অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২২
গান ১২৭ যে-ধরনের ব্যক্তি আমার হওয়া উচিত
কীভাবে আপনি ডেটিং করার সময়ে ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন?
‘তোমাদের ভিতরের ব্যক্তিত্ব বহুমূল্য।’—১ পিতর ৩:৪.
আমরা কী শিখব?
ডেটিং করার সময়ে একজন ছেলে ও মেয়ে কীভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে আর মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা কীভাবে তাদের সাহায্য করতে পারে?
১-২. ডেটিং করার বিষয়ে কিছু ভাই-বোন কী বলেছে?
একজন ছেলে ও মেয়ে যখন ডেটিং করে, তখন তাদের চোখে-মুখে এক আলাদাই আনন্দ ফুটে ওঠে। হতে পারে, আপনি এখন ডেটিং করছেন। আপনি নিশ্চয়ই অনেক খুশি আর চান যেন সব কিছু ভালোভাবে হয়। আপনার মতো অনেকেই ডেটিং করার সময়ে আনন্দ পেয়েছে। তাদের মধ্যে একজন হলেন ইথিওপীয়ায় থাকা আমাদের বোন সিয়ান।a তিনি বলেন: “আমি আর আমার স্বামী যখন ডেটিং করছিলাম, তখন আমি যে কত আনন্দে ছিলাম, তা বলে বোঝাতে পারব না। আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলতাম, কিন্তু আমরা অনেক হাসি-মজাও করতাম। আমি যখন বুঝতে পারি, আমি আমার ভালোবাসার মানুষকে পেয়ে গিয়েছি আর সেও আমাকে অনেক ভালোবাসে, তখন আমার আনন্দ আকাশ ছুঁয়ে গিয়েছিল।”
২ কিন্তু, নেদারল্যান্ডসে থাকা ভাই অ্যালেসো যখন ডেটিং করছিলেন, তখন এমনটা হয়নি। তিনি বলেন: “আমি আর আমার স্ত্রী যখন ডেটিং করছিলাম, তখন আমার খুব ভালো লাগছিল। আমি অনেক আনন্দে ছিলাম। তবে, আমাদের সামনে কিছু সমস্যাও এসেছিল।” এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, ডেটিং করার সময়ে কোন কোন সমস্যা আসতে পারে এবং একজন ছেলে ও মেয়ে বাইবেলের কোন নীতিগুলো মনে রেখে ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আমরা এও জানতে পারব, কীভাবে মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা তাদের সাহায্য করতে পারে।
কেন ডেটিং করা হয়?
৩. ডেটিং করার উদ্দেশ্য কী হওয়া উচিত? (হিতোপদেশ ২০:২৫)
৩ এটা ঠিক যে, ডেটিং করতে খুবই ভালো লাগে, তবে এটাকে হালকাভাবেও নেওয়া উচিত নয়। কেন? কারণ ডেটিং করার মাধ্যমে একজন ছেলে ও মেয়ে সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা বিয়ে করবে কি করবে না। তারা যদি বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়, তা হলে তারা যিহোবার সামনে এই শপথ নেয় যে, তারা সারা জীবন একসঙ্গে থাকবে, একে অন্যকে মন থেকে ভালোবাসবে এবং একে অন্যকে সম্মান করবে। বাইবেলে বলা হয়েছে, কোনো শপথ নেওয়ার আগে আমরা যেন সেই বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি। তাই, যিহোবার সামনে করা বিয়ের শপথ একটা গুরুগম্ভীর বিষয়। (পড়ুন, হিতোপদেশ ২০:২৫.) একজন ছেলে ও মেয়ে যখন ডেটিং করে, তখন তারা একে অন্যকে ভালোভাবে জানার সুযোগ পায় আর চিন্তাভাবনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিছু ছেলে-মেয়ে হয়তো বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়, আবার কেউ কেউ ব্রেকাপ করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং তাদের সম্পর্ক সেখানেই শেষ করে দেয়। তারা যদি ব্রেকাপ করার সিদ্ধান্ত নেয়, তা হলে এটা কি খারাপ বিষয়? একেবারেই না! আমাদের বুঝতে হবে, ডেটিং করার উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে অর্থাৎ তারা একে অন্যকে ভালোভাবে জেনে গিয়েছে আর বুঝে গিয়েছে যে, তারা একে অন্যের ভালো জীবনসঙ্গী হতে পারবে কি না।
৪. কেন আমাদের সবার ডেটিং করার বিষয়ে এক সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি রাখা উচিত?
৪ ডেটিং করার সময়ে আমাদের এক সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি রাখা উচিত। কেন? একজন ছেলে ও মেয়ে যদি ডেটিং করার সময়ে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি রাখে, তা হলে তারা এমন কারো সঙ্গে ডেটিং করবে না, যাকে তারা বিয়ে করতে চায় না। এটা কেবল অবিবাহিত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেই নয়, কিন্তু আমাদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিছু লোক মনে করে, একজন ছেলে ও মেয়ে যদি ডেটিং করে, তা হলে তাদের বিয়ে করতেই হবে। এইরকম দৃষ্টিভঙ্গি একজন অবিবাহিত ব্যক্তির উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারে? আমেরিকায় থাকা আমাদের অবিবাহিত বোন মেলিসা বলেন: “কিছু ভাই-বোন মনে করে, ডেটিং করলে বিয়ে করতেই হবে। এই কারণে একজন ছেলে ও মেয়ে ব্রেকাপ করতে চাইলেও ভাই-বোনদের ভয়ে তা করতে পারে না। আর কিছু ভাই-বোন কারো সঙ্গেই ডেটিং করতে চায় না। এইসমস্ত কিছু চিন্তা করে একজন ছেলে ও মেয়ে যে কত টেনশনে থাকে, তা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।”
একে অন্যকে ভালোভাবে জানুন
৫-৬. যারা ডেটিং করছে, তাদের একে অন্যের বিষয়ে কী জানা উচিত? (১ পিতর ৩:৪)
৫ হতে পারে, আপনি এখন কারো সঙ্গে ডেটিং করছেন। তাই, আপনি কীভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে, আপনি তাকে বিয়ে করবেন কি না? একে অন্যকে ভালোভাবে জানুন। ডেটিং শুরু করার আগে আপনি হয়তো তার সম্বন্ধে কিছু বিষয় জেনেছেন। কিন্তু, এখন আপনার কাছে তার ‘ভিতরের ব্যক্তিত্ব’ অর্থাৎ সে আসলে কেমন, তা জানার সুযোগ রয়েছে। যেমন, যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ক কেমন, তার স্বভাব কেমন আর সে কী চিন্তা করে। (পড়ুন, ১ পিতর ৩:৪.) কিছুসময় পর আপনি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাবেন: ‘সে কি আমার জন্য এক ভালো জীবনসঙ্গী হবে?’ (হিতো. ৩১:২৬, ২৭, ৩০; ইফি. ৫:৩৩; ১ তীম. ৫:৮) ‘আমরা কি একে অন্যের অনুভূতি বুঝতে পারব এবং একে অন্যের যত্ন নিতে পারব?’ ‘আমরা কি একে অন্যের দুর্বলতাগুলো জেনেও একসঙ্গে থাকতে পারব?’b (রোমীয় ৩:২৩) আপনারা একসঙ্গে থাকতে পারবেন কি না, তা আপনি কীভাবে জানতে পারেন? শুধুমাত্র এটা দেখবেন না যে, আপনাদের পছন্দ অপছন্দ ও চিন্তাধারা মিলছে কি না, কিন্তু এও দেখুন, কোনো বিষয়ে আপনারা যদি একমত না হন, তা হলে আপনারা মানিয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকেন কি না।
৬ আপনি যার সঙ্গে ডেটিং করছেন, তার সম্বন্ধে আপনার আর কী জানা উচিত? তার প্রেমে পড়ার আগেই তার সম্বন্ধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনে নেওয়া ভালো হবে। আপনি হয়তো তার কিছু ব্যক্তিগত বিষয়ও জানতে চাইবেন, যেমন তার কোনো রোগ আছে কি না, তার টাকাপয়সার সমস্যা রয়েছে কি না অথবা কোনো খারাপ স্মৃতির কারণে সে এখনও কষ্ট পাচ্ছে কি না। এই বিষয়গুলো জানা গুরুত্বপূর্ণ। তবে, এমনটা চিন্তা করবেন না যে, ডেটিং করার প্রথম দিকেই আপনাকে এইসমস্ত কিছু জানতে হবে। (তুলনা করুন, যোহন ১৬:১২.) অপর দিকে, সেই ব্যক্তি যদি আপনাকে এইরকম কিছু জিজ্ঞেস করে, যেগুলোর উত্তর আপনি এখন দিতে চান না, তা হলে বলুন যে, আমরা এই বিষয়ে পরে কথা বলব। তবে, পরে অবশ্যই সেগুলো নিয়ে কথা বলুন কারণ বিয়ের আগে এগুলো জানা গুরুত্বপূর্ণ।
৭. যারা ডেটিং করছে, তারা একে অন্যকে আরও ভালোভাবে জানার জন্য কী করতে পারে? (এ ছাড়া, “আপনারা যদি একে অন্যের কাছ থেকে দূরে থাকেন, তা হলে কীভাবে ডেটিং করবেন?” বক্স দেখুন।) (ছবিগুলোও দেখুন।)
৭ কীভাবে আপনি জানতে পারেন, আপনি যার সঙ্গে ডেটিং করছেন, সে ভিতর থেকে কেমন? একে অন্যের সঙ্গে মন খুলে কথা বলুন এবং কিছুই লুকোবেন না। একে অন্যকে প্রশ্ন করুন আর একে অন্যের কথা মন দিয়ে শুনুন। (হিতো. ২০:৫; যাকোব ১:১৯) এটা করার জন্য আপনারা একসঙ্গে মিলে কিছু কাজ করতে পারেন, যেটার ফলে আপনারা একে অন্যের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাবেন। একসঙ্গে খাবার খান, রাস্তায় হাঁটুন আর একসঙ্গে প্রচার করুন। একে অন্যকে আরও ভালোভাবে জানার জন্য আপনাদের দু-জনের পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মিলে সময় কাটাতে পারেন। এ ছাড়া, আপনারা একসঙ্গে মিলে এমন কিছু কাজ করতে পারেন, যেগুলোর মাধ্যমে আপনি দেখতে পাবেন, সেই ব্যক্তি আলাদা আলাদা পরিস্থিতিতে এবং আলাদা আলাদা লোকের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করে। নেদারল্যান্ডসে থাকা ভাই অ্যাসভিনের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। তিনি বলেন, তিনি যখন এলিসার সঙ্গে ডেটিং করছিলেন, তখন তিনি কী কী করেছিলেন: “একে অন্যকে আরও ভালোভাবে জানার জন্য আমরা একসঙ্গে কিছু কাজ করেছিলাম। আমরা রান্না করতাম অথবা ঘরের কোনো কাজ করতাম। একসঙ্গে ছোটো ছোটো কাজ করার ফলে আমরা একে অন্যের ভালো গুণগুলো আর সেইসঙ্গে দুর্বলতাগুলোও জানতে পেরেছি।”
আপনারা দু-জনে যদি এমন কিছু করেন, যেগুলোর ফলে আপনারা একে অন্যের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন, তা হলে আপনারা একে অন্যকে আরও ভালোভাবে জানতে পারবেন (৭-৮ অনুচ্ছেদ দেখুন)
৮. একসঙ্গে অধ্যয়ন করলে কোন ভালো ফলাফল পাওয়া যায়?
৮ একে অন্যকে আরও ভালোভাবে জানার জন্য আপনারা একসঙ্গে বাইবেলের কোনো বিষয় নিয়ে অধ্যয়ন করতে পারেন। পরে গিয়ে আপনারা যখন বিয়ে করবেন, তখন আপনারা নিশ্চয়ই পারিবারিক উপাসনা করবেন, যেটার ফলে যিহোবার সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে। (উপ. ৪:১২) তাই, এখন থেকেই একসঙ্গে অধ্যয়ন করার জন্য সময় বের করুন। যদিও আপনারা এখনও স্বামী-স্ত্রী হননি এবং সেই ভাই আপনার মস্তক হননি, তা সত্ত্বেও একসঙ্গে অধ্যয়ন করলে আপনারা জানতে পারবেন, যিহোবার সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক কেমন। আমেরিকায় থাকা ভাই ম্যাক্স ও বোন লিসা তা করার মাধ্যমে ভালো ফলাফল পেয়েছিলেন। ম্যাক্স বলেন: “ডেটিং করার শুরুতে আমরা ডেটিং, বিয়ে, পরিবার ও পারিবারিক জীবন নিয়ে অধ্যয়ন করেছিলাম। আমরা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে মন খুলে কথা বলতে পেরেছিলাম, যেগুলো নিয়ে কথা বলা আমাদের জন্য সবসময় সহজ ছিল না।”
মনে রাখার মতো কিছু বিষয়
৯. একজন ছেলে ও মেয়ে কীভাবে ঠিক করতে পারে যে, তারা কাকে তাদের ডেটিংয়ের বিষয়ে বলবে?
৯ আপনার কাকে বলা উচিত যে, আপনারা ডেটিং করছেন? আপনারা দু-জনে মিলে তা ঠিক করতে পারেন। প্রথম প্রথম আপনি হয়তো অল্প কিছু জনকে এই বিষয়ে বলবেন। (হিতো. ১৭:২৭) তা করলে, লোকেরা আপনাদের অনেক প্রশ্ন করবে না অথবা আপনি এই বিষয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করবেন না যে, আপনাকে দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু, আপনি যদি কাউকেই না বলেন, তা হলে আপনি হয়তো এই চিন্তা করে ভয় পাবেন, কেউ জানলে কী হবে। আপনি হয়তো লুকিয়ে লুকিয়ে তার সঙ্গে দেখা করবেন। আর তা করা কিন্তু খুবই বিপদজনক! তাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে, আপনি এই বিষয়ে যেন তাদের বলেন, যারা আপনাকে ভালো পরামর্শ দেবে আর সাহায্য করবে। (হিতো. ১৫:২২) যেমন আপনি আপনার পরিবারের কিছু সদস্যকে, কিছু ভালো বন্ধুকে অথবা কিছু প্রাচীনকে বলতে পারেন।
১০. কীভাবে একজন ছেলে ও মেয়ে ডেটিং করার সময়ে সঠিক আচার-আচরণ বজায় রাখতে পারে? (হিতোপদেশ ২২:৩)
১০ ডেটিং করার সময়ে কীভাবে আপনি সঠিক আচার-আচরণ বজায় রাখতে পারেন? যতবেশি আপনারা একে অন্যকে জানবেন, ততবেশি আপনারা একে অন্যের কাছাকাছি থাকতে চাইবেন। তাই, কীভাবে আপনারা খেয়াল রাখতে পারেন যেন আপনারা কোনো ভুল করে না ফেলেন এবং সঠিক আচার-আচরণ করেন? (১ করি. ৬:১৮) একে অন্যের সঙ্গে নোংরা কথা বলবেন না। খেয়াল রাখবেন যেন আপনারা কখনোই একা না থাকেন আর অতিরিক্ত মদ না খান। (ইফি. ৫:৩) আপনি যদি এমন কিছু করেন, তা হলে আপনার মধ্যে হয়তো খারাপ আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠবে এবং সঠিক আচার-আচরণ বজায় রাখা আপনার জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। তাই, ভালো হবে যদি আপনারা নিয়মিতভাবে আলোচনা করেন, কোন বিষয়গুলো আপনাদের খেয়াল রাখতে হবে আর কীভাবে আপনারা সঠিক আচার-আচরণ করতে পারেন। (পড়ুন, হিতোপদেশ ২২:৩.) আসুন দেখি, ইথিওপীয়ায় থাকা ভাই দাভিত এবং তার স্ত্রী আলমাজ কী করেছিলেন: “আমরা সবসময় খেয়াল রেখেছিলাম যেন আমরা একা না থাকি, যেটার কারণে আমরা হয়তো কোনো খারাপ কাজ করে ফেলতে পারি। আমরা যখন একসঙ্গে সময় কাটাতাম, তখন আমাদের বন্ধুদের সঙ্গে থাকতাম অথবা অন্যদের চোখের সামনে থাকতাম। আমরা গাড়িতে বা বাড়িতে কোথাও একা থাকতাম না।”
১১. একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা দেখানোর সময়ে একজন ছেলে ও মেয়েকে কোন বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে?
১১ আপনাদের সম্পর্ক যদি এগোতে থাকে, তা হলে আপনারা হয়তো কিছু উপায়ে একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা দেখাতে চাইবেন আর তা দেখানো ভুলও নয়। তবে, এই ক্ষেত্রে একটা সীমা স্থির করা ভালো হবে। (পরম. ১:২; ২:৬) ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে যদি আপনার মধ্যে যৌনসম্পর্ক করার ইচ্ছা জেগে ওঠে, তা হলে আপনি হয়তো অপর ব্যক্তিকে খারাপ চোখে দেখা শুরু করবেন এবং আবেগের বশে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবেন। অথবা আপনি হয়তো নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না আর এই কারণে কোনো খারাপ কাজ করে ফেলবেন। (হিতো. ৬:২৭) তাই, আপনারা কীভাবে একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা দেখাবেন এবং কী কী করবেন না, তা স্থির করার সময়ে বাইবেলের নীতিগুলো মাথায় রাখুন।c (১ থিষল. ৪:৩-৭) দু-জন মিলে এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করুন: ‘আমরা যদি এভাবে একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা দেখাই, তা হলে লোকেরা কী মনে করবে? এমনটা করলে কি আমাদের দু-জনের মধ্যে কারো যৌনসম্পর্ক করার ইচ্ছা জেগে উঠবে?’
১২. একজন ছেলে ও মেয়ের মধ্যে যদি সমস্যা দেখা দেয় অথবা তারা কোনো বিষয়ে একমত নয়, তা হলে তাদের কী করা উচিত?
১২ আপনাদের মধ্যে যদি সমস্যা দেখা দেয় অথবা আপনারা কোনো বিষয়ে একমত না হন, তা হলে কী করতে পারেন? আপনারা যদি কখনো কখনো কোনো বিষয়ে একমত না হন, তার মানে কি আপনারা একে অন্যের জন্য ভালো জীবনসঙ্গী নন? আসলে, আমাদের সবার সঙ্গেই এমনটা হয়। তবে বর্তমানে আপনি যেভাবে সমস্যাগুলোর সমাধান করেন, সেটা থেকে বোঝা যাবে, আপনি বিয়ের পর কী করবেন এবং আপনাদের সম্পর্ক কেমন হবে। মনে রাখবেন, কোনো বিষয়ে স্বামী ও স্ত্রী একমত না হলেও তারা যদি একসঙ্গে মিলে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছায়, তা হলে তাদের বিয়ের বন্ধন আরও মজবুত হবে। একসঙ্গে আলোচনা করুন: ‘আমরা কি শান্তভাবে সমস্যাগুলোর সমাধান করি আর একে অন্যের প্রতি সম্মান দেখাই? আমরা কি সঙ্গেসঙ্গে আমাদের ভুলগুলো মেনে নিই আর নিজেদের সংশোধন করি? আমরা কি একে অন্যের কথা শুনি, একে অন্যকে ক্ষমা করি এবং একে অন্যের কাছে ক্ষমা চাই?’ (ইফি. ৪:৩১, ৩২) কিন্তু আপনাদের মধ্যে যদি এখনই ঝগড়াঝাঁটি বা কথা কাটাকাটি হয়, তা হলে আশা করবেন না যে, বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে। আপনি যদি মনে করেন, অপর ব্যক্তি আপনার জন্য ঠিক নয়, তা হলে দু-জনের জন্য ভালো হবে যেন আপনারা ডেটিং করা সেখানেই বন্ধ করে দেন।d
১৩. কত সময় ধরে ডেটিং করা উচিত, এই বিষয়ে একজন ছেলে ও মেয়েকে কী মনে রাখতে হবে?
১৩ আপনার কত সময় ধরে ডেটিং করা উচিত? তাড়াহুড়ো করে নেওয়া সিদ্ধান্ত প্রায়ই খারাপ পরিণতি ডেকে আনে। (হিতো. ২১:৫) তাই, যতক্ষণ না আপনি অপর ব্যক্তিকে ভালোভাবে জানছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত ডেটিং চালিয়ে যান। তবে এর মানে এই নয় যে, আপনারা ডেটিং করে চলবেন অথচ কোনো সিদ্ধান্তই নেবেন না। বাইবেল বলে: “আশা পূর্ণ হতে দেরি হলে অন্তর ভেংগে পড়ে।” (হিতো. ১৩:১২, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন) এ ছাড়া, আপনারা যদি বেশি সময় ধরে ডেটিং করেন, তা হলে যৌনসম্পর্ক করার ইচ্ছা দমিয়ে রাখা আপনাদের জন্য হয়তো কঠিন হয়ে পড়বে। (১ করি. ৭:৯) তাই, আপনাদের কত সময় ধরে ডেটিং করা উচিত, এই বিষয়ে চিন্তা করার পরিবর্তে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘তার সম্বন্ধে আমার আর কী জানা বাকি আছে, যাতে আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারি যে, আমি তাকে বিয়ে করব কি না?’
কীভাবে ভাই-বোনেরা সাহায্য করতে পারে?
১৪. কীভাবে ভাই-বোনেরা তাদের সাহায্য করতে পারে, যারা ডেটিং করছে? (ছবিও দেখুন।)
১৪ আপনি যদি জানতে পারেন, কোনো ছেলে ও মেয়ে ডেটিং করছে, তা হলে আপনি কীভাবে তাদের সাহায্য করতে পারেন? আপনি তাদের আপনার বাড়িতে খাবারের জন্য অথবা পারিবারিক উপাসনায় ডাকতে পারেন কিংবা একসঙ্গে কিছু খেলতে পারেন। (রোমীয় ১২:১৩) আপনি যখন তাদের ডাকবেন, তখন তারা একে অন্যকে আরও ভালোভাবে জানার সুযোগ পাবে। তারা যদি কোথাও ঘুরতে যেতে চায় অথবা গাড়ি করে কোথাও যেতে চায়, তা হলে আপনি তাদের সঙ্গে যেতে পারেন। তারা যদি একা কথা বলতে চায়, তা হলে আপনার বাড়িতে তাদের ডাকতে পারেন। (গালা. ৬:১০) এলিসা, যার বিষয়ে আগে উল্লেখ করা হয়েছে, বলেন যে, কোন বিষয়টা তার এবং তার স্বামী অ্যাসভিনের সবচেয়ে ভালো লেগেছিল। বোন বলেন: “কিছু ভাই-বোন আমাদের বলেছিল, আমরা যদি একা কথা বলতে চাই, তা হলে আমরা তাদের বাড়িতে যেতে পারি। এটা শুনে আমাদের খুব ভালো লেগেছিল।” কোনো ছেলে ও মেয়ে যদি আপনাকে এসে বলে, তারা যখন ডেটিং করবে, তখন যেন আপনি তাদের সঙ্গে থাকেন, তা হলে সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে আপনি তাদের সাহায্য করতে পারেন। খেয়াল রাখুন যেন তারা আপনার চোখের সামনেই থাকে, তবে তাদের একা কথা বলতে দিন আর একসঙ্গে সময় কাটাতে দিন।—ফিলি. ২:৪.
আমরা যদি জানতে পারি, কোনো ছেলে ও মেয়ে ডেটিং করছে, তা হলে আমরা তাদের বিভিন্ন উপায়ে সাহায্য করতে পারি (১৪-১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)
১৫. যারা ডেটিং করছে, তাদের সাহায্য করার জন্য ভাই-বোনেরা আর কী করতে পারে? (হিতোপদেশ ১২:১৮)
১৫ যারা ডেটিং করে, তাদের আমরা আরেকটা উপায়ে সাহায্য করতে পারি: আমরা কী বলি আর কী বলি না, সেই বিষয়ে খেয়াল রাখার মাধ্যমে। কখনো কখনো আমাদের হয়তো আমাদের জিভকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। (পড়ুন, হিতোপদেশ ১২:১৮.) আমরা হয়তো বলতে চাই, অমুক ভাই অথবা অমুক বোন ডেটিং করছে। কিন্তু, তারা নিজেরা যদি অন্যদের না বলে, তা হলে আমাদেরও অন্যদের বলা উচিত নয়। যারা ডেটিং করছে, তাদের বিষয়ে আমাদের গুজব ছড়ানো উচিত নয় অথবা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়গুলো নিয়ে সমালোচনা করা উচিত নয়। (হিতো. ২০:১৯; রোমীয় ১৪:১০; ১ থিষল. ৪:১১) এ ছাড়া, আমাদের কাউকেই এমন কোনো কথা বলা উচিত নয় অথবা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা উচিত নয়, যেটার কারণে সে মনে করতে পারে যে, অমুক ভাই অথবা অমুক বোনের বিয়ে করা উচিত কিংবা তারা বিয়ে করতে যাচ্ছে। এগুলো শুনলে সেই ভাই অথবা বোনের খারাপ লাগতে পারে। বোন এলিস এবং তার স্বামী বলেন: “অন্যেরা যখন আমাদের জিজ্ঞেস করেছিল যে, আমরা কবে বিয়ে করছি, তখন আমরা লজ্জায় পড়ে গিয়েছিলাম কারণ তখনও পর্যন্ত আমরা নিজেরা এই বিষয়ে কথা বলিনি।”
১৬. একজন ছেলে ও মেয়ে যদি ব্রেকাপ করে, তা হলে আমাদের কী করা উচিত নয়?
১৬ একজন ছেলে ও মেয়ে যদি ব্রেকাপ করে নেয়, তা হলে আমাদের কী করা উচিত নয়? আমাদের গভীরে গিয়ে এটা জানার চেষ্টা করা উচিত নয় যে, কেন তারা ডেটিং করা বন্ধ করে দিয়েছে আর সেইসঙ্গে এটাও ধরে নেওয়া উচিত নয়, নিশ্চয়ই তাদের মধ্যে কোনো এক জনের ভুল ছিল। (১ পিতর ৪:১৫) বোন লিয়া বলেন: “আমি যখন একজন ভাইয়ের সঙ্গে ব্রেকাপ করি, তখন লোকেরা আমাদের বিষয়ে অনেক কিছু বানিয়ে বানিয়ে বলত। সেগুলো শুনে আমি খুব কষ্ট পেতাম।” কিন্তু আমরা যেমনটা শুরুতে দেখেছিলাম, ব্রেকাপ করা ভুল নয়। এর মানে হল, ডেটিং করার উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে। যেমন এই ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়ে বুঝে গিয়েছে যে, তারা একে অন্যের ভালো জীবনসঙ্গী হবে না। তবে, ব্রেকাপের পর একজন ছেলে অথবা মেয়ে হয়তো অনেক দুঃখে থাকে এবং নিজেকে একা বলে মনে করে। তাই, আমাদের বিভিন্ন উপায়ে তাকে সাহায্য করা উচিত।—হিতো. ১৭:১৭.
১৭. যারা বর্তমানে ডেটিং করছে, তাদের কী করতে হবে?
১৭ ডেটিং করার সময়ে আপনার সামনে হয়তো সমস্যা আসবে, কিন্তু ডেটিং করে আপনি অনেক আনন্দ পাবেন। জেসিকা বলেন: “এটা ঠিক যে, ডেটিং করার সময়ে আমাদের অনেক কিছু করতে হয়েছিল। তবে, আমাদের পরিশ্রম ব্যর্থ হয়নি। আমরা একে অন্যকে আরও ভালোভাবে জানতে পেরেছিলাম।” বর্তমানে আপনি যদি ডেটিং করে থাকেন, তা হলে একে অন্যকে ভালোভাবে জানার চেষ্টা করুন। তা করলে আপনি ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন এবং আপনারা দু-জনেই আনন্দে থাকবেন।
গান ৪৯ যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করা
a কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
b এইরকম আরও প্রশ্ন জানার জন্য Questions Young People Ask—Answers That Work, Volume 2 বইয়ের ৩৯-৪০ পৃষ্ঠা দেখুন।
c অন্য ব্যক্তির যৌনাঙ্গতে হাত বোলানো এক ধরনের অনৈতিক কাজ, যেটার কারণে মণ্ডলীর প্রাচীনেরা বিচার সংক্রান্ত কমিটি গঠন করে। এ ছাড়া, অন্যের স্তনে হাত বোলানো এবং ম্যাসেজ বা ফোনের মাধ্যমে অনৈতিক কথাবার্তা বলার কারণেও প্রাচীনেরা বিচার সংক্রান্ত কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তবে তারা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সেই সিদ্ধান্ত নেয়।
d আরও জানার জন্য ১৯৯৯ সালের ১৫ আগস্ট প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় দেওয়া “পাঠকদের থেকে প্রশ্নসকল” দেখুন।