ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • যিহোবা হলেন “নিগূঢ়তত্ত্বপ্রকাশক”
    ২০১২ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
    • যিহোবা হলেন “নিগূঢ়তত্ত্বপ্রকাশক”

      “সত্যই তোমাদের ঈশ্বর দেবগণের ঈশ্বর, রাজাদের প্রভু ও নিগূঢ়তত্ত্বপ্রকাশক।”—দানি. ২:৪৭.

      আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

      ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে যিহোবা আমাদের কাছে কোন বিস্তারিত বিষয় প্রকাশ করেছেন?

      পশুর প্রথম ছয়টা মস্তক কী চিত্রিত করে?

      পশু এবং নবূখদ্‌নিৎসরের দেখা প্রতিমার মধ্যে আমরা কোন সম্পর্ক দেখতে পাই?

      ১, ২. যিহোবা আমাদের কাছে কী প্রকাশ করেছেন এবং কেন?

      ঈশ্বরের রাজ্য যখন মানবশাসনকে শেষ করবে, তখন কোন সরকারগুলো এই পৃথিবীর ওপর শাসনরত অবস্থায় থাকবে? আমরা এর উত্তরটা জানি—“নিগূঢ়তত্ত্বপ্রকাশক” যিহোবা ঈশ্বর আমাদের কাছে তা প্রকাশ করেছেন। ভাববাদী দানিয়েল এবং প্রেরিত যোহনের লেখাগুলোর মাধ্যমে তিনি আমাদেরকে সেই সরকারগুলোর পরিচয় সম্বন্ধে বুঝতে সমর্থ করেছেন।

      ২ যিহোবা সেই ব্যক্তিদের কাছে ধারাবাহিকভাবে এমন কয়েকটা দর্শন প্রকাশ করেছেন, যেগুলো একটার পর একটা পশুর আবির্ভাবের সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া, তিনি দানিয়েলকে দর্শনমূলক একটা স্বপ্নের অর্থ জানিয়েছিলেন, যেখানে এক প্রকাণ্ড ধাতব প্রতিমা সম্বন্ধে বর্ণনা করা হয়েছিল। যিহোবা আমাদের উপকারের জন্যই সেই বিবরণগুলো বাইবেলে লিপিবদ্ধ এবং সংরক্ষণ করেছেন। (রোমীয় ১৫:৪) তিনি তা করেছেন, যেন তাঁর রাজ্য যে শীঘ্র সমস্ত মানবসরকারকে চূর্ণ করে দেবে, সেই বিষয়ে আমাদের আশা শক্তিশালী হয়।—দানি. ২:৪৪.

      ৩. ভবিষ্যদ্‌বাণী সঠিকভাবে বুঝতে হলে, প্রথমে আমাদের কী বুঝতে হবে এবং কেন?

      ৩ একত্রে বিবেচনা করলে, দানিয়েল এবং যোহনের বিবরণ শুধুমাত্র আট জন রাজার বা আটটা মানবশাসনের পরিচয়ই তুলে ধরে না কিন্তু সেইসঙ্গে ওই শক্তিগুলো কীভাবে পর্যায়ক্রমে আবির্ভূত হবে, সেই সম্বন্ধেও জানায়। কিন্তু, আমরা কেবল তখনই সেই ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো সঠিকভাবে বুঝতে পারব, যদি আমরা বাইবেলে লিপিবদ্ধ একেবারে প্রথম ভবিষ্যদ্‌বাণীর অর্থ বুঝতে পারি। কেন? কারণ সেই ভবিষ্যদ্‌বাণীর পরিপূর্ণতাই হল বাইবেলের সম্মিলিত মূলভাব। এক অর্থে, এটাই হচ্ছে সেই সূত্র, যেটার মধ্যে অন্যান্য সমস্ত ভবিষ্যদ্‌বাণী ঝুলছে।

      সর্পের বংশ এবং পশু

      ৪. কাদের নিয়ে নারীর বংশ গঠিত এবং সেই বংশ কী করবে?

      ৪ এদনে বিদ্রোহের পর পরই, যিহোবা এই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, ‘নারী’ এক ‘বংশ’ উৎপন্ন করবে।a (পড়ুন, আদিপুস্তক ৩:১৫.) সেই বংশ পরিশেষে সর্পের অর্থাৎ শয়তানের মস্তক চূর্ণ করবেন। পরবর্তী সময়ে, যিহোবা প্রকাশ করেছিলেন যে, সেই বংশ অব্রাহামের মাধ্যমে এবং ইস্রায়েল জাতির মধ্য থেকে আসবেন ও সেইসঙ্গে একজন যিহুদি এবং রাজা দায়ূদের একজন বংশধর হবেন। (আদি. ২২:১৫-১৮; ৪৯:১০; গীত. ৮৯:৩, ৪; লূক ১:৩০-৩৩) খ্রিস্ট যিশু সেই বংশের মুখ্য অংশ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিলেন। (গালা. ৩:১৬) আর সেই বংশের গৌণ অংশ খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর আত্মায় অভিষিক্ত সদস্যদের নিয়ে গঠিত। (গালা. ৩:২৬-২৯) যিশু এবং সেই অভিষিক্ত ব্যক্তিরা একসঙ্গে ঈশ্বরের রাজ্য গঠন করে, যেটার মাধ্যমে ঈশ্বর শয়তানকে দলিত করবেন।—লূক ১২:৩২; রোমীয় ১৬:২০.

      ৫, ৬. (ক) দানিয়েল এবং যোহন কয়টা বিশ্বশক্তিকে শনাক্ত করে? (খ) প্রকাশিত বাক্য বইয়ে উল্লেখিত পশুর মস্তক কোন বিষয়কে চিত্রিত করে?

      ৫ এদনে দেওয়া প্রথম ভবিষ্যদ্‌বাণীতে এও বলা হয়েছিল যে, শয়তান এক ‘বংশ’ উৎপন্ন করবে। তার বংশ নারীর বংশের প্রতি শত্রুতা বা ঘৃণা প্রকাশ করবে। কাদের নিয়ে সর্পের বংশ গঠিত? সেইসমস্ত লোকেদের নিয়ে, যারা শয়তানের মতোই ঈশ্বরের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে এবং ঈশ্বরের লোকেদের বিরোধিতা করে। ইতিহাসজুড়ে শয়তান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অথবা রাজ্যের মাধ্যমে তার বংশকে সংগঠিত করেছে। (লূক ৪:৫, ৬) কিন্তু, তুলনামূলকভাবে খুব কম সংখ্যক মানবরাজ্যই ঈশ্বরের লোকেদের ওপর জোরালো প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে, তা তারা ইস্রায়েল জাতি অথবা অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের নিয়ে গঠিত মণ্ডলী, যা-ই হোক না কেন। কেন এই বিষয়টা তাৎপর্যপূর্ণ? কারণ এটা ব্যাখ্যা করে যে, দানিয়েল ও যোহনের দর্শনগুলো কেন সর্বমোট মাত্র আটটা বিশ্বশক্তি সম্বন্ধে বর্ণনা করে।

      ৬ প্রথম শতাব্দীর শেষের দিকে, পুনরুত্থিত যিশু প্রেরিত যোহনকে আশ্চর্যজনক কয়েকটা ধারাবাহিক দর্শন দেখিয়েছিলেন। (প্রকা. ১:১) সেগুলোর মধ্যে একটা দর্শনে যোহন দিয়াবলকে, যাকে নাগ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে, এক বিশাল সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলেন। (পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ১২:১৮–১৩:১, ২.) এ ছাড়া, যোহন সমুদ্র থেকে এক অদ্ভুত পশুকে উঠতে এবং দিয়াবলের কাছ থেকে মহৎ কর্তৃত্ব লাভ করতে দেখেন। পরবর্তী সময়ে, একজন স্বর্গদূত যোহনকে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, একটা সিন্দূরবর্ণ পশু, যেটা প্রকাশিত বাক্য ১৩:১ পদে বর্ণিত পশুর এক প্রতিমা, সেটার সপ্ত মস্তক “সপ্ত রাজা” বা সরকারকে চিত্রিত করে। (প্রকা. ১৩:১৪, ১৫; ১৭:৩, ৯, ১০) যোহন যে-সময়ে এগুলো লিখছিলেন, সেই সময়ের মধ্যে এদের পাঁচ জন পতিত হয়ে গিয়েছিল আর এক জন ক্ষমতায় ছিল এবং আরেকজন সেই সময় “পর্যন্ত আইসে নাই।” সেই রাজ্যগুলোর বা বিশ্বশক্তিগুলোর পরিচয় কী? আসুন আমরা প্রকাশিত বাক্য বইয়ে বর্ণিত পশুর প্রত্যেকটা মস্তক সম্বন্ধে বিবেচনা করে দেখি। এ ছাড়া, আমরা দেখব যে, দানিয়েলের লেখাগুলো কীভাবে আমাদেরকে সেই রাজ্যগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটা সম্বন্ধে, এমনকী সেগুলো অস্তিত্বে আসার কয়েক শতাব্দী আগেই, গভীর অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করেছিল।

      মিশর এবং অশূর—প্রথম দুই মস্তক

      ৭. প্রথম মস্তক কোন শক্তিকে চিত্রিত করে এবং কেন?

      ৭ পশুর প্রথম মস্তক মিশরকে চিত্রিত করে। কেন? কারণ মিশরই ছিল প্রথম মহাশক্তি, যা ঈশ্বরের লোকেদের প্রতি শত্রুতা প্রদর্শন করেছিল। অব্রাহাম, যার কাছ থেকে নারীর প্রতিজ্ঞাত বংশ আসার কথা, তার বংশধরেরা মিশরে বৃদ্ধি পেয়ে অসংখ্য হয়ে উঠেছিল। এরপর, মিশরীয়রা ইস্রায়েলীয়দের নিপীড়ন করেছিল। বংশ আবির্ভূত হওয়ার আগেই শয়তান ঈশ্বরের লোকদের একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিল। কীভাবে? সমস্ত ইস্রায়েলীয় পুত্রসন্তানকে হত্যা করার জন্য ফরৌণকে প্ররোচিত করার মাধ্যমে। যিহোবা সেই প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়েছিলেন এবং তাঁর লোকেদেরকে মিশরের দাসত্ব থেকে মুক্ত করেছিলেন। (যাত্রা. ১:১৫-২০; ১৪:১৩) পরবর্তী সময়ে, তিনি ইস্রায়েলীয়দেরকে প্রতিজ্ঞাত দেশ দিয়েছিলেন।

      ৮. দ্বিতীয় মস্তকের পরিচয় কী এবং এটা কী করার প্রচেষ্টা করেছিল?

      ৮ পশুর দ্বিতীয় মস্তক অশূরকে চিত্রিত করে। এই শক্তিশালী রাজ্যও ঈশ্বরের লোকেদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এটা ঠিক যে, প্রতিমাপূজা এবং বিদ্রোহের কারণে দশ বংশের রাজ্যকে শাস্তি দেওয়ার জন্য যিহোবা অশূরকে তাঁর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু, পরে অশূর যিরূশালেমকেও আক্রমণ করেছিল। সম্ভবত, শয়তানের লক্ষ্য ছিল সেই রাজবংশের ধারাকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া, যেখান থেকে অবশেষে যিশু আসার কথা। কিন্তু, সেই আক্রমণ যিহোবার উদ্দেশ্যের অংশ ছিল না আর তাই তিনি আক্রমণকারীদের ধ্বংস করে দেওয়ার মাধ্যমে তাঁর বিশ্বস্ত লোকেদের অলৌকিকভাবে রক্ষা করেছিলেন।—২ রাজা. ১৯:৩২-৩৫; যিশা. ১০:৫, ৬, ১২-১৫.

      বাবিল—তৃতীয় মস্তক

      ৯, ১০. (ক) যিহোবা বাবিলীয়দের কী করার জন্য অনুমোদন করেছিলেন? (খ) ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হওয়ার জন্য কোন বিষয়গুলো ঘটার প্রয়োজন ছিল?

      ৯ যোহন যে-তৃতীয় মস্তক দেখেছিলেন, তা সেই রাজ্যকে চিত্রিত করে, যেটার রাজধানী ছিল বাবিল। যিহোবা যিরূশালেমকে পরাজিত করার এবং তাঁর লোকেদের বন্দিত্বে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাবিলীয়দের অনুমোদন করেছিলেন। কিন্তু, এইরকম অবমাননা ঘটতে দেওয়ার আগেই যিহোবা বিদ্রোহী ইস্রায়েলীয়দের সাবধান করে দিয়েছিলেন যে, তাদের ওপর এইরকম মর্মান্তিক পরিণতি আসতে যাচ্ছে। (২ রাজা. ২০:১৬-১৮) তিনি ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন যে, মানব রাজাদের বংশধররা, যাদের বিষয়ে বলা হয়েছিল যে, তারা যিরূশালেমে “সদাপ্রভুর সিংহাসনে” বসবে, তাদেরকে অপসারণ করা হবে। (১ বংশা. ২৯:২৩) তবে, যিহোবা এও প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, রাজা দায়ূদের বংশের একজন, যাঁর “অধিকার” রয়েছে, তিনি আসবেন এবং পুনরায় সেই কর্তৃত্ব নেবেন।—যিহি. ২১:২৫-২৭.

      ১০ আরেকটা ভবিষ্যদ্‌বাণী ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, যিহুদিরা সেই সময়ও যিরূশালেমের মন্দিরে উপাসনা করতে থাকবে, যখন প্রতিজ্ঞাত মশীহ অথবা অভিষিক্ত ব্যক্তি আবির্ভূত হবেন। (দানি. ৯:২৪-২৭) এরও আগের একটা ভবিষ্যদ্‌বাণী, যেটা ইস্রায়েলকে বাবিলে বন্দিত্বে নিয়ে যাওয়ারও আগে লেখা হয়েছিল, সেটাতে বলা হয়েছিল যে, এই ব্যক্তি বৈৎলেহমে জন্মগ্রহণ করবেন। (মীখা ৫:২) এই ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো যদি পরিপূর্ণ হতে হয়, তাহলে যিহুদিদেরকে বন্দিত্ব থেকে মুক্ত হতে, নিজেদের দেশে ফিরে আসতে এবং মন্দির পুনর্নির্মাণ করতে হবে। কিন্তু, বন্দিদের মুক্তি দেওয়া বাবিলের রীতি ছিল না। কীভাবে সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মোকাবিলা করা যেত? যিহোবা তাঁর ভাববাদীদের কাছে এর উত্তর প্রকাশ করেছিলেন।—আমোষ ৩:৭.

      ১১. বাবিল সাম্রাজ্যকে চিত্রিত করার জন্য কোন ভিন্ন ভিন্ন উপায় ব্যবহার করা হয়েছে? (পাদটীকা দেখুন।)

      ১১ যে-বন্দিদের বাবিলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে ভাববাদী দানিয়েলও ছিলেন। (দানি. ১:১-৬) যিহোবা তাকে সেই বিশ্বশক্তির পরে একটার পর একটা যে-রাজ্য আসবে, সেই সম্বন্ধে প্রকাশ করার জন্য ব্যবহার করেছিলেন। যিহোবা ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটা প্রতীকের মাধ্যমে এই নিগূঢ়তত্ত্ব প্রকাশ করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি বাবিলীয় রাজা নবূখদ্‌নিৎসরকে স্বপ্নে এক প্রকাণ্ড প্রতিমা দেখিয়েছিলেন, যেটা বিভিন্ন ধাতু দ্বারা নির্মিত ছিল। (পড়ুন, দানিয়েল ২:১, ১৯, ৩১-৩৮.) দানিয়েলের মাধ্যমে যিহোবা প্রকাশ করেছিলেন যে, সেই প্রতিমার সুবর্ণময় মস্তক বাবিলীয় সাম্রাজ্যকে চিত্রিত করে।b বাবিলের পরে যে-বিশ্বশক্তি আসবে, সেটাকে রৌপ্যময় বক্ষ ও বাহু দ্বারা চিত্রিত করা হয়েছে। সেই বিশ্বশক্তি কোনটা ছিল এবং সেটা ঈশ্বরের লোকেদের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছিল?

      মাদীয়-পারস্য—চতুর্থ মস্তক

      ১২, ১৩. (ক) বাবিলের পরাজয় সম্বন্ধে যিহোবা কী প্রকাশ করেছিলেন? (খ) কেন মাদীয়-পারস্যকে উপযুক্তভাবেই পশুর চতুর্থ মস্তক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে?

      ১২ দানিয়েলের সময়ের চেয়ে এক-শো বছরেরও বেশি সময় আগে, যিহোবা ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে সেই বিশ্বশক্তি সম্বন্ধে বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করেছিলেন, যা বাবিলকে পরাজয় করবে। যিহোবা কেবল বাবিল নগর কীভাবে পরাজিত হবে, তা-ই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে বিজেতার নামও প্রকাশ করে দিয়েছিলেন। সেই নেতা ছিলেন পারস্যের কোরস। (যিশা. ৪৪:২৮–৪৫:২) দানিয়েল মাদীয়-পারসিক বিশ্বশক্তি সম্বন্ধে আরও দুটো দর্শন পেয়েছিলেন। একটা দর্শনে এই রাজ্যকে একটা ভল্লুকের দ্বারা চিত্রিত করা হয়েছিল, যেটা এক পার্শ্বে চরণে ভর দিয়ে দাঁড়িয়েছিল। এটাকে “যথেষ্ট মাংস” ভোজন করতে বলা হয়েছিল। (দানি. ৭:৫) অন্য আরেকটা দর্শনে, দানিয়েল দুই শৃঙ্গবিশিষ্ট মেষ দ্বারা চিত্রিত এই দ্বৈত বিশ্বশক্তিকে দেখতে পেয়েছিলেন।—দানি. ৮:৩, ২০.

      ১৩ যিহোবা মাদীয়-পারসিক সাম্রাজ্যকে ব্যবহার করেছিলেন, যেন তা বাবিলকে পুরোপুরিভাবে পরাজিত করার এবং ইস্রায়েলীয়দেরকে নিজেদের দেশে পুনরায় বসবাস করতে দেওয়ার মাধ্যমে ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ করে। (২ বংশা. ৩৬:২২, ২৩) কিন্তু এই একই বিশ্বশক্তি পরবর্তী সময়ে ঈশ্বরের লোকেদের প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দিতে যাচ্ছিল। বাইবেলে ইষ্টেরের বই হামন নামে একজন মাদীয়-পারসিক প্রধানমন্ত্রীর ষড়যন্ত্র সম্বন্ধে উল্লেখ করে। তিনি পারস্য সাম্রাজ্যে বসবাসরত সমস্ত যিহুদিকে পুরোপুরিভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার চক্রান্ত করেছিলেন আর সেই লক্ষ্যে একটা নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন, যে-দিনে ওই জাতিকে ধ্বংস করে দেওয়ার কথা ছিল। একমাত্র যিহোবার হস্তক্ষেপের কারণে তাঁর লোকেরা আবারও শয়তানের বংশের বিদ্বেষ থেকে রক্ষা পেয়েছিল। (ইষ্টের ১:১-৩; ৩:৮, ৯; ৮:৩, ৯-১৪) তাই, মাদীয়-পারস্যকে উপযুক্তভাবেই প্রকাশিত বাক্য বইয়ে বর্ণিত পশুর চতুর্থ মস্তক হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে।

      গ্রিস—পঞ্চম মস্তক

      ১৪, ১৫. প্রাচীন গ্রিক সাম্রাজ্য সম্বন্ধে যিহোবা কোন বিস্তারিত বর্ণনা প্রকাশ করেছিলেন?

      ১৪ প্রকাশিত বাক্য বইয়ে বর্ণিত পশুর পঞ্চম মস্তক গ্রিসকে চিত্রিত করে। নবূখদ্‌নিৎসরের স্বপ্ন ব্যাখ্যা করার সময় দানিয়েল যেমন আগে প্রকাশ করেছিলেন যে, এই একই বিশ্বশক্তি প্রতিমার পিত্তলময় উদর ও জঙ্ঘা দ্বারা চিত্রিত করা হয়েছে। এ ছাড়া, দানিয়েল আরও দুটো দর্শন দেখেছিলেন, যেখানে এই সাম্রাজ্যের বৈশিষ্ট্য ও সেইসঙ্গে এর অন্যতম শাসক সম্বন্ধে উল্লেখযোগ্যভাবে বর্ণনা করা হয়।

      ১৫ একটা দর্শনে, দানিয়েল চার পক্ষবিশিষ্ট এক চিতাবাঘের দ্বারা চিত্রিত গ্রিসকে দেখতে পেয়েছিলেন আর এই চার পক্ষবিশিষ্ট চিতাবাঘ ইঙ্গিত দেয় যে, এই সাম্রাজ্য খুব দ্রুত জয় লাভ করবে। (দানি. ৭:৬) আরেকটা দর্শনে, দানিয়েল ব্যাখ্যা করেন যে, কীভাবে বৃহৎ শৃঙ্গবিশিষ্ট এক ছাগ দুই শৃঙ্গবিশিষ্ট এক মেষ অর্থাৎ মাদীয়-পারস্যকে দ্রুত হত্যা করে। যিহোবা দানিয়েলকে বলেছিলেন যে, এই ছাগ গ্রিসকে চিত্রিত করে আর এটার বৃহৎ শৃঙ্গ এর রাজাদের মধ্যে একজনকে চিত্রিত করে। দানিয়েল আরও লিপিবদ্ধ করেন যে, সেই বৃহৎ শৃঙ্গকে ভেঙে ফেলা হবে আর এর স্থানে আরও ছোটো চারটে শৃঙ্গ উৎপন্ন হবে। যদিও এই ভবিষ্যদ্‌বাণী গ্রিস শাসন শুরু করার শত শত বছর আগে লেখা হয়েছিল, তবুও এর প্রতিটি কথা সত্য হয়েছিল। প্রাচীন গ্রিসের সবচেয়ে অন্যতম রাজা মহান আলেকজান্ডার মাদীয়-পারস্যের বিরুদ্ধে আক্রমণ করায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তবে, এই শৃঙ্গ শীঘ্র ভেঙে গিয়েছিল, যখন সেই মহান রাজা ক্ষমতার একেবারে শীর্ষে থাকার সময় এবং মাত্র ৩২ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন। পরে, তার রাজ্য অবশেষে তার চার সেনাপতি ভাগ করে নিয়েছিল।—পড়ুন, দানিয়েল ৮:২০-২২.

      ১৬. অ্যান্টিওকাস ৪র্থ কী করেছিলেন?

      ১৬ পারস্যকে জয় করার পর, গ্রিস ঈশ্বরের লোকেদের দেশের ওপর শাসন করতে শুরু করে। সেই সময়ের মধ্যে যিহুদিরা প্রতিজ্ঞাত দেশে পুনরায় বাস করতে শুরু করেছিল এবং যিরূশালেমের মন্দির পুনর্নির্মাণ করেছিল। তখনও তারা ঈশ্বরের মনোনীত লোক ছিল এবং পুনর্নির্মিত মন্দির তখনও সত্য উপাসনার কেন্দ্র ছিল। কিন্তু, খ্রি.পূ. দ্বিতীয় শতাব্দীতে, পশুর পঞ্চম মস্তক ঈশ্বরের লোকেদের আক্রমণ করে। আলেকজান্ডারের বিভক্ত সাম্রাজ্যের একজন উত্তরাধিকারী অ্যান্টিওকাস ৪র্থ, যিরূশালেমের মন্দিরে পৌত্তলিক বেদি স্থাপন করেন এবং যিহুদি ধর্ম পালন করাকে এমন একটা অপরাধ হিসেবে তুলে ধরেন, যেটার শাস্তি ছিল মৃত্যু। শয়তানের বংশের দ্বারা কতই না ঘৃণ্য এক কাজ! কিন্তু, শীঘ্র গ্রিস বিশ্বশক্তি হিসেবে অপসারিত হয়। পশুর ষষ্ঠ মস্তক কে হবে?

      রোম—ষষ্ঠ মস্তক, “ভয়ঙ্কর, ক্ষমতাপন্ন”

      ১৭. আদিপুস্তক ৩:১৫ পদ পরিপূর্ণ করার ক্ষেত্রে ষষ্ঠ মস্তক কোন প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল?

      ১৭ যোহন যখন এই পশুর বিষয়ে দর্শন পেয়েছিলেন, তখন রোম ছিল শাসনরত শক্তি। (প্রকা. ১৭:১০) এই ষষ্ঠ মস্তক, আদিপুস্তক ৩:১৫ পদে লিপিবদ্ধ ভবিষ্যদ্‌বাণীর পরিপূর্ণতার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল। শয়তান আঘাত করার জন্য রোমীয় কর্মকর্তাদের ব্যবহার করেছিল, যে-আঘাত বংশের ‘পাদমূলকে’ চূর্ণ করে বংশকে সাময়িকভাবে অক্ষম করে দিয়েছিল। কীভাবে? তারা যিশুকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করার চেষ্টা করেছিল এবং মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। (মথি ২৭:২৬) কিন্তু, শীঘ্র সেই ক্ষত আরোগ্য লাভ করেছিল কারণ যিহোবা যিশুকে পুনরুত্থিত করেছিলেন।

      ১৮. (ক) যিহোবা কোন নতুন জাতিকে মনোনীত করেছিলেন এবং কেন? (খ) কীভাবে সর্পের বংশ নারীর বংশের প্রতি ক্রমাগত বিদ্বেষ প্রকাশ করে গিয়েছিল?

      ১৮ ইস্রায়েলের ধর্মীয় নেতারা রোমের সঙ্গে মিলে যিশুর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিল আর সেইসঙ্গে সেই জাতির অধিকাংশ লোকই তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। যিহোবা জন্মগত ইস্রায়েলকে তাঁর লোক হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। (মথি ২৩:৩৮; প্রেরিত ২:২২, ২৩) তিনি এরপর এক নতুন জাতিকে অর্থাৎ ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েলকে’ মনোনীত করেছিলেন। (গালা. ৩:২৬-২৯; ৬:১৬) সেই জাতি ছিল অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের মণ্ডলী, যা যিহুদি ও পরজাতীয়দের নিয়ে গঠিত ছিল। (ইফি. ২:১১-১৮) যিশুর মৃত্যু এবং পুনরুত্থানের পর, সর্পের বংশ নারীর বংশের প্রতি ক্রমাগত বিদ্বেষ প্রকাশ করে গিয়েছিল। একাধিক বার, রোম খ্রিস্টীয় মণ্ডলীকে অর্থাৎ বংশের গৌণ অংশকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার প্রচেষ্টা করেছিল।c

      ১৯. (ক) ষষ্ঠ বিশ্বশক্তিকে দানিয়েল কীভাবে বর্ণনা করেন? (খ) আরেকটি প্রবন্ধে কী বিবেচনা করা হবে?

      ১৯ দানিয়েল নবূখদ্‌নিৎসরের কাছে যে-স্বপ্ন ব্যাখ্যা করেছিলেন, সেখানে রোমকে লৌহময় জঙ্ঘার দ্বারা চিত্রিত করা হয়েছিল। (দানি. ২:৩৩) এ ছাড়া, দানিয়েল আরও একটা দর্শন দেখেছিলেন, যা কেবল রোমীয় সাম্রাজ্য সম্বন্ধেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে রোম থেকে আসা পরবর্তী বিশ্বশক্তি সম্বন্ধেও বর্ণনা করে। (পড়ুন, দানিয়েল ৭:৭, ৮.) শত শত বছর ধরে রোম এর শত্রুদের সামনে “ভয়ঙ্কর, ক্ষমতাপন্ন ও অতিশয় শক্তিমান্‌” হিসেবে ছিল। কিন্তু, ভবিষ্যদ্‌বাণীতে বলা হয়েছিল যে, এই সাম্রাজ্য থেকে “দশটী শৃঙ্গ” উৎপন্ন হবে আর এরপর তাদের মধ্যে আরেকটা ক্ষুদ্র শৃঙ্গ উৎপন্ন হয়ে লক্ষণীয় হয়ে উঠবে। এই দশ শৃঙ্গ কারা এবং ক্ষুদ্র শৃঙ্গের পরিচয় কী? কোন দিক দিয়ে ক্ষুদ্র শৃঙ্গ, নবূখদ্‌নিৎসর যে-প্রকাণ্ড প্রতিমা দেখেছিলেন, সেটার বর্ণনার সঙ্গে মিলে যায়? ১৪ পৃষ্ঠার প্রবন্ধে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর বিবেচনা করা হবে?

      [পাদটীকাগুলো]

      a এই নারী যিহোবার স্ত্রীতুল্য সংগঠনকে চিত্রিত করে, যা স্বর্গের আত্মিক প্রাণীদের নিয়ে গঠিত।—যিশা. ৫৪:১; গালা. ৪:২৬; প্রকা. ১২:১, ২.

      b বাবিলকে দানিয়েল বইয়ের প্রকাণ্ড প্রতিমার মস্তক ও সেইসঙ্গে প্রকাশিত বাক্য বইয়ে বর্ণিত পশুর তৃতীয় মস্তক দ্বারা চিত্রিত করা হয়েছে। ১২-১৩ পৃষ্ঠার চিত্রতালিকা দেখুন।

      c যদিও রোম ৭০ খ্রিস্টাব্দে যিরূশালেমকে ধ্বংস করে দিয়েছিল, কিন্তু সেই আক্রমণাত্মক কাজ আদিপুস্তক ৩:১৫ পদের পরিপূর্ণতার অংশ ছিল না। সেই সময়ে, মাংসিক ইস্রায়েল আর ঈশ্বরের মনোনীত জাতি ছিল না।

  • “যাহা যাহা শীঘ্র ঘটিবে,” তা যিহোবা প্রকাশ করেন
    ২০১২ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
    • “যাহা যাহা শীঘ্র ঘটিবে,” তা যিহোবা প্রকাশ করেন

      “যীশু খ্রীষ্টের প্রকাশিত বাক্য, ঈশ্বর যাহা তাঁহাকে দান করিলেন, যেন তিনি, যাহা যাহা শীঘ্র ঘটিবে, সেই সকল আপন দাসগণকে দেখাইয়া দেন।”—প্রকা. ১:১.

      আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

      প্রকাণ্ড প্রতিমার কোন অংশগুলো অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তিকে চিত্রিত করে?

      যোহন কীভাবে অ্যাংলো-আমেরিকা এবং রাষ্ট্রসংঘের মধ্যেকার সম্পর্ককে তুলে ধরে?

      দানিয়েল এবং যোহন কীভাবে মানব শাসনের শেষকে চিত্রিত করে?

      ১, ২. (ক) দানিয়েল ও যোহনের ভবিষ্যদ্‌বাণী আমাদেরকে কী করার সুযোগ করে দেয়? (খ) পশুর প্রথম ছয়টা মস্তক কোন বিষয়গুলোকে চিত্রিত করে?

      দানিয়েল এবং যোহনের ভবিষ্যদ্‌বাণী এমন এমন উপায়ে সংগতিপূর্ণ, যেগুলো আমাদেরকে জগতের ভবিষ্যৎ এবং বর্তমানের অনেক ঘটনা বুঝতে সাহায্য করে। পশু সম্বন্ধে যোহনের দর্শন, দশ শৃঙ্গবিশিষ্ট ভয়ংকর পশু সম্বন্ধে দানিয়েলের বিবরণ এবং প্রকাণ্ড প্রতিমা সম্বন্ধে দানিয়েলের ব্যাখ্যা তুলনা করার মাধ্যমে আমরা কী শিখতে পারি? আর এই ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো সম্বন্ধে স্পষ্ট বোধগম্যতা লাভ করা আমাদেরকে কী করার জন্য পরিচালিত করবে?

      ২ আসুন আমরা পশু সম্বন্ধে যোহন যে-দর্শন দেখেছিলেন, সেটাতে মনোযোগ দিই। (প্রকা. ১৩ অধ্যায়) আগের প্রবন্ধে আমরা যেমন দেখেছি যে, পশুর প্রথম ছয়টা মস্তক মিশর, অশূর, বাবিল, মাদীয়-পারস্য, গ্রিস এবং রোমকে চিত্রিত করে। এরা সকলেই নারীর বংশের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেছে। (আদি. ৩:১৫) ষষ্ঠ মস্তক অর্থাৎ রোম, যোহন তার দর্শন সম্বন্ধে লেখার পরও কয়েক শতাব্দী ধরে প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ছিল। পরিশেষে, সপ্তম মস্তক রোমের স্থান নিয়ে নেয়। কোন রাজনৈতিক বিশ্বশক্তি সপ্তম মস্তক হিসেবে প্রমাণিত হয় এবং নারীর বংশের প্রতি এটা কেমন আচরণ করে?

      ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে

      ৩. দশ শৃঙ্গবিশিষ্ট ভয়ংকর পশু কোন বিষয়টাকে চিত্রিত করে আর দশ শৃঙ্গ কোন বিষয়টাকে চিত্রিত করে?

      ৩ আমরা প্রকাশিত বাক্য ১৩ অধ্যায়ে বর্ণিত পশুর সপ্তম মস্তকের পরিচয় শনাক্ত করার জন্য যোহনের দর্শনকে দানিয়েলের দশ শৃঙ্গবিশিষ্ট ভয়ংকর পশুর দর্শনকে তুলনা করতে পারি।a (পড়ুন, দানিয়েল ৭:৭, ৮, ২৩, ২৪.) দানিয়েল যে-পশুকে দেখেছিলেন, তা রোমীয় বিশ্বশক্তিকে চিত্রিত করে। (১২-১৩ পৃষ্ঠার চিত্রতালিকা দেখুন।) পঞ্চম শতাব্দীতে, রোমীয় সাম্রাজ্য বিভক্ত হতে শুরু করে। ওই ভয়ংকর পশুর মস্তক থেকে উৎপন্ন দশ শৃঙ্গ সেইসমস্ত রাজ্যকে চিত্রিত করে, যেগুলো রোমীয় সাম্রাজ্য থেকে আসে।

      ৪, ৫. (ক) ক্ষুদ্র শৃঙ্গ কী করেছিল? (খ) পশুর সপ্তম মস্তকের পরিচয় কী?

      ৪ হিংস্র পশুর মস্তক থেকে উৎপন্ন চারটে শৃঙ্গ অথবা রাজ্য সম্বন্ধে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটে শৃঙ্গ, “ক্ষুদ্র” এক শৃঙ্গের দ্বারা উৎপাটিত হয়। এটা সেই সময়ে পরিপূর্ণ হয়, যখন রোমীয় সাম্রাজ্যের প্রাক্তন উপনিবেশ, ব্রিটেন প্রাধান্য লাভ করতে শুরু করে। সপ্তদশ শতাব্দীর আগে পর্যন্ত, ব্রিটেন তুলনামূলকভাবে ততটা উল্লেখযোগ্য শক্তি ছিল না। প্রাচীন রোম সাম্রাজ্যের অন্য তিনটে অঞ্চল—স্পেন, নেদারল্যান্ডস এবং ফ্রান্স—আরও বেশি প্রভাবশালী ছিল। ব্রিটেন একে একে সেই শক্তিগুলোকে উৎপাটন করে, সেগুলোকে তাদের মর্যাদাপূর্ণ পদ থেকে অপসারিত করে। অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, ব্রিটেন জগতের মধ্যে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠার পথে ছিল। কিন্তু, এটা তখনও পশুর সপ্তম মস্তক হয়ে ওঠেনি।

      ৫ যদিও ব্রিটেন কর্তৃত্ব লাভ করেছিল, কিন্তু উত্তর আমেরিকায় এর যে-উপনিবেশগুলো ছিল, সেগুলো ভেঙে গিয়েছিল। তার পরও, যুক্তরাষ্ট্রকে ধীরে ধীরে শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, এমনকী ব্রিটিশ নৌশক্তির দ্বারা সুরক্ষাও প্রদান করা হয়েছিল। ১৯১৪ সালে যখন প্রভুর দিন শুরু হয়, তখন ইতিমধ্যেই ব্রিটেন ইতিহাসের সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্য গড়ে তোলে এবং যুক্তরাষ্ট্র সর্ববৃহৎ শিল্প শক্তি হয়ে ওঠে।b প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে, যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেনের সঙ্গে এক বিশেষ অংশীদারিত্ব গড়ে তোলে। তখনই পশুর সপ্তম মস্তক, অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। এই মস্তক নারীর বংশের প্রতি কেমন আচরণ করেছিল?

      ৬. সপ্তম মস্তক ঈশ্বরের লোকেদের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছে?

      ৬ প্রভুর দিন শুরু হওয়ার অল্পসময় পরই, সপ্তম মস্তক ঈশ্বরের লোকেদের—পৃথিবীতে বসবাসকারী খ্রিস্টের অবশিষ্ট ভ্রাতৃগণের—ওপর আক্রমণ নিয়ে আসে। (মথি ২৫:৪০) যিশু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তাঁর উপস্থিতির সময়ে, বংশের এক অবশিষ্টাংশ পৃথিবীতে সক্রিয় থাকবে। (মথি ২৪:৪৫-৪৭; গালা. ৩:২৬-২৯) অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তি সেই পবিত্রগণের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করে। (প্রকা. ১৩:৩, ৭) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়, এটা ঈশ্বরের লোকেদের অত্যাচার করে, তাদের কিছু প্রকাশনা নিষিদ্ধ করে দেয় এবং বিশ্বস্ত দাসশ্রেণীর প্রতিনিধিদের জেলে পাঠায়। পশুর সপ্তম মস্তক বলতে গেলে প্রচার কাজ একেবারে বন্ধই করে দিয়েছিল। যিহোবা এই নাটকীয় ঘটনা সম্বন্ধে আগেই জানতে পেরেছিলেন এবং যোহনের কাছে তা প্রকাশ করেছিলেন। ঈশ্বর যোহনকে এও বলেছিলেন যে, বংশের গৌণ অংশ বৃদ্ধিরত আধ্যাত্মিক কাজের জন্য পুনরুজ্জীবিত হবে। (প্রকা. ১১:৩, ৭-১১) এই ঘটনাগুলো যে সত্যিই ঘটেছিল, সেটার প্রমাণ হচ্ছে যিহোবার আধুনিক দিনের দাসদের ইতিহাস।

      অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তি এবং লৌহ ও মৃত্তিকার চরণ

      ৭. পশুর সপ্তম মস্তক এবং প্রকাণ্ড মূর্তির মধ্যে সম্পর্ক কী?

      ৭ পশুর সপ্তম মস্তক এবং প্রকাণ্ড প্রতিমার মধ্যে সম্পর্ক কী? ব্রিটেন—এবং সংযোজিত অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র—রোমীয় সাম্রাজ্য থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। কিন্তু, প্রতিমার চরণ সম্বন্ধে কী বলা যায়? সেগুলোকে লৌহ ও মৃত্তিকার মিশ্রণ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। (পড়ুন, দানিয়েল ২:৪১-৪৩.) এই বর্ণনা সেই সময়ের সঙ্গে মিলে যায়, যখন সপ্তম মস্তক—অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তি—প্রাধান্য লাভ করতে শুরু করে। ঠিক যেমন লৌহের সঙ্গে মিশ্রিত মৃত্তিকা কঠিন পদার্থ লৌহের চেয়ে দুর্বল, তেমনই অ্যাংলো-আমেরিকা সেই শক্তি থেকে দুর্বল, যেটা থেকে এই শক্তি এসেছে। কীভাবে?

      ৮, ৯. (ক) সপ্তম বিশ্বশক্তি কীভাবে লৌহতুল্য শক্তি দেখিয়েছিল? (খ) প্রতিমার চরণের মৃত্তিকা কোন বিষয়কে চিত্রিত করে?

      ৮ কখনো কখনো পশুর সপ্তম মস্তক লৌহতুল্য বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করেছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জয় লাভ করার পর এর শক্তির প্রমাণ দিতে শুরু করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও, সপ্তম মস্তকের লৌহতুল্য শক্তি স্পষ্ট দেখা যায়।c সেই যুদ্ধের পর, সপ্তম মস্তক তখনও মাঝে মাঝে লৌহতুল্য বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। কিন্তু, শুরু থেকেই লৌহ মৃত্তিকার সঙ্গে মিশ্রিত হয়।

      ৯ যিহোবার দাসেরা প্রতিমার চরণের রূপক অর্থ বোঝার জন্য দীর্ঘদিন ধরে প্রচেষ্টা করেছে। দানিয়েল ২:৪১ পদ লৌহ ও মৃত্তিকার মিশ্রণকে অনেকগুলো নয় বরং একটা “রাজ্য” হিসেবে বর্ণনা করে। তাই, মৃত্তিকা সেই উপাদানগুলোকে চিত্রিত করে, যেগুলো অ্যাংলো-আমেরিকার প্রভাবাধীনে রয়েছে এবং যেগুলো এটাকে রোমীয় সাম্রাজ্যের কঠিন পদার্থ লৌহের চেয়ে দুর্বল করে দিয়েছে। মৃত্তিকাকে ‘মনুষ্যের বীর্য্য’ বা সাধারণ লোক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। (দানি. ২:৪৩) অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তির সময়ে লোকেরা নাগরিক অধিকার আন্দোলন, শ্রমিক সংঘ এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের মাধ্যমে অধিকার আদায়ের জন্য বিদ্রোহ করেছিল। সাধারণ লোকেরা অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তিকে লৌহতুল্য ক্ষমতা সহকারে কাজ করার ক্ষেত্রে এর ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিয়েছিল। এ ছাড়া, বিরোধী মতাদর্শ এবং নির্বাচনে অল্প ব্যবধানে জয়লাভ করা জনপ্রিয় নেতাদের ক্ষমতাকেও দুর্বল করে দিয়েছিল আর এই কারণে সেই নেতারাও তাদের নীতিমালাকে বাস্তবায়ন করার জন্য একতরফা ক্ষমতার অধিকারী ছিল না। দানিয়েল ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন: “রাজ্যের একাংশ দৃঢ় ও একাংশ ভঙ্গুর হইবে।”—দানি. ২:৪২; ২ তীম. ৩:১-৩.

      ১০, ১১. (ক) “চরণের” ভবিষ্যৎ কী? (খ) চরণের অঙ্গুলির সংখ্যা সম্বন্ধে আমরা কোন উপসংহারে আসতে পারি?

      ১০ একবিংশ শতাব্দীতে, ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্র এদের বিশেষ সম্পর্ক বজায় রেখেছিল, জগতের বিভিন্ন বিষয়গুলোতে একত্রে কাজ করেছিল। প্রকাণ্ড প্রতিমা এবং পশু সম্বন্ধীয় ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো নিশ্চিত করে যে, অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তির পরিবর্তে অন্য আর কোনো বিশ্বশক্তি আসবে না। এই শেষ শক্তি লৌহময় চরণের দ্বারা চিত্রিত শক্তির চেয়ে দুর্বল কিন্তু এটা নিজে নিজেই চূর্ণবিচূর্ণ হবে না।

      ১১ প্রতিমার চরণের অঙ্গুলির সংখ্যার কি কোনো বিশেষ অর্থ রয়েছে? এই বিষয়টা বিবেচনা করুন: অন্যান্য দর্শনে, দানিয়েল নির্দিষ্ট সংখ্যার বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন—উদাহরণস্বরূপ, বিভিন্ন পশুর মস্তকের শৃঙ্গের সংখ্যা। সেই সংখ্যাগুলোর অর্থ রয়েছে। কিন্তু, প্রতিমা সম্বন্ধে বর্ণনা করার সময় দানিয়েল অঙ্গুলির সংখ্যা সম্বন্ধে উল্লেখ করেননি। তাই, প্রতিমার বাহু, হাত, আঙুল, জঙ্ঘা এবং চরণের সংখ্যার মতোই এই সংখ্যার কোনো বিশেষ অর্থ নেই বলে মনে হয়। দানিয়েল বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন যে, চরণের অঙ্গুলি লৌহ এবং মৃত্তিকার দ্বারা গঠিত। তার বর্ণনা থেকে আমরা এই উপসংহারে আসতে পারি যে, “প্রস্তর” দ্বারা চিত্রিত ঈশ্বরের রাজ্য যখন প্রতিমার চরণে আঘাত করবে, তখন অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তিই শাসনরত থাকবে।—দানি. ২:৪৫.

      অ্যাংলো-আমেরিকা এবং দুই শৃঙ্গবিশিষ্ট পশু

      ১২, ১৩. দুই শৃঙ্গবিশিষ্ট পশু কোন বিষয়কে চিত্রিত করে এবং এটা কী করে?

      ১২ যদিও অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তি লৌহ এবং মৃত্তিকার মিশ্রণ কিন্তু যিশু যোহনকে যে-দর্শনগুলো দেখিয়েছিলেন, সেগুলো দেখায় যে, এই শক্তি শেষকালে মুখ্য ভূমিকায় কাজ করে যাবে। কীভাবে? যোহন দুই শৃঙ্গবিশিষ্ট পশু সম্বন্ধে একটা দর্শন দেখেছিলেন, যা নাগের ন্যায় কথা বলেছিল। সেই অদ্ভূত পশু কোন বিষয়টাকে চিত্রিত করে? এর দুটো শৃঙ্গ রয়েছে, তাই এটা হল দ্বৈত শক্তি। যোহন আবারও অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তিকে দেখতে পেয়েছিলেন, তবে এক বিশেষ ভূমিকায়।—পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ১৩:১১-১৫.

      ১৩ এই পশু সপ্ত মস্তক ও দশ শৃঙ্গবিশিষ্ট পশুর এক প্রতিমা তৈরি করতে প্ররোচিত করে। যোহন লিখেছিলেন যে, পশুর প্রতিমা আবির্ভূত হবে, অদৃশ্য হয়ে যাবে এবং এরপর আবারও উদ্ভূত হবে। ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা গঠিত একটা সংগঠনের ক্ষেত্রে ঠিক তা-ই ঘটেছিল, যে-সংগঠনের উদ্দেশ্য ছিল জগতের রাজ্যগুলোকে একতাবদ্ধ করা এবং সেগুলোকে প্রতিনিধিত্ব করা।d এই সংগঠন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর আবির্ভূত হয়েছিল এবং রাষ্ট্রপুঞ্জ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। এটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। সেই যুদ্ধের সময়, ঈশ্বরের লোকেরা ঘোষণা করেছিল যে, প্রকাশিত বাক্য বইয়ের ভবিষ্যদ্‌বাণী অনুসারে, পশুর প্রতিমা পুনরায় উঠবে। আর সত্যিই এর উদয় হয়েছিল—রাষ্ট্রসংঘ হিসেবে।—প্রকা. ১৭:৮.

      ১৪. কোন অর্থে পশুর প্রতিমা “অষ্টম [রাজা]”?

      ১৪ যোহন সেই পশুর প্রতিমাকে “অষ্টম [রাজা]” হিসেবে বর্ণনা করে। কোন অর্থে? এটাকে প্রথম পশুর অষ্টম মস্তক হিসেবে বর্ণনা করা হয়নি। এটা কেবল সেই পশুর এক প্রতিমা। এই প্রতিমার যে-শক্তিই থাকুক না কেন, তা এর সদস্য জাতিগুলো, বিশেষভাবে এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক, অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তির কাছ থেকে এসেছে। (প্রকা. ১৭:১০, ১১) কিন্তু, এটা একজন রাজা হিসেবে এক বিশেষ কাজ সম্পাদন করার জন্য ক্ষমতা লাভ করে, যে-কাজ এমন ধারাবাহিক ঘটনাগুলোর সূত্রপাত ঘটায়, যেগুলো ইতিহাসকে পরিবর্তন করে দেবে।

      পশুর প্রতিমা বেশ্যাকে গ্রাস করে

      ১৫, ১৬. বেশ্যা কোন বিষয়টাকে চিত্রিত করে আর তার সমর্থনকারীদের কী হয়েছে?

      ১৫ যোহনের কথা অনুযায়ী, সিন্দূরবর্ণের পশুর—পশুর প্রতিমার—ওপর একজন রূপক বেশ্যা রয়েছে, যে সেই পশুর ওপর প্রভুত্ব করে। সে “মহতী বাবিল” নাম ধারণ করে। (প্রকা. ১৭:১-৬) এই বেশ্যা উপযুক্তভাবেই সমস্ত মিথ্যা ধর্মকে চিত্রিত করে, যে-সংগঠনগুলোর মধ্যে খ্রিস্টীয়জগতের গির্জাগুলো অন্যতম। ধর্মীয় সংগঠনগুলো সেই পশুর প্রতিমাকে তাদের পূর্ণ সমর্থন প্রদান করেছে এবং এর ওপর তাদের প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করেছে।

      ১৬ কিন্তু, প্রভুর দিনে মহতী বাবিল জলকে অর্থাৎ তাকে সমর্থনকারী লোকেদেরকে নাটকীয়ভাবে শুষ্ক হয়ে যেতে দেখে। (প্রকা. ১৬:১২; ১৭:১৫) উদাহরণস্বরূপ, পশুর প্রতিমা যখন প্রথম আবির্ভূত হয়েছিল, তখন খ্রিস্টীয়জগতের গির্জাগুলো—মহতী বাবিলের প্রভাবশালী অংশ—পাশ্চাত্য জগতের ওপর প্রভুত্ব করছিল। বর্তমানে, গির্জাগুলো এবং এর পরিচারকরা এদের সদস্যদের সম্মান ও সমর্থন হারিয়েছে। বস্তুতপক্ষে, অনেক লোক মনে করে যে, ধর্মই বিভিন্ন দ্বন্দ্বে মদত জোগায় এবং দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করার জন্য দায়ী। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে বিজ্ঞ ব্যক্তিদের এক দল ক্রমাগত মৌখিকভাবে এবং আন্দোলনের মাধ্যমে সমাজের ওপর থেকে ধর্মের প্রভাব পুরোপুরিভাবে দূর করে দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে আসছে।

      ১৭. শীঘ্র মিথ্যা ধর্মের প্রতি কী ঘটবে এবং কেন?

      ১৭ কিন্তু, মিথ্যা ধর্ম এমনি এমনিই বিলুপ্ত হয়ে যাবে না। বেশ্যা প্রবল শক্তির অধিকারী থাকবে এবং যে-রাজারা ক্ষমতায় রয়েছে, তাদের হৃদয়ে ঈশ্বর প্রবৃত্তি না দেওয়া পর্যন্ত তাদেরকে তার ইচ্ছার প্রতি বশীভূত রাখার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। (পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ১৭:১৬, ১৭.) যিহোবা খুব শীঘ্র রাষ্ট্রসংঘের দ্বারা চিত্রিত শয়তানের ব্যবস্থার রাজনৈতিক সংগঠনকে পরিচালিত করবেন, যেন তা মিথ্যা ধর্মকে আক্রমণ করে। তারা এর প্রভাব দূর করে দেবে এবং এর ধনসম্পদ লুটে নেবে। কয়েক দশক আগে এইরকম এক ঘটনাকে অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল। আজকে, এই বেশ্যা সিন্দূরবর্ণ পশুর ওপর টলায়মান অবস্থায় আছে। তা সত্ত্বেও, সে তার আসন থেকে ধীরে ধীরে পিছলে পড়ে যাবে না। তার পতন হবে আকস্মিক এবং ভয়ানক।—প্রকা. ১৮:৭, ৮, ১৫-১৯.

      পশুগুলোর বিনাশ

      ১৮. (ক) পশু কী করবে এবং এর ফলাফল কী হবে? (খ) দানিয়েল ২:৪৪ পদে ঈশ্বরের রাজ্য কোন রাজ্যগুলোকে ধ্বংস করবে বলে উল্লেখ করে? (১৭ পৃষ্ঠার বাক্স দেখুন।)

      ১৮ মিথ্যা ধর্মের বিনাশের পর, পশু অর্থাৎ শয়তানের পার্থিব রাজনৈতিক সংগঠন ঈশ্বরের রাজ্যের ওপর আক্রমণ করার জন্য উন্মত্ত হয়ে উঠবে। স্বর্গে না যেতে পেরে, পৃথিবীর রাজারা পৃথিবীস্থ সেই লোকেদের ওপর ক্রোধ প্রকাশ করবে, যারা ঈশ্বরের রাজ্যকে সমর্থন করে। ফলাফল অবধারিত। (প্রকা. ১৬:১৩-১৬; ১৭:১২-১৪) দানিয়েল সেই চূড়ান্ত যুদ্ধের একটা দিক সম্বন্ধে বর্ণনা করেন। (পড়ুন, দানিয়েল ২:৪৪.) প্রকাশিত বাক্য ১৩:১ পদে উল্লেখিত পশু, এর প্রতিমা এবং দুই শৃঙ্গবিশিষ্ট পশু ধ্বংস হয়ে যাবে।

      ১৯. আমরা কোন আস্থা রাখতে পারি আর এখন কী করার সময়?

      ১৯ আমরা সপ্তম মস্তকের সময়ে বাস করছি। এই পশু ধ্বংস হওয়ার আগে, আর কোনো মস্তক আবির্ভূত হবে না। অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তি সেই সময় শাসনরত বিশ্বশক্তি হিসেবে থাকবে, যখন মিথ্যা ধর্মকে নির্মূল করে দেওয়া হবে। দানিয়েল এবং যোহনের ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিপূর্ণ হয়েছে। আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, শীঘ্র মিথ্যা ধর্মের বিনাশ হবে এবং আরমাগিদোনের যুদ্ধ সংগঠিত হবে। ঈশ্বর এই বিষয়গুলো আগেই প্রকাশ করেছেন। আমরা কি ভবিষ্যদ্‌বাণীমূলক সতর্কবাণীতে মনোযোগ দেব? (২ পিতর ১:১৯) যিহোবার পক্ষ নেওয়া এবং তাঁর রাজ্যকে সমর্থন করার সময় এখনই।—প্রকা. ১৪:৬, ৭.

      [পাদটীকাগুলো]

      a বাইবেলে, দশ সংখ্যাটি প্রায়ই এক সম্পূর্ণ দলকে—এই ক্ষেত্রে রোমীয় সাম্রাজ্য থেকে আসা সমস্ত রাজ্যকে—চিত্রিত করে।

      b যদিও অষ্টাদশ শতাব্দীতে দ্বৈত বিশ্বশক্তির অংশগুলো অস্তিত্বে ছিল কিন্তু যোহন এটাকে এমনভাবে বর্ণনা করেছিলেন, যা প্রভুর দিনের শুরুর দিকে আবির্ভূত হবে। বস্তুতপক্ষে, প্রকাশিত বাক্য বইয়ে লিপিবদ্ধ দর্শনগুলোর পরিপূর্ণতা “প্রভুর দিনে” ঘটবে। (প্রকা. ১:১০) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরই, সপ্তম মস্তক মিত্র বিশ্বশক্তি হিসেবে কাজ করা শুরু করেছে।

      c সেই যুদ্ধের সময় এই রাজা যে-ভয়ানক ধ্বংসের কারণ হবে, তা দানিয়েল আগেই ভবিষ্যদ্‌বাণী করে লিখেছিলেন: “সে আশ্চর্য্যরূপে [বিস্ময়করভাবে] বিনাশ করিবে।” (দানি. ৮:২৪) উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্র যখন দ্বৈত বিশ্বশক্তির শত্রুদের ওপর দুটো পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করেছিল, তখন নজিরহীন মাত্রায় ভয়ানক ক্ষতিসাধন করেছিল।

      d প্রকাশিত বাক্য—তার মহান পরিপূর্ণতা সন্নিকট! (ইংরেজি) বইয়ের ২৪০, ২৪১, ২৫৩ পৃষ্ঠা দেখুন।

      [১৭ পৃষ্ঠার বাক্স]

      “ঐ সকল রাজ্য” কাদের নিয়ে গঠিত?

      দানিয়েল ২:৪৪ পদের ভবিষ্যদ্‌বাণী বলে যে, ঈশ্বরের রাজ্য ‘ঐ সকল রাজ্য চূর্ণ ও বিনষ্ট করিবে।’ এই ভবিষ্যদ্‌বাণী কেবল প্রতিমার বিভিন্ন অংশ দ্বারা চিত্রিত রাজ্যগুলোর বিষয়ে উল্লেখ করে।

      অন্যান্য মানবসরকারের বিষয়ে কি বলা যায়? প্রকাশিত বাক্য বইয়ের সাদৃশ্যমূলক ভবিষ্যদ্‌বাণী এই বিষয়টা আরও ব্যাপকভাবে প্রকাশ করে। এটা দেখায় যে, ‘জগত্‌ সমুদয়ের রাজারা,’ ‘সর্ব্বশক্তিমান্‌ঈশ্বরের সেই মহাদিনে’ যিহোবার বিরুদ্ধে একত্রিত হবে। (প্রকা. ১৬:১৪; ১৯:১৯-২১) তাই, কেবল প্রতিমার দ্বারা চিত্রিত রাজ্যগুলোই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে অন্যান্য সমস্ত মানবসরকারও আরমাগিদোনে ধ্বংস হয়ে যাবে।

  • আট জন রাজার প্রকাশ
    ২০১২ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
    • আট জন রাজার প্রকাশ

      একত্রে বিবেচনা করলে, দানিয়েল এবং যোহনের বিবরণ শুধুমাত্র আট জন রাজার বা আটটা মানবশাসনের পরিচয়ই তুলে ধরে না কিন্তু সেইসঙ্গে ওই শক্তিগুলো কীভাবে পর্যায়ক্রমে আবির্ভূত হবে, সেই সম্বন্ধেও জানায়। কিন্তু, আমরা কেবল তখনই সেই ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো সঠিকভাবে বুঝতে পারব, যদি আমরা বাইবেলে লিপিবদ্ধ একেবারে প্রথম ভবিষ্যদ্‌বাণীর অর্থ বুঝতে পারি।

      ইতিহাসজুড়ে শয়তান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অথবা রাজ্যের মাধ্যমে তার বংশকে সংগঠিত করেছে। (লূক ৪:৫, ৬) কিন্তু, তুলনামূলকভাবে খুব কম সংখ্যক মানবরাজ্যই ঈশ্বরের লোকেদের ওপর জোরালো প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে, তা তারা ইস্রায়েল জাতি অথবা অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের নিয়ে গঠিত মণ্ডলী, যা-ই হোক না কেন। দানিয়েল ও যোহনের দর্শনগুলো সর্বমোট মাত্র আটটা বিশ্বশক্তি সম্বন্ধে বর্ণনা করে।

      [১২, ১৩ পৃষ্ঠার তালিকা/চিত্রগুলো]

      (পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

      দানিয়েল প্রকাশিত বাক্য

      বইয়ের ভবিষ্যদ্‌বাণী বইয়ের ভবিষ্যদ্‌বাণী

      ১. মিশর

      ২. অশূর

      ৩. বাবিল

      ৪. মাদীয়-

      পারস্য

      ৫. গ্রিস

      ৬. রোম

      ৭. ব্রিটেন এবং

      যুক্তরাষ্ট্রa

      ৮. রাষ্ট্রপুঞ্জ

      এবং রাষ্ট্রসংঘb

      ঈশ্বরের লোকেরা

      খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ সাল

      অব্রাহাম

      ১৫০০

      ইস্রায়েল জাতি

      ১০০০

      দানিয়েল ৫০০

      খ্রিস্টপূর্ব/খ্রিস্টাব্দ

      যোহন

      ঈশ্বরের ইস্রায়েল ৫০০

      ১০০০

      ১৫০০

      খ্রিস্টাব্দ ২০০০ সাল

      [পাদটীকা]

      a শেষকালে দুই রাজাই বিদ্যমান থাকবে। ১৯ পৃষ্ঠা দেখুন।

      b শেষকালে দুই রাজাই বিদ্যমান থাকবে। ১৯ পৃষ্ঠা দেখুন।

      [চিত্রগুলো]

      প্রকাণ্ড প্রতিমা (দানি. ২: ৩১-৪৫)

      সমুদ্র থেকে উঠে আসা চারটে পশু (দানি. ৭: ৩-৮, ১৭, ২৫)

      মেষ ও ছাগ (দানি. ৮ অধ্যায়)

      সপ্ত মস্তকবিশিষ্ট পশু (প্রকা. ১৩:১-১০, ১৬-১৮)

      দুই শৃঙ্গবিশিষ্ট পশু সপ্ত মস্তকবিশিষ্ট পশুর প্রতিমা তৈরি করতে প্ররোচিত করে (প্রকা. ১৩:১১-১৫)

      [সৌজন্যে]

      চিত্র সৌজন্য: মিশর এবং রোম: Photograph taken by courtesy of the British Museum; মাদীয়-পারসিক: Musée du Louvre, Paris

বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
লগ আউট
লগ ইন
  • বাংলা
  • শেয়ার
  • পছন্দসমূহ
  • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
  • ব্যবহারের শর্ত
  • গোপনীয়তার নীতি
  • গোপনীয়তার সেটিং
  • JW.ORG
  • লগ ইন
শেয়ার