এইডস—চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে
ক্যারন পশ্চিম আমেরিকায় বড় হয়েছেন।a একজন যিহোবার সাক্ষী হওয়ায়, ছেলেবেলা থেকেই তার নৈতিক মান খুবই উঁচু ছিল। ১৯৮৪ সালে, ২৩ বছর বয়সে তিনি বিলকে বিয়ে করেন। বিল মাত্র দুবছর আগেই সত্যে আসেন। তাদের একটা ছেলে ও একটা মেয়ে হয়।
তাদের দুজনের ভালবাসা খুবই গভীর ছিল আর তারা খুব খুশি ও সুখী ছিলেন। কিন্তু ১৯৯১ সালের শেষের দিকে, বিলের জিভে একটা সাদা দাগ দেখা দেয় যেটা কিছুতেই সারছিল না। তাই তিনি ডাক্তারের কাছে যান।
এর কিছু সময় পরের ঘটনা। ক্যারন ও ছেলেমেয়েরা বাগান পরিষ্কার করছিল। বিল বারান্দার সিঁড়িতে এসে বসেন আর ক্যারনকে ডেকে তার পাশে বসতে বলেন। তারপর ক্যারনকে জড়িয়ে ধরে, সজল চোখে বিল বলেন ‘আমি তোমাকে খুব ভালবাসি আর তোমার সঙ্গে চিরকাল থাকতে চাই।’ এতো ভাল কথা কিন্তু বিলের চোখে জল কেন? ডাক্তার সন্দেহ করছেন যে বিলের শরীরে এইচআইভি আছে আর যার থেকে তার এইডস হতে পারে।
পুরো পরিবারকে পরীক্ষা করা হয়। বিল ও ক্যারনের মধ্যে রোগের জীবাণু পাওয়া যায়। যিহোবার সাক্ষী হওয়ার আগেই বিল আক্রান্ত হয়েছিলেন আর তার থেকে ক্যারনের দেহেও তা ছড়িয়ে পড়ে। ছেলেমেয়েদের মধ্যে রোগ পাওয়া যায়নি। তিন বছরের মধ্যে এইডস বিলকে চিরদিনের মতো ঘুম পাড়িয়ে দেয়। ক্যারন বলেন: “সে যন্ত্রণা আমি কী করে বোঝাব? সেই সুপুরুষ ব্যক্তি যাকে আপনি ভালবাসেন, যাকে ছাড়া এক মুহূর্তও ভাবতে পারেন না, চোখের সামনে তাকে কঙ্কালসার হয়ে যেতে দেখা যে কী কষ্টের তা আমি বলে বোঝাতে পারব না। রাতের পর রাত আমি কেঁদেছি। বিল আমাদের দশম বিবাহ বার্ষিকী দেখার জন্য আর বেঁচে ছিল না। সে একজন আদর্শ বাবা ছিল আর তার মতো স্বামী পাওয়া ভার।”
যদিও ডাক্তার ক্যারনকে বলেছিলেন যে তিনিও তার স্বামীর মতোই খুব তাড়াতাড়ি মারা যাবেন কিন্তু তিনি এখনও বেঁচে আছেন। ক্যারনের শরীরে এইডস এখন সবে শুরু হয়েছে।
ক্যারন এখন সেই ৩ কোটি লোকের মধ্যে একজন যাদের এইচআইভি/এইডস আছে। অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড ও প্যারাগুয়ের মোট জনসংখ্যা মিলেও এত লোক হয় না। এর মধ্যে ২ কোটি ১০ লক্ষ লোক কেবল আফ্রিকাতেই আছেন। রাষ্ট্রসংঘের হিসাব দেখায় যে নতুন শতাব্দীর শুরুতে এই সংখ্যা ৪ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে। রাষ্ট্রসংঘের একটি রিপোর্ট বলে যে এইডস এতই ভয়ানক রূপ নিয়েছে যে আজ পর্যন্ত এর চেয়ে বড় কোন রোগ আর হয়নি। সারা বিশ্বে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সের যৌন সম্পর্ক স্থাপনকারী লোকেদের ১০০ জনের মধ্যে ১ জন ব্যক্তির শরীরে এইচআইভি আছে। কিন্তু তাদের ১০ জনের মধ্যে কেবল ১ জনই জানেন যে তিনি আক্রান্ত। আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে, ২৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিই এর কবলে এসে পড়েছেন।
১৯৮১ সালে এই রোগ শুরু হয়েছিল। আর সেই সময় থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত প্রায় ১,১৭,০০,০০০ লোক এইডসে মারা গেছেন। হিসাব করে দেখা গেছে যে কেবল ১৯৯৭ সালেই প্রায় ২৩,০০,০০০ লোক মারা গেছেন। কিন্তু এখন এইডসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কিছুটা আশার আলো দেখা যায়। বিগত কয়েক বছর ধরে, ধনী দেশগুলোতে আগের তুলনায় কম লোকেদের এইডস হয়। এছাড়াও, কিছু নতুন নতুন ওষুধগুলোও রোগীদের মধ্যে আশার আলো জাগায় যে তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে ও তারা আরও কিছুদিন বেশি বাঁচবেন।
আপনি কিভাবে এইডস থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন? এই রোগের চিকিৎসার জন্য কি কোন নতুন প্রতিষেধক বা নতুন টীকা বের হয়েছে? এই রোগটাকে কি কখনও চিরকালের মতো শেষ করা যাবে? আসুন আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পরের প্রবন্ধগুলোতে দেখি।
[পাদটীকাগুলো]
a নামগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে।