তিনি “পৃথিবীর সীমা পর্য্যন্ত” দীপ্তি ছড়াতে সাহায্য করেছিলেন
প্রেরিত পৌল “পৃথিবীর সীমা পর্য্যন্ত” আধ্যাত্মিক দীপ্তি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। ফলে অনেক লোক যারা “অনন্ত জীবনের জন্য নিরূপিত হইয়াছিল, তাহারা বিশ্বাস করিল।”—প্রেরিত ১৩:৪৭, ৪৮; যিশাইয় ৪৯:৬.
যিহোবার সাক্ষিদের পরিচালক গোষ্ঠীর সদস্য, উইলিয়াম লয়েড ব্যারির উৎসর্গীকৃত জীবন ও অক্লান্ত খ্রীষ্টীয় পরিচর্যার মধ্যেও আধ্যাত্মিক দীপ্তি ছড়িয়ে দেওয়ার এক তীব্র ইচ্ছা ছিল। ভাই ব্যারি ১৯৯৯ সালের ২রা জুলাই, হাওয়াই দ্বীপের এক জেলা সম্মেলনে একটা বক্তৃতা দেওয়ার সময় মারা যান।
লয়েড ব্যারি ১৯১৬ সালের ২০শে ডিসেম্বর নিউজিল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবামা, সি. টি. রাসেলের লেখা ওয়াচটাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটির বিভিন্ন বইপত্রে প্রকাশিত বাইবেলের সত্যে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। ফলে, ভাই ব্যারি এক খ্রীষ্টীয় পরিবারে বড় হয়ে উঠেছিলেন।
ভাই ব্যারির খেলাধূলা ও লেখাপড়ার প্রতি খুবই আগ্রহ ছিল এবং বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করে তিনি এমনকি ডিগ্রিও লাভ করেছিলেন কিন্তু আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোতে তিনি তার দৃষ্টি স্থির রেখেছিলেন। ফলে, ১৯৩৯ সালের ১লা জানুয়ারি তিনি পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যা শুরু করেন আর অস্ট্রেলিয়া বেথেল পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে যিহোবার সেবা করতে থাকেন। ১৯৪১ সালে সরকার যখন সোসাইটির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে তখন ভাই ব্যারি অফিসের কাজ করেছিলেন আর সেইসময় খ্রীষ্টান ভাইবোনদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য মাঝে মাঝে তিনি বিভিন্ন প্রবন্ধ লেখার দায়িত্ব পালন করতেন। সুসমাচার প্রচারের কাজেও তিনি এক বিরাট ভূমিকা পালন করেছিলেন।
১৯৪২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভাই ব্যারি একজন পূর্ণ-সময়ের কর্মীকে বিয়ে করেন। তার প্রিয় স্ত্রী, মেলবা এই সমস্ত বছর ধরে বিশ্বস্তভাবে তার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজ করেছেন। আমেরিকাতে ওয়াচটাওয়ার বাইবেল স্কুল অফ গিলিয়েডের ১১তম ক্লাসে যোগ দেওয়ার পর তারা বিদেশের ক্ষেত্রগুলোতে কাজ করার জন্য নিজেদেরকে তৈরি রেখেছিলেন। তাদের কার্যভারের জায়গাকে সত্যিই অনেকে ‘পৃথিবীর সীমাই’ মনে করবেন। কারণ তাদের জাপানে পাঠানো হয়েছিল। ১৯৪৯ সালের নভেম্বরে জাপানে এসে পৌঁছানোর পর তারা বন্দর শহর, কোবেতে মিশনারি হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। জাপানে তখন মাত্র ১২ জন ব্যক্তি রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করছিলেন। ভাই ব্যারি তার নতুন গৃহ, জাপানের ভাষা শিখেছিলেন ও তাদের আদব-কায়দা রপ্ত করেছিলেন এবং জাপানি লোকেদের গভীরভাবে ভালবেসেছিলেন, যাদের সঙ্গে তিনি পরের ২৫ বছর কাজ করেছিলেন। জাপানে বেড়ে ওঠা খ্রীষ্টান ভাইবোনেরা জানতেন যে যারা “অনন্ত জীবনের জন্য নিরূপিত” তাদের জন্য তার ভালবাসা কতখানি, আর এই ভালবাসাই তাকে বেশ কিছু দশক ধরে সফলভাবে ওই শাখা দেখাশুনার কাজ করে চলতে সাহায্য করেছিল।
১৯৭৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে, যখন জাপানে প্রায় ৩০,০০০ জন সাক্ষি ছিলেন তখন ভাই ও বোন ব্যারিকে সেখান থেকে নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে নিয়ে আসা হয়েছিল। আত্মায় অভিষিক্ত খ্রীষ্টান হওয়ায় ভাই ব্যারি যিহোবার সাক্ষিদের পরিচালক গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে সেবা করার জন্য আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। (রোমীয় ৮:১৬, ১৭) লেখালেখিতে তার অভিজ্ঞতা ছিল, তাই রচনা বিভাগে তার নতুন দায়িত্ব পালন করতে তা তাকে খুবই সাহায্য করেছিল। আর শাখার বিভিন্ন কাজ ও বিভিন্ন দেশে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকায় তিনি পরিচালক গোষ্ঠীর প্রকাশনা কমিটির একজন সদস্য হিসেবে খুব ভালভাবে কাজ করতে পেরেছিলেন।
কিন্তু প্রাচ্যের দেশ ও সেখানকার লোকেদের জন্য ভাই ব্যারির ভালবাসা কখনও কমে যায়নি। গিলিয়েড স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ও সেইসঙ্গে বেথেল পরিবারের সদস্যেরা জানেন যে তার বক্তৃতা ও মন্তব্যগুলোতে প্রায়ই মিশনারি ভাইবোনদের সম্বন্ধে অনেক সুন্দর সুন্দর কাহিনীগুলো শোনা যেত। ভাই ব্যারি যখন উচ্ছ্বাসের সঙ্গে তার নিজের অভিজ্ঞতাগুলো বলতেন তখন ‘পৃথিবীর সীমা পর্য্যন্ত’ রাজ্যের প্রচার কাজের জীবন্ত ছবি যেন চোখের সামনে ভেসে উঠত। ১৯৬০ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর সংখ্যার প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকায় প্রকাশিত তার জীবনীতে এইরকম কিছু অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়।
আমরা বিশ্বাস করি যে ‘খ্রীষ্টের সহদায়াদ’ হিসেবে ভাই ব্যারির আগ্রহ, যারা “অনন্ত জীবনের জন্য নিরূপিত” তাদের জন্য অক্ষুণ্ণ থাকবে। তিনি ছিলেন এক আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি, যিনি নিজেকে সম্পূর্ণরূপে যিহোবার কাছে সঁপে দিয়েছিলেন ও ঈশ্বরের লোকেদের জন্য তার আন্তরিক ভালবাসা ছিল। তাই তাকে যারা চিনতেন ও ভালবাসতেন তারা অবশ্যই অনেকভাবে তার অভাব বোধ করবেন। তবুও, আমরা আনন্দিত যে ভাই ব্যারি পার্থিব জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তার বিশ্বস্ততা বজায় রেখেছিলেন।—প্রকাশিত বাক্য ২:১০.
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
১৯৮৮ সালে “শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি” (ইংরেজি) যখন প্রকাশ করা হয় তখন ভাই লয়েড ব্যারি ও জন বার
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
গিলিয়েডের ১১তম ক্লাসের গ্র্যাজুয়েটরা ৪০ বছর পর জাপানে মিলিত হয়েছেন