শিশুদের যা প্রয়োজন এবং তারা যা চায়
জন্মের সময় থেকেই একটি নবজাত শিশুর কোমল যত্ন ও সেইসঙ্গে স্নেহের পরশ এবং ত্বকের স্পর্শের প্রয়োজন রয়েছে। কিছু চিকিৎসক মনে করে যে, জন্মের পর প্রথম ১২ ঘন্টা হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। তারা বলে যে, প্রসবের পর তাৎক্ষণিকভাবে মা এবং সন্তানের জন্য যা প্রয়োজন এবং তারা যা চায়, তা “ঘুম অথবা খাবার নয় কিন্তু স্নেহের পরশ ও জড়িয়ে ধরা এবং একে অপরের দিকে তাকানো ও কথা শোনা।”a
সহজাতভাবে, বাবামারা তাদের বাচ্চার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়, তাকে বুকে টেনে নেয়, হাত বুলিয়ে আদর করে এবং জড়িয়ে ধরে। এর ফলে বাচ্চা তার বাবামার প্রতি নিশ্চিতভাবে ঘনিষ্ঠ বোধ করে এবং তাদের মনোযোগের প্রতি সাড়া দেয়। এই বন্ধনের শক্তি এতটাই দৃঢ় যে, বাবামারা অক্লান্তভাবে তাদের বাচ্চার যত্ন নেওয়ার জন্য বিভিন্ন ত্যাগস্বীকার করে।
অন্যদিকে, বাবামার ভালবাসাপূর্ণ বন্ধন না থাকলে একটি শিশু আক্ষরিকভাবে নিস্তেজ হয়ে পড়তে এবং মারা যেতে পারে। তাই, কিছু ডাক্তার মনে করে যে, প্রসবের পর সঙ্গে সঙ্গেই বাচ্চাকে তার মায়ের কাছে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। তারা পরামর্শ দেয় যে, মা এবং শিশুর মধ্যে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৬০ মিনিট প্রথম যোগাযোগ করতে দেওয়া উচিত।
কেউ কেউ বন্ধনের ওপর এত জোর দেয় তা সত্ত্বেও, কিছু হাসপাতালে এই প্রথম যোগাযোগ করা কঠিন অথবা এমনকি অসম্ভব হতে পারে। সন্তানের মধ্যে রোগ সংক্রামিত হওয়ার ভয়ে প্রায়ই নবজাত শিশুকে মার কাছ থেকে আলাদা রাখা হয়। কিন্তু কিছু প্রমাণ দেখায় যে, নবজাত শিশু যখন তার মার সঙ্গে থাকে, তখন মারাত্মক সংক্রমণের হার আসলে কমে যেতে পারে। তাই, আরও বেশি হাসপাতাল মা এবং নবজাত শিশুর মধ্যে প্রথম দীর্ঘ যোগাযোগ করাকে সম্ভবপর করছে।
বন্ধনের বিষয়ে উদ্বিগ্নতা
কোনো কোনো মা, প্রথম দেখাতেই তাদের বাচ্চার প্রতি আবেগগত দিক দিয়ে ঘনিষ্ঠ বোধ করে না। তাই তারা ভাবে যে, ‘বন্ধন নিয়ে কি আমাকে সমস্যায় পড়তে হবে?’ এটা স্বীকার করতে হয় যে, সব মা-ই প্রথম দর্শনেই তাদের বাচ্চাদের ভালবেসে ফেলে না। তা সত্ত্বেও, চিন্তিত হওয়ার প্রয়োজন নেই।
এমনকি তক্ষুণি বাচ্চার জন্য মাতৃস্নেহ না আসলেও তা পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। একজন অভিজ্ঞ মা বলেন, “এমন কোনো জন্ম পরিস্থিতি নেই, যা আপনার সন্তানের সঙ্গে আপনার সম্পর্ককে গড়ে তুলতে বা ভেঙে দিতে পারে।” তা সত্ত্বেও, আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন এবং তা নিয়ে আশঙ্কা করেন, তা হলে আগে থেকেই আপনার ধাত্রীবিদ্যাবিশারদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়তো বিজ্ঞের কাজ হবে। কখন এবং কত সময় ধরে আপনি আপনার নবজাত শিশুর সঙ্গে ভাববিনিময় করতে চান, সেই সম্বন্ধে আপনার ইচ্ছার কথা স্পষ্টভাবে বলুন।
“আমার সঙ্গে কথা বল!”
এমন এক নির্দিষ্ট সময়ের দ্বার রয়েছে বলে মনে করা হয়, যখন শিশুরা নির্দিষ্ট উদ্দীপকের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রতিক্রিয়াশীল হয়। সেই দ্বার কিছু সময়ের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, ছোটদের মস্তিষ্ক সহজেই একটা ভাষা এমনকি কখনও কখনও একের অধিক ভাষা শেখায় পারদর্শী। কিন্তু, ভাষা শেখার সবচেয়ে ধারণক্ষম সময় প্রায় পাঁচ বছর বয়সের মধ্যেই শেষ হয়ে যেতে শুরু করে বলে মনে করা হয়।
একটি সন্তান ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সে পৌঁছানোর পর, একটা নতুন ভাষা শেখা অত্যন্ত কঠিন হতে পারে। শিশুচিকিৎসার স্নায়ুবিশেষজ্ঞ পিটার হুটেন্লখারের কথা অনুসারে, সেই সময়ই “মস্তিষ্কের ভাষা অঞ্চলগুলোর ঘনত্ব এবং স্নায়ুসন্নিধির সংখ্যা হ্রাস পায়।” স্পষ্টতই, ভাষা শেখার ক্ষমতা অর্জন করার জন্য জীবনের প্রথম কয়েক বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়!
বাচ্চারা কীভাবে কথা বলার কৃতিত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করে, যা তাদের জ্ঞানশক্তির অবশিষ্ট বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ? প্রাথমিকভাবে বাবামার সঙ্গে ভাষার আদানপ্রদান করার মাধ্যমে। বাচ্চারা বিশেষভাবে মনুষ্য উদ্দীপকের প্রতি সাড়া দেয়। ম্যাসাচুসিটস্ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি-র বেরি আ্যরনস্ বলেন “একটা শিশু . . . তার মার স্বর অনুকরণ করে।” কিন্তু, আগ্রহের বিষয় হল যে, বাচ্চারা সব ধরনের শব্দ অনুকরণ করে না। আ্যরনস্ যেমন বলেন যে, একটি শিশু “দোলনার ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ ধারণ করে না, যা মায়ের কথার সঙ্গে সঙ্গেই হয়ে থাকে।”
বিভিন্ন সংস্কৃতির পটভূমির বাবামারা তাদের সন্তানদের সঙ্গে একই ছন্দময় কথার শৈলী ব্যবহার করে, যেটাকে কেউ কেউ বলে, “শিশুবোল।” বাবা অথবা মা যখন প্রেমের সঙ্গে কথা বলেন, তখন বাচ্চার হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পায়। মনে করা হয় যে, এটা তারা যে-বিভিন্ন শব্দ এবং বস্তুগুলোকে নির্দেশ করে, সেটার মধ্যে সংযোগকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে। কোনো বাক্য ছাড়াই, শিশুটি বলে উঠে: “আমার সঙ্গে কথা বল!”
“আমার দিকে তাকাও!”
দেখা গিয়েছে যে, প্রথম বা এর পরবর্তী বছরের মধ্যে একটি শিশু প্রাপ্তবয়স্ক তত্ত্বাবধায়কের প্রতি, সাধারণত তার মার প্রতি এক আবেগ গড়ে তোলে। এই বিষয়ে নিরাপদ বোধ করলে, বাচ্চারা সেই সমস্ত বাচ্চার চেয়ে আরও বেশি মিশুকে হয়, যারা বাবামার বন্ধনের ক্ষেত্রে নিরাপদ বোধ করে না। মনে করা হয় যে, মার সঙ্গে তার এইরকম বন্ধন সন্তানের তিন বছর হওয়ার মধ্যেই প্রতিষ্ঠা করা দরকার।
এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যখন তার মন বাইরের প্রভাবের প্রতি প্রচণ্ডভাবে সংবেদনশীল থাকে, তখন যদি একটি শিশুকে অবহেলা করা হয়, তা হলে কী হতে পারে? মার্থা ফেরেল এরিকসন, যিনি ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ২৬৭ জন মা এবং তাদের ছেলেমেয়ের গতিবিধি লক্ষ করেছিলেন, তিনি এই মতামত প্রকাশ করেন: “অবহেলা করা ধীরে ধীরে এবং ক্রমান্বয়ে শিশুর উদ্যমকে ক্রমশ ক্ষয় করে এমন অবস্থায় নিয়ে যায় যে, [শিশুটি] অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করার অথবা জগতের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার বিষয়ে সামান্য ইচ্ছা পোষণ করে।”
আবেগগত অবহেলার মারাত্মক পরিণতিগুলো সম্বন্ধে তার মতামতকে উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর জন্য টেক্সাস চিলড্রেন হসপিটাল এর ডা. ব্রুস পেরি বলেন: “আপনি যদি আমাকে একটি ছয় মাসের শিশুকে নিয়ে তার শরীরের সমস্ত হাড় ভেঙে ফেলার অথবা দুমাস ধরে তার আবেগগত অবহেলা করার বিষয়টা বেছে নিতে বলেন, তা হলে আমি বলব যে, শিশুটির শরীরের সমস্ত হাড় ভেঙে দেওয়াই উত্তম হবে।” কেন? পেরির দৃষ্টিতে, “হাড় জোড়া লাগানো যেতে পারে কিন্তু একটি শিশু যদি দুমাস ধরে জটিল মস্তিষ্কের উদ্দীপনার সুযোগ হারায়, তা হলে আপনি চিরকালের জন্য তার মস্তিষ্ককে অসংগঠিত করে ফেলবেন।” অবশ্য, সকলে একমত নয় যে, সেই ক্ষতি অপূরণীয়। তা সত্ত্বেও, বৈজ্ঞানিক গবেষণা দেখায় যে, আবেগগত দিক দিয়ে সমৃদ্ধ এক পরিবেশ ছোটদের মনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
“সহজভাবে বললে” শিশুরা (ইংরেজি) বই বলে, “[বাচ্চারা] ভালবাসতে এবং ভালবাসা পেতে ইচ্ছুক।” একটি বাচ্চা যখন কাঁদে, তখন সে প্রায়ই তার বাবামার কাছে অনুরোধ জানায়: “আমার দিকে তাকাও!” সেই সময় বাবামার সদয়ভাবে সাড়া দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এইরকম ভাবের আদানপ্রদানের ফলে বাচ্চারা বোঝে যে, সে অন্যদের তার চাহিদার কথা বোঝাতে সমর্থ। সে অন্যদের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে শেখে।
‘আমি কি অতিরিক্ত প্রশ্রয় দিয়ে বাচ্চার স্বভাব নষ্ট করছি না?’
আপনি হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারেন, ‘বাচ্চা যতবার কাঁদে ততবারই যদি সাড়া দিই, তা হলে আমি কি অতিরিক্ত প্রশ্রয় দিয়ে তার স্বভাব নষ্ট করছি না?’ হতে পারে। এই প্রশ্নের উত্তরে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। যেহেতু প্রত্যেক শিশু স্বতন্ত্র, তাই সাধারণত বাবামাদের নির্ধারণ করতে হবে যে, কোন উপায়টা সবচেয়ে উত্তম হবে। কিন্তু, কিছু সাম্প্রতিক গবেষণা দেখায় যে, নবজাত শিশু যখন ক্ষুধার্ত হয়, অস্বস্তি বোধ করে বা তার মেজাজ খারাপ থাকে, তখন তার চাপ-প্রতিক্রিয়া তন্ত্র স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ করে। সে কান্নার মাধ্যমে তার যন্ত্রণার কথা প্রকাশ করে। বলা হয়ে থাকে যে, বাবা অথবা মা যখন সাড়া দেন এবং শিশুর প্রয়োজন পূরণ করেন, তখন বড়রা শিশুদের মস্তিষ্কে সেই কোষগুলোর নেটওয়ার্ক তৈরি করে, যা তাকে নিজেকে শান্ত করতে শিখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া, ডা. মেগান গুনারের মতানুসারে, যে-শিশু প্রতিক্রিয়াশীল যত্ন পায়, সে তুলনামূলকভাবে কম স্ট্রেস হরমোন কোরটিসল উৎপন্ন করে। আর এমনকি তার মেজাজ খারাপ থাকলেও, সে শীঘ্রই চাপ-প্রতিক্রিয়া বন্ধ করে দেয়।
এরিকসন বলেন, “বস্তুত, যে-বাচ্চাদের প্রতি দ্রুত এবং ঘন ঘন সাড়া দেওয়া হয়েছিল, বিশেষভাবে প্রথম ৬-৮ মাসে বয়সের সময়, তারা আসলে সেই সমস্ত বাচ্চার চেয়ে কম কেঁদেছিল, যাদের কাঁদতে দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া, আপনি যেভাবে সাড়া দেন, সেটাও বিভিন্নরকম হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবারই আপনি যদি একইভাবে সাড়া দেন, যেমন তাকে খাওয়ান বা কোলে নেন, তা হলে সত্যিই তার স্বভাব নষ্ট হয়ে যেতে পারে। মাঝে মাঝে শুধু কিছু বলে তার কান্নার উত্তর দেওয়াই যথেষ্ট হতে পারে। অথবা বাচ্চার কাছ দিয়ে ঘোরাফেরা করা এবং মৃদুভাবে তার কানের কাছে কথা বলা কার্যকারী হতে পারে। অন্যদিকে, আপনার হাত দিয়ে তার পিঠ বা পেট স্পর্শ করাও কার্যকারী হতে পারে।
“বাচ্চার কাজই হল কান্নাকাটি করা।” প্রাচ্যের দেশগুলোতে এইরকম প্রবাদ রয়েছে। বাচ্চার জন্য, সে যা চায় তা জানানোর প্রধান উপায় হল কান্নাকাটি করা। আপনি কেমন বোধ করবেন যদি আপনি কিছু চাইলে, প্রতিবারই আপনাকে অবহেলা করা হয়? অতএব আপনার বাচ্চা, যে তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া একেবারে অসহায়, কেমন বোধ করে যদি প্রতিবার সে যখন তার দিকে মনোযোগ দেওয়া হোক বলে চায়, তখন তাকে অবজ্ঞা করা হয়? কিন্তু, তার কান্নার প্রতি কার সাড়া দেওয়া উচিত?
কে বাচ্চার যত্ন নেয়?
যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক এক আদমশুমারি জানায় যে, জন্মের সময় থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত শতকরা ৫৪ ভাগ ছেলেমেয়ে বাবামার পরিবর্তে বরং অন্য লোকেদের কাছ থেকে নিয়মিতভাবে কোনো না কোনো যত্ন পেয়ে থাকে। অনেক পরিবারে তাদের চাহিদা মেটানোর জন্য দুজনের আয়ের প্রয়োজন হতে পারে। আর অনেক মা কয়েক সপ্তাহ বা মাসের জন্য তাদের নবজাত শিশুর যত্ন নিতে যদি সম্ভব হয়, তা হলে মাতৃত্বকালীন ছুটি নেয়। কিন্তু, এর পরে বাচ্চার যত্ন কে নেবে?
অবশ্য, এই ধরনের সিদ্ধান্ত নির্ধারণ করার জন্য এমন কোনো কড়া আইন নেই। কিন্তু, এটা মনে রাখা উত্তম যে, শিশুরা তাদের জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অনেক দুর্বল থাকে। বাবা এবং মা উভয়ের একসঙ্গে বিষয়টা নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা দরকার। কী করতে হবে, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তাদের বেছে নেওয়ার মতো বিষয়গুলোকে সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।
“ধীরে ধীরে এটা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, আমাদের সন্তানদের মানুষ করে তোলার জন্য এমনকি সবচেয়ে ভাল শিশু তত্ত্বাবধায়ন কার্যক্রমও সেই সময়ের বিকল্প হয় না, যে সময়টা ছেলেমেয়েদের তাদের মা এবং বাবার কাছ থেকে প্রয়োজন হয়,” আ্যমেরিকান একাডেমি অফ পেডিয়াটিক্স এর ডা. জোসেফ জাঙ্গা বলেন। কিছু বিশেষজ্ঞ এই চিন্তা প্রকাশ করেছে যে, ডে-কেয়ারের সুযোগসুবিধার অধীন ছেলেমেয়েরা তাদের যতটা প্রয়োজন, ততটা তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে ভাববিনিময় করে না।
কিছু চাকরিজীবি মা, তাদের সন্তানদের গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা সম্বন্ধে সচেতন হওয়ায় অন্য লোকেদের তাদের সন্তানদের আবেগগত প্রশিক্ষণ দিতে দেওয়ার পরিবর্তে বরং নিজেরা ঘরে থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একজন মহিলা বলেছিলেন: “আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি যে আমি যে-পরিতৃপ্তি লাভ করেছি, তা অন্য কোনো কাজ দিতে পারত না।” অবশ্য, অর্থনৈতিক চাপ সব মাকেই এইরকম বাছাই করার সুযোগ দেয় না। অনেক বাবামার ডে-কেয়ারে দেওয়া ছাড়া বাছাই করার মতো আর কোনো বিষয় থাকে না, তাই তারা যখন একসঙ্গে থাকে, তখন তাদের সন্তানের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার এবং স্নেহ দেখানোর জন্য বাড়তি প্রচেষ্টা করে। একইভাবে, অনেক চাকরিজীবি মা অথবা বাবার জন্য বেছে নেওয়ার মতো খুব কম বিষয় থাকে এবং ছেলেমেয়েদের মানুষ করে তোলার জন্য তারা উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা করে আর এতে উত্তম ফল পায়।
বাবামাদের জন্য ছেলেমেয়ে মানুষ করে তোলা এক আনন্দদায়ক কাজ ও রোমাঞ্চপূর্ণ বিষয় হতে পারে। তা সত্ত্বেও, এটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক এবং পরিশ্রমী কাজ। কীভাবে আপনি সফল হতে পারেন? (g০৩ ১২/২২)
[পাদটীকা]
a সচেতন থাক! পত্রিকার এই ধারাবাহিক প্রবন্ধে কয়েক জন গণ্যমান্য শিশু তত্ত্বাবধায়ক বিশেষজ্ঞের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে কারণ এই ধরনের পর্যবেক্ষণ বাবামাদের জন্য উপকারী এবং তথ্যবহুল হতে পারে। তা সত্ত্বেও, এটা স্বীকার করতেই হবে যে, এইরকম দৃষ্টিভঙ্গি প্রায়ই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত এবং সংশোধিত হয়, যেগুলো সচেতন থাক! পত্রিকা নিঃসন্দেহে বাইবেলভিত্তিক যে-মানগুলো তুলে ধরে, সেগুলোর বিপরীত।
[৬ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]
নীরব শিশু
জাপানের কিছু চিকিৎসক বলে যে, এমন বাচ্চাদের সংখ্যা কেবল বেড়েই চলেছে, যারা কাঁদেও না বা হাসেও না। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সাতোশি, ইয়ানাগিসাওয়া তাদের নীরব শিশু বলেন। কেন বাচ্চারা তাদের আবেগ প্রকাশ করা বন্ধ করে দেয়? কিছু ডাক্তার মনে করে যে, এইরকম অবস্থা দেখা দেয় কারণ বাচ্চারা বাবামাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা থেকে বঞ্চিত হয়। এই অবস্থাকে বলা হয় চাপিয়ে দেওয়া অসহায়তা। একটি তত্ত্ব বলে যে, ভাববিনিময়ের প্রয়োজনীয়তাকে যখন অনবরত অবহেলা করা হয় অথবা ভুলভাবে বোঝা হয়, তখন শিশুরা অবশেষে চেষ্টা করা বন্ধ করে দেয়।
টেক্সাসের চিলড্রেনস্ হসপিটালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞের প্রধান ব্রুস পেরি বলেন, একটি বাচ্চাকে যদি সঠিক সময়ে উপযুক্ত উদ্দীপনা দেওয়া না হয়, তা হলে তার মস্তিষ্কের যে-অংশ তাকে সহমর্মী করে, তা হয়তো আর বৃদ্ধি পায় না। আবেগকে প্রচণ্ডভাবে অবহেলা করলে, সহমর্মী হওয়ার ক্ষমতা অপ্রতিকার্যভাবে হারিয়ে যেতে পারে। ডা. পেরি মনে করেন যে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে নেশাকর দ্রব্যের অপব্যবহার এবং কিশোর দৌরাত্ম্যকে এই ধরনের প্রাথমিক জীবনের অভিজ্ঞতার সঙ্গে যুক্ত করা যেতে পারে।
[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
বাবামা এবং বাচ্চার মধ্যে বন্ধন আরও শক্তিশালী হয়, যখন তারা ভাববিনিময় করে