আমাদের বায়ুমণ্ডল যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়
সাল ১৯৭১-এ, চাঁদে যাওয়ার পথে, আপোলো ১৪ নামক মহাকাশযান থেকে, এড্গার মিশেল পৃথিবীকে দেখার পর এই মন্তব্য করেন যে: “এটিকে একটা চকচকে নীল ও সাদা রত্নের মতো দেখাচ্ছিল।” কিন্তু আজকে একজন ব্যক্তি মহাকাশ থেকে কী দেখতে পাবেন?
যদি এক বিশেষ চশমার সাহায্যে তিনি পৃথিবীস্থ বায়ুমণ্ডলের অদৃশ্য গ্যাসগুলিকে দেখতে পারতেন, তাহলে তিনি এক সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখতে পেতেন। ইন্ডিয়া টুডে নামক পত্রিকায়, রাজ চেঙ্গাপ্পা লিখেছিলেন: “তিনি দেখতে পেতেন যে, দক্ষিণ মেরু ও উত্তর আমেরিকার উপরে ওজোনের যে রক্ষামূলক আবরণ রয়েছে তার মধ্যে অনেকগুলি বিশাল ছিদ্র রয়েছে। চকচকে নীল ও সাদা রত্নের পরিবর্তে তিনি দেখতেন এক মলীন অপরিচ্ছন্ন পৃথিবী যা কালো কার্বনডাই অক্সাইড আর সালফারের দ্বারা পরিপূর্ণ।”
আমাদের বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগে ওজোনের যে রক্ষামূলক আবরণ আছে তার মধ্যে কিভাবে ছিদ্র দেখা দিল? বায়ুমণ্ডল সংক্রান্ত এই দুষণাত্মক পদার্থগুলি কি প্রকৃতই বিপজ্জনক?
কিভাবে ওজোন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে
প্রায় ৬০ বছরেরও বেশি আগে, বিজ্ঞানীরা এক ধরনের নিরাপদমূলক হিমায়ন পদ্ধতির আবিষ্কার ঘোষণা করেন যা অন্যান্য অনুরূপ পদ্ধতি, যেগুলি বিষাক্ত ও দুর্গন্ধময় তার পরিবর্তে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই নতুন রাসায়নিক পদার্থটি অণুর সংমিশ্রনে তৈরি হয় যার মধ্যে রয়েছে একটি কার্বন, দুটি ক্লরিন, এবং দুটি ফ্লিউরাইন পারমাণু (CC12F2)। এটি এবং এর অনুরূপ অন্যান্য মনুষ্যনির্মিত রাসায়নিক পদার্থগুলিকে বলা হয় ক্লোরোফ্লিউরোকার্বনস্ (CFCs)
১৯৭০ সালের প্রথম দিকেই, CFCs এর উৎপাদন একটি বৃহৎ জগদ্ব্যাপী শিল্প প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। এগুলি কেবল মাত্র রেফ্রিজারেটারের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয় না কিন্তু বায়ুনিয়ন্ত্রণ করার যন্ত্রে, এয়ারকন্ডিশন মেশিনে, পরিষ্কার করার রাসায়নিক সামগ্রীতে এবং হাল্কা-খাবারের পাত্র বানানোর ক্ষেত্রে এবং অন্যান্য প্লাস্টিক-ফোম উৎপাদনের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়।
কিন্তু, ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, দুজন বিজ্ঞানী, সেরউড রোল্যান্ড, ও মারিয়ো মলিনা, ব্যাখ্যা করেন যে CFCs আসতে আসতে স্ট্র্যাটোসফিয়ারের দিকে উঠতে থাকে এবং সেখানে এগুলি অবশেষে সংরক্ষিত ক্লরিন ছাড়তে আরম্ভ করে। প্রতিটি ক্লরিন পারমাণু, বিজ্ঞানীরা গণনা করে দেখেছেন যে, সহস্রাধিক ওজোন অণুগুলিকে নষ্ট করে দিতে পারে। কিন্তু বায়ুমণ্ডলের উপরাংশে সমানভাবে এই ওজোন নষ্ট হওয়ার চাইতেও, এর ধ্বংসের প্রভাব অনেক বেশি উপলব্ধি করা যায় মেরু অঞ্চলের উপরে।
১৯৭৯ সাল থেকে আরম্ভ করে প্রত্যেক বসন্ত কালে, বিশাল পরিমাণে ওজোন দক্ষিণ মেরু অঞ্চল থেকে অদৃশ্য হয়ে আবার সেগুলি পুনরায় ফিরে আসে। বিশেষ মরসুমে ওজোনের এই হ্রাস পাওয়াকে বলা হয় ওজোনের ছিদ্র। কিন্তু সম্প্রতি কালে এই তথাকথিত ছিদ্রগুলি বড় হতে আরম্ভ করে এবং দীর্ঘস্থায়ী হতে থাকে। ১৯৯২ সালে স্যাটালাইটের মাধ্যমে নেওয়া পরিমাপ প্রকাশ করে যে একটি ওজোন ছিদ্রের দৈর্ঘতা এক রেকর্ড স্থাপন করেছে—এর পরিমাপ ছিল উত্তর আমেরিকার চাইতেও বেশি দীর্ঘ। আর সেই স্থানে আর বেশি ওজোন সংরক্ষিত নেই। এক বিশেষ ধরনের বেলুনের মাধ্যমে পরিমাপ নেওয়ার ফলে দেখা গেছে যে ৬০ শতাংশেরও বেশি ওজোনের হ্রাস ঘটেছে —এর চাইতে কম পরিমাপ নথিভুক্ত তালিকার মধ্যে আর কখনও লক্ষ্য করা যায়নি।
একই সাথে পৃথিবীর অন্যান্য অংশে বায়ুমণ্ডলের উপরিস্থ ভাগে ওজোন স্তরের হ্রাস ঘটেছে। “সাম্প্রতিক পরিমাপ,” নব বিজ্ঞানী নামক পত্রিকাটি বলে, “দেখায় যে . . . ১৯৯২ সালে ৫০ ডিগ্রি উত্তরে এবং ৬০ ডিগ্রি উত্তরের মাঝামাঝি নিম্ন অক্ষাংশে, যার অন্তর্ভুক্ত হল উত্তর ইউরোপ, রাশিয়া ও কানাডা, সেখানে ঘনীভূত ওজোনের মান সাধারণভাবে কমে গেছে। ওজোনের সমতলত্ব সেখানে স্বাভাবিকের চাইতে ১২ শতাংশ কম দেখা যায়, যা ৩৫ বছর ধরে পরীক্ষানিরীক্ষা চালাবার সময়কালীন কখনও দেখা যায়নি।
“এমনকি সবচাইতে শোচনীয় অনুমানগুলিও,” সাইনটিফিক আমেরিক্যান পত্রিকাটি জানায়, “ক্লোরোফিউরোকার্বনসের মাধ্যমে যে হারে ওজোনের হ্রাস ঘটছে তার পরিমাপকে ছোট করে দেখায়। . . . কিন্তু তবুও একই সময় সরকারী ও শিল্প কর্মভুক্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিষেধাজ্ঞার দৃঢ় বিরোধিতা করেন, বিশেষ করে অসমাপ্ত বৈজ্ঞানিক প্রমাণের যে ভিত্তি তার পরিপ্রেক্ষিতে।”
এটা অনুমান করা হয় যে প্রায় দুকোটি টন CFCs ইতিমধ্যেই বায়ুমণ্ডলের মধ্যে মিশে গেছে। যেহেতু বেশ কিছু বছর লাগে CFCs-কে স্ট্র্যাটোসফিয়ারে পৌঁছাতে, অতএব লক্ষ লক্ষ টন এখনও বায়ুমণ্ডলের উপর ভাগে গিয়ে পৌঁছায়নি যেখানে এগুলি ক্ষতিসাধন করে। কিন্তু CFCs-ই একমাত্র ওজোন নষ্টকারী ক্লরিন নয়। “NASA অনুমান করে যে যতবার মহাকাশযান পাঠানো হয় ততবার প্রায় ৭৫ টন ক্লরিন ওজোন স্তরের মধ্যে মিশে যায়,” জনপ্রিয় বিজ্ঞান, (ইংরাজি) পত্রিকাটি জানায়।
এর পরিণতি?
বায়ুমণ্ডলের উপর অংশে ওজোনের যে হ্রাস ঘটছে তার পরিণতি কী হতে পারে এ সম্বন্ধে এখনও পুরোপুরি কোন সঠিক ধারণা পাওয়া যায়নি। কিন্তু একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, ক্ষতিকারক UV (অতি বেগুনি রশ্মির) পরিমাণের হার পৃথিবীতে বেড়ে চলেছে এবং এর ফলে চর্মজনিত ক্যানসার রোগের বৃদ্ধি হচ্ছে। “গত দশকে,” পৃথিবী (ইংরাজি), নামক পত্রিকাটি জানায়, “উত্তর গোলার্ধের উপরে বাৎসরিক হারে যে ক্ষতিকারক অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাব পড়ে থাকে তা প্রায় ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।”
কেবল মাত্র যদি ১ শতাংশ অতি বেগুনি রশ্মির বৃদ্ধি হয়, তাহলে তা ২ থেকে ৩ শতাংশ হারে চর্মজনিত ক্যানসার রোগ বাড়িয়ে তুলতে পারে। আফ্রিকার একটি পত্রিকা গেটআওয়ে, মন্তব্য করে: “প্রতি বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় ৮০০০ এরও বেশি চর্মজনিত ক্যানসারে সদ্য-আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায় . . . আমাদের সবচাইতে কম ওজোনের সুরক্ষা রয়েছে এবং একই সাথে আমাদের সবচাইতে বেশি চর্মজনিত ক্যানসার হচ্ছে (এই দুটির যোগসূত্র একটা হঠাৎ সংঘটিত ঘটনা হিসাবে ধরে নেওয়া যায় না)।”
বায়ুমণ্ডলের উপরিস্থ অংশে ওজোনের ক্ষয় যে চামড়ার ক্যানসারকে বাড়িয়ে তুলবে এ সম্বন্ধে অনেক বছর আগে বিজ্ঞানী রোল্যান্ড ও মলিনা মন্তব্য করেছিলেন। তারা বিশেষকরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবিলম্বে, বায়ুনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে CFCs এর ব্যবহারকে বন্ধ করে দিতে বলেছিলেন। এর বিপদের কথা চিন্তা করে, অনেক দেশ, জানুয়ারি ১৯৯৬ সালের মধ্যে CFCs এর উৎপাদন বন্ধ করে দিতে একমত হয়। কিন্তু, এই মধ্যবর্তী সময়ে, CFCs এর ব্যবহার পৃথিবীর জীবদের ক্ষেত্রে ক্রমাগতভাবে বিপদের সৃষ্টি করে চলেছে।
দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে, ওজোনের হ্রাস, আমাদের জীবন্ত পৃথিবী (ইংরাজি), জানায় “আগে যা ভাবা হয়েছিল তার চাইতে সমুদ্রের অনেক বেশি গভীরে অতি বেগুনি রশ্মিকে প্রবেশ করার সুযোগ দিয়েছে। . . . এর ফলে এক কোষী জীবাণুর উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে যা হল সামুদ্রিক খাদ্য চক্রের ভিত্তি স্বরূপ।” গবেষণার মাধ্যমে এও দেখা গেছে যে অতি বেগুনি রশ্মির বৃদ্ধি শস্য উৎপাদনকে কমিয়ে দিয়েছে, যা সমগ্র পৃথিবীর খাদ্য যোগানের ক্ষেত্রে বিপদ ডেকে আনছে।
অবশ্যই এই CFCs এর ব্যবহার প্রবলভাবে বিপত্তিমূলক। কিন্তু তবুও আমাদের বায়ুমণ্ডল, আরও নানা ধরনের দূষণকারী পদার্থের দ্বারা জর্জরিত। এর মধ্যে একটি হল বায়ুমণ্ডল-সংক্রান্ত গ্যাস যার অতি ক্ষুদ্র অংশ পৃথিবীর প্রাণীদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।
দূষণের প্রভাব
উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে, লোকেরা আরও অধিক পরিমাণে কয়লা, গ্যাস ও তেল জ্বালাতে শুরু করে, যার ফলে বায়ুমণ্ডলের মধ্যে কার্বনডাই অক্সাইডের পরিমাণ বাড়তে থাকে। সেই সময় এই নগণ্য বায়ুমণ্ডল-সংক্রান্ত গ্যাসটির পরিমাণ ছিল প্রতি দশ লাখের মধ্যে প্রায় ২৮৫ ভাগ। কিন্তু মানুষের দ্বারা এই ভূগর্ভস্থ জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়াতে, কার্বনডাই অক্সাইডের পরিমাণ প্রতি দশ লাখে ৩৫০ ভাগ এসে দাঁড়িয়েছে। বায়ুমণ্ডলের মধ্যে এই তাপসংরক্ষণকারী গ্যাসটির বৃদ্ধি কী ফল এনেছে?
অনেকে মনে করেন যে কার্বনডাই অক্সাইডের বৃদ্ধি পৃথিবীর তাপমাত্রাকে তপ্ত করে তুলেছে। অন্যান্য গবেষকেরা আবার বলেন যে, পৃথিবী গরম হয়ে যাওয়ার কারণ হল আমাদের সূর্যের বৈষম্যতা—অর্থাৎ সম্প্রতি কালে এই সূর্য অধিক পরিমাণে তেজ নির্গত করছে।
তবে, যে কোন কারণই হোক না কেন, ১৯৮০-র দশক ছিল উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে নিতে শুরু করা রেকর্ড অনুসারে সবচাইতে উত্তপ্ত। “সেই একই ধারা এই দশকেও চলে আসছে,” দক্ষিণ আফ্রিকার সংবাদপত্র দি স্টার ঘোষণা করে, “যেমন ১৯৯০ সাল ছিল রেকর্ড অনুসারে সবচাইতে উত্তপ্ত বছর, ১৯৯১ ছিল তৃতীয়তম উত্তপ্ত বছর এবং ১৯৯২ সাল . . . ১৪০ বছরের রেকর্ড অনুসারে দশমতম উত্তপ্ত বছর।” কিন্তু গত দুবছরে তাপমাত্রার একটু হ্রাস পাওয়ার কারণ হল যে ১৯৯১ সালে যখন পিনাটুবো পর্বতে বিস্ফোরণ ঘটে তখন সহস্র ধূলিকণা বায়ুমণ্ডলের সাথে মিশে যায়।
ভবিষ্যতে পৃথিবীর উপর তাপমাত্রার এই বৃদ্ধি কী ধরনের প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে গভীর বিতর্ক চলছে। কিন্তু একটা জিনিস স্পষ্ট যে পৃথিবীর এই উত্তপ্ততা ইতিমধ্যেই আবহাওয়া পূর্বাভাসের কাজটিকে কঠিন করে তুলেছে। নব বিজ্ঞানী, মন্তব্য করে যে ভুল পূর্বাভাসের “সম্ভাবনা ক্রমশই বেড়ে যাবে যেহেতু পৃথিবীর উত্তপ্ততা আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটাচ্ছে।”
অনেক জীবনবিমা প্রতিষ্ঠানগুলি ভয় পাচ্ছে যে এই পৃথিবী উত্তপ্ততার ফলে তাদের প্রকল্পগুলি হয়ত অকেজো হয়ে পড়বে। “একের পর [এক] দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়ে,” দি ইকনমিস্ট স্বীকার করে যে, “কিছু পুনরায় বিমাপ্রকল্পকারী প্রতিষ্ঠানগুলি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে নিজেদের অনাবৃত করতে অস্বীকার করছে। আবার কয়েকজন পুরোপুরিভাবে এই ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবছে। . . . তারা অনিশ্চয়তার ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছে।”
এটা উল্লেখযোগ্য যে, ১৯৯০ সালে, যা ছিল রেকর্ড অনুসারে সবচাইতে উত্তপ্ত বছর, উত্তর মেরুর এক বিশাল বরফের চাঁই বেশ খানিকটা দূরে সরে যায়। এর ফলে শতাধিক মেরু-অঞ্চলের শ্বেত ভল্লুকগুলি র্যাঙ্গেল দ্বীপে, একমাসেরও বেশি যাবৎ আটকে পড়ে থাকে। “পৃথিবীর উত্তপ্ততার ফলে,” বি বি সি ওয়াইল্ডলাইফ নামক পত্রিকাটি সতর্ক করে দেয় যে, “এইধরনের পরিস্থিতি . . . হয়ত নিয়মিতভাবে ঘটতে পারে।”
“আবহাওয়া বিশেষজ্ঞেরা,” ১৯৯২ সালের একটি আফ্রিকান সংবাদপত্র জানায় “মনে করেন যে পৃথিবীর উত্তপ্ততার ফলে দক্ষিণ মেরু থেকে ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় তুষারস্তূপগুলি উত্তর দিকে সরে গিয়ে দক্ষিণ অতলান্তিকের জাহাজগুলির অসুবিধা করছে।” পৃথিবী পত্রিকাটির ১৯৯৩ সালের জানুয়ারি মাসের সংস্করণ অনুযায়ী, দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলস্থ সমুদ্রপৃষ্ঠের ক্রমান্বয়িক বৃদ্ধির, একটি আংশিক কারণ হল, জল গরম হয়ে যাওয়া।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হল যে, মানুষেরা এখনও প্রচুর পরিমাণে বিষাক্ত গ্যাস বায়ুমণ্ডলের মধ্যে মিশিয়ে চলেছে। “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে,” দি আর্থ রিপোর্ট ৩, নামক বইটি জানায় যে, “১৯৮৯ এর আবহাওয়া সংরক্ষণ প্রতিনিধির একটি রিপোর্ট অনুমান করে যে প্রতি বছরে ৯,০০,০০০ টনেরও বেশি বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ বাতাসের মধ্যে মিশান হয়ে থাকে।” এই সংখ্যাটি তুলনামূলকভাবে কম বলে বিবেচিত হয়েছে যেহেতু লক্ষ লক্ষ গাড়ির থেকে যে নির্গত ধোঁয়াগুলি, সেগুলিকে এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
এছাড়াও বায়ু দূষণের ভয়াবহ খবরগুলি আসে শিল্পপ্রধান দেশগুলি থেকে। বিশেষকরে সাম্প্রতিক প্রকাশিত একটি ভয়ঙ্কর খবর হল সাম্যবাদী শাসন কালে পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলিতে অনিয়ন্ত্রিত বায়ু দূষণের বিষয়টি।
পৃথিবীর গাছপালা, যা কার্বনডাই অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন নির্গত করে, এগুলি সেই বিষাক্ত বায়ুর কবলে পড়ে। নব বিজ্ঞানী, জানায় যে: “জার্মানির গাছগুলি ক্রমশই রুগ্ন হয়ে পড়ছে, . . .কৃষি মন্ত্রির উক্তি অনুসারে, [যিনি বলেছিলেন] বায়ু দূষণ হল অরণ্যের রুগ্ন স্বাস্থ্যের একটি অন্যতম কারণ।”
একই পরিস্থিতি দক্ষিণ আফ্রিকার ট্রান্সভাল হাইভেল্ডে দেখা যায়। “অ্যাসিড বৃষ্টির ফলে যে ক্ষতি হয়েছে তার প্রথম চিহ্ন প্রতীয়মান হয় পূর্ব ট্রান্সভাল অঞ্চলে যেখানে দেবদারু গাছের সূচাকৃতি পাতাগুলি সতেজ ও গাঢ় সবুজ রঙের পরিবর্তে এক রুগ্ন বিচিত্র খয়েরি রঙে পরিণত হচ্ছে,” জেমস ক্লার্ক তার পৃথিবীতে ফিরে আসা (ইংরাজি) নামক, বইটিতে মন্তব্য করেন।
এইধরনের খবর সমগ্র পৃথিবী থেকে আসে। কোন দেশ এর থেকে বাদ পড়ে না। আকাশ-ছোঁয়া চিমনিগুলির মাধ্যমে, শিল্পপ্রধান দেশগুলি প্রতিবেশী দেশগুলিতে দূষণ ছড়াচ্ছে। শিল্পপ্রগতির লিপ্সা সম্বন্ধীয় মানুষের রেকর্ড কোন আশার সূচনা করে না।
কিন্তু তবুও, আশাবাদী হওয়ার একটা ভিত্তি রয়েছে। আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে আমাদের এই দুর্লভ বায়ুমণ্ডলটি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে। পরবর্তী প্রবন্ধটির মধ্যে দেখুন যে তা কী করে সম্পাদিত হবে। (g94 12/22)
[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
উপরিস্থ বায়ুমণ্ডলে ওজোনের ক্ষয় চর্মজনিত ক্যানসার বাড়িয়ে তুলছে
[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
এইধরনের দূষণের পরিণতি কী?