যেভাবে যুদ্ধ ও দৌরাত্ম্য আমাদের সবাইকে প্রভাবিত করে
“দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সারা পৃথিবীতে যুদ্ধের ফলে দৌরাত্ম্যের হার অত্যন্ত বেড়ে গিয়েছে। চার জনের মধ্যে অন্তত পক্ষে এক জন ব্যক্তি এমন জায়গায় বসবাস করে, যেখানে যুদ্ধ হচ্ছে।”
ইউনাইটেড নেশন্স-এর ডেপুটি সেক্রেটারি-জেনারেল আমিনা জে. মহম্মদ, জানুয়ারি ২৬, ২০২৩.
পৃথিবীর যে-সমস্ত জায়গায় হয়তো কিছুটা হলেও শান্তি আছে, সেখানেও হঠাৎ করে যুদ্ধ ও দৌরাত্ম্য শুরু হয়ে যেতে পারে। এমনকী যুদ্ধের এলাকা থেকে অনেক দূরে থাকা দেশের লোকেরাও এর দ্বারা প্রভাবিত হয়। যুদ্ধ হয়তো একদিন শেষ হয়ে যায়, কিন্তু এর ক্ষতিকর প্রভাব অনেক দিন ধরে থেকে যায়। কয়েকটা উদাহরণ নিয়ে চিন্তা করে দেখুন:
খাদ্যের অভাব। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, “খাদ্য না থাকার মূল কারণ হল যুদ্ধ। যাদের কাছে কোনো খাবার নেই, তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশ লোক এমন এলাকায় থাকে, যেখানে যুদ্ধ হচ্ছে।”
শারীরিক ও মানসিক সমস্যা। যখন কেউ জানতে পারে যে, তাদের দেশে যুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তখন তারা খুবই আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। যারা যুদ্ধ কবলিত এলাকায় থাকে, তারা যে শুধু শারীরিকভাবেই কষ্ট পায় তা নয়, কিন্তু মানসিক সমস্যারও মুখোমুখি হয়। আর দুঃখের বিষয় হল, তারা কোনো চিকিৎসাগত সাহায্যও পায় না।
ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়া। ইউনাইটেড নেশন্স হাই কমিশনার ফর রেফিউজি-র একটা রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে ১১.৪ কোটিরও বেশি লোককে বাধ্য হয়ে তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে হয়েছে। এর প্রধান কারণ হল যুদ্ধ ও দৌরাত্ম্য।
অর্থনৈতিক কষ্ট। যুদ্ধের সময় প্রায়ই লোকদের অর্থনৈতিক কষ্টের মুখোমুখি হতে হয়। জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছোঁয়া হয়ে যায়। সরকারি অনুদান (আর্থিক সাহায্য), যেগুলো হয়তো স্বাস্থ্য ও শিক্ষার জন্য ব্যবহার করা হত, সেগুলো তখন যুদ্ধের জন্য ব্যবহার করা হয় আর এর ফলে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করার জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হয়।
পরিবেশ দূষণের সমস্যা। যুদ্ধের সময় যখন কোনো এলাকার জল, বাতাস ও জমিকে ইচ্ছাকৃতভাবে নষ্ট করা হয়, তখন সেখানকার মানুষ সত্যিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এইরকম দূষণের ফলে মানুষের শরীরে যে-ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে, তা অনেক দিন পর্যন্ত থেকে যায়। এমনকী সেইসময়ে যে-সমস্ত ল্যান্ডমাইন (মাটির উপর কিংবা নীচে বিষ্ফোরক) লুকিয়ে রাখা হয়, সেগুলোর কারণে যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও মানুষ বিপদে পড়ে অর্থাৎ তারা আহত হয় কিংবা মারা যায়।
তাই এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, যুদ্ধ এক দিকে যেমন ধ্বংসাত্মক, আবার অন্য দিকে ক্ষতিকারক।