনি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া করছেন বলে মনে হোক বা না হোক।
▫ সবচেয়ে উত্তম হল, শাস্ত্রে আপনি সান্ত্বনা খুঁজুন, যিহোবাকে প্রার্থনা করুন, এমনকি আক্রমণের সময় ও পরে তাঁর নাম সজোরে ডাকুন। সাহায্যের জন্য মন্ডলীতে প্রাচীন ও অন্যান্য ঘনিষ্ঠ সঙ্গীদের উপর আস্থা রাখুন। সম্ভব হলে সভায় যোগ দিন এবং পরিচর্যায় সহ খ্রীষ্টানদের সাথে সঙ্গ দিন।