আমাদের বায়ুমণ্ডল কিভাবে রক্ষা পাবে
মানুষ কি স্বেচ্ছায় আকাশকে আবর্জনাপূর্ণ করে তোলার থেকে বিরত হবে? এইভাবেই কি আমাদের বায়ুমণ্ডল রক্ষা পাবে?
না। আমাদের এই দুর্লভ বায়ুমণ্ডলের রক্ষা কোন মানুষের ইচ্ছা প্রযুক্ত দূষণ প্রতিরোধক ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল নয়। বরঞ্চ যাঁর সর্বোচ্চ ক্ষমতা রয়েছে তাঁরই হস্তক্ষেপের মাধ্যমে কেবল মাত্র পরিচ্ছন্ন বায়ুমণ্ডলই নয়, কিন্তু পৃথিবীও পরিচ্ছন্ন হবে।
সৃষ্টিকর্তা যে পৃথিবী ও তার প্রাণী সম্বন্ধে চিন্তা করেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় যে রকম অপূর্ব পদ্ধতিতে তিনি তা তৈরি করেছেন তার মাধ্যমে। তিনি এটিকে এমনভাবে বানিয়েছেন যাতে করে তা চিরকাল অবিচলিত থাকতে পারে।—গীতসংহিতা ১০৪:৫, ২৪.
সংরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা
উদাহরণস্বরূপ, আমাদের বায়ুমণ্ডল এমনভাবে সৃষ্টি হয়েছে যে এটি আপনা থেকেই সংস্কারিত ও সংশোধিত হতে পারে। বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগের ওজোনের কথা বিবেচনা করুন। ওজোনের যে আবরণ তা এমন সূক্ষ্মভাবে তৈরি হয়েছে যে তা অতি বেগুনি রশ্মির তেজকে টেনে নেয় যা পৃথিবীর মানুষদের জন্য মৃত্যুজনক হতে পারে। কিন্তু একই সাথে এটি কিছুটা নিরাপদমূলক আলো দিয়ে থাকে যা পার্থিব জীবনের জন্য প্রয়োজন।
আমরা আগে জেনে ছিলাম যে মনুষ্য-নির্মিত ক্লোরোফিউরোকার্বনসের মাধ্যমে ওজোনের আবরণ অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যেগুলি বায়ুমণ্ডলের উপরাংশের দিকে ধাবিত হয়। কিভাবে ওজোনের এই রক্ষামূলক আবরণকে পুনরুদ্ধার করা যেতে পারে? অবাকের বিষয় হল যে সৃষ্টিকর্তা এটিকে এমনভাবে তৈরি করেছেন যে এটি নিজের থেকেই আবার সংস্কারিত হয়। হ্যাঁ, এই ওজোন ক্রমাগতভাবে বায়ুমণ্ডলের উপরিস্থ অংশে সৃষ্টি হতে থাকে—বস্তুতপক্ষে সেই একই বিপজ্জনক রশ্মির সাহায্যে যেগুলি ওজোনের দ্বারা পরিশোধিত হয়ে থাকে! অতএব একাধারে যখন মানুষের তৈরি দূষণগুলি ওজোনকে নষ্ট করছে, তখন তারই সাথে কিছু ওজোন আবার সংশোধিত হচ্ছে।
একই পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যায় বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরে, যেখানে ৫০ কোটি কোটি টনেরও বেশি বায়ুর অধিকাংশ ভাগ পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক চক্র অদ্ভুতভাবে দ্রুতগতিতে আবর্জনাপূর্ণ বায়ুকে পরিষ্কার করে দেয়। দ্যা ওয়ার্ল্ড বুক এনসাইক্লোপিডিয়া মন্তব্য করে: “বাতাস দূষণকারী পদার্থগুলিকে ছড়িয়ে দেয় এবং বৃষ্টি ও বরফ এগুলিকে মাটির মধ্যে ধুয়ে দেয়।”
এটা তাহলে স্পষ্ট যে, মানুষ যদি বায়ু দূষণ বন্ধ করে দেয়, অথবা ব্যাপক হারে তা কমিয়ে দেয়, তাহলে খুব শীঘ্রই সর্বস্থানে মিষ্টি ও সুগন্ধ হাওয়া ছড়িয়ে পড়বে। তবুও উপরোক্ত তথ্যমূলক বইটি সমস্যাটিকে চিহ্নিত করে এই ব্যাখ্যা দিয়ে যে: “অনেক অঞ্চলে যত না তাড়াতাড়ি আবহাওয়ার মাধ্যমে দূষণকারী পদার্থগুলিকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়, তার চাইতেও অনেক বেশি তীব্র বেগে হাওয়ার মধ্যে এগুলিকে বিচরণ করা হয়ে থাকে।”
তাহলে কিভাবে মানুষের এই স্বার্থপরমূলক বায়ুমণ্ডল দূষণকে বন্ধ করা যাবে?
এক পরিচ্ছন্ন পৃথিবী সন্নিকট
দূষণ একমাত্র ঈশ্বরের মাধ্যমেই বন্ধ হবে, যখন তিনি হস্তক্ষেপ করবেন। বাইবেল ভবিষ্যদ্বাণী করে যে তিনি “পৃথিবীনাশকদিগকে নাশ” করবেন। (প্রকাশিত বাক্য ১১:১৮) তিনি কখনও লোভী মানুষকে ক্রমাগত এই অপূর্ব পৃথিবী ও তার জীবন-সংরক্ষণকারী বায়ুমণ্ডলকে দূষিত করতে দেবেন না। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন: “দুরাচারগণ উচ্ছিন্ন হবে, কিন্তু যারা যিহোবার অপেক্ষা করে, তারাই পৃথিবীর অধিকারী হবে।”—গীতসংহিতা ৩৭:৯, NW.
এই দুরাচারদের শেষ কিভাবে আনা হবে? এটি ঈশ্বরের স্বর্গীয় সরকার, তাঁর রাজ্যের মাধ্যমে আনা হবে, যা মানুষের অনুপযুক্ত সরকারগুলিকে সরিয়ে দেবে। বাইবেল প্রতিজ্ঞা করে: “স্বর্গের ঈশ্বর এক রাজ্য স্থাপন করিবেন, তাহা কখনও বিনষ্ট হইবে না, . . . তাহা ঐ সকল রাজ্য চূর্ণ ও বিনষ্ট করিয়া আপনি চিরস্থায়ী হইবে।” (দানিয়েল ২:৪৪) ঈশ্বরের এই রাজ্য সরকার হল একটি বিষয় যার সম্বন্ধে যীশু তাঁর অনুগামীদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন: “তোমার রাজ্য আইসুক, তোমার ইচ্ছা সিদ্ধ হউক, যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও হউক।”—মথি ৬:১০.
আমাদের পৃথিবীর সম্বন্ধে ঈশ্বরের ইচ্ছা হল এই যে মানুষেরা যেন তাঁর রাজ্যের শাসনাধীনে এক দূষণমুক্ত আবহাওয়ায় জীবন উপভোগ করে। এইজন্য ঈশ্বর “পৃথিবীনাশকদিগকে নাশ” করবেন বলে দৃঢ় সঙ্কল্প নিয়েছেন। (প্রকাশিত বাক্য ১১:১৮) উদ্ধার করার কী বিস্ময়কর কাজই না এটি হবে!
কল্পনা করুন যে এমন এক পৃথিবীতে বাস করার সুযোগ হবে যেখানে স্বার্থপর মানুষের দ্বারা কৃত কোন দূষিত বস্তু আর থাকবে না! সেই সময় আমাদের দুর্লভ বায়ুমণ্ডল স্বাস্থ্যকর পরিস্থিতিতে আবার ফিরে আসবে। এটি ঘটবে যখন বাইবেলের এই প্রতিজ্ঞাটি পরিপূর্ণতা লাভ করবে: “দেখ, মনুষ্যদের সহিত ঈশ্বরের আবাস; তিনি তাহাদের সহিত বাস করিবেন, এবং তাহারা তাঁহার প্রজা হইবে; এবং ঈশ্বর আপনি তাহাদের সঙ্গে থাকিবেন, ও তাহাদের ঈশ্বর হইবেন। আর তিনি তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।”—প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪; ২ পিতর ৩:১৩.
ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাযুক্ত ধার্মিক নতুন জগতে পরিত্রাণ পেতে হলে আপনাকে কী করতে হবে? ঈশ্বর যাঁকে তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন তাঁর সম্বন্ধে জানতে হবে ও তাঁর শিক্ষাগুলিকে পালন করতে হবে। (যোহন ৩:১৬; ৭:২৯) এই ব্যক্তি, অর্থাৎ যীশু খ্রীষ্ট, প্রার্থনায় ঈশ্বরকে জানান: “আর ইহাই অনন্ত জীবন যে, তাহারা তোমাকে, একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে, এবং তুমি যাঁহাকে পাঠাইয়াছ, তাঁহাকে যীশু খ্রীষ্টকে, জানিতে পায়।”—যোহন ১৭:৩. (g94 12/22)
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
এক পরিষ্কার দূষণমুক্ত পরমদেশ পৃথিবী সন্নিকট