এখনই আপনার জীবনের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করুন!
মানব আচরণ এবং উদ্দেশ্যের উপর বৈজ্ঞানিক গবেষণা বহুদিক দিয়ে আমাদের উপকার করেছে। কোন অসুস্থতা সম্বন্ধে ব্যাপক ধারণার দ্বারা আমরা হয়ত তা মোকাবিলা করতে পারছি। একই সময়ে, উত্তেজনাপূর্ণ ব্যাখ্যাগুলির বিষয়ে, বিশেষত যেগুলি দৃঢ়ভাবে স্থাপিত মানগুলির বিরুদ্ধে মনে হয়, তখন সতর্ক হওয়া বিচক্ষণতার কাজ হবে।
জীনবিদ্যা এবং আচরণের ক্ষেত্রে যে প্রশ্নগুলি উত্থাপিত হয়: আমরা কি আমাদের দায়িত্বগুলি অস্বীকার করতে পারি এবং আমাদের কাজের জন্য কোন নিন্দা গ্রহণ করব না? আমরা কি কোন অবিচক্ষণ অথবা ভুল কাজের জন্য অজুহাত চাইতে পারি অথবা অন্য কারও বা অন্য কিছুর দোষ দিয়ে বৃদ্ধিরত “আমি-নই” বংশের সাথে যুক্ত হতে পারি? কখনই না। বেশির ভাগ লোক জীবনের যে কোন সাফল্যের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে প্রশংসা গ্রহণ করে থাকে, সুতরাং একইভাবে তাদের ভুলগুলির জন্য কেন তারা ইচ্ছুক হয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করবে না?
অতএব, আমরা হয়ত জিজ্ঞাসা করতে পারি, বর্তমানে আমাদের জীবন কে বা কারা নিয়ন্ত্রণ করে সেই সম্বন্ধে ঈশ্বরের বাক্য, পবিত্র বাইবেল কী বলে?
বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি কী?
প্রথমে যে বিষয়টি আমাদের শনাক্ত করা দরকার তা হল আমাদের আদি পিতামাতা, আদম এবং হবার কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপে আমরা সকলে জন্মগ্রহণ করেছি। (গীতসংহিতা ৫১:৫) অধিকন্তু, আমরা একটি বিশেষ সময়ে বাস করছি, যাকে বলা হয়েছে ‘শেষকাল,’ যখন লোকেরা ‘বিষম সময়’ অভিজ্ঞতা করছে। (২ তীমথিয় ৩:১) সাধারণভাবে বলতে গেলে, এটি উল্লেখ করে যে আমাদের জীবনে বিচক্ষণ নিয়ন্ত্রণ অনুশীলন করতে, আমাদের পূর্বপূরুষদের চেয়ে আরও বেশি সমস্যার সম্মুখীন হই।
তৎসদুত্ত্বও, সমস্ত মানুষই নৈতিক দিক দিয়ে স্বাধীন যারা তাদের নিজের ব্যক্তিগত মনোনয়ন করতে পারে। সেই পরিসীমায় তারা নিজেদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে। এটি সেই প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে এবং ইস্রায়েল জাতির প্রতি যিহোশূয়ের বাক্যে তা দেখতে পাওয়া যায়: “যাহার সেবা করিবে, তাহাকে অদ্য মনোনীত কর।”—যিহোশূয় ২৪:১৫.
বাইবেল জানায় যে শয়তান দিয়াবলকে স্বর্গ থেকে নিক্ষেপ করা হয়েছে আর এখন, অন্য সময়ের চেয়ে আরও বেশি, সমগ্র মানবজাতির উপর অভূতপূর্বভাবে মন্দতার জন্য শক্তিশালী প্রভাব প্রয়োগ করছে। এটি আমাদের আরও বলে যে এমনকি প্রেরিত যোহনের দিনেও, সমস্ত জগৎ পাপাত্মার মধ্যে শুয়েছিল। (১ যোহন ৫:১৯; প্রকাশিত বাক্য ১২:৯, ১২) যাইহোক, যেমন সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রত্যেক কাজ নিয়ন্ত্রণ অথবা আমাদের ভাগ্য পূর্বেই নির্ধারণ করে দেন না, যা একমাত্র তিনিই জানেন, তাই আমাদের প্রতিটি ভুল এবং ব্যর্থতার জন্য সরাসরিভাবে শয়তানের উপর দোষ দেওয়া উচিত নয়। ভারসাম্যপূর্ণ শাস্ত্রীয় সত্য হল যে “প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কামনা দ্বারা আকর্ষিত ও প্ররোচিত হইয়া পরীক্ষিত হয়। পরে কামনা সগর্ভা হইয়া পাপ প্রসব করে, এবং পাপ পরিপক্ব হইয়া মৃত্যুকে জন্ম দেয়।” (যাকোব ১:১৪, ১৫) প্রেরিত পৌল এই অনুপ্রাণিত বাক্যগুলি লিখেছিলেন: “তোমরা ভ্রান্ত হইও না, ঈশ্বরকে পরিহাস করা যায় না; কেননা মুনষ্য যাহা কিছু বুনে তাহাই কাটিবে।”—গালাতীয় ৬:৭.
সুতরাং যিহোবা ঈশ্বর আমাদের কাজের জন্য ব্যক্তিগতভাবে নিকাশ গ্রহণ করবেন। আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে যেন আমরা জীনগত গঠন এবং উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত অসিদ্ধতার অজুহাত দেখানোর চেষ্টা না করি। ঈশ্বর দৌরাত্ম্য, সমকামিতাপূর্ণ প্রাচীন সদোম এবং ঘমোরার কাছ থেকে তাদের কলুষিত কাজের জন্য নিকাশ নিয়েছিলেন। স্পষ্টতই তিনি, যারা কেবলমাত্র কিছু আনুমানিক জীনগত ত্রুটির কারণে দুষ্ট না হয়ে পারেনি সেই অধিবাসীদের করুণার যোগ্য বা দুর্ভাগ্যগ্রস্ত হিসাবে বিবেচনা করেননি। একইভাবে, নোহের দিনে লোকেদের চারিদিকে অনেক মন্দ প্রভাব ছিল; তৎসদুত্ত্বও, যদি তারা জলপ্লাবন, যা শীঘ্রই ঘটতে যাচ্ছিল তা থেকে রক্ষা পেতে চায়, সেইক্ষেত্রে একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত তাদের বেছে নিতে হয়েছিল। অল্প কয়েকজনই সঠিক বাছাই করেছিল। বেশির ভাগ লোকে করেনি।
ইব্রীয় ভাববাদী যিহিস্কেল স্বীকার করেন যে ঈশ্বরের অনুগ্রহ অর্জন করার জন্য ব্যক্তিগত নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন: “তুমি দুষ্টকে চেতনা দিলে সে যদি আপন দুষ্টতা ও কুপথ হইতে না ফিরে, তবে সে নিজ অপরাধে মরিবে, কিন্তু তুমি আপন প্রাণ রক্ষা করিলে।”—যিহিস্কেল ৩:১৯.
সর্বোত্তম সাহায্য প্রাপ্তিসাধ্য
অবশ্যই, প্রাত্যহিক জীবনে ব্যক্তিগত নিয়ন্ত্রণ অনুশীলন করতে আমাদের সকলের সাহায্যের প্রয়োজন এবং আমাদের অনেকের ক্ষেত্রে তা সত্যই চ্যালেঞ্জস্বরূপ। কিন্তু আমাদের হতাশ হওয়ার প্রয়োজন নেই। যদিও আমাদের উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপপূর্ণ প্রবণতা ঈশ্বরের কাছে অগ্রহণীয়, তথাপি আমরা যদি আমাদের আচরণ পরিবর্তন করতে চাই তাহলে তিনি সর্বোত্তম সাহায্য—তাঁর পবিত্র আত্মা এবং অনুপ্রাণিত সত্য প্রাপ্তিসাধ্য করবেন। আমাদের হয়ত কোন জীনগত প্রবণতা থাকতে পারে এবং হয়ত কোন বহিরাগত প্রভাব আমাদের প্রভাবান্বিত করতে পারে, তৎসদুত্ত্বও আমরা ‘পুরাতন মনুষ্যকে তাহার ক্রিয়াশুদ্ধ বস্ত্রবৎ ত্যাগ করিয়া সেই নূতন মনুষ্যকে পরিধান করিতে পারি, যে আপন সৃষ্টিকর্তার প্রতিমূর্ত্তি অনুসারে তত্ত্বজ্ঞানের নিমিত্ত নূতনীকৃত হইতেছে।’—কলসীয় ৩:৯, ১০.
করিন্থীয় মণ্ডলীর অনেক খ্রীষ্টানেরা তাদের আচরণের নাটকীয় পরিবর্তন করেছিল। অনুপ্রাণিত বিবরণ আমাদের বলে: “যাহারা ব্যভিচারী কি প্রতিমাপূজক কি পারদারিক কি স্ত্রীবৎ আচারী কি পুঙ্গামী কি চোর কি লোভী কি মাতাল কি কটুভাষী কি পরধনগ্রাহী, তাহারা ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাইবে না। আর তোমরা কেহ কেহ সেই প্রকার লোক ছিলে; কিন্তু তোমরা প্রভু যীশু খ্রীষ্টের নামে ও আমাদের ঈশ্বরের আত্মায় আপনাদিগকে ধৌত করিয়াছ, পবিত্রীকৃত হইয়াছ, ধার্ম্মিক গণিত হইয়াছ।”—১ করিন্থীয় ৬:১০, ১১.
তাই আমরা যদি আমাদের অসিদ্ধতার বিরুদ্ধে কঠোর প্রচেষ্টা করে থাকি, আসুন তাতে পরাজয় স্বীকার না করি। আধুনিক-দিনের অনেক খ্রীষ্টানেরা প্রমাণ করেছে যে যিহোবার সাহায্যের মাধ্যমে তারা সক্ষম হয়েছে ‘মনের নূতনীকরণ দ্বারা স্বরূপান্তরিত হতে; যেন তাহারা পরীক্ষা করিয়া জানিতে পারে, ঈশ্বরের ইচ্ছা কি, যাহা উত্তম ও প্রীতিজনক ও সিদ্ধ।’ তারা তাদের হৃদয়কে পরিপূর্ণ করেছে যা যা সত্য, ন্যায্য, বিশুদ্ধ, প্রীতিজনক, সদ্গুণ, যে কোন কীর্ত্তি দিয়ে; আর তারা ‘সেই সকল আলোচনা করে থাকে।’ তারা কঠিন আত্মিক খাদ্য গ্রহণ করে থাকে এবং তাদের জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল অভ্যাস প্রযুক্ত সঠিক ও ভুলের প্রভেদ করতে পটু হয়েছে।—রোমীয় ১২:২; ফিলিপীয় ৪:৮; ইব্রীয় ৫:১৪.
তাদের কঠোর প্রচেষ্টা সম্বন্ধে জানা উৎসাহজনক, যেখানে রয়েছে তাদের সাময়িক ব্যর্থতা এবং ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার সাহায্যের মাধ্যমে তাদের চরম সাফল্য। ঈশ্বর আমাদের আশ্বাস দেন যে আমাদের আচরণের পরিবর্তন প্রায়ই হৃদয় এবং এর আকাঙ্ক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করে: “কেননা প্রজ্ঞা তোমার হৃদয়ে প্রবেশ করিবে, জ্ঞান তোমার প্রাণের তুষ্টি জন্মাইবে, পরিণামদর্শিতা তোমার প্রহরী হইবে, বুদ্ধি তোমাকে রক্ষা করিবে; যেন তোমাকে উদ্ধার করে দুষ্টের পথ হইতে।”—হিতোপদেশ ২:১০-১২.
অতএব, যদি আপনি লক্ষ্য হিসাবে অনন্ত জীবন রাখতে চান—যা দুষ্ট জগতের সমস্যামুক্ত জীবন এবং দূর্বল অসিদ্ধতা থেকে মুক্ত, তাহলে এখনই আপনার জীবনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ‘প্রাণপণ করুন’ এবং স্বর্গীয় প্রজ্ঞা দ্বারা পরিচালিত হোন। (লূক ১৩:২৪) যিহোবার পবিত্র আত্মার সাহায্যের সদ্ব্যবহার করুন যাতে করে আপনি এর ফল আত্ম-সংযম উৎপন্ন করতে পারেন। আপনার জীবনকে ঈশ্বরের আইনের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ করাকে আপনার হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষায় পরিণত করুন এবং এই উপদেশে মনোযোগ দিন: “সমস্ত রক্ষণীয় অপেক্ষা তোমার হৃদয় রক্ষা কর কেননা তাহা হইতে জীবনের উদ্গম হয়।” (হিতোপদেশ ৪:২৩) ঈশ্বরের নতুন জগতে “প্রকৃতরূপে জীবন” ধরে রাখুন, যেখানে যিহোবা ঈশ্বর সমস্ত জীনগত অভাবগুলি যীশু খ্রীষ্টের মুক্তির মূল্যের বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে সংশোধন করবেন আর তা পেতে এই জগতে আপনার জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সমস্ত প্রচেষ্টা করা উচিত।—১ তীমথিয় ৬:১৯; যোহন ৩:১৬.
[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
বাইবেল অধ্যয়ন আমাদের গভীর অন্তর্নিহিত দুর্বলতাকে কাটিয়ে উঠতে শক্তি প্রদান করতে পারে
[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
বাইবেল অধ্যয়ন আমাদের ঈশ্বরের নৈতিক মান বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে