ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w০৪ ৪/১ পৃষ্ঠা ২৪-২৮
  • ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ত্যাগস্বীকার আমাদের জন্য প্রচুর আশীর্বাদ নিয়ে এসেছে

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ত্যাগস্বীকার আমাদের জন্য প্রচুর আশীর্বাদ নিয়ে এসেছে
  • ২০০৪ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • আমাদের পরিবার বিশুদ্ধ উপাসনায় একতাবদ্ধ হয়
  • যে-প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর জন্য ত্যাগস্বীকার দরকার
  • বাপ্তিস্মের পর সেবা করার সুযোগগুলোর জন্য আরও বড় ত্যাগস্বীকার দরকার হয়
  • আমরা বিশেষ অগ্রগামী পরিচর্যা শুরু করি
  • আমাদের জন্য এক নতুন ক্ষেত্র খুলে যায়
  • ত্যাগস্বীকারের এক জীবনের আশীর্বাদগুলো
  • মিশনারি মনোভাব বজায় রাখায় প্রচুররূপে আশীর্বাদপ্রাপ্ত
    ২০০৪ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • ঈশ্বর আলাস্কায় বৃদ্ধি দান করেন
    ১৯৯৮ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • আনন্দের সঙ্গে যিহোবার নির্দেশনা মেনে নেওয়া
    ১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • হৃদয়বিদারক বিচ্ছেদ সত্ত্বেও আনন্দিত এবং কৃতজ্ঞ
    ২০০১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
২০০৪ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w০৪ ৪/১ পৃষ্ঠা ২৪-২৮

জীবন কাহিনী

ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ত্যাগস্বীকার আমাদের জন্য প্রচুর আশীর্বাদ নিয়ে এসেছে

বলেছেন জর্জ এবং আ্যন আ্যলজিয়ান

আমার স্ত্রী ও আমি কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি যে, আমরা একদিন “শিক্ষক” শব্দটিকে “ইঁদুর” শব্দের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলব। আমরা কখনোই চিন্তা করিনি যে, আমাদের বয়সের ৬০ এর কোঠায় এসে আমরা সুদূর প্রাচ্যের লোকেদের সঙ্গে ভাববিনিময় করার প্রচেষ্টায় অদ্ভুত ধরনের লিখিত বর্ণগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করব। কিন্তু, আ্যন এবং আমি ১৯৮০-র দশকের শেষ দিকে ঠিক এই বিষয়টাই করেছি। আমরাই আপনাদের বলছি যে, বিগত বছরগুলোতে আমরা যে-ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ত্যাগস্বীকার করেছি কীভাবে তা আমাদের জন্য প্রচুর আশীর্বাদ নিয়ে এসেছে।

আমি এসেছি আর্মেনীয় বংশের পরিবার থেকে আর আমি আর্মেনিয়ান গির্জার সদস্য ছিলাম। আ্যন ছিল একজন রোমান ক্যাথলিক। ১৯৫০ সালে আমরা যখন বিয়ে করি, তখন আমরা দুজনেই আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসগুলোর ব্যাপারে আপোশ করেছিলাম। আমার বয়স ছিল ২৭ আর আ্যনের বয়স ছিল ২৪. আমরা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির জার্সি সিটিতে একটা আ্যপার্টমেন্টে আমার ড্রাই-ক্লিনিং দোকানের ওপর তলায় থাকতাম। সেই সময়ের মধ্যে আমার প্রায় চার বছর ধরে এই ব্যাবসা ছিল।

১৯৫৫ সালে আমরা নিউ জার্সির মিডলটাউনে তিনটে শোবার ঘর সমেত একটা সুন্দর বাড়ি কিনি। সেই বাড়ি আমার ব্যাবসার জায়গা থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে ছিল, যেখানে আমি সপ্তাহে ছয় দিন কাজ করতাম। আমি প্রতিদিন বেশ রাত করে বাড়ি ফিরতাম। যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে আমার একমাত্র তখনই যোগাযোগ হতো, যখন তারা নির্দিষ্ট কয়েক দিন পর পর আমার দোকানে আসত এবং আমার কাছে বাইবেলের সাহিত্যাদি অর্পণ করত। আমি অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে সাহিত্যাদি পড়তাম। যদিও আমার ব্যাবসা বেশির ভাগ সময় ও মনোযোগ কেড়ে নিত কিন্তু আমি বাইবেলের প্রতি এক গভীর সম্মান গড়ে তুলেছিলাম।

শীঘ্রই আমি আবিষ্কার করেছিলাম যে আমি যখন গাড়ি চালিয়ে আমার দোকানে যেতাম ও বাড়ি ফিরে আসতাম, তখন ওয়াচটাওয়ার রেডিও স্টেশন, ডব্লুবিবিআর (WBBR) বাইবেলের বক্তৃতাগুলো সম্প্রচার করত। আমি মনোযোগ দিয়ে এই বক্তৃতাগুলো শুনতাম এবং আমার আগ্রহ এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল যে, আমি সাক্ষিদের আমার কাছে আসতে বলেছিলাম। ১৯৫৭ সালের নভেম্বর মাসে জর্জ ব্ল্যানটন আমার বাড়িতে এসেছিলেন এবং আমার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেছিলেন।

আমাদের পরিবার বিশুদ্ধ উপাসনায় একতাবদ্ধ হয়

এই সমস্তকিছু সম্বন্ধে আ্যনের অনুভূতি কেমন ছিল? সেই ঘটনাটা আপনারা তার মুখ থেকেই শুনুন।

“প্রথমে আমি চরম বিরোধিতা করেছিলাম। জর্জ বাইবেল অধ্যয়ন করার সময় আমি এত বেশি বিরক্ত করতাম যে, সে অন্য জায়গায় গিয়ে অধ্যয়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আর আট মাস সে সেভাবেই অধ্যয়ন চালিয়ে গিয়েছিল। সেই সময় জর্জ রবিবারগুলোতে কিংডম হলে সভায় যোগ দিতে শুরু করে। আমি তখন বুঝতে পেরেছিলাম যে, বাইবেল অধ্যয়নকে সে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছিল কারণ এই দিনটাই ছিল তার একমাত্র ছুটির দিন। তা সত্ত্বেও, সে একজন ভাল স্বামী ও বাবা ছিল—এমনকি আরও ভাল স্বামী ও বাবা হয়ে উঠেছিল—আর আমার মনোভাব পালটাতে শুরু করেছিল। সত্যি বলতে কী, মাঝে মাঝে ছোট্ট টেবিলটা ঝাড়া-মোছা করার সময় যখন আশেপাশে কেউ থাকত না, তখন আমি সচেতন থাক! পত্রিকা নিতাম ও পড়তাম, যা জর্জ সবসময় সেখানে রাখত। অন্যান্য সময়, জর্জ আমার সামনে সচেতন থাক! পত্রিকার প্রবন্ধগুলো পড়ত, যা সরাসরি কোনো মতবাদ নিয়ে আলোচনা করত না কিন্তু সবসময়ই সৃষ্টিকর্তার বিষয়ে জোর দিত।

“একদিন সন্ধ্যাবেলা জর্জ যখন ভাই ব্ল্যানটনের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করার জন্য বাইরে গিয়েছিল, তখন আমি একটা প্রকাশনা নিয়েছিলাম, যেটা আমাদের দুই বছর বয়সী ছেলে জর্জ আমার বিছানার পাশে এনে রেখেছিল। এটার মধ্যে মৃতদের জন্য আশা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। যদিও আমি ক্লান্ত ছিলাম, তবুও আমি সেটা পড়তে শুরু করেছিলাম কারণ আমার দিদিমা মাত্র কিছুদিন আগে মারা গিয়েছেন আর আমি খুবই মনমরা হয়ে পড়েছিলাম। আমি সঙ্গে সঙ্গে সেই বাইবেল সত্যটি দেখেছিলাম ও বুঝতে পেরেছিলাম যে, মৃতেরা কোথাও কষ্টভোগ করছে না এবং তারা ভবিষ্যৎ পুনরুত্থানে জীবন ফিরে পাবে। শীঘ্রই আমি বিছানায় বসে উৎসুকভাবে পড়তে থাকি এবং জর্জ বাইবেল অধ্যয়ন করে ফিরে আসার পর তাকে যে-বিষয়গুলো দেখাবো ভেবেছিলাম, সেগুলো দাগ দিয়ে রাখি।

“আমার স্বামী বিশ্বাসই করতে পারছিল না যে আমি সেই একই ব্যক্তি। সে যখন ঘর থেকে বের হয়ে গিয়েছিল আমি বিরোধিতা করেছিলাম আর এখন সেই চমৎকার বাইবেল সত্যগুলোর দ্বারা রোমাঞ্চিত বোধ করছি, যেগুলো আমি শিখেছিলাম! আমরা মধ্যরাত পর্যন্ত জেগে বাইবেল নিয়ে কথা বলেছিলাম। জর্জ পৃথিবীর জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেছিল। আমি সেই রাতেই তাকে বলেছিলাম যে, সে তার অধ্যয়ন ঘরেই করতে পারে কি না, যাতে আমিও সেখানে যোগ দিতে পারি।

“ভাই ব্ল্যানটন বলেছিলেন যে, বাচ্চারাও আমাদের অধ্যয়নে বসতে পারে। আমরা ভেবেছিলাম যে, তারা খুবই ছোট কারণ তাদের একজনের বয়স ছিল মাত্র দুই ও অন্য জনের ছিল চার। কিন্তু, ভাই ব্ল্যানটন আমাদের দ্বিতীয় বিবরণ ৩১:১২ পদ দেখিয়েছিলেন, যা বলে: ‘তুমি লোকদিগকে, পুরুষ, স্ত্রী, বালক-বালিকা . . . সকলকে একত্র করিবে, যেন তাহারা শুনিয়া শিক্ষা পায়।’ (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) আমরা সেই নির্দেশনা উপলব্ধি করেছিলাম আর এমনকি বাচ্চারাও যাতে বাইবেল অধ্যয়নের সময় মন্তব্য করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করেছিলাম। আমরা আমাদের মন্তব্যগুলো একসঙ্গে তৈরি করতাম কিন্তু কখনও তাদের বলতাম না যে, কী বলতে হবে। আমরা মনে করি যে, এই বিষয়টাই আমাদের বাচ্চাদের সত্যকে নিজের করে নেওয়ার দিকে পরিচালিত করতে সাহায্য করেছিল। আমাদের পরিবারকে আধ্যাত্মিকভাবে বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করায় ভাই ব্ল্যানটনের নির্দেশনার জন্য আমরা সবসময় কৃতজ্ঞ থাকব।”

যে-প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর জন্য ত্যাগস্বীকার দরকার

বাইবেল অধ্যয়নের ক্ষেত্রে আমরা একতাবদ্ধ হলেও, নতুন নতুন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি আমাদের হতে হয়েছিল। যেহেতু আমার দোকান অনেক দূরে ছিল, তাই আমি সাধারণত রাত নয়টার আগে বাড়ি ফিরতাম না। এই কারণে আমি সাপ্তাহিক দিনগুলোতে সভায় যেতে পারতাম না, তবে রবিবারগুলোতে যেতে পারতাম। সেই সময়ের মধ্যে আ্যন সবগুলো সভাতে যোগ দিচ্ছিল ও দ্রুত উন্নতি করছিল। আমিও সমস্ত সভায় যোগ দিতে চেয়েছিলাম ও সেইসঙ্গে এক অর্থপূর্ণ পারিবারিক অধ্যয়ন পরিচালনা করতে চেয়েছিলাম। আমি জানতাম যে, এর জন্য আমাকে কিছু ত্যাগস্বীকার করতে হবে। তাই আমার কিছু খরিদ্দার হারানোর ঝুঁকি থাকলেও, আমি আমার ব্যাবসার পিছনে কিছু ঘন্টা কমিয়ে আনব বলে ঠিক করেছিলাম।

এই বিষয়টা খুব ভাল ফল নিয়ে এসেছিল। আমরা পারিবারিক অধ্যয়নকে কিংডম হলে অনুষ্ঠিত আর পাঁচটা সাপ্তাহিক সভার মতো গুরুত্বপূর্ণ হিসেবেই দেখতাম। এটাকে আমরা আমাদের ষষ্ঠ সভা বলতাম। সেজন্য দিন ও সময় নির্ধারিত ছিল—প্রতি বুধবার রাত ৮:০০টায়। মাঝে মাঝে রাতের খাবারের পর আমরা যখন রান্নাঘরে আমাদের শেষ থালা বাটিটা ধুতাম, তখন আমাদের মধ্যে একজন বলত, “‘সভার’ সময় প্রায় হয়ে গিয়েছে!” আমার দেরি হলে আ্যন অধ্যয়ন শুরু করে দিত আর আমি পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে তা চালিয়ে যেতাম।

আরেকটা বিষয় যা আমাদের এক পরিবার হিসেবে দৃঢ় ও একতাবদ্ধ রেখেছিল, তা হল সকালে একত্রে দৈনিক শাস্ত্রপদ পড়া। তবে, এই বিষয়ের ব্যবস্থা করার মধ্যে সমস্যা ছিল। সবাই আলাদা আলাদা সময়ে ঘুম থেকে উঠত। ব্যাপারটা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছিলাম আর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, আমরা সবাই একই সময়ে ঘুম থেকে উঠব, সকাল ৬:৩০ মিনিটে সকালের খাবার খাব এবং একত্রে দৈনিক শাস্ত্রপদ আলোচনা করব। এই ব্যবস্থাটা আমাদের জন্য উপকারজনক হয়েছিল। আমাদের ছেলেরা বড় হয়ে বেথেল পরিচর্যাকে বেছে নিয়েছিল। আমরা মনে করি যে, এই দৈনিক আলোচনাগুলো তাদের আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রেখেছিল।

বাপ্তিস্মের পর সেবা করার সুযোগগুলোর জন্য আরও বড় ত্যাগস্বীকার দরকার হয়

আমি ১৯৬২ সালে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলাম আর ২১ বছর ধরে আমার ব্যাবসা চালানোর পর এটা বিক্রি করে দিয়েছিলাম এবং আমার পরিবারের সান্নিধ্যে থাকার জন্য স্থানীয় একটা চাকরি নিয়েছিলাম, যাতে আমরা একত্রে যিহোবাকে সেবা করতে পারি। এটা অনেক আশীর্বাদ লাভ করার পথ খুলে দিয়েছিল। আমরা লক্ষ্য স্থাপন করেছিলাম যে, আমরা সকলে পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যা গ্রহণ করব। সেটা শুরু হয়েছিল ১৯৭০ এর দশকের প্রথম দিকে, যখন আমাদের বড় ছেলে এডোয়ার্ড হাইস্কুল পড়া শেষ করার পর পরই একজন পূর্ণ-সময়ের পরিচারক বা নিয়মিত অগ্রগামী হয়েছিল। তার কিছু পরই আমাদের ছেলে জর্জ অগ্রগামীর কাজ শুরু করেছিল আর শীঘ্রই আ্যনও তা-ই শুরু করে। তাদের তিন জনের দ্বারা আমি খুবই উৎসাহ পেয়েছিলাম কারণ তারা আমার কাছে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় তাদের যে-অভিজ্ঞতাগুলো হতো, সেগুলো বলত। পরিবার হিসেবে আমরা আলোচনা করেছিলাম যে, কীভাবে আমরা আমাদের জীবনকে সাধাসিধে রাখতে পারি, যাতে আমরা সবাই পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যা করতে পারি। আমরা বাড়িটা বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সেই বাড়িতে আমরা ১৮ বছর ধরে ছিলাম এবং আমাদের পরিবারকে সেখানে বড় করে তুলেছিলাম। আমরা আমাদের বাড়িকে সত্যিই খুব পছন্দ করতাম কিন্তু এটা বিক্রি করে দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্তকে যিহোবা আশীর্বাদ করেছিলেন।

এডোয়ার্ডকে ১৯৭২ সালে বেথেলে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল আর জর্জকে ১৯৭৪ সালে। যদিও আ্যন ও আমি তাদের অভাব বোধ করতাম কিন্তু কখনও এইরকম চিন্তাকে মনের মধ্যে দানা বাঁধতে দিইনি যে, তারা যদি আমাদের কাছাকাছি থাকত, বিয়ে করত ও তাদের ছেলেমেয়ে হতো, তা হলে কত ভাল হতো। এর পরিবর্তে, আমরা আনন্দ করেছিলাম যে আমাদের ছেলেরা বেথেলে যিহোবাকে সেবা করছিল।a আমরা হিতোপদেশ ২৩:১৫ পদের কথাগুলোর সঙ্গে একমত, যেখানে বলা আছে: “বৎস, তোমার চিত্ত যদি জ্ঞানশালী হয়, তবে আমারও চিত্ত আনন্দিত হইবে।”

আমরা বিশেষ অগ্রগামী পরিচর্যা শুরু করি

আমাদের দুই ছেলে বেথেলে থাকার সময়ই আমরা অগ্রগামীর কাজ চালিয়ে গিয়েছিলাম। এরপর ১৯৭৫ সালে একদিন আমরা একটা চিঠি পাই, যেটাতে আমাদের ইলিনোয়ার ক্লিনটন কাউন্টিতে বিশেষ অগ্রগামীর কাজ শুরু করার আমন্ত্রণ জানানো হয়, যেখানে এর আগে কাউকে কার্যভার দেওয়া হয়নি। সেটা কী এক চমকই না ছিল! এর মানে ছিল আমাদের নিউ জার্সি ছেড়ে যেতে হবে, যেখানে আমরা নিউ ইয়র্কে আমাদের ছেলেদের কাছাকাছি ছিলাম এবং যেখানে আমাদের বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন ছিল। কিন্তু, আমরা এটাকে যিহোবার কাছ থেকে একটা কার্যভার হিসেবে নিয়েছিলাম আর সেই ত্যাগস্বীকার করেছিলাম, যা নতুন নতুন আশীর্বাদ লাভ করার দিকে পরিচালিত করেছিল।

কয়েক মাস ইলিনোয়ার ক্লিনটন কাউন্টিতে কাজ করার পর, আমরা ইলিনোয়ার কারলাইলের একটা কমিউনিটি হলে সভা করতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু আমরা মেলামেশার জন্য একটা স্থায়ী জায়গা চাচ্ছিলাম। একজন স্থানীয় ভাই ও তার স্ত্রী একটা ছোট্ট বাড়িসহ জমি খুঁজে পেয়েছিল, যেটা আমরা ভাড়া নিতে পেরেছিলাম। আমরা এটাকে পরিষ্কার করেছিলাম—এর বাইরের শৌচাগারসহ পুরো জায়গা—আর এটাকে সভা করার এক ক্ষুদ্র স্থানে পরিণত করেছিলাম। আমাদের বেশ মনে আছে যে, একটা ঘোড়া আমাদের ব্যাপারে কৌতূহলী ছিল। সে প্রায়ই জানালার ভিতর দিয়ে মাথা ঢুকিয়ে দেখত যে, সভায় কী হচ্ছিল!

একসময় কারলাইল মণ্ডলী গঠিত হয়েছিল এবং আমরা তাতে অংশ নিতে পেরে আনন্দিত ছিলাম। আমরা এক অল্পবয়সী অগ্রগামী দম্পতি, স্টিভ ও কারিল টম্পসনের সাহায্য পেয়েছিলাম, তারাও এমন এক এলাকায় কাজ করতে এসেছিল, যেখানে এর আগে কাউকে কার্যভার দেওয়া হয়নি। টম্পসন দম্পতি কয়েক বছর সেখানে থেকেছিল ও পরে ওয়াচটাওয়ার বাইবেল স্কুল অফ গিলিয়েডে যোগ দিয়েছিল এবং মিশনারি হিসেবে কার্যভার পেয়ে পূর্ব আফ্রিকায় চলে গিয়েছিল, যেখানে তারা ভ্রমণের কাজ করত।

শীঘ্রই আমাদের ছোট সভার স্থানে লোকে পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল আর তাই আমাদের বড় হলের দরকার ছিল। সেই একই স্থানীয় ভাই ও তার স্ত্রী সমস্যাটা সমাধানে এগিয়ে আসে আর এমন জমি কেনে, যা একটা কিংডম হলের জন্য আরও উপযুক্ত ছিল। অল্প কয়েক বছর পর যখন আমাদেরকে কারলাইলে নতুন নির্মিত কিংডম হল উৎসর্গীকরণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তখন আমরা কত আনন্দিতই না হয়েছিলাম! আমাকে উৎসর্গীকরণ বক্তৃতা দেওয়ার বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। সেখানে আমাদের কার্যভার আমাদের জন্য চমৎকার এক অভিজ্ঞতা আর যিহোবার কাছ থেকে এক আশীর্বাদ ছিল।

আমাদের জন্য এক নতুন ক্ষেত্র খুলে যায়

১৯৭৯ সালে আমরা নিউ জার্সির হ্যারিসনে একটা নতুন কার্যভার পেয়েছিলাম। আমরা সেখানে প্রায় ১২ বছর সেবা করেছিলাম। সেই সময় আমরা একজন চাইনিজ মহিলার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেছিলাম আর এটা আরও অনেক চাইনিজ লোকের সঙ্গে অধ্যয়ন করার সুযোগ করে দিয়েছিল। এর মধ্যে আমরা জানতে পারি যে, আমাদের এলাকায় হাজার হাজার চাইনিজ ছাত্রছাত্রী ও পরিবার বাস করে। এই কারণে আমাদের চাইনিজ ভাষা শেখার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছিল। যদিও এর মানে ছিল প্রতিদিন অনেক সময় নিয়ে এই ভাষা অধ্যয়ন করা কিন্তু এর ফলে আমাদের এলাকার অনেক চাইনিজ লোকের সঙ্গে আনন্দপূর্ণ বাইবেল অধ্যয়ন শুরু হয়েছিল।

সেই সময় আমরা অনেক মজার পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলাম, বিশেষ করে চাইনিজ ভাষা বলার ব্যাপারে আমাদের প্রচেষ্টার কারণে। একদিন আ্যন নিজেকে একজন বাইবেল “শিক্ষক” হিসেবে পরিচয় দেওয়ার বদলে বাইবেল “ইঁদুর” বলে পরিচয় দিয়েছিল। সেই শব্দগুলো প্রায় একরকম ছিল। গৃহকর্ত্রী হেসে বলেছিলেন: “দয়া করে ভিতরে আসুন। আমি এর আগে কখনও একজন বাইবেল ইঁদুরের সঙ্গে কথা বলিনি।” আমাদের এখনও ভাষা শেখার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে।

এরপর আমাদের নিউ জার্সির আরেকটা জায়গায় কার্যভার দেওয়া হয়েছিল, যেখানে আমরা চাইনিজ ক্ষেত্রে আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে পেরেছিলাম। পরে আমাদের ম্যাসাচুসেটসের বোস্টনে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, যেখানে প্রায় তিন বছর ধরে একটা চাইনিজ দল গড়ে উঠছিল। এই দলকে গত সাত বছর ধরে সহযোগিতা করা আর ২০০৩ সালের ১লা জানুয়ারি এটাকে একটা মণ্ডলী হয়ে উঠতে দেখার আনন্দ লাভ করা, আমাদের জন্য এক বিশেষ সুযোগ ছিল।

ত্যাগস্বীকারের এক জীবনের আশীর্বাদগুলো

মালাখি ৩:১০ পদে আমরা তাঁর লোকেদের প্রতি যিহোবার আমন্ত্রণ সম্বন্ধে পড়ি, যেখানে তিনি তাঁর কাছে উপহার ও বলি নিয়ে আসতে বলছেন, যাতে তিনি তাদের সেই পরিমাণ আশীর্বাদ করেন, যেন তাদের অভাব না হয়। আমরা একটা ব্যাবসা ছেড়ে দিয়েছিলাম, যেটার প্রতি আমি খুবই আগ্রহী ছিলাম। আমরা আমাদের বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছিলাম, যেটা আমাদের খুবই প্রিয় ছিল। সেইসঙ্গে আমরা অন্যান্য বিষয়ও কাটছাট করেছিলাম। তা সত্ত্বেও, আশীর্বাদগুলোর তুলনায় ত্যাগস্বীকারগুলো খুবই ক্ষুদ্র ছিল।

বাস্তবিকই, যিহোবা আমাদের কত আশীর্বাদই না করেছেন! আমাদের ছেলেরা সত্যের প্রতি সাড়া দিয়েছে তা দেখার পরিতৃপ্তি আমাদের রয়েছে, জীবনরক্ষাকারী পরিচর্যায় পূর্ণ-সময় কাজ করার আনন্দ আমাদের হয়েছে এবং আমরা দেখেছি যে, যিহোবা আমাদের প্রয়োজনগুলোর যত্ন নিচ্ছেন। সত্যিই, আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ত্যাগস্বীকার আমাদের জন্য প্রচুর আশীর্বাদ নিয়ে এসেছে!

[পাদটীকা]

a তারা এখনও বিশ্বস্তভাবে বেথেলে সেবা করে যাচ্ছে—এডোয়ার্ড ও তার স্ত্রী কনি প্যাটারসনে আর জর্জ ও তার স্ত্রী গ্রেস ব্রুকলিনে।

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯৯১ সালে আ্যনের সঙ্গে লুইস ও জর্জ ব্ল্যানটন

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

কারলাইলে কিংডম হল, যেটাকে ১৯৮৩ সালের ৪ঠা জুন উৎসর্গীকরণ করা হয়েছিল

[২৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

নতুন গঠিত বোস্টন চাইনিজ মণ্ডলীর সঙ্গে

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

এডোয়ার্ড, কনি, জর্জ ও গ্রেসের সঙ্গে

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার