এইডস—কিভাবে এর সঙ্গে লড়াই করবেন
আজ পর্যন্ত এইডসের কোন চিকিৎসা নেই আর শীঘ্রিই এর কোন চিকিৎসা আবিষ্কার করা যাবে বলেও মনে হয় না। আজকাল এমন ওষুধ বেরিয়েছে যা রোগকে তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়তে দেয় না কিন্তু এর সবচেয়ে ভাল চিকিৎসা এটাকে দেহে ঢুকতেই না দেওয়া তা এখনও হয়নি। কিন্তু কী করে এর সঙ্গে লড়াই করা যায় তা আলোচনা করার আগে, আসুন আমরা দেখি যে এইডস ভাইরাস (এইচআইভি) কিভাবে একজন থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায় এবং কিভাবে ছড়ায় না।
একজন ব্যক্তি প্রধানত চারটে উপায়ে আক্রান্ত হতে পারেন: (১) সংক্রমিত সূচ কিংবা সিরিঞ্জ ব্যবহার করে, (২) আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে (যোনিপথে, পায়ুপথে কিংবা মৌখিকভাবে) যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে, (৩) দেহে রক্ত কিংবা রক্তের অন্য উপাদানগুলো গ্রহণ করে, যদিও উন্নত দেশগুলোতে এই ভয় কমে গেছে কারণ সেখানে এখন রক্তে এইচআইভি প্রতিরোধী উপাদান আছে কিনা তা দেখার জন্য পরীক্ষা করা হচ্ছে আর (৪) এইচআইভি আক্রান্ত মায়ের কাছ থেকে, যিনি প্রসবের আগে বা প্রসবের সময় কিংবা দুধ খাওয়ানোর সময় সন্তানের দেহে এই রোগ ছড়িয়ে দিতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার্স ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এর মতানুযায়ী, আধুনিক বৈজ্ঞানিক প্রমাণ বলে যে (১) আপনার যেভাবে সর্দিকাশি বা জ্বর হয় সেভাবে এইডস হবে না, (২) এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির পাশে বসলে কিংবা তাকে স্পর্শ করলে বা জড়িয়ে ধরলে আপনি এইডসে আক্রান্ত হবেন না, (৩) আক্রান্ত ব্যক্তির হাত লাগানো, বানানো, বা পরিবেশন করা খাবার খেলেও আপনি সংক্রামিত হবেন না এবং (৪) আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে একই টয়লেট, ফোন, কাপড়চোপড় কিংবা থালাবাসন ব্যবহার করলেও আপনার এইডস হবে না। সিডিসি আরও বলে যে এই ভাইরাস মশা কিংবা অন্য কোন কীটপতঙ্গের মাধ্যমেও ছড়ায় না।
প্রতিরোধের প্রধান রাস্তাগুলো
এইডস ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে যদি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়, তবে হয়তো সূচ কিংবা সিরিঞ্জে কিছু রক্ত লেগে থাকতে পারে যাতে ভাইরাস থাকে। এবার অন্য কোন ব্যক্তিকে ওই সূচ দিয়ে ইঞ্জেকশন দেওয়া হলে, ভাইরাস তার দেহে ঢুকে যেতে পারে। তাই সূচ কিংবা সিরিঞ্জ সম্বন্ধে আপনার মনে কোন সন্দেহ থাকলে, ডাক্তার বা নার্সকে জিজ্ঞাসা করতে কখনও ভয় পাবেন না। আপনার জানার অধিকার আছে কারণ এটা আপনার জীবন মৃত্যুর প্রশ্ন।
এছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তির শুক্র কিংবা যোনিপথে নিঃসৃত রসে এইডস ভাইরাস থাকে। এইজন্য, প্রতিরোধের বিষয়ে সিডিসি পরামর্শ দেয়: “যৌন সম্পর্ক না রাখাই হল একমাত্র নিশ্চিত সুরক্ষা। আর আপনি যদি কারও সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতেই চান, তবে আক্রান্ত নন এমন একজন ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ের মতো এক দীর্ঘস্থায়ী পারস্পরিক বিশ্বস্ত সম্পর্ক তৈরি না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।”
লক্ষ্য করুন যে এইডস থেকে বাঁচতে চাইলে, আপনাকে অবশ্যই ‘পারস্পরিক বিশ্বস্ত সম্পর্ক’ বজায় রাখতে হবে। যদি আপনি বিশ্বস্ত হন কিন্তু আপনার সাথি বিশ্বস্ত নয়, তাহলে আপনি নিরাপদ নন। আর এই বিপদ প্রায়ই সেইরকম সমাজে মহিলাদের জন্য খুব বেশি হয় যেখানে পুরুষেরা তাদের ওপর অধিকার চালায় তা সে যৌনতার ক্ষেত্রে হোক বা টাকাপয়সার ক্ষেত্রে। কিছু দেশে স্ত্রীরা পুরুষদের সঙ্গে যৌনতার বিষয়ে কোন কথা পর্যন্ত বলতে পারেন না, নিরাপদ যৌন সম্পর্কের বিষয়ে আলোচনা করা তো দূরের কথা।
তবে, সব মহিলাই এতখানি অসহায় নন। পশ্চিম আফ্রিকার একটি দেশে নেওয়া এক সমীক্ষা দেখিয়েছিল যে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী কিছু মহিলা তাদের আক্রান্ত স্বামীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক রাখেন না আর তারজন্য তাদের সঙ্গে জোর-জবরদস্তীও করা হয় না। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে, কিছু মহিলা সেইসব পুরুষদের সঙ্গে যৌন সহবাস করতে রাজি হননি যারা কনডম ব্যবহার করতে চান না। রবারের কনডমগুলো যদিও এইচআইভি ও অন্য যৌন সংক্রামক রোগগুলো থেকে সুরক্ষা দিতে পারে কিন্তু সেগুলোকে ঠিকভাবে এবং সবসময় ব্যবহার করতে হবে।
কখন পরীক্ষা করাবেন
আগের প্রবন্ধে যার কথা বলা হয়েছিল সেই ক্যারন নিজেকে এইডস থেকে বাঁচানোর জন্য বলতে গেলে কিছুই করতে পারেননি। তার স্বামী বিয়ের কয়েক বছর আগেই আক্রান্ত হয়েছিলেন আর তাদের বিয়েও এমন এক সময়ে হয়েছিল যখন এই রোগ এবং এইচআইভি পরীক্ষা সবে শুরু হয়েছিল। কিন্তু, এখন এইচআইভি পরীক্ষা কিছু দেশে একেবারে সাধারণ ব্যাপার হয়ে গিয়েছে। তাই কোন ব্যক্তির যদি সন্দেহ হয় যে তার এইচআইভি আছে কি নেই তবে বুদ্ধিমানের কাজ হবে যে প্রেম করার আগেই পরীক্ষা করে নেওয়া। ক্যারন পরামর্শ দেন: “বিয়ে করার জন্য খুব ভেবেচিন্তে সাথি বাছুন। একটা ছোট ভুলের জন্য আপনাকে অনেক বড় মূল্য দিতে হতে পারে এমনকি আপনার জীবন পর্যন্ত।”
যদি কেউ নিজের স্বামী বা স্ত্রীকে ছেড়ে অন্য কারও সঙ্গে সহবাস করেন, তবে নির্দোষ সাথিকে রক্ষা করার জন্য পরীক্ষা করা ঠিক হবে। যেহেতু এইচআইভি সংক্রামিত হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে ধরা পড়ে না, তাই হয়তো কয়েকবার পরীক্ষা করাতে হতে পারে। যদি ব্যভিচারী সাথির সঙ্গে আবারও যৌন সম্পর্ক শুরু করা হয় (যার মানে হচ্ছে যে ব্যভিচারী সাথিকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে), তবে সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য কনডম ব্যবহার করা ঠিক হবে।
এই বিষয়ে জানা কিভাবে সাহায্য করতে পারে?
যদিও বাইবেল এইডস আসার অনেক অনেক বছর আগেই লেখা হয়েছে, তবুও লক্ষ্য করার বিষয় হল যে এর নীতি মেনে জীবনযাপন করলে তা এই রোগ থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, বাইবেল বিয়ের বাইরে যৌন সম্পর্ক রাখাকে নিষেধ করে, স্বামী স্ত্রীকে একে অপরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার পরামর্শ দেয় এবং আরও বলে যে খ্রীষ্টানদের কেবল সেই খ্রীষ্টানদেরকেই বিয়ে করা উচিত যারা বাইবেলের নীতি অনুযায়ী জীবনযাপন করেন। (১ করিন্থীয় ৭:৩৯; ইব্রীয় ১৩:৪) এছাড়াও এটা সবরকম নেশাকর দ্রব্যের অপব্যবহার এবং রক্ত নেওয়াকে নিষেধ করে কারণ এই বিষয়গুলো দেহের ক্ষতি করে থাকে।—প্রেরিত ১৫:২০; ২ করিন্থীয় ৭:১.
এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে মেলামেশা করার মধ্যে যে ঝুঁকি ও বিপদগুলো রয়েছে তা ভালো করে জেনে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। এইডস সম্বন্ধে জানা থাকলে লোকেরা এটা থেকে নিজেদেরকে বাঁচাতে পারবেন।
এইডস অ্যাকশন লীগ বলে: “বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এইডস থেকে বাঁচা যায়। যতদিন পর্যন্ত না এইডসের চিকিৎসা বের হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত এই রোগের বিষয়ে ঠিক করে জানাই হল সবচেয়ে ভাল এবং [সাবার জন্য] বাঁচার একমাত্র পথ।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) ভালো হবে যদি বাবামারা নিজেরা ও ছেলেমেয়েদের সঙ্গে খোলাখুলিভাবে এইডস নিয়ে কথা বলেন।
কোন্ কোন্ চিকিৎসা আছে?
এমনিতে সাধারণত এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার ছয় থেকে দশ বছর পরই রোগের লক্ষণগুলো দেখা যায়। কিন্তু এই সময়ে, দেহের মধ্যে এক লুকানো লড়াই চলতে থাকে। প্রত্যেকটা ভাইরাস সংখ্যায় বাড়তে থাকে এবং আমাদের রোগ প্রতিরোধী কোষগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। আর রোগ প্রতিরোধী কোষগুলোও এর সঙ্গে লড়াই করে। কিন্তু প্রতিদিন কোটি কোটি নতুন ভাইরাস জন্ম নেওয়ায় রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা হেরে যায় আর একসময় আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারে শেষ হয়ে যায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও বাড়ানোর জন্য নানা ধরনের ওষুধ বের হয়েছে। এই ওষুধগুলোর বড় বড় নামও আছে যেজন্য তাদের সংক্ষিপ্ত নাম যেমন এজেডটি, ডিডিআই এবং ডিডিসি রাখা হয়েছে। যদিও কেউ কেউ মনে করেছিলেন যে এই ওষুধগুলো খুব উপকারী হবে আর ভাল কাজ করবে এমনকি খুব তাড়াতাড়িই এই রোগকে শেষ করে দেবে কিন্তু অল্প দিনের মধ্যেই তাদের আশা ধুলোয় মিশে যায়। সময় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এগুলো শুধু কার্যক্ষমতাই হারায়নি সেইসঙ্গে এতে কিছু লোকের মারাত্মক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও দেখা দেয়, যেমন তাদের রক্তের অণুকোষ কমে যায়, রক্ত জমাট বেঁধে যায় এবং হাত পায়ের স্নায়ু বিকল হয়ে পড়ে।
এখন এক নতুন ওষুধ বের হয়েছে যেটাকে প্রোটিজ ইনহিবিটর বা প্রোটিন খাদক বলা হয়। ডাক্তাররা এই ওষুধটার সঙ্গে আরও দুটো ভাইরাস প্রতিরোধী ওষুধ খেতে বলেন যাকে ট্রিপল থেরাপি বলা হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা দেখিয়েছে যে এই ট্রিপল থেরাপি যদিও ভাইরাসকে শেষ করে দিতে পারে না কিন্তু এটা দেহের ভিতরে ভাইরাসকে আর বাড়তে দেয় না।
এই চিকিৎসা আক্রান্ত ব্যক্তিকে আগের চেয়ে অনেকটা সুস্থ বোধ করায়। কিন্তু, ডাক্তাররা মনে করেন যে এই ওষুধ এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে অর্থাৎ রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়ার আগেই যদি দেওয়া যায় তবে তা সবচেয়ে ভাল কাজ করে। যদি এইরকম প্রথম পর্যায়েই চিকিৎসা করা যায়, তাহলে আশা করা যায় যে এই সংক্রমণ কোনদিনই এইডস হওয়ার পর্যায় পর্যন্ত হয়তো না পৌঁছাতেও পারে। যেহেতু এই চিকিৎসাপদ্ধতি নতুন, তাই শুধু সময়ই বলবে যে কত দিন পর্যন্ত এই ওষুধ সংক্রমণকে ঠেকিয়ে রাখবে।
এছাড়া এই চিকিৎসার খরচ আকাশছোঁয়া। ভাইরাস প্রতিরোধী ওষুধ তিনটের দাম এবং বিভিন্নরকম পরীক্ষানিরীক্ষা করানোর খরচ বছরে প্রায় ৪,৮০,০০০ টাকা। এতে শুধু জলের মতো টাকাই যায় না কিন্তু এরজন্য রোগীর ফ্রিজও থাকা দরকার। আর কিছু রোগীর জন্য বিছানা থেকে বার বার উঠে ফ্রিজ পর্যন্ত যাওয়াও খুব কষ্টকর হয় কারণ এই ওষুধগুলো ফ্রিজেই রাখতে হয়। কোন কোন রোগীকে দিনে দুবার, আবার কাউতে কাউকে দিনে তিনবার ওষুধ খেতে হয়। কোনটা খালি পেটে খেতে হয়, আবার কোনটা ভরা পেটে। চিকিৎসা আরও জটিল হয়ে পড়ে যখন রোগীকে অন্যান্য সংক্রামণ থেকে বাঁচার জন্য অন্য ওষুধ খেতে হয় কেননা এইডস রোগী এতই দুর্বল হয়ে পড়েন যে সহজেই অন্য রোগগুলো হতে থাকে।
ডাক্তারদের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা হল যে যদি একজন ব্যক্তি ট্রিপল থেরাপি নেওয়া বন্ধ করে দেন তাহলে কী হবে। ভাইরাসের সংখ্যা তখন বাঁধাহীনভাবে বেড়ে চলবে আর চিকিৎসা চলাকালীন যে ভাইরাসগুলো বেঁচে গিয়েছিল সেগুলোর ওপর প্রথমে খাওয়া ওষুধগুলো আর কোন কাজ করবে না। নতুন করে জন্ম নিয়েছে এমন ওষুধ-প্রতিরোধী এইচআইভি ভাইরাসগুলোকে ঠেকিয়ে রাখা তখন আরও কঠিন হবে। এছাড়াও, খুবই শক্তিশালী এই ভাইরাসগুলো অন্য লোকেদের দেহে সংক্রমিত হতে পারে।
প্রতিষেধক টীকাগুলোই কি সমাধান?
কিছু এইডস গবেষকরা মনে করেন যে বিশ্ব জুড়ে এইডস মহামারীকে রোধ করার প্রধান রাস্তা হল এক নিরাপদ, কার্যকারী প্রতিষেধক টীকা। পীতজ্বর, হাম, মাম্পস্ এবং জার্মানি হামের প্রতিষেধক টীকাগুলো বানানোর জন্য এই রোগেরই দুর্বল ভাইরাস ব্যবহার করা হয়। যখন কোন দুর্বল ভাইরাসকে দেহে ঢুকানো হয়, তখন রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শুধু এটাকেই শেষ করে না কিন্তু সেইসঙ্গে এমন প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে যা আসল ভাইরাসের সঙ্গেও লড়তে পারে।
বাদরের ওপর করা দুটো সাম্প্রতিক পরীক্ষা দেখায় যে এইচআইভি ভাইরাসের মূল সমস্যাটা হল, দুর্বল ভাইরাসও মারাত্মক হতে পারে। অন্য কথায় বলা যায় যে, টীকা নেওয়াই হয়তো সেই রোগের কারণ হতে পারে যেটা না হওয়ার জন্য টীকা নেওয়া হয়েছিল।
টীকা তৈরির গবেষণা শুধু নিরাশাই নিয়ে এসেছে। যদিও গবেষণা করে অনেক ওষুধ তৈরি করা হয়েছে কিন্তু এগুলো এইচআইভি-র কিছুই করতে পারেনি, তবে এই গবেষণার ফলে পাওয়া ওষুধগুলো কম শক্তিশালী ভাইরাসকে সম্পূর্ণ শেষ করতে পারতো। অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায় কারণ এইচআইভি পরিবর্তিত হয়ে এক নতুন জাতে পরিণত হয় যা সব ওষুধের ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। (আজ পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে এইচআইভির কমপক্ষে দশটা গোত্র পাওয়া যায়) আরও একটা সমস্যা হল যে এই ভাইরাস রোগ প্রতিরোধী কোষগুলোকে সরাসরি আক্রমণ করে, যখন প্রতিষেধক টীকার কাজ হল এই কোষগুলোকে রক্ষা করার জন্য শক্তি যোগানো।
গবেষণার জন্য পয়সার প্রয়োজন। ওয়াশিংটন-বেস্ড ইন্টারন্যাশনাল এইডস ভ্যাক্সিন ইনিসিয়েটিভ সংস্থা বলেছিল যে “ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো হাত লাগাতেই চায় না।” এর কারণ হিসাবে বলা হয় যে, এই টীকা থেকে খুব বেশি মুনাফা পাওয়া যাবে না কারণ এর বেশিরভাগ ওষুধই গরিব দেশগুলোতে বেচা হবে।
এই অসুবিধাগুলো থাকা সত্ত্বেও, গবেষকরা একটা সফল প্রতিষেধক টীকা আবিষ্কার করার জন্য বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা করে চলেছেন। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত মনে হয় না যে শীঘ্রিই কোন প্রতিষেধক টীকা বানানো যাবে। আর যদি এইরকম একটা সফল প্রতিষেধক টীকা বানানোও যায়, তখন আর এক সমস্যা দেখা দেবে আর তা হল এর পেছনে পরিশ্রম ও খরচ আর এটা মানুষের ওপর পরীক্ষা করে দেখা।
[৫ পৃষ্ঠার বাক্স]
কারা এইচআইভিতে আক্রান্ত হন?
বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় ১৬,০০০ হাজার লোক আক্রান্ত হচ্ছেন। বলা হয় যে এদের প্রায় ৯০ শতাংশই উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বাস করেন। প্রতি ১০ জনের মধ্যে ১ জন বাচ্চা যার বয়স ১৫ বছরের চেয়ে কম। বাকি সবাই প্রাপ্তবয়স্ক, যাদের মধ্যে ৮০ শতাংশেরও বেশি মহিলা আর তাদের অর্ধেকেরও বেশি মহিলার বয়স ১৫ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে—ওয়ার্ল্ড হেলথ্ অরগানাইজেশন অ্যান্ড জয়েন্ট ইউনাইটেড নেশনস্ প্রোগ্রাম অন এইচআইভি/এইডস।
[৭ পৃষ্ঠার বাক্স]
এইচআইভি ও এইডসের মধ্যে সম্পর্ক
এইচআইভির পুরো নাম হচ্ছে “হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস।” এই ভাইরাস দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দেয়। এইডসের পুরো নাম হল “একোয়ার্ড ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি সিনড্রম।” এটাই হচ্ছে এইচআইভি আক্রমণের সবচেয়ে শেষ ও জীবন নাশকারী পর্যায়। এর নাম থেকেই বোঝা যায় যে এইচআইভি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে খুবই খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে যার ফলে রোগীর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এতটাই দুর্বল হয়ে যায় যে তার পক্ষে সংক্রমণকে ঠেকিয়ে রাখা আর সম্ভব হয় না।
[৬ পৃষ্ঠার বাক্স//চিত্র]
কিভাবে আপনি বুঝবেন যে কে আক্রান্ত?
একজন ব্যক্তির চেহারা দেখে আপনি বলতে পারবেন না যে তার দেহে এইচআইভি আছে বা নেই। এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কোন রোগের লক্ষণ দেখা না গেলেও বা তাদের দেখতে সুস্থ স্বাভাবিক মনে হলেও, তারা কিন্তু অন্যদের দেহে এই ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারেন। তাহলে আপনি কি শুধু একজন ব্যক্তির মুখের কথাতেই বিশ্বাস করতে পারেন যে তার শরীরে এইচআইভি নেই? অবশ্যই না। কিছু লোকেরা জানেনই না যে তাদের শরীরে এইচআইভি আছে। আর যারা জানেন তারা হয়তো এটাকে লুকাতে চেষ্টা করেন বা মিথ্যাও বলতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রে করা এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে এইচআইভি আক্রান্ত ১০ জনের মধ্যে ৪ জনই তাদের সাথিদের কাছে এই কথা লুকিয়েছিলেন যাদের সঙ্গে তারা সহবাস করেছিলেন।
[সজন্যে]
CDC, Atlanta, Ga.
[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
বিয়ের কথা চিন্তা করার আগে এইচআইভি পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে