ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w13 ৩/১৫ পৃষ্ঠা ৩-৭
  • যারা যিহোবাকে ভালোবাসে, “তাহাদের উছোট লাগে না”

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • যারা যিহোবাকে ভালোবাসে, “তাহাদের উছোট লাগে না”
  • ২০১৩ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • হোঁচট খেলেও ধাবনক্ষেত্র থেকে সরে পড়বেন না
  • হোঁচট খাওয়া অগ্রগতিকে ব্যহত করে
  • ধৈর্যপূর্বক দৌড়ান —হোঁচট খাওয়া এড়িয়ে চলুন
  • ‘নিরুপিত পথের শেষ পর্যন্ত দৌড়ান’
    প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০২০
  • আপনি শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে পারেন
    ১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • নিজের ও অন্যদের বিঘ্নের কারণ না হওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন
    আমাদের খ্রিস্টীয় জীবন ও পরিচর্যা—সভার জন্য অধ্যয়ন পুস্তিকা ২০১৮
  • জীবনের জন্য দৌড়ে আপনি কিরূপে দৌড়াচ্ছেন?
    ১৯৯২ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
২০১৩ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w13 ৩/১৫ পৃষ্ঠা ৩-৭

যারা যিহোবাকে ভালোবাসে, “তাহাদের উছোট লাগে না”

“যাহারা তোমার ব্যবস্থা ভালবাসে, তাহাদের পরম শান্তি, তাহাদের উছোট লাগে না।”—গীত. ১১৯:১৬৫.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

কীভাবে খ্রিস্টানরা একটা ধাবনক্ষেত্রে রয়েছে আর এর পুরস্কার কী?

কোন কারণগুলোর জন্য একজন খ্রিস্টান হোঁচট খেতে পারেন?

কোন অর্থে সেই ব্যক্তিরা হোঁচট খায় না, যারা যিহোবার ব্যবস্থা ভালোবাসে?

১. কীভাবে একজন দৌড়বিদের মনোভাব, হাল ছেড়ে না দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের দৃঢ়সংকল্পকে তুলে ধরে?

কিশোর বয়স থেকেই মেরি ডিকার একজন বিশ্ববিখ্যাত দৌড়বিদ হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। ১৯৮৪ সালে, সামার অলিম্পিকসে ৩,০০০ মিটারের ফাইনালে তিনি স্বর্ণপদক লাভ করবেন বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু, তিনি শেষ সীমানা অতিক্রম করতে পারেননি। দৌড়ানোর সময় আরেকজন দৌড়বিদের পায়ের সঙ্গে হোঁচট লেগে তিনি হুমড়ি খেয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। আহত হয়ে তিনি কাঁদতে শুরু করেছিলেন এবং তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নিতে হয়েছিল। কিন্তু, মেরি হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী ছিলেন না। এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তিনি দৌড় প্রতিযোগী হিসেবে ফিরে এসেছিলেন এবং ১৯৮৫ সালে মহিলাদের দৌড়ে এক নতুন রেকর্ড গড়েছিলেন।

২. কোন অর্থে সত্য খ্রিস্টানরা একটা ধাবনক্ষেত্রে রয়েছে আর কীসের প্রতি আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে?

২ খ্রিস্টান হিসেবে আমরা এক ধাবনক্ষেত্রে—এক রূপক ধাবনক্ষেত্রে—রয়েছি। দৌড় প্রতিযোগিতায় আমাদের লক্ষ্য হতে হবে, জয়ী হওয়া। আমাদের প্রতিযোগিতা পূর্ণবেগে দৌড়ানোর কোনো প্রতিযোগিতা নয়, যেখানে গতিবেগ হল জয়ের চাবিকাঠি। আর স্পষ্টভাবে এটা ধীরগতিতে হাঁটার মতোও নয়, যেখানে কয়েক বার বিরতি নেওয়া যায়। এর পরিবর্তে, এটাকে ম্যারাথন দৌড়ের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, যেখানে জয়ী হওয়ার জন্য ধৈর্য আবশ্যক। করিন্থ নগর ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল আর প্রেরিত পৌল এই নগরে বসবাসরত খ্রিস্টানদের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে একটা ধাবনক্ষেত্রে একজন দৌড়বিদের দৃষ্টান্ত ব্যবহার করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “তোমরা কি জান না যে, দৌড়ের স্থলে যাহারা দৌড়ে, তাহারা সকলে দৌড়ে, কিন্তু কেবল এক জন পুরস্কার পায়? তোমরা এরূপে দৌড়, যেন পুরস্কার পাও।”—১ করি. ৯:২৪.

৩. কোন অর্থে সমস্ত দৌড়বিদ অনন্তজীবনের ধাবনক্ষেত্রে জয়ী হতে পারে?

৩ বাইবেল আমাদেরকে এই রূপক ধাবনক্ষেত্রে দৌড়াতে বলে। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৯:২৫-২৭.) এর পুরস্কার হল অনন্তজীবন, হোক তা অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের জন্য স্বর্গে অথবা বাকি অংশগ্রহণকারীদের জন্য পৃথিবীতে। অধিকাংশ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার বিপরীতে, এই ধাবনক্ষেত্রে যারা অংশ নেয় এবং শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরে, তারা সকলে পুরস্কার লাভ করে। (মথি ২৪:১৩) প্রতিযোগীরা কেবল সেই সময়ই হেরে যাবে, যদি তারা নিয়ম অনুযায়ী দৌড়াতে ব্যর্থ হয় এবং শেষ সীমানা অতিক্রম না করে। এ ছাড়া, এটাই হচ্ছে একমাত্র ধাবনক্ষেত্র, যেখানে অনন্তজীবনের পুরস্কার দেওয়া হয়।

৪. কী আমাদের জন্য অনন্তজীবন লাভ করার দৌড়কে কঠিন করে তোলে?

৪ শেষ সীমানা অতিক্রম করা সহজ নয়। এর জন্য নিয়মানুবর্তিতা এবং নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য প্রয়োজন। মাত্র একজন ব্যক্তিই—যিশু খ্রিস্ট—এমনকী একবারের জন্যও হোঁচট না খেয়ে শেষ সীমানা অতিক্রম করতে পেরেছেন। কিন্তু, তাঁর শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন যে, খ্রিস্টের অনুসারীরা ‘সকলে অনেক প্রকারে উছোট খায়।’ (যাকোব ৩:২) এটা কতই না সত্য! আমরা সকলেই নিজেদের ও সেইসঙ্গে অন্যদের অসিদ্ধতার দ্বারা প্রভাবিত হই। তাই, মাঝে মাঝে আমরা হয়তো হোঁচট খেতে এবং এরপর বিচলিত হতে ও সেইসঙ্গে আমাদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে পারি। এমনকী আমরা হয়তো পড়েও যেতে পারি; কিন্তু আমরা উঠে দাঁড়াই এবং দৌড় অব্যাহত রাখি। কেউ কেউ এতটা মারাত্মকভাবে পড়েছিল যে, তাদেরকে উঠে দাঁড়ানোর এবং শেষ সীমানার দিকে পুনরায় দৌড়ানোর জন্য সাহায্য করতে হয়েছিল। তাই, সম্ভবত আমরাও সাময়িকভাবে অথবা এমনকী বার বার হোঁচট খেতে কিংবা পড়ে যেতে পারি।—১ রাজা. ৮:৪৬.

হোঁচট খেলেও ধাবনক্ষেত্র থেকে সরে পড়বেন না

৫, ৬. (ক) কীভাবে একজন খ্রিস্টানের “উছোট লাগে না” এবং কী তাকে ‘উঠিতে’ সাহায্য করবে? (খ) কেন কেউ কেউ হোঁচট খাওয়ার পর উঠে দাঁড়াতে পারে না?

৫ আপনি হয়তো আধ্যাত্মিক কোনো অবস্থা বর্ণনা করার জন্য ‘উছোট লাগা’ এবং ‘পড়া’ শব্দগুলোকে একটা অন্যটার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করেছেন। বাইবেলের এই অভিব্যক্তিগুলো বা এর সমার্থ শব্দগুলো একই অর্থ প্রকাশ করতে পারে, তবে সবসময় নয়। উদাহরণস্বরূপ, হিতোপদেশ ২৪:১৬ পদের কথাগুলো লক্ষ করুন: “ধার্ম্মিক সাত বার পড়িলেও আবার উঠে; কিন্তু দুষ্টেরা বিপৎপাতে নিপাতিত হইবে।”

৬ যারা যিহোবার ওপর নির্ভর করে, তাদেরকে তিনি এমনভাবে হোঁচট খেতে অথবা নিপাতিত হতে বা পড়ে যেতে—দুর্দশাগ্রস্ত হতে বা উপাসনার ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হতে—দেবেন না যে, এর ফলে তারা আর উঠে দাঁড়াতে পারে না। আমাদের এই আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, যিহোবা আমাদের ‘উঠিবার’ জন্য সাহায্য করবেন, যাতে আমরা ক্রমাগত তাঁকে সর্বোচ্চ ভক্তি প্রদান করতে পারি। এটা এমন সকলের জন্য কতই না সান্ত্বনাদায়ক, যারা গভীরভাবে যিহোবাকে ভালোবাসে! দুষ্টদের ওঠার জন্য এইরকম আকাঙ্ক্ষা নেই। তারা ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার এবং তাঁর লোকেদের সাহায্য অন্বেষণ করে না অথবা তাদেরকে এই ধরনের সাহায্য প্রদান করতে চাইলেও তা গ্রহণ করে না। এর বৈসাদৃশ্যে, যারা ‘সদাপ্রভুর ব্যবস্থা ভালবাসে,’ তারা এমনভাবে হোঁচট খায় না, যা কিনা তাদেরকে জীবনের ধাবনক্ষেত্র থেকে চিরতরে সরিয়ে দিতে পারে।—পড়ুন, গীতসংহিতা ১১৯:১৬৫.

৭, ৮. কীভাবে একজন ব্যক্তি ‘পড়িয়া’ যাওয়া সত্ত্বেও, ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করতে পারেন?

৭ কেউ কেউ কিছু দুর্বলতার কারণে ছোটোখাটো পাপে পতিত হয় আর তা এমনকী এক বার দু-বার নয় বরং বার বার। কিন্তু, এরপরও তারা যিহোবার চোখে ধার্মিক থাকবে, যদি তারা ক্রমাগত ‘উঠিয়া’ দাঁড়ায় অর্থাৎ আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হয় এবং পুনরায় অনুগত সেবা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। প্রাচীন ইস্রায়েলের সঙ্গে ঈশ্বর যেভাবে আচরণ করেছেন, তা থেকে আমরা এই বিষয়টা দেখতে পারি। (যিশা. ৪১:৯, ১০) পূর্বে উদ্ধৃত হিতোপদেশ ২৪:১৬ পদ নেতিবাচক বিষয়ের—আমাদের ‘পড়িবার’—ওপর জোর দেওয়ার পরিবর্তে, ইতিবাচক বিষয়ের ওপর, আমাদের করুণাময় ঈশ্বরের সাহায্যে ‘উঠিবার’ ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছে। (পড়ুন, যিশাইয় ৫৫:৭.) আমাদের ওপর আস্থা প্রকাশ করে যিহোবা ঈশ্বর এবং যিশু খ্রিস্ট সদয়ভাবে আমাদেরকে ‘উঠিবার’ জন্য উৎসাহিত করেন।—গীত. ৮৬:৫; যোহন ৫:১৯.

৮ ম্যারাথন দৌড়ে একজন দৌড়বিদ হোঁচট খাওয়ার অথবা পড়ে যাওয়ার পরও, তার উঠে দাঁড়াবার এবং দৌড় শেষ করার সুযোগ থাকতে পারে, যদি তিনি তৎপরতার সঙ্গে কাজ করেন। অনন্তজীবনের ধাবনক্ষেত্রে, কখন দৌড় শেষ হবে, ‘সেই দিন ও সেই দণ্ড’ সম্বন্ধে আমরা জানি না। (মথি ২৪:৩৬) তবে, আমরা যত কম হোঁচট খাব, ততই আমরা হয়তো আরও বেশি করে চলা অব্যাহত রাখতে, ধাবনক্ষেত্রে থাকতে এবং তা সফলভাবে শেষ করতে পারব। তাই, কীভাবে আমরা হোঁচট খাওয়া এড়াতে পারি?

হোঁচট খাওয়া অগ্রগতিকে ব্যহত করে

৯. হোঁচট খাওয়ার সম্ভাব্য কোন বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করব?

৯ আসুন আমরা সম্ভাব্য পাঁচটা বিষয় বিবেচনা করি, যেগুলোর কারণে আমরা হোঁচট খেতে পারি আর সেগুলো হল, ব্যক্তিগত দুর্বলতা, মাংসিক আকাঙ্ক্ষা, সহবিশ্বাসীদের কাছ থেকে অবিচার, ক্লেশ বা তাড়না এবং অন্যদের অসিদ্ধতা। মনে রাখবেন যে, আমরা যদি হোঁচট খেয়েও থাকি, তাহলে যিহোবা অত্যন্ত ধৈর্যশীল। তিনি অতি দ্রুত আমাদেরকে আনুগত্যহীন বলে আখ্যায়িত করেন না।

১০, ১১. দায়ূদ ব্যক্তিগত কোন দুর্বলতার সঙ্গে লড়াই করেছিলেন?

১০ ব্যক্তিগত দুর্বলতাকে ধাবনক্ষেত্রে পড়ে থাকা পাথরের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। রাজা দায়ূদ ও প্রেরিত পিতরের জীবনের ঘটনাগুলোর দিকে তাকালে আমরা এইরকম দুটো দুর্বলতা—ইন্দ্রিয়দমনের অভাব এবং লোকভয়—লক্ষ করতে পারি।

১১ রাজা দায়ূদ ইন্দ্রিয়দমনের ক্ষেত্রে দুর্বলতা প্রদর্শন করেছিলেন, যা বৎশেবার সঙ্গে জড়িত তার কাজগুলো থেকে স্পষ্ট দেখা গিয়েছিল। আর নাবল যখন দায়ূদকে অপমান করেছিলেন, তখন দায়ূদ রূঢ় আচরণ দেখাতে উদ্যত হয়েছিলেন। হ্যাঁ, তিনি ইন্দ্রিয়দমন করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন কিন্তু যিহোবাকে সন্তুষ্ট করার প্রচেষ্টায় তিনি কখনো হাল ছেড়ে দেননি। অন্যদের সাহায্যে তিনি পুনরায় তার আধ্যাত্মিক ভারসাম্য অর্জন করতে পেরেছিলেন।—১ শমূ. ২৫:৫-১৩, ৩২, ৩৩; ২ শমূ. ১২:১-১৩.

১২. কীভাবে পিতর হোঁচট খাওয়া সত্ত্বেও ধাবনক্ষেত্র থেকে সরে পড়েননি?

১২ পিতর লোকভয় প্রদর্শন করেছিলেন, মাঝে মাঝে মারাত্মক হোঁচট খেয়েছিলেন; তা সত্ত্বেও, তিনি যিশু ও যিহোবার প্রতি আনুগত্য বজায় রেখেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি জনসমক্ষে তার প্রভুকে অস্বীকার করেছিলেন আর তা কেবল এক বার নয় বরং তিন বার। (লূক ২২:৫৪-৬২) পরবর্তী সময়ে, পিতর খ্রিস্টীয় উপায়ে আচরণ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন, পরজাতীয় বিশ্বাসীদের সঙ্গে এমনভাবে আচরণ করেছিলেন, যেন ত্বক্‌চ্ছেদপ্রাপ্ত যিহুদি খ্রিস্টান হিসেবে তারা তাদের চেয়ে উত্তম। কিন্তু, প্রেরিত পৌল বিষয়টা স্পষ্টভাবে লক্ষ করেছিলেন—মণ্ডলীতে শ্রেণীবৈষম্যের কোনো স্থান ছিল না। পিতরের মনোভাব ভুল ছিল। পিতরের আচরণ ভাইদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলার আগেই পৌল সরাসরি পিতরকে পরামর্শ দেওয়ার মাধ্যমে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। (গালা. ২:১১-১৪) পিতরের আত্মসম্মানে কি এতটাই আঘাত লেগেছিল যে, তিনি জীবনের ধাবনক্ষেত্রে চলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন? না। তিনি পৌলের পরামর্শ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছিলেন, তা কাজে লাগিয়েছিলেন এবং ধাবনক্ষেত্র থেকে সরে পড়েননি।

১৩. কীভাবে শারীরিক দুর্বলতা হোঁচট খাওয়ার কারণ হতে পারে?

১৩ মাঝে মাঝে ব্যক্তিগত দুর্বলতার অন্তর্ভুক্ত হল স্বাস্থ্যগত সমস্যা। এটাও হোঁচট খাওয়ার মতো একটা বিষয় হতে পারে। এটা আমাদের আধ্যাত্মিক পথে চলার ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারে আর এমনকী আমাদেরকে বিচলিত ও ক্লান্ত করে দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একজন জাপানি বোন তার বাপ্তিস্মের পর, ১৭ বছর ধরে স্বাস্থ্যগত সমস্যা ভোগ করেছিলেন। তিনি তার স্বাস্থ্য নিয়ে এতটাই উদ্‌বিগ্ন হয়ে উঠেছিলেন যে, তিনি আধ্যাত্মিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়তে শুরু করেছিলেন। এর ফলে একসময় তিনি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিলেন। দুজন প্রাচীন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিল। তাদের সদয় কথাবার্তার দ্বারা উৎসাহিত হয়ে তিনি আবারও সভায় যোগ দিতে শুরু করেছিলেন। তিনি এইরকম অনুভূতি প্রকাশ করেন, “আমি কেঁদে দিয়েছিলাম কারণ ভাইয়েরা আমাকে অত্যন্ত আন্তরিকভাবে সম্ভাষণ জানিয়েছিল।” আমাদের বোন ধাবনক্ষেত্রে ফিরে আসেন।

১৪, ১৫. ভুল আকাঙ্ক্ষা আসলে কোন দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন? উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।

১৪ মাংসিক আকাঙ্ক্ষার কারণে অনেকে হোঁচট খেয়েছে। আমরা যখন এভাবে প্রলোভিত হই, তখন মানসিক, নৈতিক এবং আধ্যাত্মিকভাবে শুচি থাকার জন্য আমাদের দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের হোঁচট খাওয়ার কারণ হতে পারে এমন যেকোনো কিছুকে—হতে পারে আমাদের হাত অথবা পা—রূপক অর্থে ‘কাটিয়া ফেলিয়া দিবার’ ব্যাপারে যিশুর পরামর্শ মনে করে দেখুন। এর অন্তর্ভুক্ত কি সেইসমস্ত অনৈতিক চিন্তাভাবনা এবং কাজও নয়, যেগুলোর কারণে কেউ কেউ ধাবনক্ষেত্র থেকে সরে পড়েছে?—পড়ুন, মথি ১৮:৮.

১৫ একজন ভাই, যিনি খ্রিস্টান পরিবারে মানুষ হয়েছিলেন, তিনি লিখেছিলেন যে, অতীতে তাকে সমকামিতার প্রবণতার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন: “আমি সবসময় অস্বস্তিবোধ করতাম। আমার এইরকমটা মনে হতো, যেন আমি কোনো জায়গায়ই খাপ খাইয়ে নিতে পারি না।” ২০ বছর বয়সে তিনি একজন নিয়মিত অগ্রগামী হয়েছিলেন এবং মণ্ডলীতে একজন পরিচারক দাস হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেছিলেন। এরপর, তিনি মারাত্মকভাবে হোঁচট খেয়েছিলেন, শাস্ত্রীয়ভাবে শাসন লাভ করেছিলেন এবং প্রাচীনদের কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ করেছিলেন। প্রার্থনা, ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে অধ্যয়ন এবং অন্যদের সাহায্য করার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার মাধ্যমে তিনি আবারও উঠে দাঁড়িয়েছিলেন এবং আধ্যাত্মিকভাবে চলতে শুরু করেছিলেন। কয়েক বছর পর, তিনি স্বীকার করেন: “এখনও মাঝে মাঝে আমার সেই অনুভূতিগুলো আসে কিন্তু আমি সেগুলোর দ্বারা পরাস্ত হই না। আমি জানতে পেরেছি যে, আপনার পক্ষে মোকাবিলা করা অসাধ্য এমন বিষয়গুলোর দ্বারা যিহোবা আপনাকে প্রলোভিত হতে দেবেন না। তাই, আমার এই বিশ্বাস রয়েছে যে, ঈশ্বর জানেন, আমি তা মোকাবিলা করতে পারব।” এই ভাই উপসংহারে বলেন: “আমাকে যেসমস্ত লড়াই করতে হচ্ছে, সেগুলো নতুন জগতে আর থাকবে না। আর আমি এটাই চাই! সেই সময় না আসা পর্যন্ত আমি লড়াই চালিয়ে যাব।” তিনি ধাবনক্ষেত্র থেকে সরে না পড়ার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ।

১৬, ১৭. (ক) কোন বিষয়টা এমন একজন ভাইকে সাহায্য করেছিল, যিনি মনে করেছিলেন যে, তিনি অবিচারের শিকার হয়েছেন? (খ) হোঁচট খাওয়া এড়িয়ে চলার জন্য আমাদের কোন বিষয়ের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে হবে?

১৬ সহবিশ্বাসীদের কাছ থেকে অবিচারও হোঁচট খাওয়ার কারণ হতে পারে। ফ্রান্সে, একজন প্রাক্তন প্রাচীন অবিচারের শিকার হয়েছেন বলে মনে করে তিতিবিরক্ত হয়ে পড়েছিলেন। এর ফলে, তিনি মণ্ডলীর সঙ্গে মেলামেশা করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন এবং নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিলেন। দুজন প্রাচীন তার সঙ্গে দেখা করেছিল এবং কথার মাঝখানে কোনো বাধা না দিয়েই সহানুভূতির সঙ্গে তার বক্তব্য শুনেছিল। তারা তাকে তার ভার যিহোবার ওপর ফেলে দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছিল এবং এই বিষয়টার ওপর জোর দিয়েছিল যে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, ঈশ্বরকে খুশি করা। তিনি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন এবং শীঘ্র ধাবনক্ষেত্রে ফিরে এসেছিলেন, মণ্ডলীতে আবারও সক্রিয় হয়েছিলেন।

১৭ সমস্ত খ্রিস্টানের মণ্ডলীর নিযুক্ত মস্তক যিশু খ্রিস্টের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে হবে, অসিদ্ধ মানুষের ওপর নয়। যিশু, যার চক্ষু “অগ্নিশিখার তুল্য,” তিনি সমস্তকিছু সঠিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন আর তাই আমাদের থেকে আরও বেশি দেখতে পারেন। (প্রকা. ১:১৩-১৬) উদাহরণস্বরূপ, তিনি বুঝতে পারেন, যে-বিষয়টা আমাদের কাছে অবিচার বলে মনে হয়েছে, সেটা হয়তো আমাদের ভুল পর্যবেক্ষণ অথবা ভুল বোঝাবুঝির কারণে হয়েছে। যিশু নিখুঁতভাবে এবং সঠিক সময়ে মণ্ডলীর চাহিদাগুলোর যত্ন নেবেন। তাই, কোনো সহখ্রিস্টানের কাজ অথবা সিদ্ধান্তকে আমাদের হোঁচট খাওয়ার কারণ হতে দেওয়া উচিত নয়।

১৮. কীভাবে আমরা পরীক্ষাগুলোকে অথবা কষ্টকর পরিস্থিতিগুলোকে প্রতিরোধ করতে পারি?

১৮ আরও যে-দুটো কারণে আমরা হোঁচট খেতে পারি, তা হল ক্লেশ বা তাড়না এবং মণ্ডলীর অন্যদের অসিদ্ধতা। বীজবাপকের নীতিগল্পে, যিশু বলেছিলেন যে, সেই বাক্য হেতু ‘ক্লেশ কিম্বা তাড়নার’ কারণে কেউ কেউ হোঁচট খাবে। তাড়নার উৎস—পরিবার, প্রতিবেশী অথবা সরকারি কর্তৃপক্ষ—যা-ই হোক না কেন, এটা বিশেষভাবে সেই ব্যক্তিকে প্রভাবিত করতে পারে, ‘যাহার অন্তরে মূল নাই,’ যার গভীর আধ্যাত্মিকতার অভাব রয়েছে। (মথি ১৩:২০) কিন্তু, আমরা যদি এক ন্যায়নিষ্ঠ অন্তঃকরণ বজায় রাখি, তাহলে রাজ্যের বীজ আমাদেরকে বিশ্বাসে দৃঢ়মূল হতে সাহায্য করবে। পরীক্ষার দ্বারা জর্জরিত হলে, কীর্তিযুক্ত বা প্রশংসনীয় বিষয়গুলো নিয়ে প্রার্থনাপূর্বক ধ্যান করার প্রচেষ্টা করুন। (পড়ুন, ফিলিপীয় ৪:৬-৯.) যিহোবার শক্তিতে আমরা পরীক্ষাগুলো প্রতিরোধ করতে পারব, কষ্টকর পরিস্থিতিগুলোকে হোঁচট খাওয়ার কারণ হতে দেব না।

১৯. কীভাবে আমরা এমন অসন্তোষ মনোভাবকে প্রতিরোধ করতে পারি, যা আমাদের হোঁচট খাওয়ার কারণ হতে পারে?

১৯ দুঃখের বিষয় হল, বছরের পর বছর ধরে কেউ কেউ অন্যদের অসিদ্ধতার কারণে ধাবনক্ষেত্র থেকে সরে পড়েছে। বিবেকের সঙ্গে জড়িত বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তারা হোঁচট খেয়েছে। (১ করি. ৮:১২, ১৩) কেউ যদি আমাদের অসন্তুষ্ট করে, তাহলে আমরা কি সেটাকে একটা বড়ো বিষয় হয়ে উঠতে দেব? বাইবেল খ্রিস্টানদের উপদেশ দেয়, যেন তারা বিচার না করে, অন্যদের ক্ষমা করে এবং ব্যক্তিগত অধিকারের ব্যাপারে নাছোড়বান্দা হওয়া এড়িয়ে চলে। (লূক ৬:৩৭) আপনার সামনে যখন হোঁচট খাওয়ার মতো কোনো সম্ভাব্য বিষয় আসে, তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমি কি নিজের ব্যক্তিগত পছন্দগুলোর ওপর ভিত্তি করে অন্যদের বিচার করছি? আমাদের ভাইয়েরা যে অসিদ্ধ, তা জানার পরও আমি কি কারো অসিদ্ধতাকে জীবনের ধাবনক্ষেত্র থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিই?’ যিহোবার প্রতি ভালোবাসা আমাদেরকে এই বিষয়ে সংকল্পবদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে যে, অন্য কোনো মানুষের কৃত কোনো কর্মকেই আমরা আমাদের শেষ সীমানা অতিক্রম করার ক্ষেত্রে বাধা হতে দেব না।

ধৈর্যপূর্বক দৌড়ান —হোঁচট খাওয়া এড়িয়ে চলুন

২০, ২১. জীবনের ধাবনক্ষেত্রে আপনি কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?

২০ আপনি কি ‘নিরূপিত পথের শেষ পর্য্যন্ত দৌড়াইবার’ জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ? (২ তীম. ৪:৭, ৮) তাহলে, ব্যক্তিগত অধ্যয়ন আবশ্যক। গবেষণা ও ধ্যান করার এবং হোঁচট খাওয়ার সম্ভাব্য কারণগুলো শনাক্ত করার জন্য বাইবেল এবং ঈশতান্ত্রিক প্রকাশনাগুলো ব্যবহার করুন। পবিত্র আত্মার জন্য অনুরোধ করুন, যেন তা আপনাকে প্রয়োজনীয় আধ্যাত্মিক শক্তি প্রদান করে। মনে রাখবেন, জীবনের ধাবনক্ষেত্রে কোনো দৌড়বিদকে কেবল হোঁচট খাওয়ার অথবা মাঝে মাঝে পড়ে যাওয়ার কারণে যে ব্যর্থ হতেই হবে এমন নয়। তিনি উঠে দাঁড়াতে এবং ধাবনক্ষেত্রে ফিরে আসতে পারেন। তিনি হয়তো এমনকী হোঁচট খাওয়ার সম্ভাব্য বিষয়গুলোকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ধাপ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন এবং তার বিশ্বাসের কারণে আসা যেকোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে মূল্যবান শিক্ষা লাভ করতে পারেন।

২১ অনন্তজীবনের ধাবনক্ষেত্রে অংশ নেওয়ার বিষয়টাকে বাইবেল নিষ্ক্রিয় নয় বরং সক্রিয় বিষয় হিসেবে বর্ণনা করেছে। এটা এমন একটা বাসে ওঠার মতো কোনো বিষয় নয়, যেটা যাত্রীদের জয়ের দিকে নিয়ে যায়। জীবনের ধাবনক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের দৌড়াতে হবে। আমরা যখন তা করি, তখন যিহোবার কাছ থেকে আসা “পরম শান্তি” আমাদের পিছন থেকে আসা বাতাসের মতো হয়ে উঠবে। (গীত. ১১৯:১৬৫) আমরা বর্তমানে তাঁর ক্রমাগত আশীর্বাদ সম্বন্ধে ও সেইসঙ্গে যারা ধাবনক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত দৌড়াবে, তাদের সকলের জন্য ভবিষ্যতে যে অশেষ আশীর্বাদ অপেক্ষা করছে, সেই সম্বন্ধে নিশ্চিত থাকতে পারি।—যাকোব ১:১২.

[৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

[৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি যদি পড়ে যান, তাহলে সাহায্য গ্রহণ করুন এবং উঠে দাঁড়ান!

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

এমন কোনো কিছুকেই সুযোগ দেবেন না, যা ধাবনক্ষেত্রে দৌড় সমাপ্ত করার ক্ষেত্রে আপনাকে বাধা দিতে পারে!

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার