ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w০৪ ১/১ পৃষ্ঠা ২২-২৭
  • মিশনারি মনোভাব বজায় রাখায় প্রচুররূপে আশীর্বাদপ্রাপ্ত

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • মিশনারি মনোভাব বজায় রাখায় প্রচুররূপে আশীর্বাদপ্রাপ্ত
  • ২০০৪ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • আমার বাবামার সাহসী উদাহরণ
  • সত্যের সঙ্গে আ্যনের পরিচয়
  • একই লক্ষ্যসমূহ—বিভিন্ন পরিস্থিতি
  • বিদেশের ক্ষেত্রে একটা পরিবার হিসেবে সেবা করা
  • নিষেধাজ্ঞা—বিশ্বাস এবং উদ্ভাবনকুশলতার এক পরীক্ষা
  • নিউ গিনিতে
  • পরিবর্তিত পরিস্থিতিগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া
  • “সুখী দ্বীপপুঞ্জে” সেবা করা
  • কৃতজ্ঞ হওয়ার মতো অনেক কিছু
  • যিহোবা ‘আমার পথ সকল সরল করিয়াছেন’
    প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০২১
  • ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ত্যাগস্বীকার আমাদের জন্য প্রচুর আশীর্বাদ নিয়ে এসেছে
    ২০০৪ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • যিহোবাকে সেবা করতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ
    ২০০৬ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • ঈশ্বর আলাস্কায় বৃদ্ধি দান করেন
    ১৯৯৮ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
২০০৪ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w০৪ ১/১ পৃষ্ঠা ২২-২৭

জীবন কাহিনী

মিশনারি মনোভাব বজায় রাখায় প্রচুররূপে আশীর্বাদপ্রাপ্ত

বলেছেন টম কুক

কামান দাগার শব্দ হঠাৎ করেই বিকেলের নীরবতাকে ভেঙে দিয়েছিল। বন্দুকের গুলিগুলো তীব্রবেগে আমাদের বাগানের গাছপালা ভেদ করে এসেছিল। কী হচ্ছিল? শীঘ্রই আমরা জানতে পেরেছিলাম যে, সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে এবং উগান্ডা এখন জেনারেল ইডি আমিনের শাসনের অধীনে চলে এসেছে। এটা ছিল ১৯৭১ সালের কথা।

আমার স্ত্রী আ্যন এবং আমি কেন অপেক্ষাকৃত শান্তিপূর্ণ জায়গা ইংল্যান্ড ছেড়ে আফ্রিকার এই অস্থির অংশে এসেছিলাম? আমার মনে হয় আমি কিছুটা আ্যডভেঞ্চার প্রিয় কিন্তু মূলত আমার বাবামার উদ্যোগী রাজ্য সেবার উদাহরণই আমার মধ্যে মিশনারি মনোভাব বৃদ্ধি করেছিল।

১৯৪৬ সালের আগস্ট মাসের গরমের সেই দিনটার কথা আমার মনে আছে, যখন আমার বাবামা প্রথম যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিল। তারা সামনের দরজায় দাঁড়িয়েছিল এবং দুজন অতিথির সঙ্গে সম্ভবত কয়েক ঘন্টা ধরে কথা বলছিল। ফ্রেজার ব্র্যাডবেরি এবং মেমি শ্রিভ নামে এই অতিথিরা অনেক বার এসেছিল এবং এর পরের মাসগুলোতে আমাদের পরিবারের জীবনধারা নাটকীয়ভাবে পালটে গিয়েছিল।

আমার বাবামার সাহসী উদাহরণ

আমার বাবামা অনেক সামাজিক কাজকর্মে জড়িত ছিল। উদাহরণস্বরূপ, বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করার অল্প সময় আগে, উইনস্টন চার্চিলের পোস্টার দিয়ে আমাদের বাড়ি সজ্জিত করা হয়েছিল। যুদ্ধের পরে জাতীয় নির্বাচনের সময় আমাদের বাড়ি স্থানীয় কনজারভেটিভ পার্টি কমিটির কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। আমাদের পরিবারের সঙ্গে বিশিষ্ট ধর্মীয় এবং সামাজিক ব্যক্তিদের যোগাযোগ ছিল। যদিও সেই সময় আমার বয়স মাত্র নয় বছর ছিল, তবুও আমরা যিহোবার সাক্ষি হয়ে যাচ্ছিলাম বুঝতে পেরে আমাদের আত্মীয়স্বজন যে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছিল, সেটা আমি বুঝতে পেরেছিলাম।

যে-সাক্ষিদের সঙ্গে আমরা মেলামেশা করতাম, তাদের সর্বান্তঃকরণ এবং নির্ভীক উদাহরণ আমার বাবামাকে প্রচার কাজে সক্রিয় হতে প্রেরণা দিয়েছিল। শীঘ্রই আমার বাবা, আমাদের গ্রাম, স্পনডনের প্রধান কেনাকাটার এলাকায় লাউডস্পীকারের মাধ্যমে উন্মুক্ত স্থানে বক্তৃতা দিতে থাকেন আর সেই সময় আমরা ছেলেমেয়েরা দর্শনীয় স্থানগুলোতে প্রহরীদুর্গ এবং সচেতন থাক! পত্রিকা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। আমাকে স্বীকার করতেই হবে যে, যে-ছেলেমেয়েদের সঙ্গে আমি স্কুলে যেতাম, তারা যখন আমার কাছে আসত, তখন আমার মনে হতো যে পৃথিবী যদি আমাকে গ্রাস করত, তা হলে ভাল হতো।

আমার বাবামার উদাহরণ আমার দিদি ড্যাফনিকে অগ্রগামীর কাজ শুরু করতে উৎসাহিত করেছিল। ১৯৫৫ সালে সে ওয়াচটাওয়ার বাইবেল স্কুল অফ গিলিয়েড-এ যোগ দিয়েছিল এবং জাপানে একজন মিশনারি হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিল।a কিন্তু, আমার ছোট বোন জোয়ি, যিহোবাকে সেবা করা বন্ধ করে দিয়েছিল।

ইতিমধ্যে, আমি চিত্রণ এবং রৈখিক শিল্প অধ্যয়নের মাধ্যমে আমার পড়াশোনা শেষ করি। সেই দিনগুলোতে আমার সহপাঠীদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিচার্য বিষয়টা ছিল বাধ্যতামূলক জাতীয় সেবা। আমি যখন তাদের বলেছিলাম যে, আমার ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে আমি সেনাবাহিনীতে কাজ করতে অনিচ্ছুক, তখন তারা সেটাকে নিছক কৌতুক হিসেবে নিয়েছিল। এই বিষয়টা আমাকে কিছু ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে বাইবেল নিয়ে আলোচনা করার অনেক সুযোগ করে দিয়েছিল। সেনাবাহিনীর কাজ প্রত্যাখ্যান করায় শীঘ্রই শাস্তি হিসেবে আমার ১২ মাসের জেল হয়েছিল। সেই আর্ট কলেজের ছাত্রীদের একজন যে-বাইবেলের বার্তার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছিল, পরে আমার স্ত্রী হয়। কিন্তু কীভাবে সে সত্য শিখেছে, তা আমি আ্যনকেই বলতে দিই।

সত্যের সঙ্গে আ্যনের পরিচয়

“আমার পরিবার তেমন ধর্মকর্ম করত না আর আমি কোনো ধর্মেই বাপ্তিস্ম নিইনি। কিন্তু, ধর্মের বিষয়ে আমি কৌতূহলী ছিলাম এবং আমার বন্ধুবান্ধবীরা যে-গির্জাতেই যোগ দিত, আমিও সেখানে যেতাম। বাইবেলের প্রতি আমার আগ্রহ জেগে উঠেছিল, যখন আমি কলেজে টম এবং আরেক জন সাক্ষিকে কলেজে অন্যান্য ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে প্রাণবন্ত আলোচনা করতে শুনেছিলাম। সেনাবাহিনীর কাজ প্রত্যাখান করার কারণে টম এবং অন্য সাক্ষিকে যখন জেলে পাঠানো হয়েছিল, তখন আমি প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছিলাম।

“জেলে থাকার সময়ও আমি টমের সঙ্গে চিঠিপত্র আদানপ্রদান করি এবং বাইবেলের প্রতি আমার আগ্রহ আরও গভীর হয়। পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমি যখন লন্ডনে যাই, তখন আমি মিউরিয়েল আলব্রিখ্‌টের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে রাজি হই। মিউরিয়েল এসটোনিয়াতে মিশনারি হিসেবে সেবা করতেন এবং তিনি ও তার মা আমার কাছে উৎসাহের এক বিরাট উৎস ছিলেন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আমি সভাগুলোতে যোগ দিতে এবং ভিক্টোরিয়া স্টেশনে দাঁড়িয়ে প্রহরীদুর্গ এবং সচেতন থাক! পত্রিকা অর্পণ করতে শুরু করি।

“আমি দক্ষিণ লন্ডনের সাউথওয়ার্ক মণ্ডলীতে যোগ দিই। এই মণ্ডলী বিভিন্ন জাতির আত্মিক ভাই ও বোনদের দ্বারা গঠিত ছিল এবং তাদের মধ্যে অনেকেই খুব বেশি স্বচ্ছল ছিল না। আমি একজন অপরিচিত ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও, তারা আমার সঙ্গে এমনভাবে আচরণ করেছিল যেন আমি তাদেরই একজন। সেই মণ্ডলীর প্রেমই আমাকে প্রকৃতপক্ষে প্রত্যয়ী করেছিল যে, এটাই ছিল সত্য এবং আমি ১৯৬০ সালে বাপ্তিস্ম নিই।”

একই লক্ষ্যসমূহ—বিভিন্ন পরিস্থিতি

পরে ১৯৬০ সালে, আ্যন এবং আমি বিয়ে করি এবং আমাদের লক্ষ্য ছিল মিশনারি সেবা শুরু করা। কিন্তু, আমাদের পরিস্থিতি পালটে যায়, যখন আমরা জানতে পারি যে আমাদের সন্তান হতে যাচ্ছে। আমাদের মেয়ে সারা জন্মগ্রহণ করার পর, আ্যন এবং আমার তখনও এমন একটা দেশে সেবা করার ইচ্ছা ছিল, যেখানে রাজ্য প্রকাশকদের অনেক প্রয়োজন। আমি বেশ কয়েকটা দেশে চাকরির জন্য আবেদন করি এবং অবশেষে ১৯৬৬ সালের মে মাসে উগান্ডার শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটা চিঠি আসে যে, সেখানে আমার জন্য একটা চাকরি রয়েছে। কিন্তু, এর মধ্যে আ্যন দ্বিতীয়বারের মতো গর্ভবতী হয়ে পড়ে। কেউ কেউ আমাদের এই অন্যত্র চলে যাওয়া বিজ্ঞের কাজ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ করেছিল। আমরা আমাদের ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করি, যিনি বলেছিলেন: “আপনারা যদি যান, তা হলে আপনার স্ত্রী সাত মাসের গর্ভবতী হওয়ার আগেই আপনাদের প্লেনে করে যেতে হবে।” তাই, আমরা দেরি না করে উগান্ডার দিকে রওনা দিই। এর ফলে, আমাদের বাবামা আমাদের দ্বিতীয় মেয়ে রেচেলের দুই বছর হওয়ার আগে পর্যন্ত তাকে দেখতে পারেনি। এখন আমরা নিজেরাই দাদুদিদিমা হয়ে আমাদের প্রিয় বাবামার আত্মত্যাগের কথা পুরোপুরি উপলব্ধি করি।

১৯৬৬ সালে উগান্ডাতে পৌঁছানো একইসঙ্গে আনন্দদায়ক ও নিরুৎসাহজনক দুটোই ছিল। প্লেন থেকে নেমেই আমরা আশেপাশের প্রকৃতির রং দেখে অভিভূত হয়ে যাই। সেগুলো অনেক উজ্জ্বল ছিল। আমাদের প্রথম বাড়িটা, যা জিনজা শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, ছোট্ট শহর ইগাংজার কাছাকাছি ছিল আর জিনজা নীলনদের উৎসের কাছে অবস্থিত ছিল। আমাদের বাড়ির সবচেয়ে কাছাকাছি যে-সাক্ষিরা ছিল, তারা হল জিনজার এক বিচ্ছিন্ন দল। মিশনারি গিলবার্ট ও জোন ওলটারস্‌ এবং স্টিভেন ও বারবারা হারডি সেই দলের দেখাশোনা করত। জিনজায় বদলি হওয়ার জন্য আমি একটা চাকরির আবেদন করি, যাতে আমরা সেই দলকে আরও ভালভাবে সাহায্য করতে পারি। রেচেল জন্মগ্রহণ করার কিছু সময় পরে, আমরা জিনজায় চলে যাই। সেখানে বিশ্বস্ত সাক্ষিদের একটা ছোট দলের সঙ্গে সেবা করার আনন্দ আমাদের হয়েছিল, যে-সময়ে এটা উগান্ডাতে দ্বিতীয় মণ্ডলী হিসেবে গড়ে উঠছিল।

বিদেশের ক্ষেত্রে একটা পরিবার হিসেবে সেবা করা

আ্যন এবং আমি মনে করি যে, আমাদের পরিবার গড়ে তোলার জন্য আমরা এর চেয়ে আরও ভাল পরিবেশ বেছে নিতে পারতাম না। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মিশনারিদের সঙ্গে কাজ করার এবং নতুন গঠিত মণ্ডলীকে বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করার আনন্দ আমাদের হয়েছিল। আমরা আমাদের সেই সমস্ত উগান্ডার ভাই ও বোনদের সাহচর্য পছন্দ করতাম, যারা প্রায়ই আমাদের বাড়িতে আসত। বিশেষভাবে, স্ট্যানলি এবং ইসিনালা মাকুমবা আমাদের জন্য উৎসাহজনক ছিল।

কিন্তু ভাইবোনেরাই আমাদের একমাত্র অতিথি ছিল না, যেহেতু আমরা এক বিস্ময়কর বৈচিত্র্যময় বন্যপ্রাণীদের দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিলাম। রাতের বেলা নীলনদ থেকে জলহস্তী উঠে আসত এবং আমাদের বাড়ির আশপাশ দিয়ে ঘোরাঘুরি করত। সেই সময়ের কথা আমার স্পষ্ট মনে আছে যখন বাগানে ৬ মিটার লম্বা এক অজগর সাপ এসেছিল। মাঝে মাঝে, আমরা বন্যপ্রাণীদের দেখার জন্য বন্য জীবজন্তুর পার্কে যেতাম, যেখানে সিংহ এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণী অবাধে বিচরণ করত।

পরিচর্যায়, স্থানীয় লোকেদের কাছে আমরা কিছুটা অসাধারণ ছিলাম, যারা আগে কখনও শিশুযান দেখেনি। আমরা যখন ঘরে ঘরে যেতাম, তখন আমাদের পিছন পিছন সাধারণত অনেক ছোট ছেলেমেয়ে আসত। লোকেরা আমাদের সম্মানের চোখে দেখত এবং এরপর সাদা চামড়ার বাচ্চাদের ছুঁয়ে দেখত। সাক্ষ্যদান অনেক আনন্দজনক ছিল কারণ লোকেদের সৌজন্যবোধ ছিল। আমরা মনে করেছিলাম যে, সকলে বুঝি সত্যে আসতে শুরু করেছে, যেহেতু বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করা অনেক সহজ ছিল। কিন্তু, অনেকের পক্ষে অশাস্ত্রীয় রীতিনীতিগুলোর সঙ্গে বন্ধন ছিন্ন করা কঠিন ছিল। তবে, অনেকে বাইবেলের উচ্চ নৈতিক মানগুলো গ্রহণ করেছিল এবং মণ্ডলীর সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। ১৯৬৮ সালে জিনজায় আমাদের প্রথম সীমা সম্মেলন ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল। যাদেরকে আমরা বাইবেল অধ্যয়ন করাতাম, তাদের মধ্যে কয়েকজনকে নীলনদে বাপ্তিস্ম নিতে দেখা এক আনন্দের স্মৃতি ছিল। কিন্তু, আমাদের শান্তি খুব শীঘ্রই নষ্ট হতে যাচ্ছিল।

নিষেধাজ্ঞা—বিশ্বাস এবং উদ্ভাবনকুশলতার এক পরীক্ষা

১৯৭১ সালে জেনারেল ইডি আমিন ক্ষমতা দখল করেন। জিনজায় প্রচণ্ড বিশৃঙ্খলা ছিল এবং শুরুতেই যে-দৃশ্যের কথা বর্ণনা করা হয়েছে, সেটা তখনই ঘটেছিল যে-সময় আমরা আমাদের বাগানে চা খাচ্ছিলাম। পরের দুই বছরের মধ্যে এশিয়ার বিরাট সংখ্যক লোককে বহিষ্কার করা হয়েছিল। বেশির ভাগ বিদেশি চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং স্কুল ও চিকিৎসার সুযোগসুবিধা প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর এই কঠিন ঘোষণা দেওয়া হয় যে, যিহোবার সাক্ষিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আমাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমাদেরকে রাজধানী কামপালাতে পাঠিয়ে দেয়। সেই স্থান পরিবর্তন দুদিক দিয়ে উপকারজনক ছিল। আমরা কামপালাতে তত বেশি পরিচিত ছিলাম না আর তাই চলাফেরা করার ক্ষেত্রে আরও বেশি স্বাধীনতা ছিল। এ ছাড়া, সেখানকার মণ্ডলী এবং ক্ষেত্রের পরিচর্যায় অনেক কাজ করার ছিল।

ব্রায়েন এবং মেরিয়েন ওয়ালেস ও তাদের দুই ছেলেমেয়ের অবস্থাও আমাদের মতো ছিল এবং তারাও উগান্ডাতে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এই কঠিন সময়ে কামপালা মণ্ডলীতে একসঙ্গে সেবা করার সময় আমরা তাদের সাহচর্য অনেক উপভোগ করেছি। অন্যান্য দেশে আমাদের যে-ভাইবোনেরা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সেবা করছে, তাদের সম্বন্ধে পড়া সেই সময় আমাদের জন্য বিশেষ উৎসাহের উৎস হয়েছিল। আমরা ছোট ছোট দলে মিলিত হতাম এবং মাসে একবার এনটেবি বোটানিক্যাল গার্ডেনে বিরাট আকারের সমাবেশ করতাম, সেই উপলক্ষগুলোকে একটা পার্টির মতো তুলে ধরতাম। আমাদের মেয়েদের কাছে এই বিষয়টাকে এক চমৎকার বুদ্ধি বলে মনে হতো।

আমরা যেভাবে প্রচার কাজ করতাম, সেই বিষয়ে আমাদের অনেক সতর্ক থাকতে হতো। সাদা চামড়ার লোকেরা উগান্ডার লোকেদের ঘরে যাবে, এটা অনেকের নজরে পড়ার মতো এক বিষয় হবে। তাই, দোকানপাট, আ্যপার্টম্যান্ট এবং কিছু ক্যাম্পাস আমাদের ক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল। দোকানগুলোতে যে-পদ্ধতিটা আমি ব্যবহার করতাম সেটা হল, আমি এমন একটা পণ্যদ্রব্য চাইতাম যেটা তখন আর পাওয়া যেত না বলে আমি জানতাম যেমন, চিনি অথবা চাল। দোকানদার যদি দেশে কী হচ্ছে, সেটা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করতেন, তা হলে আমি রাজ্যের বার্তা জানাতাম। এই পদ্ধতিটা অনেক কার্যকরী হয়েছিল। মাঝে মাঝে, আমি দোকানে শুধু পুনর্সাক্ষাতের ব্যবস্থাই করে আসতাম না কিন্তু সেইসঙ্গে দুর্লভ পণ্যদ্রব্যের সামান্য সরবরাহেরও ব্যবস্থাও করে আসতাম।

এর মধ্যে, আমাদের চারপাশে দৌরাত্ম্য ছেয়ে গিয়েছিল। উগান্ডা এবং ব্রিটেনের মধ্যে সম্পর্কের আরও অবনতি হওয়ার কারণে কর্তৃপক্ষ আমার চুক্তিকে নবায়িত করেনি। তাই, ১৯৭৪ সালে আট বছর উগান্ডায় থাকার পর, আমাদের ভাইবোনদের দুঃখজনক বিদায় জানানোর সময় এসেছিল। কিন্তু, আমাদের মিশনারি মনোভাব ম্লান হয়ে যায়নি।

নিউ গিনিতে

১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে, আমরা পাপুয়া নিউ গিনিতে কাজ করার সুযোগ সাগ্রহে গ্রহণ করি। তাই, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আট বছরের উপভোগ্য সেবা শুরু হয়। ভাইবোনদের সঙ্গে এবং পরিচর্যায় আমাদের জীবন অনেক অর্থপূর্ণ এবং পুরস্কারজনক ছিল।

আমাদের পরিবার পাপুয়া নিউ গিনিতে থাকার সময়ে নাটকগুলোর কথা—বাইবেলের নাটকগুলোর কথা—স্মরণ করে। প্রতি বছর আমরা জেলা সম্মেলনের জন্য নাটকের প্রস্তুতির সঙ্গে জড়িত থাকতাম এবং তখন আমরা কত মজাই না করতাম! আমরা অনেক আধ্যাত্মিকমনা পরিবারের সাহচর্য উপভোগ করেছি আর তারা আমাদের মেয়েদের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। আমাদের বড় মেয়ে সারার, রে স্মিথ নামে একজন বিশেষ অগ্রগামীর সঙ্গে বিয়ে হয় এবং তারা একত্রে ইরিয়ান জায়ার (এখন পাপুয়া, ইন্দোনেশিয়ার একটা প্রদেশ) সীমান্তের কাছাকাছি বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে সেবা করে। তাদের বাড়ি ছিল স্থানীয় গ্রামে ঘাসের তৈরি কুঁড়েঘর এবং সারা বলে যে, সেই কার্যভারে সে যে-সময় কাটিয়েছে, তা তার জন্য এক উত্তম প্রশিক্ষণ ছিল।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া

সেই সময় আমার বাবামার বাড়তি যত্নের প্রয়োজন ছিল। আমাদের ইংল্যান্ডে ফিরে যাওয়ার পরিবর্তে বাবামা আমাদের সঙ্গে থাকার বিষয়ে একমত হয় এবং আমরা সকলে ১৯৮৩ সালে অস্ট্রেলিয়ায় চলে যাই। তারা আমার বোন ড্যাফনির সঙ্গেও কিছু সময় কাটায়, যে তখনও জাপানে ছিল। আমার বাবামা মারা যাওয়ার পর, আ্যন এবং আমি নিয়মিত অগ্রগামীর সেবা করব বলে সিদ্ধান্ত নিই এবং সেটা আমাকে এমন এক বিশেষ সুযোগের দিকে পরিচালিত করে, যেটাকে আমার কাছে বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা বলে মনে হয়েছিল।

আমরা সবেমাত্র অগ্রগামীর কাজ শুরু করেছিলাম, যখন আমাদের সীমার কাজের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। ছোটবেলা থেকেই, আমি সীমা অধ্যক্ষের সাক্ষাৎকে এক বিশেষ উপলক্ষ হিসেবে দেখতাম। এখন আমি একজন সীমা অধ্যক্ষ। সেই সময় আমরা আমাদের জীবনে যে-কাজগুলো উপভোগ করেছি, সেগুলোর মধ্যে এই কাজকে সবচেয়ে কঠিন দায়িত্ব বলে মনে হয়েছে কিন্তু বহুবার যিহোবা এমন ক্ষেত্রগুলোতে আমাদের সাহায্য করেছেন, যে-বিষয়ে আমাদের আগে কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না।

১৯৯০ সালে অস্ট্রেলিয়াতে ভাই থিওডোর জারাসের পরিদর্শনের সময় আমরা তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, বিদেশে পূর্ণ-সময়ের কাজ করার ক্ষেত্রে আমাদের বয়স অনেক বেশি হয়ে গেছে বলে মনে হয় কি না। তিনি বলেছিলেন: “শলোমন দ্বীপপুঞ্জ সম্বন্ধে কী বলা যায়?” তাই, শেষ পর্যন্ত আ্যন ও আমার বয়স যখন ৫০ এর কোঠায়, তখন আমরা সেখানে যাই, যা আমাদের প্রথম অফিসিয়াল মিশনারি কার্যভার ছিল।

“সুখী দ্বীপপুঞ্জে” সেবা করা

শলোমন দ্বীপপুঞ্জ সুখী দ্বীপপুঞ্জ হিসেবে পরিচিত এবং বিগত দশকে সেখানে আমাদের সেবা সত্যিই এক আনন্দিত সময় হয়ে এসেছে। আমি যখন জেলা অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করছিলাম তখন আ্যন এবং আমি শলোমন দ্বীপপুঞ্জের ভাই ও বোনদের অমায়িক দয়া সম্বন্ধে জানতে পারি। আমাদের প্রতি যে-আতিথেয়তা দেখানো হয়েছিল, তা আমাদের হৃদয় স্পর্শ করেছিল এবং বিভিন্ন বিষয় ব্যাখ্যা করার জন্য আমি শলোমন দ্বীপপুঞ্জের পিডগিন ভাষা—পৃথিবীতে সবচেয়ে কম শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ একটা ভাষা—যা আমি সবার বোধগম্য বলে মনে করতাম, সেই ভাষায কথা বলার প্রচেষ্টা করার সময় প্রত্যেকে খুবই সহনশীল ছিল।

আমরা শলোমন দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছানোর পর পরই, বিরোধীরা আমাদের সম্মেলন হল ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। আ্যংলিকান গির্জা যিহোবার সাক্ষিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে এসে এই দাবি করে যে, হনিয়ারাতে আমাদের নতুন সম্মেলন হল অবৈধভাবে তাদের জমির কিছু অংশে পড়েছিল। সরকার তাদের দাবিকে সমর্থন করেছিল, তাই আমরা সেই সিদ্ধান্তের বিষয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করি। আপীলের ফলাফলই নির্ধারণ করবে যে, ১,২০০ আসনবিশিষ্ট আমাদের নতুন সম্মেলন হলকে ভেঙে ফেলব কি না।

সেই মামলাটা আদালতে পুরো এক সপ্তাহ ধরে চলছিল। আমাদের বিরুদ্ধে যখন অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়, তখন বিরোধী উকিলের কাছ থেকে এক উদ্ধত আস্থা প্রকাশ পেয়েছিল। এরপর একের পর এক তুমুল বিতর্কের পর নিউজিল্যান্ড থেকে আসা আমাদের উকিল ভাই ওয়ারেন ক্যাথকার্ট হাজির হন এবং বিরোধীদের মামলার প্রতিটা অংশকে একটা একটা করে বাতিল করেন। শুক্রবারের মধ্যে, আদালতের ঘটনা দূরদূরান্তে ছড়িয়ে পরে এবং আদালত গির্জার উচ্চপদস্থ ব্যক্তি, সরকারি কর্মকর্তা এবং আমাদের খ্রিস্টান ভাইবোনদের দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল। আমার এখনও সরকারি আদালতের তালিকার নোটিশের ভুল উপস্থাপনের কথা মনে আছে। এটা এভাবে পড়া হয়: “শলোমন দ্বীপপুঞ্জ সরকার এবং মিলানিসিয়ার গির্জা বনাম যিহোবা।” আমরা জয়ী হয়েছিলাম।

কিন্তু, সুখী দ্বীপের তুলনামূলক প্রশান্তি বেশি দিন টেকেনি। আবারও আ্যন এবং আমি সেনাবাহিনী দলের বিশৃঙ্খলা এবং দৌরাত্ম্যের মুখে পড়েছিলাম। সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ গৃহযুদ্ধের দিকে পরিচালিত করেছিল। ২০০০ সালের ৫ই জুন, সরকার অপসারিত হয় এবং রাজধানী সশস্ত্র জঙ্গীদের দখলে আসে। কয়েক সপ্তাহের জন্য আমাদের সম্মেলন হল গৃহহীন ব্যক্তিদের এক কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। কর্তৃপক্ষরা অবাক হয়ে গিয়েছিল যে, বিরোধী সাম্প্রদায়িক দলগুলো থেকে আসা খ্রিস্টান ভাইবোনেরা সম্মেলন হলের ছাদের নিচে এক শান্তিপূর্ণ পরিবার হিসেবে বাস করছে। এটা কত উত্তম সাক্ষ্যই না হয়েছিল!

এমনকি জঙ্গিরাও যিহোবার সাক্ষিদের নিরপেক্ষতাকে সম্মান করত। এটা আমাদেরকে একজন কমান্ডারকে সাহিত্যাদি এবং অন্যান্য জিনিস বোঝাই একটা ট্রাক আমাদের ভাইবোনদের একটা ছোট্ট দলের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজি করাতে সাহায্য করেছিল, যে-ভাইবোনেরা বিরোধী সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ছিল। আমরা যখন কয়েক মাস ধরে আমাদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন পরিবারগুলোকে খুঁজে পেয়েছিলাম, তখন আমাদের মধ্যে এমন কেউ ছিল বলে আমার মনে হয় না, যে চোখের জল ফেলেনি।

কৃতজ্ঞ হওয়ার মতো অনেক কিছু

যিহোবার সেবায় আমাদের জীবন সম্বন্ধে বিবেচনা করে আমাদের কৃতজ্ঞ হওয়ার অনেক কারণ আছে। বাবামা হিসেবে আমাদের দুজন মেয়ে এবং তাদের স্বামী, রে ও জনকে ক্রমাগত যিহোবাকে সেবা করতে দেখার আনন্দ হয়েছে। তারা আমাদের মিশনারি কার্যভারে প্রকৃত সমর্থন হয়ে এসেছে।

গত ১২ বছর ধরে আ্যন এবং আমার শলোমন দ্বীপপুঞ্জের শাখা অফিসে কাজ করার বিশেষ সুযোগ হয়েছে এবং সেই সময়ের মধ্যে আমরা শলোমন দ্বীপপুঞ্জের রাজ্য ঘোষণাকারীদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ১,৮০০রও বেশি হতে দেখেছি। সম্প্রতি, আমি আরেকটা বিশেষ সুযোগ পেয়েছি, যেটা হল নিউ ইয়র্কের প্যাটারসনে শাখা কমিটির সদস্যদের জন্য স্কুলে যোগ দেওয়ার সুযোগ। সত্যিই, মিশনারি মনোভাব বজায় রাখার জন্য আমরা এক পরিতৃপ্তিদায়ক জীবন এবং অনেক আশীর্বাদ উপভোগ করেছি।

[পাদটীকা]

a ১৯৭৭ সালের ১৫ই জানুয়ারি প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকায় “আমরা ইচ্ছাপূর্বক বিলম্ব করিনি” নামক প্রবন্ধটা দেখুন।

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯৬০ সালে আমাদের বিয়ের দিনে

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

উগান্ডাতে স্ট্যানলি এবং ইসনালা মাকুমবা আমাদের পরিবারের জন্য উৎসাহের উৎস ছিল

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

সারা এক প্রতিবেশীর কুঁড়েঘরের দিকে যাচ্ছে

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

শলোমন দ্বীপপুঞ্জের লোকেদের শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য পেতে আমি ছবি আঁকতাম

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

শলোমন দ্বীপপুঞ্জের এক বিচ্ছিন্ন মণ্ডলীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করা

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

আজকে আমাদের পরিবার

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার