যীশুর জন্ম সত্য কাহিনী
আপনার দেশের ইতিহাসের কোন একটি সুপরিচিত ঘটনা সম্বন্ধে চিন্তা করুন। এই ঘটনাটি প্রমাণিত এবং একাধিক ইতিহাসবেত্তা এটি লিখেছেন। এখন কেউ একজন যদি আপনাকে বলে যে এই ঘটনাটি কখনও ঘটেনি, এর সবটাই কাল্পনিক তবে কী হবে? কিংবা আপনার ঘরের কথাই ধরুন, কেউ যদি বলেন যে আপনার ঘরের লোকেরা আপনার দাদুর জন্ম ও ছেলেবেলা সম্বন্ধে আপনাকে যা কিছু বলেছে তার বেশিরভাগই মিথ্যা তাহলেই বা আপনার কেমন লাগবে? দুটি পরিস্থিতিতেই, এই কথাগুলি শুনে আপনি হয়ত রেগে যাবেন। আপনি নিশ্চয়ই এই কথাগুলি সহজেই মেনে নেবেন না!
কিন্তু, আজকে সমালোচকেরা মথি ও লূকের দ্বারা লিখিত যীশুর জন্মের বিবরণকে খোলাখুলিভাবে অস্বীকার করেন, যেগুলি সুসমাচারে দেওয়া রয়েছে। তারা বলেন যে মথি ও লূকের বিবরণ একেবারেই পরস্পরবিরোধী এবং একটির সঙ্গে আরেকটির মিল নেই। দুটি বিবরণই পুরোপুরি মিথ্যা এবং ইতিহাসগত ভুলে ভরা। সত্যিই কি তাই? এইধরনের অভিযোগগুলি মেনে নেওয়ার আগে, আসুন আমরা নিজেরাই সুসমাচারের বিবরণগুলি পরীক্ষা করি না কেন। আর আসুন আমরা দেখি যে আজকে সুসমচারের বইগুলি আমাদের কী শেখায়।
লেখার উদ্দেশ্য
একেবারে শুরু থেকে দেখলে তা আমাদেরকে বাইবেলে এই বিবরণগুলি লেখার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বুঝতে সাহায্য করে। এগুলি জীবনী নয় কিন্তু সুসমাচার। আর এই দুটি রচনার মধ্যে পার্থ্যক্য বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি জীবনীতে, লেখক হয়ত পাতার পর পাতা এটি লিখেই ভরিয়ে দিতে পারেন যে তার লেখার পাত্র কি করে সুপরিচিত ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন। এই কারণে কিছু জীবনীকার শুধু সেই ব্যক্তির বাবামা, জন্ম ও শৈশবকাল সম্বন্ধে বর্ণনা দিতেই অসংখ্য পাতা ভরিয়ে ফেলেন। সুসমাচার এর থেকে আলাদা। চারটি সুসমাচার বইয়ের মধ্যে, কেবল মথি ও লূকের বিবরণই যীশুর জন্ম ও শৈশবকাল সম্বন্ধে জানায়। তবে, বইগুলির উদ্দেশ্য এই বিষয়টি দেখানো নয় যে যীশু কিভাবে সেই রকম ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন যেধরনের ব্যক্তি তিনি ছিলেন। মনে রাখবেন, যীশুর অনুগামীরা জানতেন যে পৃথিবীতে আসার আগে আত্মিক প্রাণী হিসাবে তাঁর অস্তিত্ব ছিল। (যোহন ৮:২৩, ৫৮) তাই মথি ও লূক শুধু এটি বলার জন্যই তাদের সুসমাচার লেখেননি যে যীশু কিধরনের ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। বরং, তারা সেই ঘটনাবলি বর্ণনা করেছিলেন যেগুলি তাদের সুসমাচারের উদ্দেশ্যের সঙ্গে খাপ খায়।
তাহলে তাদের লেখার উদ্দেশ্য কী ছিল? “সুসমাচার” শব্দটির অর্থ “সুসংবাদ।” দুজন লেখকের বার্তা একই ছিল, যেমন যীশুই হলেন প্রতিজ্ঞাত মশীহ কিংবা খ্রীষ্ট; তিনি মানবজাতিকে পাপ থেকে মুক্ত করার জন্য মারা গিয়েছিলেন এবং স্বর্গে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন। তবে দুই লেখকের পটভূমি একেবারেই ভিন্ন ছিল এবং তারা ভিন্ন ভিন্ন পাঠকদের জন্য লিখেছিলেন। মথি করগ্রাহী ছিলেন আর তিনি তার বিবরণ প্রধানত যিহূদী পাঠকদের উপযোগী করে লিখেছিলেন। চিকিৎসক লূক ‘মহামহিম থিয়ফিলের’ উদ্দেশে লিখেছিলেন, যিনি সম্ভবত কোন এক উচ্চ সরকারি পদে ছিলেন। এছাড়াও, তিনি যিহূদী ও পরজাতীয় পাঠকদের জন্য লিখেছিলেন। (লূক ১:১-৩) দুজন লেখকই এমন কিছু ঘটনাবলি বাছাই করেছিলেন যেগুলি তাদের পাঠকদের জন্য উপযুক্ত ছিল আর খুব সম্ভবত তাদের বিশেষ শ্রেণীর পাঠকদের মধ্যে বিশ্বাস জন্মানোর জন্যই তারা তা করেছিলেন। এই কারণে, মথির বিবরণ ইব্রীয় শাস্ত্রের ভবিষ্যদ্বাণীগুলিকে তুলে ধরে যা যীশুর ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ হয়েছিল। অন্যদিকে, লূক বেশি করে ঐতিহাসিক দিকের উপর জোর দিয়েছিলেন যার সঙ্গে হয়ত তার ন-যিহূদী পাঠকবৃন্দ পরিচিত ছিলেন।
তাই তাদের বিবরণগুলির মধ্যে পার্থক্য থাকাটা আশ্চর্যের বিষয় নয়। কিন্তু বিবরণ দুটি পরস্পরবিরোধী নয়, যেমন সমালোচকেরা দাবি করে থাকেন। আসলে এগুলি একটি অন্যটির পরিপূরক এবং এটি আরও সম্পূর্ণ এক ছবি দেয়।
বৈৎলেহমে যীশুর জন্ম
মথি ও লূক দুজনেই লেখেন যে যীশুর জন্ম এক উল্লেখযোগ্য অলৌকিক ঘটনা কারণ তিনি একজন কুমারীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মথি বলেছিলেন যে এই অলৌকিক ঘটনাটি কয়েক শতাব্দী আগে যিশাইয়ের করা ভবিষ্যদ্বাণীকে পরিপূর্ণ করেছিল। (যিশাইয় ৭:১৪; মথি ১:২২, ২৩) লূক বলেন যে যীশু বৈৎলেহমে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কারণ কৈসর নাম নিবন্ধীকরণের আদেশ দেওয়ায় যোষেফ ও মরিয়মকে সেখানে যেতে হয়েছিল। (৭ পৃষ্ঠার বাক্সটি দেখুন।) বৈৎলেহমে যীশুর জন্মগ্রহণ তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। কয়েক শতাব্দী আগেই ভাববাদী মীখা ভাববাণী করেছিলেন যে মশীহ যিরূশালেমের আশেপাশের এক সাধারণ ছোট গ্রামে জন্মগ্রহণ করবেন।—মীখা ৫:২.
যীশুর জন্মের রাতটি জন্মসংক্রান্ত দৃশ্যগুলির কারণে এক বিশেষ রাত হয়ে উঠেছে। কিন্তু, সচরাচর যা দেখানো হয় তার থেকে সত্য কাহিনীটি একেবারেই আলাদা। ইতিহাসবেত্তা লূক আমাদের সেই আদমশুমারি সম্বন্ধে জানান যা যোষেফ ও মরিয়মকে বৈৎলেহমে নিয়ে এসেছিল আর তিনি এও জানান যে মেষপালকেরা ওই গুরুত্বপূর্ণ রাতটিতে তাদের পশুপাল নিয়ে মাঠে ছিলেন। এই দুটি ঘটনা থেকে বহু বাইবেল গবেষকেরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে যীশু ডিসেম্বর মাসে জন্মগ্রহণ করতে পারেন না। তারা উল্লেখ করেন, কৈসর উত্তেজনাপ্রবণ যিহূদীদেরকে ঠাণ্ডা ও বর্ষার সময় নিজেদের শহরে যেতে বাধ্য করবেন তা একেবারেই অসম্ভব কারণ তা বিদ্রোহী লোকেদের মধ্যে আরও ক্রোধ জাগিয়ে তুলতে পারত। এছাড়াও পণ্ডিত ব্যক্তিরা বলেন, এইধরনের ঠাণ্ডা ও ঝোড়ো আবহাওয়ার মধ্যে মেষপালকদের পক্ষে পশুপাল নিয়ে মাঠে থাকাটাও অসম্ভব।—লূক ২:৮-১৪.
লক্ষ্য করুন, যিহোবা তাঁর পুত্রের জন্ম সম্বন্ধে সেই সময়ের শিক্ষিত ও প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতাদের জানাননি কিন্তু অশিক্ষিত দরিদ্র শ্রমজীবী লোকেদের জানিয়েছিলেন। অধ্যাপক ও ফরীশীদের সঙ্গে সম্ভবত এই মেষপালকদের কোন সম্পর্কই ছিল না, যাদের কাজ যাদের মৌখিক ব্যবস্থার সূক্ষ্ম নিয়মগুলি পালন করার জন্য সময় দিত না। কিন্তু ঈশ্বর এই নম্র, বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের অনুগ্রহ দেখিয়েছিলেন, সম্মানিত করেছিলেন—এক দল দূত তাদের খবর দিয়েছিলেন যে মশীহ এই মাত্র বৈৎলেহমে জন্মগ্রহণ করেছেন, যাঁর জন্য ঈশ্বরের লোকেরা হাজার হাজার বছর ধরে অপেক্ষা করে আছেন। এই ব্যক্তিরাই মরিয়ম ও যোষেফের কাছে এসেছিলেন ও এই নিষ্পাপ শিশুটিকে জাবপাত্রে শোয়ানো অবস্থায় দেখেছিলেন, সেই “তিন জন রাজা” আসেননি যাদের সচরাচর যীশুর জন্মসংক্রান্ত দৃশ্যগুলিতে দেখানো হয়।—লূক ২:১৫-২০.
যারা নম্রভাবে সত্যকে খোঁজেন যিহোবা তাদের অনুগ্রহ দেখান
ঈশ্বর সেই সমস্ত নম্র ব্যক্তিদের অনুগ্রহ দেখান যারা তাঁকে ভালবাসেন ও তাঁর উদ্দেশ্যগুলির পরিপূর্ণতা দেখার জন্য অপেক্ষা করেন। এই বিষয়টি যীশুর জন্ম ও তার পরের ঘটনাবলিতে বার বার দেখা গিয়েছে। শিশুটির জন্মের এক মাস পর মরিয়ম ও যোষেফ মোশির ব্যবস্থার প্রতি বাধ্যতা দেখিয়ে তাঁকে মন্দিরে নিয়ে যান এবং সেখানে তারা “এক যোড়া ঘুঘু কিম্বা দুই কপোতশাবক” উৎসর্গ করেন। (লূক ২:২২-২৪) ব্যবস্থায় মূলত একটি পুং-মেষের কথা বলা হয়েছিল কিন্তু গরিবদের জন্য এই অল্প মূল্যের বলিদান দেওয়ার সুযোগটিও ছিল। (লেবীয় পুস্তক ১২:১-৮) বিষয়টি নিয়ে একটু ভাবুন। নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম কর্তা যিহোবা ঈশ্বর কোন ধনী পরিবারকে নয় বরং এক গরিব পরিবারকে বেছে নিয়েছিলেন, যেখানে তাঁর প্রিয়, একজাত পুত্র বড় হবেন। আপনি যদি একজন বাবা কিংবা মা হন, তবে এই ঘটনা থেকে আপনি শিখতে পারেন যে আপনার সন্তানকে প্রাচুর্যের মধ্যে রাখা ও উচ্চ শিক্ষা দেওয়ার চেয়েও, তার জন্য আরও ভাল উপহার হবে তাকে এমন এক পরিবেশ দেওয়া যেখানে আধ্যাত্মিক নীতিগুলিকে প্রথম স্থানে রাখা হয়। আর এই উপহারটি বস্তুগত সম্পদ কিংবা প্রতিপত্তির চেয়ে শতগুণে ভাল।
মন্দিরে আরও দুজন বিশ্বস্ত, নম্র উপাসকের প্রতি যিহোবা অনুগ্রহ দেখান। তাদের মধ্যে একজন হলেন ৮৪ বছর বয়স্কা হান্না যিনি কখনও “ধর্ম্মধাম হইতে প্রস্থান” করতেন না। (লূক ২:৩৬, ৩৭) অপরজন হলেন শিমিয়োন নামের একজন বিশ্বস্ত বৃদ্ধ ব্যক্তি। এই দুই ব্যক্তি রোমাঞ্চিত হন যখন ঈশ্বর তাদেরকে অনুগ্রহ দেখিয়ে তাদের মৃত্যুর আগে প্রতিজ্ঞাত মশীহকে দেখার সুযোগ দিয়েছিলেন। শিমিয়োন শিশুটির সম্বন্ধে একটি ভবিষ্যদ্বাণী করেন। এই ভবিষ্যদ্বাণীটিতে আশার সঙ্গে সঙ্গে শোকের ছোঁয়াও ছিল। তিনি এই শিশুর মা মরিয়মকে বলেন যে তার প্রিয় পুত্রের বিষয়ে তিনি প্রচণ্ড দুঃখ পাবেন।—লূক ২:২৫-৩৫.
শিশুটির জন্য বিপদ
শিমিয়োনের ভবিষ্যদ্বাণীটি এক দুঃখজনক বিষয় মনে করিয়ে দেয় যে এই নিষ্পাপ শিশুটি ঘৃণিত হবে। এমনকি শিশু থাকা অবস্থাতেই তাঁর প্রতি এই ঘৃণা দেখানো শুরু হয়। কিভাবে দেখানো হয় মথির বিবরণ তা বিশদভাবে বর্ণনা করে। বেশ কয়েক মাস কেটে গেছে, যোষেফ, মরিয়ম ও যীশু এখন বৈথলেহমের একটি বাড়িতে বাস করেন। একদিন হঠাৎই তাদের কাছে কয়েক জন বিদেশী অতিথি আসেন। যীশুর জন্মসংক্রান্ত দৃশ্যগুলি যা দেখায় তা সত্ত্বেও, ঠিক কতজন লোক এসেছিলেন মথি সেই বিষয়ে কিছু বলেন না কিংবা তাদের “পণ্ডিত” বলেও অভিহিত করেন না আর তাদের “তিন জন রাজা” বলার তো প্রশ্নই আসে না। তিনি গ্রিক শব্দ ম্যাজাই ব্যবহার করেন যার অর্থ “জ্যোতিষীবর্গ।” কেবল এই বিষয়টি থেকেই পাঠকেরা চিন্তা করার জন্য একটি সূত্র পেতে পারেন যে এখানে মন্দ কোন শক্তি কাজ করছে কারণ জ্যোতিষিবিদ্যা এমন এক ধরনের বিষয় যেটিকে ঈশ্বরের বাক্য নিন্দা করে এবং বিশ্বস্ত যিহূদীরা সতর্কতার সঙ্গে এর থেকে দূরে থাকত।—দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১০-১২; যিশাইয় ৪৭:১৩, ১৪.
এই জ্যোতিষীরা পূর্বদেশ থেকে একটি তারাকে অনুসরণ করে এসেছেন এবং তারা “যিহূদীদের যে রাজা জন্মিয়াছেন” তাঁর জন্য উপহারও নিয়ে এসেছেন। (মথি ২:২) কিন্তু এটি তাদের বৈথলেহমে নিয়ে যায়নি। এটি তাদেরকে যিরূশালেমে মহান হেরোদের কাছে নিয়ে যায়। তিনি এমন একজন ব্যক্তি যার ছোট্ট যীশুকে হত্যা করতে কোন সময়ই লাগবে না আর বিশ্বে তার চেয়ে বড় শত্রু যীশুর আর নেই। এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী, খুনী লোকটি তার পরিবারের কয়েক জন নিকট সদস্যকে পর্যন্ত হত্যা করেছিলেন যাদেরকে তিনি তার পথের কাঁটা বলে মনে করেছিলেন।a যিহূদীদের ভাবী “রাজা” জন্মগ্রহণ করেছেন শুনে চিন্তিত হয়ে তিনি তাঁকে খুঁজে বের করার জন্য জ্যোতিষীদের তাড়াতাড়ি বৈথলেহমে পাঠিয়ে দেন। তাদের যাত্রা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি অদ্ভুত ব্যাপার ঘটে। যে “তারা” তাদেরকে পথ দেখিয়ে যিরূশালেমে নিয়ে এসেছিল সেটিকে চলতে দেখা যায়!—মথি ২:১-৯.
এখন, এটি আকাশের কোন তারা ছিল নাকি শুধুই এক দর্শন ছিল তা আমরা জানি না। আমরা শুধু জানি যে এই “তারা” ঈশ্বরের কাছ থেকে ছিল না। নিশ্চিত অমঙ্গলের লক্ষণ নিয়ে, এটি এই পৌত্তলিক উপাসকদের সোজা যীশুর কাছে নিয়ে যায়, যিনি তখন নিতান্তই শিশু এবং অসহায়, যার সুরক্ষার জন্য কেবল এক গরিব কাঠমিস্ত্রী ও তার স্ত্রী ছিলেন। জ্যোতিষীরা হেরোদের ধূর্ত চাল না জানায় হয়ত প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজার কাছে খবর দেওয়ার জন্য ফিরে যেতেন আর রাজা শিশুটিকে হত্যা করতেন। কিন্তু ঈশ্বর একটি স্বপ্নের মাধ্যমে মাঝপথে বাধা দেন এবং তাদেরকে অন্য একটি পথে স্বদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেন। সুতরাং, ‘তারাটি’ নিশ্চয়ই ঈশ্বরের শত্রু শয়তানের একটি কৌশল ছিল, যে মশীহের ক্ষতি করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করবে। যীশুর জন্মসংক্রান্ত দৃশ্যগুলিতে “তারা” ও জ্যোতিষীদেরকে ঈশ্বরের প্রেরিত হিসাবে তুলে ধরা কতই না পরিহাসজনক!—মথি ২:৯-১২.
তবুও, শয়তান হাল ছেড়ে দেয় না। এই ব্যাপারে তার হাতের পুতুল, রাজা হেরোদ বৈথলেহমে দুই বছরের নিচের সমস্ত শিশুকে হত্যা করার আদেশ জারি করেন। কিন্তু শয়তান যিহোবার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হতে পারে না। মথি উল্লেখ করেন যে ঈশ্বর বহু পূর্বেই নির্দোষ শিশুদের এই বিদ্বেষপূর্ণ হত্যাকে দেখতে পেয়েছিলেন। একজন দূতের মাধ্যমে যোষেফকে নিরাপত্তার জন্য মিশরে পালিয়ে যেতে বলে যিহোবা আবারও শয়তানকে বাধা দিয়েছিলেন। মথি বলেন যে কিছু দিন পরে যোষেফ আবারও তার ছোট পরিবারকে নিয়ে বাসস্থান পরিবর্তন করেন এবং সবশেষে নাসরতে স্থায়ীভাবে বাস করতে শুরু করেন, যেখানে যীশু তাঁর ছোট ভাইবোনেদের সঙ্গে বড় হয়েছিলেন।—মথি ২:১৩-২৩; ১৩:৫৫, ৫৬.
খ্রীষ্টের জন্ম—আপনার জন্য এর অর্থ
যীশুর জন্ম ও শৈশবকালের ঘটনাবলি সম্বন্ধে এই সংক্ষিপ্ত বর্ণনা কি আপনাকে কিছুটা হলেও বিস্মিত করেছে? অনেককেই করে থাকে। তারা বিস্মিত হন যখন তারা দেখেন যে বিবরণগুলির একটি আরেকটির সঙ্গে শুধু হুবহু মিলেই যায় না এগুলি পুরোপুরি সঠিক যদিও কিছু লোক এর বিরুদ্ধে বলে থাকেন। কিছু কিছু ঘটনা শত শত বছর আগেই ভাববাণী করা হয়েছিল তা জানতে পেরেও তারা বিস্মিত হন। আর তারা তখন বিস্মিত হন যখন তারা দেখেন যে যীশুর জন্মসংক্রান্ত পরম্পরাগত কাহিনী ও দৃশ্যগুলিতে যা তুলে ধরা হয় তার থেকে সুসমাচারের কিছু মুখ্য বিষয়বস্তু কতই না আলাদা।
আর এগুলির চেয়েও বেশি বিস্ময়ের বিষয় হল, অধিকাংশ বড়দিন উৎসবগুলিই সুসমাচারে বর্ণিত অতন্ত্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে বাদ দিয়ে দিয়েছে। দৃষ্টান্ত হিসাবে বলা যায়, যীশুর পিতা—যোষেফ নয় কিন্তু যিহোবা ঈশ্বরকে—সম্পূর্ণভাব উপেক্ষা করা হয়। ঈশ্বর যখন তাঁর প্রিয় পুত্রের লালনপালনের দায়িত্ব যোষেফ ও মরিয়মকে দিয়েছিলেন তখন তাঁর অনুভূতির কথা কল্পনা করুন। স্বর্গীয় পিতার যন্ত্রণা সম্বন্ধে ভাবুন যিনি তাঁর পুত্রকে এমন এক জগতে বড় হতে দিয়েছেন যেখানে একজন ঘৃণা পোষণকারী রাজা এমনকি শিশু অবস্থাতেই তাঁর পুত্রকে হত্যা করার চক্রান্ত করবে! মানবজাতির জন্য প্রগাঢ় ভালবাসার কারণেই যিহোবা এই ত্যাগস্বীকার করতে প্রস্তুত ছিলেন।—যোহন ৩:১৬.
বাস্তবে প্রায়ই বড়দিনের উৎসবগুলিতে যীশুর কোন স্থানই থাকে না। আর, এমন কোন প্রমাণ নেই যে তিনি কখনও শিষ্যদেরকে তাঁর জন্মের তারিখ সম্বন্ধে বলেছিলেন কিংবা এমন কোন ইঙ্গিতও পাওয়া যায় না যে তাঁর অনুগামীরা তাঁর জন্মদিন পালন করেছিলেন।
যীশুর জন্ম নয় কিন্তু মৃত্যু—আর এটির ইতিহাস সৃষ্টিকারী তাৎপর্য—স্মরণ করার জন্য তিনি তাঁর শিষ্যদের আদেশ দিয়েছিলেন। (লূক ২২:১৯, ২০) যীশু চাননি যে তাঁকে জাবপাত্রে রাখা এক অসহায় শিশু হিসাবে স্মরণ করা হোক কারণ তিনি এখন আর তা নন। তাঁর মৃত্যুদণ্ডের ৬০ বছরেরও বেশি সময় পরে, যীশু প্রেরিত যোহনের কাছে যুদ্ধে গমনকারী শক্তিমান রাজা হিসাবে দর্শন দিয়েছিলেন। (প্রকাশিত বাক্য ১৯:১১-১৬) আজকে যীশুকে আমাদের এই ভূমিকায় অর্থাৎ ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্যের শাসক হিসাবে জানা প্রয়োজন কারণ তিনিই হলেন সেই রাজা যিনি জগৎকে পরিবর্তন করবেন।
[পাদটীকাগুলো]
a কৈসর আগস্ত মন্তব্য করেছিলেন যে হেরোদের পুত্র হওয়ার চেয়ে বরং হেরোদের শূকরছানা হওয়া বেশি নিরাপদ ছিল।
[৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবার দূতেরা নম্র মেষপালকদেরকে খ্রীষ্টের জন্মের সুসংবাদ দিয়ে অনুগ্রহ দেখিয়েছিলেন