“এরূপে দৌড়”
মনে করুন, একটা স্টেডিয়ামে হাজার হাজার উত্তেজিত দর্শকদের মাঝে বসে আপনি খেলা দেখছেন। খেলোয়াড়রা মাঠে নেমেছেন। দর্শকরা নিজের পছন্দের খেলোয়াড়দের দেখতে পেয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ছে। বিচারকমণ্ডলী খেলার নিয়মনীতি সম্বন্ধে জানিয়ে দিচ্ছেন। আর খেলা চলাকালে কেউ কেউ আনন্দে আবার কেউ কেউ হতাশায় চিৎকার করে ওঠে। এরপর যারা বিজয়ী হন তাদেরকে কানে তালা ধরে যায় এমন করতালি দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়!
তবে, এটা আজকের দিনের কোন খেলার মাঠে নয় কিন্তু আজ থেকে প্রায় ২,০০০ বছর আগে করিন্থের ইস্থ্মাসে বসে আপনি খেলা দেখছেন। সা.কা.পূ. প্রায় ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে সা.কা. চতুর্থ শতাব্দী পর্যন্ত প্রতি দুবছর পর পর এখানে বিখ্যাত ইস্থ্মিয়ান গেমস হতো। আর অনেক বছর পর্যন্ত গ্রিকদের কাছে এই খেলা খুবই জনপ্রিয় ছিল। এখানে শুধু সাধারণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হতো না। ক্রীড়াবিদরা সামরিক প্রস্তুতির প্রতীক ছিলেন। বিজয়ীদেরকে গাছের পাতা দিয়ে তৈরি মুকুট পরিয়ে দেওয়া হতো এবং বীর হিসেবেও পুজো করা হতো। তাদেরকে অনেক পুরস্কার দেওয়া হতো এবং মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত তারা শহর থেকে বেশ বড় অঙ্কের ভাতা পেতেন।
করিন্থের কাছে অনুষ্ঠিত এই ইস্থ্মিয়ান গেমস সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল খুব ভাল করে জানতেন আর তাই একজন খ্রীষ্টানের জীবনকে তিনি ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সঙ্গে তুলনা করেছেন। দৌড়বিদ, কুস্তিগির এবং মুষ্টিযোদ্ধাদের কথা বলে তিনি ভাল প্রশিক্ষণ, যথাযথ চেষ্টা এবং ধৈর্যের পুরস্কারের বিষয়টা সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। অবশ্য, যে খ্রীষ্টানদের কাছে তিনি এই চিঠি লিখেছিলেন তারাও এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতা সম্বন্ধে জানতেন। কোন সন্দেহ নেই যে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো খেলার মাঠে উল্লাসে ফেটে পড়া জনতার মধ্যে ছিলেন। তাই, পৌলের উদাহরণগুলো তারা খুব ভাল করে বুঝতে পেরেছিলেন। আজকে আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? অনন্ত জীবন পাওয়ার জন্য আমরাও এক দৌড় প্রতিযোগিতায় দৌড়ে চলেছি। বিভিন্ন প্রতিযোগিতা সম্বন্ধে পৌল যা বলেছেন, তা থেকে আমরা কীভাবে উপকার পেতে পারি?
‘বিধিমত প্রতিযোগিতা করা’
প্রাচীন কালে কোন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার ব্যাপারে খুব কড়াকড়ি নিয়ম ছিল। প্রত্যেক প্রতিযোগীকে ক্রীড়া কর্তৃপক্ষের একজন, দর্শকদের সামনে নিয়ে আসতেন এবং চিৎকার করে বলতেন: ‘কোন অপরাধের কারণে এই ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করতে চান এমন কেউ কি আছেন? তিনি কি একজন ডাকাত বা দুষ্ট লোক, অনৈতিক জীবনযাপন করেন বা অভদ্র?’ আরকিওলজিয়া গ্রিকা বলে: “কুখ্যাত অপরাধী হিসেবে পরিচিত বা এইরকম কোন কিছুর সঙ্গে [ঘনিষ্ঠভাবে] জড়িত কোন ব্যক্তিকে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হতো না।” আর কোন প্রতিযোগী যদি প্রতিযোগিতার নিয়ম মেনে না চলত, তাহলে প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দিয়ে তাকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হতো।
এই বিষয়টা আমাদেরকে পৌলের এই কথাগুলো বুঝতে সাহায্য করে: “কোন ব্যক্তি যদি মল্লযুদ্ধ করে [“ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়,” NW], সে বিধিমত যুদ্ধ [“প্রতিযোগিতা,” NW] না করিলে মুকুটে বিভূষিত হয় না।” (২ তীমথিয় ২:৫) ঠিক একইভাবে, জীবন দৌড়ে দৌড়ানোর সময় আমাদেরকে যিহোবা আমাদের কাছে যা চান তাই-ই করতে হবে এবং বাইবেলে দেওয়া তাঁর কিছু উচ্চ নৈতিক মান মেনে চলতে হবে। কিন্তু, বাইবেল আমাদেরকে সতর্ক করে: “বাল্যকাল অবধি মনুষ্যের মনস্কল্পনা দুষ্ট।” (আদিপুস্তক ৮:২১) তাই, দৌড় শুরু করার পরেও নিয়ম মেনে প্রতিযোগিতা করার ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, যাতে করে আমরা সবসময় যিহোবার অনুগ্রহ পাই এবং অনন্ত জীবন লাভ করি।
এভাবে প্রতিযোগিতা করার জন্য যে বিষয়টা সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে, তা হল ঈশ্বরের প্রতি প্রেম। (মার্ক ১২:২৯-৩১) এইরকম প্রেম থাকলে আমরা যিহোবাকে খুশি করতে চাইব এবং তাঁর ইচ্ছে মতো কাজ করব।—১ যোহন ৫:৩.
‘সমস্ত বোঝা ফেলিয়া দিই’
প্রাচীন কালে, প্রতিযোগিতার সময় দৌড়বিদরা কাপড়চোপড় পরে বা অন্য কিছু দিয়ে নিজেদের শরীরকে ভারী করে তুলতেন না। গ্রিক ও রোমীয়দের জীবন (ইংরেজি) বই বলে, “দৌড় প্রতিযোগিতায় . . . দৌড়বিদরা পুরোপুরি উলঙ্গ হয়ে প্রতিযোগিতায় নামতেন।” কারণ কাপড়চোপড় না পরে তারা চটপট কাজ ও সহজে চলাফেরা করতে পারতেন এবং তাদের নৈপুণ্য দেখাতে পারতেন। অপ্রয়োজনীয় বোঝার জন্য তাদের কোন শক্তি খরচ করতে হতো না। পৌলের মনেও হয়তো এই বিষয়গুলো ছিল যখন তিনি ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের কাছে লিখেছিলেন: “আইস, আমরাও সমস্ত বোঝা . . . ফেলিয়া দিয়া ধৈর্য্যপূর্ব্বক আমাদের সম্মুখস্থ ধাবনক্ষেত্রে দৌড়ি।”—ইব্রীয় ১২:১.
কোন্ ধরনের বোঝা আমাদেরকে জীবন দৌড়ে বাধা দিতে পারে? এর মধ্যে একটা হতে পারে অপ্রয়োজনীয় বস্তুগত বিষয়ের প্রতি আকাঙ্ক্ষা বা ব্যয়বহুল জীবনযাপন করা। কেউ কেউ হয়তো নিরাপত্তার জন্য ধনসম্পত্তির ওপর নির্ভর করে বা এটাকেই সুখের উৎস বলে মনে করে। এইধরনের অতিরিক্ত ‘বোঝার’ ফলে একজন দৌড়বিদ হয়তো এতটাই ধীরগতি হয়ে পড়তে পারেন যে, একসময় তিনি হয়তো ঈশ্বরের কথা ভুলে যেতে পারেন। (লূক ১২:১৬-২১) অনন্ত জীবনের আশাকে বহু দূরের কিছু বলে মনে হতে পারে। ‘নতুন জগৎ কোন একদিন আসবে’ একজন ব্যক্তি হয়তো যুক্তি দেখাতে পারেন ‘কিন্তু তার আগে যতটা সম্ভব এই জগৎ থেকে যা পাওয়া যায়, ভোগ করে নিই।’ (১ তীমথিয় ৬:১৭-১৯) এইধরনের বস্তুবাদী মনোভাব খুব সহজেই একজনকে জীবন দৌড় থেকে সরিয়ে দিতে পারে বা কাউকে কাউকে এমনকি তা শুরু করতেও বাধা দিতে পারে।
পাহাড়ে উপদেশ দেওয়ার সময় যীশু বলেছিলেন: “কেহই দুই কর্ত্তার দাসত্ব করিতে পারে না; কেননা সে হয় ত এক জনকে দ্বেষ করিবে, আর এক জনকে প্রেম করিবে, নয় ত এক জনের প্রতি অনুরক্ত হইবে, আর এক জনকে তুচ্ছ করিবে; তোমরা ঈশ্বর এবং ধন উভয়ের দাসত্ব করিতে পার না।” পশুপাখি এবং গাছপালার প্রতি যিহোবা কতখানি যত্ন নেন এবং এগুলোর চেয়ে মানুষ যে আরও বেশি মূল্যবান সে সম্বন্ধে বলার পর যীশু পরামর্শ দেন: “অতএব ইহা বলিয়া ভাবিত হইও না যে, ‘কি ভোজন করিব?’ বা ‘কি পান করিব?’ বা ‘কি পরিব?’ কেননা পরজাতীয়েরাই এই সকল বিষয় চেষ্টা করিয়া থাকে; তোমাদের স্বর্গীয় পিতা ত জানেন যে এই সকল দ্রব্যে তোমাদের প্রয়োজন আছে। কিন্তু, তোমরা প্রথমে তাঁহার রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর, তাহা হইলে ঐ সকল দ্রব্যও তোমাদিগকে দেওয়া হইবে।”—মথি ৬:২৪-৩৩.
‘ধৈর্য্যপূর্ব্বক দৌড়’
প্রাচীন কালে শুধু অল্প দূরত্বের মধ্যেই দৌড় প্রতিযোগিতা হতো না। যেমন, একটা প্রতিযোগিতার নাম ছিল ডোলিহস, যেখানে প্রায় চার কিলোমিটার পথ দৌড়াতে হতো। এটা ছিল শক্তি এবং ধৈর্যের পরীক্ষা। সা.কা.পূ. ৩২৮ সালের প্রথা অনুযায়ী, আইয়াস নামে এক প্রতিযোগী এই প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়ে তার জয়ের কথা ঘোষণা করার জন্য যেখানে প্রতিযোগিতা হয়েছিল, সেখান থেকে নিজের শহর আরগোসে দৌড়ে গিয়েছিলেন। সেই দিন তিনি প্রায় ১১০ কিলোমিটার পথ দৌড়েছিলেন।
খ্রীষ্টানদেরও অনেক দূর পর্যন্ত দৌড়াতে হবে আর এটা আমাদের ধৈর্যের পরীক্ষা নেয়। যিহোবার অনুগ্রহ এবং অনন্ত জীবন পুরস্কার পেতে চাইলে আমাদের এই প্রতিযোগিতায় ধৈর্য ধরে শেষ পর্যন্ত দৌড়াতে হবে। পৌল এভাবেই দৌড়েছিলেন। তাই, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি বলতে পেরেছিলেন: “আমি উত্তম যুদ্ধে প্রাণপণ করিয়াছি, নিরূপিত পথের শেষ পর্য্যন্ত দৌড়িয়াছি, বিশ্বাস রক্ষা করিয়াছি। এখন অবধি আমার নিমিত্ত ধার্ম্মিকতার মুকুট তোলা রহিয়াছে।” (২ তীমথিয় ৪:৭, ৮) পৌলের মতো আমাদেরও “শেষ পর্য্যন্ত” দৌড়াতে হবে। প্রথমে আমরা যতটা ভেবেছিলাম তার চেয়ে বেশি দৌড়াতে হবে বলে আমরা যদি ধৈর্য হারিয়ে ফেলি, তাহলে আমরা পুরস্কার পাব না। (ইব্রীয় ১১:৬) শেষ প্রান্তে এসে ধৈর্য হারিয়ে ফেললে তা আমাদের জন্য কত দুঃখেরই না হবে!
পুরস্কার
প্রাচীন কালে গ্রিক প্রতিযোগীদের মুকুট দেওয়া হতো, যা সাধারণত গাছের পাতা এবং ফুল দিয়ে তৈরি করা হতো। পিথিয়ান গেমসে বিজয়ীদেরকে জলপাই জাতীয় গাছের পাতা দিয়ে তৈরি মুকুট দেওয়া হতো। অলিম্পিয়ান গেমসে যারা জয়ী হতো তাদেরকে বুনো জলপাই গাছের পাতা দিয়ে তৈরি মুকুট এবং ইস্থ্মিয়ান গেমসে বিজয়ীদেরকে পাইন গাছের পাতা দিয়ে তৈরি মুকুট দেওয়া হতো। একজন বাইবেল পণ্ডিত বলেন, ‘প্রতিযোগীদের উৎসাহকে আরও বাড়ানোর জন্য প্রতিযোগিতার সময়, খেলার মাঠে তিন-পায়ার টুল অথবা টেবিলের ওপর মুকুট অর্থাৎ বিজয়ীদের পুরস্কারগুলো এবং তাল গাছের পাতা রাখা হতো। একজন বিজয়ীর জন্য ওই মুকুট পরা ছিল বিরাট গৌরবের ব্যাপার। ঘরে ফেরার পথে তিনি রথে চড়ে, শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে তার নিজ শহরে যেতেন।
এই কথা মনে রেখে পৌল করিন্থের পাঠকদের জিজ্ঞেস করেছিলেন: “তোমরা কি জান না যে, দৌড়ের স্থলে যাহারা দৌড়ে, তাহারা সকলে দৌড়ে, কিন্তু কেবল এক জন পুরস্কার পায়? তোমরা এরূপে দৌড় যেন পুরস্কার পাও। . . . তাহারা ক্ষয়ণীয় মুকুট পাইবার জন্য তাহা করে, কিন্তু আমরা অক্ষয় মুকুট পাইবার জন্য করি।” (১ করিন্থীয় ৯:২৪, ২৫; ১ পিতর ১:৩, ৪) এই পুরস্কার দুটোর মধ্যে কত পার্থক্যই না রয়েছে! যারা জীবন দৌড়ে দৌড়াচ্ছেন তারা যে পুরস্কার পাবেন, তা প্রাচীন কালের প্রতিযোগিতায় পাওয়া ক্ষয়ণীয় মুকুটের মতো কখনও নষ্ট হবে না।
এই উত্তম মুকুট সম্বন্ধে প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “প্রধান পালক প্রকাশিত হইলে তোমরা অম্লান প্রতাপমুকুট পাইবে।” (১ পিতর ৫:৪) এই জগতের কোন পুরস্কার কি খ্রীষ্টের সঙ্গে স্বর্গীয় মহিমায় অমর ও অক্ষয় জীবনের পুরস্কারের ধারেকাছে ঘেঁষতে পারে?
আজকে, বেশির ভাগ খ্রীষ্টান দৌড়বিদদেরই ঈশ্বর তাঁর আত্মিক পুত্র হওয়ার জন্য অভিষিক্ত করেননি এবং তাদেরকে কোন স্বর্গীয় আশাও দেওয়া হয়নি। তারা অমর জীবনের পুরস্কার পাওয়ার জন্য দৌড়ান না। কিন্তু, তাদের জন্যও ঈশ্বর অতুলনীয় পুরস্কারের ব্যবস্থা করেছেন। সেটা হল স্বর্গীয় রাজ্যের অধীনে পরমদেশ পৃথিবীতে সিদ্ধ অবস্থায় অনন্তকাল বেঁচে থাকার সুযোগ। একজন খ্রীষ্টান যে পুরস্কারের জন্যই চেষ্টা করুক না কেন, তাকে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার দৌড়বিদদের চেয়ে আরও দৃঢ় সংকল্প নিয়ে প্রাণপণ দৌড়াতে হবে। কেন? কারণ সেই পুরস্কার কখনও ক্ষয় হবে না: “ইহা তাঁহারই সেই প্রতিজ্ঞা, যাহা তিনি আপনি আমাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করিয়াছেন, তাহা অনন্ত জীবন।”—১ যোহন ২:২৫.
এই অতুলনীয় পুরস্কারকে সামনে রেখে খ্রীষ্টান দৌড়বিদের এই জগতের লোভনীয় সুযোগগুলোর প্রতি কেমন মনোভাব দেখানো উচিত? তাদের পৌলের মতো মনোভাব রাখা উচিত যিনি বলেছিলেন: “আমার প্রভু খ্রীষ্ট যীশুর জ্ঞানের শ্রেষ্ঠতা প্রযুক্ত আমি সকলই ক্ষতি বলিয়া গণ্য করিতেছি; তাঁহার নিমিত্ত সমস্তেরই ক্ষতি সহ্য করিয়াছি, এবং তাহা মলবৎ গণ্য করিতেছি।” পৌলকে কত কষ্ট করেই না দৌড়াতে হয়েছিল! “ভ্রাতৃগণ, আমি যে তাহা ধরিয়াছি, আপনার বিষয়ে এমন বিচার করি না; কিন্তু একটী কাজ করি, পশ্চাৎ স্থিত বিষয় সকল ভুলিয়া গিয়া সম্মুখস্থ বিষয়ের চেষ্টায় একাগ্র হইয়া লক্ষ্যের অভিমুখে দৌড়িতে দৌড়িতে আমি . . . পণ [“পুরস্কার,” NW] পাইবার জন্য যত্ন করিতেছি।” (ফিলিপীয় ৩:৮, ১৩, ১৪) পৌল পুরস্কারের প্রতি দৃষ্টি রেখে দৌড়েছিলেন। আমাদেরও তাই-ই করা উচিত।
আমাদের উত্তম আদর্শ
প্রাচীন কালের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের অনেক নামডাক হতো এবং লোকেরা তাদেরকে শ্রদ্ধা করত। কবিরা তাদের নিয়ে কবিতা লিখতেন এবং ভাস্কররা তাদের মূর্তি তৈরি করতেন। ঐতিহাসিক ভেরা ওলিভোভা বলেন যে তারা “প্রচুর প্রশংসা এবং জনপ্রিয়তা পেতেন।” এছাড়াও, তরুণ প্রজন্মের বিজয়ীরা তাদেরকে আদর্শ হিসেবে মনে করত।
কিন্তু, কে সেই “বিজয়ী” যিনি খ্রীষ্টানদের জন্য সবচেয়ে ভাল উদাহরণ রেখেছেন? এর উত্তরে পৌল বলেন: “আইস, আমরাও সমস্ত বোঝা ও সহজ বাধাজনক পাপ ফেলিয়া দিয়া ধৈর্য্যপূর্ব্বক আমাদের সম্মুখস্থ ধাবনক্ষেত্রে দৌড়ি; বিশ্বাসের আদিকর্ত্তা ও সিদ্ধিকর্ত্তা যীশুর প্রতি দৃষ্টি রাখি; তিনিই আপনার সম্মুখস্থ আনন্দের নিমিত্ত ক্রুশ সহ্য করিলেন, অপমান তুচ্ছ করিলেন, এবং ঈশ্বরের সিংহাসনের দক্ষিণে উপবিষ্ট হইয়াছেন।” (ইব্রীয় ১২:১, ২) হ্যাঁ, আমরা যদি অনন্ত জীবন দৌড়ে জয়ী হতে চাই, তাহলে আমাদের আদর্শ যীশু খ্রীষ্টের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। আর রোজ সুসমাচারের বইগুলো পড়ে এবং কীভাবে আমরা তাঁকে অনুকরণ করতে পারি, তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে আমরা তা করতে পারি। এইধরনের অধ্যয়ন আমাদেরকে বুঝতে সাহায্য করবে যে, যীশু খ্রীষ্ট ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য ছিলেন এবং ধৈর্য ধরে প্রমাণ দিয়েছিলেন যে তাঁর বিশ্বাস আছে। ধৈর্যের পুরস্কার হিসেবে তিনি যিহোবার অনুগ্রহ ও সেইসঙ্গে অনেক অপূর্ব সুযোগ পেয়েছিলেন।—ফিলিপীয় ২:৯-১১.
তবে, যীশুর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গুণ ছিল প্রেম। “যে আপন বন্ধুদের নিমিত্ত নিজ প্রাণ সমর্পণ করে, ইহা অপেক্ষা অধিক প্রেম কাহারও নাই।” (যোহন ১৫:১৩) শত্রুকেও আমাদের ভালবাসতে হবে বলে তিনি ‘প্রেমের’ অর্থকে আরও গভীর করেছিলেন। (মথি ৫:৪৩-৪৮) তিনি তাঁর স্বর্গীয় পিতাকে ভালবাসতেন বলেই তাঁর পিতার ইচ্ছা পালন করে আনন্দ পেয়েছিলেন। (গীতসংহিতা ৪০:৯, ১০; হিতোপদেশ ২৭:১১) এছাড়াও, যীশুকে আদর্শ হিসেবে দেখা এবং শক্তি ও মনের জোর নিয়ে কীভাবে জীবন দৌড়ে দৌড়াতে হবে, সেই বিষয়ে তিনি আমাদের জন্য যে পদচিহ্ন রেখে গিয়েছেন, তা অনুকরণ করা আমাদেরকে ঈশ্বর ও প্রতিবেশীকে ভালবাসতে এবং আমাদের পবিত্র সেবায় আনন্দ খুঁজে পেতে সাহায্য করবে। (মথি ২২:৩৭-৩৯; যোহন ১৩:৩৪; ১ পিতর ২:২১) মনে রাখবেন, যীশু আমাদের কাছ থেকে এমন কিছু চান না, যা আমাদের পক্ষে করা সম্ভব নয়। তিনি আমাদের নিশ্চয়তা দেন: “আমি মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত; তাহাতে তোমরা আপন আপন প্রাণের জন্য বিশ্রাম পাইবে। কারণ আমার যোঁয়ালি সহজ ও আমার ভার লঘু।”—মথি ১১:২৮-৩০.
যীশুর মতো আমাদেরও সেই পুরস্কারের প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে, যে পুরস্কার যারা শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরবে তারা সবাই পাবে। (মথি ২৪:১৩) আমরা যদি নিয়ম মেনে প্রতিযোগিতা করি, সমস্ত বোঝা ফেলে দিই এবং ধৈর্য নিয়ে দৌড়াই, তাহলে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে জয়ী আমরা হবই হব। লক্ষ্যের দিকে দৃষ্টি রাখা আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রেরণা দেয়! এটা আমাদের মনকে আনন্দে ভরিয়ে দেয় আর সেই আনন্দ আমাদের শক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করে ও আমাদের দৌড়ে চলার পথকে আরও সহজ করে তোলে।
[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
খ্রীষ্টানদের দীর্ঘ পথ দৌড়াতে হবে —এর জন্য ধৈর্যের দরকার
[৩০ পৃষ্ঠার চিত্র]
বিজয়ী দৌড়বিদদের মতো নয় কিন্তু খ্রীষ্টানরা অক্ষয় পুরস্কারের দিকে দৃষ্টি রাখতে পারেন
[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]
যারা শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরে তারা সবাই পুরস্কার পাবে
[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
Copyright British Museum