জীবন ও পরিচর্যা সভার জন্য অধ্যয়ন পুস্তিকা-র রেফারেন্স
© 2023 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
নভেম্বর ৬-১২
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ইয়োব ১৩-১৪
“একজন ব্যক্তি যদি মারা যান, তা হলে তিনি কি আবারও জীবিত হতে পারেন?”
প্রহরীদুর্গ ৯৯ ১০/১৫ ৩ অনু. ১-৩
দীর্ঘ জীবনের জন্য আমাদের আকাঙ্ক্ষা
যদিও এই কথাগুলো ৩,৫০০ বছর আগে লেখা হয়েছিল, তবুও আজ খুব কম লোকই এই কথাকে অস্বীকার করবেন যে মানুষের জীবন খুব ছোট। চিরদিন মানুষ দেখেছে যে যৌবনের মাত্র কয়েকটা বছর আনন্দ করে তারপর বুড়ো হয়ে মারা যাওয়া কতই না দুঃখজনক। তাই পুরো ইতিহাস জুড়ে দীর্ঘ জীবন পাওয়ার জন্য অজস্র চেষ্টা করা হয়েছে।
ইয়োবের দিনে মিশরীয়রা তাদের যৌবন ফিরে পাওয়ার জন্য পশুদের অন্ডকোষ খেত কিন্তু তাদের আশা পূর্ণ হয়নি। মধ্যযুগের রসায়ন শাস্ত্রের এক প্রধান লক্ষ্য ছিল এমন অমৃত তৈরি করা যা মানুষকে দীর্ঘ জীবন দিতে পারবে। অনেক রসায়নবিদ বিশ্বাস করতেন যে কৃত্রিম সোনা অমর জীবন দিতে পারে আর সোনার থালায় খেলে অনেক দিন বেঁচে থাকা যাবে। প্রাচীন চিনে তাও ধর্মের লোকেরা মনে করত যে তারা ধ্যান, শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলনী এবং আহারবিধি মেনে চললে শরীরের রাসায়নিক প্রক্রিয়াকে বদলে ফেলে অমর জীবন পেতে পারবে।
স্প্যানিস তথ্য সংগ্রাহক ওয়ান পোন্সি ডি লিয়ন যৌবনকে ফিরিয়ে আনার উপায় খুঁজেছিলেন কিন্তু তার সেই আশা পূরণ হয়নি। ১৮ শতাব্দীর একজন ডাক্তার তার হারমিপাস রেডিভিভাস বইয়ে পরামর্শ দেন যে বসন্তকালে যদি যুবতী কুমারীদেরকে একটা ছোট ঘরে রেখে তাদের শ্বাস-প্রশ্বাস একটা বোতলের মধ্যে ভরে রাখা যায়, তাহলে তা দীর্ঘ জীবনের অমৃত হিসেবে কাজ করতে পারে। কিন্তু এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে এই চেষ্টার কোনটাই সফল হয়নি।
প্রহরীদুর্গ ১৫ ৪/১৫ ৩২ অনু. ১-২
কোনো ছিন্ন বৃক্ষ কি আবার পল্লবিত হতে পারে?
লিবাননের বিশাল এরস বৃক্ষের সঙ্গে তুলনা করলে, একটা প্যাঁচানো ও গাঁটযুক্ত জিত বৃক্ষকে খুব একটা আকর্ষণীয় বলে মনে না-ও হতে পারে। কিন্তু, প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকার এক উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা জিত বৃক্ষের রয়েছে। কোনো কোনো বৃক্ষ ১,০০০ বছর ধরে বেঁচে রয়েছে বলে মনে করা হয়। একটা জিত বৃক্ষের বিস্তৃত শিকড় থাকে। এমনকী বৃক্ষের কাণ্ড নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও এই শিকড় জিত বৃক্ষকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলতে পারে। যতক্ষণ পর্যন্ত শিকড় বেঁচে থাকবে, এই বৃক্ষ আবার পল্লবিত হবে।
কুলপতি ইয়োব এই বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন, এমনকী তিনি যদি মারাও যান, তিনি পুনর্জীবিত হবেন। (ইয়োব ১৪:১৩-১৫) তাকে পুনরুত্থিত করার ক্ষমতা যে ঈশ্বরের আছে, সেই বিষয়ে নিজের আস্থা প্রকাশ করার জন্য ইয়োব উদাহরণ হিসেবে একটা বৃক্ষ—সম্ভবত একটা জিত বৃক্ষ—ব্যবহার করেছিলেন। ইয়োব বলেছিলেন, “বৃক্ষের আশা আছে, ছিন্ন হইলে তাহা পুনর্ব্বার পল্লবিত হইবে।” প্রচণ্ড খরার পর যখন বৃষ্টি শুরু হয়, তখন একটা জিত বৃক্ষের শুষ্ক গুঁড়ি এর শিকড় থেকে পল্লবিত হয়ে জীবন ফিরে পেতে পারে, “নবরোপিত বৃক্ষের ন্যায় শাখাবিশিষ্ট” হতে পারে।—ইয়োব ১৪:৭-৯.
প্রহরীদুর্গ ১১ জুলাই-সেপ্টেম্বর ১০ অনু. ৫
“তুমি আপন হস্তকৃতের প্রতি আকুল আকাঙ্ক্ষা করিবে”
ইয়োবের কথাগুলো আমাদেরকে যিহোবা যে কতখানি প্রেমময় সেই বিষয়ে শিক্ষা দেয়: ইয়োবের মতো যারা তাঁর হাতে নিজেদেরকে সঁপে দেয়, তাঁর চোখে প্রীতিজনক এমন লোক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তাঁকে সুযোগ দেয়, তাদের প্রতি তাঁর বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। (যিশাইয় ৬৪:৮) যিহোবা তাঁর বিশ্বস্ত উপাসকদের মূল্যবান বলে গণ্য করেন। যে-অনুগত ব্যক্তিরা মারা গিয়েছে, তাদের প্রতি তাঁর “আকুল আকাঙ্ক্ষা” রয়েছে। তাই, অনুবাদিত ইব্রীয় শব্দটি “তীব্র বাসনার অনুভূতিকে প্রকাশ করার জন্য প্রশ্নাতীতভাবে এক জোরালো শব্দ,” একজন পণ্ডিত ব্যক্তি বলেন। হ্যাঁ, যিহোবা শুধুমাত্র তাঁর লোকেদের স্মরণেই রাখেন তা নয় কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি তাদের জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যও আকাঙ্ক্ষী।
অমূল্য রত্ন
অন্তর্দৃষ্টি-১ ১৯১, ইংরেজি
ছাই
“ছাই” শব্দ একজন অযোগ্য ব্যক্তি অথবা যার কোনো মূল্য নেই, এমন ব্যক্তিকে বোঝানোর জন্য ব্যবহার করা হত। উদাহরণ স্বরূপ, অব্রাহাম নম্র হয়ে যিহোবাকে বলেছিলেন: “আমি ধুলো ও ছাইয়ের মতো হয়ে গিয়েছি।” (আদি ১৮:২৭; এ ছাড়া, যিশা ৪৪:২০; ইয়োব ৩০:১৯ পদ দেখুন।) আর ইয়োব বলেছিলেন, তার খারাপ বন্ধুদের কথাগুলো “ছাইয়ের মতো।”—ইয়োব ১৩:১২.
নভেম্বর ১৩-১৯
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ইয়োব ১৫-১৭
ইলীফসের মতো অন্যদের নিরুৎসাহিত করবেন না
প্রহরীদুর্গ ০৫ ৯/১৫ ২৬ অনু. ৪-৫
ভুল চিন্তাভাবনা প্রতিরোধ করুন!
ইলীফস তার তিনটে বক্তৃতাতেই এই ধারণা তুলে ধরেছিলেন যে, ঈশ্বর এতটাই কঠোর যে তাঁর দাসেরা যা-ই করুক না কেন, কোনোকিছুই তাঁকে সতুষ্ট করতে পারে না। “দেখ, তিনি আপন দাসগণকেও বিশ্বাস করেন না,” ইলীফস ইয়োবকে বলেছিলেন, “আপন দূতগণেতেও ত্রুটির দোষারোপ করেন।” (ইয়োব ৪:১৮) ইলীফস পরে ঈশ্বর সম্বন্ধে বলেছিলেন: “তিনি আপনার পবিত্রগণেও বিশ্বাস করেন না, তাঁহার দৃষ্টিতে আকাশও নির্ম্মল নহে।” (ইয়োব ১৫:১৫) এ ছাড়া, তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন: “তুমি ধার্ম্মিক হইলে কি সর্ব্বশক্তিমানের আমোদ হয়?” (ইয়োব ২২:৩) বিল্দদ এই দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত পোষণ করেছিলেন কারণ তিনি বলেছিলেন: “[ঈশ্বরের] দৃষ্টিতে চন্দ্রও নিস্তেজ, তারাগণও নির্ম্মল নহে।”—ইয়োব ২৫:৫.
আমাদের অবশ্যই এই ধরনের চিন্তাভাবনার দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। এটা আমাদের এইরকম মনে করার দিকে পরিচালিত করতে পারে যে, ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত দাবি করেন। এই ধারণা ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ওপর আঘাত করে। অধিকন্তু, আমরা যদি এই ধরনের যুক্তির কাছে নতি স্বীকার করি, তা হলে আমাদের যখন প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয় তখন আমরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাব? নম্রভাবে সংশোধন মেনে নেওয়ার পরিবর্তে আমাদের হৃদয় হয়তো “সদাপ্রভুর উপরে রুষ্ট” হতে পারে এবং আমরা হয়তো তাঁর প্রতি বিরক্তি পোষণ করতে পারি। (হিতোপদেশ ১৯:৩) সেটা আধ্যাত্মিকভাবে কত ধ্বংসাত্মকই না হবে!
যিশুর নম্রতা এবং কোমলতা অনুকরণ করুন
১৬ আমাদের কোমল কথাবার্তা। আমাদের কোমল অনুভূতি আমাদেরকে ‘ক্ষীণসাহসদিগকে সান্ত্বনা করিতে [‘বিষণ্ণদের প্রতি সান্ত্বনার বাক্য বলতে,’ NW]’ অনুপ্রাণিত করে। (১ থিষল. ৫:১৪) তাদেরকে উৎসাহিত করার জন্য আমরা কী বলতে পারি? আমরা তাদের বলতে পারি, তাদের সম্বন্ধে আমরা কতটা চিন্তা করি। আমরা তাদের প্রশংসা করতে এবং তাদের ইতিবাচক গুণ ও দক্ষতা খুঁজে বের করার জন্য সাহায্য করতে পারি। আমরা তাদের মনে করিয়ে দিতে পারি, যেহেতু যিহোবা তাদেরকে সত্য খুঁজে পেতে সাহায্য করেছেন, তাই তারা অবশ্যই তাঁর কাছে অত্যন্ত মূল্যবান। (যোহন ৬:৪৪) আমরা তাদের আশ্বাস দিতে পারি, যিহোবা তাঁর সেই দাসদের জন্য গভীরভাবে চিন্তা করেন, যারা ‘ভগ্নচিত্ত’ অথবা ‘চূর্ণমনা।’ (গীত. ৩৪:১৮) আমাদের কোমল কথাবার্তা সত্যিই সেই ব্যক্তিদের সতেজ করতে পারে, যাদের সান্ত্বনার প্রয়োজন।—হিতো. ১৬:২৪.
অমূল্য রত্ন
প্রহরীদুর্গ ০৬ ৩/১৫ ১৪ অনু. ১১
ইয়োব বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো
৭:৯, ১০; ১০:২১; ১৬:২২—এই বিবৃতিগুলো কি নির্দেশ করে যে, তিনি পুনরুত্থানে বিশ্বাস করতেন না? এই মন্তব্যগুলো ইয়োবের নিকট ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে করা হয়। তা হলে, এর অর্থ কী ছিল? একটা সম্ভাব্য অর্থ হল যে, যদি ইয়োব মারা যান, তা হলে তার সমসাময়িক কেউই তাকে দেখতে পাবে না। তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে, ঈশ্বরের নিরূপিত সময় না হওয়া পর্যন্ত তিনি আর ফিরে আসবেন না কিংবা আর কোনো স্বীকৃতি পাবেন না। ইয়োব হয়তো এও বুঝিয়েছিলেন যে, কেউই নিজের চেষ্টায় পাতাল থেকে ফিরে আসতে পারে না। ইয়োব যে ভবিষ্যৎ পুনরুত্থানে বিশ্বাস করতেন, তা ইয়োব ১৪:১৩-১৫ পদ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়।
নভেম্বর ২০-২৬
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ইয়োব ১৮-১৯
“আপনার ভাই-বোনদের কখনো একা ছেড়ে দেবেন না”
যিশু যে কেঁদেছিলেন, তা থেকেও কি আমরা কিছু শিখতে পারি?
৯ আপনি শোকার্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করতে পারেন। যিশু কেবল মার্থা ও মরিয়মের সঙ্গে কাঁদেননি, কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি তাদের কথা মন দিয়ে শুনেছিলেন, তাদের সঙ্গে প্রেম সহকারে কথা বলেছিলেন এবং তাদের সান্ত্বনা দিয়েছিলেন। আমরাও শোকার্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করতে পারি। অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী ড্যান নামে একজন প্রাচীন বলেন: “যখন আমার স্ত্রী মারা যায়, তখন আমার সান্ত্বনা ও অনেক সাহায্যের প্রয়োজন হয়। অনেক ভাই এবং তাদের স্ত্রীয়েরা সকাল-সন্ধ্যে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসত আর আমার কথা মন দিয়ে শুনত। আমি যখন কাঁদতাম, তখন তারা আমাকে থামাত না আর আমাকে কাঁদতে দেখে তারা অস্বস্তি বোধও করত না। কখনো কখনো আমি যখন ঘরের সমস্ত কাজ একা হাতে সামলাতে পারতাম না, তখন তারা আমাকে সাহায্য করত। যেমন, তারা আমার গাড়ি ধুয়ে দিত, আমার জন্য কেনাকাটা করে দিত এবং রান্না করে দিত। তারা আমার সঙ্গে বার বার প্রার্থনা করত। সেই ভাই-বোনেরা আমার প্রকৃত বন্ধু ছিল আর “দুর্দ্দশার” সময়ে আমার ভাই হয়ে উঠেছিল।”—হিতো. ১৭:১৭.
যখন আমাদের কোনো প্রিয়জন যিহোবাকে ছেড়ে চলে যায়
১৬ সমাজচ্যুত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের সাহায্য করে চলুন। কখনো কখনো দেখা গিয়েছে, মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা সমাজচ্যুত ব্যক্তির সঙ্গে সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলা বন্ধ করে দেয়। আমাদের এমনটা করা উচিত নয়। তাদের এই সময়ে আমাদের ভালোবাসা ও উৎসাহের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রয়েছে। (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) বিশেষভাবে সেই সন্তানদের, যাদের বাবা কিংবা মা সত্য ছেড়ে চলে গিয়েছে। আমাদের তাদের উৎসাহিত করা উচিত এবং তাদের প্রশংসা করা উচিত। যখন বোন মারিয়ার স্বামী সমাজচ্যুত হন এবং তাকে ও তার সন্তানদের ছেড়ে চলে যান, তখন মারিয়া ভাই-বোনদের কাছ থেকে অনেক সাহায্য লাভ করেন। বোন বলেন: “কিছু ভাই-বোন বাড়িতে এসে আমাদের জন্য রান্না করত আর সন্তানদের সঙ্গে অধ্যয়ন করার ক্ষেত্রে আমাকে সাহায্য করত। তারা আমার কষ্ট বুঝতে পারত এবং আমার সঙ্গে কাঁদত। যখন লোকেরা আমার সম্বন্ধে মিথ্যা কথা ছড়াত, তখন তারা আমার হয়ে কথা বলত। সত্যিই, তারা আমাকে অনেক উৎসাহিত করেছিল!”—রোমীয় ১২:১৩, ১৫.
প্রহরীদুর্গ ৯০ ৯/১ ২২ অনু. ২০, ইংরেজি
আপনি কি আপনার সর্বোত্তমটা করছেন?
২০ প্রাচীনগোষ্ঠীকে এটা বুঝতে হবে যে, যখন কোনো প্রাচীন অথবা পরিচারক দাসের পদ চলে যায়, তখন তিনি অনেক চাপ অনুভব করতে পারেন, এমনকী সেইসময়ও, যখন সেই পদ তিনি নিজে থেকে ছেড়ে দেন। যদি সেই ভাইকে সমাজচ্যুত করা না হয়ে থাকে এবং প্রাচীনেরা দেখেন যে, তিনি হতাশার মধ্যে রয়েছেন, তা হলে তারা সেই ভাইকে প্রেমের সঙ্গে আধ্যাত্মিক সাহায্য করবেন। (১ থিষলনীকীয় ৫:১৪) তারা তাকে এটা বোঝানোর চেষ্টা করবেন যে, মণ্ডলীতে তার প্রয়োজন রয়েছে। সেই ভাইকে যদি পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে এবং তিনি নম্র ও কৃতজ্ঞ হন, তা হল তাকে অল্প সময়ের মধ্যেই মণ্ডলীতে আবারও বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়।
অমূল্য রত্ন
প্রহরীদুর্গ ৯৪ ১০/১ ৩২, ইংরেজি
সদয়ভাবে কথা বলুন এবং অন্যদের উৎসাহিত করুন
ইয়োব এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং তার উৎসাহের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু, তার বন্ধুরা তাকে উৎসাহ দেওয়ার পরিবর্তে তাকে দোষ দিয়েছিল। তারা ইয়োবকে বলেছিল, তিনি নিশ্চয়ই কোনো ভুল করেছেন, তাই তার উপর এত সমস্যা এসেছে। (ইয়োব ৪:৮) দ্যা ইন্টারপ্রেটারস্ বাইবেল-এ লেখা আছে: “ইয়োব চেয়েছিলেন যেন কেউ তার অবস্থা বোঝে, কেউ তার জন্য সত্যিই চিন্তা করে। তবে, তিনি যা চেয়েছিলেন, তা হয়নি। এর পরিবর্তে, তাকে ধর্মীয় কথা শোনানো হয়েছিল এবং নৈতিকতার বিষয়ে পড়ানো হয়েছিল। এগুলো যে ভুল ছিল, এমনটা নয়, তবে সেইসময় এগুলো ইয়োবের কোনো কাজে আসেনি।” ইয়োব তার বন্ধুদের কথাগুলো শুনে এতটাই কষ্ট পেয়েছিলেন যে, তিনি বলেছিলেন: “তোমরা আর কতক্ষণ আমাকে বিরক্ত করবে, তোমাদের কথার মাধ্যমে আমাকে চূর্ণবিচূর্ণ করবে?”—ইয়োব ১৯:২.
আমাদের কখনোই ভাই-বোনদের সঙ্গে চিন্তাভাবনা না করেই কথা বলা উচিত নয়। আমাদের কখনোই তাদের সঙ্গে এত কড়াভাবে কথা বলা উচিত নয় যে, সেই ভাই কিংবা বোন কষ্ট পাবেন এবং যিহোবার কাছে কাঁদবেন। (তুলনা করুন, দ্বিতীয় বিবরণ ২৪:১৫.) বাইবেল আমাদের সতর্ক করে: “মরণ ও জীবন জিহ্বার অধীন; যাহারা তাহা ভালবাসে, তাহারা তাহার ফল ভোগ করিবে।”—হিতোপদেশ ১৮:২১.
নভেম্বর ২৭–ডিসেম্বর ৩
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ইয়োব ২০-২১
“একজন ব্যক্তি ধনী হোন বা গরিব, ধার্মিকতার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই”
আপনি কি “ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান্”?
১২ যিশুর বিবৃতিতে ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান হওয়াটা, নিজের জন্য বস্তুগত ধনসম্পদ সঞ্চয় করা অথবা নিজেকে বস্তুগতভাবে সমৃদ্ধশালী করার বিপরীত। তাই যিশু বলছিলেন যে, বস্তুগত ধনসম্পদ সঞ্চয় করা অথবা আমাদের যা আছে, তা উপভোগ করা আমাদের জীবনের প্রধান চিন্তার বিষয় হওয়া উচিত নয়। এর পরিবর্তে, আমাদের সম্পদকে এমনভাবে ব্যবহার করা উচিত, যাতে যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের উন্নতি হয় অথবা শক্তিশালী হয়। তা করা আমাদেরকে নিশ্চিতভাবেই ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান করবে। কেন? কারণ এটা আমাদের জন্য তাঁর কাছ থেকে অনেক আশীর্বাদ লাভ করার দ্বার খুলে দেয়। বাইবেল আমাদের বলে: “সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদই ধনবান করে, এবং তিনি তাহার সহিত মনোদুঃখ দেন না।”—হিতোপদেশ ১০:২২.
অমূল্য রত্ন
শয়তান ও তার কার্যসকলের উপর জয় লাভ
১৯ এটি আগ্রহের বিষয় যে ঈশ্বরের সেবক ইয়োবকে ‘চিন্তার’ সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছিল যা শয়তান ইলীফস্ আর সোফারের মাধ্যমে জ্ঞাপন করে। (ইয়োব ৪:১৩-১৮; ২০:২, ৩) তাই ইয়োব “মনস্তাপ” ভোগ করেন যার ফলে তিনি ‘অসংলগ্ন বাক্য’ বলেন তার মনের “ত্রাসদল” সম্বন্ধে। (ইয়োব ৬:২-৪; ৩০:১৫, ১৬) ইলীহূ শান্তভাবে ইয়োবের কথাগুলি শোনেন এবং বিষয়টিকে যিহোবার সর্ব-জ্ঞানী দৃষ্টিভঙ্গি আন্তরিকভাবে দেখতে তাকে সাহায্য করেন। ঠিক তেমনি আজকে, সমঝদার প্রাচীনরা পীড়িতদের উপর আরও “চাপ” না দিয়ে দেখান যে তারা যত্ন করেন। বরং, ইলীহূর মতো তারা ধৈর্য সহকারে তাদের কথা শোনে এবং ঈশ্বরের বাক্যের প্রশান্ত তৈল প্রয়োগ করে। (ইয়োব ৩৩:১-৩, ৭; যাকোব ৫:১৩-১৫) ফলত যে কেউ যাদের আবেগ আঘাত দ্বারা বিঘ্নিত তা বাস্তব বা ভ্রম, কিংবা ইয়োবের মত ‘নানা স্বপ্ন ও দর্শন উদ্বিগ্ন’ হোক না কেন, মণ্ডলীর মধ্যে হয়ত প্রশান্ত শাস্ত্রীয় সান্ত্বনা তারা পেতে পারে।—ইয়োব ৭:১৪; যাকোব ৪:৭.
ডিসেম্বর ৪-১০
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ইয়োব ২২-২৪
“ঈশ্বরের দৃষ্টিতে মানুষের কীই-বা মূল্য রয়েছে?”
প্রহরীদুর্গ ০৫ ৯/১৫ ২৭ অনু. ১-৩
ভুল চিন্তাভাবনা প্রতিরোধ করুন!
ঈশ্বর অত্যন্ত কঠোর এই ধারণাটা, তিনি মানুষকে উপকারী বলে গণ্য করেন না এই ধারণার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ইলীফসের তৃতীয় বক্তৃতায় এই প্রশ্ন রয়েছে: “মনুষ্য কি ঈশ্বরের উপকারী হইতে পারে? বরং বিবেচক আপনারই উপকারী হয়।” (ইয়োব ২২:২) ইলীফস ইঙ্গিত করছিলেন যে, মানুষ ঈশ্বরের উপকার করতে পারে না। একইভাবে, বিল্দদ যুক্তি দেখিয়েছিলেন: “ঈশ্বরের কাছে মর্ত্ত্য কেমন করিয়া ধার্ম্মিক হইবে? অবলার সন্তান কেমন করিয়া বিশুদ্ধ হইবে?” (ইয়োব ২৫:৪) সেই যুক্তির ধারা অনুসারে, ইয়োবের মতো সামান্য মরণশীল একজন মানুষ কীভাবে ঈশ্বরের সামনে এক ধার্মিক মান বজায় রাখার মতো দুঃসাহস দেখাতে পারে?
বর্তমানে কিছু ব্যক্তি নিজেদের সম্বন্ধে নেতিবাচক অনুভূতির দ্বারা জর্জরিত। পারিবারিক পটভূমি, জীবনের চাপগুলোর মুখোমুখি হওয়া অথবা জাতি বা উপজাতিগত ঘৃণার শিকার হওয়ার মতো বিষয়গুলো এই ক্ষেত্রে কারণ হতে পারে। কিন্তু শয়তান ও তার মন্দ দূতেরা একজন ব্যক্তির মনোবল চূর্ণ করেও আনন্দ পায়। যদি তারা একজন ব্যক্তিকে এইরকম মনে করার জন্য প্রভাবিত করতে পারে যে, তিনি যা কিছু করেন তার কোনোকিছুই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে না, তা হলে সেই ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবেই হতাশার দ্বারা আরও বেশি জর্জরিত হবেন। এক সময়ে, এই ধরনের একজন ব্যক্তি ভেসে চলে যেতে, এমনকি জীবন্ত ঈশ্বরের কাছ থেকে সরে পড়তে পারেন।—ইব্রীয় ২:১; ৩:১২.
বার্ধক্য ও শারীরিক সমস্যাগুলো আমাদের সীমাবদ্ধ করে ফেলতে পারে। আমাদের বয়স যখন আরও কম ছিল, আমাদের স্বাস্থ্য যখন আরও ভাল ছিল ও আমাদের আরও বেশি শক্তি ছিল, সেই তুলনায় রাজ্যের সেবায় বর্তমানে আমাদের অংশকে একেবারেই ক্ষুদ্র বলে মনে হতে পারে। এই বিষয়টা বুঝতে পারা কতই না গুরুত্বপূর্ণ যে, শয়তান ও তার মন্দ দূতেরা আমাদের মনে করাতে চায় যে আমরা যা করি, তা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে না! এই ধরনের চিন্তাভাবনাকে আমাদের অবশ্যই প্রতিরোধ করতে হবে।
কিভাবে সমস্যাগুলির মোকাবিলা করা যায় সে সম্বন্ধে একটি শিক্ষা
ঈশ্বরের প্রজ্ঞা ব্যবহার না করে নিজেদের ব্যক্তিগত অভিমত প্রকাশ করার দ্বারা তার তিন সহকারী ইয়োবকে আরও দুঃখিত করেছিল। ইলীফস এও বলে যে ‘ঈশ্বর তাঁর দাসেদের বিশ্বাস করেন না’ এবং ইয়োব ধার্মিক হোন বা নাই হোন তাতে যিহোবার কিছু এসে যায় না। (ইয়োব ৪:১৮; ২২:২, ৩) এর থেকে আরও নিরুৎসাহজনক—অথবা মিথ্যা—মন্তব্য কল্পনা করা অসম্ভব! এটা আশ্চর্যের বিষয় নয় যে যিহোবা পরে ইলীফস ও তার সহকারীদের এই ঈশ্বর নিন্দার জন্য তিরস্কার করেন। “তোমরা আমার বিষয়ে তদ্রূপ যথার্থ কথা বল নাই,” তিনি বলেন। (ইয়োব ৪২:৭) কিন্তু আরও ক্ষতিকর অভিযোগ আসতে তখনও বাকি ছিল।
প্রহরীদুর্গ ০৩ ৪/১৫ ১৪-১৫ অনু. ১০-১২
কিশোর-কিশোরীরা, যারা যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করে
১০ বাইবেলের বিবরণে যেমন দেখানো হয়েছে, শয়তান শুধু ইয়োবেরই নয় কিন্তু যারা ঈশ্বরের সেবা করে, তাদের সকলের আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে—যাদের মধ্যে তুমিও আছ। বস্তুত, মানবজাতি সম্বন্ধে যিহোবাকে শয়তান বলেছিল: “প্রাণের জন্য লোক [শুধু ইয়োবই নয় কিন্তু যেকেউ] সর্ব্বস্ব দিবে।” (ইয়োব ২:৪) এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিচার্য বিষয়ে তুমি কি তোমার ভূমিকাটি দেখতে পাচ্ছ? হিতোপদেশ ২৭:১১ পদ যেমন ইঙ্গিত দেয়, যিহোবা বলছেন যে, এমন কিছু আছে যা তুমি তাঁকে দিতে পার—তাঁকে যে-টিটকারি দেয় সেই শয়তানকে উত্তর দেওয়ার জন্য তাঁর এক ভিত্তি। কল্পনা কর যে, নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম ব্যক্তি, সর্বকালের সবচেয়ে মহান বিচার্য বিষয়ে অংশ নেওয়ার জন্য তোমাকে আহ্বান করছেন। তোমার জন্য কত দারুণ এক কাজ এবং অদ্বিতীয় সুযোগ! যিহোবা তোমার কাছ থেকে যা চাইছেন, তা কি তুমি পরিপূর্ণ করতে পার? ইয়োব পেরেছিলেন। (ইয়োব ২:৯, ১০) যিশু ও সেইসঙ্গে ইতিহাস জুড়ে অগণিত ব্যক্তি তা-ই করেছে, যাদের মধ্যে অনেক কিশোর-কিশোরীরাও ছিল। (ফিলিপীয় ২:৮; প্রকাশিত বাক্য ৬:৯) তুমিও তা-ই করতে পার। কিন্তু, একটা বিষয়ে নিশ্চিত থাক যে, এই বিষয়ে কোনো নিরপেক্ষ অবস্থান নেই। তোমার কাজের মাধ্যমে তুমি দেখাবে যে, হয় তুমি শয়তানের টিটকারিতে নয়তোবা যিহোবার উত্তরে সমর্থন করছ। তুমি কোনটাকে সমর্থন করা বেছে নেবে?
যিহোবা তোমার জন্য চিন্তা করেন!
১১ তুমি কোনটা বেছে নেবে, সেটা কি যিহোবার কাছে আসলেই কোনো ব্যাপার? শয়তানকে যাতে তিনি যথেষ্ট উত্তর দিতে পারেন, সেইজন্য ইতিমধ্যেই কি অনেক ব্যক্তি তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকেনি? এটা ঠিক যে, কোনো ব্যক্তি প্রেমের কারণে যিহোবার সেবা করে না, দিয়াবলের এই দাবি ইতিমধ্যেই মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তবুও, যিহোবা চান যেন তুমি সার্বভৌমত্বের বিচার্য বিষয়ের ক্ষেত্রে তাঁর পক্ষ নাও কারণ একজন ব্যক্তি হিসেবে তিনি তোমার জন্য চিন্তা করেন। যিশু বলেছিলেন: “এই ক্ষুদ্রগণের মধ্যে এক জনও যে বিনষ্ট হয়, তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার এমন ইচ্ছা নয়।”—মথি ১৮:১৪.
১২ স্পষ্টতই, যিহোবা তোমার বেছে নেওয়ার পথ সম্বন্ধে আগ্রহী। আরও গুরুত্বপূর্ণ হল তিনি এর দ্বারা প্রভাবিত হন। বাইবেল স্পষ্ট করে যে, যিহোবার গভীর অনুভূতি রয়েছে, যা মানুষের ভাল বা খারাপ কাজের দ্বারা উদ্দীপিত হয়ে ওঠে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইস্রায়েলীয়রা যখন বার বার বিদ্রোহ করেছিল, তখন যিহোবা “অসন্তুষ্ট” হয়েছিলেন। (গীতসংহিতা ৭৮:৪০, ৪১) নোহের দিনে জলপ্লাবনের আগে যখন “মনুষ্যের দুষ্টতা বড়” হয়, তখন যিহোবা “মনঃপীড়া পাইলেন।” (আদিপুস্তক ৬:৫, ৬) এর অর্থ কী, তা চিন্তা কর। তুমি যদি কোনো খারাপ পথ বেছে নাও, তা হলে তুমি তোমার সৃষ্টিকর্তাকে দুঃখ দিতে পার। এর অর্থ এই নয় যে, ঈশ্বর দুর্বল বা আবেগের দ্বারা চালিত হন। পরিবর্তে, তিনি তোমাকে ভালবাসেন এবং তোমার মঙ্গলের জন্য চিন্তা করেন। অন্যদিকে, তুমি যখন সঠিক কাজ কর, তখন যিহোবার হৃদয় আনন্দিত হয়। তিনি শুধু শয়তানকে আরও উত্তর দিতে পারেন বলেই নয় কিন্তু তিনি এখন তোমার পুরস্কারদাতা হতে পারেন বলেও সুখী। আর তা তিনি হতেও চান। (ইব্রীয় ১১:৬) যিহোবা ঈশ্বরের মতো কত প্রেমময় একজন পিতাই না তোমার রয়েছে!
অমূল্য রত্ন
আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলোকে আপনার সৃষ্টিকর্তার গৌরব করায় ব্যবহার করুন
যিহোবা যেভাবে নিখিলবিশ্বের সৃষ্টি সম্পাদন করেছিলেন, তা বিবেচনা করুন। “সন্ধ্যা ও প্রাতঃকাল হইলে” কথাগুলোর দ্বারা যিহোবা সৃষ্টির পরবর্তী সময়কালকে যথাযথভাবে নিরূপণ করেছিলেন। (আদিপুস্তক ১:৫, ৮, ১৩, ১৯, ২৩, ৩১) প্রত্যেক সৃষ্টির সময়কালে তিনি সেই দিনের জন্য তাঁর লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য সম্বন্ধে ভালভাবেই জানতেন। আর ঈশ্বর বিষয়গুলো সৃষ্টি করার জন্য তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করেছিলেন। (প্রকাশিত বাক্য ৪:১১) “[যিহোবা] যাহা ইচ্ছা, তাহাই করেন,” কুলপতি ইয়োব বলেছিলেন। (ইয়োব ২৩:১৩) ‘আপনার নির্ম্মিত বস্তু সকল’ দেখা এবং সেগুলো “অতি উত্তম” বলে ঘোষণা করা যিহোবার জন্য নিশ্চয়ই কত সন্তোষজনকই না হয়েছিল!—আদিপুস্তক ১:৩১.
আমাদের লক্ষ্যগুলোও যদি বাস্তবে পরিণত হতে হয়, তা হলে আমাদেরও সেগুলোতে পৌঁছানোর এক প্রবল আকাঙ্ক্ষা আবশ্যক। কী আমাদের সেই ধরনের এক আকুল আকাঙ্ক্ষা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে? এমনকি যখন পৃথিবী ঘোর ও শূন্য ছিল, তখনও যিহোবা এর চূড়ান্ত ফল কী হবে, তা আগেই জানতে পারতেন—মহাশূন্যে এক চমৎকার রত্ন, যা তাঁর গৌরব ও সম্মান নিয়ে আসে। একইভাবে, যা কিছু করার জন্য আমরা সংকল্প করি, সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর ফলাফল ও উপকারগুলো নিয়ে ধ্যান করার দ্বারা, আমাদের সম্পাদনের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধি করা যেতে পারে। ১৯ বছরের টোনির সেই অভিজ্ঞতাই হয়েছিল। পূর্ব ইউরোপে যিহোবার সাক্ষিদের একটা শাখা অফিস পরিদর্শনের বিষয়ে তার প্রথম অনুভূতির কথা সে কখনও ভুলে যায়নি। সেই পরিদর্শনের পর থেকে টোনির মনে কেবল একটা চিন্তাই ঘুরপাক খেয়েছিল যে, ‘এই ধরনের এক জায়গায় থাকা ও সেবা করার অনুভূতি কেমন হবে?’ টোনি কখনও এর সম্ভাবনার বিষয়ে চিন্তা করা বন্ধ করেনি আর সে এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য অবিরত চেষ্টা করে গিয়েছে। কয়েক বছর পরে শাখা অফিসে সেবা করার জন্য তার আবেদন পত্র যখন গৃহীত হয়েছিল, তখন সে কতই না আনন্দিত হয়েছিল!
ডিসেম্বর ১১-১৭
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ইয়োব ২৫-২৭
“বিশ্বস্ত থাকার জন্য সিদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন নেই”
অন্তর্দৃষ্টি-১ ১২১০ অনু. ৪, ইংরেজি
বিশ্বস্ততা
ইয়োব। ইয়োবের বিষয়ে লেখা আছে: “তিনি সমস্ত বিষয়ে সৎ ও বিশ্বস্ত ছিলেন। তিনি ঈশ্বরকে ভয় করতেন এবং মন্দতা থেকে দূরে থাকতেন।” (ইয়োব ১:১) কিন্তু, শয়তান ইয়োবের উপর এই দোষারোপ করেছিল যে, তিনি নিজের স্বার্থের কারণে ঈশ্বরকে উপাসনা করেন, তার সেবা শুধুমাত্র লোকদেখানো। ঈশ্বর শয়তানকে ইয়োবের উপর পরীক্ষা নিয়ে আসার অনুমতি দিয়েছিলেন। শয়তান ইয়োবের সমস্ত সম্পত্তি কেড়ে নিয়েছিল এবং তার সন্তানদের হত্যা করিয়েছিল। তারপরও, ইয়োব বিশ্বস্ত ছিলেন। (ইয়োব ১:৬–২:৩) এরপর, শয়তান ইয়োবের উপর আরেক বার দোষারোপ করেছিল যে, তিনি নিজেকে বাঁচানোর জন্য যেকোনো কিছু করতে পারেন। (ইয়োব ২:৪, ৫) ইয়োবের মাথা থেকে পা পর্যন্ত এক যন্ত্রণাদায়ক ঘায়ে ভরে গিয়েছিল। তার স্ত্রী তাকে আঘাত দিয়ে কথা বলেছিলেন। আর তার বন্ধুরা তাকে অনেক কথা শুনিয়েছিল এবং ঈশ্বরের মানের বিষয়ে মিথ্যা কথা বলেছিল। এত কিছু সহ্য করার পরও, ইয়োব বিশ্বস্ত ছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমি যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন আমার বিশ্বস্ততা পরিত্যাগ করব না! আমি আমার সততা বজায় রাখব, কখনো সেটা পরিত্যাগ করব না। আমি যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন আমার হৃদয় আমাকে দোষী সাব্যস্ত করবে না।” (ইয়োব ২৭:৫, ৬) ইয়োব শেষ পর্যন্ত বিশ্বস্ত ছিলেন আর এর ফলে, শয়তান মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছিল।
আপনার বিশ্বস্ততা বজায় রাখুন!
৩ ঈশ্বরের দাসেরা কীভাবে বিশ্বস্ততা দেখায়? তারা যিহোবার প্রতি সম্পূর্ণ হৃদয় দিয়ে অটল প্রেম দেখানোর মাধ্যমে বিশ্বস্ততা দেখায়। আর এর ফলে তারা সবসময় এমন কাজগুলো করে, যেগুলো তাঁকে খুশি করে। বাইবেলে যেভাবে বিশ্বস্ততা শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলোর কয়েকটা উদাহরণ বিবেচনা করুন। “বিশ্বস্ততা”-র জন্য বাইবেলে ব্যবহৃত শব্দের একটা মৌলিক অর্থ হল: সম্পূর্ণ বা নিখুঁত। উদাহরণ স্বরূপ, ইস্রায়েলীয়রা যিহোবার উদ্দেশে পশু বলি উৎসর্গ করত এবং ব্যবস্থা অনুযায়ী সেই পশুগুলোকে নির্দোষ বা নিখুঁত হতে হতো। (লেবীয়. ২২:২১, ২২) ঈশ্বরের লোকেদের কোনো খোঁড়া, বধির অথবা অন্ধ পশু উৎসর্গ করার অনুমতি ছিল না; আর তারা কোনো অসুস্থ পশুও উৎসর্গ করতে পারত না। যিহোবার কাছে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যেন সেই পশু সম্পূর্ণ বা নিখুঁত হয়। (মালাখি ১:৬-৯) আমরা এটা বুঝতে পারি যে, কেন যিহোবা নিখুঁত অবস্থা বা সম্পূর্ণতাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখেন। আমরা যখন কোনো কিছু কিনি, হতে পারে কোনো ফল, বই অথবা কোনো সরঞ্জাম, তখন আমরা চাই না যে, সেটাতে কোনো খুঁত থাকুক অথবা সেটার কোনো অংশ অসম্পূর্ণ থাকুক। আমরা এমন কিছু কিনতে চাই, যেটা সম্পূর্ণ বা নিখুঁত। যিহোবার প্রতি আমাদের প্রেম ও আনুগত্যের বিষয়টা যখন আসে, তখন যিহোবা একইরকম বোধ করেন। সেটাকে অবশ্যই সম্পূর্ণ বা নিখুঁত হতে হবে।
৪ বিশ্বস্ততা বজায় রাখার জন্য আমাদের কি সিদ্ধ হতে হবে? আমরা হয়তো মনে করতে পারি, আমরা তো অনেক ভুল করি, তা হলে আমরা কীভাবে বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে পারব। কিন্তু লক্ষ করুন, বিশ্বস্ততা বজায় রাখার অর্থ এই নয় যে, আমাদের সিদ্ধ হতে হবে। এর দুটো কারণ বিবেচনা করুন। প্রথমত, যিহোবা আমাদের ভুলগুলোর উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেন না। তাঁর বাক্য আমাদের বলে: “হে সদাপ্রভু, তুমি যদি অপরাধ সকল ধর, তবে, হে প্রভু, কে দাঁড়াইতে পারিবে?” (গীত. ১৩০:৩) তিনি জানেন যে, আমরা অসিদ্ধ, পাপী মানুষ আর তিনি আমাদের উদারভাবে ক্ষমা করেন। (গীত. ৮৬:৫) দ্বিতীয়ত, যিহোবা আমাদের সীমাবদ্ধতা সম্বন্ধে জানেন এবং তিনি আমাদের কাছ থেকে সাধ্যের অতিরিক্ত কিছু আশা করেন না। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১০৩:১২-১৪.) তা হলে, কোন অর্থে আমরা তাঁর দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ বা নিখুঁত হতে পারি?
৫ যিহোবার দাসদের জন্য বিশ্বস্ত থাকার চাবিকাঠি হচ্ছে প্রেম। ঈশ্বরের প্রতি আমাদের প্রেম এবং আমাদের স্বর্গীয় পিতা হিসেবে তাঁর প্রতি আমাদের আনুগত্য যেন অবশ্যই সম্পূর্ণ বা নিখুঁত হয়। যদি আমাদের মধ্যে এইরকম প্রেম বজায় থাকে আর তা এমনকী পরীক্ষার সময়েও, তা হলে আমরা দেখাব যে, আমরা বিশ্বস্ত। (১ বংশা. ২৮:৯; মথি ২২:৩৭) শুরুতে বলা সেই তিন জন সাক্ষির বিষয়ে আবারও বিবেচনা করুন। কেন তারা সেই পদক্ষেপ নিয়েছিল? সেই অল্পবয়সি মেয়েটি কি স্কুলে মজা করাকে ঘৃণা করে অথবা সেই অল্পবয়সি ছেলেটি কি প্রচারে গিয়ে লজ্জার মুখে পড়তে চেয়েছিল কিংবা সেই ব্যক্তি যার পরিবার ছিল, তিনি তার চাকরি হারাতে চেয়েছিলেন? অবশ্যই না। এর পরিবর্তে, তারা যিহোবার মান সম্বন্ধে জানত এবং তাদের স্বর্গীয় পিতা কোন বিষয়ে খুশি হন, সেই বিষয়ে তারা তাদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রেখেছিল। যিহোবার প্রতি ভালোবাসা তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ে তাঁর ইচ্ছাকে প্রথমে রাখতে অনুপ্রাণিত করেছিল। এভাবে তারা তাদের বিশ্বস্ততার প্রমাণ দিয়েছিল।
অমূল্য রত্ন
ঈশ্বরের বাক্যের সঙ্গে মিল রেখে আমরা সুসংগঠিত
৩ আমরা যখন যিহোবার বিভিন্ন সৃষ্টির দিকে তাকাই, তখন আমরা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি, তিনি হলেন শৃঙ্খলার ঈশ্বর। তিনি “প্রজ্ঞা দ্বারা পৃথিবীর মূল স্থাপন করিয়াছেন, বুদ্ধি দ্বারা আকাশমণ্ডল অটল করিয়াছেন।” (হিতো. ৩:১৯) যিহোবার বিভিন্ন সৃষ্টি সম্বন্ধে আমরা অনেক কিছুই জানি না। আসলে, “তাঁহার বিষয়ে কাকলীমাত্র শুনা যায়।” (ইয়োব ২৬:১৪) তবে, আমাদের নিখিলবিশ্ব সম্বন্ধে আমরা যে-সামান্য বিষয় জানি, তা থেকেই এটা স্পষ্ট হয়, এই নিখিলবিশ্ব অত্যন্ত সুসংগঠিত। (গীত. ৮:৩, ৪) মহাশূন্যে কোটি কোটি নক্ষত্র সুশৃঙ্খল উপায়ে প্রদক্ষিণ করছে। আর আমাদের সৌরজগতের গ্রহগুলো যেভাবে সূর্যের চারদিকে প্রদক্ষিণ করছে, সেই বিষয়ে একটু চিন্তা করে দেখুন। যিহোবা গ্রহ-নক্ষত্রগুলোকে যেভাবে সংগঠিত করেছেন, সেটার কারণেই এই বিস্ময়কর শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভবপর হয়েছে। তিনি কীভাবে “বুদ্ধি দ্বারা আকাশমণ্ডল” ও পৃথিবী “নির্ম্মাণ করিয়াছেন,” সেই বিষয়ে আমরা যখন চিন্তা করি, তখন আমরা তাঁর প্রশংসা ও উপাসনা করতে চাই এবং তাঁর প্রতি অনুগত থাকতে চাই।—গীত. ১৩৬:১, ৫-৯.
ডিসেম্বর ১৮-২৪
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ইয়োব ২৮-২৯
“আপনি কি ইয়োবের মতো এক সুনাম অর্জন করেছেন?”
প্রহরীদুর্গ ০২ ৫/১৫ ২২ অনু. ১৯
যাদের প্রয়োজন তাদের প্রতি প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখান
১৯ বাইবেলের যে-ঘটনাগুলো আমরা আলোচনা করেছি, তা এই বিষয়টার ওপরও জোর দেয় যে, প্রেমপূর্ণ-দয়া তাদের প্রতিও দেখানো দরকার যাদের প্রয়োজন রয়েছে কিন্তু তা পূরণ করার মতো ক্ষমতা নেই। অব্রাহামের বংশ রক্ষার জন্য বথূয়েলের সাহায্যের দরকার ছিল। যাকোবের মৃতদেহ কনানে নিয়ে যাওয়ার জন্য যোষেফের সাহায্যের দরকার ছিল। আর উত্তরাধিকার জন্ম দেওয়ার জন্য নয়মীর রূতের সাহায্যের দরকার ছিল। অব্রাহাম, যাকোব বা নয়মী কেউই সাহায্য ছাড়া এই প্রয়োজনগুলো পূরণ করতে পারতেন না। একইভাবে, আজকে বিশেষ করে যাদের প্রয়োজন, তাদের প্রতি প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখানো হয়। (হিতোপদেশ ১৯:১৭) কুলপতি ইয়োবকে অনুকরণ করা উচিত, যিনি ‘আর্ত্তনাদকারী দুঃখী, এবং পিতৃহীন ও অসহায়দের’ ও সেইসঙ্গে ‘নষ্টকল্পের’ প্রতি মনোযোগ দিয়েছিলেন। এ ছাড়া ইয়োব ‘বিধবার চিত্তকে আনন্দিত’ করেছিলেন এবং ‘অন্ধের চক্ষু ও খঞ্জের চরণ’ হয়েছিলেন।—ইয়োব ২৯:১২-১৫.
অন্তর্দৃষ্টি-১ ৬৫৫ অনু. ১০, ইংরেজি
পোশাক-আশাক
বাইবেলে অনেকসময় একজন ব্যক্তির পরিচয় এবং কাজগুলো বোঝানোর জন্য পোশাক-আশাক ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন, বর্তমানে একজন ব্যক্তির ড্রেস বা জামাকাপড় অথবা ইউনিফর্ম দেখে বোঝা যায়, তিনি কোন সংগঠনের অংশ কিংবা কোন আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। একইভাবে, বাইবেলে যখন পোশাক-আশাকের বিষয়ে বলা হয়, তখন তা কখনো কখনো একজন ব্যক্তির পরিচয়কে বোঝায়। তিনি কী বিশ্বাস করেন এবং যা বিশ্বাস করেন, সেই অনুযায়ী কাজ করেন কি না, সেটার উপরও তার পরিচয় নির্ভর করে।
প্রহরীদুর্গ ০৯ ২/১ ১৫ অনু. ৩-৪, ইংরেজি
নাম বলতে কী বোঝায়?
জন্ম হওয়ার পর আমাদের নাম কী হবে, সেটা আমাদের হাতে থাকে না। তবে, পরে গিয়ে আমরা কেমন নাম অর্জন করব, এটা আমাদের হাতে থাকে। (হিতো ২০:১১) একটু চিন্তা করুন, ‘যিশু অথবা তাঁর প্রেরিতেরা থাকলে আমাকে কী নাম দিতেন? কোন নামটা আমার জন্য একেবারে উপযুক্ত হত, যেটা থেকে বোঝা যেত যে, আমার মধ্যে কোন বিশেষ গুণ রয়েছে অথবা আমি কীসের জন্য পরিচিত?’
এই প্রশ্ন নিয়ে চিন্তা করা প্রয়োজন কারণ প্রজ্ঞাবান রাজা শলোমন লিখেছিলেন: “প্রচুর ধন অপেক্ষা সুখ্যাতি বরণীয়।” (হিতো ২২:১) সমাজে সুখ্যাতি বা এক সুনাম থাকা উপকারী। তবে, ঈশ্বরের চোখে এক সুনাম অর্জন করা আরও গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই নাম চিরকালের জন্য বজায় থাকবে। ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছেন, যারা তাঁকে ভয় করে, তিনি তাদের নাম ‘একখানি স্মরণার্থক পুস্তকে’ লিখে রাখবেন। আর ভবিষ্যতে তিনি তাদের অনন্তজীবন দেবেন।—মালাখি ৩:১৬; প্রকা ৩:৫; ২০:১২-১৫.
অমূল্য রত্ন
সচেতন থাক! ০০ জুলাই-সেপ্টেম্বর ২৬ অনু. ৩
হাসি—আপনার মন ও শরীরের জন্য ভাল!
এখন প্রশ্ন আসে যে হাসি কি সত্যিই বিশেষ কিছু? আপনার কি সেই সময়ের কথা মনে পড়ে যখন কেউ একজন আপনার দিকে তাকিয়ে হেসেছিল বলে আপনার মনে হয়েছিল যে আপনার সমস্ত দুশ্চিন্তা চলে গিয়ে মন একেবারে হালকা হয়ে গেছে? বা কেউ মুখ গম্ভীর করে রাখার ফলে আপনি ঘাবড়ে গিয়েছিলেন আর আপনার মনে হয়েছিল সে আপনাকে অবজ্ঞা করছে? হ্যাঁ, হাসি সত্যিই বিশেষ কিছু। যিনি হাসছেন এবং যার দিকে তাকিয়ে হাসা হচ্ছে তাদের দুজনের ওপরই এটা ছাপ ফেলে। ইয়োব, যার কথা বাইবেলে বলা আছে, তিনি তার শত্রুদের সম্বন্ধে বলেছিলেন: “আমি তাহাদের প্রতি হাসিলে তাহারা বিশ্বাস করিত না, তাহারা আমার মুখের দীপ্তি নিস্তেজ করিত না।” (ইয়োব ২৯:২৪) এখানে ইয়োবের মুখের “দীপ্তি” বলতে হয়তো তার মনের আনন্দ বা হাসিমাখা মুখকে বুঝিয়েছে।
ডিসেম্বর ২৫-৩১
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ইয়োব ৩০-৩১
“ইয়োব কীভাবে তার আচার-আচরণে শুদ্ধতা বজায় রেখেছিলেন?”
অলীক বিষয়গুলো থেকে আপনার চোখ সরিয়ে নিন!
৮ সত্য খ্রিস্টানরা চক্ষুর ও মাংসের অভিলাষ থেকে মুক্ত নয়। তাই, ঈশ্বরের বাক্য আমাদেরকে আমরা যা দেখি ও যে-বিষয়ের জন্য লালসা করি, সেই ক্ষেত্রে আত্মশাসন অনুশীলন করার জন্য উৎসাহিত করে। (১ করি. ৯:২৫, ২৭; পড়ুন, ১ যোহন ২:১৫-১৭.) ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তি ইয়োব ছিলেন এমন একজন, যিনি ক্রমাগত দেখার ও লালসা করার মধ্যে যে-জোরালো সম্পর্ক রয়েছে, সেই বিষয়টা স্বীকার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমি নিজ চক্ষুর সহিত নিয়ম করিয়াছি; অতএব যুবতীর প্রতি কটাক্ষপাত কেন করিব?” (ইয়োব ৩১:১) ইয়োব একজন স্ত্রীলোককে অনৈতিকভাবে স্পর্শ করাকে কেবল প্রত্যাখ্যানই করেননি কিন্তু সেইসঙ্গে তার মনে এই ধরনের চিন্তাকে এমনকী স্থানও দেননি। মনকে যে অনৈতিক চিন্তাভাবনা থেকে বিশুদ্ধ রাখতে হবে, সেই সম্বন্ধে যিশু জোর দিয়েছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “যে কেহ কোন স্ত্রীলোকের প্রতি কামভাবে দৃষ্টিপাত করে, সে তখনই মনে মনে তাহার সহিত ব্যভিচার করিল।”—মথি ৫:২৮.
প্রহরীদুর্গ ০৮ অক্টোবর-ডিসেম্বর ৩১
“শেষদশা” বিবেচনা করুন
এই ধরনের এক পথে প্রথম পদক্ষেপ নেওয়ার আগে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘এটা আমাকে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে?’ সম্ভাব্য “শেষদশা” নিয়ে চিন্তা করার জন্য একটু থামা হয়তো আপনাকে এমন কোনো পথে যাওয়া থেকে বিরত করার জন্য যথেষ্ট হতে পারে, যে-পথে যাওয়া গুরুতর পরিণতিগুলো নিয়ে আসতে পারে। যারা এই ধরনের সাইনপোস্টগুলোকে উপেক্ষা করেছে, তাদের পথে এইডস এবং অন্যান্য যৌনবাহিত রোগ, অবাঞ্ছিত গর্ভ, গর্ভপাত, সম্পর্কে ভাঙন এবং দোষী বিবেক আবর্জনার মতো পড়ে থাকতে পারে। যারা অনৈতিক বিষয়গুলোর অভ্যাস করছে, তাদের পথের শেষদশা সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। তারা “ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাইবে না।”—১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০.
প্রহরীদুর্গ ১০ ১১/১৫ ৫-৬ অনু. ১৫-১৬
অল্পবয়সিরা—ঈশ্বরের বাক্যের দ্বারা পরিচালিত হও
১৫ কখন ঈশ্বরের প্রতি তোমাদের আনুগত্য সবচেয়ে বেশি পরীক্ষিত হতে পারে বলে তোমরা মনে করো—যখন তোমরা অন্যদের সঙ্গে থাকো তখন, নাকি যখন তোমরা একা থাকো তখন? আসলে, তোমরা যখন স্কুলে বা কর্মক্ষেত্রে থাকো, তখন তোমাদের আধ্যাত্মিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সম্ভবত বেশি থাকে। তোমরা সম্ভাব্য আধ্যাত্মিক বিপদ সম্বন্ধে সতর্ক থাকো। তোমরা যখন অবসর সময় কাটাও এবং তোমাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দুর্বল থাকে, তখনই তোমাদের নৈতিক মানগুলোর ওপর আক্রমণ আসার ব্যাপারে তোমরা সবচেয়ে বেশি অরক্ষিত থাকো।
১৬ কেন তোমাদের এমনকী একা থাকাকালীন যিহোবার বাধ্য থাকতে চাওয়া উচিত? এই বিষয়টা মনে রাখবে: তোমরা হয় যিহোবাকে কষ্ট দিতে নতুবা তাঁর হৃদয়কে আনন্দিত করতে পারো। (আদি. ৬:৫, ৬; হিতো. ২৭:১১) যিহোবা তোমাদের কাজগুলো দ্বারা প্রভাবিত হন কারণ তিনি “তোমাদের জন্য চিন্তা করেন।” (১ পিতর ৫:৭) তিনি চান যেন তোমরা তাঁর কথা শোনো, যাতে তোমরা উপকার লাভ করতে পারো। (যিশা. ৪৮:১৭, ১৮) প্রাচীন ইস্রায়েলে যিহোবার কিছু দাস যখন তাঁর পরামর্শ উপেক্ষা করেছিল, তখন তারা তাঁকে অসন্তুষ্ট করেছিল বা কষ্ট দিয়েছিল। (গীত. ৭৮:৪০, ৪১) অন্যদিকে, যিহোবা ভাববাদী দানিয়েলের প্রতি গভীর স্নেহ অনুভব করেছিলেন, কারণ একজন স্বর্গদূত তাকে “মহাপ্রীতি-পাত্র” বলে অভিহিত করেছিলেন। (দানি. ১০:১১) কেন? দানিয়েল কেবল জনসমক্ষেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে একা থাকাকালীনও ঈশ্বরের প্রতি অনুগত ছিলেন।—পড়ুন, দানিয়েল ৬:১০.
অমূল্য রত্ন
প্রহরীদুর্গ ০৫ ১১/১৫ ১১ অনু. ৩
প্রেমের সঙ্গে শোনার দক্ষতা
ইয়োবের বন্ধুরা কম করে হলেও তার দশটা বক্তৃতা শুনেছিল। তারপরেও ইয়োব বলেছিলেন: “হায়, আমার কথা যদি কেউ শুনত!” (ইয়োব ৩১:৩৫, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন) কেন? কারণ তাদের শোনা তাকে কোনো সান্ত্বনাই দেয়নি। তারা ইয়োবের প্রতি কোনো চিন্তাও দেখায়নি কিংবা তার অনুভূতি বোঝারও চেষ্টা করতে চায়নি। তাদের নিশ্চয়ই সহানুভূতিশীল শ্রোতাদের মতো পরদুঃখে দুঃখিত হওয়ার মনোভাব ছিল না। কিন্তু, প্রেরিত পিতর পরামর্শ দেন: “তোমরা সকলে সমমনা, পরদুঃখে দুঃখিত, ভ্রাতৃপ্রেমিক, স্নেহবান্ ও নম্রমনা হও।” (১ পিতর ৩:৮) কীভাবে আমরা পরদুঃখে দুঃখিত হতে পারি? একটা উপায় হচ্ছে, অন্য ব্যক্তির অনুভূতির প্রতি চিন্তা দেখিয়ে এবং তাদের বোঝার চেষ্টা করে। “এতে দুঃখ পাওয়ারই কথা” অথবা “আপনাকে নিশ্চয়ই ভুল বুঝেছে,” এই ধরনের সহানুভূতিশীল মন্তব্যগুলো হচ্ছে এটা দেখানোর একটা উপায় যে, আমরা চিন্তা করি। আরেকটা উপায় হচ্ছে, ব্যক্তি যা বলছেন তা নিজের ভাষায় প্রকাশ করা, ফলে তা দেখাবে যে, তিনি যা বলেছেন তা আমরা বুঝতে পেরেছি। প্রেমের সঙ্গে শোনার অর্থ হচ্ছে শুধুমাত্র কথাগুলোর প্রতিই নয় কিন্তু সূক্ষ্মভাবে ব্যক্ত আবেগের প্রতিও মনোযোগ দেওয়া।