শিশুরা বিপদের মধ্যে
“শিশুদের দিকে ঠিক মতো নজর দেওয়া না হলে, মানবসমাজের দীর্ঘকালীন মৌলিক সমস্যাগুলো দীর্ঘকালীন সমস্যা হয়েই থেকে যাবে।”—রাষ্ট্রসংঘের শিশু তহবিল।
সারা পৃথিবীতে শিশুরা বিপদের মধ্যে রয়েছে। এই দুঃখজনক বিষয়টা যে কতটা বড় তার জোরালো প্রমাণ ১৯৯৬ সালে সুইডেনের স্টকহোমে অনুষ্ঠিত শিশুদের বাণিজ্যিক যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিশ্ব সম্মেলনে তুলে ধরা হয়। এতে ১৩০টা দেশের প্রতিনিধিরা যোগ দেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সেখানে প্রমাণ সমেত বলা হয়েছিল যে পৃথিবীর অনেক জায়গায় লক্ষ লক্ষ বাচ্চা মেয়েদের জোর করে পতিতার কাজ করানো হচ্ছে আর তাদের মধ্যে দশ বছরের কম বয়সী মেয়েরাও আছে।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটি ল রিভিউ বলেছিল যে এইরকম জোর করে করানো পতিতাবৃত্তিকে “এই যুগের সবচেয়ে জঘন্য দাসত্ব” বলা হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে শারীরিক, মানসিক ও আবেগগত আঘাতে আঘাতে এই মেয়েদের ক্ষত এত গভীর হয়ে যায় যে সারা জীবনে তা পূরণ হয় না। বেশিরভাগই দেখা যায় যে মেয়েরা পেটের দায়ে এই পাশবিকতাকে মেনে নেয়। তা না হলে তাদের না খেয়ে মরতে হবে। কিন্তু দুঃখের কথা এটাই যে এই অসহায় মেয়েদের তাদের গরিব বাবামাদের জন্যই পতিতা হতে হয়েছে কারণ তারা তাদেরকে পয়সার জন্য বিক্রি করে দিয়েছিলেন।
শিশুদের জন্য আরেকটা দুঃখজনক বিষয় হল শিশুশ্রম যার ওপর সবসময় বিতর্ক হতেই থাকে। এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা ও অন্য কিছু দেশে আর আমেরিকার প্রবাসী সমাজে পাঁচ বছর বয়সের শিশুদের পর্যন্ত জোর করে কাজ করানো হয় যাকে “ক্রীতদাস শ্রমিক” বলা যেতে পারে। তারা এমন খারাপ পরিবেশের মধ্যে ছোট্ট রোবটের মতো কাজ করে যা তাদের কচি শরীর ও মনকে নষ্ট করে দেয়। এদের বেশিরভাগই না পড়াশোনা করতে পারে, না বাবামার ভালবাসা পায়, না তাদের কোন ঘর আছে যেখানে তারা নিজেদের নিরাপদ মনে করবে, না কোন খেলনা আছে, না আছে খেলাধূলা করার জন্য কোন জায়গা। এদের অনেককে তাদের পাষণ্ড বাবামারাই নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে থাকেন।
শিশু সৈনিক আর অনাথ আশ্রমগুলো
দুঃখ আরও বেড়ে যায় যখন দেখা যায় যে গেরিলা বাহিনীগুলোতে শিশু সৈনিকদের ব্যবহার দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। শিশুদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় বা দাস কেনাবেচা হয় এমন বাজার থেকে কিনে নিয়ে গিয়ে তাদের আস্তে আস্তে হিংস্র করে তোলা হয় আর এমনকি তাদেরকে কখনও কখনও কীভাবে হত্যা করা হয় তাও দেখানো হয়ে থাকে। কয়েকজনকে তাদের বাবামাদের পর্যন্ত হত্যা করতে বা নেশাকর ওষুধ নিতে বলা হয়েছে যাতে তাদের মাথায় খুন চেপে যায়।
আফ্রিকায় হাজার হাজার শিশু সৈনিকদের মগজধোলাই করা হয় আর এর ফলে যা হয় তার একটা নমুনা নিচে দেওয়া হয়েছে। একজন সমাজসেবী ও একজন শিশু সৈনিকের মধ্যে এইরকম রক্ত হিম করা কথাবার্তা হয়েছিল, যার মধ্যে দিয়ে সেই শিশুর সরলতা প্রকাশ পেয়েছিল:
“তুমি কি হত্যা করেছ? ‘না।’
তোমার কাছে কি কোন বন্দুক ছিল? ‘হ্যাঁ।’
তুমি কি বন্দুক তাক করেছিল? ‘হ্যাঁ।’
তুমি কি গুলি ছুড়েছিলে? ‘হ্যাঁ।’
কী হয়েছিল? ‘তারা মাটিতে পড়ে গিয়েছিল।’”
এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই যে কেউ কেউ বলেন, একজন ব্যক্তি যখন ছ-সাত বছর বয়সী সৈনিকদের দেখেন তখন “সৈন্যবাহিনী” সম্বন্ধে তার ধারণাই বদলে যায়। রিপোর্টে বলা হয়েছে যে বেশ কিছু সময় আগে, ১৯৮৮ সালেই সারা পৃথিবীতে প্রায় ২,০০,০০০ শিশু সৈনিক ছিল।
কথিত আছে যে এশিয়ার একটা দেশের অনাথ আশ্রমে ১৯৮৮ থেকে ১৯৯২ সালের মধ্যে ৫৫০ জন শিশুকে না খেতে দিয়ে মেরে ফেলা হবে বলে ঠিক করা হয়েছিল আর এদের বেশিরভাগই ছিল মেয়ে। একজন ডাক্তার বলেন: “এই অনাথ শিশুদের ব্যথা দূর করার জন্য কোন ওষুধ ছিল না। এমনকি যখন তারা মারা যাচ্ছিল তখনও তাদেরকে বিছানার সঙ্গে শক্ত করে বেঁধে রাখা হয়েছিল।”
ইউরোপের অবস্থাই বা কেমন? সেখানকার একটা দেশ নড়ে ওঠে যখন আন্তর্জাতিক শিশু পর্ণোগ্রাফি চক্র ধরা পড়ে যা যৌন উৎপীড়নের জন্য মেয়েদের ধরে নিয়ে যেত। কিছু অভাগী মেয়েদের খুন করা হয়েছিল বা না খেতে দিয়ে মারা হয়েছিল।
এই রিপোর্টগুলো দেখায় যে অনেক দেশেই শিশুদের ওপর অত্যাচার করা ও তাদের শোষণ করা একটা বড় সমস্যা। কিন্তু এটাকে বিশ্ব সমস্যা বললে কি বাড়াবাড়ি কিছু হবে? পরের প্রবন্ধ এই প্রশ্নের উত্তর দেবে।
[৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
লাইবেরিয়ায় এক শিশু সৈনিক
[সজন্যে]
John Gunston/Sipa Press
[৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
কলম্বিয়ার এক ইটের কারখানায় শিশুদের ঠেলাগাড়ির মতো করে ব্যবহার করা হয়
[সজন্যে]
UN PHOTO 148000/Jean Pierre Laffont
[৩ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
FAO photo/F. Botts