তারা যিহোবার ইচ্ছা পালন করেছিলেন
যীশু ৭০ জন শিষ্যকে পাঠান
সময়টি ছিল সা.কা. ৩২ সালের বসন্তকাল। যীশুর মৃত্যুর আর মাত্র ছয় মাস বাকি আছে। সুতরাং, প্রচার কাজকে ত্বরান্বিত করা ও তাঁর কিছু অনুগামীদের আরও প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তিনি ৭০ জন শিষ্যকে নিযুক্ত করেছিলেন ও “আপনি যেখানে যেখানে যাইতে উদ্যত ছিলেন, সেই সমস্ত নগরে ও স্থানে আপনার অগ্রে দুই দুই জন করিয়া তাহাদিগকে প্রেরণ করিলেন।”—লূক ১০:১.a
যীশু “আপনার অগ্রে,” তাঁর শিষ্যদের পাঠিয়েছিলেন যাতে লোকেরা আরও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে তারা মশীহের পক্ষে অথবা বিপক্ষে থাকবেন যখন যীশু নিজে পরবর্তী সময়ে উপস্থিত হবেন। কিন্তু কেন তিনি তাদের “দুই দুই জন” করে পাঠিয়েছিলেন? স্পষ্টতই এই কারণে যে যখন বিরোধিতার সম্মুখীন হবেন সেই সময়ে তারা একে অপরের জন্য উৎসাহের উৎস হতে পারবেন।
তাদের প্রচার কাজের তৎপরতার প্রতি জোর দিয়ে যীশু তাঁর অনুগামীদের বলেছিলেন: “শস্য প্রচুর বটে, কিন্তু কার্য্যকারী লোক অল্প; অতএব শস্যক্ষেত্রের স্বামীর নিকটে প্রার্থনা কর, যেন তিনি নিজ শস্যক্ষেত্রে কার্য্যকারী লোক পাঠাইয়া দেন।” (লূক ১০:২) শস্যের উপমা দেওয়া খুবই উপযুক্ত ছিল কারণ শস্যচ্ছেদনের সময়ে কোনরকম বিলম্বের ফলে মূল্যবান ফসল নষ্ট হয়ে যেতে পারত। অনুরূপভাবে, যদি শিষ্যেরা তাদের প্রচার কার্যভারের প্রতি অবহেলা করতেন, মূল্যবান জীবন নষ্ট হয়ে যেতে পারত!—যিহিষ্কেল ৩৩:৬.
অবিক্ষিপ্ত পরিচারকেরা
তাঁর শিষ্যদের প্রতি যীশুর পরবর্তী নির্দেশ ছিল: “তোমরা থলী কি ঝুলী কি পাদুকা সঙ্গে লইয়া যাইও না এবং পথের মধ্যে কাহাকেও মঙ্গলবাদ করিও না।” (লূক ১০:৪) একজন ভ্রমণকারীর জন্য এটি প্রথাস্বরূপ ছিল যে সে কেবল একটি ঝুলী এবং খাদ্যই নয় কিন্তু অতিরিক্ত একজোড়া জুতোও সাথে নেবেন যেহেতু জুতোর নিম্নভাগ ক্ষয় হওয়ার এবং ফিতে ছিড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকত। কিন্তু যীশুর শিষ্যেরা এইধরনের বিষয়গুলির প্রতি উদ্বিগ্ন ছিলেন না। বরং তারা আস্থা রেখেছিলেন যে যিহোবা সহইস্রায়েলীয়দের মাধ্যমে যাদের মধ্যে অতিথিসেবা এক প্রথাস্বরূপ ছিল, তাদের যত্ন নেবেন।
কিন্তু যীশু কেন তাঁর শিষ্যদের, কাউকে মঙ্গলবাদপূর্বক আলিঙ্গন করতে নিষেধ করেছিলেন? তাদের কি সৌজন্যহীন এমনকি রূঢ় হওয়ার দরকার ছিল? একেবারেই না! গ্রীক শব্দ এসপাজোমাই যা মঙ্গলবাদপূর্বক আলিঙ্গন করাকে বোঝায়, কেবলমাত্র এক ভদ্রোচিত “নমস্কার” অথবা “শুভদিন” বলার চেয়ে আরও বেশি অর্থ রাখে। এছাড়াও এটি হয়ত প্রথাগত চুমু, আলিঙ্গন এবং দীর্ঘ কথাবর্তাকে জড়িত করতে পারে যা দুই পরিচিত ব্যক্তি মিলিত হলে তাদের মধ্যে হয়ে থাকে। একজন মন্তব্যকারী উল্লেখ করেন: “আমাদের মত সামান্য আনত হয়ে বা হাত বাড়িয়ে দিয়ে অভিবাদন করার রীতি প্রাচ্যের লোকেদের মধ্যে প্রচলিত ছিল না কিন্তু অনেকবার আলিঙ্গন করা, ঝোঁকা এমনকি ভূমিতে সম্পূর্ণ দেহ অবনত করে প্রণাম করার মাধ্যমে তা করা হত। এই সমস্ত কিছুর জন্য অনেক সময়ের প্রয়োজন ছিল।” (২ রাজাবলি ৪:২৯ পদের সাথে তুলনা করুন।) সুতরাং, প্রথা থাকা সত্ত্বেও যীশু তাঁর অনুগামীদের অপ্রয়োজনীয় বিক্ষেপ এড়িয়ে চলতে সাহায্য করেছিলেন।
পরিশেষে, যীশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন যে যখন তারা একটি গৃহে প্রবেশ করবেন ও তাদের স্বাগত জানানো হবে তখন তাদের ‘সেই বাটীতেই থাকা, এবং তাহারা যাহা দেয়, তাহাই ভোজন পান করা’ উচিত। কিন্তু যদি তারা একটি নগরে প্রবেশ করেন ও আন্তরিকতার সাথে গৃহীত না হন “তবে বাহির হইয়া সেই নগরের পথে পথে গিয়া এই কথা বলিও, তোমাদের নগরের যে ধূলা আমাদের পায়ে লাগিয়াছে, তাহাও তোমাদের বিরুদ্ধে ঝাড়িয়া দিই।” (লূক ১০:৭, ১০, ১১) একজনের পা থেকে ধূলো ঝেড়ে ফেলা বা মুছে ফেলা ইঙ্গিত করে যে, শিষ্যেরা শান্তিপূর্ণভাবে সেই অগ্রাহ্যকারী গৃহ অথবা নগর এই পরিণতিসহ পরিত্যাগ করবেন যার ফল পরবর্তীকালে ঈশ্বরের কাছ থেকে আসবে। কিন্তু যারা দয়ার সাথে যীশুর শিষ্যদের গ্রহণ করেছিলেন তারা নিজেদের আশীর্বাদ লাভ করার স্থানে রেখেছিলেন। আরেকটি উপলক্ষে যীশু তাঁর প্রেরিতদের বলেছিলেন: “যে তোমাদিগকে গ্রহণ করে, সে আমাকেই গ্রহণ করে; আর যে আমাকে গ্রহণ করে সে আমার প্রেরণকর্ত্তাকেই গ্রহণ করে। আর যে কেহ এই ক্ষুদ্রগণের মধ্যে কোন এক জনকে শিষ্য বলিয়া কেবল এক বাটী শীতল জল পান করিতে দেয়, আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, সে কোন মতে আপন পুরস্কারে বঞ্চিত হইবে না।”—মথি ১০:৪০, ৪২.
আমাদের জন্য শিক্ষা
ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করা ও শিষ্য তৈরি করার কর্মভার এখন জগদ্ব্যাপী ৫০,০০,০০০ জনেরও বেশি যিহোবার সাক্ষীদের দ্বারা সম্পাদিত হচ্ছে। (মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০) তারা উপলব্ধি করেন যে তাদের বার্তা জরুরী। তাই, তারা তাদের এই গুরুত্বপূর্ণ কার্যভারের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দেওয়াকে প্রতিরোধ করতে পারে এমন সমস্তরকম বিক্ষেপগুলিকে এড়িয়ে চলে সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার করেন।
যিহোবার সাক্ষীরা যাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন তাদের সকলের প্রতি আন্তরিক হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করে থাকেন। কিন্তু, তারা অমূলক গল্পে রত হন না অথবা সামাজিক বিষয়গুলি কিংবা অবিচারকে দূর করার জন্য এই জগতের ব্যর্থ প্রচেষ্টা সম্বন্ধে কোন বিতর্কে জড়িত হন না। (যোহন ১৭:১৬) পরিবর্তে, তারা তাদের আলোচনাকে মনুষ্য সমস্যার দীর্ঘ-মেয়াদী সমাধান—ঈশ্বরের রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রীভূত করেন।
যিহোবার সাক্ষীদের সাধারণত দুইজন করে কাজ করতে দেখা যায়। যদি তাদের প্রত্যেকে একা একা কাজ করতেন তাহলে কি আরও বেশি কাজ সম্পাদন করা যেত না? হয়ত যেত। তবুও, আজকে খ্রীষ্টানেরা একজন সহবিশ্বাসীর সাথে পাশাপাশি কাজ করার উপকারিতাকে উপলব্ধি করেন। বিপদজনক এলাকায় সাক্ষ্যদান করার সময় এটি কিছুটা সুরক্ষা যুগিয়ে থাকে। এছাড়াও একজন সাথীর সাথে কাজ করা এক নতুন ব্যক্তিকে সুসমাচারের একজন অভিজ্ঞ প্রকাশকের দক্ষতা থেকে উপকৃত হতে সমর্থ করে। প্রকৃতই উভয়ে পরস্পরের প্রতি উৎসাহ আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে অবদান রাখেন।—হিতোপদেশ ২৭:১৭.
তাই নিঃসন্দেহে প্রচার কাজ হচ্ছে সর্বাপেক্ষা জরুরী কাজ যা এই “শেষ কালে” সম্পাদিত হচ্ছে। (২ তীমথিয় ৩:১) যিহোবার সাক্ষীরা এক জগদ্ব্যাপী ভ্রাতৃসমাজের সমর্থন লাভ করায় সুখী, যেখানে তারা “সুসমাচারের বিশ্বাসের পক্ষে” কাজ করেন।—ফিলিপীয় ১:২৭.
[পাদটীকাগুলো]
a কিছু বাইবেল এবং প্রাচীন গ্রীক পাণ্ডুলিপি বলে যে যীশু “বাহাত্তর জন” শিষ্যকে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু, অসংখ্য পাণ্ডুলিপি “সত্তর জন” উদ্ধৃতিটিকে সমর্থন করে। যাই হোক না কেন, এই পরিভাষাগত পার্থক্যটি মুখ্য বিষয়টিকে খর্ব করে না যে যীশু প্রচার করার জন্য তাঁর শিষ্যদের এক বৃহৎ দলকে পাঠিয়েছিলেন।