ভয় কখন শেষ হবে?
আপনি কি এই জেনে অবাক হবেন যে প্রকৃত নিরাপত্তা এমন এক ব্যক্তির সাথে জড়িত যিনি ২,০০০ বছর আগে জীবিত ছিলেন? প্রেমের প্রয়োজনীয়তা দেখিয়ে, যীশু একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত দেন: “এক ব্যক্তি যিরূশালেম হইতে যিরীহোতে নামিয়া যাইতেছিল, এমন সময়ে দস্যুদলের হস্তে পড়িল; তাহারা তাহার বস্ত্র খুলিয়া লইল, এবং তাহাকে আঘাত করিয়া আধমরা ফেলিয়া চলিয়া গেল।” যদিও দুইজন ভ্রমণকারী আক্রান্ত ব্যক্তিটিকে উপেক্ষা করে, এক শমরীয় তার প্রতি করুণা দেখায়। কিন্তু, আজকে যারা অপরাধের শিকার হয় তাদের প্রতি কারা যত্ন নেয়? ভয়ের থেকে কিধরনের নিস্তার আমরা আশা করতে পারি?—লূক ১০:৩০-৩৭.
অনেকে যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে বলে দাবি জানায়, তারা মনে করে যে নিয়ম ও শৃঙ্খলা মানুষকেই বলবৎ করতে হবে। কিন্তু আরও কঠোর-কারাদন্ড অথবা পুলিশদের আরও বেশি বেতন দিলে কি হিংসাত্মক অপরাধের শেষ হবে? আপনি কি সত্যই বিশ্বাস করেন যে নিয়ম-বলবৎকারী সংস্থাগুলি, কিছুটা পরিমাণে সুরক্ষা দেওয়ার আন্তরিক চেষ্টা করা সত্ত্বেও, তারা ড্রাগের অপব্যবহার, সংগঠিত অপরাধ এবং দারিদ্রতা মুছে ফেলতে পারবে? তবুও, আমাদের ধার্মিকতার জন্য ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত হওয়া বিফল হবে না।—মথি ৫:৬.
গীতসংহিতা ৪৬:১ পদ বলে: “ঈশ্বর আমাদের পক্ষে আশ্রয় ও বল। তিনি সঙ্কটকালে অতি সুপ্রাপ্য সহায়।” আমরা দেখব যে, এই কথাগুলি সুন্দর এক পদ্যের চাইতে আরও কিছু বেশি।
আপনি যেমন জানেন, প্রচার মাধ্যম প্রতিদিন গৃহযুদ্ধে নির্মম হত্যা এবং সন্ত্রাসবাদীদের আক্রমণের বিষয় রিপোর্ট করে। জগতের কিছু কিছু অংশে অবাঞ্ছিত যুবক-যুবতীদের অথবা প্রত্যক্ষদর্শীদের হত্যা করা এক সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। জীবনের মূল্য কেন এত কমে গেছে? যদিও এইধরনের দৌরাত্ম্যের অনেক কারণ থাকতে পারে, কিন্তু একটি কারণ আছে যা আমাদের উপেক্ষা করা উচিত নয়।
ঈশ্বরের বাক্য, বাইবেল অনুযায়ী “সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে।” (১ যোহন ৫:১৯) বস্তুতপক্ষে, যীশু খ্রীষ্ট, শয়তান দিয়াবলকে শুধুমাত্র মিথ্যাবাদী বলে শনাক্ত করেননি, কিন্তু “নরঘাতক” হিসাবে শনাক্ত করেছিলেন। (যোহন ৮:৪৪) মানবজাতিকে বিভিন্ন উপায়ে প্রভাবিত করে, এই শক্তিশালী আত্মিক প্রাণীটি আজকের দিনে দৌরাত্ম্য বৃদ্ধির পিছনে ইন্ধন যোগাচ্ছে। প্রকাশিত বাক্য ১২:১২ পদ বলে, “পৃথিবী ও সমুদ্রের সন্তাপ হইবে; কেননা দিয়াবল তোমাদের নিকটে নামিয়া গিয়াছে; সে অতিশয় রাগাপন্ন, সে জানে, তাহার কাল সংক্ষিপ্ত।” কিন্তু, আনন্দের বিষয় এই যে, এই দুষ্ট ব্যবস্থা, “নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর . . . যাহার মধ্যে ধার্ম্মিকতা বসতি করে,” তার দ্বারা পরিবর্তিত হবে।—২ পিতর ৩:১৩.
এক নতুন জগতের এই অপূর্ব আশা ছাড়াও আমাদের কাছে এখন কী সাহায্য রয়েছে?
এর প্রতি ইতিবাচক উত্তর পাওয়ার আগে, এটি ভাল হবে যদি আমরা মনে রাখি যে এমনকি প্রকৃত খ্রীষ্টানেরাও যে অপরাধ থেকে সুরক্ষিত থাকবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। প্রেরিত পৌল কিছু ঝুঁকির কথা বর্ণনা করেন, ব্যক্তিগতভাবে যেগুলির সম্মুখীন তিনি হয়েছিলেন। তিনি “নদীসঙ্কটে, দস্যুসঙ্কটে, [তার] স্বজাতি-ঘটিত সঙ্কটে, পরজাতি-ঘটিত সঙ্কটে, নগরসঙ্কটে, মরুসঙ্কটে, সমুদ্রসঙ্কটে”-র সম্মুখীন হয়েছিলেন। (২ করিন্থীয় ১১:২৬) তবুও পৌল এই সব বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। এটি ঠিক একইভাবে আমাদের দিনেও প্রযোজ্য; সতর্ক হওয়ার দ্বারা আমরা আমাদের কাজকে এখনও যতটা সম্ভব স্বাভাবিকভাবে সম্পন্ন করতে পারি। কয়েকটি জিনিস যা সাহায্য করতে পারে, আসুন আমরা তা বিবেচনা করি।
যদি কোন ব্যক্তি বিপজ্জনক পরিবেশে বাস করে তাহলে উত্তম আচরণ সুরক্ষাস্বরূপ হতে পারে, যেহেতু লোকেরা অন্যদের ঘনিষ্ঠভাবে লক্ষ্য করে থাকে। যদিও ডাকাতেরা পরিকল্পনা করার মাধ্যমে তাদের অপরাধকে সম্পন্ন করে তবুও অনেকেই তাদের সাধারণ লোক বলে মনে করে। তারা যা করে সেই বিষয় নিয়ে সমালোচনা করাকে এড়িয়ে চলুন এবং তারা যে কাজের সাথে যুক্ত আছে সেই বিষয়ে অনুসন্ধান করার চেষ্টা করবেন না। এইভাবে, আপনি নিজেকে প্রতিশোধের লক্ষ্য হওয়ার সম্ভাবনাকে কমিয়ে দিতে পারেন। এটি মনে রাখুন যে চোরেরা জানবার চেষ্টা করে যে, কে নতুন জিনিস কিনেছে অথবা কে ছুটিতে যাচ্ছে আর এর ফলে ঘরেতে থাকবে না, তাই অন্যদের কাছে কিছু বলার বিষয়ে বিচক্ষণতা অবলম্বন করুন।
যিহোবার সাক্ষীদের অনেকেই দেখেছেন যে প্রচারক হিসাবে তাদের খ্যাতি তাদের অনেক পরিমাণে সুরক্ষা দিয়েছে। অপরাধীরা বেশির ভাগ সময় এমন খ্রীষ্টানদের সম্মান করে যারা পক্ষপাতিত্বহীনভাবে সমাজের লোকেদের সাহায্য করে থাকে। সাক্ষীরা নিজেরা খুনী অথবা চোর নন, কিংবা তারা “পরাধিকারচর্চ্চক” নন তাই তাদের কাছ থেকে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই।—১ পিতর ৪:১৫.
ঈশ্বরের নতুন জগতে সুরক্ষা
আমরা যীশুর ভবিষ্যদ্বাণী “অধর্ম্মের বৃদ্ধি”-কে পরিতাপ করি, কিন্তু এই বিষয়ে বেশি চিন্তা না করে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে ঈশ্বর এই দুষ্ট জগদ্ব্যবস্থাকে শীঘ্রই মুছে ফেলবেন। “রাজ্যের এই সুসমাচার,” জগদ্ব্যাপী প্রচার করা হবে এ সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করা ছাড়াও, যীশু তাঁর অনুগামীদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন: “যে কেহ শেষ পর্য্যন্ত স্থির থাকিবে, সেই পরিত্রাণ পাইবে।”—মথি ২৪:১২-১৪.
আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে যারা অপরকে আক্রমণ করে এবং কখনও কখনও তা নৃশংসতার সাথে করে থাকে, তারা আর থাকবে না। হিতোপদেশ ২২:২২, ২৩ পদ বলে: “দীনহীন বলিয়া দীনহীন লোকের দ্রব্য হরণ করিও না, দুঃখীকে পুরদ্বারে চূর্ণ করিও না। কেননা সদাপ্রভু তাহাদের পক্ষ সমর্থন করিবেন, আর যাহারা তাহাদের দ্রব্য হরণ করে, তাহাদের প্রাণ হরণ করিবেন।” যিহোবা দুষ্টদের, যেমন ডাকাত, খুনী এবং যৌন বিকৃত ব্যক্তিদের ধ্বংস করবেন। এছাড়াও, তিনি অপরাধের যারা শিকার সেই সব ব্যক্তিদের উপেক্ষা করবেন না। তিনি তাদের ক্ষতিপূরণ করবেন এবং সম্পূর্ণরূপে তাদের স্বাস্থ্য ফিরিয়ে দেবেন।
সত্যই, যারা ‘মন্দ হইতে দূরে যায়, সদাচরণ করে,’ তারা আগত মহাক্লেশ থেকে রক্ষা পেয়ে অথবা মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়ে অনন্ত জীবন পাবে। “ধার্ম্মিকেরা দেশের [পৃথিবীর, NW] অধিকারী হইবে, তাহারা নিয়ত তথায় বাস করিবে।” (গীতসংহিতা ৩৭:২৭-২৯) যীশুর মুক্তির মূল্য রূপ বলিদানের দরুন এই উপকারগুলি পাওয়া সম্ভব হবে। (যোহন ৩:১৬) কিন্তু পুনর্স্থাপিত পরমদেশে জীবন কিরকম হবে?
ঈশ্বরের রাজ্যের অধীনে জীবন প্রকৃতই আনন্দের হবে। যিহোবা ভবিষ্যদ্বাণী করেন: “আমার প্রজাগণ শান্তির আশ্রমে, নিঃশঙ্কতার আবাসে ও নিশ্চিন্ততার বিশ্রাম-স্থানে বাস করিবে।” (যিশাইয় ৩২:১৮) যারাই অনন্ত জীবন লাভ করবে তারা ইতিমধ্যেই তাদের ব্যক্তিত্বকে পরিবর্তন করে ফেলবে। কেউ দুষ্ট বা অন্যায়কারী হবে না, অথবা কেউ এইধরনের ব্যক্তির সম্ভাব্য শিকারও হবে না। ভাববাদী মীখা বলেন: “প্রত্যেকে আপন আপন দ্রাক্ষালতার ও আপন আপন ডুমুরবৃক্ষের তলে বসিবে; কেহ তাহাদিগকে ভয় দেখাইবে না।” (মীখা ৪:৪; যিহিষ্কেল ৩৪:২৮) আজকের দিনের বিপজ্জনক পরিবেশের চাইতে এটি কতই না ভিন্ন!
[৬ পৃষ্ঠার বাক্স]
সতর্ক থাকুন
অনেক অপরাধীরা পূর্ণ-সময় কাজ করে, অপরাধকে তাদের পেশা করে তোলে। তারা হয়ত দুই কিংবা তিনের দ্বারা গঠিত দল হিসাবে কাজ করতে পারে, যদিও বা একজন হয়ত আপনার দিকে বন্দুক তাক করতে পারে। এটি অধিকরূপে প্রমাণিত হচ্ছে যে অপরাধী যত কমবয়সী হবে ততই সে বেশি বিপজ্জনক। যদি আপনি এর শিকার হন তাহলে আপনি কী করতে পারেন?
ধীর থাকুন যাতে করে আপনি চোরকে উত্তেজিত না করেন—তার অনভিজ্ঞতার ফলে আপনার মৃত্যুও হতে পারে। যদি আপনি একজন যিহোবার সাক্ষী হন, তাহলে সেইভাবে নিজেকে শনাক্ত করুন। কিন্তু, চোর যা চায় তা দিয়ে দেওয়ার জন্য তৎপর থাকুন। যদি আপনি দেরি করেন তাহলে বিপদ আরও বেড়ে যাবে। পরে, আপনি হয়ত আপনার শনাক্তিকরণের কাগজ অথবা বাসভাড়া চাইতে নিরাপদ মনে করতে পারেন।
প্রায়ই ক্ষেত্রে আপনি বলতে পারবেন না যে কোন্ ব্যক্তি অপরাধী। কিছু চোর ড্রাগে আসক্ত থাকে, অথবা পেশাদারী, অন্যেরা হয়ত শুধুমাত্র খেতে চায়। যে কোন ক্ষেত্রেই হোক না কেন প্রচুর টাকা সঙ্গে রাখবেন না। গয়না, সোনার আংটি অথবা দামি ঘড়ি দেখানো এড়িয়ে চলুন। যেন ভয় পান না এমন ভাব দেখিয়ে সাধারণভাবে হাঁটুন ও ভ্রমণ করুন। লোকেদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকাবেন না যেন আপনি তাদের চিনবার চেষ্টা করছেন। যদি রাস্তায় গোলাগুলি চলে, রাস্তায় শুয়ে পড়ুন, কাপড় পরে ধুয়ে নেওয়া যাবে।—রিও ডি জনিরোর এক প্রাক্তন পুলিশ কর্মী।
[৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
ধীর থাকুন এবং চোর যা চায় তা দিয়ে দিন। যদি দেরি করেন, তাহলে বিপদ বাড়তে পারে