ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • g৯৫ ১/৮ পৃষ্ঠা ১২-১৭
  • রুয়ান্ডার দুঃখদায়ক ঘটনায় নিপীড়িতদের যত্ন নেওয়া

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • রুয়ান্ডার দুঃখদায়ক ঘটনায় নিপীড়িতদের যত্ন নেওয়া
  • ১৯৯৫ সচেতন থাক!
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • হঠাৎ প্রতিষ্ঠিত রীতিনীতির অবসান
  • তারা একে অপরকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছিল
  • জাতিগত বিদ্বেষ থেকে দূরে থাকা
  • অবর্ণনীয় দুঃখকষ্ট
  • শীঘ্রই দুঃখকষ্টের প্রতি সাড়া দেওয়া
  • রোগের মোকাবিলা করা
  • এক কৃতজ্ঞ, আধ্যাত্মিক ব্যক্তির দল
  • ক্রমাগত যত্নের প্রয়োজন
  • চরম বিক্ষোভের মাঝে—খ্রীষ্টতত্ত্ব কার্যরত
    ১৯৯৮ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • যিহোবার প্রদত্ত সান্ত্বনার সহভাগী হওয়া
    ১৯৯৬ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • যিহোবা সারা জীবন ধরে আমার প্রার্থনা শুনেছেন
    প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০২৪
  • ‘সানন্দে সদাপ্রভুর সেবা করিবার’ জন্য “বিদেশীদের” সাহায্য করুন
    প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০১৭
১৯৯৫ সচেতন থাক!
g৯৫ ১/৮ পৃষ্ঠা ১২-১৭

রুয়ান্ডার দুঃখদায়ক ঘটনায় নিপীড়িতদের যত্ন নেওয়া

রুয়ান্ডার অবস্থান হল আফ্রিকার মধ্যবর্তী অঞ্চলে, যাকে “আফ্রিকার সুইজারল্যান্ড” বলা হয়। বিমানে করে এই দেশের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময়ে যে সবুজের সমারোহ লোকের দৃশ্যপটে আসে, তা তাদের এদন উদ্যানের কথা মনে করিয়ে দেয়। কিছুই আশ্চর্যের নয় যে রুয়ান্ডাকে তারা পরমদেশ আখ্যা দিয়েছে।

এক সময়ে এখানে একটা গাছ কাটা হলে দুটি গাছ রোপণ করা হত। বছরে এক দিন এখানে পুনরায় অরণ্যরোপণের জন্য উৎসর্গ করা হত। রাস্তার ধারে ধারে ফলবৃক্ষ লাগানো হত। দেশের সর্বত্র লোকে নির্বিবাদে ও অনায়াসে ভ্রমণ করতে পারতো। প্রধান সড়কগুলি যেগুলি রাজধানী কিগালার বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে ছিল সংযুক্ত, সেগুলি ছিল পিচঢালা রাস্তা। রাজধানীটি দ্রুত উন্নতিসাধন করছিল। সাধারণ শ্রমিকেরা মাসের শেষে ব্যয় সংকুলানের জন্য যথেষ্টই উপার্জন করতো।

যিহোবার সাক্ষীদের খ্রীষ্টীয় কাজকর্মও রুয়ান্ডাতে ভালই বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এবছরের গোড়ার দিকে প্রায় ২,৬০০ জনেরও অধিক সাক্ষী এই ক্যাথলিক অধযুষিত প্রায় ৮০ লক্ষ জনসংখ্যাবিশিষ্ট এই দেশটিতে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচারে ব্যস্ত ছিল। (মথি ২৪:১৪) মার্চ মাস নাগাদ সাক্ষীরা ১০,০০০ এর বেশি গৃহে বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করছিল এবং কিগালির এলাকার চারিপাশে প্রায় ১৫টিরও বেশি মণ্ডলী ছিল।

যিহোবার সাক্ষীদের একজন ভ্রমণকারী অধ্যক্ষ জানায়: “১৯৯২ সালের নভেম্বর মাসে আমি ১৮টি মণ্ডলীতে কাজ করছিলাম। কিন্তু ১৯৯৪ সালের মার্চে তার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ২৭টিতে। প্রতি বছর অগ্রগামীর (পূর্ণ-সময়ের পরিচারক) সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছিল।” ১৯৯৪ সালের ২৬শে মার্চ, শনিবার, খ্রীষ্টের মৃত্যুর স্মরণার্থক সভাতে উপস্থিতির সংখ্যা ছিল ৯,৮৩৪ জন।

তারপর, রাতারাতি নাটকীয়ভাবে রুয়ান্ডার পরিস্থিতি বদলে গেল।a

হঠাৎ প্রতিষ্ঠিত রীতিনীতির অবসান

৬ই এপ্রিল, ১৯৯৪ রাত প্রায় ৮ টা নাগাদ, রুয়ান্ডা ও বুরুন্ডীর রাষ্ট্রপতি যারা উভয়েই ছিলেন হুটু, কিগা­লিতে বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। সে রাত্রে পুলিসের বাঁশি রাজধানীর প্রায় সর্বত্রই শোনা গিয়েছিল ও রাস্তাগুলি আটকে রাখা হয়েছিল। তারপর খুব ভোরের দিকে, সৈন্যরা এবং ভোজালি সমেত লোকেরা টুটসিদের হত্যা করে, টাবনাল উজান​—⁠যিহোবার সাক্ষীদের কিগালির শহর অধ্যক্ষ​—⁠তার স্ত্রী, তার পুত্র এবং তার কন্যা হতাহতদের মধ্যে প্রথম ছিল।

যিহোবার সাক্ষীদের একটি ইউরোপীয় পরিবার বেশ কিছু প্রতিবেশী, যারা ছিল টুটসি সম্প্রদায়ের, তাদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেছিল। এই প্রতিবেশীদের মধ্যে নয় জন সেই ইউরোপীয়দের গৃহে আশ্রয় নিয়েছিল, যখন উন্মত্ত হত্যাকারীরা বাড়ি বাড়িতে গিয়ে খোঁজ করছিল। কয়েক মিনিটের মধ্যে ৪০ জনের মত লুণ্ঠনকারী এই গৃহে ঢুকে পড়ে এবং আসবাবপত্র ও অন্যান্য জিনিসপত্র ছড়িয়ে এলোমেলো করে ফেলে। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় যে সেই টুটসি প্রতিবেশীদের হত্যা করা হয়। যাইহোক, অন্যেরা তাদের বন্ধুদের বাঁচানোর চেষ্টা করা সত্ত্বেও, তারা জীবন নিয়ে পালিয়ে যেতে তাদের অনুমতি দিয়েছিল।

এই নরহত্যা বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে থাকে। অনুমান করা হয় ৫,০০,০০০ বা তারও অধিক রুয়ান্ডাবাসী নিহত হয়। হাজার হাজার মানুষ, বিশেষত টুটসি জীবন রক্ষার্থে পলায়ন করে। জাইরে যিহো­বার সাক্ষীদের শাখা দপ্তর ফ্রান্সের ভাইদের ত্রাণসামগ্রী পাঠাবার জন্য খবর পাঠায়। জাইর শাখা অফিস জানায়, “আমরা এক বাক্স পুরনো জামাকাপড় চেয়েছিলাম। কিন্তু ফ্রান্সের ভাইরা আমাদের পাঁচ বাক্স একেবারে নতুন পোশাক ও জুতো পাঠিয়েছিল।” ১১ই জুন তারিখে প্রায় ৬৫ টন কাপড় চোপড় পাঠানো হয়েছিল। কেনিয়া শাখাও শরণার্থীদের জন্য পোশাক, ঔষধ আর তার সঙ্গে তাদের স্থানীয় ভাষায় প্রহরীদুর্গ পত্রিকা পাঠিয়েছিল।

জুলাই মাসের মধ্যে টুটসি বিশিষ্ট বাহিনী যাদের রুয়ান্ডার দেশপ্রেমিক দল হিসাবে জানা যায়, যারা হুটু সরকারকে পরাজিত করেছিল। এর পর, লক্ষ লক্ষ হুটু দেশ ছেড়ে পালাতে লাগল। এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যখন ২০ লক্ষ বা তারও অধিক রুয়ান্ডাবাসী প্রতিবেশী দেশগুলিতে দ্রুতনির্মিত শিবিরগুলিতে আশ্রয় নেবার জন্য যায়।

তারা একে অপরকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছিল

কিগালির যিহোবার সাক্ষীদের অনুবাদ দপ্তরে ছয় জন কর্মীর মধ্যে দুজন ছিল টুটসি​—⁠অ্যানি বান্ডা এবং মুকাগেসাগারা ডেনিস। এই হুটু ভাইদের আত্মরক্ষা করার প্রচেষ্টা কয়েক সপ্তাহের জন্য সফল হয়েছিল। কিন্তু ১৯৯৪ সালের মে মাসের শেষের দিকে এই দুজন টুটসি ভাইও নিহত হয়।

যিহোবার সাক্ষীরা অনেক ঝুকি নিয়ে, এমনকি নিজেদের জীবন বিপন্ন করেও তাদের সহবিশ্বাসীদের রক্ষা করার চেষ্টা করেছিল যদিও তারা ভিন্ন জাতিগত পটভূমিকা থেকে এসেছিল। (যোহন ১৩:​৩৪, ৩৫; ১৫:১৩) উদাহরণস্বরূপ, শন্টাল মুকাবিলাসা হল একজন টুটসি। যখন রুয়ান্ডার দেশপ্রেমিক দলঢি স্টেডিয়ামে হুটুদের খুঁজছিলেন, তখন তিনিই হুটু বন্ধুদের হয়ে বাধা দিয়েছিলেন। যদিও বিদ্রোহীরা তার সেই প্রচেষ্টায় অসন্তুষ্ট হয়েছিল, তথাপি তাদের একজন আশ্চর্য হয়ে বলেছিল: “তোমাদের যিহোবার সাক্ষীদের মধ্যে সত্য সত্যই দৃঢ় ভ্রাতৃত্ববোধ আছে। তোমাদের ধর্মই শ্রেষ্ঠ!”

জাতিগত বিদ্বেষ থেকে দূরে থাকা

এটা বলা যায় না যে বিগত কয়েকশো বছর ধরে আফ্রিকার এই এলাকাগুলিতে যে জাতিগত বিদ্বেষ চলেছে, তা থেকে যিহোবার সাক্ষীরা সম্পূর্ণ বিমুক্ত। ফ্রান্স থেকে আগত এক সাক্ষী যে এই স্বেচ্ছাসেবীদের কাজে অংশ নিয়েছিল, জানায়: “এমনকি আমাদের খ্রীষ্টান ভাইরাও যাতে এই বিদ্বেষের দ্বারা দূষিত না হয় তার জন্য যেন তারা প্রাণপণ চেষ্টা করে, কারণ যে অবর্ণনীয় হত্যাকাণ্ড হয়েছে, এটা তারই নিদর্শন।

“আমরা সেই সব ভাইদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি, যারা সচক্ষে তাদের পরিবারকে হত হতে দেখেছে। উদাহরণস্বরূপ, এক খ্রীষ্টীয় বোন যার মাত্র দুদিন আগে বিবাহ হয়েছিল, তার স্বামী হত হয়। কিছু সাক্ষীরা তাদের ছেলেমেয়েদের ও পিতামাতার মৃত্যুকেও প্রত্যক্ষ করেছে। এক বোন যে এখন উগান্ডাতে থাকে, তার সমস্ত পরিবার ও স্বামীকে হত হতে দেখেছে। এটা শুধুমাত্র আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরে যে কী ধরনের শারীরিক ও মানসিক যাতনা প্রতিটি যিহোবার সাক্ষী পরিবারকে ভোগ করতে হয়।”

সবসুদ্ধ, এই জাতিগত দৌরাত্ম্যে প্রায় ৪০০ জন সাক্ষী নিহত হয়। তথাপি তাদের একজনও সহসাক্ষীদের হাতে হত হয়নি। টুটসি ও হুটু, যারা ছিল রোমান ক্যাথলিক এবং প্রোটেস্টান্ট গির্জার সদস্য, তারাই কিন্তু হাজার হাজার ব্যক্তিকে হত্যা করে। ঠিক এটাই প্রমাণ করে যে পৃথিবীব্যাপী যিহোবার সাক্ষীরা কোন যুদ্ধ, বিপ্লব অথবা কোন বিবাদের মধ্যে অংশ নেয় না।​—⁠যোহন ১৭:​১৪, ১৬; ১৮:৩৬; প্রকাশিত বাক্য ১২:⁠৯.

অবর্ণনীয় দুঃখকষ্ট

গত গ্রীষ্মকালে, লোকেরা পৃথিবীর সর্বত্র চলচিত্রে ও ছবিতে মানুষের অবিশ্বাস্য কষ্ট দেখেছে। লক্ষ লক্ষ রুয়ান্ডার শরণার্থীরা প্রতিবাসী দেশগুলিতে ভিড় করছে এবং খুবই অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতির মধ্যে বসবাস করছে। ফ্রান্স হতে আগত যিহোবার সাক্ষীদের একজন স্বেচ্ছাসেবী ৩০শে জুলাই তারিখে চোখে দেখা ঘটনার বর্ণনা নিম্নলিখিতভাবে দেন।

“আমরা অনেক বিভৎস দৃশ্যের মুখোমুখি হয়েছিলাম। কিলোমিটারের পর কিলোমিটার রাস্তায় সারি সারি মৃতদেহ পড়ে ছিল। আঞ্চলিক শবাধারগুলি হাজার হাজার মানুষের শবদেহে পরিপূর্ণ ছিল। গিজগিজ করা লোকেদের মধ্যে দিয়ে যাবার সময়ে যে দুর্গন্ধ আসছিল তা ছিল অসহ্য, আর বাচ্চারা সেখানে খেলা করছিল। সেখানে ছিল অনেক পিতামাতার শবদেহ যাদের শিশুরা তখনও জীবিত ছিল এবং তারা তাদের মৃত পিতামাতার পিঠ জড়িয়ে ধরেছিল। এইসব দৃশ্য যত দেখেছি, ততই মনে গভীর রেখাপাত করেছে। একজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ অসহায় অনুভূতির দ্বারা অভিভূত হতে পারে এবং যেভাবে দৌরাত্ম্য ও নির্জনতা দেখা দিয়েছিল তাতে কেউ বিচলিত না হয়ে থাকতে পারে না।”

জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে যখন হাজারে হাজারে শরণার্থী জাইরে আসতে শুরু করে, তখন জাইরের সাক্ষীরা দেশের সীমানায় বাইবেল ভিত্তিক সাহিত্যাদি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়েছিল যাতে তাদের খ্রীষ্টীয় ভাইরা ও আগ্রহী ব্যক্তিরা তাদের চিনতে পারে। তখন রুয়ান্ডা থেকে শরণার্থী সাক্ষীদের একত্রিত করে নিকটবর্তী গোমা শহরের কিংডম হলে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তাদের যত্ন নেওয়া হয়। পর্যাপ্ত ঔষুধ ও উপযুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকলেও সাক্ষীদের মধ্যে যারা এবিষয়ে অভিজ্ঞ ছিল, তারা কঠোর পরিশ্রম করে অসুস্থদের যত্ন নিয়েছিল।

শীঘ্রই দুঃখকষ্টের প্রতি সাড়া দেওয়া

২২শে জুলাই, শুক্রবার ফ্রান্সের যিহোবার সাক্ষী ভাইরা আফ্রিকার ভাইদের থেকে সাহায্যের এক আবেদন বার্তা পায়। এই বার্তায় রুয়ান্ডা থেকে পলায়নরত খ্রীষ্টীয় ভাইদের ভীষণ দুর্দশাপূর্ণ অবস্থার বর্ণনা ছিল। এই বার্তা পাওয়ার পাঁচ থেকে দশ মিনিটের মধ্যে ভাইরা একটি মালবাহী বিমানে ত্রাণ সামগ্রী বোঝাই করতে সিদ্ধান্ত নেন। অভিজ্ঞতার অভাব ও স্বল্প সময় হেতু তাদের এই বিপুল ত্রাণের কাজের জন্য সপ্তাহ শেষে অনেক প্রস্তুতি করতে হয়।

এই ত্রাণ তহবিলের প্রয়োজনের প্রতি বিপুল সাড়া পাওয়া গিয়েছিল। শুধুমাত্র বেলজিয়াম, ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ডের সাক্ষীদের থেকেই ১,৬০০,০০০ এর বেশি ডলারের ত্রাণ এসেছিল। ত্রাণের সামগ্রীর মধ্যে ছিল খাদ্য, ওষুধ এবং জীবনরক্ষার উপকরণ সকল এবং এগুলি সকলই যিহোবার সাক্ষীদের লূভিয়ে ফ্রান্স থেকে বাক্সে বেঁধে ও লেবেল লাগানো হয়েছিল। ফ্রান্সের ভাইরা দিবারাত্র পরিশ্রম করে বেলজিয়াম অসটেন্ডের জন্য তাদের মালপত্র তৈরি রেখেছিল। ২৭শে জুলাই, বুধবার বিমান বন্দরে ৩৫ টনেরও অধিক জিনিস একটি জেট বিমানে বোঝাই করা হয়। পরের দিন কিছু কম পরিমাণে, বিশেষত ওষুধপত্র পাঠানো হয়। দুদিন পর, শনিবার আর একটি বিমান আরও কিছু ওষুধপত্র নিপীড়িতদের জন্য বয়ে নিয়ে যায়।

ফ্রান্স থেকে সাক্ষীরা, এর অন্তর্ভুক্ত একজন চিকিৎসক সেই বিপুল সামগ্রীর আগে গোমা শহরে গিয়ে পৌঁছান। সোমবার, জুলাই ২৫ তারিখে যখন ডাঃ হেনরি ট্যালেট গোমাতে গিয়ে পৌঁছায়, তার আগেই কমবেশি ২০ জন কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিল, আর প্রতিনিয়তই অন্যদের কেউ না কেউ মারা যাচ্ছিল। যেহেতু এই সামগ্রী প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরে, বুরুন্ডীর বুজুম্বুরাতে হয়ে আসতে হবে, তাই  ২৯শে জুলাই, শুক্রবার সকালের আগে তা গোমাতে এসে পৌঁছায়নি।

রোগের মোকাবিলা করা

ইতিমধ্যে, যেখানে গোমাতে কিংডম হলটির অবস্থান ছিল, সেখানে প্রায় ১,৬০০ জন সাক্ষী ও তাদের বন্ধুবান্ধবেরা মিলে ভরে গিয়েছিল। এতগুলি লোকের জন্য ছিল মাত্র একটি শৌচাগার, জলের কোন ব্যবস্থা ছিল না ও খুব অল্পই খাবার ছিল। কিংডম হলে গাদাগাদি করে থাকার জন্য বেশ কিছু ব্যক্তি কলেরায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে। মৃত্যুর সংখ্যা ধাপে ধাপে বেড়েই চলতে থাকে।

কলেরা একজন ব্যক্তিকে সম্পূর্ণরূপে জলশূন্য অবস্থায় নিয়ে যায়। চোখদুটি কাঁচের মত হয়ে ওপরের দিকে উঠে যায়। যদি উপযুক্ত সময়ে পুনরায় জলযোজন চিকিৎসা প্রণালী শুরু করা যায়, তাহলে দুদিনে আরোগ্যলাভ সম্ভব। সুতরাং, অল্প যা কিছু ওষুধপত্র ছিল, তা দিয়েই সঙ্গে সঙ্গে ভাইদের শরীরে জল দেওয়ার চিকিৎসা প্রণালী শুরু করা হয়।

সেইসঙ্গে, ভাইরা প্রচেষ্টা চালায় কিভাবে পীড়িতদের আলাদা করে রাখা যায়, যাতে করে অন্যান্যদের তা সংক্রামিত করতে না পারে। তারা গোমার এই নিদারুন পরিস্থিতি থেকে শরণার্থীদের অন্যত্র স্থানান্তরিত করার চেষ্টা করে। কিভূ হ্রদের কাছে একটি সুবিধাজনক স্থান পাওয়া যায়, যা ধুলোবালি ও মৃতদেহের যে দুর্গন্ধ বাতাসকে পরিব্যাপ্ত করে রেখেছিল, তার থেকে অনেক দূরে।

মলত্যাগের জন্য স্থান খনন ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের নীতিগুলিকে কঠোরভাবে জারি করা হয়েছিল। এর অন্তর্ভুক্ত ছিল মলত্যাগের পরে ব্লিচিং পাউডার ও জলে পরিষ্কার করে হাত ধোওয়া। এই পদক্ষেপের গুরুত্বকে যখন তুলে ধরা হয়, তখন লোকেরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সকল মেনে চলে। শীঘ্রই এই পরিব্যাপ্ত মারাত্মক রোগের প্রকোপ আয়ত্তে আসে।

২৯শে জুলাই, শুক্রবার যখন ত্রাণের সামগ্রীসকল এসে পৌঁছায়, তখন গোমার কিংডম হলে ছোট একটা হাসপাতালের মত তৈরি করা হয়। প্রায় ৬০টির মত ক্যাম্প খাট ও সেই সঙ্গে বিশুদ্ধ জলের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। তাছাড়াও, কিভূ হ্রদের কূলে সাক্ষীদের কাছে তাঁবু নিয়ে যাওয়া হয়। অল্প সময়ের মধ্যে তারা সুবিন্যস্ত সারিবদ্ধভাবে ৫০টি তাঁবু স্থাপন করে ফেলেছিল।

এক সময়ে প্রায় ১৫০ জন সাক্ষী ও তাদের বন্ধুরা সাংঘাতিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। তাদের মধ্যে আগষ্টের প্রথম সপ্তাহে প্রায় ৪০ জনেরও বেশি গোমাতে মারা যায়। কিন্তু যথাসময়ে ওষুধ ও অন্যান্য সামগ্রী এসে যাওয়াতে বহু জীবন রক্ষা পায় ও দুঃখকষ্টের অবসান হয়।

এক কৃতজ্ঞ, আধ্যাত্মিক ব্যক্তির দল

যা কিছু করা হয়েছিল তার জন্য শরণার্থী সাক্ষীরা পূর্ণ কৃতজ্ঞতা দেখিয়েছিল। অন্যান্য দেশের খ্রীষ্টীয় ভাইদের প্রেম এবং আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃত্বের তারাও যে অংশ তার স্বচ্ছ প্রমাণ তাদের হৃদয় স্পর্শ করেছিল।

শত দুঃখকষ্ট সত্ত্বেও এই শরণার্থীরা তাদের আধ্যাত্মিকতা রক্ষা করেছিল। বস্তুতপক্ষে, একজন পর্যবেক্ষক লক্ষ্য করেন যে “বস্তুসামগ্রীর চাইতে আধ্যাত্মিক বিষয়ের প্রতি তাদের আগ্রহ বেশি ছিল, যদিও সমস্ত কিছুর জন্য তাদের একান্ত প্রয়োজন ছিল।” অনুরোধের ফলে আপনি পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তকাল বেঁচে থাকতে পারেন নামক বাইবেলের সহায়ক বইটি রুয়ান্ডার ভাষা কিনিয়ারুয়ান্ডাতে ৫,০০০ কপি বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরগুলিতে পাঠানো হয়।b

শরণার্থীরা প্রতিদিন একটি বাইবেলের শাস্ত্রপদ পরীক্ষা করত, ও তারা মণ্ডলীর সভার আয়োজন করেছিল। শিশুদের জন্য স্কুলেরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল। শিক্ষকেরা এই ক্লাসগুলির সুযোগ নিয়ে স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের উপর নিয়মগুলি শিখাতেন, এই জোর দিয়ে যে তা পালন করার উপরই জীবন নির্ভর করে।

ক্রমাগত যত্নের প্রয়োজন

গোমা ছাড়া অন্যান্য স্থানেও হাজার হাজার শরণার্থী সাক্ষীদের রাখা হয়েছিল, যেমন রুটশুরু শহরে। এই ভাইদের প্রতিও একই রকম যত্ন নেওয়া হয়েছিল। ৩১শে জুলাই, সাত জনের এক প্রতিনিধি দল গোমা থেকে দক্ষিণ বুকাভূতে রওনা হয় যেখানে প্রায় ৪৫০ জনের মত শরণার্থী সাক্ষী ছিল। এদের অনেকেই বুরুন্ডী থেকে এসেছিল। কলেরা সেখানে দেখা দিয়েছিল এবং যথাসাধ্য সাহায্য করা হয়েছিল যাতে কোন ভাইয়ের মৃত্যু না হয়।

পরের দিন এই প্রতিনিধি দলটি প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করে ইউভিরা শহরে যায়, রুয়ান্ডা আর বুরুন্ডী উভয় স্থান থেকে যাত্রাপথে সাতটি জায়গায় প্রায় ১৬০০ জন সাক্ষী ছিল। কিভাবে তারা নিজেদের রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে তার জন্য কিছু নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। এই প্রতিনিধিবর্গ যা খুঁজে পেয়েছিল, তার ভিত্তিতে যে রিপোর্ট তৈরি হয়েছিল, তা জানায়: “এতক্ষণ পর্যন্ত যা করা হয়েছে তা কেবল শুরু এবং ৪৭০০ জন যারা এখন আমাদের যত্নে আছে, তাদের এখনও অনেক মাস সাহায্যের প্রয়োজন।”

শত শত সাক্ষীরা আগষ্ট মাসে রুয়ান্ডাতে ফিরে আসে। সত্যি সত্যি, তাদের বাড়িঘর ও জিনিসপত্র সমস্তকিছুই লুণ্ঠিত হয়েছিল। সুতরাং তাদের সামনে ছিল কঠিন কাজগুলি যেমন বাড়িঘর ও কিংডম হলগুলি পুনরায় নির্মাণ করা।

ঈশ্বরের দাসেরা ক্রমাগত ও ঐকান্তিকভাবে প্রার্থনা করে চলে রুয়ান্ডার এইসব নিপীড়িত মানুষদের জন্য। আমরা জানি যে এই বিধি ব্যবস্থার শেষ যত এগিয়ে আসবে, দৌরাত্ম্য হয়ত ততই বাড়বে। কিন্তু, যিহোবার সাক্ষীরা পৃথিবীব্যাপী তাদের খ্রীষ্টীয় নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে ও প্রকৃত করুণা প্রকাশ করে যাবে। (g94 12/22)

[পাদটীকাগুলো]

a ডিসেম্বর ১৫, ১৯৯৪, প্রহরীদুর্গ; “রুয়ান্ডার দুঃখদায়ক ঘটনা”​—⁠এর জন্য কে দায়ী?” প্রবন্ধটি দেখুন

b দি ওয়াচটাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি অফ নিউ ইয়র্ক দ্বারা প্রকাশিত।

[১২ পৃষ্ঠার মানচিত্র]

রুয়ান্ডা

বুরুন্ডী

জাইর

উগান্ডা

কিগালি

গোমা

রুটশুরু

বুকাভূ

বজুম্বুরা

ইউভিরা

কিভু হ্রদ

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

বাঁদিকে: টাবনানা উজান ও তার পরিবারকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ডানদিকে: মুকাগিসারা ডেনিস, একজন টুটসি, হুটু ভাইদের তাকে রক্ষা করার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও যাকে হত্যা করা হয়েছিল।

[১৬, ১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

উপরে: গোমাতে কিংডম হলে পীড়িতদের যত্ন নিচ্ছে। নিচে বাঁদিকে: সাক্ষীরা যে ৩৫ টনেরও অধিক ত্রাণের জিনিসপত্র মালবাহী বিমানে পাঠাবার জন্য তৈরি করে রেখেছে। নিচে: কিভূ হ্রদের ধারে, যেখানে সাক্ষীরা স্থানান্তরিত হয়ে গিয়েছিল। নিচে ডানদিকে: রুয়ান্ডার শরণার্থীরা জাইরের কিংডম হলে

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার