ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w18 জুন পৃষ্ঠা ৮-১২
  • যিহোবা ও যিশুর মতো আমরা সবাই যেন একতাবদ্ধ হই

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • যিহোবা ও যিশুর মতো আমরা সবাই যেন একতাবদ্ধ হই
  • প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০১৮
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • যিশু ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে ভেদাভেদের মনোভাব
  • প্রেম ও নম্রতার দ্বারা ভেদাভেদের মনোভাব কাটিয়ে উঠুন
  • প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের ভেদাভেদের মনোভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছিল
  • প্রেম বৃদ্ধি পেলে ভেদাভেদের মনোভাব দূর হয়ে যায়
  • কুসংস্কারের শেষ
    ২০০৪ সচেতন থাক!
  • বৈষম্য—আপনি কি এর দ্বারা সংক্রামিত হয়েছেন?
    ২০২০ সজাগ হোন!
  • কুসংস্কারের মূল
    ২০০৪ সচেতন থাক!
  • কুসংস্কারের বৈশিষ্ট্য
    ২০০৪ সচেতন থাক!
আরও দেখুন
প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০১৮
w18 জুন পৃষ্ঠা ৮-১২
পতিবেশীসুলভ শমরীয় একজন আহত যিহুদি ভ্রমণকারীর কাছ আসছন; যিশু একটা কুয়োর পাশে একজন শমরীয় মহিলার সগ কথা বলছন; পিতর কর্ণীলিয়ের বাড়িতে ঢুকছন

যিহোবা ও যিশুর মতো আমরা সবাই যেন একতাবদ্ধ হই

“আমি . . . নিবেদন করিতেছি, . . . যেন তাহারা সকলে এক হয়; পিতঃ, যেমন তুমি আমাতে ও আমি তোমাতে, তেমনি তাহারাও যেন আমাদিগেতে থাকে।”—যোহন ১৭:২০, ২১.

গান সংখ্যা: ১৬, ৩১

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

  • যিশুর প্রথম শতাব্দীর শিষ্যদের কোন ধরনের ভেদাভেদের মনোভাব কাটিয়ে উঠতে হয়েছিল?

  • প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা কীভাবে প্রমাণ করেছিল যে, লোকেরা ভেদাভেদের মনোভাব কাটিয়ে উঠে একতাবদ্ধ হতে পারে?

  • বর্তমানে, আমরা কীভাবে ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে থাকা একতাকে বৃদ্ধি করতে পারি?

১, ২. (ক) যিশু প্রেরিতদের সঙ্গে তাঁর শেষ প্রার্থনার সময়ে কীসের জন্য অনুরোধ করেছিলেন? (খ) কেন যিশু হয়তো একতার বিষয়ে চিন্তিত ছিলেন?

যিশু প্রেরিতদের সঙ্গে তাঁর শেষ ভোজের সময়ে একতার বিষয়ে চিন্তিত ছিলেন। তিনি তাদের সঙ্গে প্রার্থনা করার সময়ে বলেছিলেন যে, তিনি চান যেন তাঁর শিষ্যরা এক হয় বা একতাবদ্ধ হয়, ঠিক যেমন তিনি ও তাঁর পিতা একতাবদ্ধ। (পড়ুন, যোহন ১৭:২০, ২১.) যিশুর শিষ্যরা যদি একতাবদ্ধ থাকে, তা হলে এটা অন্যদের কাছে প্রমাণ করবে যে, যিহোবাই যিশুকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। যিশুর প্রকৃত শিষ্যরা একে অপরের প্রতি যে-প্রেম দেখাবে, সেটার দ্বারাই লোকেরা তাদের শনাক্ত করবে আর এই প্রেম তাদের আরও বেশি একতাবদ্ধ করে তুলবে।—যোহন ১৩:৩৪, ৩৫.

২ আমরা বুঝতে পারি যে, কেন যিশু সেই রাতে একতার বিষয়ে বার বার কথা বলেছিলেন। তিনি লক্ষ করেছিলেন যে, তাঁর প্রেরিতরা সম্পূর্ণরূপে একতাবদ্ধ ছিলেন না। উদাহরণ স্বরূপ, প্রেরিতরা এই বিষয়ে তর্ক করেছিলেন যে, “তাঁহাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ বলিয়া গণ্য,” ঠিক যেমনটা তারা আগেও করেছিলেন। (লূক ২২:২৪-২৭; মার্ক ৯:৩৩, ৩৪) অন্য এক সময়, যাকোব ও যোহন যিশুর কাছে অনুরোধ করেছিলেন যেন তিনি স্বর্গীয় রাজ্যে, ঠিক তাঁর পাশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো তাদের দেন।—মার্ক ১০:৩৫-৪০.

৩. কোন বিষয়গুলো খ্রিস্টের শিষ্যদের একতাবদ্ধ হওয়া থেকে বিরত করতে পারত এবং কোন প্রশ্নগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করব?

৩ কেবলমাত্র আরও বেশি ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব লাভ করার আকাঙ্ক্ষাই যে খ্রিস্টের শিষ্যদের একতাবদ্ধ হওয়া থেকে বিরত করতে পারত, এমন নয়। যিশুর দিনের লোকেরা অন্যদের প্রতি ঘৃণা ও ভেদাভেদের মনোভাবের কারণে বিভক্ত ছিল। যিশুর শিষ্যদের এই ধরনের নেতিবাচক অনুভূতি কাটিয়ে উঠতে হবে। এই প্রবন্ধে আমরা এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করব: যিশু ভেদাভেদের মনোভাবের বিষয়ে কী করেছিলেন? কীভাবে তিনি তাঁর অনুসারীদের অন্যদের সঙ্গে পক্ষপাতহীনভাবে বা ন্যায্যভাবে আচরণ করার আর সেইসঙ্গে একতাবদ্ধ হওয়ার বিষয়টা শিখতে সাহায্য করেছিলেন? আর কীভাবে যিশুর উদাহরণ ও তাঁর শিক্ষাগুলো আমাদের একতাবদ্ধ থাকতে সাহায্য করবে?

যিশু ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে ভেদাভেদের মনোভাব

৪. যিশু যে-সমস্ত ভেদাভেদের মনোভাবের শিকার হয়েছিলেন, সেগুলোর উদাহরণ দিন।

৪ এমনকী যিশু নিজেও ভেদাভেদের মনোভাবের শিকার হয়েছিলেন। ফিলিপ যখন নথনেলকে বলেছিলেন যে, তিনি মশীহকে খুঁজে পেয়েছেন, তখন নথনেল বলেছিলেন: “নাসরৎ হইতে কি উত্তম কিছু উৎপন্ন হইতে পারে?” (যোহন ১:৪৬) নথনেল সম্ভবত জানতেন, মশীহ বৈৎলেহমে জন্মগ্রহণ করবেন, ঠিক যেমনটা মীখা ৫:২ পদে ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়েছিল। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন, নাসরৎ এতটাই নগণ্য এক নগর যে, মশীহ সেখান থেকে আসতে পারেন না। এ ছাড়া, এমন অনেক বিশিষ্ট যিহুদি ছিল, যারা এই কারণে যিশুকে নীচু চোখে দেখত যে, তিনি গালীল থেকে এসেছেন। (যোহন ৭:৫২) অনেক যিহুদি মনে করত, গালীলের লোকেরা নীচু শ্রেণির লোক। আবার অন্যান্য যিহুদিরা যিশুকে এই বলে অপমানিত করার চেষ্টা করেছিল যে, তিনি একজন শমরীয়। (যোহন ৮:৪৮) শমরীয়রা একেবারে ভিন্ন এক জাতির লোক ছিল এবং তাদের ধর্মও যিহুদিদের চেয়ে ভিন্ন ছিল। শমরীয়দের প্রতি যিহুদিদের ও গালীলীয়দের বলতে গেলে কোনো সম্মানই ছিল না এবং তারা তাদের এড়িয়ে চলত।—যোহন ৪:৯.

৫. যিশুর শিষ্যরা কোন ভেদাভেদের মনোভাবের শিকার হয়েছিল?

৫ যিহুদি ধর্মীয় নেতারাও যিশুর অনুসারীদের অসম্মানিত করেছিল। ফরীশীরা তাদের “শাপগ্রস্ত” লোক হিসেবে দেখত। (যোহন ৭:৪৭-৪৯) যারা যিহুদিদের ধর্মীয় বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করত না এবং যারা ফরীশীদের পরম্পরাগত রীতিনীতি পালন করত না, তাদেরকে ফরীশীরা অযোগ্য ও সামান্য লোক হিসেবে দেখত। (প্রেরিত ৪:১৩) যিশু ও তাঁর শিষ্যরা ভেদাভেদের মনোভাবের শিকার হয়েছিলেন কারণ সেইসময় লোকেরা তাদের ধর্ম, সামাজিক পদমর্যাদা ও জাতির বিষয়ে গর্বিত ছিল। এই ভেদাভেদের মনোভাব শিষ্যদের উপর এবং অন্যদের সম্বন্ধে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির উপরও প্রভাব ফেলেছিল। একতাবদ্ধ থাকার জন্য তাদের নিজেদের চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করতে হবে।

৬. উদাহরণের সাহায্যে দেখান যে, কীভাবে ভেদাভেদের মনোভাব আমাদের প্রভাবিত করতে পারে।

৬ বর্তমানে আমরা যে-জগতে বাস করি, সেটা ভেদাভেদের মনোভাবে পরিপূর্ণ। লোকেদের হয়তো আমাদের বিরুদ্ধে ভেদাভেদের মনোভাব থাকতে পারে অথবা আমাদের হয়তো অন্যদের বিরুদ্ধে কিছুটা ভেদাভেদের মনোভাব থাকতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার একজন বোন, যিনি এখন অগ্রগামী হিসেবে সেবা করেন, বলেন: “আমি আ্যবরিজিনাল সম্প্রদায়ের লোকেদের উপর অতীতে ও বর্তমানে ঘটা অবিচারগুলোর উপর যতবেশি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলাম, শ্বেতাঙ্গ লোকেদের প্রতি আমার ঘৃণা ততবেশি বেড়ে গিয়েছিল।” এ ছাড়া, কারো কারো কাছ থেকে দুর্ব্যবহারের শিকার হওয়ার কারণেও তার ঘৃণা বৃদ্ধি পেয়েছিল। কানাডার একজন ভাই তার অতীতের অনুভূতির বিষয়ে স্বীকার করে বলেন: “আমি মনে করতাম, ফ্রেঞ্চভাষী লোকেরাই সর্বশ্রেষ্ঠ।” তিনি বলেন যে, এই মনোভাবের কারণে তিনি ইংরেজিভাষী লোকেদের পছন্দ করতেন না।

৭. যিশু ভেদাভেদের মনোভাবের বিষয়ে কী করেছিলেন?

৭ যিশুর দিনের মতোই বর্তমানেও লোকেদের মনে ভেদাভেদের অনুভূতি প্রায়ই খুব প্রবল হয়ে থাকে আর সেগুলো সহজে পরিবর্তন করা যায় না। যিশু এই ধরনের অনুভূতির বিষয়ে কী করেছিলেন? প্রথমত, তিনি নিজে কখনোই ভেদাভেদের মনোভাব গড়ে তোলেননি। তিনি সবসময় পক্ষপাতহীন ছিলেন। তিনি ধনী ও দরিদ্র, ফরীশী ও শমরীয় আর এমনকী করগ্রাহী ও পাপীদের কাছেও প্রচার করেছিলেন। দ্বিতীয়ত, যিশু তাঁর শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন ও সেইসঙ্গে নিজের উদাহরণের মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন যে, তাদের অন্যদের সন্দেহের চোখে দেখা উচিত নয় অথবা অন্যদের বিরুদ্ধে ভেদাভেদের মনোভাব পোষণ করা উচিত নয়।

প্রেম ও নম্রতার দ্বারা ভেদাভেদের মনোভাব কাটিয়ে উঠুন

৮. কোন গুরুত্বপূর্ণ নীতিটা আমাদের একতার ভিত্তি? ব্যাখ্যা করুন।

৮ যিশু একটা গুরুত্বপূর্ণ নীতি সম্বন্ধে শিখিয়েছিলেন, যেটা হল আমাদের একতার ভিত্তি। তিনি তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “তোমরা সকলে ভ্রাতা।” (পড়ুন, মথি ২৩:৮, ৯.) এক অর্থে আমরা সবাই ভাই-বোন কারণ আমরা সবাই আদমের সন্তান। (প্রেরিত ১৭:২৬) যিশু ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, তাঁর শিষ্যরা এই কারণেও ভাই-বোন ছিল যে, তারা সবাই যিহোবাকে তাদের স্বর্গীয় পিতা হিসেবে স্বীকার করেছিল। (মথি ১২:৫০) আর তারা সবাই ঈশ্বরের পরিবারের সদস্য হয়েছিল এবং প্রেম ও বিশ্বাসের দ্বারা একতাবদ্ধ হয়েছিল। এই কারণেই প্রেরিতরা বিভিন্ন মণ্ডলীর উদ্দেশে চিঠি লেখার সময়ে অন্যান্য খ্রিস্টানদের তাদের ভাই ও বোন বলে সম্বোধন করেছিলেন।—রোমীয় ১:১৩; ১ পিতর ২:১৭; ১ যোহন ৩:১৩.a

৯, ১০. (ক) কেন যিহুদিদের নিজেদের জাতির বিষয়ে গর্বিত হওয়ার কোনো কারণ ছিল না? (খ) কীভাবে যিশু শিখিয়েছিলেন যে, ভিন্ন জাতির লোকেদের নীচু চোখে দেখা অন্যায়? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

৯ যিশু তাঁর শিষ্যদের একে অপরকে ভাই ও বোন হিসেবে দেখার জন্য নির্দেশ দেওয়ার পর তিনি এই বিষয়টার উপর জোর দিয়েছিলেন যে, তাদের নত বা নম্র হতে হবে। (পড়ুন, মথি ২৩:১১, ১২.) আমরা ইতিমধ্যেই যেমন শিখেছি, কখনো কখনো গর্বের কারণে প্রেরিতরা বিভক্ত হয়ে গিয়েছিলেন। আর যিশুর দিনে লোকেরা তাদের জাতির বিষয়ে খুবই গর্বিত ছিল। অনেক যিহুদি মনে করত, যেহেতু তারা অব্রাহামের সন্তান, তাই তারা অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। কিন্তু, যোহন বাপ্তাইজক তাদের বলেছিলেন: “ঈশ্বর এই সকল পাথর হইতে অব্রাহামের জন্য সন্তান উৎপন্ন করিতে পারেন।”—লূক ৩:৮.

পতিবেশীসুলভ শমরীয় একজন আহত যিহুদি ভ্রমণকারীর কাছ আসছন

১০ যিশু শিখিয়েছিলেন যে, নিজের জাতির বিষয়ে গর্ব করাটা অন্যায়। তিনি সেইসময় এটা স্পষ্ট করেছিলেন, যখন একজন ব্যবস্থাবেত্তা তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “আমার প্রতিবাসী কে?” এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য যিশু একটা গল্প বলেছিলেন। একবার, একজন যিহুদি রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে কয়েক জন ডাকাত তাকে মারধর করে রাস্তায় ফেলে চলে গিয়েছিল। যদিও কিছু যিহুদি তার পাশ দিয়ে হেঁটে গিয়েছিল কিন্তু তারা তাকে সাহায্য করেনি। তবে, একজন শমরীয় তাকে দেখে কষ্ট পেয়েছিলেন আর তাই, তিনি তার যত্ন নিয়েছিলেন। যিশু গল্পের শেষে সেই ব্যবস্থাবেত্তাকে বলেছিলেন যে, তাকেও সেই শমরীয়ের মতো হতে হবে। (লূক ১০:২৫-৩৭) যিশু দেখিয়েছিলেন, একজন শমরীয় ব্যক্তি যিহুদিদের শেখাতে পারেন যে, তাদের প্রতিবেশীকে ভালোবাসার অর্থ কী।

১১. কেন যিশুর শিষ্যদের পক্ষপাতহীন হতে হয়েছিল এবং কীভাবে তিনি তাদের এটা বুঝতে সাহায্য করেছিলেন?

১১ যিশু স্বর্গে যাওয়ার আগে তাঁর শিষ্যদের “সমুদয় যিহূদীয়া ও শমরিয়া দেশে, এবং পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত” প্রচার করতে বলেছিলেন। (প্রেরিত ১:৮) তা করার জন্য যিশুর শিষ্যদের গর্ব ও ভেদাভেদের মনোভাব কাটিয়ে উঠতে হবে। যিশু প্রায়ই বিদেশিদের ভালো গুণাবলি সম্বন্ধে কথা বলেছিলেন আর এটা তাঁর শিষ্যদের সমস্ত জাতির কাছে প্রচার করার জন্য প্রস্তুত করেছিল। উদাহরণ স্বরূপ, তিনি একজন বিদেশি শতপতির প্রশংসা করেছিলেন, যার অসাধারণ বিশ্বাস ছিল। (মথি ৮:৫-১০) যিশু তাঁর নিজের নগর নাসরতে ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, কীভাবে যিহোবা বিদেশিদের, যেমন সারিফতের এক ফৈনিকীয় বিধবাকে ও সুরীয় কুষ্ঠরোগী নামানকে সাহায্য করেছিলেন। (লূক ৪:২৫-২৭) এ ছাড়া, যিশু একজন শমরীয় মহিলার কাছেও প্রচার করেছিলেন আর তিনি এমনকী শমরীয়ার একটা নগরে দু-দিন থেকেছিলেন কারণ সেখানকার লোকেরা তাঁর বার্তা শুনতে আগ্রহী ছিল।—যোহন ৪:২১-২৪, ৪০.

প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের ভেদাভেদের মনোভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছিল

যিশু একটা কুয়োর পাশে একজন শমরীয় মহিলার সগ কথা বলছন

১২, ১৩. (ক) যিশু যখন একজন শমরীয় মহিলাকে শিক্ষা দিয়েছিলেন, তখন প্রেরিতরা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।) (খ) কী দেখায় যে, যিশু যা শেখাতে চেয়েছিলেন, যাকোব ও যোহন তা ভালোভাবে বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলেন?

১২ প্রেরিতদের পক্ষে ভেদাভেদের মনোভাব কাটিয়ে ওঠা সহজ ছিল না। তারা এটা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন যে, যিশু একজন শমরীয় মহিলাকে শিক্ষা দিতে ইচ্ছুক ছিলেন। (যোহন ৪:৯, ২৭) কেন? হতে পারে এই কারণে যে, যিহুদি ধর্মীয় নেতারা জনসমক্ষে কোনো মহিলার সঙ্গে কথা বলত না আর বিশেষভাবে এমন কোনো শমরীয় মহিলার সঙ্গে তো একেবারেই নয়, যার দুর্নাম রয়েছে। শিষ্যরা তখন যিশুকে খাবার খেতে বলেছিলেন কিন্তু যিশু সেই মহিলার সঙ্গে কথা বলে এত আনন্দিত হয়েছিলেন যে, তিনি খাবার খাওয়ার বিষয়টাকে ততটা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখেননি। ঈশ্বর চেয়েছিলেন যেন যিশু প্রচার করেন আর তাই, তাঁর পিতার ইচ্ছা পালন করা, এমনকী একজন শমরীয় মহিলার কাছেও প্রচার করা, তাঁর কাছে খাবারের মতো ছিল।—যোহন ৪:৩১-৩৪.

১৩ যাকোব ও যোহন এই গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাটা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। একবার, শিষ্যরা যখন যিশুর সঙ্গে শমরীয়ার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল, তখন তারা সেখানকার একটা গ্রামে রাতে থাকার জন্য জায়গার খোঁজ করেছিল। কিন্তু, শমরীয়রা তাদের কোনো থাকার জায়গা দেয়নি। এতে যাকোব ও যোহন এতটাই রেগে গিয়েছিলেন যে, তারা স্বর্গ থেকে আগুন ফেলার বিষয়ে বলেছিলেন, যাতে সেই গ্রামটা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু, যিশু দৃঢ়ভাবে তাদের সংশোধন করেছিলেন। (লূক ৯:৫১-৫৬) হতে পারে, এই একই ঘটনা যদি তাদের নিজেদের এলাকা গালীলে ঘটত, তা হলে যাকোব ও যোহন হয়তো এতটা রেগে যেতেন না। সম্ভবত, তাদের মধ্যে ভেদাভেদের মনোভাব ছিল বলে তারা রেগে গিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে, যোহন যখন শমরীয়দের কাছে প্রচার করেছিলেন এবং অনেকে তার বার্তা শুনেছিল, তখন তিনি হয়তো তার আগের আচরণের জন্য লজ্জিত হয়েছিলেন।—প্রেরিত ৮:১৪, ২৫.

১৪. কীভাবে ভেদাভেদের মনোভাবের কারণে ঘটা একটা সমস্যার সমাধান করা হয়েছিল?

১৪ তেত্রিশ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর অল্পসময় পরই মণ্ডলীতে বৈষম্যের সমস্যা দেখা দিয়েছিল। ভাইয়েরা অভাবী বিধবাদের কাছে খাবার বিতরণ করার সময়ে গ্রিকভাষী বিধবাদের উপেক্ষা করেছিল। (প্রেরিত ৬:১) এটা হয়তো ভিন্নভাষীদের প্রতি ভেদাভেদের মনোভাবের কারণে ঘটেছিল। প্রেরিতরা দ্রুত সমস্যার সমাধান করেছিলেন। তারা সাত জন যোগ্য ভাইকে বাছাই করেছিলেন যেন তারা ন্যায্যভাবে খাবার বণ্টন করেন। এই সাত জন ভাইয়েরই গ্রিক নাম ছিল আর এটা হয়তো সেই বিধবাদের সান্ত্বনা প্রদান করেছিল, যাদের অসন্তুষ্ট করা হয়েছিল।

পিতর কর্ণীলিয়ের বাড়িতে ঢুকছন

১৫. কীভাবে পিতর সকলের প্রতি পক্ষপাতহীন মনোভাব দেখাতে শিখেছিলেন? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

১৫ ছত্রিশ খ্রিস্টাব্দে যিশুর শিষ্যরা সমস্ত জাতির লোকের কাছে প্রচার করতে শুরু করেছিল। এর আগে, প্রেরিত পিতর সাধারণত কেবল যিহুদিদের সঙ্গে সময় কাটাতেন। তারপর, ঈশ্বর এটা স্পষ্ট করেছিলেন যে, খ্রিস্টানদের “মুখাপেক্ষা [“পক্ষপাতিত্ব,” ইজি-টু-রিড ভারশন]” করা উচিত নয় আর পিতর কর্ণীলিয় নামে একজন রোমীয় সৈনিকের কাছে প্রচার করেছিলেন। (পড়ুন, প্রেরিত ১০:২৮, ৩৪, ৩৫.) এরপর থেকে পিতর ন-যিহুদি খ্রিস্টানদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছিলেন ও খাওয়া-দাওয়া করেছিলেন। কিন্তু, কয়েক বছর পর আন্তিয়খিয়া নগরে তিনি হঠাৎই ন-যিহুদি খ্রিস্টানদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। (গালা. ২:১১-১৪) তাই, পৌল পিতরকে সংশোধন করেছিলেন এবং পিতর সেই সংশোধন মেনে নিয়েছিলেন। কীভাবে আমরা তা জানি? পিতর যখন এশিয়া মাইনরের যিহুদি ও ন-যিহুদি খ্রিস্টানদের প্রতি তার প্রথম চিঠি লিখেছিলেন, তখন তিনি এই বিষয়ে কথা বলেছিলেন যে, সমস্ত ভাই-বোনকে ভালোবাসা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।—১ পিতর ১:১; ২:১৭.

১৬. প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা কীসের জন্য সুপরিচিত হয়ে উঠেছিল?

১৬ স্পষ্টতই, যিশুর উদাহরণের কারণে প্রেরিতরা “সকলকে” ভালোবাসতে শিখেছিলেন। (যোহন ১২:৩২; ১ তীম. ৪:১০) এমনকী যদিও তাদের সময় লেগেছিল কিন্তু তারা লোকেদের বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছিলেন। আগ্রহের বিষয় হল, প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা একে অপরের প্রতি ভালোবাসা দেখানোর জন্য সুপরিচিত হয়ে উঠেছিল। প্রায় ২০০ খ্রিস্টাব্দে টারটুলিয়ান নামে একজন লেখক উদ্ধৃতি করেছিলেন যে, অন্যেরা খ্রিস্টানদের সম্বন্ধে কী বলেছিল: “তারা একে অপরকে ভালোবাসে” আর “তারা এমনকী একে অপরের জন্য মারা যেতেও প্রস্তুত।” যেহেতু সেই খ্রিস্টানরা ‘নূতন মনুষ্য’ বা ব্যক্তিত্ব পরিধান করেছিল, তাই তারা সমস্ত লোককে সমানভাবে দেখতে শিখেছিল, ঠিক যেমনটা ঈশ্বর তাদের দেখে থাকেন।—কল. ৩:১০, ১১.

১৭. কীভাবে আমরা মন থেকে যেকোনো ধরনের ভেদাভেদের অনুভূতি দূর করতে পারি? কয়েকটা উদাহরণ দিন।

১৭ বর্তমানে, আমাদেরও মন থেকে যেকোনো ধরনের ভেদাভেদের অনুভূতি দূর করার জন্য সময় লাগতে পারে। ফ্রান্সের একজন বোন ব্যাখ্যা করেন যে, এমনটা করা তার জন্য কতটা কঠিন ছিল। তিনি বলেন: “যিহোবা আমাকে শিখিয়েছেন যে, ভালোবাসার অর্থ কী, ভাগ করে নেওয়ার অর্থ কী এবং সমস্ত ধরনের লোককে ভালোবাসার অর্থ কী। কিন্তু, আমি এখনও অন্যদের প্রতি ভেদাভেদের মনোভাব কাটিয়ে ওঠার বিষয়টা শিখছি। এমনটা করা সবসময় সহজ নয় আর তাই, আমি এই বিষয়ে সবসময় প্রার্থনা করি।” স্পেনের একজন বোন ব্যাখ্যা করেন যে, তাকে এখনও মাঝে মাঝে একটা নির্দিষ্ট দলের লোকের প্রতি নেতিবাচক অনুভূতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়। তিনি বলেন: “বেশিরভাগ সময়ই আমি সেই অনুভূতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হই। কিন্তু আমি জানি, আমাকে এই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। আমি খুবই খুশি যে, যিহোবা আমাকে এক একতাবদ্ধ পরিবারের সদস্য হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন।” আমাদের সবাইকেই এটা নিয়ে ভালোভাবে চিন্তা করতে হবে যে, আমরা অন্যদের সম্বন্ধে কেমন অনুভব করি। আমাদেরও কি মন থেকে কোনো ধরনের ভেদাভেদের অনুভূতি দূর করতে হবে?

প্রেম বৃদ্ধি পেলে ভেদাভেদের মনোভাব দূর হয়ে যায়

১৮, ১৯. (ক) সবাইকে গ্রহণ করার বিষয়ে আমাদের কাছে কোন কারণগুলো রয়েছে? (খ) কীভাবে আমরা তা করতে পারি?

১৮ আমাদের জন্য এটা মনে রাখা উত্তম যে, একসময় আমরা সবাই ঈশ্বরের কাছ থেকে অনেক দূরে ছিলাম। (ইফি. ২:১২) কিন্তু, যিহোবা প্রেমের সঙ্গে আমাদের তাঁর দিকে আকর্ষণ করেছেন। (হোশেয় ১১:৪; যোহন ৬:৪৪) আর খ্রিস্ট আমাদের গ্রহণ করেছেন। তিনি আমাদের পক্ষে ঈশ্বরের পরিবারের সদস্য হওয়া সম্ভবপর করেছেন। (পড়ুন, রোমীয় ১৫:৭.) আমরা অসিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও যিশু সদয়ভাবে আমাদের গ্রহণ করেছেন আর তাই, আমাদের কখনোই অন্যদের প্রত্যাখ্যান করার বিষয়ে এমনকী চিন্তাও করা উচিত নয়!

ভিন্ন ভিন্ন জাতির তিন জন যুবতী সাক্ষি

আমরা একতাবদ্ধ থাকি ও একে অপরকে ভালোবাসি কারণ আমরা “যে জ্ঞান উপর হইতে আইসে,” সেই জ্ঞানের অন্বেষণ করি (১৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৯ আমরা এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার ধ্বংসের দিকে যতবেশি এগিয়ে যাব, লোকেরা ততবেশি বিভক্ত হয়ে যাবে ও তাদের মধ্যে ততবেশি ভেদাভেদের মনোভাব ও ঘৃণা দেখা যাবে। (গালা. ৫:১৯-২১; ২ তীম. ৩:১৩) কিন্তু, যিহোবার লোক হিসেবে আমরা “যে জ্ঞান উপর হইতে আইসে,” সেই জ্ঞানের অনুসন্ধান করি, যেটা আমাদের পক্ষপাতহীন হতে ও শান্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। (যাকোব ৩:১৭, ১৮) আমরা অন্যান্য দেশের লোকেদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পেরে, তাদের সংস্কৃতিকে গ্রহণ করতে পেরে আর হয়তো এমনকী তাদের ভাষা শিখতে পেরে আনন্দিত হই। আমরা যখন এমনটা করি, তখন আমরা “নদীর ন্যায়” শান্তি ও “সমুদ্র-তরঙ্গের ন্যায়” ন্যায়বিচার উপভোগ করি।—যিশা. ৪৮:১৭, ১৮.

২০. ভালোবাসা যখন আমাদের চিন্তাভাবনা ও অনুভূতিকে পরিবর্তন করে, তখন কী ঘটে?

২০ আগে উল্লেখিত অস্ট্রেলিয়ার সেই বোন যখন বাইবেল অধ্যয়ন করেছিলেন, তখন তার মধ্যে গেঁথে থাকা ভেদাভেদের মনোভাব ও ঘৃণা ধীরে ধীরে দূর হয়ে গিয়েছিল। ভালোবাসা তার চিন্তাভাবনা ও অনুভূতিকে পরিবর্তন করেছিল। কানাডার সেই ফ্রেঞ্চভাষী ভাই বলেন যে, এখন তিনি বোঝেন, সাধারণত লোকেরা কেবল অন্যদের সম্বন্ধে না জানার কারণেই তাদের ঘৃণা করে থাকে। তিনি শিখেছেন, “লোকেদের গুণাবলি তাদের জন্মের স্থানের উপর নির্ভর করে না।” তিনি এমনকী একজন ইংরেজিভাষী বোনকে বিয়ে করেছেন! এই উদাহরণগুলো প্রমাণ করে, প্রেম ভেদাভেদের মনোভাবকে পরাজিত করে। প্রেম আমাদের এমন এক বন্ধনে একতাবদ্ধ করে, যেটাকে কখনো ভেঙে ফেলা যাবে না।—কল. ৩:১৪.

a “ভ্রাতৃগণ” অভিব্যক্তিটা মণ্ডলীর বোনেদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। পৌল রোমের ‘ভ্রাতৃগণের’ প্রতি তার চিঠি লিখেছিলেন কিন্তু সেই অভিব্যক্তিটা স্পষ্টতই বোনেদেরও অন্তর্ভুক্ত করেছিল কারণ তিনি কোনো কোনো বোনের নাম উল্লেখ করেছিলেন। (রোমীয় ১৬:৩, ৬, ১২) অনেক বছর ধরে প্রহরীদুর্গ পত্রিকা মণ্ডলীর খ্রিস্টানদের ‘ভাই ও বোন’ হিসেবে অভিহিত করে এসেছে।

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার