শিশুদের যৌন শোষণ—বিশ্বব্যাপী একটি সমস্যা
সুইডেনের সচেতন থাক! সংবাদদাতা কর্তৃক
মানব সমাজ শিশু অপব্যবহার সংক্রান্ত এমন এক বেদনাদায়ক অবস্থার দ্বারা আলোড়িত হচ্ছে যার ব্যাপকতা ও প্রকৃতি সম্বন্ধে সাম্প্রতিক বছরগুলি পর্যন্ত জানা ছিল না। এটি সম্বন্ধে কী করা যেতে পারে তা বিবেচনা করতে, ১৩০টি দেশের প্রতিনিধিরা সুইডেনের ষ্টক্হোমে, বাণিজ্যিকভাবে শিশুদের যৌন শোষণের বিরুদ্ধে প্রথম বিশ্ব সম্মেলনে মিলিত হয়েছিলেন। সুইডেনে সচেতন থাক! এর একজন সংবাদদাতাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
মাগদালেনের বয়স যখন ১৪ বছর, ফিলিপাইনের ম্যানিলায় তাকে বীয়ার বিক্রয়ের একটি দোকানে একজন “তত্ত্বাবধায়িকা” হিসাবে কাজ করার জন্য প্রলুব্ধ করা হয়। প্রকৃতপক্ষে, তার কাজের অন্তর্ভুক্ত ছিল, পুরুষ খরিদ্দারদের একটি ছোট কক্ষে নিয়ে যাওয়া এবং যৌন শোষণার্থে তাদের জন্য নিজের দেহকে বিবস্ত্র করা—গড়ে এক রাতে ১৫ জন পুরুষ এবং শনিবারগুলিতে ৩০ জন। কখনও কখনও, যখন সে মনে করত যে সে আর তা সহ্য করতে পারছে না, তখন তার ম্যানেজার তা চালিয়ে যেতে তাকে জোর করত। পরিশ্রান্ত, বিষণ্ণ এবং অতিষ্ঠে প্রায়ই তার দিন ভোর ৪টায় শেষ হত।
কম্বোডিয়ার নমপেনে সারোন রাস্তার একজন অনাথ কিশোর ছিল। তার সিফিলস্ ছিল এবং সে বিদেশীদের সাথে ‘সমকামী কাজে লিপ্ত’ বলে পরিচিত ছিল। তাকে একটি বৌদ্ধ মন্দিরে থাকার ঘর দেওয়া হয়েছিল, যেখানে একজন প্রাক্তন সন্ন্যাসী তার ‘দেখাশুনা’ করত। কিন্তু এই লোকটিই, ছেলেটিকে যৌন অপব্যবহার করে এবং বিদেশীদের সাথে যৌন-মিলন করতে তাকে প্ররোচিত করে। যখন বৌদ্ধ মন্দিরে সারোনের থাকার ঘর ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল, সে তার মাসির সাথে থাকতে শুরু করে কিন্তু তখনও তাকে পুরুষবেশ্যা হিসাবে রাস্তার কাজ করার জন্য বাধ্য করা হয়।
এইগুলি ভয়াবহ সমস্যার মাত্র দুটি উদাহরণ যা গত বছরের শেষের দিকে বাণিজ্যিকভাবে শিশুদের যৌন শোষণের বিরুদ্ধে বিশ্ব সম্মেলনে আলোচনা করা হয়েছিল। এই কার্যকলাপ কতটা বিস্তৃত? লক্ষ লক্ষ শিশুরা এতে জড়িত—বাস্তবিকই, কেউ কেউ বলেন কোটি কোটি। একজন প্রতিনিধি সমস্যাটি সংক্ষেপে বলেন: “যৌন এবং গৃহস্থালির পণ্যদ্রব্য হিসাবে সন্তানদের ক্রয় এবং বিক্রয় করা হচ্ছে। তারা অভ্যন্তরে বেচা-কেনা এবং চোরাই-চালানের ন্যায় সীমান্ত অতিক্রম করে, বেশ্যালয়ে বন্দী হচ্ছে এবং বিরাট সংখ্যক যৌন শোষকদের কাছে সমর্পণ করতে বাধ্য হচ্ছে।”
সমাবেশের উদ্দেশ্যে তার প্রারম্ভিক বিবৃতিতে, সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী, ওরেন পার্সন এই শোষণকে “সবচেয়ে পাশবিক, অত্যধিক হিংস্র এবং জঘন্য রকমের অপরাধ” বলে অভিহিত করেছেন। রাষ্ট্রসংঘের একজন প্রতিনিধি বলেছেন যে এটি “সবদিক দিয়েই সন্তানদের উপর একটি প্রবল আঘাত . . . , সম্পূর্ণরূপে খারাপ এবং মানব অধিকারের অকল্পনীয় সবচেয়ে ঘৃণ্য অবমাননা।” যৌন উৎপীড়নের মাধ্যমে শিশুদের শোষণ সম্পর্কে নিষ্ঠুরতার অনুরূপ অনেক অভিব্যক্তি বক্তৃতামঞ্চ থেকে এর ব্যাপকতা, প্রকৃতি, কারণ এবং প্রভাবগুলি বিবেচনাপূর্বক সম্পূর্ণ সম্মেলনব্যাপী প্রকাশ করা হয়।
“এর ব্যাপকতা রাষ্ট্রীয় সীমাকে অতিক্রম করেছে এবং এর প্রভাব বংশানুক্রমিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে,” একটি উৎস জানায়। আরেকটি উল্লেখ করে: “আনুমানিক দশ লক্ষ শিশু প্রতি বছর কোটি কোটি ডলারের অবৈধ যৌন ব্যবসায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে।” প্রভাব কী ঘটছে? “শিশুদের উৎকর্ষ, পরিচয় এবং আত্ম-সম্মানের অনুভূতি ধ্বংস হচ্ছে এবং তাদের বিশ্বাস করার ক্ষমতা নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। তাদের শারীরিক এবং আবেগপূর্ণ স্বাস্থ্য অনিশ্চয়তার ঝুঁকিতে রয়েছে, তাদের অধিকার লঙ্ঘন এবং তাদের ভবিষ্যৎ বিপন্ন হচ্ছে।”
কতিপয় কারণ
এই সমস্যার ব্যাপক বৃদ্ধির কিছু কারণ কী? এটি উল্লেখ করা হয়েছিল যে কিছু শিশুদের “পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে, যেমন বেঁচে থাকার জন্য বেশ্যাবৃত্তি দ্বারা জীবিকার্জনে রত হওয়া, তাদের পরিবারগুলিকে সমর্থন যোগাতে সাহায্য করা অথবা বস্ত্র এবং দ্রব্যাদির জন্য অর্থ মেটানোর কারণে বেশ্যাবৃত্তির দিকে পরিচালিত করা হয়েছে। অন্যান্যেরা বিজ্ঞাপনের মাধ্যম দ্বারা প্রচারিত খরিদ্দারদের জীবনধারার দ্বারা বিপথে চালিত হয়েছে।” এছাড়া অন্যান্যদের হরণ করা হয়েছে এবং বেশ্যাবৃত্তিতে বাধ্য করানো হয়েছে। কারণগুলির মধ্যে সর্বত্রব্যাপী নৈতিক মানগুলির দ্রুত অবক্ষয় এবং সাধারণ অর্থে নৈরাশ্যকে কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছিল।
অনেক মেয়ে এবং ছেলেরা যৌন পেশায় জড়িত হয়ে পড়ছে পারিবারিক অপব্যবহারের কারণে—বাড়ির মধ্যে হিংস্রতা এবং অজাচার তাদের রাস্তায় পরিচালিত করছে। সেখানে, তারা শিশু যৌন অপব্যবহারকারী এবং অন্যান্যদের দ্বারা অপব্যবহারের ঝুঁকির সম্মুখীন হয়, এমনকি কিছু পুলিশদের দ্বারাও তা দেখা যায়। ব্রাজিলে, সমস্যাটি সম্বন্ধে ভাড়ার জন্য শিশুরা (ইংরাজি) এই শিরোনামের একটি বিবৃতি, ছয় বছর বয়সী ক্যাটিয়া সম্বন্ধে জানায়। যখন সে একটি পুলিশের কাছে ধরা পড়ে, পুলিশ তাকে অশ্লীল কাজ করতে বাধ্য করে এবং হুমকি দেয় যে, যদি সে তার প্রধানকে জানায় তাহলে সে তার পরিবারকে হত্যা করবে। পরদিন সে আরও পাঁচজন পুরুষের সাথে ফিরে আসে, আর সকলেই চেয়েছিল যে সে যেন তাদের জন্য অনুরূপ যৌন আপ্যায়ন করে।
সুইডেনের একটি প্রতিষ্ঠান, শিশুদের পক্ষে তদন্তকারী কর্মকর্তা, প্রতিনিধিদের বলেছিলেন: “যখন শিশু বেশ্যাবৃত্তির কারণগুলি সম্বন্ধে গবেষণা করা হয়েছে, কোন সন্দেহ নেই যে প্রধান কারণগুলির একটি হল পর্যটনে [যৌন] সহবাসের ব্যবস্থা।” একটি বিবরণ জানিয়েছিল: “গত দশ বছর ধরে শিশু বেশ্যাবৃত্তির অবিশ্বাস্য তীব্রতাবৃদ্ধি সরাসরি পর্যটন ব্যবসার দ্বারা ঘটেছে। শিশু বেশ্যাবৃত্তি হল একেবারে নতুন পর্যটক আর্কষণ যা অনুন্নত দেশগুলির মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়।” ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং অন্যান্য জায়গা থেকে “যৌন বিহার,” বিশ্বব্যাপী শিশু বেশ্যাদের জন্য এক বিরাট চাহিদা সৃষ্টি করেছে। ইউরোপের একটি বিমান যৌন বিহারকে উন্নীত করার জন্য যৌনতার স্পষ্ট ভঙ্গিতে, একটি শিশুর চিত্রযুক্ত এক কার্টুন ব্যবহার করছে। প্রতি বছর ট্রাভেল এজেন্সিগুলি হাজার হাজার ব্যক্তির জন্য যৌন বিহারের ব্যবস্থা করে।
এছাড়া এই কারণগুলির দীর্ঘ তালিকায় নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে শিশু-যৌন প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক প্রবর্তনও রয়েছে। অন্যান্য সম্পর্কিত কম্পিউটার প্রযুক্তিগুলির সাথে যুক্ত করে ইন্টারনেটকে অশ্লীল চিত্রের একমাত্র বৃহৎ উৎস হিসাবে রিপোর্ট করা হয়েছে। একইভাবে, অল্প মূল্যের ভিডিও সামগ্রী শিশু অশ্লীল চিত্রের উৎপাদন সহজ করেছে।
তারা কারা?
বহু প্রাপ্তবয়স্কেরা যারা শিশুদের যৌন অপব্যবহার করে, তারা শিশু যৌন অপব্যবহারকারী। একজন শিশু যৌন অপব্যবহারকারীর শিশুদের প্রতি বিকৃত যৌন আকর্ষণ রয়েছে। সুইডেনের শিশুদের পক্ষে তদন্তকারী কর্মকর্তার মতানুসারে, “তারা বয়স্ক, বর্ষাতি পরিহিত অথবা প্রচণ্ড আগ্রাসী ধরনের অগোছাল পুরুষ নয়। একজন বৈশিষ্ট্যসূচক শিশু যৌন অপব্যবহারকারী সুশিক্ষিত মধ্য-বয়স্ক পুরুষ, প্রায়ই যে একজন শিক্ষক, চিকিৎসক, সমাজ-কর্মী অথবা একজন পাদ্রি হিসাবে শিশুদের সাথে কাজ করে থাকে।”
সুইডেনের দলটি ১২ বছর বয়স্ক এক ফিলিপিনো মেয়ে রোসারোর উদাহরণ তুলে ধরে, যে, অস্ট্রিয়া থেকে আগত একজন যৌন পর্যটক, চিকিৎসকের দ্বারা যৌন অপব্যবহৃত হয়েছিল। তার অপব্যবহারের ফলস্বরূপ মেয়েটি মারা গিয়েছিল।
জেনেভার ইউনিসেফ (রাষ্ট্রসংঘের শিশু ত্রাণ তহবিল) এর নির্বাহী পরিচালক, ক্যারোল বেলামি ১২ বছর বয়স্ক ফিলিপিনো মেয়ের বিষয়ে নিম্নলিখিত মন্তব্যটি করেছিলেন: “এটি প্রায়ই শিশুদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে অর্পিত সেই প্রাপ্তবয়স্কেরা, যারা এই অসহনীয় অভ্যাসকে অনুমোদন করে এবং টিকিয়ে রাখে। শিক্ষক, পেশাধারী চিকিৎসক, পুলিশ অফিসার, রাজনীতিবিদ্ এবং যাজক শ্রেণীর সদস্যেরা আছে যারা শিশুদের যৌন শোষণ করতে তাদের প্রতিপত্তি এবং ক্ষমতা ব্যবহার করে।”
ধর্ম জড়িত
ষ্টক্হোমের সম্মেলনে রোমান ক্যাথলিক গির্জার একজন প্রতিনিধি ঘোষণা করেছিলেন যে শিশুদের শোষণ হল “সবচেয়ে দুর্বৃত্তিপূর্ণ অপরাধ” এবং “অগাধ বিকৃতি ও মূল্যবোধের অধপতনের ফল।” তৎসত্ত্বেও, ক্যাথলিক গির্জা তার নিজেরই যাজকবর্গের মধ্যে এইধরনের অভ্যাসগুলি দ্বারা তীব্রভাবে প্রভাবিত হয়েছে।
১৯৯৩ সালের ১৬ই আগস্টে, নিউজউইক সংখ্যার একটি প্রবন্ধ যার শিরোনাম “পাদ্রিবর্গ এবং অপব্যবহার,” “যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাথলিক গির্জার আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ যাজকমণ্ডলী-সংক্রান্ত কেলেংকারী” সম্বন্ধে বিবরণ দিয়েছিল।” এটি উল্লেখ করেছিল: “১৯৮২ সাল থেকে যখন আনুমানিক ৪০০ জন পাদ্রির বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, কিছু গির্জার সদস্যেরা জ্ঞাত তথ্যের ভিত্তিতে জানায় যে ২৫০০ জনের মত পাদ্রি শিশু অথবা কিশোর-কিশোরীদের যৌন অপব্যবহার করেছে। . . . অর্থের চেয়ে, কেলেংকারীই গির্জাকে কঠোর অস্বস্তি ভোগ করতে বাধ্য করেছে—এবং এর নৈতিক ক্ষমতার কিছু ক্ষেত্রেও।” সমগ্র বিশ্বের অন্যান্য ধর্মগুলিও অনুরূপ পরিস্থিতিতে রয়েছে।
যুক্তরাজ্য থেকে একজন যৌন-অপরাধ বিষয়ক উপদেষ্টা রে উইয়ার, ষ্টক্হোম সম্মেলনে দুইজন ছেলে সম্বন্ধে বলেছিলেন, যারা একজন পাদ্রির নিষ্ঠুর ধর্ষণের মাধ্যমে অপব্যবহৃত হয়েছিল। এই ছেলেদের একজন, এখন পাদ্রিদের দ্বারা শিশু অপব্যবহারের শিকারদের জন্য একটি এজেন্সি চালাচ্ছে এবং অন্যজন নিজেই এক অপব্যবহারকারী।
থাইল্যাণ্ড থেকে একজন বৌদ্ধ পণ্ডিত মিদানানদু বাইকু বিবৃতি দিয়েছিলেন যে “কয়েক ধরনের বৌদ্ধ ধর্মীয় রীতিনীতি, থাইল্যাণ্ডে বিভিন্ন পদগুলিতে বাণিজ্যিকভাবে শিশুদের যৌন শোষণের ভার বহন করে থাকে। থাইল্যাণ্ডে স্থানীয় গ্রামগুলিতে, সন্ন্যাসীরা সেই শিশুদের দ্বারা সম্প্রদায়ে ফেরৎ পাঠানো অর্থ দিয়ে কখনও কখনও উপকার লাভ করেছে, যাদের বেশ্যাবৃত্তিতে বাধ্য করানো হয়েছে।”
কী করা যেতে পারে?
যুক্তরাজ্যের লেইসেসটার বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. জুলিয়া ও’কনেল ডেভিডসন, শোষকদের আচরণের বৈধতা প্রতিপাদনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সম্মেলনকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। অপব্যবহারকারীরা প্রায়ই শিশুর কথিত যৌন অসততা এবং অনৈতিকতার প্রতি আলোকপাত করে, যুক্তি দেখায় যে শিশুটি আগেই নৈতিকভাবে অশুদ্ধ এবং ভ্রষ্ট ছিল। অন্যান্য শোষকেরা বিকৃত এবং মিথ্যা দাবি ব্যবহার করে এই বলে যে তাদের কাজগুলির দ্বারা কোন ক্ষতি হবে না এবং সেই শিশুটির উপকার হয়েছে।
পর্যটনে যৌন পর্যটন ব্যবস্থা সম্পর্কিত প্যানেলটি বিদ্যালয় পাঠ্যক্রমে শিক্ষার মাধ্যমে এটিকে বিরোধিতা করার সুপারিশ জানিয়েছিল। এছাড়াও, শিশুদের যৌন শোষণের বিরুদ্ধে তথ্য, ভ্রমণের সর্বত্রব্যাপী ভ্রমণকারীদের কাছে পৌঁছানো উচিত—প্রস্থানের পূর্বে, ভ্রমণের সময় এবং গন্তব্যস্থানে।
নতুন যোগাযোগ প্রযুক্তিগুলির বিষয়ে, একটি প্যানেল পরামর্শ দিয়েছিল যে জাতিগুলিকে সেই সমস্ত উপাদান বর্জন করতে নির্দেশ দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত যা শিশুদের শোষণ করে। এই ক্ষেত্রে কার্যক্রমের সমন্বয়সাধন করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক এজেন্সি স্থাপনের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়েছিল। আরেকটি প্যানেল সুপারিশ করেছিল যে, আইনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট শাস্তিসহ, সমস্ত দেশগুলিতে কম্পিউটার-উদ্ভূত শিশু অশ্লীল চিত্র এবং সর্বজনীনভাবে শিশু অশ্লীল চিত্রের অধিকার অপরাধমূলক দোষ বলে গণনা করা উচিত।
পিতামাতারা কী করতে পারেন? যোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকা সম্পর্কিত প্যানেলটি পরামর্শ দিয়েছিল যে তাদের সন্তানদের রক্ষার দায়িত্ব যেন পিতামাতারা নেন। এটি উল্লেখ করেছিল: “মাধ্যম ব্যবহারকারী হিসাবে যাতে বৃদ্ধি পেতে পারে শুধু সেই বিষয়েই পিতামাতারা সন্তানদের নির্দেশনা দেয় না, বরঞ্চ মাধ্যমের প্রভাবশক্তির ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং বোধশক্তি সহকারে বৃদ্ধি পেতে সন্তানকে সাহায্য করার জন্য সংবাদ সম্বন্ধে অতিরিক্ত তথ্য, ব্যাখ্যা এবং বৈচিত্র্যের উৎসগুলি সরবরাহ করে।”
সুইডেনের একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠান সম্মেলনের উপর প্রতিবেদন তৈরি করে যা পিতামাতাদের তাদের সন্তানদের উপর উত্তম লক্ষ্য বজায় রাখতে এবং বিপদগুলি থেকে তাদের সতর্ক রাখার প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দিয়েছিল। যাইহোক, এটি উপদেশ দিয়েছিল: “শিশুদের শুধুমাত্র ‘নোংরা বয়স্ক লোকেদের’ বিরুদ্ধে সতর্ক করবেন না, কারণ শিশুরা . . . এইজন্য চিন্তা করতে পারে তাদের একমাত্র বয়স্ক, অগোছাল পুরুষদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে, যেখানে ঐ ব্যক্তি যে এইধরনের অপরাধগুলি করে হয়ত একটি ইউনিফর্ম অথবা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সুটে উত্তমভাবে সজ্জিত থাকতে পারে। ফলে, তাদের সতর্ক করুন অপরিচিতদের বিরুদ্ধে যারা তাদের প্রতি অস্বাভাবিক আগ্রহ দেখিয়ে থাকে।” অবশ্যই, শিশুদেরও এই বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া উচিত—এবং কর্তৃপক্ষদের কাছে জানাতে পরামর্শ দিন—যে কোন ব্যক্তি সম্বন্ধে যারা তাদের প্রতি অনুপযুক্তভাবে প্রস্তাবগুলি দিয়ে থাকে, যার অন্তর্ভুক্ত তাদের পরিচিত লোকেরাও রয়েছে।
একমাত্র সমাধান
ষ্টক্হোমের সম্মেলনটি যে বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারেনি তা হল যে কিভাবে সেই কারণগুলি অতিক্রম করা যায় যা শিশুদের যৌন শোষণ করে। এইগুলির অন্তর্ভুক্ত সর্বত্র নৈতিক মানগুলির দ্রুত অবক্ষয়; স্বার্থপরতা বৃদ্ধি এবং বস্তুগত সামগ্রীর প্রতি আকুল আকাঙ্ক্ষা; অবিচার থেকে লোকেদের রক্ষা করার আইনগুলির প্রতি অসম্মান; অপরের মঙ্গল, মর্যাদা এবং অন্যান্যদের জীবনের প্রতি অবজ্ঞা বৃদ্ধি; পারিবারিক ব্যবস্থার দ্রুত ভাঙন; মাত্রাধিক জনসংখ্যা, বেকারত্ব, নগরায়ণ এবং অভিপ্রয়াণের কারণে বহুবিস্তৃত দরিদ্রতা; বিদেশী এবং শরণার্থীদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদ বৃদ্ধি; নেশাকর ওষুধের সবর্দা-বৃদ্ধিশীল উৎপাদন এবং বেচা-কেনা; কলুষিত ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি, রীতিনীতি এবং প্রথাগুলি।
যদিও যৌন উৎপীড়নের মাধ্যমে শিশুদের শোষণ একটি দুঃখজনক বিষয়, কিন্তু তা মনোযোগী বাইবেল পাঠকদের কাছে কোন আশ্চর্যের বিষয় নয়। তা কেন? কারণ আমরা এখন সেই সময়ে বাস করছি যাকে বাইবেল ‘শেষ কাল’ বলে এবং ঈশ্বরের বাক্য অনুসারে, এখন হল “বিষম সময়।” (২ তীমথিয় ৩:১-৫, ১৩) সুতরাং এটি কি কোন আশ্চর্যের বিষয় যে নৈতিকতা উত্তর উত্তর খারাপের দিকে যাবে?
কিন্তু, বাইবেল পৃথিবীর ব্যাপক সমস্যাগুলির একমাত্র সমাধানকে উপস্থিত করে—সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের মাধ্যমে সম্পূর্ণ পরিষ্কার। শীঘ্রই তিনি তাঁর ক্ষমতা প্রকাশ করবেন এবং পৃথিবীর সেই সকল ব্যক্তিদের সরিয়ে দেবেন যারা তাঁর ধার্মিক মান এবং আইনগুলির বাধ্য থাকে না: “সরলগণ দেশে বাস করিবে, সিদ্ধেরা তথায় অবশিষ্ট থাকিবে। কিন্তু দুষ্টগণ দেশ [“পৃথিবী,” NW] হইতে উচ্ছিন্ন হইবে, বিশ্বাসঘাতকেরা তথা হইতে উন্মূলিত হইবে।”—হিতোপদেশ ২:২১, ২২; ২ থিষলনীকীয় ১:৬-৯.
যে সকল ব্যক্তিদের “উন্মূলিত” করা হবে তাদের অন্তর্ভুক্ত সেই ব্যক্তিরা যারা শিশুদের বেশ্যা তৈরি করে এবং কলুষিত সেই পুরুষেরা যারা শিশুদের অপব্যবহার করে। ঈশ্বরের বাক্য জানায়: “যারা ব্যভিচারী . . . কী পারদারিক . . . কী পুরুষ পুরুষদের [অথবা বালকদের] কাছে গমন করে . . . তারা ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাবে না।” (১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০; NW) এটি আরও জানায় যে “যাহারা ঘৃণার্হ, . . . বা বেশ্যাগামী,” তাদের “দ্বিতীয় মৃত্যু”—অর্থাৎ চিরধ্বংসে সমর্পণ করা হবে।—প্রকাশিত বাক্য ২১:৮.
ঈশ্বর পৃথিবীকে পরিষ্কার করবেন এবং সম্পূর্ণভাবে নতুন ও ধার্মিক বিধিব্যবস্থায় “নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর” সূচনা করবেন। (২ পিতর ৩:১৩) তারপর, তাঁর তৈরি নতুন জগতে কলুষিত, কামলালসাপূর্ণ লোকেরা আর কখনও নিরীহদের উপর সুযোগ নিতে পারবে না। আর কখনও নিরীহদের প্রতারিত হওয়ার ভয় করতে হবে না, কারণ “কেহ তাহাদিগকে ভয় দেখাইবে না।”—মীখা ৪:৪.
[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]
“অত্যধিক হিংস্র এবং জঘন্য রকমের অপরাধ”—সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী
[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
“প্রতি সপ্তাহে, ১ থেকে ১.২ কোটি পুরুষেরা অল্পবয়সী বেশ্যাদের কাছে গমন করে।”—দি ইকনমিস্ট, লন্ডন
[১৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
অনুন্নত দেশগুলিতে শিশু শোষণের একটি প্রধান কারণ হল পর্যটনে যৌন বিহার
[১৩ পৃষ্ঠার বাক্স]
যৌন বিহার—কেন?
(পর্যটকেরা কেন শিশুদের সাথে যৌন সহবাসে যুক্ত হয় তার কিছু কারণ)
(১) পর্যটক ছদ্মনাম ব্যবহারের যে সুযোগ উপভোগ করে তা তাকে সামাজিক পারিবারিক চাপ থেকে মুক্ত রাখে।
(২) সামান্য জ্ঞান অথবা স্থানীয় ভাষার বোধগম্যতা না থাকার কারণে, পর্যটকরা সহজেই ভ্রান্ত হয়ে বিশ্বাস করতে পারে যে একটি শিশুর সাথে যৌন সহবাসের বিনিময়ে প্রদানকৃত অর্থাদি অনুমোদিত অথবা শিশুদের দারিদ্র মোচনে সাহায্য করার একটি উপায়।
(৩) বর্ণবাদী আচরণগুলি দর্শনার্থীদের অন্যান্যদের শোষণ করতে পরিচালিত করে, যাদের তারা নিকৃষ্টতম বলে বিবেচনা করে থাকে।
(৪) পর্যটকরা আনন্দিত হয় যখন তারা দেখে যে অনুন্নত দেশগুলিতে যৌনতার কাজগুলি সহজেই সমর্থনযোগ্য।
[১৫ পৃষ্ঠার বাক্স]
সমস্যাটির বিশ্বব্যাপী প্রসার
(বিভিন্ন সরকারি কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য সংগঠনগুলির মাধ্যমে নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলি তালিকাভুক্ত করা হয়েছে)
ব্রাজিল: কমপক্ষে ২,৫০,০০০ জন শিশু বেশ্যা
কানাডা: হাজার হাজার কিশোরীরা সংগঠিত চক্রিদলদের দ্বারা বেশ্যা হচ্ছে
চীন: ২,০০,০০০ থেকে ৫,০০,০০০ জন শিশু বেশ্যা হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে প্রায় ৫,০০০ জন চৈনিক মেয়েকে সীমান্ত অতিক্রম করতে প্রলুব্ধ করা হয় এবং মায়ানমারে বেশ্যা হিসাবে বিক্রয় করা হয়েছে
কলম্বিয়া: বোগোটার রাস্তায় যৌন উৎপীড়নের মাধ্যমে শোষিত শিশুর সংখ্যা গত সাত বছরে পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে
পূর্ব ইউরোপ: ১,০০,০০০ জন শিশু রাস্তায় বাস করে। বহুসংখ্যককে পূর্ব ইউরোপের বেশ্যালয়গুলিতে পাঠানো হয়েছে
ভারত: ৪,০০,০০০ জন শিশু যৌন ব্যবসায় জড়িত
মোজাম্বিক: সাহায্যকারী এজেন্সিগুলি শিশুদের যৌন শোষণের জন্য রাষ্ট্রসংঘ এর শান্তিস্থাপনের বাহিনীকে অভিযুক্ত করেছে
মায়ানমার: প্রতি বছর ১০,০০০ জন মেয়ে এবং নারীকে থাইল্যাণ্ডে বেশ্যালয়গুলিতে নির্বাসিত করা হয়েছে
ফিলিপাইনস্: ৪০,০০০ জন শিশু জড়িত
শ্রীলংকা: ৬ থেকে ১৪ বছরের ১০,০০০ জন শিশু বেশ্যালয়গুলিতে ক্রীতদাস হয়ে আছে এবং ১০ থেকে ১৮ বছরের ৫,০০০ জন পর্যটক বিনোদনের স্থানগুলিতে স্বাধীনভাবে কাজ করছে
তাইওয়ান: ৩০,০০০ জন শিশু জড়িত
থাইল্যাণ্ড: ৩,০০,০০০ জন শিশু জড়িত
যুক্তরাষ্ট্র: সরকারি উৎসগুলি জানায় যে ১,০০,০০০ জনেরও অধিক শিশু জড়িত