“এটি আমার দোষ নয়”
বর্তমানে আপনি একজনকে কতবার বলতে শুনেছেন, ‘আমি দুঃখিত। এটি আমার দোষ ছিল। এইজন্য আমি সম্পূর্ণভাবে দায়ী!’? এইরকম সাধারণ সততা খুব কমই শোনা যায়। বস্তুতপক্ষে, বহু ক্ষেত্রে, এমনকি যখন দোষ স্বীকার করা হয়, তখন সকল প্রচেষ্টা থাকে অন্য কারও উপর অথবা অপরাধের গুরুত্ব লাঘব করে এমন অবস্থার উপর দোষ চাপিয়ে দেওয়া যেখানে অপরাধী দাবি করে তার নিয়ন্ত্রণ ছিল না।
এমনকি কেউ কেউ তাদের জীনের প্রতি দোষারোপ করে থাকে! কিন্ত এটি কি ন্যায়সংগত? জীন রহস্যের বিস্ফোরণে (ইংরাজি) নামক বইটি জীন গবেষণার কিছু বিষয়ের লক্ষ্য এবং কার্যকারিতা অনুসন্ধান করে। অষ্ট্রেলিয়ার সাংবাদিক বিল ডীন, তার বইটির পুনর্বিবেচনা করে এই চিন্তাশীল উপসংহারে আসেন: “সম্প্রতি সামাজিক নিয়তিবাদীরা মনে হয় বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে তারা তাদের দর্শনকে সমর্থন করার জন্য প্রায় নির্ভুল প্রমাণ পেয়ে গেছে, তা হল কেউই তাদের কাজের জন্য দায়ী নয়: ‘সম্মানিত বিচারক, ঐ ব্যক্তি স্ত্রীলোকটিকে গলা কেটে হত্যা করতে বাধ্য হয়েছে-—এটি তার জীনের মধ্যে ছিল।’”
প্রকৃতপক্ষে কোন নতুন প্রবণতা নয়
দ্রুত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত এই প্রজন্মে যাকে একজন লেখক “আমি-নই” প্রজন্ম বলে অভিহিত করেন, হয়ত এই প্রবণতা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে পারে। যাইহোক, লিপিবদ্ধ করা ইতিহাস দেখায় যে, “আমি প্রকৃতপক্ষে দোষী নই” এই অজুহাতের মাধ্যমে অন্যদের উপর দোষ চাপিয়ে দেওয়া, মানুষের শুরু থেকেই হয়ে আসছে। আদম এবং হবার প্রথম পাপ, সেই ফল খাওয়া যা ঈশ্বর নিষিদ্ধ করেছিল এবং তারপর তাদের প্রতিক্রিয়া, দোষ-চাপানোর একটি অত্যুত্তম উদাহরণ ছিল। আদিপুস্তক সেই কথোপকথন জানায় যা সেখানে হয়েছিল, যেখানে ঈশ্বর প্রথমে বলছেন: “যে বৃক্ষের ফল ভোজন করিতে তোমাকে নিষেধ করিয়াছিলাম, তুমি কি তাহার ফল ভোজন করিয়াছ? তাহাতে আদম কহিলেন, তুমি আমার সঙ্গিনী করিয়া যে স্ত্রী দিয়াছ, সে আমাকে ঐ বৃক্ষের ফল দিয়াছিল, তাই খাইয়াছি। তখন সদাপ্রভু ঈশ্বর নারীকে কহিলেন, তুমি এ কি করিলে? নারী কহিলেন, সর্প আমাকে ভুলাইয়াছিল, তাই খাইয়াছি।”—আদিপুস্তক ৩:১১-১৩.
সেই সময় থেকে, লোকেরা বিভিন্ন রকমের বিশ্বাস উদ্ভাবন করেছে এবং উদ্ভট অজুহাতগুলি খুঁজেছে যা তাদের কাজগুলির প্রকৃত জবাবদিহিতা থেকে তাদের মুক্ত করতে পারবে। এদের মধ্যে লক্ষণীয় ছিল প্রাচীনকাল থেকেই ভাগ্যের উপর বিশ্বাস। একজন বৌদ্ধ স্ত্রীলোক যে আন্তরিকভাবে কর্মে বিশ্বাস করতেন, বলেছিলেন: “আমি মনে করেছিলাম এর কোন অর্থ নেই যে, এমন কিছু আমি ভোগ করব যা আমি সাথে নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছি এবং যার সম্বন্ধে আমি কিছুই জানি না। আমি এটিকে নিয়তি হিসাবে গ্রহণ করেছিলাম।” জন ক্যালভিন যা শিখিয়েছিলেন সেই নিয়তি মতবাদ দ্বারা পরিপুষ্ট হয়ে খ্রীষ্ট জগতের মধ্যেও ভাগ্যের উপরে বিশ্বাস সার্বজনীন। যাজকবর্গ প্রায়ই শোকার্ত আত্মীয়দের বলে থাকেন যে কিছু দুর্ঘটনায় ঈশ্বরের ইচ্ছা ছিল। তারপরেও, কিছু সদুদ্দেশ্যপূর্ণ খ্রীষ্টানেরা তাদের জীবনে যে সব ভুল হয় তার জন্য শয়তানকে দোষ দিয়ে থাকে।
বর্তমানে, আরও আমরা দেখতে শুরু করেছি যে জবাবদিহিতা বিহীন আচরণ বৈধভাবে এবং সামাজিকভাবে অনুমোদিত। আমরা এমন একটি যুগে বাস করছি যেখানে ব্যক্তিদের অধিকারগুলিকে বৃদ্ধি এবং দায়িত্বগুলিকে কমানো হচ্ছে।
মানব চরিত্রের উপর গবেষণা কথিত বৈজ্ঞানিক প্রমাণ উৎপন্ন করেছে যে কেউ কেউ মনে করে আচরণকে অধিকতর স্বাধীনতা দেওয়া যেতে পারে, যার পরিধি অনৈতিকতা থেকে হত্যা পর্যন্ত। এটি হল ব্যক্তির উপর দোষ না দিয়ে অন্য কিছু বা অন্য কারও উপর দোষ দেওয়ার সমাজের আগ্রহের প্রতিফলন।
আমাদের এই সকল প্রশ্নগুলির উত্তর প্রয়োজন যেমন: বিজ্ঞান আসলে কী খুঁজে পেয়েছে? মানুষের আচরণ কি এককভাবে আমাদের জীনের দ্বারা নির্ধারিত? অথবা অভ্যন্তরীণ এবং বহিরাগত উভয় শক্তি আমাদের আচরণ নির্ধারণ করে? প্রমাণ আসলে কী দেখায়?