এইডস—ভবিষ্যতের আশা কী?
এমন কোন কারণ কি আছে যা এই রোগকে শেষ করার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে? এর একটা হল এইচআইভির সংক্রমণকে শেষ করা বা রোখার জন্য পর্যাপ্ত ওষুধের অভাব। আর দ্বিতীয়টা এই যে কিছু লোকেরা তাদের জীবনযাপনের ধরণ বদলাতে চান না ফলে তারা ইচ্ছা করেই রোগের ঝুঁকি নিয়ে থাকেন। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে যদিও সংক্রমণের হার বাড়েনি বা কমেওনি কিন্তু সেই লোকেদের সংখ্যা কমে গেছে যাদের পুরোপুরি এইডস হয়েছে। এসোসিয়েটেড প্রেস এর যে কারণটা উল্লেখ করে তা হল “অনেক লোকেরা প্রতিরোধ সম্বন্ধে দেওয়া সতর্কবাণীতে কান দিচ্ছেন না।”
পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার সময় আরও কিছু মুশকিল সামনে আসে। আর এইচআইভি আক্রান্ত লোকেদের প্রায় ৯৩ শতাংশই এই দেশগুলোতে বাস করেন। এর মধ্যে কিছু দেশ এতই গরিব যে তারা এমনকি প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাও করতে পারে না। এসব দেশগুলোতে যদি নতুন কোন ওষুধ পাওয়াও যায়, তবুও এক বছরের চিকিৎসা খরচ এত বেশি হবে যে অনেক লোকেরা সারা জীবন ধরে তা রোজগার করতে পারেন না! কিন্তু দেখা যায় যে এসব ওষুধ বেশিরভাগ দেশেই পাওয়া যায় না।
যাইহোক, আসুন আমরা ধরে নিই যে একটা নতুন, সস্তা দামের ওষুধ বের করা হয়েছে যা সত্যিই রোগটাকে পুরোপুরি ঠিক করে দিতে পারে। কিন্তু যাদের প্রয়োজন তাদের পর্যন্ত কি এই ওষুধ পৌঁছাবে? মনে হয় না। রাষ্ট্রসংঘের শিশু তহবিলের রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে প্রত্যেক বছর প্রায় চল্লিশ লক্ষ শিশু এমন পাঁচটি রোগের কারণে মারা যায় যে রোগগুলোকে সস্তা দামের বাজারে পাওয়া যায় এমন প্রতিষেধক টীকার সাহায্যেই ঠিক করা যায়।
সেইসব লোকেদের সম্বন্ধেই বা কী বলা যায় যাদের এইচআইভি আছে আর যারা এমন দেশে বাস করেন যেখানে এই রোগের চিকিৎসার জন্য কোন ওষুধ পাওয়া যায় না? ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান্টাক্রুজে ইন্টারন্যাশনাল হেলথ্ প্রোগামের রূত মুটা বেশ কিছু উন্নয়নশীল দেশে এইচআইভি প্রতিরোধ ও চিকিৎসা কর্মসূচি সংগঠিত করতে সাহায্য করেছেন। তিনি বলেন: “আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যে সঠিক মনোভাব ততখানিই জরুরি যতখানি জরুরি ওষুধ পাওয়া। আমি এমন অনেক লোকেদের চিনি যারা এইচআইভি নিয়ে ১০ থেকে ১৫ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন কিন্তু তারা আজ পর্যন্ত একটাও ওষুধ খাননি। ওষুধ উপকারী ঠিকই কিন্তু রোগ থেকে সেরে ওঠার মানে শুধু ওষুধ খাওয়াই নয়। এর সঙ্গে মনের জোর, সামাজিক সমর্থন, আধ্যাত্মিকতা এবং ভালোমন্দ খাওয়াও জড়িত।”
রাত কেটে গিয়ে ভোর হবে
আমরা কি বিশ্বাস করতে পারি যে এমন একদিন আসবে যখন এইডস চিরকালের জন্য শেষ হয়ে যাবে? হ্যাঁ আমরা করতে পারি। সবচেয়ে বড় আশা তো আমাদের প্রভুর প্রার্থনা দেয় যেটাকে আমাদের পিতা (প্যাটারনস্টার) বলা হয়। এই প্রার্থনা বাইবেলের মথি পুস্তকে লেখা রয়েছে। এই প্রার্থনায় আমরা হৃদয় থেকে অনুরোধ জানাই যেন ঈশ্বরের ইচ্ছা যেমন স্বর্গে তেমনই পৃথিবীতেও পূর্ণ হয়। (মথি ৬:৯, ১০) আর ঈশ্বরের ইচ্ছা নয় যে মানুষ চিরকাল রোগ ভোগ করে। ঈশ্বর আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেবেন। সেইসময় তিনি কেবল এইডসই নয় কিন্তু সব রোগকে একেবারে শেষ করবেন যেগুলোর কারণে সারা পৃথিবীতে লোকেরা কষ্ট ভোগ করে। তখন “নগরবাসী কেহ বলিবে না, আমি পীড়িত।”—যিশাইয় ৩৩:২৪.
আর তার আগে পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ওষুধ হল এই আক্রমণকে বাঁচিয়ে চলা। অনেক রোগের জন্যই আপনার কাছে শুধু দুটো রাস্তাই থাকে: হয় আপনি সেগুলো থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবেন নতুবা সেগুলোর চিকিৎসা করাবেন। কিন্তু এইচআইভির ব্যাপারে আপনার বেছে নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। আপনি এটা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলতে পারেন কিন্তু আজ পর্যন্ত এর কোন চিকিৎসা বের হয়নি। তাই শুধু শুধু কেন আপনার জীবনকে বিপদের মুখে ঠেলে দেবেন? কোন চিকিৎসা যখন নেইই তখন এর থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলাই ভাল।
[৯ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
“রোগ থেকে সেরে ওঠার মানে শুধু ওষুধ খাওয়াই নয়। এর সঙ্গে মনের জোর, সামাজিক সমর্থন, আধ্যাত্মিকতা এবং ভালোমন্দ খাওয়াও জড়িত।”—রূত মুটা
[৯ পৃষ্ঠার বাক্স//চিত্র]
“আমাদের ভাইবোনদের তুলনা হয় না”
প্রেরিত পৌল তার খ্রীষ্টান ভাইবোনদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “আইস, আমরা . . . সকলের প্রতি, বিশেষতঃ যাহারা বিশ্বাস-বাটীর পরিজন, তাহাদের প্রতি সৎকর্ম্ম করি।” (গালাতীয় ৬:১০) প্রথম প্রবন্ধের ক্যারনকে আপনার মনে আছে। তার মা বলেন যে যিহোবার সাক্ষীদের স্থানীয় মণ্ডলী যখন জানতে পারে যে ক্যারন ও বিল এইচআইভি আক্রান্ত তখন তারা কী করেছিলেন। তিনি বলেন: “আমাদের ভাইবোনদের তুলনা হয় না। বিলের যখন নিউমোনিয়া হয়, তখন ক্যারনও অসুস্থ ছিল আর স্বামী ও ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করতে সে মরিয়া হয়ে কাজ করত। সেই সময় ভাইরা এসে তাদের বাড়িঘর পরিষ্কার করে দিতেন, গাড়ি মেরামত করে দিতেন এবং তাদের জামাকাপড় কেচে-ধুয়ে দিতেন। তারা এমনকি তাদের আইনের কিছু বিষয় দেখাশোনা করতে এবং বাড়ি বদলাতে সাহায্য করেছিলেন। তারা তাদের বাজার করে দিতেন, তাদের জন্য রান্না করে দিতেন। সব ভাইরা মিলে তাদের মনের জোর বাড়িয়েছিলেন আর আধ্যাত্মিক ও বস্তুগত সাহায্য যুগিয়েছিলেন।”
[৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
স্বামী স্ত্রী একে অপরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকলে হয়তো এইচআইভি সংক্রমণ থেকে বাঁচা যায়