ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w24 জুন পৃষ্ঠা ১৪-১৮
  • যিহোবা সারা জীবন ধরে আমার প্রার্থনা শুনেছেন

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • যিহোবা সারা জীবন ধরে আমার প্রার্থনা শুনেছেন
  • প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০২৪
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • একটা সাক্ষাৎ আমাদের জীবন বদলে দিয়েছিল
  • দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে
  • যিহোবার আরও নিকটবর্তী হই
  • পূর্ণসময়ের সেবা
  • আইনি অধিকারের জন্য লড়াই
  • কিউবাতে রাজ্যের কাজ বৃদ্ধি পেতে থাকে
  • রুয়ান্ডার ভাই-বোনদের সাহায্য করা
  • আমি স্থির করি যে, আমি যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকব
  • “তোমার প্রেমপূর্ণ-দয়া জীবনের থেকেও উত্তম”
    ১৯৯৮ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • সঠিক বাছাইগুলো চিরস্থায়ী আশীর্বাদগুলোর দিকে চালিত করে
    ২০০৭ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • আমি যিহোবা সম্বন্ধে শিখতে ও শেখাতে পেরে খুবই আনন্দিত হয়েছি
    প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০২২
  • রুয়ান্ডার দুঃখদায়ক ঘটনায় নিপীড়িতদের যত্ন নেওয়া
    ১৯৯৫ সচেতন থাক!
আরও দেখুন
প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০২৪
w24 জুন পৃষ্ঠা ১৪-১৮
বেলজিয়াম শাখা অফিসে ভাই মারসেল জিলেট।

জীবনকাহিনি

যিহোবা সারা জীবন ধরে আমার প্রার্থনা শুনেছেন

বলেছেন মারসেল জিলেট

এটা সেই সময়কার কথা যখন আমার বয়স মাত্র ১০ বছর ছিল। একদিন রাতে আমি খুবই চিন্তিত ছিলাম। রাতের বেলায় আমি খোলা আকাশে তারাগুলো দেখি এবং হাঁটু গেড়ে প্রথম বার যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি। আমি মন খুলে তাঁকে সমস্ত কিছু বলি আর তখন থেকে আমি ঈশ্বর যিহোবার সঙ্গে আমার সম্পর্ক আরও মজবুত করতে শুরু করি, যিনি ‘প্রার্থনা শুনে থাকেন।’ (গীত. ৬৫:২) কিন্তু, আমি তো সবেমাত্র যিহোবাকে জানতে শুরু করেছি। তা হলে, কেন আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম? আসুন, আমি আপনাদের আমার জীবনের ইতিহাস বলি।

একটা সাক্ষাৎ আমাদের জীবন বদলে দিয়েছিল

আমি ১৯২৯ সালের ২২ ডিসেম্বর বেলজিয়ামে বাস্টন শহরের কাছে নোবেল নামে একটা ছোটো গ্রামে জন্ম নিই। এই গ্রামটা আর্ডেন নামে একটা ঘন জঙ্গলের পাশে ছিল। আমাদের গ্রামটা এতটাই ছোটো ছিল যে, এখানে মাত্র ৯টা ক্ষেত ছিল। আমার ছোটোবেলাটা দারুণ কেটেছিল। আমি আর আমার ভাই রিমোন্ড প্রতিদিন গরুর দুধ দুইতাম আর আমার বাবা-মা খেতে যখন শস্য কাটত, তখন আমরা তাদের সাহায্য করতাম। আমাদের গ্রামে লোকদের মধ্যে একতা ছিল আর সবাই একে অন্যকে সাহায্য করত।

পরিবারের সঙ্গে চাষ করার সময়

আমার বাবা এমিল এবং মা এলিস ক্যাথলিক ছিল এবং তারা সেই ধর্মকে খুবই ভালোবাসত। তারা প্রত্যেক রবিবার চার্চে যেত। প্রায় ১৯৩৯ সালে ইংল্যান্ড থেকে কিছু অগ্রগামী আমাদের গ্রামে আসে। তারা আমার বাবাকে কনসোলেশন পত্রিকা দেখায়, যেটা বর্তমানে সজাগ হোন নামে পরিচিত এবং এটার সাবস্‌ক্রিপশন নিতে বলে, যাতে প্রতি মাসে বাবা এই পত্রিকা পেতে পারেন। আমার বাবা সেই পত্রিকা পড়ার সঙ্গেসঙ্গে বুঝে যান যে, তাতে লেখা কথাগুলো সত্য আর তাই তিনি বাইবেল পড়া শুরু করে দেন। যখন থেকে আমার বাবা চার্চে যাওয়া বন্ধ করে দেন, তখন থেকেই যে-প্রতিবেশীরা আমার বাবার ভালো বন্ধু ছিল, তারাই তার বিরোধিতা করতে থাকে। তারা আমার বাবাকে অনেক চাপ দেয়, যাতে তিনি ক্যাথলিক ধর্ম না ছাড়েন আর এই বিষয়টা নিয়ে তাদের মধ্যে প্রচণ্ড তর্কবিতর্ক হয়।

আমার বাবার কষ্ট আমি আর দেখতে পারছিলাম না, তাই সাহায্যের জন্য আমি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি, যেটার বিষয়ে আমি শুরুতে বলেছিলাম। তারপর আমাদের প্রতিবেশীরা আমাদের উপর চাপা আনা ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেয়। তখন আমি অনেক খুশি হই আর তখন আমি নিশ্চিত হয়ে যাই যে, যিহোবা ঈশ্বর ‘প্রার্থনা শুনে থাকেন।’

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে

১৯৪০ সালের ১০ মে নাতসি জার্মানির সেনাবাহিনী বেলজিয়ামের উপর আক্রমণ করে এবং এই কারণেই অনেক লোককে তাদের নিজের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয় আর আমরাও ফ্রান্সের দক্ষিণ দিকে পালিয়ে যাই। আর আমরা সেখানে যে-রাস্তা ধরে যাচ্ছিলাম, সেই রাস্তার উপর জার্মানি ও ফ্রান্সের সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছিল।

পরে যখন আমরা ঘরে ফিরে আসি, তখন দেখি আমাদের সমস্ত কিছু লুট হয়ে গিয়েছে। শুধুমাত্র আমাদের কুকুর ববি রয়ে গিয়েছে। তখন থেকে আমি চিন্তা করতে থাকি, ‘যুদ্ধ কেন হয়? কেন এত দুঃখকষ্ট রয়েছে?’

কিশোরবয়সি মারসেল।

কিশোর বয়সে যিহোবার সঙ্গে এক দৃঢ়সম্পর্ক গড়ে তুলি

এই সময়ে ইমিল স্ক্র্যান্টস্‌a নামে একজন বিশ্বস্ত অগ্রগামী ও প্রাচীন আমাদের অনেক উৎসাহিত করেছিলেন। তিনি বাইবেল থেকে আমাকে বুঝিয়েছিলেন যে, কেন বর্তমানে পৃথিবীতে এত দুঃখকষ্ট রয়েছে এবং তিনি আমার অন্যান্য কিছু প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছিলেন। এখান থেকে আমি বুঝতে পারি, যিহোবা ঈশ্বর একজন প্রেমময় ঈশ্বর আর তখন থেকেই তাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্ক আরও মজবুত হতে শুরু করে।

যদিও যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি, কিন্তু তারপরও আমরা অন্যান্য ভাই-বোনের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাচ্ছিলাম। ১৯৪৩ সালের আগস্ট মাসে হোসে নিকোলাস মিনে নামে একজন ভাই আমাদের গ্রামে আসেন এবং একটা বক্তৃতা দেন। সেই ভাই জিজ্ঞেস করেন, “কারা কারা বাপ্তিস্ম নিতে চায়?” তখন আমি এবং আমার বাবা হাত তুলি। আর এরপরই আমাদের জমির পাশে একটা ছোটো নদীতে আমাদের বাপ্তিস্ম হয়।

১৯৪৪ সালে ডিসেম্বর মাসে জার্মানির সেনারা পশ্চিম ইউরোপে তাদের শত্রুদের উপর শেষ বারের মতো একটা বড়ো আঘাত আনে আর এই যুদ্ধকে ‘বাল্জের যুদ্ধ’ বলা হয়। এই যুদ্ধটা আমাদের ঘরের একেবারে কাছেই হচ্ছিল, তাই প্রায় এক মাস ধরে আমরা ঘরের বেসমেন্টে লুকিয়ে ছিলাম। একদিন আমি আমার পশুদের খাবার খাওয়ানোর জন্য বাইরে বের হয়েছিলাম আর ঠিক সেইসময় বোমা পড়তে শুরু করে। এর ফলে, আমাদের গোলা ঘরের ছাদ উড়ে যায়। আস্তাবলের কাছে একজন আমেরিকান সৈন্য ছিলেন, যিনি চিৎকার করে আমাকে বলেন, “শুয়ে পড়ো!” আমি দৌড়ে তার কাছে যাই এবং নীচে শুয়ে পড়ি আর তিনি আমাকে বাঁচানোর জন্য তার হেলমেট আমাকে পরিয়ে দেন।

যিহোবার আরও নিকটবর্তী হই

আমাদের বিয়ের দিনে

যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর আমরা লিয়েট শহরের একটা মণ্ডলীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। এই শহরটা আমাদের এখান থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে উত্তরে ছিল। কিছু সময় পর বাস্টনে একটা ছোটো স্টাডি গ্রুপ খোলা হয়। এই সময়ের মধ্যে আমি ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টে কাজ করতে শুরু করি। আর আমি আইন নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পাই। পরে আমি একটা সরকারি চাকরি পাই। ১৯৫১ সালে বাস্টনে একটা ছোটো সীমা সম্মেলন রাখা হয় আর সেই সম্মেলনে প্রায় ১০০ জন উপস্থিত ছিল। সেই সম্মেলনে এলি রয়টার নামে একজন উদ্যোগী অগ্রগামীর সঙ্গে আমার দেখা হয়। সে সম্মেলনের জন্য প্রায় ৫০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে এখানে এসেছিল। আমরা দু-জন দু-জনকে পছন্দ করতে শুরু করি আর আমাদের এনগেজমেন্ট হয়ে যায়। এলি গিলিয়েড স্কুলে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ পায়। কিন্তু, সে বিশ্বপ্রধান কার্যালয়ে একটা চিঠি লিখে জানায় যে, কেন সে এই স্কুলে যেতে পারবে না। সেই সময়ে ভাই নর যিহোবার লোকদের নেতৃত্ব নিচ্ছিলেন। তিনি সেই চিঠির উত্তর দেন এবং প্রেমের সঙ্গে বলেন, ‘একদিন তুমি হয়তো তোমার স্বামীর সঙ্গে এই স্কুলে যোগ দেবে।’ ১৯৫৩ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা বিয়ে করি।

এলি এবং আমাদের ছেলে সারগে

সেই বছরই আমি এবং এলি ‘নতুন জগৎ সমাজ’ সম্মেলনে যোগ দিই, যেটা নিউইয়র্কের ইয়াংকি স্টেডিয়ামে রাখা হয়েছিল। সেখানে আমার একজন ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়। তিনি আমাকে বলেন, আমি যদি আমেরিকায় গিয়ে সেবা করি, তা হলে তিনি আমাকে একটা ভালো চাকরি দেবেন। এই বিষয়ে আমি ও এলি অনেক প্রার্থনা করি। তারপর আমরা ঠিক করি, আমি এই চাকরিটা করব না এবং আমরা বেলজিয়ামে ফিরে গিয়ে বাস্টনের ছোটো দলকে সাহায্য করব, যেখানে মাত্র ১০ জন প্রকাশক রয়েছে। পরের বছর আমাদের একটা ছেলে হয়। কিন্তু খুবই দুঃখের বিষয় যে, মাত্র সাত মাস পর সে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং মারা যায়। আমরা আমাদের দুঃখের কথা যিহোবাকে খুলে বলি। আমরা পুনরুত্থানের আশা নিয়েও চিন্তা করি, এর ফলে আমরা অনেক শক্তি পাই এবং এই শোক কাটিয়ে উঠি।

পূর্ণসময়ের সেবা

১৯৬১ সালের অক্টোবর মাসে আমি এমন একটা পার্ট টাইম চাকরি পাই, যেটার কারণে আমি অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতে পারি। যে-দিন আমি চাকরি পাই, সেই একই দিনে বেলজিয়ামের শাখা দাস আমাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কি সীমা দাস হিসেবে কাজ করতে পারবেন?’ (সীমা দাসকে বর্তমানে সীমা অধ্যক্ষ বলা হয়।) আমি তাকে বলি, আমরা কিছুদিন অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতে চাই, তারপর আমরা সেই কাজ করব। তিনি আমাদের কথা মেনে নেন এবং বলেন, ঠিক আছে। এরপর আমরা প্রায় আট মাস ধরে অগ্রগামী হিসেবে সেবা করি এবং তারপর ১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে সীমার কাজ শুরু করি।

দু-বছর ধরে সীমার কাজ করার পর আমাদের বেথেলে ডাকা হয়, যেটা বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রুসেলস্‌ শহরে ছিল। ১৯৬৪ সালের অক্টোবর মাসে আমরা সেখানে সেবা করতে শুরু করি এবং আমরা প্রচুর আশীর্বাদ পাই। ১৯৬৫ সালে ভাই নর বেথেল পরিদর্শন করতে আসেন। আর তিনি আমাকে শাখা দাস হিসেবে নিযুক্ত করেন। এটা শুনে আমি অবাক হয়ে যাই। পরে আমাকে এবং এলিকে গিলিয়েডের ৪১তম ক্লাসে ডাকা হয়। ১৩ বছর আগে ভাই নর যা বলেছিলেন, সেটাই সত্যি হয়েছিল। স্কুল শেষ করার পর আমরা আবারও বেলজিয়াম বেথেলে চলে আসি।

আইনি অধিকারের জন্য লড়াই

আমি আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছিলাম, তাই পরবর্তী সময়ে সেটা আমার কাজে লাগে। আমি ইউরোপ এবং অন্যান্য জায়গায় যিহোবার সাক্ষিদের উপাসনা করার অধিকার নিয়ে লড়াই করার সুযোগ পেয়েছিলাম। (ফিলি. ১:৭) আমি এমন ৫৫টারও বেশি দেশের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলাম, যেখানে আমাদের কাজের উপর বিধি-নিষেধ রয়েছে অথবা পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু, যখন আমি আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করতাম, তখন তাদের এটা বলতাম না যে, আমি আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছি। আমি তাদের বলতাম, “আমি ঈশ্বরের দাস।” আমি প্রতিটা ক্ষেত্রে সাহায্যের জন্য যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতাম। আমি জানতাম “সদাপ্রভুর হস্তে রাজার [বা বিচারকের] চিত্ত জলপ্রণালীর ন্যায়; তিনি যে দিকে ইচ্ছা, সেই দিকে তাহা ফিরান।”—হিতো. ২১:১.

আমি অনেক বার দেখেছি, যিহোবা কীভাবে আধিকারিকদের মন পরিবর্তন করেছেন। আমার এখনও মনে আছে, একবার কী হয়েছিল। আমি ইউরোপের একজন সংসদের সঙ্গে দেখা করার জন্য অনেক বার প্রচেষ্টা করি আর অবশেষে তিনি আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য রাজি হয়ে যান। তিনি আমাকে বলেন, ‘তোমার কাছে শুধু পাঁচ মিনিট আছে, যা বলার তাড়াতাড়ি বলো।’ আমি মাথা নীচু করে প্রার্থনা করতে শুরু করি, এটা দেখে তিনি একটু ঘাবড়ে যান আর বলেন, ‘এটা তুমি কী করছ?’ আমি বলি,“আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি, কারণ আপনি তাঁর সেবক।” তিনি জিজ্ঞেস করেন, “এর মানে কী?” আমি তাকে রোমীয় ১৩:৪ পদ দেখাই। তিনি প্রোটেস্টান্ট ছিলেন এবং বাইবেলকে তিনি অনেক সম্মান করতেন। আর আমাদের মধ্যে প্রায় ৩০ মিনিট ধরে ভালো আলোচনা হয়। তিনি এও বলেন যে, তিনি যিহোবার সাক্ষিদের কাজকে অনেক সম্মান করেন।

বছরের পর বছর ধরে যিহোবার লোকেরা ইউরোপে আইনি লড়াই লড়ে আসছে। যেমন, সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া নিয়ে, খ্রিস্টীয় নিরপেক্ষতা নিয়ে, বাচ্চাদের হেফাজতে রাখা নিয়ে, ট্যাক্স ভরার বিষয়ে এবং এইরকম অন্যান্য বিষয় নিয়ে। এই মামলাগুলোতে সাহায্য করা আমার জন্য এক বিশেষ সুযোগ ছিল। আমি নিজের চোখে দেখতে পেয়েছি, কীভাবে যিহোবা আমাদের জয়ী করেছেন। যিহোবার সাক্ষিরা এখনও পর্যন্ত ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত-এ ১৪০টারও বেশি মামলাতে জয়ী হয়েছে।

কিউবাতে রাজ্যের কাজ বৃদ্ধি পেতে থাকে

পরে আমি বিশ্বপ্রধান কার্যালয়ের ভাই ফিলিপ ব্রামলি এবং ইতালির একজন ভাই ভ্যালটর ফারনেটির সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাই। কিউবাতে আমাদের কাজের উপর বিধি-নিষেধ ছিল, তাই আমরা তিন জন সেখানকার ভাই-বোনদের সাহায্য করার চেষ্টা করি। যাতে সেখানকার ভাই-বোনেরা খোলাখুলিভাবে যিহোবার উপাসনা করতে পারে। আমি বেলজিয়ামের দূতাবাসে (এমব্যাসি) চিঠি লিখি আর সেখানকার একজন আধিকারিকের সঙ্গেও অনেক বার দেখা করি, কিন্তু কোনো লাভ হয় না। যে-ভুল বোঝাবুঝির কারণে সরকার আমাদের কাজের উপর বিধি-নিষেধ জারি করেছিল, সেটা দূর হয়নি।

১৯৯০ সালে ফিলিপ ব্রামলি এবং ভ্যালটর ফারনেটি কিউবাতে একটা পরিদর্শনে আসেন

তারপর আমরা যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি আর সাহায্য চাই। আমরা কিউবা সরকারের কাছে আবেদন করি, আমরা কি সাক্ষিদের কাছে ৫,০০০টা বাইবেল পাঠাতে পারি? আর আমাদের সেটারও অনুমতি দেওয়া হয়। যখন বাইবেল ভাই-বোনদের কাছে পৌঁছে যায়, তখন আমরা বুঝে যাই যিহোবা আমাদের প্রচেষ্টায় আশীর্বাদ করছেন। আবার আমরা ২৭,৫০০টা বাইবেল পাঠানোর জন্য অনুরোধ করি আর সেটারও অনুমতি পেয়ে যাই। কিউবার প্রত্যেক ভাই বোনের কাছে বাইবেল পৌঁছে দিয়ে আমি অনেক আনন্দ পেয়েছি।

কিউবাতে আমাদের কাজের উপর যে-বিধি-নিষেধ ছিল, তা দূর করার জন্য আমি অনেক বার সেখানে যাই। সেই সময়ের মধ্যে আমার অনেক আধিকারিকের সঙ্গে দেখা হয় এবং আমাদের মধ্যে এক ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

রুয়ান্ডার ভাই-বোনদের সাহায্য করা

১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডাতে টুটসি জাতিকে ধ্বংস করার জন্য যে-হত্যাকাণ্ড হয়েছিল, তাতে প্রায় ১০ লক্ষেরও বেশি লোক মারা গিয়েছিল। দুঃখের বিষয় হল, আমাদের কিছু ভাই-বোনও মারা যায়। আর ঠিক সেই সময়ে একদল ভাইকে বলা হয়, তারা যেন রুয়ান্ডার ভাই-বোনদের জন্য ত্রাণসামগ্রী পাঠায়।

যখন আমাদের দল রাজধানী কিগালী শহরে পৌছোয়, তখন আমরা দেখতে পাই, সেখানকার অনুবাদ অফিসের এবং প্রকাশনার রাখার গুদামের দেওয়ালে অনেক গুলির চিহ্ন ছিল। আমরা শুনি, সেখানে আমাদের ভাই-বোনদের কত ভয়ানকভাবে বড়ো বড়ো চাকু দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু আমরা এটাও শুনি যে, সেখানকার ভাই-বোনেরা কীভাবে একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়েছিল। যেমন, একজন টুটসি জাতির ভাইয়ের সঙ্গে আমার দেখা হয়, যাকে হুটু জাতির পরিবার প্রায় ২৮ দিন ধরে একটা গর্তে লুকিয়ে রেখেছিল। কিগালীতে একটা সভার আয়োজন করা হয়েছিল, যেখানে প্রায় ৯০০ জনেরও বেশি ভাই-বোন উপস্থিত ছিল আর আমরা তাদের বাইবেল থেকে উৎসাহিত করেছিলাম।

কোলাজ: ১. একটা বই ছিড়ে গিয়েছে। ২. মারসেল এবং দু-জন ভাই ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানোর সময়।

বাঁ-দিক: আমাদের অনুবাদ অফিসে একটা বই, যেটা গুলি লেগে ফুটো হয়ে গিয়েছে

ডান দিক: ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানোর সময়

এরপর আমরা রুয়ান্ডার ভাই-বোনদের খোঁজার জন্য বর্ডার পার করে জাইর দেশে যাই। যেটা বর্তমানে (কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র নামে পরিচিত)। অনেক ভাই-বোন গোমা শহরের পাশে থাকা শরণার্থী শিবিরে পালিয়ে গিয়েছিল। আমরা তাদের খুঁজে না পেয়ে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি এবং সাহায্য চাই। আর জানেন, তারপর কী হয়েছিল? একজন লোককে আমরা আমাদের দিকে আসতে দেখি। আমরা তাকে জিজ্ঞেস করি, “আপনি কি কোনো যিহোবার সাক্ষিকে চেনেন?” সে আমাদের বলে, “আমিই একজন যিহোবার সাক্ষি। চলুন, আমি আপনাকে ত্রাণ কমিটির কাছে নিয়ে যাই।” প্রথমে আমরা ত্রাণ কমিটি এবং তারপর প্রায় ১৬০০ শরণার্থী ভাই-বোনদের সঙ্গে দেখা করি এবং তাদের উৎসাহিত করি। আমরা তাদের পরিচালকগোষ্ঠীর কাছ থেকে পাওয়া একটা চিঠি পড়ে শোনাই, যেখানে লেখা ছিল: “আমরা সবসময় আপনাদের জন্য প্রার্থনা করছি। আমরা নিশ্চিত যিহোবা আপনাদের কখনো একা ছেড়ে দেবেন না।” পরিচালকগোষ্ঠীর এই কথা সেই ভাই-বোনদের মন ছুয়ে গিয়েছিল আর পরিচালকগোষ্ঠীর এই কথাগুলো একেবারে সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছিল। যিহোবা রুয়ান্ডার ভাই-বোনদের একা ছেড়ে দেননি। বর্তমানে, রুয়ান্ডাতে ৩০,০০০রেরও বেশি সাক্ষি আনন্দের সঙ্গে যিহোবার সেবা করছে।

আমি স্থির করি যে, আমি যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকব

আমার প্রিয় স্ত্রী এলি ২০১১ সালে মারা যায়। আমরা প্রায় ৫৮ বছর ধরে একসঙ্গে ছিলাম। এই দুঃখের সময় আমি মন খুলে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি আর তাঁর কাছ থেকে অনেক সান্ত্বনা পাই। প্রচার কাজে করে চলার মাধ্যমেও আমি অনেক শক্তি পাই।

যদিও আমার বয়স ৯০ বছরেরও বেশি, তারপরও আমি প্রতি সপ্তাহে প্রচারে যাই। আমি এখানকার বেলজিয়াম বেথেলের আইনি বিভাগকে সাহায্য করি এবং নিজের অভিজ্ঞতা বলার মাধ্যমে অন্যদের উৎসাহিত করি। এ ছাড়া, আমি বেথেলের যুবকবয়সি ভাই-বোনদের সঙ্গে পালকীয় সাক্ষাৎ করি। আমি যিহোবার জন্য এই সমস্ত কিছু করতে পেরে খুবই খুশি।

আজ থেকে প্রায় ৮৪ বছর আগে আমি প্রথম বার যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলাম। আর এখন আমি যিহোবার আরও নিকটবর্তী হয়েছি। আমি অনেক কৃতজ্ঞ যে, যিহোবা সারা জীবন ধরে আমার প্রার্থনা শুনেছেন।—গীত. ৬৬:১৯.b

a ভাই স্ক্র্যান্টসের জীবনকাহিনি পড়ার জন্য ১৯৭৩ সালের প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ১৫ সেপ্টেম্বর ৫৭০-৫৭৪ পৃষ্ঠা দেখুন।

b এই প্রবন্ধটা প্রস্তুত করার সময়ে ভাই মারসেল জিলেট মারা যান। তিনি ২০২৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মারা যান।

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার