ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • g০৪ ৭/৮ পৃষ্ঠা ৭-১০
  • রোগব্যাধির সঙ্গে লড়াইয়ে সাফল্য এবং ব্যর্থতাগুলো

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • রোগব্যাধির সঙ্গে লড়াইয়ে সাফল্য এবং ব্যর্থতাগুলো
  • ২০০৪ সচেতন থাক!
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • আ্যন্টিবায়োটিকের যুগ
  • চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিজয়গুলো
  • রোগব্যাধির সঙ্গে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে ব্যর্থতাগুলো
  • “আমরা কি আজ আরও ভাল অবস্থায় আছি?”
  • উত্তম স্বাস্থ্যের জন্য যুগ যুগ ধরে লড়াই
    ২০০৪ সচেতন থাক!
  • রোগব্যাধিমুক্ত এক জগৎ
    ২০০৪ সচেতন থাক!
  • রোগব্যাধি এবং মৃত্যুর বিরুদ্ধে সংগ্রাম তাতে কি জয়লাভ করা যাচ্ছে?
    ১৯৯২ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • বিচক্ষণতার সাথে ওষুধ ব্যবহার করুন
    ১৯৯৭ সচেতন থাক!
২০০৪ সচেতন থাক!
g০৪ ৭/৮ পৃষ্ঠা ৭-১০

রোগব্যাধির সঙ্গে লড়াইয়ে সাফল্য এবং ব্যর্থতাগুলো

ডাক্তার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং ১৯৪২ সালের ৫ই আগস্ট বুঝতে পেরেছিলেন যে, তার একজন রোগী বন্ধুর মৃত্যু প্রায় আসন্ন। তার সেই ৫২ বছর বয়সী বন্ধুর স্পাইনাল মেনিনজাইটিস হয়েছিল এবং ফ্লেমিংয়ের অক্লান্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, তিনি কোমায় চলে গিয়েছিলেন।

পনেরো বছর আগে, ফ্লেমিং হঠাৎ করে নীলচে-সবুজ রঙের ছত্রাকের দ্বারা এক উল্লেখযোগ্য পদার্থ আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি সেই পদার্থকে পেনিসিলিন নাম দিয়েছিলেন। তিনি লক্ষ করেছিলেন যে, ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করার ক্ষমতা এটার ছিল; কিন্তু তিনি খাঁটি পেনিসিলিনকে আলাদা করতে পারেননি আর তিনি পরীক্ষা করে জেনেছিলেন যে, এটা হল কেবলমাত্র একটা আ্যন্টিসেপ্টিক। যাইহোক, ১৯৩৮ সালে হাউয়ার্ড ফ্লোরি এবং তার গবেষণা দল, অক্সফোর্ড ইউনিভারসিটিতে মানুষের দেহে নানা পরীক্ষা করার জন্য এই ওষুধ যথেষ্ট পরিমাণ তৈরির প্রতিদ্বন্দ্বিতা গ্রহণ করেছিলেন। ফ্লেমিং এই ব্যাপারে ফ্লোরিকে ফোন করেছিলেন, যিনি তার কাছে যত পেনিসিলিন ছিল, তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তার বন্ধুকে বাঁচানোর জন্য এটাই ছিল ফ্লেমিংয়ের শেষ সুযোগ।

পেশীমজ্জায় ইঞ্জেকশন দিয়ে পেনিসিলিন ঢোকানো অপর্যাপ্ত প্রমাণিত হয়েছিল, তাই ফ্লেমিং সেই ওষুধটা সরাসরি তার বন্ধুর মেরুদণ্ডে ইঞ্জেকশন দিয়ে ঢুকিয়েছিলেন। পেনিসিলিন সেই জীবাণুগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছিল; আর প্রায় এক সপ্তাহের মধ্যে ফ্লেমিংয়ের রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। আ্যন্টিবায়োটিক অর্থাৎ জীবাণু-প্রতিরোধী ওষুধগুলোর যুগ আরম্ভ হয়েছিল আর রোগব্যাধির বিরুদ্ধে মানবজাতির লড়াই এক নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছিল।

আ্যন্টিবায়োটিকের যুগ

এগুলো যখন প্রথম আবির্ভূত হয়, তখন আ্যন্টিবায়োটিকগুলোকে বিস্ময়কর ওষুধের মতো মনে হয়েছিল। ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক বা অন্যান্য ক্ষুদ্র জীবাণুগুলোর দ্বারা ঘটিত সংক্রামক রোগ, যেগুলোর চিকিৎসা আগে ছিল না, সেগুলোকে এখন সাফল্যের সঙ্গে চিকিৎসা করা যেতে পারে। নতুন নতুন ওষুধের সাহায্যে মেনিনজাইটিস, নিউমোনিয়া এবং স্কারলেট ফিভার (আরক্ত জ্বর) লক্ষণীয়ভাবে কমে গিয়েছিল। হাসপাতালে থাকার সময় সংক্রামিত রোগ যেগুলোর কারণে আগে মৃত্যু অনিবার্য ছিল, সেগুলো কয়েক দিনের মধ্যেই নির্মূল হয়ে গিয়েছিল।

ফ্লেমিংয়ের সময় থেকে, গবেষকরা অন্যান্য অগণিত আ্যন্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেছে এবং নতুন নতুন আ্যন্টিবায়োটিকের জন্য অনুসন্ধান অব্যাহত থাকে। বিগত ৬০ বছর ধরে, রোগব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আ্যন্টিবায়োটিকগুলো এক অপরিহার্য অস্ত্র হয়ে উঠেছে। জর্জ ওয়াশিংটন যদি আজকে বেঁচে থাকতেন, তা হলে নিঃসন্দেহে ডাক্তাররা কোনো একটা আ্যন্টিবায়োটিক দিয়ে তার গলা ব্যথার চিকিৎসা করতেন এবং সম্ভবত এক সপ্তাহ বা তারও কিছু বেশি সময়ের মধ্যে তিনি সুস্থ হয়ে উঠতেন। আ্যন্টিবায়োটিকগুলো বস্তুতপক্ষে আমাদের সকলকে কোনো না কোনো সংক্রমণ থেকে মুক্ত করেছে। কিন্তু এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, আ্যন্টিবায়োটিকেরও কিছু অপূর্ণতা রয়ে গেছে।

আ্যন্টিবায়োটিক চিকিৎসা সেই রোগগুলোর ক্ষেত্রে কার্যকরী নয় যেগুলো বিভিন্ন ভাইরাসের কারণে হয়, যেমন এইডস বা ইনফ্লুয়েঞ্জা। এ ছাড়া, কিছু লোকের নির্দিষ্ট ধরনের আ্যন্টিবায়োটিকে আ্যলার্জি হয়। আর বহুব্যাপক ক্ষুদ্র জীবাণুর বিরুদ্ধে ফলপ্রদ বর্ণছটাযুক্ত আ্যন্টিবায়োটিকগুলো হয়তো আমাদের দেহের অনেক সাহায্যকারী ক্ষুদ্র জীবাণুগুলোকে ধ্বংস করে দিতে পারে। কিন্তু, আ্যন্টিবায়োটিকগুলোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, সেগুলোর অতিরিক্ত ব্যবহার বা অসম্পূর্ণ ব্যবহার।

অসম্পূর্ণ ব্যবহার তখনই হয়, যখন রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আ্যন্টিবায়োটিক খাওয়া শেষ করে না, হয় তারা ভাল অনুভব করে বলে অথবা সেই চিকিৎসাপ্রণালী বেশ দীর্ঘ সময়ের বলে। ফলে, আ্যন্টিবায়োটিক হয়তো সমস্ত আক্রমণকারী ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস না-ও করতে পারে, যার ফলে তা প্রতিরোধী জীবাণুকে বেঁচে থাকার ও বংশবৃদ্ধি করার সুযোগ করে দেয়। যক্ষ্মারোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রায়ই এমনটা ঘটেছে।

ডাক্তার ও কৃষকরা উভয়ই এই নতুন ওষুধগুলো অতিরিক্ত ব্যবহার করার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে। “যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসকরা প্রায়ই অপ্রয়োজনীয় মাত্রায় আ্যন্টিবায়োটিকগুলো গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে এবং অন্যান্য অনেক দেশে এগুলোকে বেশি করে কোনোরকম বাছবিচার না করেই ব্যবহার করা হয়,” মানুষ ও নানা জীবাণু (ইংরেজি) বইটি ব্যাখ্যা করে। “গৃহপালিত পশুদের এগুলো প্রচুর পরিমাণে খাওয়ানো হয়েছে, রোগ সারানোর জন্য নয় কিন্তু তাদের বৃদ্ধিকে তরান্বিত করার জন্য; এটাই হল প্রধান কারণ যেজন্য আ্যন্টিবায়োটিকগুলোকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।” তাই এই বইটি সাবধান করে যে, এর ফলে “আমাদের হয়তো নতুন নতুন আ্যন্টিবায়োটিকের ঘাটতি দেখা দেবে।”

কিন্তু আ্যন্টিবায়োটিককে প্রতিরোধ করার কারণে সৃষ্টি হওয়া এই উদ্বিগ্নতাগুলো ছাড়াও, বিংশ শতাব্দীর শেষের পঞ্চাশ বছর ছিল চিকিৎসাজগতের বিজয়ের এক সময়। চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষকরা বলতে গেলে প্রায় যেকোনো রোগের সঙ্গে লড়াই করার মতো বিভিন্ন ওষুধ উদ্ভাবন করতে সক্ষম ছিল। আর টিকাগুলো এমনকি রোগ প্রতিরোধের প্রত্যাশা জুগিয়েছিল।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিজয়গুলো

“ইমিউনাইজেশন অর্থাৎ অনাক্রম্যকরণ হল ইতিহাসে জনস্বাস্থ্যের সবচেয়ে সাফল্যের কাহিনী,” বিশ্ব স্বাস্থ্য বিবরণ ১৯৯৯ (ইংরেজি) পত্রিকা উল্লেখ করেছিল। বিশ্বব্যাপী টিকাদানের বিরাট অভিযানের কারণে ইতিমধ্যেই লক্ষ লক্ষ লোকের জীবন বাঁচানো গিয়েছে। বিশ্বব্যাপী অনাক্রম্যকরণ কর্মসূচি গুটিবসন্তকে নির্মূল করেছে—যে-মারাত্মক রোগ এত এত মৃত্যু ঘটিয়েছে যে, বিংশ শতাব্দীতে হওয়া সমস্ত যুদ্ধেও এত লোক মারা যায়নি—আর একই ধরনের অভিযান পোলিও রোগকেও বলতে গেলে নির্মূল করে ফেলেছে। (“গুটিবসন্ত ও পোলিওর ওপর বিজয়” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।) অনেক শিশুদের এখন সাধারণ জীবনসংশয়কারী রোগগুলো থেকে রক্ষা করার জন্য টিকা দেওয়া হয়ে থাকে।

অন্যান্য রোগগুলোকে আরও কম উল্লেখযোগ্য পদ্ধতিগুলোর দ্বারা দমন করা গিয়েছে। কলেরার মতো জলবাহিত সংক্রামক রোগগুলো সেই স্থানগুলোতে কদাচিৎ সমস্যার সৃষ্টি করে, যেখানে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও বিশুদ্ধ জলের সরবরাহ রয়েছে। অনেক দেশে বার বার ডাক্তারের কাছে ও চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যাওয়ার সুবিধা হওয়ার ফলে অধিকাংশ রোগগুলো শনাক্ত করা এবং সেগুলো মারাত্মক হয়ে ওঠার আগেই চিকিৎসা করানো যাচ্ছে। এ ছাড়া, স্বাস্থ্যকর খাবারদাবার এবং জীবনযাপনের অবস্থায় উন্নতি ও সেইসঙ্গে খাবারদাবারের প্রতি সঠিক যত্ন নেওয়ার এবং সেগুলো মজুত করে রাখার ব্যাপারে বলবৎ আইনগুলোও জনসাধারণের স্বাস্থ্যে উন্নতি আনায় অবদান রেখেছে।

বিজ্ঞানীরা সংক্রামক রোগগুলোর কারণ আবিষ্কার করার পর, স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষরা কোনো মহামারী ছড়িয়ে পড়াকে রোধ করার জন্য কিছু বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে পারে। কেবলমাত্র একটা উদাহরণ বিবেচনা করুন। ১৯০৭ সালে সান ফ্রান্সিসকোতে বুবানিক মহামারীর প্রাদুর্ভাব অল্প কিছু লোকের মৃত্যু ঘটিয়েছিল কারণ সেই শহরের লোকেরা তাৎক্ষণিকভাবে সেই রক্তপায়ী ইঁদুরমাছি বহনকারী ইঁদুরগুলোকে ধ্বংস করার অভিযান শুরু করেছিল, যেগুলো রোগটা ছড়াচ্ছিল। অন্যদিকে, ১৮৯৬ সালে শুরু হয়ে পরবর্তী ১২ বছর সেই একই রোগ ভারতে এক কোটি লোকের মৃত্যু ঘটিয়েছিল, যেহেতু এই রোগের প্রধান কারণগুলোকে তখনও শনাক্ত করা যায়নি।

রোগব্যাধির সঙ্গে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে ব্যর্থতাগুলো

এটা স্পষ্ট যে, গুরুত্বপূর্ণ লড়াইগুলোতে জয়ী হওয়া গিয়েছে। কিন্তু, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিজয়গুলোর কিছু কেবল বিশ্বের ধনী দেশগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। চিকিৎসাযোগ্য রোগগুলো এখনও লক্ষ লক্ষ লোককে হত্যা করছে, শুধুমাত্র পর্যাপ্ত অর্থ তহবিলের অভাবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অনেক লোক এখনও পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা এবং বিশুদ্ধ জল পাওয়া থেকে বঞ্চিত। এই মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা বেশ কঠিন হয়ে উঠছে কারণ উন্নয়নশীল বিশ্বের গ্রামগুলো থেকে এক বিরাট জনসংখ্যা বড় বড় শহরে চলে আসছে। এই কারণগুলোর জন্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-র বর্ণনা অনুযায়ী, বিশ্বের দরিদ্র লোকেরা “অসমানুপাতিকভাবে রোগব্যাধির বোঝা” ভোগ করে থাকে।

স্বার্থপরতার জন্য দূরদৃষ্টির অভাবই হল এই ভারসাম্যহীন স্বাস্থ্যের প্রধান কারণ। “বিশ্বের সবচেয়ে সংক্রামক কিছু ঘাতক নির্মূল হয়ে গিয়েছে বলে মনে হয়,” মানুষ ও নানা জীবাণু বইটি বলে। “এগুলোর মধ্যে কিছু কিছু পুরোপুরিভাবে বা প্রধানত দরিদ্র ক্রান্তীয় ও প্রায় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ।” যেহেতু ধনী উন্নত দেশগুলো এবং ওষুধ নির্মাণ কোম্পানিগুলো সরাসরিভাবে উপকৃত না-ও হতে পারে, তাই তারা এই রোগগুলোর চিকিৎসার জন্য অর্থবন্টনে অসন্তোষ প্রকাশ করে।

এ ছাড়া, মানুষের বেপরোয়া স্বভাবও রোগব্যাধি ছড়ানোর একটা কারণ। এই কঠিন সত্যের সবচেয়ে বাস্তব উদাহরণ হচ্ছে এইডসের ভাইরাস, যা এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির দেহে শরীরের তরল পদার্থের দ্বারা সংক্রামিত হয়। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে, পৃথিবীব্যাপী এই ব্যাধিটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। (“এইডস—আমাদের সময়ের এক মহাবিপত্তি” নামক বাক্সটা দেখুন।) “মানুষেরা নিজের ওপর এটা নিজেই ডেকে এনেছে,” মহামারীবিদ জো ম্যাককরমিক দাবি করেন। “আর এটা সমালোচনামূলক উক্তি নয়, এটা একেবারে বাস্তব।”

মানুষেরা কীভাবে অজান্তেই এইডস ভাইরাস ছড়ানোর ব্যাপারে ভূমিকা রেখেছে? আসন্ন মহামারী (ইংরেজি) বইটি এই বিষয়গুলোর তালিকা করে: সামাজিক পরিবর্তনগুলো—বিশেষ করে কয়েক জন যৌনসঙ্গী থাকার অভ্যাস—যৌনবাহিত রোগগুলোর প্রাদুর্ভাব হওয়ার এক কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার ফলে এই ভাইরাস খুব সহজে আক্রান্ত করে এবং সহজেই একজন সংক্রামিত ব্যক্তি থেকে অন্যান্য অনেক লোক সংক্রামিত হয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে চিকিৎসার সময় সংক্রামিত, কারও দ্বারা ব্যবহৃত সিরিঞ্জগুলোর ব্যাপক ব্যবহারের ফলে অথবা সেইরকম সিরিঞ্জের সাহায্য অবৈধ মাদকদ্রব্য গ্রহণের একই প্রভাব রয়েছে; আর বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি ডলারের রক্ত ব্যাবসাও এইডস ভাইরাসকে একজন দাতার কাছ থেকে বহু সংখ্যক গ্রহীতার মধ্যে ছড়ানো সম্ভবপর করেছে।

আগে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, আ্যন্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার বা অসম্পূর্ণ ব্যবহার এমন জীবাণুগুলোর আবির্ভাব ঘটাতে অবদান রেখেছে, যেগুলো ওষুধকে প্রতিরোধ করতে পারে। সমস্যাটা গুরুতর হচ্ছে এবং দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। স্ট্যাফিলোকাকাস ব্যাকটেরিয়া, যা প্রায়ই ক্ষত সংক্রমণ ঘটায়, তা পেনিসিলিন থেকে নিষ্কাশিত রাসায়নিক পদার্থগুলোর দ্বারা সহজেই নির্মূল হয়ে যেত। কিন্তু এই আ্যন্টিবায়োটিক, যা পরম্পরাগতভাবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে তা এখন প্রায়ই অকার্যকর। তাই, ডাক্তারদের অবশ্যই আরও নতুন নতুন, দামী আ্যন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর হাসপাতালগুলোর কেনার সামর্থ্য নেই। এমনকি সবচেয়ে নতুন আ্যন্টিবায়োটিকগুলো হয়তো কিছু কিছু জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করতে অসমর্থ প্রমাণিত হতে পারে, যার ফলে হাসপাতালে থাকার সময় আক্রান্ত সংক্রামক রোগগুলো আরও সাধারণ ও আরও মারাত্মক হয়ে উঠবে। ইউ.এস. ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ আ্যলার্জি আ্যন্ড ইনফেকশিয়াস ডিজিজেস এর প্রাক্তন পরিচালক ড. রিচার্ড ক্রাউজ খোলাখুলিভাবে বর্তমান পরিস্থিতিকে “জীবাণুগুলোকে প্রতিরোধের এক মহামারী” বলে বর্ণনা করেন।

“আমরা কি আজ আরও ভাল অবস্থায় আছি?”

এখন, এটা একেবারে স্পষ্ট যে, একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে রোগের হুমকি অদৃশ্য হয়ে যায়নি। এইডস এর তীব্র প্রসার, ওষুধগুলো প্রতিরোধ করার জন্য রোগ উৎপাদনকারী জীবাণুর (pathogens) আবির্ভাব এবং যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়া রোগের মতো পুরনো ঘাতকগুলোর পুনরোদয় দেখায় যে, রোগব্যাধির সঙ্গে লড়াইয়ে এখনও জয়ী হওয়া যায়নি।

“এক শতাব্দী আগের চেয়ে আমরা কি এখন আরও ভাল অবস্থায় আছি?” নোবেল পুরস্কার বিজয়ী জশুয়া লিডারবার্গ জিজ্ঞেস করেছিলেন। “অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা আরও খারাপ অবস্থায় আছি,” তিনি বলেছিলেন। “আমরা জীবাণুগুলোকে তুচ্ছ করেছি আর সেটা এক পুনরুদিত বিষয়, যেগুলো আমাদের পিছু ধাওয়া করছে।” চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং বিশ্বের সমস্ত জাতির দ্বারা নেওয়া দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ প্রচেষ্টার দ্বারা কি বর্তমান বিপত্তিগুলোর মোকাবিলা করা যেতে পারে? প্রধান সংক্রামক রোগগুলো কি শেষ পর্যন্ত নির্মূল হবে, যেমন গুটিবসন্তের ক্ষেত্রে হয়েছিল? আমাদের শেষ প্রবন্ধটি এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করবে। (g০৪ ৫/২২)

[৮ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

গুটিবসন্ত এবং পোলিওর ওপর বিজয়

সাধারণভাবে ছড়িয়ে পড়া গুটিবসন্তের শেষ ঘটনা সম্বন্ধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ১৯৭৭ সালের অক্টোবর মাসের শেষে জানতে পারে। আলি মাও মালিন নামে সোমালিয়ায় বসবাসরত হাসপাতালের একজন রাঁধনি, এই রোগের দ্বারা তেমন গুরুতরভাবে আক্রান্ত হননি আর অল্প কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আবার সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। যত লোক তার সান্নিধ্যে এসেছিল, তাদের সকলকে টিকা দেওয়া হয়েছিল।

দীর্ঘ দুই বছর ডাক্তাররা উৎসুকভাবে অপেক্ষা করেছিল। কোনো ব্যক্তি যদি “গুটিবসন্ত শুরু হওয়ার ঘটনা” সম্বন্ধে আরেকটা নিশ্চিত প্রমাণের সন্ধান দিতে পারেন, তা হলে তাকে ১,০০০ মার্কিন ডলার পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। কেউই সেই পুরস্কার লাভের সঠিক দাবি জানাতে পারেনি আর ১৯৮০ সালের ৮ই মে WHO আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছিল যে, “বিশ্ব এবং এর সমস্ত লোক গুটিবসন্ত থেকে স্বাধীন হয়েছে।” মাত্র এক দশক আগে, প্রতি বছর গুটিবসন্তে প্রায় কুড়ি লক্ষ লোক মারা যাচ্ছিল। ইতিহাসে এই প্রথম এক বড় সংক্রামিত রোগকে নির্মূল করা গিয়েছিল।a

পোলিও বা পোলিওমায়োলাইটিসও একই সাফল্যের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিল, যেটা হল শিশু বয়সের এক রোগ যা দুর্বল করে ফেলে। ১৯৫৫ সালে জোনাস সক পোলিওর জন্য এক কার্যকরী টিকা প্রস্তুত করেছিলেন এবং যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশগুলোতে পোলিওর বিরুদ্ধে এক অনাক্রম্যকরণ অভিযান শুরু হয়েছিল। পরে খাওয়ার টিকা উদ্ভাবন করা হয়েছিল। ১৯৮৮ সালে, WHO পোলিও নির্মূলের জন্য বিশ্বব্যাপী কর্মসূচি চালু করেছিল।

“১৯৮৮ সালে আমরা যখন এই রোগ নির্মূলের প্রচেষ্টা শুরু করেছিলাম, তখন পোলিও প্রতিদিন ১০০০রেরও বেশি শিশুকে পক্ষাঘাত করে ফেলছিল,” WHO-র তৎকালীন মহাসচিব ডা. গ্রো হারলেম ব্রান্টলান বলেন। “২০০১ সালে, পুরো বছরে ১০০০রেরও কম ঘটনার রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে।” এখন পোলিও শুধুমাত্র দশটা দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ, তবে এই দেশগুলো থেকে শেষ পর্যন্ত রোগটাকে নির্মূল করতে সাহায্য করার জন্য প্রচুর অর্থ তহবিলের প্রয়োজন হবে।

[পাদটীকা]

a আন্তর্জাতিক টিকাদান অভিযানের মাধ্যমে রোগ দমন করার ক্ষেত্রে গুটিবসন্ত ছিল এক আদর্শ উদাহরণ কারণ গুটিবসন্তের ভাইরাস বেঁচে থাকার জন্য কোনো মানুষের শরীরে থাকতে হবে কিন্তু ইঁদুর বা পোকামাকড়ের মতো উপদ্রবকর রোগের বাহকগুলো, যেগুলো নানা রোগ ছড়ায় সেগুলোর ক্ষেত্রে তা ছিল না।

[চিত্র]

ইথিওপিয়ার একটা ছেলেকে পোলিও টিকা খাওয়ানো হচ্ছে

[সৌজন্যে]

© WHO/P. Virot

[১০ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

এইডস—আমাদের সময়ের এক মহাবিপত্তি

এইডস বিশ্বব্যাপী এক নতুন ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। ইতিমধ্যে, এটাকে শনাক্ত করার প্রায় ২০ বছর পর, ৬ কোটিরও বেশি লোক এটাতে সংক্রামিত হয়েছে। আর স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষরা সাবধান করে যে, বিশ্বব্যাপী ছড়াতে থাকা এইডস এখনও “প্রাথমিক পর্যায়েই” রয়েছে। সংক্রমণের হার “পূর্বে কল্পিত সম্ভাবনার চেয়ে আরও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে” আর বিশ্বের সবচেয়ে আক্রান্ত এলাকাগুলোতে এর প্রভাব ধ্বংসাত্মক।

“বিশ্বব্যাপী এইচআইভি/এইডস ভাইরাসে আক্রান্ত বিরাট সংখ্যক লোক তাদের জীবনের সবচেয়ে কার্যকর বছরগুলোতে রয়েছে,” রাষ্ট্রসংঘের একটা রিপোর্ট ব্যাখ্যা করে। ফলে, এটা মনে করা হয় যে, দক্ষিণ আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটা দেশ ২০০৫ সালের মধ্যে ১০ থেকে ২০ শতাংশ শ্রমবল হারাবে। সেই বিবরণ আরও বলে: “আফ্রিকায় সাহারার দক্ষিণে বর্তমানে লোকেদের গড় আয়ু ৪৭ বছর। যদি এইডস মুক্ত হতো তা হলে গড় আয়ু হতো ৬২ বছর।”

একটা টিকা উদ্ভাবনের প্রচেষ্টা এত দিন ধরে ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে আর উন্নয়নশীল বিশ্বে ষাট লক্ষ এইডস রোগীর মধ্যে মাত্র ৪ শতাংশ রোগী ওষুধের দ্বারা চিকিৎসা পেয়ে থাকে। বর্তমানে, এইডসের কোনো প্রতিকার নেই আর ডাক্তাররা আশঙ্কা করছে যে, অধিকাংশ লোক যারা সংক্রামিত, তারা শেষ পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত হবে।

[চিত্র]

টি লিমফোসাইট কোষগুলো এইচআইভি ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত

[সৌজন্যে]

Godo-Foto

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

পরীক্ষাগারের একজন কর্মী এমন এক ভাইরাস জীবাণুর পরীক্ষা করছেন, যেটাকে জয় করা খুবই কঠিন

[সৌজন্যে]

CDC/Anthony Sanchez

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার