“আপনার উপস্থিতির চিহ্ন কি?”
“এই সকল ঘটনা কখন্ হইবে? আর আপনার উপস্থিতির এবং যুগান্তের চিহ্ন কি?”—মথি ২৪:৩, NW.
১, ২. কী দেখায় যে লোকে ভবিষ্যতের প্রতি আগ্রহী?
বেশির ভাগ মানুষ ভবিষ্যতের বিষয়ে আগ্রহী। আপনিও কি নন? প্রোফেসর অলভিন্ টফ্লার তার বই ফিউচার শক্-এ উল্লেখ করেছিলেন “ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে অধ্যয়নের প্রতি অনুরক্ত সংগঠনগুলির হঠাৎ প্রচুর সংখ্যাবৃদ্ধি হয়েছে।” তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আমরা দেখেছি ভবিষ্যৎ-পরিচিতি সম্পর্কে আগ্রহী চিন্তাগোষ্ঠীগুলির (think tanks) গঠন; ইংল্যাণ্ড, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ভাবীকাল সম্বন্ধীয় পত্রপত্রিকাগুলির আবির্ভাব; বিশ্ববিদ্যালয়ে ভবিষ্যৎ-কথনের পাঠক্রমের বিস্তার হয়েছে।’ টফ্লার সমাপ্তি করেছিলেন: “অবশ্যই, নিশ্চিতরূপে কেউই ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে ‘জানতে’ পারে না।
২ ভবিষ্যতের পূর্বাভাষ (ইংরাজি) বইটি বলে: “হাতদেখা স্ফটিক খণ্ড-দর্শন, জ্যোতিষবিদ্যা, তাস গণনা, য়ি জিং, সমস্তই কম-বেশি জটিল কিছু কলাকৌশলবিদ্যা যা আমাদের ভবিষ্যতে কী থাকতে পারে সে সম্বন্ধে কিছু ধারণা দেয়।” কিন্তু এই ধরনের মানব পদ্ধতিগুলির প্রতি না গিয়ে বরং আমাদের উচিত প্রামাণিক উৎস—যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি তাকানো।
৩. ভবিষ্যতের জন্য জ্ঞানের প্রতি ঈশ্বরের উপরে নির্ভর করা কেন উপযুক্ত?
৩ সত্য ঈশ্বর বলেছিলেন: “আমি যেরূপ সঙ্কল্প করিয়াছি, তদ্রূপ ঘটিবে; আমি যে মন্ত্রণা করিয়াছি, তাহা স্থির থাকিবে।” (যিশাইয় ১৪:২৪, ২৭; ৪২:৯) হ্যাঁ, কী ঘটবে সে বিষয়ে মানবজাতিকে যিহোবা মন্ত্রণা দিয়েছেন, প্রায়ই ভবিষ্যদ্বক্তারূপে কোন মানুষকে ব্যবহার করে। এই ভবিষ্যদ্বক্তাদের একজন লিখেছিলেন: “সদাপ্রভু আপনার দাস ভাববাদিগণের নিকটে আপন গূঢ় মন্ত্রণা প্রকাশ না করিয়া কিছুই করেন না।”—আমোষ ৩:৭, ৮; ২ পিতর ১:২০, ২১.
৪, ৫. (ক) ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে যীশু কেন আমাদের সাহায্য করতে পারেন? (খ) তাঁর প্রেরিতেরা কোন্ বহু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিলেন?
৪ যীশু খ্রীষ্ট ছিলেন ঈশ্বরের প্রধান ভাববাদী। (ইব্রীয় ১:১, ২) তাই এখন আসুন, যীশুর মুখ্য ভবিষ্যদ্বাণীগুলির মধ্যে একটির উপর দৃষ্টিপাত করা যাক যেটি এখনই আমাদের চারপাশে যা ঘটছে তার বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করে। এটি বর্তমান দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ হওয়া এবং ঈশ্বর কর্তৃক এক নতুন জগৎ পুনঃস্থাপন হওয়ার পর শীঘ্রই কী ঘটবে তার প্রতি আমাদের অন্তর্দৃষ্টিও প্রদান করে।
৫ যীশু প্রমাণ করেছিলেন যে তিনি একজন ভবিষ্যদ্বক্তা ছিলেন। (মার্ক ৬:৪; লূক ১৩:৩৩; ২৪:১৯; যোহন ৪:১৯; ৬:১৪; ৯:১৭) সুতরাং, তাঁর শিষ্যরা যখন তার সঙ্গে যিরূশালেমের বাইরে জৈতুন পর্বতের উপরে বসেছিলেন, তখন ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে স্বভাবতই তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “আমাদিগকে বলুন দেখি, এই সকল ঘটনা কখন হইবে? আর আপনার উপস্থিতির এবং যুগান্তের চিহ্ন কি?”—মথি ২৪:৩; মার্ক ১৩:৪.
৬. মথি ২৪, মার্ক ১৩ এবং লূক ২১ অধ্যায়ের মধ্যে কী সম্পর্ক আছে; এবং কোন্ প্রশ্ন আমাদের পক্ষে খুবই আগ্রহজনক হওয়া উচিত?
৬ আপনি তাদের প্রশ্ন এবং যীশুর উত্তর মথি ২৪, মার্ক ১৩ এবং লূক ২১ অধ্যায়ে পাবেন।a বহু বিষয়ে বর্ণনাগুলি একে অপরকে সমর্থন করে, কিন্তু সেগুলি হুবহু এক নয়। উদাহরণস্বরূপ, কেবলমাত্র লূকই ‘স্থানে স্থানে মহামারী হবার’ বিষয়ে উল্লেখ করেন। (লূক ২১:১০, ১১; মথি ২৪:৭; মার্ক ১৩:৮) স্বভাবতই, আমাদের জিজ্ঞাসা করা উচিত, যীশু কি ঘটনাগুলির ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন কেবলমাত্র তাঁর শ্রোতাদের জীবনকালেই ঘটবে বলে, অথবা তাঁর মনে আমাদের দিন সম্বন্ধে এবং এমন কি পরে আরও যা ঘটবে তাও ছিল?
প্রেরিতেরা জানতে চেয়েছিলেন
৭. প্রেরিতেরা বিশেষভাবে কোন্ বিষয় সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, কিন্তু যীশুর কোন্ কোন্ বিষয়ে উত্তর দিয়েছিলেন?
৭ তাঁর মৃত্যুর কয়েকদিন পূর্বে, যীশু ঘোষণা করেছিলেন যে ঈশ্বর যিহূদীদের রাজধানী যিরূশালেমকে ত্যাগ করেছেন। শহরটি এবং তার অপূর্ব মন্দির ধ্বংস হবে। সেই কারণে প্রেরিতদের কয়েকজন, ‘যীশুর উপস্থিতি ও যুগান্তের চিহ্নের’ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। (মথি ২৩:৩৭–২৪:৩) অবশ্যই তারা প্রধানত যিহূদী ব্যবস্থা ও যিরূশালেমের বিষয়েই চিন্তা করেছিলেন কারণ তারা ভবিষ্যতে এর ব্যাপকতার বিষয়ে উপলব্ধি করতে পারেননি। তবুও, সা.শ. ৭০ সালে যখন রোমীয়রা যিরূশালেম ধ্বংস করেছিল, সেই ঘটনা সম্বন্ধে তাদের উত্তর দেবার সময়, যীশু সেই সময়েরও বহু দূরের বিষয়ে দেখেছিলেন।—লূক ১৯:১১; প্রেরিত ১:৬, ৭.
৮. কী কী ঘটবে বলে যীশু বর্ণনা করেছিলেন?
৮ তিনটি সুসমাচার বৃত্তান্তে আপনি যেমন পড়তে পারেন, যীশু বলেছিলেন জাতির বিপক্ষে জাতি, রাজ্যের বিপক্ষে রাজ্য উঠবে, খাদ্যের অভাব ও ভূমিকম্প হবে, ভয়ঙ্কর সমস্ত বিষয় এবং আকাশে কিছু চিহ্ন দেখা যাবে। (সা.শ. ৩৩ সালে) যীশু যখন ঐ চিহ্নটি দেন, সেই সময় থেকে (সা.শ. ৬৬-৭০ সালে) যিরূশালেমের উৎসন্ন দশা পর্যন্ত, ভাক্ত ভাববাদী ও ভাক্ত খ্রীষ্টানদের, যারা যীশুর বার্তা প্রচার করছিল, যিহূদীরা তাদের তাড়না করবে।
৯. যীশুর ভবিষ্যদ্বাণী সা.শ. প্রথম শতাব্দীতে কিভাবে পরিপূর্ণ হয়েছিল?
৯ চিহ্নের এই বিষয়গুলি সত্যিই ঘটেছিল, যেমন ঐতিহাসিক ফ্লেভিয়াস যোসিফাস্ স্বীকার করেন। তিনি লেখেন যে রোমীয়েরা আক্রমণ করার পূর্বেই, ভাক্ত মশীহেরা বিদ্রোহের প্ররোচনা দিয়েছিল। যিহূদিয়া এবং অন্যান্য স্থানে ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প হয়েছিল। রোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে যুদ্ধবিগ্রহ দেখা গিয়েছিল। সেখানে কি মহা-দুর্ভিক্ষ হয়েছিল? হ্যাঁ, বাস্তবিকই হয়েছিল। (তুলনা করুন প্রেরিত ১১:২৭-৩০.) রাজ্য-প্রচার কাজ সম্বন্ধেই বা কি? সা.শ. ৬০ অথবা ৬১ সালে, কলসীয়দের পুস্তকটি যখন লেখা হয়েছিল, ঈশ্বরের রাজ্যের “সেই সুসমাচারের প্রত্যাশা” আফ্রিকা, এশিয়া এবং ইউরোপে বহু জায়গায় শোনা গিয়েছিল।b—কলসীয় ১:২৩.
“তখন” শেষ হবে
১০. গ্রীক শব্দ টো’টের প্রতি আমাদের আগ্রহ রাখা উচিত কেন শব্দটির মধ্যে কী বৈশিষ্ট্য আছে?
১০ কোন কোন বিষয়ে, ভবিষ্যৎ ঘটনাবলী ধারাবাহিকভাবে ঘটছে এমনভাবে যীশু উপস্থাপিত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “রাজ্যের এই সুসমাচার . . . প্রচার করা যাইবে আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।” ইংরাজি বাইবেলে প্রায়ই ব্যবহৃত “তখন” শব্দটির সহজ অর্থ করা হয় “সেইজন্য” অথবা “কিন্তু।” (মার্ক ৪:১৫, ১৭; ১৩:২৩) কিন্তু মথি ২৪:১৪ পদে “তখন” শব্দটি গ্রীক ক্রিয়া-বিশেষণ টো’টে-এর উপর ভিত্তি করে নেওয়া।c গ্রীক বিশেষজ্ঞেরা বলেন যে টো’টে একটি “সময়-জ্ঞাপক ক্রিয়া-বিশেষণ” যা ব্যবহৃত হয় “কালক্রমে যা হবে তা বলতে” অথবা “পরবর্তী একটি ঘটনার ভূমিকা করতে।” সুতরাং যীশু, রাজ্যের এক প্রচার সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন এবং তখন (অথবা, ‘তার পরে’ অথবা, ‘পরবর্তীকালে’) “শেষ” আসবে। কিসের শেষ?
১১. যিরূশালেমের ধ্বংসের সঙ্গে সরাসরিভাবে সম্পর্কিত ঘটনাবলীর প্রতি যীশু কিভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন?
১১ যীশুর ভবিষ্যদ্বাণীর একটি পরিপূর্ণতা হয়েছিল যিহূদী ব্যবস্থার শেষকালের ঘটনাগুলিতে যুদ্ধ, ভূমিকম্প, খাদ্যের অভাব এবং আরও অন্যান্য বিষয় যা যীশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তা সেই তিন দশক ধরে ঘটেছিল। কিন্তু মথি ২৪:১৫, মার্ক ১৩:১৪ এবং লূক ২১: ২০ পদ থেকে শুরু করে, আমরা সেই ঘটনাগুলি পড়ি যেগুলি ঘটবে যখন ধ্বংস একেবারে আসন্ন, দরজার সামনে।—তালিকায় একটি করে দাগ দেওয়া লাইন লক্ষ্য করুন।
১২. মথি ২৪:১৫ পদের পরিপূর্ণতায় রোমীয় সেনাবাহিনী কিভাবে জড়িত ছিল?
১২ সা.শ. ৬৬ সালে এক যিহূদী বিদ্রোহের প্রত্যুত্তরে, সেস্টিয়াস্ গ্যালাসের অধীনে রোমীয়েরা যিরূশালেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করে এবং এই শহরটিকে ঘিরে ফেলে যেটি যিহূদীদের পবিত্র বলে বিবেচিত হত। (মথি ৫:৩৫) যিহূদীদের প্রতি-আক্রমণ সত্ত্বেও, রোমীয়েরা জোর করে শহরে ঢুকে পড়ে। এইভাবে তারা “পবিত্র স্থানে” দাঁড়িয়েছিল যেমন যীশু মথি ২৪:১৫ এবং মার্ক ১৩:১৪ পদে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তারপর এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে। শহরটি সম্পূর্ণরূপে ঘিরে ফেলার পরও, রোমীয়েরা অপ্রত্যাশিতভাবে ফিরে যায়। খ্রীষ্টানেরা, সঙ্গে সঙ্গে যীশুর ভবিষ্যদ্বাণীর পূর্ণতা শনাক্ত করতে পেরেছিল আর রোমীয়েরা ফিরে যাওয়ার জন্য, যিহুদিয়া থেকে যর্দ্দনের ওপারে পার্বত্য অঞ্চলে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ তারা পেয়েছিল। ইতিহাস জানায় যে তারা তাই করেছিল।
১৩. পালিয়ে যাওয়া সম্বন্ধে যীশুর সাবধানবাণী খ্রীষ্টানেরা কিভাবে মেনে চলতে সক্ষম হয়েছিল
১৩ কিন্তু যদি রোমীয়েরা যিরূশালেম থেকে অবরোধ তুলেই নিয়েছিল, তাহলে কেন কারোর পালানোর প্রয়োজন হয়েছিল? যীশুর বাক্যগুলি পরিষ্কার করে দিয়েছিল যে, যা ঘটেছিল? তা প্রমাণ করেছিল ‘যিরূশালেমের ধ্বংস সন্নিকট।’ (লূক ২১:২০) হ্যাঁ, ধ্বংস। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ‘এমন ক্লেশ উপস্থিত হবে যা আদি অবধি কখনও হয়নি এবং পরেও কখনও হবে না।’ আর প্রায় সাড়ে তিন বছর পর সা.শ. ৭০ সালে যিরূশালেম প্রকৃতই জেনারেল টাইটাসের অধীনে রোমীয় সৈন্যদের থেকে এক “মহাক্লেশ” অভিজ্ঞতা করেছিল। (মথি ২৪:২১; মার্ক ১৩:১৯) কিন্তু কেন যীশু এটিকে ক্লেশ হিসাবে পূর্বের অথবা পরের চেয়েও অনেক বড় বলে বর্ণনা করেছিলেন?
১৪. কেন আমরা বলতে পারি যে সা.শ. ৭০ সালে যিরূশালেমের প্রতি যা হয়েছিল তা এমন “মহাক্লেশ” ছিল যা তার আগে অথবা পরে কখনও হয়নি?
১৪ সা.শ.পূ. ৬০৭ সালে বাবিলনীয়দের দ্বারা যিরূশালেম ধ্বংস হয়েছিল এবং আমাদের শতাব্দীতেও নগরটি ভয়ানক যুদ্ধবিগ্রহ প্রত্যক্ষ করেছে। কিন্তু সা.শ. ৭০ সালে যা ঘটে তা এক অদ্বিতীয় মহাক্লেশ ছিল। পাঁচ মাসের অভিযানকালে টাইটাসের রোমীয় সৈনিকেরা যিহূদীদের পরাজিত করে, প্রায় ১১,০০,০০০ জনকে হত্যা করে এবং প্রায় ১,০০,০০০ জনকে বন্দী করে নিয়ে যায়। এছাড়াও, রোমীয়েরা যিরূশালেম ধ্বংস করেছিল। এটি প্রমাণ করে যে তাদের মন্দিরকে কেন্দ্রীভূত করে পূর্বেকার অনুমোদিত যিহূদী উপাসনা ব্যবস্থার স্থায়ী শেষ এসেছিল। (ইব্রীয় ১:১, ২) হ্যাঁ, সা.শ. ৭০ সালের ঘটনাবলীকে যথার্থভাবেই বিবেচনা করা যেতে পারে এরূপ ‘মহাক্লেশ হিসাবে যেরূপ [সেই শহর, জাতি এবং ব্যবস্থার প্রতি] জগতের আরম্ভ অবধি এ পর্য্যন্ত কখনও হয় নাই, কখনও হইবেও না।’—মথি ২৪:২১.d
ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, আরও কিছু ঘটতে চলেছিল
১৫. (ক) যিরূশালেমের মহাক্লেশের পরে, কী ধরনের ঘটনা ঘটবে বলে যীশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন? (খ) মথি ২৪:২৩-২৮ পদ মনে রেখে, যীশুর ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতা সম্বন্ধে আমরা কোন্ সিদ্ধান্তে আসতে পারি?
১৫ কিন্তু, যীশু সা.শ. ৭০ সালের ক্লেশের মধ্যেই তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীকে সীমিত রাখেননি। বাইবেল দেখায় যে সেই ক্লেশের পরে আরও অনেক বেশি কিছু ঘটতে চলেছিল, যার ইঙ্গিত পাওয়া যায় মথি ২৪:২৩ এবং মার্ক ১৩:২১ পদে টো’টে অথবা “তখন” শব্দ ব্যবহারের দ্বারা। সা.শ. ৭০ সালের পরে কী ঘটতে চলেছিল? যিহূদী ব্যবস্থার উপর ক্লেশের পরে, আরও ভাক্ত খ্রীষ্টেরা ও ভাববাদীরা আবির্ভূত হবে। (মার্ক ১৩:৬ পদের সাথে ১৩:২১-২৩ পদ তুলনা করুন.) ইতিহাস প্রমাণ করে যে সা.শ. ৭০ সালে যিরূশালেম ধ্বংস হওয়ার পর থেকে শতাব্দী ধরে এই ধরনের ব্যক্তিদের অনেকেই আবির্ভূত হয়েছে, যদিও তারা ভ্রান্ত করতে পারেনি সেই লোকেদের যাদের তীক্ষ্ণ আধ্যাত্মিক দৃষ্টি আছে এবং যারা খ্রীষ্টের “উপস্থিতির” প্রকৃতই অন্বেষণ করছে। (মথি ২৪:২৭, ২৮) যাইহোক, সা.শ. ৭০ সালের মহাক্লেশের পরে এই লক্ষণগুলি একটি ইঙ্গিত দেয় যে প্রথম শতাব্দীর সেই ক্লেশ, যা শুধু এক প্রাথমিক পরিপূর্ণতা ছিল, তার পরেও যীশু লক্ষ্য রেখেছিলেন।
১৬. লূক ২১:২৪ পদ যীশুর ভবিষ্যদ্বাণীর কোন্ দিকটি সম্বন্ধে বিবেচনা করে এবং এর বৈশিষ্ট্য কী?
১৬ যদি আমরা মথি ২৪:১৫-২৮ ও মার্ক ১৩:১৪-২৩ পদের সাথে লূক ২১:২০-২৪ পদের তুলনা করি, আমরা দ্বিতীয় একটি ইঙ্গিত পাব যে যীশুর ভবিষ্যদ্বাণী যিরূশালেম ধ্বংসের পরের বিষয়েও বলে। মনে রাখবেন যে লূক একাই মহামারীর উল্লেখ করেছিলেন। একইভাবে তিনি একাই যীশুর এই কথাগুলির মাধ্যমে এই অংশটিকে শেষ করেছিলেন: “জাতিগণের সময় [“পরজাতীয়দের সময়,” কিং জেমস্ সংস্করণ] সম্পূর্ণ না হওয়া পর্য্যন্ত যিরূশালেম জাতিগণের পদ-দলিত হইবে।”e (লূক ২১:২৪) বাবিলনীয়েরা সা.শ.পূ. ৬০৭ সালে যিহূদীদের শেষ রাজাকে সরিয়ে দিয়েছিল এবং তারপর থেকে, ঈশ্বরের রাজ্যের প্রতিনিধি হিসাবে যিরূশালেম পদদলিত হয়েছিল। (২ রাজাবলি ২৫:১-২৬; ১ বংশাবলি ২৯:২৩; যিহিষ্কেল ২১:২৫-২৭) লূক ২১:২৪ পদে, যীশু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে এই অবস্থা ভবিষ্যতেও চলতে থাকবে যতদিন পর্যন্ত না ঈশ্বরের সময় আসছে পুনরায় একটি রাজ্য স্থাপন করার।
১৭. কোন্ তৃতীয় ইঙ্গিত আছে যে যীশুর ভবিষ্যদ্বাণী দূর ভবিষ্যতের প্রতিও প্রযোজ্য হবে?
১৭ তৃতীয় একটি ইঙ্গিত রয়েছে যে যীশুও বহুদূর ভবিষ্যতের প্রতি লক্ষ্য করেছিলেন: শাস্ত্র অনুযায়ী, মশীহকে মৃত্যুবরণ করতে ও পুনরুত্থিত হতে হবে ও তারপরে তিনি ঈশ্বরের দক্ষিণে বসবেন যতদিন না পিতা তাঁকে কর্তৃত্ব করতে পাঠান। (গীতসংহিতা ১১০:১, ২) যীশু তাঁর পিতার দক্ষিণ পার্শ্বে বসা সম্পর্কে পরোক্ষভাবে বলেছিলেন। (মার্ক ১৪:৬২) প্রেরিত পৌল স্বীকৃতি জানিয়েছিলেন যে পুনরুত্থিত যীশু যিহোবার দক্ষিণে বসে সেই সময়ের অপেক্ষায় থাকবেন যখন তিনি রাজা হবেন এবং ঐশিক সংহারক রূপে কাজ করবেন।—রোমীয় ৮:৩৪; কলসীয় ৩:১; ইব্রীয় ১০:১২, ১৩.
১৮, ১৯. সুসমাচারের পুস্তকগুলিতে অনুরূপ ভবিষ্যদ্বাণীগুলির সঙ্গে প্রকাশিত বাক্য ৬:২-৮ পদের কী সম্পর্ক আছে?
১৮ বিধি-ব্যবস্থার শেষ সম্পর্কে যীশুর ভবিষ্যদ্বাণী যে প্রথম শতাব্দীর পরেও প্রযোজ্য হবে, সেই সম্বন্ধে চতুর্থ এবং একটি নিশ্চিত ইঙ্গিতের জন্য, আমরা প্রকাশিত বাক্যের ৬ অধ্যায় লক্ষ্য করতে পারি। সা.শ. ৭০ সালের কয়েক দশক পরে লেখার সময়ে, প্রেরিত যোহন সক্রিয় অশ্বারোহীদের এক চিত্তাকর্ষক দৃশ্যের বর্ণনা করেছিলেন। (প্রকাশিত বাক্য ৬:২-৮) “প্রভুর দিনের”—তাঁর উপস্থিতির দিনের মধ্যে এই ভাববাদীমূলক দর্শন, আমাদের বিংশ শতাব্দীকে উল্লেখযোগ্য যুদ্ধবিগ্রহ (৪ পদ), ব্যাপক খাদ্যাভাব (৫ ও ৬ পদ) এবং মহামারীর (৮ পদ) সময় হিসাবে চিহ্নিত করে। স্পষ্টতই, যীশু সুসমাচারগুলিতে যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন এটি তারই অনুরূপ এবং প্রমাণ করে যে ‘প্রভুর দিনে’ যীশুর ভবিষ্যদ্বাণীর এক বৃহৎ পরিপূর্ণতা হওয়ার ছিল।—প্রকাশিত বাক্য ১:১০.
১৯ অবগত ব্যক্তিরা স্বীকার করেন যে মথি ২৪:৭-১৪ এবং প্রকাশিত বাক্য ৬:২-৮ পদে ভবিষ্যদ্বাণী করা যৌগিক চিহ্নটি ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভের পর থেকে প্রকাশ পেয়েছে। যিহোবার সাক্ষীরা বিশ্বব্যাপী ঘোষণা করেছে যে এই সময়েই যীশুর ভবিষ্যদ্বাণী তার দ্বিতীয় এবং বৃহত্তর পরিপূর্ণতা লাভ করেছে, যার প্রমাণ পাওয়া যায় নৃশংস যুদ্ধবিগ্রহ, বিধ্বংসী ভূমিকম্প, শোচনীয় দুর্ভিক্ষ এবং অবাধ রোগব্যাধি দ্বারা। শেষ বিষয়টি সম্বন্ধে, যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্ব সংবাদ বিবরণ (ইংরাজি, জুলাই ২৭, ১৯৯২) জানিয়েছে: “এইডস্ মহামারী . . . লক্ষ লক্ষ শিকারকে তাদের মৃত্যুর মুখে পাঠাচ্ছে আর শীঘ্রই হয়ত তা ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতী এবং ধ্বংসাত্মক মহামারী হয়ে দাঁড়াবে। ব্ল্যাক ডেথ মহামারী চতুর্দশ শতাব্দীতে প্রায় আড়াই কোটি যন্ত্রণাক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু ঘটিয়েছিল। কিন্তু ২০০০ সালের মধ্যে, ৩ কোটি থেকে ১১ কোটি লোকে এইচ্.আই.ভি., যে সংক্রামক বীজানু এইডস্-এর কারণ, তা বহন করবে, যেখানে বর্তমানে এই সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ। কোন প্রতিষেধক নেই বলে, এদের সকলেরই মৃত্যু নিশ্চিত।”
২০. মথি ২৪:৪-২২ পদের প্রাথমিক পরিপূর্ণতার সঙ্গে কোন্ বিষয়ের সম্পর্ক আছে, কিন্তু অন্য কোন্ পরিপূর্ণতাও স্পষ্ট বোঝা যায়?
২০ তাই, প্রেরিতদের জিজ্ঞাসার উত্তরে যীশু যা বলেছিলেন তা থেকে আমরা কি উপসংহারে আসব? তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী যিরূশালেমের ধ্বংস পর্যন্ত এবং সেই ঘটনাকে ঘিরে ঘটনাবলীর নিখুঁত পূর্ব-বর্ণনা দিয়েছিল এবং এটি আরও কিছুর উল্লেখ করেছিল যা সা.শ. ৭০ সালের পরে ঘটবে। কিন্তু তাঁর বাক্যের অধিকাংশই ভবিষ্যতে এক বৃহত্তর এবং দ্বিতীয় পরিপূর্ণতা লাভ করতে চলেছিল, যা মহাক্লেশের প্রতি নিয়ে যাবে যেটি বর্তমান দুষ্ট বিধি-ব্যবস্থার শেষ নিয়ে আসবে। এর অর্থ, মথি ২৪:৪-২২ পদে, সেইসঙ্গে মার্ক ও লূকের অনুরূপ বর্ণনাতে, যীশুর ভবিষ্যদ্বাণী সা.শ. ৩৩ সাল থেকে শুরু করে সা.শ. ৭০ সালের ক্লেশের মধ্যে পূর্ণ হয়েছিল। কিন্তু ঐ একই পদগুলি এক দ্বিতীয় ও বৃহত্তর পূর্ণতা লাভ করবে, যার অন্তর্ভুক্ত থাকবে ভবিষ্যতে আরও ব্যাপক এক মহাক্লেশ। এই বৃহত্তর পূর্ণতা এখন আমাদের সময়ে হচ্ছে; প্রত্যহ আমরা এর প্রমাণ দেখতে পাচ্ছি!f
কিসের প্রতি নিয়ে যাবে?
২১, ২২. আমরা কোথায় ভবিষ্যদ্বাণীমূলক আভাষ পাই যে আরও কিছু ঘটনা ঘটতে চলেছিল?
২১ ‘জাতিগণের সময় সম্পূর্ণ না হওয়া পর্য্যন্ত’ যে দীর্ঘ সময় থাকবে তখন ভাক্ত ভাববাদীরা নানা চিহ্ন ও অদ্ভুত লক্ষণ দেখাবে, তা উল্লেখ করেই যীশু তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী শেষ করেননি। (লূক ২১:২৪; মথি ২৪:২৩-২৬; মার্ক ১৩:২১-২৩) তিনি আরও বলেছিলেন যে অন্যান্য বিস্ময়কর ঘটনা ঘটবে, যেগুলি বিশ্বব্যাপী লক্ষ্য করা যাবে। মনুষ্যপুত্রের মহাপরাক্রম ও প্রতাপসহ আসার সঙ্গে এই বিষয়গুলি জড়িত থাকবে। মার্ক ১৩:২৪-২৭ পদ যীশুর বিস্তৃত ভবিষ্যদ্বাণীর প্রতিবেদনস্বরূপ:
২২ “আর সেই সময়ে সেই ক্লেশের পরে, সূর্য্য অন্ধকার হইবে, চন্দ্র জ্যোৎস্না দিবে না, আকাশ হইতে তারাগণের পতন হইবে, ও আকাশমণ্ডলের পরাক্রম সকল বিচলিত হইবে। আর তখন লোকেরা দেখিবে, মনুষ্যপুত্ত্র মহাপরাক্রম ও প্রতাপের সহিত মেঘযোগে আসিতেছেন। তখন তিনি দূতগণকে প্রেরণ করিয়া পৃথিবীর সীমা অবধি আকাশের সীমা পর্য্যন্ত চারি বায়ু হইতে তাঁহার মনোনীতদিগকে একত্র করিবেন।”
২৩. মথি ২৪:২৯-৩১ পদের পরিপূর্ণতা যে প্রথম শতাব্দীর অনেক পরেও ঘটবে তা কেন আমরা মনে করতে পারি?
২৩ মনুষ্যপুত্র, যিনি পুনরুত্থিত যীশু খ্রীষ্ট, সা.শ. ৭০ সাল যিহূদী ব্যবস্থার ধ্বংসাত্মক পতনের পর ঐরূপ চিত্তাকর্ষক উপায়ে উপস্থিত হননি। পৃথিবীর সমুদয় গোষ্ঠী অবশ্যই তাঁকে চিনতে পারেনি, যেমন মথি ২৪:৩০ পদ উল্লেখ করে, অথবা স্বর্গীয় দূতেরাও তখন সমস্ত পৃথিবী থেকে সকল অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের একত্র করেননি। তাহলে যীশুর বিস্ময়কর ভবিষ্যদ্বাণীর এই অতিরিক্ত অংশটি কখন পূর্ণ হবে? তা কি এখনই আমাদের চারপাশে যে ঘটনাগুলি ঘটেছে তার মধ্যে পূর্ণতা লাভ করছে, অথবা অদূর ভবিষ্যতে আমরা যে বিষয়গুলি আশা করতে পারি সেগুলির মধ্যে তা ঐশিক অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করছে? আমরা নিশ্চয়ই জানতে চাইব কারণ লূক যীশুর নির্দেশ লিখে রেখেছেন: “কিন্তু এ সকল ঘটনা আরম্ভ হইলে তোমরা ঊর্দ্ধদৃষ্টি করিও, মাথা তুলিও, কেননা তোমাদের মুক্তি সন্নিকট।”—লূক ২১:২৮.
[পাদটীকাগুলো]
a এই অধ্যায়গুলির কিছু অংশ পৃষ্ঠা ১৪ এবং ১৫তে দেওয়া তালিকায় পাওয়া যাবে; দাগ দেওয়া লাইনগুলি একই ঘটনার বর্ণনাগুলিকে ইঙ্গিত করে।
b এই ঘটনাগুলির ঐতিহাসিক বিবৃতির জন্য জানুয়ারি ১৫, ১৯৭০ সালের প্রহরীদুর্গের পৃষ্ঠা ৪৩-৫ দেখুন.
c মথিতে ৮০ বারেরও বেশি (২৪ অধ্যায় ৯ বার), ও লূকে ১৫ বার টো’টের উল্লেখ আছে। মার্ক মাত্র ছয়বার টো’টের ব্যবহার করেছেন কিন্তু তার মধ্যে চার বারের প্রসঙ্গ “চিহ্নের” সঙ্গে জড়িত।
d ইংরেজ লেখক ম্যাথিউ হেনরি মন্তব্য করেন: “কলদীয়দের দ্বারা যিরূশালেম ধ্বংস খুবই সাংঘাতিক ছিল, কিন্তু এটি তারও সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এরজন্য, সমস্ত . . . যিহূদীদের ব্যাপক এক হত্যার ভয় দেখা দিয়েছিল।”
e লূক ২১:২৪ পদের পরে, অনেকে লূকের বর্ণনায় একটি পরিবর্তন লক্ষ্য করেন। ডাঃ লিয়ন্ মরিস্ উল্লেখ করেছেন: “যীশু পরজাতীয়দের সময় সম্বন্ধে বলতে শুরু করেছিলেন। . . . অধিকাংশ পণ্ডিতেরা মনে করেন যে এখন মনুষ্য পুত্রের আগমনের প্রতি দৃষ্টিপাত করা হয়েছে।” অধ্যাপক আর্. গিনস্ লিখেছেন: মনুষ্য পুত্রের আগমন—(মথি ২৪:২৯-৩১; মার্ক ১৩:২৪-২৭). ‘পরজাতীয়গণের সময়’ সম্বন্ধে উল্লেখ এই বিষয়বস্তুর ভূমিকা হিসাবে কাজ করে; [লূকের] দৃষ্টিভঙ্গি এবার যিরূশালেমের ধ্বংসাবশেষ থেকে ভবিষ্যতের দিকে পরিচালিত হয়েছে।”
f অধ্যাপক ওয়াল্টার এল্. লিফেল্ড লিখেছেন: “যীশুর ভবিষ্যদ্বাণীর যে দুটি পর্ব আছে, তা ভেবে নেওয়া অবশ্যই সম্ভব: (১) সা.শ. ৭০ সালের মন্দির সংক্রান্ত ঘটনা এবং (২) ভবিষ্যতের ঘটনা যা ভবিষ্যদ্বাণীরূপে বর্ণনা করা হয়েছে।” জে. আর. ডামেলো যে বিবরণটির সম্পাদনা করেছেন, সেখানে বলা হয়েছে: “এই মহান বক্তৃতাটির বহু মুখ্য সমস্যা দূর হয়ে যায়, যদি আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের প্রভু একটি নয়, কিন্তু দুটি ঘটনার কথা বলেছিলেন, আর প্রথমটি দ্বিতীয়টিকে চিত্রিত করে। . . . বিশেষত [লূক] ২১:২৪ পদ, যেখানে ‘পরজাতিগণের সময়’ সম্বন্ধে বলা হয়েছে, . . . সেখানে যিরূশালেমের পতন এবং জগতের শেষের মাঝে একটি অনির্দিষ্ট ব্যবধানের কথা বলা হয়েছে।”
আপনার কি মনে আছে?
▫ মথি ২৪:৩ পদের প্রশ্ন সম্বন্ধে যীশুর কোন্ উত্তর পরিপূর্ণতা লাভ করেছিল যা সা.শ. ৭০ সালের প্রতি ইঙ্গিত করে?
▫ টো’টে শব্দটি ব্যবহারের দ্বারা আমরা কিভাবে যীশুর ভবিষ্যদ্বাণী বুঝতে সাহায্য পাই?
▫ প্রথম শতাব্দীতে কোন্ অর্থে একটি “মহাক্লেশ” হয়েছিল যা আগে কখনও হয়নি?
▫ আমাদের সম্বন্ধে যীশুর ভবিষ্যদ্বাণীর কোন্ দুটি অদ্বিতীয় বিষয় সম্বন্ধে লূক উল্লেখ করেছেন?
▫ মথি ২৪:৪-২২ পদের ভবিষ্যদ্বাণীর একটি দ্বিতীয় এবং বৃহত্তর পরিপূর্ণতার প্রতি কোন্ বিষয়গুলি ইঙ্গিত করে?
[২৪, ২৫ পৃষ্ঠার তালিকা]
৪ “যীশু উত্তর করিয়া তাঁহাদিগকে কহিলেন, দেখিও, কেহ যেন তোমাদিগকে না ভুলায়। ৫ কেননা অনেকে আমার নাম ধরিয়া আসিবে, বলিবে, আমিই সেই খ্রীষ্ট, আর অনেক লোককে ভুলাইবে। ৬ আর তোমরা যুদ্ধের কথা ও যুদ্ধের জনরব শুনিবে; দেখিও, ব্যাকুল হইও না; কেননা এ সকল অবশ্যই ঘটিবে, কিন্তু তখনও শেষ নয়।
৭ “কারণ জাতির বিপক্ষে জাতি ও রাজ্যের বিপক্ষে রাজ্য উঠিবে, এবং স্থানে স্থানে দুর্ভিক্ষ ও ভূমিকম্প হইবে। কিন্তু এ সকলই যাতনার আরম্ভ মাত্র।
৯ “সেই সময়ে লোকেরা ক্লেশ দিবার জন্য তোমাদিগকে সমর্পণ করিবে, ও তোমাদিগকে বধ করিবে, আর আমার নাম প্রযুক্ত সমুদয় জাতি তোমাদিগকে দ্বেষ করিবে। ১০ আর তৎকালে অনেকে বিঘ্ন পাইবে, এক জন অন্যকে সমর্পণ করিবে, এক জন অন্যকে দ্বেষ করিবে। ১১ আর অনেক ভাক্ত ভাববাদী উঠিয়া অনেককে ভুলাইবে। ১২ আর অধর্ম্মের বৃদ্ধি হওয়াতে অধিকাংশ লোকের প্রেম শীতল হইয়া যাইবে। ১৩ কিন্তু যে কেহ শেষ পর্য্যন্ত স্থির থাকিবে, সেই পরিত্রাণ পাইবে। ১৪ আর সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে; আর তখন শেষ উপস্হিত হইবে।
.................................................................
১৫ “অতএব যখন দেখিবে, ধ্বংসের যে ঘৃণার্হ বস্তু দানিয়েল ভাববাদী দ্বারা উক্ত হইয়াছে, তাহা পবিত্র স্থানে দাঁড়াইয়া আছে, - যে জন পাঠ করে, সে বুঝুক, ১৬ —তখন যাহারা যিহূদিয়াতে থাকে, তাহারা পাহাড় অঞ্চলে পলায়ন করুক; ১৭ যে কেহ ছাদের উপরে থাকে, সে গৃহ হইতে জিনিষপত্র লইবার জন্য নীচে না নামুক; ১৮ আর যে কেহ ক্ষেত্রে থাকে, সে আপন বস্ত্র লইবার নিমিত্ত পশ্চাতে ফিরিয়া না আসুক। ১৯ হায়, সেই সময়ে গর্ব্ভবতী এবং স্তন্যদাত্রীদিগের সন্তাপ হইবে! ২০ আর প্রার্থনা কর, যেন তোমাদের পলায়ন শীতকালে কিম্বা বিশ্রামবারে না ঘটে। ২১ কেননা তৎকালে এরূপ “মহাক্লেশ উপস্থিত হইবে, যেরূপ জগতের আরম্ভ অবধি এ পর্য্যন্ত কখনও হয় নাই, কখনও হইবেও না” ২২ আর সেই দিনের সংখ্যা যদি কমাইয়া দেওয়া না যাইত, তবে কোন প্রাণীই রক্ষা পাইত না; কিন্তু মনোনীতদের জন্য সেই দিনের সংখ্যা কমাইয়া দেওয়া যাইবে।
.................................................................
২৩ “তখন যদি কেহ তোমাদিগকে বলে, দেখ, সেই খ্রীষ্ট এখানে কিম্বা ওখানে, তোমরা বিশ্বাস করিও না। ২৪ কেননা ভাক্ত খ্রীষ্টেরা ও ভাক্ত ভাববাদীরা উঠিবে, এবং এমন মহৎ মহৎ চিহ্ন ও অদ্ভুত অদ্ভুত লক্ষণ দেখাইবে যে, যদি হইতে পারে, তবে মনোনীতদিগকেও ভুলাইবে। ২৫ দেখ, আমি পূর্ব্বেই তোমাদিগকে বলিলাম। ২৬ অতএব লোকে যদি তোমাদিগকে বলে, ‘দেখ, তিনি প্রান্তরে,’ তোমরা বাহিরে যাইও না; ‘দেখ, তিনি অন্তরাগারে,’ তোমরা বিশ্বাস করিও না। ২৭ কারণ বিদ্যুৎ যেমন পূর্ববদিক্ হইতে নির্গত হইয়া পশ্চিমদিক পর্য্যন্ত প্রকাশ পায়, তেমনি মনুষ্যপুত্ত্রের আগমন হইবে। ২৮ যেখানে মড়া থাকে, সেইখানে শকুন যুটিবে।
.................................................................
.................................................................
২৯ “আর সেই সময়ের ক্লেশের পরেই সূর্য্য অন্ধকার হইবে, চন্দ্র জ্যোৎস্না দিবে না, আকাশ হইতে তারাগণের পতন হইবে ও আকাশমণ্ডলের পরাক্রম সকল বিচলিত হইবে”। ৩০ আর তখন মনুষ্যপুত্ত্রের চিহ্ন আকাশে দেখা যাইবে, আর তখন পৃথিবীর সমুদয় গোষ্ঠী বিলাপ করিবে, এবং “মনুষ্যপুত্ত্রকে আকাশীয় মেঘরথে পরাক্রম ও মহা প্রতাপে আসিতে” দেখিবে। ৩১ আর তিনি মহা তূরীধ্বনি সহকারে আপন দূতগণকে প্রেরণ করিবেন; তাঁহারা আকাশের এক সীমা অবধি অন্য সীমা পর্য্যন্ত চারি বায়ু হইতে তাঁহার মনোনীতদিগকে একত্র করিবেন।
৫“যীশু তাঁহাদিগকে বলিতে লাগিলেন, দেখিও, কেহ যেন তোমাদিগকে না ভুলায়। ৬ অনেকে আমার নাম ধরিয়া আসিবে, বলিবে, আমিই সেই, আর অনেক লোককে ভুলাইবে। ৭ কিন্তু তোমরা যখন যুদ্ধের কথা ও যুদ্ধের জনরব শুনিবে, তখন ব্যাকুল হইও না; এ সকল অবশ্যই ঘটিবে,
৮ “কিন্তু তখনও শেষ নয়। কারণ জাতির বিপক্ষে জাতি, ও রাজ্যের বিপক্ষে রাজ্য উঠিবে। স্থানে স্থানে ভূমিকম্প হইবে; দুর্ভিক্ষ হইবে; এ সকল যাতনার আরম্ভমাত্র।
৯ “তোমরা আপনাদের বিষয়ে সাবধান। লোকে তোমাদিগকে বিচার-সভায় সমর্পণ করিবে, এবং তোমরা সমাজ-গৃহে প্রহারিত হইবে; আর আমার জন্য তোমরা দেশাধ্যক্ষ ও রাজাদের কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত তাহাদের সম্মুখে দাঁড়াইবে। ১০ আর অগ্রে সর্ব্বজাতির কাছে সুসমাচার প্রচারিত হওয়া আবশ্যক। ১১ কিন্তু লোকে যখন তোমাদিগকে সমর্পণ করিতে লইয়া যাইবে, তখন কি বলিবে, অগ্রে সে জন্য ভাবিত হইও না; বরং সেই দণ্ডে যে কথা তোমাদিগকে দেওয়া যাইবে, তাহাই বলিও; কেননা তোমরাই যে কথা বলিবে, তাহা নয়, কিন্তু পবিত্র আত্মাই বলিবেন। ১২ তখন ভ্রাতা ভ্রাতাকে ও পিতা সন্তানকে মৃত্যুতে সমর্পণ করিবে; এবং সন্তানেরা আপন আপন মাতাপিতার বিপক্ষে উঠিয়া তাহাদিগকে বধ করাইবে। ১৩ আর আমার নাম প্রযুক্ত তোমরা সকলের ঘৃণিত হইবে; কিন্তু যে কেহ শেষ পর্য্যন্ত স্থির থাকিবে, সেই পরিত্রাণ পাইবে।
.................................................................
১৪ “পরন্তু যখন তোমরা দেখিবে, ধ্বংসের সেই ঘৃণার্হ বস্তু যেখানে দাঁড়াইবার নয়, সেইখানে দাঁড়াইয়া আছে - যে পাঠ করে, সে বুঝুক, - তখন যাহারা যিহূদিয়াতে থাকে, তাহারা পাহাড় অঞ্চলে পলায়ন করুক; ১৫ এবং যে কেহ ছাদের উপরে থাকে, সে গৃহ হইতে জিনিষপত্র লইবার জন্য নীচে না নামুক ও তাহার মধ্যে প্রবেশ না করুক; ১৬ এবং যে কেহ ক্ষেত্রে থাকে, সে আপন বস্ত্র লইবার নিমিত্ত পশ্চাতে ফিরিয়া না যাউক। ১৭ হায়, সেই সময়ে গর্ব্ভবতী এবং স্তন্যদাত্রী নারীদের সন্তাপ! ১৮ আর প্রার্থনা করিও, যেন ইহা শীতকালে না হয়। ১৯ কেননা তৎকালে এরূপ ক্লেশ উপস্থিত হইবে, যেরূপ ক্লেশ ঈশ্বরের কৃত সৃষ্টির আদি অবধি এ পর্য্যন্ত কখনও হয় নাই, কখন হইবেও না। ২০ আর প্রভু যদি সেই দিনের সংখ্যা কমাইয়া না দিতেন, তবে কোন প্রাণীই রক্ষা পাইত না; কিন্তু তিনি যাহাদিগকে মনোনীত করিয়াছেন, সেই মনোনীতদের জন্য সেই দিনের সংখ্যা কমাইয়া দিলেন।
..................................................................
২১ “আর তৎকালে যদি কেহ তোমাদিগকে বলে, দেখ, সেই খ্রীষ্ট এখানে, কিম্বা দেখ, ওখানে তোমরা বিশ্বাস করিও না। ২২ কেননা ভাক্ত খ্রীষ্টেরা ও ভাক্ত ভাববাদীরা উঠিবে, এবং নানা চিহ্ন ও অদ্ভুত লক্ষণ দেখাইবে, যেন, যদি হইতে পারে, তবে মনোনীতদিগকেও ভুলায়। ২৩ কিন্তু তোমরা সাবধান থাকিও। দেখ, আমি পূর্ব্বেই তোমাদিগকে সকলই জানাইলাম।
.................................................................
.................................................................
২৪ “আর সেই সময়ে সেই ক্লেশের পরে, সূর্য্য অন্ধকার হইবে, চন্দ্র জ্যোৎস্না দিবে না, ২৫ আকাশ হইতে তারাগণের পতন হইবে, ও আকাশমণ্ডলের পরাক্রম সকল বিচলিত হইবে। ২৬ আর তখন লোকেরা দেখিবে, মনুষ্যপুত্ত্র মহাপরাক্রম ও প্রতাপের সহিত মেঘযোগে আসিতেছেন। ২৭ তখন তিনি দূতগণকে প্রেরণ করিয়া পৃথিবীর সীমা অবধি আকাশের সীমা পর্য্যন্ত চারি বায়ু হইতে তাঁহার মনোনীতদিগকে একত্র করিবেন।
৮ “তিনি কহিলেন, দেখিও, ভ্রান্ত হইও না; কেননা অনেকে আমার নাম ধরিয়া আসিবে, বলিবে, ‘আমিই তিনি’ ও সময় সন্নিকট; তোমরা তাহাদের পশ্চাৎ যাইও না। ৯ আর যখন তোমরা যুদ্ধের ও গণ্ডগোলের কথা শুনিবে, ত্রাসযুক্ত হইও না, কেননা প্রথমে এই সকল ঘটিবেই ঘটিবে, কিন্তু তখনই শেষ নয়।
১০ “পরে তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, জাতির বিপক্ষে জাতি ও রাজ্যের বিপক্ষে রাজ্য উঠিবে। ১১ মহৎ মহৎ ভূমিকম্প এবং স্থানে স্থানে দুর্ভিক্ষ ও মহামারী হইবে, আর আকাশে ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর লক্ষণ ও মহৎ মহৎ চিহ্ন হইবে;
১২ “কিন্তু এই সকল ঘটনার পূর্ব্বে লোকেরা তোমাদের উপরে হস্তক্ষেপ করিবে, তোমাদিগকে তাড়না করিবে, সমাজ-গৃহে ও কারাগারে সমর্পণ করিবে; আমার নামের নিমিত্ত তোমরা রাজাদের ও শাসনকর্ত্তাদের সম্মুখে নীত হইবে। ১৩ সাক্ষ্যের জন্য এই সকল তোমাদের প্রতি ঘটিবে। ১৪ অতএব মনে মনে স্থির করিও যে, কি উত্তর দিতে হইবে, তাহার নিমিত্ত অগ্রে চিন্তা করিবে না। ১৫ কেননা আমি তোমাদিগকে এমন মুখ ও বিজ্ঞতা দিব যে, তোমাদের বিপক্ষেরা কেহ প্রতিরোধ করিতে কি উত্তর দিতে পারিবে না। ১৬ আর তোমরা পিতামাতা, ভ্রাতৃগণ, জ্ঞাতি ও বন্ধুগণ কর্ত্তৃকও সমর্পিত হইবে, এবং তোমাদের কাহাকেও তাহারা বধ করাইবে। ১৭ আর আমার নাম প্রযুক্ত তোমরা সকলের ঘৃণিত হইবে। ১৮ কিন্তু তোমাদের মস্তকের একগাছি কেশও নষ্ট হইবে না। ১৯ তোমরা নিজ নিজ ধৈর্য্যে আপন আপন প্রাণ লাভ করিবে।
..................................................................
২০ “আর যখন তোমরা যিরূশালেমকে সৈন্যসামন্ত দ্বারা বেষ্টিত দেখিবে, তখন জানিবে যে, তাহার ধ্বংস সন্নিকট। ২১ তখন যাহারা যীহূদিয়ায় থাকে, তাহারা পাহাড় অঞ্চলে পলায়ন করুক, এবং যাহারা নগরের মধ্যে থাকে, তাহারা বাহিরে যাউক; আর যাহারা পল্লীগ্রামে থাকে, তাহারা নগরে প্রবেশ না করুক। ২২ কেননা তখন প্রতিশোধের সময়, যে সমস্ত কথা লিখিত আছে, সেই সমস্ত পূর্ণ হইবার সময়। ২৩ হায়, সেই সময়ে গর্ব্ভবতী ও স্তন্যদাত্রী স্ত্রীদিগের সন্তাপ! কেননা দেশে বিষম দুর্গতি এবং এই জাতির প্রতি ক্রোধ বর্ত্তিবে। ২৪ লোকেরা খড়গধারে পতিত হইবে; এবং বন্দি হইয়া সকল জাতির মধ্যে নীত হইবে;
..................................................................
আর জাতিগণের সময় সম্পূর্ণ না হওয়া পর্য্যন্ত যিরূশালেম জাতিগণের পদ-দলিত হইবে।
.................................................................
.................................................................
২৫ “আর সূর্য্যে, চন্দ্রে ও নক্ষত্রগণে নানা চিহ্ন প্রকাশ পাইবে, এবং পৃথিবীতে জাতিগণের ক্লেশ হইবে, তাহারা সমুদ্রের ও তরঙ্গের গর্জ্জনে উদ্বিগ্ন হইবে। ২৬ ভয়ে, এবং ভূমণ্ডলে যাহা যাহা ঘটিবে তাহার আশঙ্কায়, মানুষের প্রাণ উড়িয়া যাইবে; কেননা আকাশ-মণ্ডলের পরাক্রম সকল বিচলিত হইবে। ২৭ আর তৎকালে তাহারা মনুষ্যপুত্ত্রকে পরাক্রম ও মহাপ্রতাপ সহকারে মেঘযোগে আসিতে দেখিবে। ২৮ কিন্তু এ সকল ঘটনা আরম্ভ হইলে তোমরা ঊর্দ্ধ্বদৃষ্টি করিও, মাথা তুলিও, কেননা তোমাদের মুক্তি সন্নিকট।
[Pictures on page 20]
যিরূশালেম অথবা যিহূদী ব্যবস্থা যে সমস্ত মহাক্লেশ দেখেছিল, সা.শ. ৭০ সালেরটি তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিল