সত্যিই কি কেউ চিন্তা করেন?
‘উপদ্রুত লোকদের অশ্রু’ ঝরতে ঝরতে এক খর স্রোতা নদী হয়ে উঠেছে। এই অশ্রু সারা পৃথিবীর সেইসব লোকেদের চোখ থেকে ঝরছে যারা অগণিত ‘উপদ্রবের’ শিকার হন। আর এই উপদ্রুত লোকেরা ভাবেন যে তাদের “সান্ত্বনাকারী কেহ নাই” ও তাদের জন্য সত্যিই কেউ চিন্তা করেন না।—উপদেশক ৪:১.
এত অশ্রু ঝরা সত্ত্বেও, এমন কিছু লোকেরা আছেন যাদের আশেপাশের মানুষদের দুঃখকষ্ট তাদের হৃদয়কে একেবারেই স্পর্শ করে না। অন্যদের কষ্ট দেখেও তারা না দেখার ভান করেন, ঠিক যেমন যীশু খ্রীষ্টের দেওয়া দৃষ্টান্তের যাজক এবং লেবীয়, একজন লোকের প্রতি করেছিলেন যাকে ডাকাতরা মারধোর করে, তার সবকিছু কেড়ে নিয়ে পথের পাশে আধমরা অবস্থায় ফেলে রেখে গিয়েছিল। (লূক ১০:৩০-৩২) যতক্ষণ পর্যন্ত তারা এবং তাদের পরিবার ভাল আছে, ততক্ষণ পর্যন্ত অন্যদের অবস্থা নিয়ে মাথা ঘামানোর কোন প্রয়োজন আছে বলে তারা মনে করেন না। তারা যেন বলেন, “হোকগে যা খুশি তাতে আমার কি?”
এতে আমাদের অবাক হওয়া উচিত নয়। কারণ প্রেরিত পৌল আগেই বলেছিলেন যে “শেষ কালে” অনেক লোকেরা “স্নেহরহিত” হবে। (২ তীমথিয় ৩:১, ৩) অবহেলা বেড়ে যাওয়ায় একজন ব্যক্তি দুঃখ করে বলেছিলেন, ‘অন্যের জন্য চিন্তা করার এবং অন্যের সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার যে পুরনো আইরিশ ঐতিহ্য ও রীতি ছিল সে যুগ পাল্টে গিয়ে তার জায়গায় নিজের স্বার্থ দেখার নতুন যুগ এসেছে।’ সারা পৃথিবীতে লোকেরা শুধু নিজেদের স্বার্থে কাজ করে, অন্যদের কী হল না হল তাতে তাদের কারও কোন মাথা ব্যথা নেই।
চিন্তা করবেন এমন কাউকে দরকার
আমাদের জন্য চিন্তা করবেন সত্যিই এমন কাউকে দরকার। উদাহরণ হিসেবে জার্মানির সেই নিঃসঙ্গ ব্যক্তির কথা ভেবে দেখুন যাকে “এক বড়দিনের দিন মারা যাওয়ার পাঁচ বছর পর টেলিভিশনের সামনে বসা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল।” “বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যাওয়া এই নিঃসঙ্গ পঙ্গু ব্যক্তি” জীবনে অনেক দুঃখ সহ্য করেছিলেন আর যতদিন পর্যন্ত না ব্যাংক থেকে তার বাড়ি ভাড়ার টাকা আসা বন্ধ হয়ে যায় ততদিন পর্যন্ত কেউ তার কোন খোঁজখবর নেয়নি। তার কথা সত্যিই কেউ চিন্তা করেনি।
ক্ষমতাবান, লোভী জমিদারদের হাতে নিপীড়িত অসহায় লোকেদের কথাও চিন্তা করুন। একটা এলাকায় প্রায় ২,০০,০০০ (এলাকার এক চতুর্থাংশ) লোকেদের জমি কেড়ে নেওয়ার পর তারা “জুলুম এবং খাবারের অভাবে মারা যায়।” অথবা সেই শিশুদের কথাই ভাবুন যাদের ওপর নির্মম অত্যাচার করা হয়েছিল। একটা রিপোর্ট বলে: “[একটা দেশে] শিশুরা অগণিত নৃশংস কাজ দেখেছিল যা ভাবা যায় না, যেমন হত্যা, মারধোর, ধর্ষণ যা তারা কখনও কখনও অন্য কিশোরদের করতে দেখেছিল।” এখন আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যিনি এইরকম অন্যায়ের শিকার হন তিনি কেন কান্নাভেজা গলায় জিজ্ঞেস করেন যে “আমার কথা সত্যিই কি কেউ চিন্তা করেন?”
জাতিসংঘের একটা রিপোর্ট অনুযায়ী, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ১৩০ কোটি লোককে এক মার্কিন ডলারেরও কম টাকায় তাদের দিনের খরচ মেটাতে হয়। তারা নিশ্চয়ই ভাবেন যে কেউ কি তাদের জন্য চিন্তা করেন। হাজার হাজার শরণার্থীর মনেও এই একই কথা আসে যাদের সম্বন্ধে দি আইরিশ টাইমস্ বলে যে তাদেরকে “বাধ্য হয়ে কোন জঘন্য শরণার্থী শিবিরে বা এমন কোন দেশে থাকতে হয় যেখানে তাদের পছন্দ করা হয় না অথবা তাদের নিজেদের দেশে ফিরে যেতে হয় যেখানে হয়তো তখনও যুদ্ধ বা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলছে।” ওই একই রিপোর্টে বলা হয়েছিল এরকম করুন: “চোখ বন্ধ করুন, তিন পর্যন্ত গুনুন, ঠিক তখনই একটা শিশু মারা গেল। কতই না ভয়ংকর। আর আজকে ৩৫,০০০ শিশুর মধ্যে একজন শিশু অপুষ্টিতে বা এমন রোগে মারা যাবে যা প্রতিরোধ করা যেত।” তাই এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই যে অনেকেই হতাশায় এবং প্রচণ্ড দুঃখে কাঁদেন!—ইয়োব ৭:১১ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।
কিন্তু এই সমস্ত কিছু কি এভাবেই হওয়ার কথা ছিল? সত্যিই কি এমন কেউ আছেন যিনি আমাদের জন্য শুধু চিন্তাই করেন না কিন্তু দুঃখকষ্ট শেষ করার এবং লোকেদের ব্যথা দূর করার ক্ষমতাও তাঁর আছে?
[৩ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
A. Boulat/Sipa Press