ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w০১ ৬/১ পৃষ্ঠা ২৩-২৭
  • হৃদয়বিদারক বিচ্ছেদ সত্ত্বেও আনন্দিত এবং কৃতজ্ঞ

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • হৃদয়বিদারক বিচ্ছেদ সত্ত্বেও আনন্দিত এবং কৃতজ্ঞ
  • ২০০১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • পরিচর্যার জন্য প্রশিক্ষণ
  • যেভাবে আমরা সেখানে থাকতে পেরেছিলাম
  • নতুন এলাকায়
  • এক হৃদয়বিদারক পরীক্ষা
  • পরিচর্যায় আনন্দজনক পুরস্কার
  • কৃতজ্ঞতায় মন ভরে ওঠা
  • ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ত্যাগস্বীকার আমাদের জন্য প্রচুর আশীর্বাদ নিয়ে এসেছে
    ২০০৪ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • আনন্দের সঙ্গে যিহোবার নির্দেশনা মেনে নেওয়া
    ১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • আমি রুমানিয়াতে বাইবেলের সত্য শিখেছিলাম
    ১৯৯৭ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
২০০১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w০১ ৬/১ পৃষ্ঠা ২৩-২৭

জীবন কাহিনী

হৃদয়বিদারক বিচ্ছেদ সত্ত্বেও আনন্দিত এবং কৃতজ্ঞ

বলেছেন ন্যান্সি ই. পোর্টার

দিনটা ছিল ১৯৪৭ সালের ৫ই জুন, আমেরিকার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের বাহামা দ্বীপে এক মনোরম বিকেল। একজন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা হঠাৎ করেই আমাদের অর্থাৎ আমার ও আমার স্বামী জর্জের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তিনি আমাদের হাতে একটা চিঠি ধরিয়ে দেন যেটাতে বলা ছিল যে, এই দ্বীপে আমাদের থাকাটা গ্রহণযোগ্য নয় আর তাই আমরা যেন “সঙ্গে সঙ্গে সেই জায়গা ছেড়ে চলে যাই!”

জর্জ এবং আমিই ছিলাম যিহোবার সাক্ষিদের প্রথম মিশনারি, যারা বাহামার সেই বড় শহর নেসোতে গিয়েছিলাম। নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত অষ্টম গিলিয়েড ক্লাস থেকে গ্র্যাজুয়েশন নেওয়ার পর আমাদেরকে এখানে পাঠানো হয়েছিল। আমরা এমন কী করেছিলাম, যার জন্য মাত্র তিন মাস থাকার পরই আমাদেরকে এইরকম একটা কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল? আর কীভাবে ৫০ বছরেরও বেশি সময় পরে এখনও আমি এখানে আছি?

পরিচর্যার জন্য প্রশিক্ষণ

আমার বাবা হ্যারি কিলনারের জন্যই আমি এই পথ বেছে নিয়েছিলাম কারণ তিনিই আমার জীবনে জোরালো প্রভাব ফেলেছিলেন। তিনি আমার জন্য এক উত্তম উদাহরণ রেখেছিলেন এবং একজন যিহোবার সাক্ষি হওয়ার জন্য অনেক ত্যাগস্বীকার করেছিলেন। যদিও তার স্বাস্থ্য খুব একটা ভাল ছিল না কিন্তু প্রায় প্রত্যেক ছুটির দিনগুলোতে তিনি প্রচারে যেতেন এবং উদ্যোগের সঙ্গে রাজ্যের আগ্রহকে প্রথমে রাখতেন। (মথি ৬:৩৩) আর্থিক দিক দিয়ে আমরা খুব স্বচ্ছল ছিলাম না কিন্তু ১৯৩০ এর দশকে কানাডার আলবার্টা লেথব্রিজে তার জুতোর দোকানই ছিল আধ্যাত্মিক কাজের একটা কেন্দ্র। আমার মনে পড়ে যিহোবার সাক্ষিদের পূর্ণ-সময়ের পরিচারক, যাদেরকে অগ্রগামী বলা হয়, তারা আমাদের বাড়িতে আসতেন এবং তাদের অভিজ্ঞতা বলতেন।

১৯৪৩ সালে আলবার্টার শহর ফোর্ট ম্যাকলিওড এবং ক্লার্জহোমের কাছে আমি অগ্রগামীর কাজ শুরু করি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিরোধীরা আমাদের নামে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিয়েছিল বলে সেই সময় কানাডায় আমাদের প্রচার কাজে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। আমাদের এলাকা একেক দিকে ৫০ কিলোমিটার করে বিস্তৃত ছিল কিন্তু যুবতী হওয়ায় এবং শরীরে যথেষ্ট শক্তি থাকায় সেই এলাকার ছোট ছোট জায়গাগুলোতে বা খামারে সাইকেলে বা হেঁটে যেতে আমাদের কোন কষ্ট হতো না। সেই সময় কিছু গিলিয়েড গ্র্যাজুয়েটদের সঙ্গে আমার কথা বলার সুযোগ হয়েছিল আর তাদের অভিজ্ঞতাগুলো আমাকে মিশনারি হওয়ার জন্য প্রেরণা দিয়েছিল।

১৯৪৫ সালে আমি জর্জ পোর্টারকে বিয়ে করি, যে কানাডার সাসকাচুয়ান থেকে এসেছিল। তার বাবামা ১৯১৬ সাল থেকে উদ্যোগী সাক্ষি ছিলেন এবং সে-ও পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যাকে তার জীবনের লক্ষ্য হিসেবে নিয়েছিল। কানাডার নর্থ ভ্যানকুভারের অপূর্ব লিন উপকণ্ঠে আমাদেরকে প্রথম দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আর এর কিছু দিন পরেই আমাদেরকে গিলিয়েডের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।

থিওলজি শিক্ষাকেন্দ্র থেকে গ্র্যাজুয়েটপ্রাপ্ত অনেক ব্যক্তির সঙ্গে আমি কথা বলেছি এবং থিওলজির ওপর তাদের প্রশিক্ষণ কীভাবে ঈশ্বর এবং তাঁর বাক্য বাইবেলের ওপর তাদের বিশ্বাসকে নষ্ট করে দিয়েছে তা-ও দেখেছি। অন্যদিকে গিলিয়েডে আমরা যা শিখেছিলাম, তা আমাদের চিন্তা করার ক্ষমতাকে তীক্ষ্ণ করেছিল আর সর্বোপরি যিহোবা ও তাঁর বাক্যের ওপর আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছিল। আমাদের সহপাঠীদেরকে চীন, সিঙ্গাপুর, ভারত, আফ্রিকার দেশগুলোতে, দক্ষিণ আমেরিকা এবং অন্যান্য জায়গায় পাঠানো হয়েছিল। আমার এখনও মনে আছে, যখন আমাদেরকে বাহামার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দ্বীপগুলোতে পাঠানো হবে বলে জানতে পেরেছিলাম, তখন আমরা কত রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম।

যেভাবে আমরা সেখানে থাকতে পেরেছিলাম

সহপাঠীদের অন্যান্য জায়গার তুলনায় বাহামায় পৌঁছাতে আমাদের কিছুটা কম সময় লেগেছিল। শীঘ্রিই আমরা উষ্ণ আবহাওয়া, নীল আকাশ, নীল-সবুজাভ রঙের জল, হালকা রঙের বিভিন্ন দালান এবং অসংখ্য সাইকেল দেখতে পাই। কিন্তু প্রথমেই যে বিষয়টা আমাকে অভিভূত করেছিল তা হল, আমাদের নৌকা যখন সেখানে গিয়ে পৌঁছে তখন দেখি যে, পাঁচজন সদস্যের একটা ছোট্ট দল আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। খুব শীঘ্রিই আমরা বুঝতে পারি যে, এখানকার সংস্কৃতি আমাদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। যেমন, আমার স্বামী আমাকে লোকেদের সামনে প্রিয়া বলা ছেড়ে দিয়েছিল, যেহেতু সেখানে এই ডাক সাধারণত যাদের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক ছিল, তাদের মধ্যে ডাকা হতো।

কিছুদিন পর, লোকেদের কাছে খুব সহজেই আমরা যাচ্ছিলাম বলে পাদরিরা ভয় পেয়ে যান এবং আমাদেরকে কমিউনিস্ট বলে মিথ্যে অভিযোগ করেন। এর ফলে আমরা সেই দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার আদেশ পাই। কিন্তু সাক্ষিরা—তখন সেই দ্বীপে ২০ জনেরও কম ছিলেন—সঙ্গে সঙ্গে আমাদের থাকার অনুমতির জন্য একটা আবেদনে হাজার হাজার সই নিয়ে আসেন। এভাবেই আমাদের চলে যাওয়ার আদেশ বদলে যায় আর আমরা সেখানেই থেকে যাই।

নতুন এলাকায়

যারা ঈশ্বরকে ভালবাসতেন, তাদের মনে বাইবেলের সত্য দ্রুত অঙ্কুরিত হতে থাকে আর তাই আরও গিলিয়েড মিশনারিদেরকে বাহামায় পাঠানো হয়। এরপর, ১৯৫০ সালে একটা শাখা অফিস তৈরি করা হয়। দশ বছর পর, নিউ ইয়র্ক ব্রুকলিনের প্রধান দপ্তরের একজন সদস্য মিলটন হেনসেল বাহামা পরিদর্শন করতে আসেন এবং মিশনারিদের মধ্যে কেউ বাহামার অন্য একটা দ্বীপে গিয়ে কাজ করতে রাজি আছেন কি না, তা জিজ্ঞেস করেন। জর্জ এবং আমি রাজি ছিলাম আর এভাবেই লং দ্বীপে আমাদের ১১ বছরের জীবন শুরু হয়েছিল।

যে দ্বীপগুলো নিয়ে বাহামা গড়ে উঠেছে তাদের মধ্যে এটাও একটা দ্বীপ, যা ১৪০ কিলোমিটার লম্বা এবং ৬ কিলোমিটার চওড়া আর সেই সময় সেখানে শহর বলতে কিছু ছিল না। রাজধানী ক্লারেন্স টাউনে প্রায় ৫০টা বাড়ি ছিল। জীবন খুব সেকেলে ছিল অর্থাৎ সেখানে কোন বিদ্যুৎ, জল সরবরাহ অথবা ঘরের ভিতরে জল নিষ্কাশন বা রান্নার কোন ব্যবস্থা ছিল না। তাই, আমাদেরকে সেই বিচ্ছিন্ন দ্বীপের জীবনধারার সঙ্গে মানিয়ে চলতে হয়েছিল। এখানে লোকেদের সঙ্গে কথা বলার সবচেয়ে ভাল বিষয় ছিল তাদের স্বাস্থ্য। আমরা শিখেছিলাম যে, শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময়ও আমাদের কখনও এই প্রশ্ন করা উচিত নয় যে, “আজকে আপনি কেমন আছেন?” কারণ এর উত্তরে লোকেরা প্রায়ই তাদের জীবনের চিকিৎসার পুরো ইতিহাস শুনিয়ে দিত।

বেশির ভাগ সময়ই আমরা রান্নাঘর থেকে রান্নাঘরে সাক্ষ্য দিতাম কারণ লোকেদেরকে সাধারণত বাড়ির বাইরে খড়ের ছাউনি দেওয়া রান্নাঘরে পাওয়া যেত, যেখানে তারা কাঠ পোড়ানো চুলায় রান্না করত। সেখানকার লোকেরা যদিও গরিব কিন্তু খুব দয়ালু ছিল। বেশির ভাগ লোকই কৃষক বা জেলে ছিল। তারা সবাই যে শুধু ধার্মিক ছিল তা নয়, সেইসঙ্গে তারা কুসংস্কারেও বিশ্বাস করত। অস্বাভাবিক ঘটনাগুলোকে তারা সাধারণত কোন কিছুর লক্ষণ বলে ব্যাখ্যা করত।

পাদরিরা কোন আমন্ত্রণ ছাড়াই লোকেদের বাড়িতে যেতে এবং সেখানে আমরা যে বাইবেল সাহিত্যাদি রেখে আসতাম সেগুলোকে ছিঁড়ে ফেলতে দ্বিধা করত না। এভাবে তারা ভিতু লোকেদেরকে ভয় দেখাত কিন্তু সবাই তাদের ভয়ে জড়সড় হয়ে থাকত না। উদাহরণ হিসেবে ৭০ বছর বয়স্কা একজন সাহসী মহিলা ভয় পাননি। তিনি বাইবেল জানতে চেয়েছিলেন এবং পরে তিনি ও সেইসঙ্গে অনেকে সাক্ষি হয়েছিলেন। আরও আগ্রহী ব্যক্তিদেরকে পাওয়ায় তাদেরকে সভায় যোগ দিতে সাহায্য করার জন্য কোন কোন রবিবার জর্জকে ৩০০ কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে যেতে হতো।

প্রথম মাসগুলোতে যখন সেখানে কোন সাক্ষি ভাইবোন ছিলেন না, তখন জর্জ এবং আমি নিয়মিত সবগুলো খ্রীষ্টীয় সভার ব্যবস্থা করে আমাদের আধ্যাত্মিকতা বজায় রেখেছিলাম। এছাড়াও, প্রতি সোমবার রাতে আমরা প্রহরীদুর্গ এর বিষয়বস্তু অধ্যয়ন করতাম এবং বাইবেল পড়তাম। এছাড়াও, প্রহরীদুর্গ ও সচেতন থাক! এর প্রত্যেকটা সংখ্যা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা পড়া শুরু করতাম।

আমার বাবা যখন মারা যান তখন আমরা লং দ্বীপে ছিলাম। এর পরের গ্রীষ্মকালে অর্থাৎ ১৯৬৩ সালে আমার মা যেন আমাদের কাছাকাছি এসে থাকতে পারেন, তার ব্যবস্থা করি। যদিও তার অনেক বয়স হয়ে গিয়েছিল, তারপরও তিনি সেখানে মানিয়ে নিয়েছিলেন এবং ১৯৭১ সালে মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত লং দ্বীপে ছিলেন। আজকে লং দীপে নতুন একটা কিংডম হল সহ একটা মণ্ডলী আছে।

এক হৃদয়বিদারক পরীক্ষা

১৯৮০ সালে জর্জ বুঝতে পারে যে তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে শুরু করেছে। এভাবেই আমার জীবনের সবচেয়ে দুঃখজনক এক ঘটনার শুরু হয় আর তা হল আমার প্রিয় স্বামী, সহকর্মী এবং সঙ্গীকে আলজেইমারস রোগে আক্রান্ত হতে দেখা। তার পুরো ব্যক্তিত্বই পরিবর্তন হয়ে যায়। ১৯৮৭ সালে তার মারা যাওয়ার আগের চার বছর আমার জীবনের সবচেয়ে চরম এবং দুঃখজনক ঘটনাগুলো ঘটেছিল। যখনই সম্ভব হতো সে আমার সঙ্গে প্রচারে এবং সভাগুলোতে যেত। তার চেষ্টা দেখে আমি অনেকবার কেঁদে দিয়েছিলাম। সে মারা যাওয়ার পর খ্রীষ্টান ভাইবোনেরা আমার প্রতি যে অঢেল ভালবাসা দেখিয়েছেন, তা আমাকে প্রকৃতই সান্ত্বনা দিয়েছে কিন্তু এখনও আমি তার অভাব বোধ করি।

জর্জের সঙ্গে আমার বিয়ের সবচেয়ে মূল্যবান বিষয়টা ছিল যে আমরা সবসময় দুজন দুজনের সঙ্গে কথা বলতাম এবং তা খুব মধুর ছিল। এখন জর্জ নেই তাই আমি আগের চেয়ে আরও বেশি কৃতজ্ঞ যে যিহোবা তার দাসদেরকে “অবিরত প্রার্থনা” করতে, “প্রার্থনায় নিবিষ্ট” থাকতে আমন্ত্রণ জানান এবং “সর্ব্ববিধ প্রার্থনা” করতে বলেন। (১ থিষলনীকীয় ৫:১৭; রোমীয় ১২:১২; ইফিষীয় ৬:১৮) এটা জানা খুবই সান্ত্বনাদায়ক যে, যিহোবা আমাদের মঙ্গলের জন্য চিন্তা করেন। আমি সত্যিই গীতরচক দায়ূদের মতো মনে করি যিনি গেয়েছিলেন: “ধন্য প্রভু, যিনি দিন দিন আমাদের ভার বহন করেন।” (গীতসংহিতা ৬৮:১৯) প্রতিদিনের কথা প্রতিদিন চিন্তা করা, নিজের সীমাবদ্ধতাগুলো মেনে নেওয়া এবং যীশুর উপদেশ অনুযায়ী প্রতিদিন যে আশীর্বাদগুলো আমি লাভ করি তার জন্য কৃতজ্ঞ থাকা, সত্যিই বেঁচে থাকার সবচেয়ে ভাল উপায়।—মথি ৬:৩৪.

পরিচর্যায় আনন্দজনক পুরস্কার

খ্রীষ্টীয় পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকা আমাকে অতীতের বিষয় নিয়ে খুব বেশি না ভাবতে সাহায্য করেছে। আর এভাবেই আমি সেই আবেগগুলো কাটিয়ে উঠতে পেরেছি, যেগুলো আমাকে হতাশায় ডুবিয়ে রাখে। অন্যদেরকে বাইবেলের সত্য শেখানোই হল আমার আনন্দের এক আসল উৎস। এর ফলে আমি একটা সুশৃঙ্খল আধ্যাত্মিক তালিকা বজায় রাখতে পেরেছি, যা আমার জীবনে নির্দিষ্ট পথ এবং স্থিরতা এনে দিয়েছে।—ফিলিপীয় ৩:১৬.

একবার এক মহিলা আমাকে ফোন করেছিলেন, যাকে আমি ৪৭ বছর আগে রাজ্যের বার্তা জানিয়েছিলাম। ১৯৪৭ সালে আমরা যখন বাহামায় গিয়ে পৌঁছি তখন ওই মহিলার মা ছিলেন আমাদের প্রথম বাইবেল ছাত্রদের মধ্যে একজন। তার মা, বাবা ও সব ভাইবোনেরা এবং তাদের ছেলেমেয়ে ও নাতি-নাতনীরা সবাই যিহোবার সাক্ষি হয়েছিলেন। এই মহিলার পরিবারের ৬০ জনেরও বেশি সদস্য এখন সাক্ষি। তবে তিনি নিজে বাইবেলের সত্যকে নিজের করে নেননি। কিন্তু, এখন তিনি যিহোবার একজন উপাসক হওয়ার জন্য তৈরি হয়েছেন। এটা দেখা কতই না আনন্দের যে আমি এবং জর্জ বাহামায় থাকার সময় যে অল্প কয়েকজন সাক্ষি ছিলেন, এখন এর সংখ্যা ১,৪০০ জনকেও ছাড়িয়ে গেছে।

আমার নিজের কোন ছেলেমেয়ে নেই বলে আমার খারাপ লাগে কি না, সেই বিষয়ে মাঝে মাঝে লোকেরা আমাকে জিজ্ঞেস করে। এটা ঠিক যে, ছেলেমেয়ে থাকা হল ঈশ্বরের কাছ থেকে একটা আশীর্বাদ। কিন্তু আমার আধ্যাত্মিক ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনী ও তাদের ছেলেমেয়েরা আমাকে সবসময় যে ভালবাসা দেখিয়ে আসছে, তা হয়তো সত্যিকারের সব বাবামারাও উপভোগ করতে পারেন না। সত্যিই যারা “পরের উপকার করে” এবং “সৎক্রিয়ারূপ ধনে ধনবান্‌ হয়” তারা হলেন সবচেয়ে সুখী লোক। (১ তীমথিয় ৬:১৮) তাই, আমার স্বাস্থ্যে যতটা কুলোয় আমি পরিচর্যার কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখি।

একদিন দাঁতের ডাক্তারের অফিসে একজন যুবতী মহিলা আমার কাছে আসেন এবং বলেন, “আপনি আমাকে চেনেন না কিন্তু আপনাকে আমি চিনি আর আমি জানাতে চাই যে, আপনাকে আমি খুব ভালবাসি।” এরপর তিনি বলেন যে, কীভাবে তিনি বাইবেলের সত্য জেনেছেন এবং আমাদের মতো মিশনারি বাহামায় গিয়েছিল বলে তিনি অনেক কৃতজ্ঞ হয়েছিলেন।

আরেকবার ছুটি কাটিয়ে নেসোর যিহোবার সাক্ষিদের শাখা অফিসে, যেখানে এখন আমি থাকি, সেখানে এসে দেখি যে আমার দরজায় একটা গোলাপ ফুল রাখা আছে। সেখানে এই চিরকুটটাও ছিল, “তোমাকে আবার ফিরে পেয়ে আমরা খুশি।” আমার মন কৃতজ্ঞতায় ভরে যায় এবং যখন আমি দেখি যে তাঁর বাক্য, সংগঠন এবং আত্মা এইধরনের লোকেদেরকে উৎপন্ন করছে তখন যিহোবাকে আমি আরও বেশি ভালবাসি! সত্যিই আমাদের চারপাশে যারা রয়েছেন তাদের মাধ্যমেও যিহোবা প্রায়ই তাঁর যত্নের হাত বাড়িয়ে দেন।

কৃতজ্ঞতায় মন ভরে ওঠা

আমার জীবন সবসময় সহজ ছিল না আর এখনও কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা সহজ নয়। কিন্তু আমার কৃতজ্ঞ হওয়ার অনেক কারণ আছে যেমন পরিচর্যার আনন্দ, অসংখ্য খ্রীষ্টান ভাইবোনদের উপলব্ধি এবং ভালবাসা, যিহোবার সংগঠনের প্রেমময় যত্ন, বাইবেলের অপূর্ব সত্য, পুনরুত্থিত প্রিয়জনদের সঙ্গে আবার মিলিত হওয়ার আশা এবং যিহোবার বিশ্বস্ত দাস হিসেবে আমার বিবাহিত জীবনের ৪২ বছরের স্মৃতি। আমাদের বিয়ে হওয়ার আগে আমার প্রার্থনা ছিল, আমি যেন আমার স্বামীকে সবসময় পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যা করার জন্য সাহায্য করতে পারি, যেটাকে সে খুব ভালবাসত। যিহোবা করুণা করে সেই প্রার্থনার উত্তর দিয়েছেন। তাই, সবসময় তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থেকে আমি যিহোবাকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই।

পর্যটকদের কাছে বেড়ানোর জন্য বাহামা খুবই জনপ্রিয় একটা জায়গা, যারা হাজার হাজার ডলার খরচ করে সেখানে যান এবং গ্রীষ্মকালের আনন্দ উপভোগ করেন। যিহোবার সংগঠন যেখানে পাঠিয়েছে, সেখানে তাঁর সেবা করাকে বেছে নিয়ে আমি ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার ঘোষণা করে এই দ্বীপগুলোর একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত ভ্রমণ করার আনন্দপূর্ণ অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। কিন্তু সবচেয়ে জরুরি বিষয়টা হল যে, বাহামার বন্ধুত্বপরায়ণ লোকেদের সঙ্গে মেলামেশা এবং তাদের গভীর ভালবাসাকে আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি।

যারা আমার বাবামার কাছে সত্য নিয়ে এসেছিলেন তাদের কাছে আমি খুবই কৃতজ্ঞ কারণ বাবামাই আমার মনে ও হৃদয়ে ঈশ্বরের রাজ্যকে প্রথমে রাখার ইচ্ছাকে গড়ে তুলেছেন। আজকে যিহোবার অল্পবয়স্ক দাসেরাও একই আশীর্বাদগুলো পেতে পারে যদি তারা ‘বৃহৎ দ্বারে’ প্রবেশ করে, যা পরিচর্যাকে বাড়ানোর জন্য তাদেরকে মহান সুযোগ এনে দেবে। (১ করিন্থীয় ১৬:৯) আপনিও “ঈশ্বরগণের ঈশ্বর” যিহোবাকে সম্মান করার জন্য যদি আপনার জীবনকে কাজে লাগান, তাহলে আপনার মনও কৃতজ্ঞতায় ভরে যাবে।—দ্বিতীয় বিবরণ ১০:১৭; দানিয়েল ২:৪৭.

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯৪৪ সালে ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ভিক্টোরিয়াতে রাস্তায় কাজ করার সময়

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯৪৬ সালে জর্জ এবং আমি গিলিয়েড স্কুলে যোগ দিই

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯৫৫ সালে বাহামার নেসোর মিশনারি হোমের সামনে জর্জের সঙ্গে

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

ডেডমানস্‌ কে মিশনারি হোম যেখানে আমরা ১৯৬১ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত কাজ করেছি

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার