‘জগতের জ্যোতির’ প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করুন
১ ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে যিহোবা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “যে জাতি অন্ধকারে ভ্রমণ করিত, তাহারা মহা-আলোক দেখিতে পাইয়াছে; যাহারা মৃত্যুচ্ছায়ার দেশে বাস করিত, তাহাদের উপরে আলোক উদিত হইয়াছে।” (যিশা. ৯:২) এই “মহা-আলোক” বা মহাজ্যোতি ঈশ্বরের নিজ পুত্র যিশু খ্রিস্টের কাজগুলোর মধ্যে দেখা গিয়েছিল। পৃথিবীতে থাকাকালীন তাঁর কাজ এবং তাঁর বলিদানের মাধ্যমে আসা উপকারগুলো, আধ্যাত্মিকভাবে অন্ধকারে থাকা ব্যক্তিদের উদ্দীপিত করেছে। এই অন্ধকার সময়ে, লোকেদের এই ধরনের জ্যোতিরই দরকার আছে। প্রভুর সান্ধ্যভোজ আমাদেরকে ‘জগতের জ্যোতির’ প্রতি মনোযোগ আকর্ষণের এক বিশেষ সুযোগ প্রদান করে। (যোহন ৮:১২) গত বছর, “ইহা আমার স্মরণার্থে করিও,” যিশুর এই আদেশের প্রতি বাধ্যতা দেখানোর জন্য আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি কিছু পরিমাণ বিশ্বাস দেখিয়েছে। (লূক ২২:১৯) এই বছর স্মরণার্থ উদ্যাপন যতই এগিয়ে আসছে, আমরা কীভাবে সেই মহাজ্যোতির প্রতি মনোযোগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে অংশ নিতে পারি, যা যিহোবাই প্রকাশ করেছেন?—ফিলি. ২:১৫.
২ আন্তরিক উপলব্ধি গড়ে তুলুন: যিহোবা এবং যিশু মানবজাতির জন্য মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান প্রদান করে যে-মহান প্রেম দেখিয়েছে, সেই বিষয়ে ধ্যান করার এক উপযুক্ত সময় হল স্মরণার্থ মরসুম। (যোহন ৩:১৬; ২ করি. ৫:১৪, ১৫) কোনো সন্দেহ নেই যে, তা করা এই পবিত্র অনুষ্ঠানের প্রতি আমাদের আন্তরিক উপলব্ধিকে বৃদ্ধি করবে। ঈশ্বরের সমস্ত লোক, প্রতিদিন শাস্ত্র পরীক্ষা করা পুস্তিকায় উল্লেখিত স্মরণার্থের বিশেষ বাইবেল পাঠ পড়া ও তা নিয়ে ধ্যান করার জন্য সময় আলাদা করে রাখতে চাইবে। যিহোবার অতুলনীয় যে-গুণাবলি তাঁর মুক্তির মূল্যের ব্যবস্থায় অত্যন্ত চমৎকারভাবে প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলো নিয়ে চিন্তা করলে, তা আমাদেরকে গর্বিত করে এই কারণে যে, তাঁকে আমরা আমাদের ঈশ্বর হিসেবে পেয়েছি। মুক্তির মূল্য আমাদের জন্য ব্যক্তিগতভাবে কী অর্থ রাখে, সেই বিষয় নিয়ে ধ্যান করা, ঈশ্বর ও তাঁর পুত্রের প্রতি আমাদের আন্তরিক ভালবাসাকে বৃদ্ধি করে এবং ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার জন্য আমাদেরকে প্রাণপণ করতে পরিচালিত করে।—গালা. ২:২০.
৩ পরিত্রাণের জন্য যিহোবার ব্যবস্থার প্রতি আমরা যদি আমাদের উপলব্ধিকে গভীর করি, তা হলে স্মরণার্থের জন্য আমাদের উদ্দীপনা বাইবেল ছাত্র-ছাত্রী, বিভিন্ন পুনর্সাক্ষাৎ, আত্মীয়স্বজন, পাড়াপড়শি, সহপাঠী, সহকর্মীসহ সেইসমস্ত ব্যক্তির ওপর প্রভাব ফেলবে, যাদেরকে আমরা এই বিশেষ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাই। (লূক ৬:৪৫) তাই, এই ধরনের সমস্ত ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য বিশেষ প্রচেষ্টা করুন, তাদের কাছে স্মরণার্থের একটা ছাপানো আমন্ত্রণপত্র দিয়ে আসুন, যাতে সেটা এক অনুস্মারক হিসেবে কাজ করে। কেউ যাতে বাদ পড়ে না যায়, সেইজন্য অনেকে সেই ব্যক্তিদের একটা তালিকা রাখা ব্যবহারিক বলে মনে করেছে, যাদেরকে তারা নিয়মিত স্মরণার্থে আমন্ত্রণ জানায় আর এই তালিকায় প্রতিবছর নতুনদের যুক্ত করা হয়। এক সংগঠিত উপায় অবলম্বন করা এবং আগ্রহী ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা করা, যিহোবা ঈশ্বরের “বর্ণনাতীত দানের নিমিত্ত” তাঁর প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের এক উত্তম উপায় হবে।—২ করি. ৯:১৫.
৪ পরিচর্যায় বেশি করে অংশ নিন: আপনি কি মার্চ ও এপ্রিল মাসে পরিচর্যায় বেশি করে অংশ নিতে পারেন? অন্যদের কাছে ‘খ্রীষ্টের গৌরবের সুসমাচার’ জানানোর আপ্রাণ চেষ্টায় নিশ্চিতভাবে যিহোবার আশীর্বাদ থাকবে। সমস্ত আধ্যাত্মিক জ্ঞানালোকের উৎস হিসেবে যিহোবা আদেশ দিয়েছেন: “অন্ধকারের মধ্য হইতে দীপ্তি” বা জ্যোতি “প্রকাশিত হইবে।” (২ করি. ৪:৪-৬) প্রয়োজন অনুসারে, প্রাচীনরা ভিন্ন ভিন্ন সময় এবং জায়গায় ক্ষেত্রের পরিচর্যার জন্য সভার ব্যবস্থা করবে এবং সাক্ষ্য দেওয়ার কাজে দীর্ঘ সময় ব্যয় করার জন্য সাহায্য করতে পরিচালনা দেবে। এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে ভোরবেলায় রাস্তায় অথবা ব্যবসায়িক এলাকায় প্রচার কাজের ব্যবস্থা করা এবং বিকেলে বা সন্ধ্যার শুরুতে টেলিফোনে সাক্ষ্য দেওয়া। পরিচর্যায় আরও বেশি করে অংশ নেওয়ার জন্য সাহায্য পেতে, কত ঘন্টা প্রচার করবেন সেটার এক যুক্তিযুক্ত লক্ষ্য স্থির করুন এবং সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করুন। অনেকের জন্য যিহোবাকে তাদের সর্বোত্তমটা দেওয়ার অন্তর্ভুক্ত হল, সহায়ক অগ্রগামীর কাজ করা।—কল. ৩:২৩, ২৪.
৫ আপনি কি সহায়ক অগ্রগামীর কাজ করতে পারেন? সহায়ক অগ্রগামীর জন্য প্রয়োজনীয় ঘন্টা কমিয়ে দেওয়ার পর সাত বছরেরও বেশি সময় পার হয়ে গিয়েছে। এই সমন্বয় অনেকের জন্য সহায়ক অগ্রগামীর সেবার আশীর্বাদগুলো উপভোগ করা সম্ভবপর করেছে। আপনি কি তা করার চেষ্টা করেছেন? কেউ কেউ প্রত্যেক বছর এটা করা এক অভ্যাসে পরিণত করেছে। অনেক মণ্ডলীতে বহু প্রকাশক একত্রে এই সেবাকে গ্রহণ করে এবং এটা সেই বছরে মণ্ডলীর কার্যকলাপের এক উল্লেখযোগ্য আশীর্বাদ হয়ে থাকে। আপনি কি স্মরণার্থ মরসুমকে সহায়ক অগ্রগামীর কাজের এক আনন্দদায়ক মাসে পরিণত করার জন্য সময় করে নিতে পারেন? এপ্রিল মাস হয়তো কারো কারো জন্য বিশেষ করে উপযুক্ত হতে পারে, কারণ সেই মাসে পাঁচটা শনি-রবিবার রয়েছে।
৬ মার্চ ও এপ্রিল মাসে আপনার মণ্ডলীতে কি সীমা অধ্যক্ষের পরিদর্শন রয়েছে? তা হলে, এটা আপনার জন্য আরও আশীর্বাদ এনে দিতে পারে। যেমন আগে ঘোষণা করা হয়েছিল যে, ২০০৬ পরিচর্যা বছরে, সীমা অধ্যক্ষের পরিদর্শনের মাসে যারা সহায়ক অগ্রগামী হিসেবে সেবা করছে, তাদেরকে পরিদর্শনের সপ্তাহে অগ্রগামীদের সঙ্গে সভার প্রথম ভাগে যোগদান করার জন্য সুযোগ দেওয়া হবে। কোনো সন্দেহ নেই, এই সভাতে আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার জন্য যে-তথ্য জোগানো হবে, সেগুলো অনেক সহায়ক অগ্রগামীকে নিয়মিত অগ্রগামী হওয়ার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবে। অধিকন্তু, মার্চ মাসে আমরা বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়? এই নতুন অধ্যয়ন প্রকাশনাটি ব্যবহার করে লোকেদের আধ্যাত্মিক জ্যোতির কাছে আসায় সাহায্য করার আনন্দ উপভোগ করতে পারব। এই নতুন বইটি দিয়ে একটা বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করাকে আপনার লক্ষ্য করুন না কেন?
৭ সহায়ক অগ্রগামীর কাজের জন্য প্রয়োজনীয় ৫০ ঘন্টা বিবেচনা করার সময় নির্ধারণ করুন যে, কোন তালিকা আপনাকে প্রত্যেক সপ্তাহে ১২ ঘন্টার জন্য সত্যের জ্যোতি প্রকাশে সাহায্য করবে। যারা সফলভাবে তা করতে পেরেছে, তাদের সঙ্গে এবং আরও অন্যান্যদের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করুন। এটা করা তাদেরকে আপনার সঙ্গে যোগ দিতে উৎসাহিত করতে পারে। উত্তম পরিকল্পনা করার মাধ্যমে, যুবক-বৃদ্ধ সমস্ত বাপ্তাইজিত প্রকাশকই দেখতে পেয়েছে যে, এই প্রশংসনীয় লক্ষ্যে পৌঁছানো খুব কঠিন ছিল না। এই বিষয়ে প্রার্থনা করুন। এরপর সম্ভব হলে, পরিকল্পনা করুন এবং সহায়ক অগ্রগামীর কাজ উপভোগ করুন!—মালাখি ৩:১০.
৮ অনেক পরিবার দেখেছে যে, সুসংগঠিত প্রচেষ্টা করা পরিবারের অন্তত একজন সদস্যের পক্ষে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোকে সম্ভবপর করে তুলতে পারে। একটা পরিবার স্থির করেছিল যে, বাপ্তাইজিত পাঁচ জন সদস্যের সকলেই সহায়ক অগ্রগামীর কাজ করবে। পরিবারে বাকি যে-দুজন অবাপ্তাইজিত সন্তান ছিল, তারা তাদের কার্যক্রম বাড়ানোর বিশেষ প্রচেষ্টা করেছিল। এক অতিরিক্ত প্রচেষ্টা করার দ্বারা এই পরিবারটি কীভাবে উপকৃত হয়েছিল? তারা লিখেছিল: “এটা এক আনন্দদায়ক মাস ছিল আর আমরা গভীরভাবে অনুভব করেছিলাম যে, পারিবারিক বন্ধন শক্তিশালী হয়েছে। এই চমৎকার আশীর্বাদের জন্য আমরা যিহোবাকে ধন্যবাদ জানাই!”
৯ মার্চ ও এপ্রিল মাসে আমাদের বিশেষ কার্যক্রম কি রোমাঞ্চকর বলে প্রমাণিত হবে এবং আমাদেরকে আমাদের স্বর্গীয় পিতার আরও নিকটবর্তী করবে? বেশির ভাগই নির্ভর করবে ঈশ্বর ও তাঁর পুত্রের জন্য আমাদের ভালবাসাকে গভীর করার আর পরিচর্যায় আরও বেশি করে অংশ নেওয়ার জন্য আমাদের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার ওপর। আমাদের দৃঢ়সংকল্প যেন গীতরচকের মতো হয়, যিনি গেয়েছিলেন: “আমি নিজ মুখে সদাপ্রভুর অতিশয় স্তব করিব, লোকারণ্যের মধ্যে তাঁহার প্রশংসা করিব।” (গীত. ১০৯:৩০) যিহোবা এই স্মরণার্থ মরসুমে আমাদের উদ্যোগী কার্যক্রমকে আশীর্বাদ করবেন। তাই আমরা যেন এক মহাজ্যোতি প্রকাশ করতে দিই, যাতে আরও অনেকে অন্ধকার থেকে বের হয়ে আসতে পারে এবং ‘জীবনের দীপ্তি’ বা জ্যোতি ‘পায়।’—যোহন ৮:১২.
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
১. কোন মহাজ্যোতির বিষয়ে ঈশ্বরের বাক্যে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল আর কোন অনুষ্ঠান এই জ্যোতির প্রতি বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করে?
২. কীভাবে আমরা মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের প্রতি আমাদের আন্তরিক উপলব্ধি বৃদ্ধি করতে পারি আর তা করার ফল কী হবে?
৩. কীভাবে আমরা স্মরণার্থের জন্য আমাদের উপলব্ধি দেখাতে পারি?
৪. মার্চ ও এপ্রিল মাসে পরিচর্যায় আরও বেশি করে অংশ নেওয়ার জন্য কী আমাদের সাহায্য করতে পারে?
৫. সহায়ক অগ্রগামীর কাজের প্রয়োজনীয় ঘন্টা কমিয়ে দেওয়ায় অনেকে কীভাবে উপকৃত হচ্ছে?
৬. আমাদের জন্য কোন রোমাঞ্চকর ব্যবস্থাগুলো করা হয়েছে?
৭, ৮. (ক) কী আমাদের সহায়ক অগ্রগামীর কাজ করার জন্য একটা তালিকা তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে? (খ) কীভাবে পারিবারিক সহযোগিতা সাহায্য করতে পারে আর কীভাবে পুরো পরিবার উপকৃত হয়?
৯. কীভাবে আমরা স্মরণার্থ মরসুমে আমাদের জ্যোতি প্রকাশ করতে দিতে পারি?